ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ অনুযায়ী, কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যন্মুর সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানি কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ ও এই অসম্পূর্ণ রুপেই পূজা শুরু করতে বলেন।
জগন্নাথ দেবের ধ্যান মন্ত্র: ওঁ পীণাঙ্গং দ্বিভুজং কৃষ্ণং পদ্মপত্রায়তেক্ষণম্। মহোরসং মহাবাহুং পীতবস্ত্রং শুভাননম্ ॥ সর্ব্ব লক্ষণ সংযুক্তং বনমালা বিভূষিতাম্। ধ্যায়েন্নারায়ণং দেবং চতুর্বর্গ ফলপ্রদম্ ॥
এই মন্ত্রে, জগন্নাথ দেবকে দ্বিভুজ, কৃষ্ণবর্ণ, পদ্মের মতো চোখ বিশিষ্ট, বিশাল বক্ষ ও বাহু, পীতবসন পরিহিত, সুন্দর মুখশ্রী এবং বনমালা (বনের ফুলের মালা) দ্বারা সুশোভিত রূপে ধ্যান করা হয়।
এই মন্ত্রের অর্থ:
ওঁ: পরম ব্রহ্মের প্রতীক, যা জগৎের উৎস।
পীণাঙ্গং: সুগঠিত দেহযুক্ত।
দ্বিভুজং: দুটি বাহুযুক্ত।
কৃষ্ণং: কালো বা গাঢ় বর্ণের।
পদ্মপত্রায়তেক্ষণম্: পদ্ম পাতার মতো চোখ বিশিষ্ট।
মহোরসং: বিশাল বক্ষযুক্ত।
মহাবাহুং: দীর্ঘ ও শক্তিশালী বাহুযুক্ত।
পীতবস্ত্রং: হলুদ বস্ত্র পরিহিত।
শুভাননম্: সুন্দর মুখযুক্ত।
সর্ব্ব লক্ষণ সংযুক্তং: সমস্ত শুভ লক্ষণযুক্ত।
বনমালা বিভূষিতাম্: বনফুলের মালা দ্বারা সুশোভিত।
ধ্যায়েন্নারায়ণং দেবং: নারায়ণ দেবকে ধ্যান করি।
চতুর্বর্গ ফলপ্রদম্: যিনি ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ এই চতুর্বর্গ ফল প্রদান করেন।
এই মন্ত্রটি পাঠ করে জগন্নাথ দেবের ধ্যান করা হয় এবং তাঁর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়।
এছাড়াও, শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের প্রণাম মন্ত্র হল: নীলাচলনিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে। বলভদ্র সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।
এই মন্ত্রের অর্থ: যিনি নীলাচলে বাস করেন, যিনি নিত্য এবং পরমাত্মা, সেই বলরাম, সুভদ্রা এবং জগন্নাথকে প্রণাম।