যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ
                                                            
                                                                
"যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ"
সমস্ত জীবের সমস্ত কর্মেরফল বা সাধনা বা তপস্যার ফল ভাব অনুসারে পাওয়া যায়। 
এর প্রমান হিসাবে - " যাদৃশী ভাবনা সিদ্ধি  তাদৃশী " এবং " ভাবগ্রাহী জনার্দন"।
সমস্ত মহাপুরুষ এবং পরমহংস রামকৃষ্ণ এর দ্বারা শাস্ত্রের এই বাণী পুনর্বানী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন - “যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ”।
মহাপুরুষগণ এবং বেদের দ্বারা শাস্ত্র বাক্য অনুসারে আমরা জানলাম  যে– আমাদের সমস্ত কর্মের ফল কর্মফলদাতা ঈশ্বর আমাদেরকে কর্মের অন্তর্নিহিত যে ভাব থাকে সেই ভাব অনুসারে পরমাত্মা কর্মফল 
দেন এবং আমরাও কর্মফল প্রাপ্ত হই।
এখন আমাদেরকে জানতে হবে যে শাস্ত্র অনুসারে ভাব কত প্রকার হয় এবং কি কি ???
শাস্ত্রে অনুসারে মূল 5 প্রকার ভাবআছে 
1 . আসুরিক বা  পশুঅধম ভাব :- 84  লক্ষ্য জন্মের পর যখন প্রথম মনুষ্য শরীর প্রাপ্ত হয় তখন 84  লক্ষ পশু - পক্ষী ইত্যাদি জন্ম নেওয়ার জন্য জীবাত্মার চিত্তবৃত্তিতে প্রকৃতিগত ভাবে আসুরিক বা পশুঅধম ভাব প্রত্যেক মনুষ্য শরীরের ভিতরে জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে থাকে।  বাইরে মনুষ্য শরীর হলেও ভিতরে জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে পূর্ণ আসুরিক বা পশুঅধম ভাব বিদ্যমান থাকে। জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে এই আসুরিক বা পশুঅধম  ভাব থাকা অবস্থায় যে কোন ব্যাক্তি – যে কোন কর্মই  বা যোগসাধনা ,ভক্তিসাধনা, তন্ত্রসাধনা, জ্ঞানসাধনা, সেবা, জপ - তপঃ-ব্রত, তপস্যা , পূজা , ক্রিয়াযোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ  ক্রিয়া বা যাই কোনো কর্ম করুক না কেন —-শাস্ত্রের  কর্মফল প্রদানকারী নিয়ম অনুসারে —- “জীব কর্মফল ভাবই অনুসারে প্রাপ্ত হয়” —-এই নিয়ম অনুসারে —-  তাই এই ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে আসুরিক বা পশুঅধম থাকা হেতু  সেই ব্যক্তি আসুরিক বা পশুঅধম ভাবেরই কর্মফল প্রাপ্ত হবে।
2 .পশুত্বভাব :- গুরু বা শাস্ত্র উপদেশে যখন কোন মানুষ  নিত্য-অনিত্য বিচার  সহকারে 42 বৈদিক ধার্মিক অনুশাসন  (কমপক্ষে 6 বৎসর) বাস্তবিক জীবনে অখন্ডিত ভাবে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিপালন করে  এবং তখন বহু চেষ্টায় যখন আসুরিক বা পশুঅধম ভাব অনেকটা কমে আসে তখন শুধুমাত্র জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে শুধু পশুত্বভাব  বিদ্যমান থাকে ।  এই পশুত্বভাব অবস্থায়  সেই ব্যক্তি – যে কোন কর্মই  বা যোগসাধনা ,ভক্তিসাধনা, তন্ত্রসাধনা, জ্ঞানসাধনা, সেবা, জপ - তপঃ-ব্রত, তপস্যা , পূজা , ক্রিয়াযোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ ক্রিয়া যে কোনো কর্মই করুক না কেন —-শাস্ত্রের  কর্মফল প্রদানকারী নিয়ম অনুসারে —- “জীব কর্মফল ভাব অনুসারে প্রাপ্ত হয়” —-এই নিয়ম অনুসারে —- এই ক্ষেত্রে  সেই ব্যক্তির জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে পশুত্বভাব  থাকা হেতু সে পশুত্ব ভাবেরই কর্মফল প্রাপ্ত হবে।
3. মনুষ্যত্ব ভাব (Humanity):-  গুরু বা শাস্ত্র উপদেশে যখন কোন মানুষ  নিত্য-অনিত্য বিচার  সহকারে 42 বৈদিক ধার্মিক অনুশাসন  (কমপক্ষে 12 বৎসর) বাস্তবিক জীবনে অখন্ডিত ভাবে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিপালন করে  এবং তখন বহু চেষ্টায় পশুত্বভাব পরিপূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে যায় তখনই  একমাত্র জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে মনুষ্যত্ব (Humanity) ভাবের অঙ্কুরোদগম হয়। গুরু বা শাস্ত্রের উপদেশে যখন কেউ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে 42 বৈদিক অনুশাসন অখন্ডিত ভাবে নিজের বাস্তবিক কর্ম  চরিত্রে কমপক্ষে 12 বছর প্রতিপালন করে তখনই একমাত্র জীবাত্মার চিত্তবৃত্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে আসুরিক ও পশুত্ব ভাব বিনষ্ট হয় এবং চিত্তবৃত্তি এ মনুষ্যত্বের (Humanity) সমস্ত সৎ গুনের ধীরে ধীরে বিকাশ হয় এই অবস্থায় অন্তরেও মনুষ্যত্ব (Humanity) বাইরেও মনুষ্য শরীর সমানভাবে অবস্থান করে। এই অবস্থার থেকেই শুরু হয় মনুষ্যত্বের (Humanity) বিকাশ। অন্তরে এই মনুষ্যত্বভাব(Humanity)  প্রতিষ্ঠিত হবার পর  এই মনুষ্যত্বভাব(Humanity) অবস্থায়  যে ব্যক্তি – যে কোন কর্মই  বা যোগসাধনা ,ভক্তিসাধনা, তন্ত্রসাধনা, জ্ঞানসাধনা, সেবা, জপ - তপঃ-ব্রত, তপস্যা , পূজা , ক্রিয়াযোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ ক্রিয়া যে কোনো কর্মই করুক না কেন —-শাস্ত্রের  কর্মফল প্রদানকারী নিয়ম অনুসারে —- “জীব কর্মফল ভাব অনুসারে প্রাপ্ত হয়” —-এই নিয়ম অনুসারে —- এই ক্ষেত্রে  সেই ব্যক্তির জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে মনুষ্যত্বভাব (Humanity) থাকা হেতু সে মনুষ্যত্ব ভাবেরই (Humanity) কর্মফল প্রাপ্ত হবে।এই অবস্থার থেকেই শুরু হয় মনুষ্যত্বের (Humanity) বিকাশ। 
4 . দেবত্ব ভাব :- গুরু বা শাস্ত্র উপদেশে যখন অখন্ডিতভাবে 12 বছর অনুশাসন প্রতিপালন করার পর আসুরিক ও পশু ভাব নাশ হয়ে মনুষ্যত্ব ভাব শুরু হয় -ঠিক একই ভাবে একটানা আরো 12 বছর অর্থাৎ মোট 24 বছর বাস্তবিক জীবনে অখন্ডিত ভাবে পরিপূর্ণ রূপে বৈদিক অনুশাসন প্রতিপালন করতে পারলে মনুষ্যত্বের অন্তঃকরণে দেবত্ব ভাবের বিকাশ হয়।  তখন বাইরে মনুষ্য শরীর এবং অন্তঃকরণে চিত্তবৃত্তিতে পূর্ণরূপে দেবভাব অবস্থান করে। এই দেবত্বভাব অবস্থায় সে ব্যক্তি – যে কোন কর্মই বা যোগসাধনা ,ভক্তিসাধনা, তন্ত্রসাধনা, জ্ঞানসাধনা, সেবা, জপ - তপঃ-ব্রত, তপস্যা , পূজা , ক্রিয়াযোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ ক্রিয়া যে কোনো কর্মই করুক না কেন —-শাস্ত্রের  কর্মফল প্রদানকারী নিয়ম অনুসারে —- “জীব কর্মফল ভাব অনুসারে প্রাপ্ত হয়” —-এই নিয়ম অনুসারে —- এই ক্ষেত্রে  সেই ব্যক্তির জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে দেবত্বভাব  থাকা হেতু সে দেবত্ব ভাবেরই কর্মফল প্রাপ্ত হবে। তার প্রত্যেকটি বাক্য ,তার প্রতিটি কর্ম দেবতুল্য বিচার হয় এবং সে দেবত্ব ফল দেবচরিত্র অবস্থা প্রাপ্ত হয়। 
5 . ব্রহ্মত্ব ভাব :- গুরু বা শাস্ত্র উপদেশে যখন কোন মানুষ  নিত্য-অনিত্য বিচার  সহকারে 42 বৈদিক ধার্মিক অনুশাসন  (কমপক্ষে 36 বৎসর) বাস্তবিক জীবনে অখন্ডিত ভাবে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিপালন করে  এবং তখন বহু চেষ্টায় দেবত্বভাব পরিপূর্ণ রূপে বিকাশ হয়ে  একমাত্র  তখনই জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে ব্রহ্মত্ব  ভাবের অঙ্কুরোদগম হয়।  জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে এই ব্রহ্মত্ব ভাব প্রতিষ্ঠিত হবার পর  এই ব্রহ্মত্বভাব অবস্থায়  যে ব্যক্তি – যে কোন কর্মই  বা যোগসাধনা ,ভক্তিসাধনা, তন্ত্রসাধনা, জ্ঞানসাধনা, সেবা, জপ - তপঃ-ব্রত, তপস্যা , পূজা , ক্রিয়াযোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ ক্রিয়া যে কোনো কর্মই করুক না কেন —-শাস্ত্রের  কর্মফল প্রদানকারী নিয়ম অনুসারে —- “জীব কর্মফল ভাব অনুসারে প্রাপ্ত হয়” —-এই নিয়ম অনুসারে —- এই ক্ষেত্রে  সেই ব্যক্তির জীবাত্মার অন্তঃকরণে-চিত্তবৃত্তিতে ব্রহ্মত্বভাব  থাকা হেতু সে ব্রহ্মত্ব ভাবেরই কর্মফল প্রাপ্ত হবে।
যখন কোনো সাধক  নিত্য-অনিত্য বিচার  সহকারে  42 বৈদিক ধার্মিক অনুশাসন  (কমপক্ষে 36 বৎসর) বাস্তবিক জীবনে অখন্ডিত ভাবে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিপালন  করে বাইরে মনুষ্য শরীর অন্তরে জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে  ব্রহ্মত্বভাব প্রাপ্তি হয়।  অন্তরে জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে  ব্রহ্মত্বভাব প্রাপ্তি হবার পরই একমাত্র সেই অবস্থায় গুরুপ্রদত্ত ব্রহ্মবিদ্যা সাধনার দ্বারাই আত্মজ্ঞান - পরমাত্মজ্ঞান - ব্রহ্মজ্ঞান -ব্রাহ্মীস্থিতি - শান্ত , দাস্য , বাৎসল্য , সখ্য , মধুর , শিঙ্গাররুপি  ভক্তি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব ।  তাই বাইরে মনুষ্য শরীর অন্তরে জীবাত্মার অন্তঃকরণে- চিত্তবৃত্তিতে  ব্রহ্মত্বভাব  লাভের পূর্বে কোনো বিদ্যা , কোনো সাধনা , কোনো ক্রিয়াযোগ , কোনো জপ , কোনো তপস্যা তাকে আত্মজ্ঞান - পরমাত্মজ্ঞান - ব্রহ্মত্বজ্ঞান - ব্রাহ্মীস্থিতি - শান্ত , দাস্য , বাৎসল্য , সখ্য , মধুর , শিঙ্গাররুপি  ভক্তি সাধনায় সিদ্ধিলাভ  করাতে পারে না।
তাই যেকোনো যোগ , সাধনা , জপ - তপঃ, তপস্যা , পূজা , ব্রত , ক্রিয়া যোগ , কুণ্ডলিনী জাগরণ  ক্রিয়া এই গুলি করার পূর্বে বা করার সঙ্গে সঙ্গে ভাবশুদ্ধির সাধনা ( 42 বৈদিক অনুশাসন ) করা অতি আবশ্যক।  কারণ ভাবের ক্রমোন্নতি না হলে ঈশ্বর লাভ বা মুক্তির পথ সুদূর পরাহত থাকে 
কেউ পশুভাবে থাকা অবস্থায় ব্রহ্ম ভাবে ঈশ্বর লাভ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কর্মফলদাতা ঈশ্বর নিরপেক্ষভাবে ভাব অনুসারে কর্মফল প্রদান করে।  তাই সর্বাগ্রে নিত্য - অনিত্য বিচার করে 42 বৈদিক অনুশাসন বাস্তবিক কর্ম চরিত্রে অখন্ডিত ভাবে প্রত্যেকের প্রতিপালন অতি আবশ্যক।