অনুপ্রেরণা হল একটি অভ্যন্তরীণ শক্তি যা ব্যাক্তিকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। যখন একজন ব্যক্তি অনুপ্রাণিত থাকেন তখন তিনি উচ্চ স্তরের সন্তুষ্টি, সুস্থতা ও ভালবাসা অনুভব করেন এবং জীবনে চলার পথে সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনুপ্রেরণার মূল ভিত্তি হল একটি ইতিবাচক মনোভাব এবং মানসিকতা বজায় রাখা যা আমাদেরকে জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
সত্ত্বগুণ ও বিশুদ্ধ চিত্তের অধিকারী হলেই যে কোন ব্যক্তি তত্ত্বজ্ঞান ও ভগবৎ কৃপা লাভ করতে পারেন। চিত্তশুদ্ধি না ঘটলে কেউই ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে পারেন না!
***********************************************************************************
গুরুশক্তিই সাধককে পরম বাঞ্ছিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়----চাই শুধু গুরুর উপর একান্ত নির্ভরতা এবং পূর্ণ আত্মসমর্পন।
************************************************************************
বিপদে অধীর হইও না। ধৈর্য্য অবলম্বন করিয়া কর্তব্য সম্পাদন করিয়া যাও। একদিন আত্মশক্তি দেখিয়া স্তম্ভিত হইবে।
********************************************************************************
পূর্বজন্মের যোগসাধনার শুভ সংস্কারের ফলে তিনি যোগের পথে আপনা আপনি আকৃষ্ট হন।
যিনি বেদোক্ত জ্ঞানকান্ডের যোগের প্রকৃতি জানেন এবং যোগ অনুশীলন সম্পর্কে জানেন – এইরকম যোগীর কাছে বেদোক্ত জ্ঞানকান্ডের যোগের উপদেশ পেয়ে সাধক এই জন্মে পুনরায় অতিশীঘ্র বেদোক্ত জ্ঞানকান্ডের যোগের পথে উন্নতি লাভ করতে পারে ।
শুধু কোন বই বা পুস্তক পড়ে আত্মবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা সম্বন্ধে কিঞ্চিত মাত্র জ্ঞান হয় না কারণ এটি সম্পূর্ণ গুরুমুখী বিদ্যা !
গুরুকৃপায় গুরুমুখী বিদ্যা প্রভাবে কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত হওয়ার পর চৈতন্য আত্মদর্শন করে আত্মজ্ঞান লাভ হয় !
গুরু লাভের জন্য প্রবল আকুলতা থাকা আবশ্যক নচেৎ ঈশ্বরের ইচ্ছায় কোন কারনেই সদ্গুরু লাভ হয় না– আর সদ্গুরুর লাভ না হলে গুরুমুখী বিদ্যা প্রাপ্তির কোন প্রসঙ্গই থাকে না !
গুরুর প্রতি নিষ্কাম প্রীতি ও ভক্তি দ্বারা আত্ম বিদ্যা লাভ করা সম্ভব ! এই জীবনে তাকে জানলে সকল কর্ম বিনষ্ট হয়। কর্মফল নষ্ট হয়ে গেলে, অমৃত ধারণকারী মানুষ সিদ্ধি লাভ করলে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না।
এই জগৎ থেকেই পরমাত্মাকে জানা যায়। যারা জানে তারা অমৃত হয়ে যায়। সদগুরু ব্যতীত জ্ঞান বা প্রেম উভয়ই সম্ভব নয়।
*********************************************************************************
যতদিন গুরু তার কৃপা-প্রেম-করুণা শিষ্যের উপর রাখেন (শিষ্যের আচরণ বিধি অনুসারে) ততদিন শিষ্যের আত্মোন্নতি ক্রমাগতভাবে উন্নত স্তরে গতিমান হয়—---তাই প্রত্যেক শিষ্যের উচিত নিজের কর্মচারিত্রিক বাক্যের আচরণকে সীমা-পরিসীমা মধ্যে রেখে নিষ্ঠাবান হওয়া এবং নিষ্ঠাবান অবস্থা বজায় রাখা– তাহলেই গুরুর করুনা অব্যাহত ভাবে আপনা আপনি প্রবাহমান থাকে
*************************************************************************************
গুরু ও দীক্ষা
"গুরু ব্রক্ষ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর গুরুদেব পরমব্রক্ষ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।"
একের পর এক ধাপ ওপরে উঠতে সাহায্যর গুনাবলী নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান সদ্গুরু। তিনি ঠিক একইভাবে একের পর এক উন্নতির ধাপ পেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন।আমাদের কানকে যদি যোনি ধরা হয় তাহলে গুরুদত্ত বীজ হলো সেই বীর্য যা আমাদের শরীরে এবং মনে গিয়ে ভক্তি ও বিশ্বাসে নিষিক্ত হয়ে সৃষ্টি করে জ্ঞানের ভ্রুণ। এই ভ্রুনটিকেই সযত্নে লালন করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাহায্য করেন গুরু। তাই তাঁকে একাধারে পিতা ও মাতা উভয়ই বলা হয়।
অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে তিনি শুভত্বের আলোয় নিয়ে আসেন শিষ্যকে।কিন্তু যেমন সব শুক্রাণু এবং ডিম্বানু নিষিক্ত হয় না, তেমনি যে কোন বীজ এই জ্ঞানের ভ্রুন সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষের ক্ষেত্রে জানা যায় না যে কোনটি নিষিক্ত হবে কিন্তু এই ক্ষেত্রে গুরু জানেন যে কোনটি শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারজন্য আসে সাধন চক্র বিচার। এখানেই নির্ধারিত হয় শিষ্যর ইষ্ট। তারপর আসে সেই মহালগ্ন যেখানে নির্ধারিত হয় কোন বীজ বপন করা হবে শিষ্যর চেতনার মাটিতে যা অঙ্কুরিত হয়ে ছায়া দান করবে ভবিষ্যতে।
কিন্তু এর কোনটাই হয় না যদি সময় না হয়। জ্যোতিষ আমাদের বলে দেয় সেই মহাক্ষনটি। বলে দেয় আমাদের ইষ্ট দেব বা দেবীর নাম। তাই সদ্গুরু ছাড়া আর কেউ নেই যিনি আমাদের উদ্ধার করতে পারেন এই দুঃখের সাগর থেকে। যদি গুরু না থাকে তাহলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করতে হয় গুরুলাভের জন্য।
আপনি যেকোন সাধককে বা স্বয়ং শিব কেও গুরুপদে বরন করে এগোতে পারেন। তিনিই প্রয়োজন বুঝে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবেন দেহধারী তাঁরই অংশীভূত কোন মানুষকে যিনি রক্ত মাংসের শরীরে আসলেও আপনার কাছে তিনি হবেন একাধারে ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। তিনিই হবেন আপনার সদ্গুরু।
**********************************************************************************
তুমি নিজেই নিজের শত্রু এবং সে’ কথাটিই তোমার জানা নেই। তুমি স্থির হয়ে বসে থাকতে শেখনি— সৎসঙ্গ করোনি -শাস্ত্র উপদেশ মেনে চলনী- সদ্গুরুর অন্বেষণ করোনি -সদ্গুরুর উপদেশ মতন চলনী- সদ্গুরুর সেবা করোনি -সদ্গুরুর জ্ঞান উপদেশ কে হৃদয় ধারণ করো নি -ঈশ্বরের জন্যে সময় দিতেও শেখনি। তাছাড়া তুমি ভীষণ অধৈর্য—ভেবেছ এক লাফে তুমি আত্মজ্ঞানের সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয়ে যাবে। বই পড়ে, ধর্মকথা শুনে, কিম্বা দানধ্যান করে তুমি আত্মজ্ঞানের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারবে না।
মনুষ্য জীবন সুদুর্লভ জীবন খুব কষ্ট করে মানুষ জীবন পাওয়া গেছে তাই মনুষ্য জীবনের সৎ ব্যবহার করুন।ধর্মের পথে হাঁটলে কষ্ট ঠিকই হবে কিন্তু জয় আপনারই হবে।কুকাজ করে নিজের জীবনের অমূল্য সময় নষ্ট করবেন না।অহংকার সবই ব্যর্থ কারণ আপনি এসব কিছুই সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না
******************************************************************************
কলিযুগে বাস করেও কলির প্রভাব থেকে কিভাবে মুক্ত হবো??
কলি যুগে শাস্ত্রে 4 টি ঘোরতর পাপকার্যের কথা উল্লেখ আছে। কলি যে 4 টি স্থানে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে তা হচ্ছে –
1. আহার এর মধ্যে কলির প্রভাব সবচেয়ে প্রবল- অসৎ পথে উপার্জিত আহার বা পাপপথে উপার্জিত আহার, শ্রাদ্ধ আহার এবং অসৎ ভাবযুক্ত- তমোগুণ যুক্তদ্রব্যআহার।
2. অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ / পুরুষ সঙ্গ
3. যে কোন প্রকারের নেশা- কর্ম (দ্যুতক্রীড়া/তাস/পাশা/জুয়া….ইত্যাদি ) বা ভাব যুক্ত নেশা ( স্ত্রী / পুরুষ / কোন বিশেষ জমি জায়গা বা অন্য কোনো বিশেষ প্রাণী…ইত্যাদি ব্যাক্তির প্রতি আসক্তি) বা আহার যুক্তনেশা (ধুমপান/মদ্যপান)
4. যে কোন প্রকার শাস্ত্রবিরুদ্ধ ব্যাক্তির সঙ্গ/ ক্ষতিকারক ব্যাক্তির সঙ্গ/ অসৎব্যাক্তিরসঙ্গ / অবৈধ ব্যাক্তিরসঙ্গ/ হিংসুটে ব্যাক্তির সঙ্গ/ কুবুদ্ধি প্রদানকারী ব্যাক্তির সঙ্গ
আমরা যদি উপরোক্ত চার প্রকার কলির প্রভাব যুক্ত এইগুলো কে সাবধানে এড়িয়ে চলতে পারি তাহলে আমরা কলিযুগে বাস করেও কলির প্রভাব থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকতে পারবো
*************************************************************************
নিন্দাং ভগবতঃ শৃণ্বন্ তৎপরস্য জনস্য বা
ততো নাপৈতি যঃ সো পি যাত্যধঃ সুকৃতাৎ চ্যুতঃ ॥ ….শ্রীমদ্ভাগবতে (৪/৪/১৭)
“ভগবান এবং ভগবানের ভক্তের বা গুরুর নিন্দা শোনা মাত্রই কেউ যদি তৎক্ষণাৎ সেই স্থান পরিত্যাগ না করে, তাহলে তিনি সাধনমার্গ থেকে অধঃপতিত হন।”
কর্ণৌ পিধায় নিরিয়াদ যদকল্প ঈশে ধর্মাবিত্যশ্রণিভিনৃভিরস্যমানে ।
ছিন্দ্যাৎ প্রসহ্য রুষতীমসতাং প্রভুশ্চে জ্জিহ্বামস্নপি ততো বিসৃজেৎ স ধৰ্মঃ ॥ …… (১০/৭৪/৪০)
“ যদি কোন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তিকে ধর্মের / ঈশ্বর এবং ভগবানের ভক্তের বা গুরুর নিন্দা করতে শোনা যায়, তাহলে যে কোন ব্যক্তির কান বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যাওয়া উচিত এবং পৃথিবী উলট-পালট হলেও কখনো সেই নিন্দুকের মুখ দর্শন করা উচিত নয়
**************************************************************************************
দীক্ষা গ্রহণের প্রধান এবং প্রথম উদ্দেশ্যই হবে, আত্মিক উন্নতি লাভ। দীক্ষার মানে কি ছেলেখেলা? দীক্ষার মানে নবজন্ম লাভ। নতুন করে আত্মিক উন্নতি জীবন-যাত্রা আরম্ভ করাই দীক্ষার উদ্দেশ্য।
অতীতের পাপময় সংস্কার-গুলির হাত এড়িয়ে নতুন ক'রে জীবনের পথ চলতে আরম্ভ করা।
************ রোগ সারাবার জন্য, মোকদ্দমার জয়ের জন্য, স্বামী-বশীকরণের জন্য, স্ত্রী বাধ্যকরনের জন্য, পরীক্ষায় পাশের জন্য, চাকুরী পাবার জন্য, পুত্র লাভের জন্য প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করার মনোবৃত্তি দেশ থেকে দূর ক'রে দিতে হবে।
*******************************************************************************
সৎ - সঙ্গ
যিনি সত্যকে জানিয়া - সত্যের ধ্যান ,জ্ঞান এবং সত্য লাভের আচরণ এবং যিনি নিজের জীবনকে সত্য মার্গে শাস্ত্রসম্মতভাবে পরিচালনা করিয়াছেন তাহাকেই শাস্ত্রে সৎ ব্যাক্তি বলিয়াছেন।
এইরকম শাস্ত্রলক্ষন সম্পন্ন সৎ ব্যাক্তির নিকট হইতে শাস্ত্র কথা বা ঈশ্বরতত্ত্ব কথা শ্রবণ করাকে উপদেশ বা শাস্ত্রীয় পরামর্শকে সৎ সঙ্গ বলে।
শাস্ত্রীয় সৎ ব্যাক্তির স্বাত্তিক আলোচনা বা উপদেশ সূর্যের জ্যোতির মতন অজ্ঞান অন্ধকারকে নাশ করে ইহা স্বাত্তিক আনন্দবর্ধক , বিচারবর্ধক , জ্ঞানবর্ধক , বুদ্ধি ও বিবেকবর্ধক।
সৎ ব্যাক্তি যদি উপদেশ নাও দেয় তবুও তাঁর সঙ্গে সঙ্গলাভের দ্বারা বহু সৎ কর্মের শিক্ষা লাভ হয়। অথবা যে কোনো বিষয়ের কার্যস্থলে বা কাজ করতে করতে সৎ ব্যাক্তির সাথে যে কথা বার্তা হয় সেগুলির মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে উপদেশ থাকে। অর্থাৎ, সৎ ব্যাক্তি বা প্রকৃত সাধু সঙ্গ কার্যবশে হোক বা মৌনবশেই হোক আর উপদেশ বশেই আত্মউন্নতির পথে সর্বদা জ্ঞান উৎপন্ন হয়।
মনই মনুষ্যগুণের বন্ধন এবং মোক্ষ এর কারণ। কামনা ও আসক্তি যুক্ত মনই বন্ধনের কারক হয়। আর নিষ্কাম ও নিরাশক্তি মোক্ষের কারক হয়।
সৎ ব্যাক্তির বা প্রকৃত সাধুব্যাক্তির উপদেশ বা সঙ্গ নিরাশক্তি ও নিষ্কাম হবার প্রেরণা দেয়। তাই সৎ সঙ্গ ব্যাতিত মুক্তি লাভের কোনো উপায় নেই। তাই আত্মউন্নতিতে আগ্রহবান ব্যাক্তি সযত্নে সর্বদা সৎসঙ্গ লাভের চেষ্টা করিবে।
জীবনে যখনই সময় হইবে সৎ সঙ্গ বা সাধুসঙ্গ করা উচিত নিজের আত্মউন্নতির জন্য।
*******************************************************************
যিনি অবিদ্যার মাধ্যমে অহংবোধের এই অন্তর্নিহিত অনুভূতি, মানুষের শারীরিক সত্তায় অজ্ঞতা পরিত্যাগ করেন-- অহং ও তার পরিবেশ থেকে উদ্ভূত সমস্ত ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করে এবং অহং ও আত্মার বিচ্ছেদ ঘটায় এবং যোগ, সমাধির আনন্দময় ধ্যানে মহাজাগতিক ভগবানের সাথে মিলনের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির বাধ্যতামূলক শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। যেটি স্ব এবং আত্মার মধ্যে অলীক দ্বিধাবিভক্তিকে স্থায়ী করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের দ্রবীভূত করে। সমাধিতে, মহাজাগতিক স্বপ্নের মায়া শেষ হয় এবং পরম সত্তার বিশুদ্ধ মহাজাগতিক চেতনার সাথে একাত্ম হয়ে জাগ্রত হয় পরমানন্দময় স্বপ্ন - চির-অস্তিত্বশীল, চিরচেতন, চির-জীবিত আনন্দ।
****************************************************************************************
আমার মধ্যেই আমার মালিক, পর্দা খুলিয়া গুরু ইহা দেখাইলেন। দশদিক পূর্ণ হইয়া আছে সরোবর, অথচ পাখি (জল না পাইয়া) পিয়াসি হইয়া চলিল।
মানস সরোবরের মধ্যেই তো জল, পিপাসিত যে সে আসিয়া পান করে, প্রেমরসের প্যালা ভরিয়া ভরিয়া (গুরু) নিজ হাতে করান পান। অন্তরের উপলব্ধির উপায়।
সদ্গুরু আসিয়া ব্যথার আঘাত দিয়া আমাদের জাগাইয়া দেন। কিন্তু, জাগরণ ও সাধনা সত্য হওয়া চাই, আমাদের অন্তরের সত্যকে জাগাইয়া তোলা চাই, নহিলে সাধনাতে বাহিরের অপরিমেয় ঐশ্বর্যও যদি লাভ হয় কোনো লাভ নাই,
অন্তরে নামের প্রদীপটি জ্বালাইয়া লও।
প্রত্যেকের মধ্যেই মনুষ্যত্বের অমূল্যনিধি আছে, গুরু-দত্ত প্রদীপ পাইলে তবে তাহা দেখিতে পাওয়া যায়।
***************************************************************
সাধনা মনের অপবিত্রতার বিনাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। সমস্ত আকাঙ্খা ও ভয় বিনষ্ট হলে মন পবিত্র হয়। ঐশ্বরিক জীবন পরিচালনা করুন, ঐশ্বরিক জীবন যাপন করুন এবং সর্বত্র ঐশ্বরিক জীবনের আলো জ্বালান। আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত স্বভাবের অটুট মাধুর্য বজায় রাখা, খাঁটি এবং কোমল হওয়া এবং সব পরিস্থিতিতে বৈদিক অনুশাসনে অটুট থাকা।”
**********************************************************
গুরুর কৃপা, গুরুর আশীর্ব্বাদ ও গুরুর শুভদৃষ্টি লাভই গুরুদর্শন। গুরুর নির্দ্দেশ মত চলা, গুরুর আদেশ উপদেশ প্রতিপালন ও তাঁহার নির্ণীত নির্দ্ধারিত পথে চলার দ্বারাই গুরুকৃপা লাভ হইয়া থাকে।
গুরুর আদেশকেই শিষ্য একমাত্র মন্ত্র বলিয়া জানিয়া মানিয়া চলিবে। শিষ্য গুরুকে সতত যেরূপ চক্ষে দেখিয়া থাকে, তাঁহার আদেশকেও সর্ব্বদা সেইরূপ চক্ষে দেখিয়া বুঝিয়া মানিয়া চলিবে।
গুরুর আদেশই শিষ্যের একমাত্র সহায় ও সম্বল।
শিষ্যের যাবতীয় বিভ্রম-বিভ্রান্তি-বিস্মৃতির ঘোর ভাঙ্গিয়া, মায়ামোহ-বাসনার জালকে ছিন্নভিন্ন করিয়া, যাবতীয় দুঃখ-দৈন্য-দুর্ব্বলতাকে দূর করিয়া এই আদেশই শিষ্যকে সব সময় জাগ্রত, জীবন্ত ও সজাগ রাখিবে; সুতরাং এই আদেশকে সতত স্মরণ মননে নিদিধ্যাসনে রাখাই শিষ্যের একমাত্র সাধনা।
মনকে সর্ব্বদা গুরুমুখী করিয়া রাখাই শিষ্যের একমাত্র তপস্যা ও আরাধনা। সব রকম কাজের ভিতর দিয়া চলাফেরার সঙ্গে সঙ্গে বহির্মুখী মনকে গুরুমুখী করিয়া রাখিতে পারিলে বাহিরের কোন রকম বাজে আবহাওয়া শিষ্যকে কোন ভাবে কোন রকমে ধরিতে ছুঁইতে স্পর্শ করিতে পারিবে না।
এই বিধান সব সময় মানিয়া চলিলে শিষ্য আর কখনও কোনরূপে বিপদগ্রস্ত হইবে না।
চন্দ্র-সূর্য্য-গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি দিক্পালকে সাক্ষী রাখিয়া, অগ্নি ও গুরুকে স্পর্শ করিয়া আমি যে সুমহান্ ব্রত ও নিয়ম গ্রহণ করিয়াছি, আমার ধমনীতে এক বিন্দু রক্ত থাকিতেও সেই ব্রত ও নিয়ম লঙ্ঘন করিব না। গুরুর আদেশ প্রতিপালনেই শিষ্যের জন্মজন্মান্তরীণ যাবতীয় বাসনার নাশ হইয়া থাকে।
******************************************************************************************
ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ॥
অনুবাদঃ- অজ্ঞতার গভীরতম অন্ধকারে আমার জন্ম হয়েছিল এবং আমার গুরুদেব জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দিয়ে আমার চক্ষু উন্মীলিত করেছেন। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
বন্দেহহং শ্রীগুরোঃ শ্রীযুতপদকমলং শ্রীগুরু
অনুবাদঃ- আমি আমার গুরুদেবের পাদপদ্মে শ্রীচরণে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
******************************************************************************************************
পশুদের তুলনায় মনুষ্যজীবন অনেক উন্নত, কারণ পশুজীবনে আত্মজ্ঞান - পরমাত্মা জ্ঞান-ব্রহ্মজ্ঞান বা পরমমুক্তি বা মোক্ষলাভ করা সম্ভব হয় না, মনুষ্য শরীরেই কেবল তা সম্ভব, কিন্তু মনুষ্য শরীর লাভ করেও যদি কেউ আত্মজ্ঞান - পরমাত্মা জ্ঞান-ব্রহ্মজ্ঞান বা পরমমুক্তি বা মোক্ষলাভ এর পথে না যায় তাহলে তার এই দূর্লভ মনুষ্য জীবন বৃথা জীবন বলা হয়! "
************************************************************************
গুরু নিন্দা মহাপাপ
শাস্ত্রের কথা :-
1."গুরুনিন্দা মহাপাপম, গুরুনিন্দা মহাভয়, গুরুনিন্দা মহাদুঃখ, তস্য পাতকম ন পরম".... স্কন্দপুরাণে
অনুবাদ:- গুরুনিন্দা মহাপাপ,গুরুনিন্দা বড় ভয়,গুরুনিন্দা বড় দুঃখ, এর চেয়ে বড় পাপ আর নেই।
2. নিন্দাংগুরু শৃণ্বন্ তৎপরস্য জনস্য বা
ততো নাপৈতি যঃ সো পি যাত্যধঃ সুকৃতাৎ চ্যুতঃ ॥ ….শ্রীমদ্ভাগবতে (৪/৪/১৭)
অনুবাদ:-“ গুরুর নিন্দা শোনা মাত্রই কেউ যদি তৎক্ষণাৎ সেই স্থান পরিত্যাগ না করে, তাহলে তিনি সাধনমার্গ থেকে অধঃপতিত হন।”
3. কর্ণৌ পিধায় নিরিয়াদ যদকল্প ঈশে ধর্মাবিত্যশ্রণিভিনৃভিরস্যমানে ।
ছিন্দ্যাৎ প্রসহ্য রুষতীমসতাং প্রভুশ্চে জ্জিহ্বামস্নপি ততো বিসৃজেৎ স ধৰ্মঃ ॥
……শ্রীমদ্ভাগবতে (১০/৭৪/৪০)
অনুবাদ:-“ যদি কোন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তিকে গুরুর বা ধর্মের / ঈশ্বর এবং ভগবানের ভক্তের নিন্দা করতে শোনা যায়, তাহলে যে কোন ব্যক্তির কান বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যাওয়া উচিত এবং পৃথিবী উলট-পালট হলেও কখনো সেই নিন্দুকের মুখ দর্শন করা উচিত নয়
*************************************************************************************
অর্থ কম থাকুক, যোগ্যতা কম হোক কিন্তু আপনার কথা, ব্যবহার, আচরণ, মানসিকতা এগুলো যেন সুন্দর এবং মার্জনীয় হয়
****************************************************************
যে ব্যাক্তি কর্মেন্দ্রিয় সংযত রেখে মনে মনে ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়গুলি চিন্তা করে তাকে মিথ্যাচারী বলে।..............শ্রীকৃষ্ণ।
*******************************************************************
মানুষের আড়ালে মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে হয়তো সম্পর্ক নষ্ট করা যায়। কিন্তু কখনো নিজের নষ্ট চরিত্রকে সংশোধন করা যায় না।
*************************************************************
যিনি অবিদ্যার মাধ্যমে অহংবোধের এই অন্তর্নিহিত অনুভূতি, মানুষের শারীরিক সত্তায় অজ্ঞতা পরিত্যাগ করেন-- অহং ও তার পরিবেশ থেকে উদ্ভূত সমস্ত ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করে এবং অহং ও আত্মার বিচ্ছেদ ঘটায় এবং যোগ, সমাধির আনন্দময় ধ্যানে মহাজাগতিক ভগবানের সাথে মিলনের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির বাধ্যতামূলক শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। যেটি স্ব এবং আত্মার মধ্যে অলীক দ্বিধাবিভক্তিকে স্থায়ী করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের দ্রবীভূত করে। সমাধিতে, মহাজাগতিক স্বপ্নের মায়া শেষ হয় এবং পরম সত্তার বিশুদ্ধ মহাজাগতিক চেতনার সাথে একাত্ম হয়ে জাগ্রত হয় পরমানন্দময় স্বপ্ন - চির-অস্তিত্বশীল, চিরচেতন, চির-জীবিত আনন্দ।
ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের গান্ধারীর চরিত্র টি এক অনন্য চরিত্র। আমরা সকলেই জানি মহাভারতে হস্তিনাপুরের মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধার কন্যা গান্ধারীর বিবাহ হয়েছিল এবং তাঁদের ১০১ টি সন্তান জন্ম গ্রহন করে ছিল ।
তাঁদের একশ জন পুত্র সন্তান ও একজন কন্যা সন্তান ছিল । আজকে আমরা ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর একশ জন ছেলে ও একজন মেয়ের নাম জানব।
গান্ধারী এবং ধৃতরাষ্ট্রের একশজন পুত্র গুলির নাম –
১. দুর্যোধন ২. যুযুতসুরাজ ৩. দুঃশাসন ৪. দুঃসহ ৫. দুঃসল ৬. জলসনদ্ধ ৭. সম ৮. সহ ৯ বিন্দ ১০. অনুবিন্দ ১১. দুর্ধর্ষ ১২. সুবাহু ১৩. দূষপ্রধর্ষণ ১৪. দুমর্শন ১৫. দুর্মুখ ১৬. দূষকর্ণ ১৭. কর্ণ ১৮. বীবিংসতী ১৯. বিকর্ণ ২০. শল ২১. সত্ত্ব ২২. সুলোচন ২৩. চিত্র
২৪. ঊপচিত্র ২৫. চিত্রাক্ষ ২৬. চারুচিত্র ২৭. শরাসন ২৮. দুর্মদ ২৯. দুরবিগহ ৩০. বিবিতসু ৩১. বিকটানন ৩২. ঊর্ণনাভ ৩৩. সুনাভ ৩৪. নন্দ ৩৫. উপনন্দ ৩৬. চিত্রবান ৩৭. চিত্রবর্মা ৩৮. সুবর্মা ৩৯. দুরবিমচন ৪০. অয়বাহু ৪১. চিত্রাঙ্গ
৪২. চিত্রকুণ্ডল ৪৩. মহাবহু ৪৪. ভীমবেগ ৪৫. ভীমবাল ৪৬. বলাকি ৪৭. বলবর্ধন ৪৮. ঊগ্রাউধ ৪৯. শূরসেন ৫০. কুন্ডধার ৫১. মহোদয় ৫২. চিত্রাঊধ ৫৩. নিষঙ্গী ৫৪. পাশী ৫৫. বিন্দরক ৫৬. দীরবর্মা ৫৭. দীরক্ষেত্র ৫৮. সমকীর্তি ৫৯. অনুদর
৬০. দীরসনদ্ধ ৬১. সত্যসনদ্ধ ৬২. জরাসনদ্ধ ৬৩. সদ ৬৪. সুবাক ৬৫. অগ্রশ্রবাঃ ৬৬. অগ্রসেন ৬৭. দূস্পরাজয় ৬৮. অপরাজিত ৬৯. কুণ্ড শায়ী ৭০. বিশালক্ষ ৭১. দুরাধর ৭২. দৃঢ় হস্ত ৭৩. সুহস্ত ৭৪. বতবেগ ৭৫. সুবরচা ৭৬. আদিত্যকেতু ৭৭. বহাসি ৭৮. নাগদত্য ৭৯. অগ্রজায়ু
৮০. কবচী ৮১. ক্রথ্ন ৮২. কুন্ত ৮৩. ধনুর্ধর ৮৪. উগ্র ৮৫. ভিমরথ ৮৬. বিরবাহু ৮৭. আলোলুপ ৮৮. অভয় ৮৯. অনঅধৃষ্য ৯০. কুণ্ডভেদী ৯১. বিরাধী ৯২. দীর্ঘলোচন ৯৩. প্রমথ ৯৪. প্রমথি ৯৫. দীর্ঘরমা ৯৬. দীর্ঘওবাহু ৯৭. ব্যুঢ়রু ৯৮. কনকধজ ৯৯. কুন্ডশি ১০০. বিরজা।
গান্ধারী এবং ধৃতরাষ্ট্রের একজন কন্যা সন্তান ছিল – তার নাম দুঃশলা
প্রশ্ন :- যে কোনো মানুষের সর্বপ্রথম কী করা উচিত ? উত্তর :- মনুষ্য জীবনে সর্বপ্রথম কী করা উচিত এটি নিয়ে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শ্রীমদভগবৎ গীতা 16 নং অধ্যায় 23 - 24 নং শ্লোকে সম্পূর্ন নির্দেশ দিয়েছেন যে - " যঃ শাস্ত্রবিধি - মুৎসৃজ্য বর্ত্ততে কামকারতঃ | ন স সিদ্ধি - মবাপ্নোতি ন পরাং গতিম্ " || 23 || " তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্য্যকার্য্য - ব্যবস্থিতৌ | জ্ঞাত্বা শাস্ত্র বিধানোক্তং কর্ম্ম কর্ত্তুমিহার্হসি " ৷৷ 24 || "যে ব্যক্তি বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত এবং শাস্ত্র সম্বন্বীয় জ্ঞান কোনো শাস্ত্রজ্ঞ শিক্ষা গুরুর কাছে প্রথমে শাস্ত্র সম্বন্বীয় জ্ঞান গ্রহণ এবং জ্ঞান অর্জনের পর শাস্ত্র অনুসারে যে অধিকার সেই অনুসারে কর্ম করা উচিত ৷ আর এইভাবে শাস্ত্রবিধি জানিয়া অধিকার অনুসারে কর্ম করিলে সেই ব্যক্তি সমস্ত কর্মে বা সাধনায় পরম সিদ্ধিলাভ হয় - আর যে ব্যক্তি সর্বপ্রথমে শাস্ত্রজ্ঞান অর্জন না করিয়া , শাস্ত্রবিধি না মানিয়া, শাস্ত্রের অধিকার বিধি না জানিয়া নিজের মন অনুসারে বা অপরের মন রক্ষার্থে বা অপরের মনপ্রসূত উপদেশ বা জ্ঞান অনুসারে চলে তার কখনোই কোনো কর্মে বা সাধনায় সিদ্ধি হয় না বা মুক্তি লাভ হয় না ৷ তাই গীতাতে ভগবান বারবার বলি আছেন - যে ব্যক্তি নিজের মন অনুসারে বা অপরের মন অনুসারে বা অপরের মন রক্ষার্থে যে উপদেশ বা বাক্য শুনিয়া চললে সেই ব্যক্তি কখনই জ্ঞান, সুখ, শান্তি, কোন কর্মে সফল ,সিদ্ধি বা মুক্তি লাভ করিতে পারে না ৷ তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ভগবানের নির্দেশ অনুসারে শাস্ত্রজ্ঞ শিক্ষা গুরুর কাছে সর্বপ্রথমে শাস্ত্রবিধি জানিয়া অধিকার অনুসারে কোনটি কর্তব্য এবং কোনটি অকর্তব্য নির্ণয় করিয়া শাস্ত্রবিহিত কর্ম করা উচিত – কারণ একমাত্র এই ভাবেই ভগবানের নির্দেশে চললে যে কোনো ব্যক্তির প্রত্যেক কর্মে সফলতা ,পরম সিদ্ধিলাভ এবং পরম মুক্তি প্রাপ্ত হওয়া যায় ৷