কালভৈরব
ভগবান শিবের যে কয়টি রূপ আছে,তার মধ্যে কালভৈরব রূপ হলো অন্যতম। কেবলমাত্র হিন্দুধর্মে নয় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে তাঁর আরাধনা করা হয়।তন্ত্র সাধনার জন্য এই নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কালভৈরব হলেন কাল বা সময়ের শাসক।।
কালভৈরব হলেন শিবের একটি উগ্র ও ভয়ংকর রূপ। 'কাল' অর্থ সময় বা মৃত্যু, এবং 'ভৈরব' অর্থ ভয়ানক বা ভয়ঙ্কর। তিনি সময় এবং বিনাশের প্রতীক।
কালভৈরব সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
* শিবের প্রকাশ: তিনি মহাদেব শিবেরই একটি শক্তিশালী প্রকাশ বা অবতার।
* জন্মের কিংবদন্তি: পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অহংকার প্রকাশ করলে শিবের ক্রোধ থেকে কালভৈরবের জন্ম হয়। তাঁর গায়ের রং ছিল কুচকুচে কালো, তাঁর ভয়ানক গর্জনে সমগ্ৰ জগৎ কেঁপে ওঠে। কালভৈরব বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক টি কেটে ফেলেন । কালভৈরব ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছেদন করেন, যার ফলে ব্রহ্মহত্যার পাপ তার উপর বর্তায়। এই পাপ মোচনের জন্য তিনি দীর্ঘকাল ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় কাটান এবং অবশেষে কাশীতে এসে সেই পাপ থেকে মুক্ত হন।
অন্যান্য পুরাণ কথা অনুযায়ী একবার সমস্ত অসুরেরা দেবী সতীর পীঠকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়। তখন এই অন্যায় কাজকে আটকাতে ভগবান শিব এই কালভৈরবের সৃষ্টি করেছিলেন।যার ফলে অসুরেরা সতীদেবীর পীঠ আক্রমন করতে ভয় পায়। তাই আজও মনে করা হয়, সতী দেবীর পীঠের রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং কালভৈরব। তাই আজও প্রতিটি সতীপীঠের কাছে রয়েছে একটি করে কালভৈরব তথা শিবের মন্দির।
* পাপীদের দণ্ডদাতা: কালভৈরবকে পাপীদের দণ্ডদাতা রূপে দেখা হয়। তিনি শুল, দণ্ড, মুণ্ড ধারণ করেন এবং তার এক হাত আশীর্বাদ মুদ্রায় থাকে।
* বাহন: তার বাহন হলো কালো কুকুর।
* কাশীর কোতোয়াল: তিনি বারাণসীর (কাশী) রক্ষক বা কোতোয়াল হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কাশীতে কালভৈরবকে দর্শন ও পূজা না করলে কাশী দর্শন অসম্পূর্ণ থাকে।
* অঘোরীদের দেবতা: তিনি মূলত অঘোরী সম্প্রদায়ের কাছে একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবতা।
* সময় ও মৃত্যুর উপর নিয়ন্ত্রণ: কালভৈরবকে সময় এবং মৃত্যুর উপর নিয়ন্ত্রণকারী দেবতা হিসেবে মানা হয়।
"ওঁ কালকালায় বিধমাহে কালতীথায়া ধীমহি থান্নো কাল ভৈরব প্রচোধায়থ" উপরে উল্লিখিত মন্ত্রটি ভগবান ভৈরবের গায়ত্রী মন্ত্র, যাকে সাধারণত কাল ভৈরব নামেও উল্লেখ করা হয়, যিনি মহেশ্বরের (শিবের) এক ভয়ঙ্কর রূপ। ভৈরব, ভগবান শিবের বরং ভয়ঙ্কর রূপ, সাধারণত বিনাশের এই দিকের সাথে যুক্ত। প্রাচীন হিন্দু কিংবদন্তিতে উৎপত্তি, ভৈরবের বহুল-ভয়ঙ্কর রূপ হিন্দু, জৈন এবং বৌদ্ধ উভয়ই শ্রদ্ধা করে। ভারত এবং নেপাল জুড়েও তিনি এই রূপেই পূজিত হন ।
কাল ভৈরবের রূপে, ভগবান শিব এই প্রতিটি শক্তিপীঠের রক্ষক বলে কথিত আছে। প্রতিটি শক্তিপীঠ মন্দিরের সাথে ভৈরবকে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির রয়েছে। জয় শ্রী কালভৈরাভায় নমঃ
রাজস্থান, তামিলনাডু ও নেপালে তাঁর বিশেষ পূজা হয়ে থাকে। উজ্জয়নীতে তাঁর একটি প্রসিদ্ধ মন্দির রয়েছে, যেখানে বাবা কালভৈরব তাঁর ভক্তদের কাছ থেকে সুরাপান করে থাকেন।
ভৈরবের সংখ্যা 64 টি। তাঁদের আবার 8 টি শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি শ্রেনীতে আবার একজন করে প্রধান ভৈবর রয়েছেন।
এই প্রধান 8 টি ভৈরবকে একত্রে অষ্টাঙ্গ ভৈরব বলা হয়ে থাকে।।
অষ্টাঙ্গ ভৈরবের নাম:---
1. কপাল ভৈরব।। 2. ভীষণ ভৈরব।।
3. অসিতাঙ্গ ভৈরব।।
4. রূঢ় ভৈরব।।
5. চন্ড ভৈরব।।6. ক্রোধ ভৈরব।।
7. উন্মত্ত ভৈরব।। 8. সংহার ভৈরব।।