ঋষি পুলস্ত্য
ঋষি পুলস্ত্য হিন্দু ধর্মের সপ্তর্ষিদের একজন।তিনি ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।মানসপুত্র মানে—মনের দ্বারা জন্মিত সন্তান।ব্রহ্মার ধ্যান থেকে তাঁর জন্ম হয়েছিল।তিনি জ্ঞান, তপস্যা ও সংযমের প্রতীক ছিলেন।পুরাণে তাঁকে গুরুপুরুষ হিসেবে সম্মান করা হয়।তিনি ঋষি সমাজে একটি বিশেষ স্থান দখল করেন।তিনি শুধু ঋষি নন, একজন মহাজ্ঞানীও ছিলেন।বহু পুরাণের আদি বর্ণনাকারী তিনি।তিনি ঋষি হিসেবে বৈদিক জ্ঞানের ধারক ছিলেন।তাঁর জন্ম হয়েছিল সত্যযুগে।সত্যযুগে তপস্যার মহিমা সর্বাধিক ছিল।সেই যুগেই তিনি কঠোর ব্রতধারী হন।তাঁর নাম পুলস্ত্য মানে—“স্থিরতায় অবিচল।”তিনি ছিলেন ধ্যানমগ্ন মহাতপস্বী।তাঁর সঙ্গে তুলনা করা যায় কশ্যপ, অত্রি, বশিষ্ঠদের।তাঁর জীবন কঠোর সন্ন্যাসে ভরা ছিল।
ব্রহ্মা তাঁকে তপস্যার কাজে নিযুক্ত করেন।
ঋষি পুলস্ত্যের স্ত্রী ছিলেন হাভির্ভূ।কোথাও কোথাও তাঁকে ইদ্বিদা বলা হয়েছে।তাঁদের মিলনে জন্ম নেন বিশ্রবা।বিশ্রবা ঋষি ছিলেন মহান পণ্ডিত ।বিশ্রবার সন্তান কুবের।কুবের হলেন যক্ষরাজ ও সম্পদের অধিপতি।আবার বিশ্রবার সন্তান রাবণও।রাবণ জন্মেছিলেন কৌশল্যা (কৌকশি)নামে এক রাক্ষসী মাতার গর্ভে।সুতরাং রাবণ ছিলেন পুলস্ত্যের পৌত্র।
একইভাবে কুম্ভকর্ণ, বিভীষণও পুলস্ত্যের পৌত্র।
পুলস্ত্য ঋষি তাই এক বিশেষ অবস্থান রাখেন।
তাঁর বংশে দেবতুল্য কুবের জন্মেছেন।আবার রাক্ষসরাজ রাবণও জন্মেছেন।কুবের হলেন ধনসম্পদের রক্ষক।অন্যদিকে রাবণ হল রামায়ণের মহাশত্রু।তাই পুলস্ত্যের বংশ এক বৈচিত্র্যময় ধারা।
এ জন্য পুরাণে তিনি বিস্ময়কর পুরুষ।তাঁর বংশে ভালো-মন্দ দুই ধারাই প্রবাহিত।
তিনি বিষ্ণুপুরাণ বর্ণনা করেছিলেন।বিষ্ণুপুরাণ প্রথমে তিনি পরাশর ঋষিকে বলেন।পরে সেই পুরাণ ছড়িয়ে পড়ে।পুলস্ত্যের কণ্ঠ থেকে পুরাণশ্রবণ অত্যন্ত পবিত্র ধরা হয়।তিনি বহুবার দেবতা ও ঋষিদের সভায় পুরাণ শোনান।তাঁর শিষ্যরা তাঁকে মহাগুরু মানতেন।তিনি বেদমন্ত্র ব্যাখ্যায় পারদর্শী ছিলেন।দেবতারা তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।অসুরেরাও তাঁকে মান্য করত।কারণ তিনি নিরপেক্ষ সাধক ছিলেন।ঋষি পুলস্ত্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী ছিলেন।তিনি হিমালয়ের গুহায় ধ্যান করতেন।
কখনও গঙ্গার তীরে বসতেন।তাঁর ধ্যানের ফলে অগ্নি জ্বলত।তাঁর দেহ থেকে তেজ প্রকাশিত হতো।ব্রহ্মার আশীর্বাদে তিনি অমোঘ শক্তিধারী হন।তাঁর বাক্যে ছিল সত্যের বল।তাঁর অভিশাপও সত্য হত।
বহুবার রাক্ষসরা তাঁর আশ্রয়ে বেঁচেছিল।কারণ তাঁর অভিশাপ দেবতাদেরও প্রভাবিত করত।পুরাণে আছে—একবার দেবতারা তাঁর কাছে আশ্রয় নেন।আবার একবার অসুরেরাও তাঁর কাছে সুরক্ষা চান।সবাই কেই তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন।কারণ তিনি পক্ষপাতহীন ছিলেন।তিনি শুধু সত্য ও ধর্মকে অনুসরণ করতেন।
তাঁর আশ্রম ছিল জ্ঞানকেন্দ্র।সেখানে বহু শিষ্য অধ্যয়ন করত।শিষ্যরা বেদ, পুরাণ, শাস্ত্র শিখত।তিনি গুরু হিসেবে বিখ্যাত।তাঁর শিক্ষা যুগে যুগে ছড়িয়েছে।
ঋষি পুলস্ত্য ছিলেন দয়ালু।তিনি মানুষের কষ্টে সাড়া দিতেন।ভিক্ষুক এলে আহার দিতেন।ঋষি হিসেবে তিনি সমাজের আদর্শ ছিলেন।দেবতারা তাঁকে পূজা করত।
ঋষিরা তাঁকে গুরু মানত।