কলি পুরুষের আগমন
কল্কি পুরাণ অনুসারে কলিযুগের চারটি বাসস্থান:****
কলি পুরুষের আগমন
শ্রীকৃষ্ণের স্বর্গারোহণের পর, অর্জুনের পৌত্র রাজা পরীক্ষিত হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক। একদিন রাজ্য পরিদর্শনের সময় তিনি এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখলেন — একটি বলদ, মাত্র এক পায়ে দাঁড়িয়ে, রক্তাক্ত ও কাঁপছে, আর এক অন্ধকার, নিষ্ঠুর ব্যক্তি তাকে নির্যাতন করছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অসহায় গাভী — যা প্রতীকীভাবে ভুমি দেবী।
এই নিষ্ঠুর ব্যক্তি ছিল কলি পুরুষ — কলিযুগের জীবন্ত প্রতিমূর্তি।
ধর্ম (বলদ) ও ভূমিদেবীকে আক্রমণ দেখে রাজা পরীক্ষিত ক্রোধান্বিত হলেন এবং তলোয়ার তুলে নিলেন। কিন্তু কলি পুরুষ রাজামহারাজের পদতলে লুটিয়ে পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করল। সে যুক্তি দিল, তার সময় এসে গেছে — এটা মহাবিশ্বের নিয়ম, তাই তাকে বাস করার জায়গা দিতে হবে। রাজা পরীক্ষিত শাস্ত্র ও সময়ের স্বভাব জেনে তাকে সম্পূর্ণ বর্জন না করে, কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের অনুমতি দিলেন।
ধর্মের পতন
যুগের শুরুতে ধর্ম এক বলদের চারটি পায়ে দাঁড়িয়েছিল — সত্য (Satya), দয়া (Daya), তপস্যা (Tapas) ও শৌচ (Shaucham)। কলিযুগে এসে কেবল সত্যের একটি পা অবশিষ্ট আছে, সেটিও টলমল করছে।
রাজা পরীক্ষিত কলিযুগের প্রভাব সীমাবদ্ধ করতে কলি পুরুষকে চারটি স্থানে বসবাসের অনুমতি দেন —
1. দ্যুতম (জুয়া ও পাশা খেলা):::-জুয়া প্রতারণা, লোভ ও যুক্তিবোধ হারানোর প্রবণতা তৈরি করে। এটি মানুষকে ধর্মপথ থেকে বিচ্যুত করে ও পরিবার ধ্বংস করে। মহাভারতে পাশা খেলার ফলে পাণ্ডবদের রাজ্য হারানোর ঘটনাই তার প্রমাণ।
2. পানম (মদ্যপান ও নেশা):::---মদ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য মানুষকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পথ থেকে বিচ্যুত করে। এটি তামসিক প্রবৃত্তি বাড়ায়, আত্মসংযম নষ্ট করে এবং পাপের দিকে ঠেলে দেয়।
3. সু্বর্ণম (সোনা ও অযাচিত ধন):---সোনা বস্তুগত লোভ ও অহংকারের প্রতীক। ধন-সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি দুর্নীতি, বৈষম্য ও আধ্যাত্মিক অবক্ষয়ের পথ প্রশস্ত করে।
4. স্ত্রিয়ঃ (অশ্লীল কামাচার ও দেহব্যবসা):---এখানে ‘স্ত্রিয়ঃ’ শব্দটি নারীকে নয়, বরং অনিয়ন্ত্রিত লালসা ও যৌন অসচ্চরিত্রতাকে বোঝায়। যৌনতার বাণিজ্যিকীকরণ মানব সম্পর্কের পবিত্রতা ধ্বংস করে।
কলিযুগের গোপন আশীর্বাদ
কল্কি পুরাণ ও অন্যান্য শাস্ত্রে বলা আছে, এই যুগে পতন যতই গভীর হোক, একটি আশ্চর্য আশীর্বাদ রয়েছে — সামান্য ভক্তিও বিপুল ফল দেয়।
ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে —
"হে রাজন, যদিও কলিযুগ দোষের সাগর, তবু এতে এক মহাগুণ আছে — কেবল কৃষ্ণের নাম কীর্তন করলেই মানুষ সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মুক্তিলাভ করতে পারে।"
(ভাগবত পুরাণ ১২.৩.৫১)