সত্যনারায়ণ পূজা সত্যনারায়ণ পূজার নিয়ম এই ব্রতের কোন তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নেই। যে কোন ব্যক্তি প্রদোষকালে এই ব্রত করতে পারেন। নারী-পুরুষ, কুমার-কুমারী নির্বিশেষে এই ব্রত করতে পারে। পূর্ণিমা বা সংক্রান্তি এই ব্রতের সঠিক দিন। উপবাস থেকে এই ব্রত করতে হয়। সত্যনারায়ণ হলেন বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি। ব্ৰতের ফল - যে কোনও বয়সের নর-নারী এই ব্রত করিতে পারে। এই ব্রত করিলে সংসারে কোনও প্রকার দুঃখ কষ্ট থাকে না। মনের সমস্ত কামনা-বাসনা নারায়ণ পূর্ণ করেন। পূজা শুরুর আগের কিছু নিয়ম:- নারায়ণ পূজায় তেমন বাহুল্য নেই বললেই চলে।তাই এই পূজার আয়োজন খুব সহজ। যে যার সাধ্য মত আয়োজন করে। যেকোনো পূর্ণিমার তিথিতেই এই পূজা করা যায়। অনেকে বাড়ির পরিবেশ শুদ্ধ রাখতে, প্রতিটা বড় পূর্ণিমাতেই পূজা করে থাকেন।পূজার আগের নিয়ম বলতে, সবচেয়ে আগে পূজার স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখুন। পরিষ্কার করে যেখানে ঘট পাতবেন, সেখানে আলপনা দিয়ে দিন। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিন। ঘটে আমপাতা, শিষ ডাব দিন। অবশ্যই ঘটে ও ডাবে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দেবেন। বিজোড় সংখ্যক আমপাতা রাখবেন। এতে সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন। এরপর নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবেন। একটি থালায় তিনটি জায়গায় একটু করে চাল, ও তার সঙ্গে কলা, বাতাসা, অন্যান্য ফল, তার ওপর সিকি মানে কয়েন, পঞ্চ শস্য এসব দিয়ে সাজান। পঞ্চ শস্য মানে পাঁচ রকম শস্য। এই ভাবেএকটি থালায় তিনটি ও আরেকটি থালায় পাঁচটি নৈবিদ্য সাজিয়ে রাখুন।সিন্নির জন্য একটি গামলায় ময়দা, গুড়, দুধ, খোয়া ক্ষীর, একটু নারকেল কোরা, কাজু, কিশমিশ ঠাকুরের সামনে রাখবেন। পূজার পর ঠাকুরমশাই সিন্নি তৈরি করবেন। এছাড়াও নারায়ণের ছবির দু’পাশে দুটো পান পাতা রাখুন। এর ওপর একটা সুপারি, একটা কয়েন, একটা কলা রাখুন।বাড়িতে নারায়ণ মূর্তি যদি থাকে তাহলে স্নান করানোর সময় তা কোনওভাবেই বাঁ-হাত ব্যবহার করবেন না। সবসময় ডান হাতে মূর্তি ধরবেন। এছাড়াও শুধু ঘট স্থাপন করেও পুজো করতে পারেন। সায়ং সন্ধ্যা সমাপন করিয়া নববস্ত্র পরিধান করিয়া শুদ্ধ চিত্তে পূর্বমুখী হইয়া পূজা করিতে বসিবেন। নারায়ণ পূজার জন্য প্রথমে নারায়ণ শিলা স্থাপন করতে হয়। সেদিন সারাদিন ওই নারায়ণ শিলা থাকবে। পরদিন সুতো কেটে সেটি নিয়ে চলে যাবেন। নারায়ণ শিলা স্থাপন করে ও নারায়ণ দেবতাকে প্রণাম জানিয়ে পূজা শুরু করা হয়। সঙ্গে মা লক্ষ্মীকেও ফুল দেবেন, প্রণাম জানাবেন। এরপর আপনার সমস্ত আয়োজন তাঁকে নিবেদন করার পালা। এই সাধারণ পূজার পর অঞ্জলি। অঞ্জলি শেষ হয়ে গেলে হোম। হোম-যজ্ঞের জন্য ছোট ছোট করে বেশ কয়েকটি হোমের কাঠ,একটি পাত্রে ঘি, ৫১টি বেলপাতা, একটি লাল চেলি কাপড়, একটু দুধ একটি কলা ও একটি সন্দেশ এবং হোমকুণ্ড রেডি রাখবেন। যজ্ঞ শেষে দুধ ঢেলে যজ্ঞ শেষ হবে। এবং সবাই যজ্ঞের টিপ পড়বেন। এটিই হল নারায়ণ পূজার নিয়ম। তাহলে দেখলেন নারায়ণ পূজার আয়োজন করা কত সহজ। শুধু শুদ্ধ, শান্ত মনে পূজার আয়োজন করুন। আয়োজন সামান্য হলেও দেবতা নারায়ণের আশীর্বাদ প্রবেশ করবে আপনার ঘরে। সত্যনারায়ণ পূজাপদ্ধতি আচমন :- কোশাকুশি থেকে কুশি সাহায্যে জল নিয়ে সেই জল বাম হাতের তালুতে ধারণ করে -ডান হাতের মধ্যমা এবং অঙ্গুষ্ঠ একসঙ্গে স্পর্শ করে বাম হাতের তালু থেকে জল নিয়ে মুখে প্রথমে তিনবার জলের ছিটা দেবে । তারপর হাত ধুয়ে মুখ মুছে হাত জোড় করে আচমন মন্ত্র বলিবে। আচমনঃমন্ত্র- নমো আত্মতত্ত্বায় নমঃ, নমো বিদ্যাতত্ত্বায় নমঃ, নমো শিবতত্ত্বায় নমঃ। হরিস্মরণঃ “ ওঁ বিষ্ণু- ওঁ বিষ্ণ- ওঁ বিষ্ণু- ওঁ তদ্ বিষ্ণু পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয় দিবিব চক্ষু রাততম্ ||” পরে হাত জোড় করে :- ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভূজং পীতবাসম্ || তারপর আবার হাত জোড় করে :- “ওঁ নমঃ অপবিত্র পবিত্রবা সর্বাবস্থাং গতো হপিবা যঃ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষং স বাহ্য অভ্যন্তরং শুচি ||” ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেন্য বরদং শুভম্। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মানি কারয়েৎ। শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু, শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু, শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু। গন্ধাদির অর্চনা :- “এতভ্যো গন্ধ্যাদিভ্য নমঃ” [ এই মন্ত্র পাঠ করে কোশার ওপর ফুল বেল পাতা চন্দন নিয়ে সমস্ত উপাচারে তিনবার জলের ছিটা দেবে ] সুর্য্যার্ঘঃ – [ কুশীর মধ্যে দূর্বা , চন্দন, পুষ্প , জল, ফুল, বেলপাতা দুহাতে ধরিয়া বলিবে ] ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগত সবিত্রে শুচয়ে কৰ্ম্ম দায়িনে ইদম অর্ঘং নমঃ শ্রী সূৰ্য্যায় নমঃ। জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাতজোড় করে বলেো "ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাসং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম ধন্তারিম সর্বপাপঘনং প্রনতোহস্মি দিবাকরম ৷৷ " স্বস্তিবাচনঃ নমঃ স্বস্তি ভবন্তু ব্রুবন্তু (৩ বার)। সংকল্পঃ বিষ্ণুরোতৎসদ ওম অদ্য অমুকে মাসি অমুক তিথৌ অমুক গোত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্ম্মা সর্ব্বা-পছান্তি সৌভাগ্য বর্দ্ধ নমনোগতাভীষ্ট সিদ্ধপূর্বক শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ দেব প্রসাদালাভথং স্কন্দ পুরানীয় রেবাখস্তোক্ত সত্যনারায়ণ দেব পূজন তকথা শ্রবণমহং করিস্যে। অপাত্ৰস্থাপনঃ– কোষার নীচে মাটিতে চন্দন দ্বারা ত্রি-কোন মন্ডল করিয়া অতঃপর মন্ডলে চাউল দ্বারা অর্চ্চনা করিবেন ও বলিবেন নমঃ অনন্তায় নমঃ কুর্ম্মায় নমঃ, পৃথিব্যৈ নমঃ আধারে শক্তয়ে নমঃ আধারে বহ্নি মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ||” জল শুদ্ধি :- “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলে হস্মিন সন্নিধং কুরু ||” এই মন্ত্রপাঠ করার পর জল স্পর্শ করিয়া “ওঁ” মন্ত্র 10বার জপ করিবে || (এরপর 10বার গায়েত্রী মন্ত্র ) আসন শুদ্ধি :- [ আসনের নিচে ত্রিকোণমন্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি ফুল দিয়া বলিবে ] “ওঁ আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ” আসনে যেখানে ফুল দেওয়া হয়েছে সেখানে ধরে বলিবে - “ ওঁ আসন মন্ত্রস্যা মেরুপৃষ্ট ঋষি: সুতলং চান্দ কুম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিযোগ” - “ওঁ পৃথ্বিত্ত্বয়া ধৃতা লোকা তঞ্চ ধারয় মং নিত্যং পবিত্রং করু আসনম ||” তারপর হাত জোড় করে বামদিকে ঝুঁকে বলো - গুরু পংতি প্রণামঃ- ওঁ গুরুবে নমঃ , ডানদিকে ঝুঁকে বলো - ওঁ গণেশায় নমঃ, মাথার ওপর হাত রেখে বলো - ওঁ ব্রহ্মনে নমঃ, নিচের দিকে হাত জোড় করে বলো - ওঁ অন্ততায় নমঃ , বুকের মাঝে হাত জোড় করে বলো - ওঁ নারায়নায় নমঃ- ওঁ সত্য নারায়নায় নমঃ পুষ্প শুদ্ধি :- পুষ্প পাত্রের উপর হাত রেখে বলো - “ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুস্পে সুপুষ্প পুষ্প সম্ভবে পুষ্প চয়াবকির্নে চ ওঁ ফট স্বহা ||” কর শুদ্ধি :- একটি রক্তবর্ণ পুষ্প লইয়া " ওঁ " মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া " হেঁসৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশানকোণে ফেলিবে।। করশুদ্ধিঃ একটি সচন্দন পুষ্প /লাল ফুল হাতে নিয়ে ‘ফট’ মন্ত্রে উভয় হাত দিয়ে পেষণ করে ঘ্রান নিয়ে ঈশাণ কোণে নিক্ষেপ করতে হবে । ঊদ্ধে তিন তালি এবং তুড়ি দিয়ে দশদিক বন্ধন করতে হবে। অঙ্গন্যস ক্রম:- আং হৃদয়ায় নমঃ | ঈং শিরসে স্বহাঃ | উং শিখায়ে বষট্ | ঐং কবচায় হূং | ওঁ নেত্রাভ্যং বষট্ আং করতল পৃষ্ঠাভ্য মন্ত্রায় ফট্ | করন্যাস :- আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ ঈং তর্জনীভ্যং স্বহা উং মধ্যমাভ্যং বষট্ ঐং অনামিকাভ্যং হূং ওঁ কনিষ্ঠাভ্যং বষট্ আং করতল পৃষ্ঠাভ্য মন্ত্রায় ফট্ || [ তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলী দ্বারা বামহস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে ] দ্বারদেবতার পূজা :- পুস্প নিয়ে " এতে গন্ধপুষ্প ওঁ দ্বারদেবতাভ্যং” বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিতে হবে ৷ ভূতাপসারন :- এই মন্ত্র বলিবার সময় আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছিটাইবে এবং নিচের মন্ত্র বলিবে৷ " ওঁ অপসর্পন্তু যে ভূতা যে ভূতা ভূমি সংস্থিতা যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নাশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ৷” [ এরপর মস্তকের উপর তিনবার 'ফট ' মন্ত্র বলে করতালি দিয়া ভূত অপসারন ও তুড়ি দ্বারা দশ দিক বন্ধন করিবে৷ ] চন্দন লিপ্ত করিয়া একটা একটা করে সাদা দুর্গা পুষ্প নিয়ে নিচের প্রতিটি মন্ত্র প্রতিবার বলে পূজার তামার পাত্রে দাও:- এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সূর্যায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে লাল জবা পুষ্প দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ দুর্গায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে লাল জবা পুষ্প দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বিষ্ণু দেবায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে তুলসীপত্র দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ ( বেলপত্র এর সঙ্গে ধুতরা ফুল দাও ) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গুরুবে নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহভ্য নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদি দশদিক পালেভ্য নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বেভ্য দেবেভ্য নমঃ এতে গন্ধপুস্পে সর্বেভ্য দেবীভ্য নমঃ এতে গন্ধপুস্পে বাস্তুপুরুষ দেবায় নমঃ এতে গন্ধপুস্পে দ্বারদেবতায় নমঃ { বিশেষ নির্দেশ:- এবার মূল যে দেবতার পূজা করা হবে তার মন্ত্র বলে নিচের পূজা করতে হবে—----------- প্রতিটি দেব/দেবীর পূজা এই সংক্ষিপ্ত পূজা পদ্ধতিতে পূজা করা যাবে কিন্তু এই নিচের উপাচার পূজা একমাত্র মূল যে দেব/দেবীর পূজা করা হবে -সেক্ষেত্রে সেই দেব বা দেবীর মন্ত্র বলতে হবে বাকি পদ্ধতি সব একই থাকবে |) সত্যনারায়ণ মূল উপচার পূজা :- (সত্যনারায়ণপূজা) [তিন বার সত্যনারায়ণ গায়ত্রীমন্ত্র জপ] (যে দেবতার পূজা করা হবে সেই দেবতার গায়ত্রী বলতে হবে গায়ত্রী জানা না থাকলে সেই দেবতার মন্ত্র বলতে হবে যেমন এক্ষেত্রে “ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ” ) ঘটস্থাপনঃ– নমো সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেব সমন্বিতং ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেব হিরোভব। স্বস্তিবাচন:- ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্ত্যি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যোঅরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।। ওঁ গণানাং ত্বা গণপতিগুং হবামহে, ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতিগুং হবামহে, ওঁ নিধীনাং ত্বা নিধিপতিগুং হবামহে, বসো মম। ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।। তারপর একে একে গণেশ, শ্রীগুরু, শিব, সূর্য, নারায়ণ, দুর্গা, নবগ্রহ, দশমহাবিদ্যা, দশাবতার, সর্বদেবদেবী ও আপনার ঠাকুরের আসনে অন্যান্য ঠাকুরদেবতা থাকলে তাঁদেরকে এবং আপনার ইষ্টদেবতাকে প্রত্যেককে একটি করে সচন্দন ফুল দিয়ে পূজা করবেন। . বৈদিক স্মার্ত সম্প্রদায়ের পূজা-উপাসনার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হইল পঞ্চদেবতা পূজা। গনেশের প্রনামঃ ঔঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজানন। বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্। . গুরু প্রনামঃ ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।১ অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া। চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।২. গুরু ব্রক্ষা গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রক্ষ তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।৩ . শিবের প্রনাম মন্ত্রঃ ওঁ নমস্তভ্যঃ বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুসে নমঃ । পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ ।। নমত্রিশূলহস্তায় দন্ড পাশাংসিপাণয়ে । নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ ।। ওঁ বানেশ্বরায় নরকার্ণবতারনায় , জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায় । কর্পূরকুন্ডবলেন্দুজটাধরায় , দারিদ্রদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ।। ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে । নিবেদয়ানি চাত্মানংত্তৃংগতিপরমেশ্বরঃ ।। . দূর্গা প্রণামঃ ওঁ জয়ন্তি,মঙ্গলা, কালী,ভদ্রকালী,কপালিনী। দূর্গা,শিবা,ক্ষমা,ধাত্রি,স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।। . নারায়ণের প্রনামঃ নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।। . সূর্যপ্রণাম: ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।। নারায়ণের স্নান: ধ্যানান্তে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ঘণ্টা বাজাইতে বাজাইতে স্নান করাইবে— ওঁ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপাৎ। স ভূমিং সর্বতঃ স্পৃত্বা অত্যত্তিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলাম্।। ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।। স্নানান্তে ‘ওঁ নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা’ মন্ত্রে দুইটি তুলসীপত্র ৺নারায়ণের উপরে ও নীচে দিবেন। নারায়ণের ধ্যানঃ কূর্মমুদ্রায় পুষ্প লইয়া পূর্ববৎ ধ্যান করিবে— ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ। কেয়ূরবান্ কনককুণ্ডলবান্ কিরীটীহারী হিরণ্ময়বপুর্ধৃতশঙ্খচক্রঃ।। পঞ্চপচারে নারায়ণ পূজাঃ ওঁ নমো নারায়ণায় এষ গন্ধঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনপুষ্পং নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনতুলসীপত্রং ওঁ নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় এষ ধূপঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় এষ দীপঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং নৈবেদ্যং নারায়ণায় নমঃ। . নারায়ণের প্রনামঃ ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতঃ শ্রীমান্ সদাবিজয়বর্ধনঃ। শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোঽস্তু তে।। নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ . লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান মন্ত্র: ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।। গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্। রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।। . শ্রীশ্রীলক্ষ্মী স্তোত্রম্ঃ ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে। যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।। ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া। পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।। দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত। স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।…(তিন বার পাঠ করতে হবে) শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্রঃ ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে। ধ্যায়েৎঃ– ওঁ সনাং গুণাতীতং গুণত্রয় সমন্বিতং। লোকনাথং ত্রিলোকেশং পীতাম্বর ধরং বিভুঃ। ইন্দি বরদল শ্যামং শঙ্খ চক্র গদাধরং। নারায়ণ চর্তুবাহুং শ্রীবৎস পদ ভূষিতং গোবিন্দং গোকুলানন্দং জগতং পিতরং গুরু। এইরূপে ধ্যানান্তে গন্ধ পুষ্প যোগে পাঠাৰ্চ্চনা করিবেন যথাঃ এতে গন্ধে পুষ্পে ও আঁধার শক্তয়ে নমঃ এবং প্রকৃত্যৈ কুৰ্ম্মায় নমঃ অনন্তায় নমঃ পৃথিব্যৈ নমঃ ক্ষীরসমুদ্রায় নমঃ রত্নদীপায় নমঃ কল্পদ্রুমায় নমঃ মসিমন্তপয়ে নমঃ রত্ন সিংহাসনায় নমঃ পুনঃ ধ্যায়েৎ পুষ্পটি ঘটে দিয়া শ্রীভগবৎ সত্যনারায়ণ দেব ইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ, ইহতিষ্ঠ অত্রধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজা গৃহাণ যাবত্বং পূজয়ামি তাবত্ত্বং সুস্থিরো ভব। আহবানঃ– ওঁ আগচ্ছ ভগবান দেব সর্বকামফলপ্রদ মৎ পূজন সু-সিদ্ধার্থ সান্নিধ্যমিহ কল্পয়। তারপর ষোড়শপচারে, দশোপচারে বা পঞ্চোপচারে ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ মন্ত্রে পূজা করিবেন। পাদ্য, অর্ঘ, গন্ধ, পুষ্প, আচমনীয়, স্নানীয়ং, পুনরামচীনীয়, বিল্বপত্র, সোপকরণ নৈবেদং পানার্থ জলং, শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণ নমঃ। পরে নৈবৈদ্য নিবেদন করিতে হয়। মন্ত্র যথাঃ– ওঁ সম্পাদং গোধুম চুর্ণদুগ্ধ রম্ভাদি শর্করম্। সঘৃতৈ কীকৃতং সর্বং নৈবৈদ্যং ও সত্যনারায়ণ দেব গৃহ্যতাং প্রভো। এতদ্ গোধুমচূর্ণ-দুগ্ধ শকরা উষ্ণী কৃত নৈবৈদ্যং ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ।। পরে বাম করে ব্যাসমুদ্রা প্রদর্শন পূর্বক দক্ষিণ করের অঙ্গুষ্ঠা, কনিষ্ঠা ও অনামিকা যোগে-“প্রাণায় স্বাহা, তর্জনী মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠযোগে অ-পানায় স্বাহা, মধ্যমা অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠযোগে সমানায় স্বাহা, অঙ্গুলী পঞ্চক যোগে বানায় স্বাহা বলিত হয়” পানার্মোদক পুনরাশ্চনীয় তাম্বুল ইত্যাদি দিয়া জলপাত্রে গুহ্যাতি গুহ্য ইত্যাদি মন্ত্রে জল নিক্ষেপ করিয়া গুহ্যাতি গুহ্য গোপ্তাত্বং গৃহানাস্যাৎ কৃতং জপং সিদ্ধি ভবতু মে তৎ প্রসাদাৎ সুরেশ্বর। তৎপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে মন্ডল প্রদক্ষিণ করিতে হয়। যথা- ওঁ যানি যানি চ পানি সর্বকাল কৃতানিচ। তানি তানি বিনশ্যস্তু প্রদক্ষিণং পদে পদে। " এতদ্ পাদ্যং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( পাত্রে একটু জল দিবে) " ইদম্ অর্ঘ্যং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( শঙ্খ এ জল নিয়ে আরতির মত করে দেখাবে ) " ইদম্ আচমনীয়ং জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( পাত্রে একটু জল দেবে) "এস মধুপর্ক শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( দধি, ঘী, মধু জল পাত্রে দাও -না থাকিলে চন্দন জল পাত্রে দাও) (নিচের মন্ত্র গুলি পাঠ করিতে করিতে স্নান মন্ত্র উচ্চারণ করিবে ) " এতদ্ স্নানীয় জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ " ৷ ( তিনবার মন্ত্র বলে পাত্রে 3 বার জল দাও) তারপর পুনরায়:----- এষ গন্ধ ওঁ শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (পাত্রে চন্দনের ছিটা দেবে) পুস্পাঞ্জলীঃমন্ত্রঃ – ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্ত্তী, নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ। কেয়ূরবান্ কণককুণ্ডলবান্ কিরীটীহারী হিরণ্ময়বপুর্ধ্বতশঙ্খচক্রঃ।। এব সুগন্ধ বিল্বপত্র পুস্পাঞ্জলী নমঃ সাহুধায়,সবাহনায় সপরিবারায় সাঙ্গপাঙ্গায়ৈ নমো শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ।। ………………………………………….(তিনবার) এরপর হাত জোড় করে প্রণাম এর মতন করে বল:- ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতঃ শ্রীমান্ সদাবিজয়বর্ধনঃ। শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোঽস্তু তে।। নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ। নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।। ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে।। এষ ধূপ শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (পাত্রে / শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ এর প্রতিচ্ছবি সামনে আরতির মত করে কমপক্ষে 3 বার ধূপ দেখাবে) এরপর আবরণ দেবতাদের পূজাঃ শঙ্খে ফুল, জল দিয়ে ভোগ নিবেদন :- ওঁ এতস্মৈ সোপকরন্মায় নম: (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধপুষ্প ওঁ এতস্মৈ সোপকরন্মায় নম: (নৈবেদ্য উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতপস্তরন মসি স্বহা (তাম্রপাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয় জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (তাম্রপাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (গ্লাসে খাবার জল দাও এবং দশবার “ওঁ” মন্ত্র জপ কর) এষ সোপকরন ফলং মিষ্টি নৈবদ্যং পঞ্চ প্রনয় স্বহা ওঁ নমঃ শ্রী সত্যনারায়ণ নিবেদয়ামি ৷ ( এবার হাতে গ্লাসের মত করে কোথা থেকে কুশীতে জল নিয়ে মন্ত্র পড়ে জল দেবে ) তারপর দরজা বন্ধ করে বাইরে যেতে হবে অথবা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে এবং মনে মনে “ওঁ” মন্ত্র জপ করা উচিত - তারপর পুনরায় চোখ খুলে বা ওই ঘরে প্রবেশ করে নিচের পদ্ধতিটি করতে হয় ইদম্ পুনরাচমনীয়ং জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ ( তাম্রপাত্রে জল দাও) স্তবঃ-ওঁ জলময়া ভক্তিযোগের পত্রং পুষ্পং ফলং। নিবেদিতঞ্চনৈবেদ্যং তদ্গৃহানুকম্পয়া। তদ্বিয়বস্তু গোবিন্দ তুভ্যাময় সমর্পয়ে। গৃহান সু মুখোখাতুত্বা প্রদীদ পুরুষোত্তম। মন্ত্র হীনং ক্রীয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন। যৎ পুজিতাংময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তু মে। অমোঘা পুন্ডরী কাক্ষং নৃসিংহ দৈত্যনিসুদনং। হৃষীকেশং জগন্নাথং বাজীশং বরদায়কম। সগুনঞ্চ গুনাতীথ গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্। জনার্দনং জনানন্দং জানকী জীবনং হরিম্। প্রণমামি সদা দেবং পরং ভক্তা জগৎপতিং। দুর্গমে বিষমে ঘোরে শত্রু ভিঃ প্রপীড়িতে। নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্ঠ ভবেষু চ নাতান্যেতানি সংকীর্তন ঈপিদতং ফলংমাপুয়াৎ। সত্যনারায়ণ দেবং বন্দেহং কামদংপ্রভুং, লীলয়া বিত্ততং বিশ্বং যেন তস্ম্যৈ নমো নমঃ। বন্দনা নম নমঃ গজানন বিঘ্ন বিনাশন। ভূমে লুটি বন্দি দেব দেবীর চরণ।। মাতাপিতা বন্দি আমি গুরু চরণ। সত্যনারায়ণ ব্রত কথা করি যে বর্ণন।। জীবের দুর্গত রাশি নাশিবার তরে। ভকত বৎসল হরি এ’ল লীলা করে।। সত্যনারায়ণ রূপে যে মতে প্রকাশ। স্কন্দ পুরাণে সেই কহি ইতিহাস।। ব্রতকথা— প্রথমে বন্দিনু আমি দেব গজানন।সর্ব সিদ্ধিদাতা আর বিঘ্ন বিনাশন। হর-গৌরী বন্দিনু বিরিঞ্চি নারায়ণ। বশিষ্ঠ বাল্মীকি আদি বন্দি মুনিগণ। প্রণমিনু সত্যপীর নিয়ত হাসিন। যাহার কৃপায় হয় ভুবন অখিল।লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দি কালী করালিনী। সত্যপীর উপাখ্যান অপূর্ব কাহিনী।। শুন শুন সর্বজন হয়ে এক চিত। যার যে পাইবে বর মনে বাঞ্ছিত।। গরীব ব্রাহ্মণ এক ছিল মথুরায়। ভিক্ষা করি কাটে কাল সুখ নাহি পায়।। একদিন সেই দ্বিজ ভ্রমিয়া নগর। কিছু না পাইয়া = ভিক্ষা হইল কাতর। বৃক্ষতলে এসে বিপ্র বিষাদিত মন কান্দিতে লাগিল দ্বিজ ভিক্ষার কারণে। কান্দিতে কান্দিতে দ্বিজ হইল অস্থির। দেখিয়া দয়ার্দ্র বড় হৈল সত্যপীর।। দয়াময় প্রভুদেব সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে তারে দিল দরশন। দ্বিজে কয় নারায়ণ, শুন মহাশয়। কি কারণে কাঁদে তুমি বসিয়া হেথায়।। দ্বিজ বলে, কি হইবে বলিলে তােমায়। ফকির বলেন দ্বিজ ক্ষতি কিবা তায়।। দ্বিজ বলে নিত্য আমি ভিক্ষা মাগি খাই। আজ না পাই ভিক্ষা দুঃখ ভাবি তাই। ফকির কহিল, দ্বিজ যাও নিজ ঘরে। আমারে পূজা তব দুঃখ যাবে দূরে।। দ্বিজ বলে, নিত্য পৃজি শিলা নারায়ণ। তাহা ভিন্ন না করিব স্নেচ্ছ আচরণ।। হাসিয়া ফকির বলে, শুন দ্বিজবর। পুরাণ কোরাণে কিছু নাহি মতান্তর।। রাম ও রহিমে জেনাে নাহি ভেদাভেদ। ত্রিজগতে এই দুই জানিবে অভেদ।। এত বলি নিজমূ্তি ধরে জগন্নাথ। শখ চক্র গদা পদ্মধারী চারি হাত।। মুক্তিহেরি দ্বিজবর পড়িল ধরণী। করিল প্রচুর স্তব গদগদ বাণী।। দেখিতে দেখিতে পুনঃ ফকির হইল। দেখি তাহা দ্বিজবর বিস্মিত হইল।ব্রাহ্মণ বলেন, প্রভু পূজিব তােমায়। পূজার পদ্ধতি কিবা বল হে আমায়। ফকির বলিল, তবে শুন দ্বিজবর। ছড়া কলা করিবে আয়ােজন। সওয়া গণ্ডা গুবাক আর পন সওয়া পান।। সওয়া সেরা চিনি কিংবা গুড় আর ক্ষীর। তাহাতে সস্তুষ্ট হই আমি সত্যপীর।। চিনি আর ক্ষীর দিতে যার নাই শক্তি। দুগ্ধ আর গুড় দিয়ে করিবে ভক্তি। বসিবে সকল ভক্ত হয়ে একমন। এক মনে ভক্তিভরে করিবে পূজন৷ পূজা অন্তে ব্রতকথা শুনিবে শ্রবণে। ভক্তিতে পূজা কর শাস্ত্রের বিধানের সত্যপীর বলি সবে মাথে দিবে হাত। নারায়ণ বলিয়া করিবে প্রণিপাত। প্রসাদ লইবে সবে শাস্ত্রের বিধান। এত বলি নারায়ণ হন অন্তর্ধান ভক্তিভাবে দ্বিজবর হয়ে হরষিত। কিছু ভিক্ষা করি গৃহে হন উপনীত। ব্রাহ্মণী শুনিয়া সব হয়ে আনন্দিত। পূজা হেতু আয়ােজন করে বিধিমত। ভক্তিভাবে পূজা দ্বিজ নারায়ণ পদ। প্রভুর কৃপায় দ্বিজ লভিল সম্পদ৷৷ কাঠুরিয়াগণ সবে বিস্ময় মানিল। ভক্তিভরে ব্রাহ্মণের জিজ্ঞাসা করিল ৷৷ ব্রাহ্মণ তাদের বলে বিধান সমস্ত। কাঠুরিয়া পুজিবারে হৈল বড় ব্যস্ত। সিন্নি যে করিল তারা বিধি সহকারে। দুঃখ দূর হইল আনন্দ ঘরে ঘরে। অতঃপর সদানন্দ সাধু একজন। কাঠুরের সম্পদ দেখিয়া হৃষ্টমন। জিজ্ঞাসিয়া সবকথা জানিতে পারিল। শুনিয়া সাধুর মনে ভক্তি উপজিল।। সাধু বলে অপ্রতুল নাহি অন্যধনে। কন্যা নাই দুঃখ তাই সদা উঠে মনে। যদ্যপি আমার এক জনমে তনয়া। সত্যদেব পূজা করি আনন্দিত হৈয়া।এত বলি গেল সাধু অঙ্গীকার করি। যথাকালে জন্মে কন্যা পরমাসুন্দরী।সত্যনারায়ণ পূজা সে সাধু ভুলিল। যথাকালে কন্যাটির বিবাহ যে দিল। অতঃপর সাজাইল সপ্তমধুকর। জামাতা সহিত সাধু চলিল সত্বর। দক্ষিণ পাটনা রাজা নাম কলানিধি। সেই রাজ্যে সদাগরে মিলাইল বিধি৷৷ রাজা সম্ভাষিয়া তাকে তরণী চাপিয়া। প্রমাদ ঘটিল তার সিন্নি নাহি দিয়া।। রাজার ভাণ্ডার মাঝে ধনাদি যা ছিল। রাত্রিতে আসিয়া সাধুর তরী পূর্ণ হল৷৷ ছল পেয়ে রাজা তার তরী লুঠ করে। শ্বশুর জামাতা লয়ে রাখে কারাগারে রাজাদেশে কোটাল মশানে লয়ে যায়। পাত্র অনুরােধে তারা উভে প্রাণ পায়৷৷ কারাগারে বন্দী থাকে শ্বশুর জামাই। কি কহিব উভয়ের দুঃখের সীমা নাই। এখানে সাধুর পত্নী আর তার সুতা। পতির বিলম্ব দেখি মহা শােকযুক্তা।। সঙ্গতি বিনষ্ট হৈল পড়িল দুঃখেতে। দাসীত্ব করিয়া খায় পরের গাহতে৷ একদিন সাধুকন্যা বেড়াইতে গিয়া। আনন্দিত দ্বিজ-গুহে সিন্নি দেখিয়া।। সব শুনি কন্যা সেথা মানত করিল। পিতা আর পতি-আশে কামনা করিল।। শ্বশুর জামাতা যেথা বন্দী কারাগারে। নারায়ণ স্বপ্নে কন সেই নৃপবরে৷৷ শুন ওহে মহারাজ আমার বচন। কলিকালে পূজী আমি সত্যনারায়ণ৷ সদাগর দুইজন শ্বশুর জামাই। বিনাদোষে বন্দী আছে তােমারে জানাই৷৷ প্রভাত হইলে তুমি দুই সদাগরে। দশগুণ ধন দিয়া তুষিবে আদরে।। এত বলি ধরিলেন আপন মূরতি।স্বপ্ন দেখি চমকিয়া উঠিল নৃপতি।মুক্ত করি সদাগরে বহুধন দিল। তরী পূর্ণ করি রাজা বিদায় করিল।। বুঝিতে সাধুর মন সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে পথে দিল দরশন।। ফকির বলেন, শুন ওহে সদাগর। ফকিরেরে কিছু ভিক্ষা দিয়া যাও ঘর৷৷ শুনি সদাগর তারে অবজ্ঞা করিল। তরীর সামগ্রী যত তুষাঙ্গর হৈল। দেখি তাহা সদাগর করে হায় হায়। ধরণী লােটায়ে ধরে ফকিরের পায়। অবশেষে ফকির তাহারে কৃপা কৈল। ধনৈশ্বর্যে তরী পুনঃ পরিপূর্ণ হৈল।। উতরিল ঘাটে সাধু হৈল কোলাহল। নাধুর রমণী কন্যা শুনি কুতুহল।। তরীর সামগ্রী যত ভাণ্ডারেতে লৈয়া। সিন্নি করিল সাধু আনন্দিত হৈয়া।। সকলে প্রসাদ নল যােড় করি পাণি। প্রসাদ ভূমিতে ফেলে সাধুর নন্দিনী।। তাহা দেখি সত্যদেব কৃপিত হইল। জামাতা সহিত তরী জলেতে ডুবাল।৷ হাহাকার করে সরবে পড়িয়া ভূমেতে।শুনি সাধু কন্যা যায় ডুবিয়া মরিতে। হেনকালে দৈববাণী হৈল আচম্বিত । সিরনি ফেলিয়া কন্যা কৈল বিপরীত।। শুনি কন্যা সেই সিন্নি চার্টিয়া খাইল। জামাতা সহিত তরী ভাসিয়া উঠিল তরীর সকল দ্রব্য ভাণ্ডারেতে আনি। করিলেক সওয়া সের সোনার সিরনী। স্বপ্নে কহিলেন দেব, শুন সাধু তুমি। সোনা হতে আটায়, সন্তোষ হই আমি। স্বপ্ন দেখি সদাগর পরম হরিষে। আটার সিন্নী করি পূজে সবিশেষে।। ক্রমেতে প্রচার হ’ল সবার আলয়। ভক্তিভরে পূজিলেই আশা পূর্ণ হয়। একমনে শুনে কিংবা পূজে নারায়ণ। সর্বদুঃখ দূরে যায় শাস্ত্রের বচন।। সিন্নি মেনে যেই জন হয় দুই মনা। কদ্যপি না হয় সিদ্ধ তাহার কামনা। - অথ সত্যনারায়ণের ব্রতকথা সমাপ্ত- দ্বাপরের শেষ ভাগে রাজা যুধিষ্ঠির। কলি প্রাদুর্ভাব দেখে হলেন অস্থির।। একদিন শ্রীকৃষ্ণকে করে জিজ্ঞাসন। কলির প্রভাব হতে কিসে পাবে ত্রান।। শ্রীকৃষ্ণ কহেন শুন কহি সে বিস্তর। জীব লাগি যুগে যুগে মোর অবতার।। লক্ষগুণ পূণ্য কেহ সত্য যোগে করে। ত্রেতার অযুত গুণ সমফল ধরে।। দ্বাপরে শতেক গুণ সু-কৃৎ কলিতে। যদিও ভীষণ কলি সহজ তরিতে।। কলি আরম্ভের পাঁচ হাজার বৎসরে।। অবতীর্ণ হব আমি অবন্তি নগরে।। স্বর্গ বাসে যাবে তোক আমার কৃপায়। হরিনাম অগ্নি সম কলি তুল্য প্রায়।।। কলি অন্তে এক বর্ণ হইবে যখন। কল্কি অবতারে তাহে করিব নিধন।। এত শুনি যুধিষ্ঠির গোবিন্দ ভাবিয়া।। শরীরে স্বর্গপুরে গেলেন চলিয়া।। অবন্তী নগরে অতঃপর নারায়ণ। সত্যনারায়ণ নামে অবতীর্ণ হন।। সন্ন্যাসী বেশে প্রভু সত্যনারায়ণ। ভিক্ষুক ব্রাহ্মণে এক দেন দরশন।। একদিন সেই দ্বিজ সত্যনারায়ণে। সন্ন্যাসীর বেশে ডাকি কহেন ব্রাহ্মণে।। কোথায় কি হেতু দ্বিজ করেছ গমন। প্রণাম করিয়া দ্বিজ কহে বিবরণ।। দরিদ্র ব্রাহ্মণ আমি অবন্তীতে বাস। কর্মদোষে দরিদ্রতা আসে ভিক্ষা আশ ।। ভিক্ষা করি দেড় সের লয়ে যাই ঘরে। দিনে লাগে দুই সের পেট নাহি ভরে।। এত শুনি দয়া করি বলে নারায়ণ।। শুনি দ্বিজ আমি হই সত্যনারায়ণ।। আমারে পূজিলে হয় দুঃখ অবসান। যাগ যজ্ঞ টাকা কড়ি নাহি প্রয়ো জন।। ভক্তিতে ভজনে পূর্ণ হয় সর্বআশ। অভক্তি করিলে তার হয় সর্বনাশ।। দ্বিজ বলে নিজরূপ দেখাও আমারে। তবে প্রতি মম হইবে অচিরে।। নিজরূপ ধরিলেন দেব নারায়ণ। পূর্বাজিত কর্মফলে দেখিল ব্রাহ্মণ। ব্রহ্মা আদি দেব যারে ধ্যানে নাহি পায়।। কমলা সেবিত পদ দেখিল দয়ায় । শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম চতুভূজধারী।। পরিধান পিতাম্বর যাই বলি হারী।। কুন্ডল কর্ণেতে আর শিখি পুচ্চচূড়ে। মকরন্দ লোভেকত মধুকর উড়ে।। অঙ্গের ভূষণ কত শোভে নানা মতে। দেখি অচেতন দ্বিজ পড়িল ভূমিতে।। চেতনা পাইয়া দ্বিজ লোটায়ে চরণে। বলে প্রভু দেখা মোরে দিলে কেন শুলে।। দয়া করে কন তারে সত্যনারায়ণ। অবতীর্ণ অবনীতে জীবের কারণ।। কলির কলুষ রাশি বিনাশ করিতে। সত্যনারায়ণ রূপ প্রকাশি জগতে।। যাগ যজ্ঞ ক্রিয়া হীন ঘোর কলিকাল।। আমাকে পূজিতে নাহি কিছুই জঞ্জাল।। দিব্যপীঠে শুভ্র বস্ত্র করি আচ্ছাদন।। পুষ্প মাল্য দিয়া তাহে করিবে রচন। রাখিবে গুবাক পান চতুর্দিকে তার। ধুপ দীপ নৈবৈদ্যাদি অনেক প্রকার।। সোয়া করিয়া নানা, দ্রব্যাদি দিবে। দুগ্ধ চিনি আটা আনি তাতে মিশাইবে।। জ্ঞাতি বন্ধু সহযোগে মনোযোগ দিয়া। পূজা কিংবা ভক্তি ভরে পাঁচালী শুনিয়া।। প্রসাদ লইয়া সাধু অন্তরে করিবে। অশান্তি অরিষ্ট ব্যাধি সবই ঘুচিবে।। এত বলি সত্যদেব হন অদর্শন। আনন্দে গেলেন দ্বিজ ভিক্ষার কারণ।। সেইদিন ভিক্ষা প্রচুর পাইল। গৃহে ফিরি ব্রাহ্মণীকে বার্তা সব দিল।। ভিক্ষালবধ জিনিসের অগ্রভাগ দিয়া। সত্যনারায়ণ পূজে ভকতি করিয়া।। সেই মত আজ্ঞা পেল প্রভু নারায়ণ। নিত্য সেই মত করি পূজিল ব্রাহ্মণ।। ধনে জনে সম্পদে বাড়িল বহুতর। সেই দেশের রাজা হৈল এই দ্বিজবর।। একদিন কাষ্ঠ বেচি কাঠুরিয়া গণ। তৃষ্ণাযুক্ত হয়ে যায় দ্বিজের ভবন।। অশ্ব, গজ পদাতিক ঐশ্বর্য দেখিল। দুঃখী দ্বিজ রাজা দেখি বিস্মৃতি হইল।। দেখে সত্যনারায়ণে পূজিছে ব্রাহ্মণ। তারা সবে দেখি পূজা করিল গমন।। প্রসাদ লইয়া যায় কাষ্ঠ বেচিবারে। চতুর্গুণ লভ্য তারা করিল সত্বরে।। পূজার সামগ্রী আনি কাঠুরিয়া গণ। ভক্তি ভরে সত্যদেবে সতত পূজয়।। কাঠুরিয়া নদীতীরে পূজে নানা মতে। ধনেশ্বর সওদাগর যায় সেই পথে।। গৌড়েতে বসতি তার ডিঙ্গা বেয়ে যায়। বাণিজ্য করিছে সাধু এথায় সেথায়।। পূজা দেখি ডিঙ্গা রাখি উঠি তট দেশে। কাঠুরিয়াগণে কহে সু-মধুর ভাষে।। কার পূজা করিতেছ কিবা ফল তার। কাঠুরিয়াগণে তারে কহিল বিস্তার।। সাধু বলে মোর নাহি কোন দুঃখ। একমাত্র সন্তানের দেখি নাই মুখ।। পুত্র কিম্বা কন্যা এক যদি মোর হয়। হাজার টাকার ভোগ মানিনু নিশ্চয়।। কামনা করিয়া সাধু লইল প্রসাদ। গৃহে গিয়া অবিলম্বে ঘুচিল বিষাদ।। কন্যা এক জনমিল নারায়ণের বরে। শশীকলা সমকন্যা দিনে দিনে বাড়ে। ক্রমেতে বিবাহ কাল হইল উপনীত। জামাতা আনিতে সাধু হলেন বিব্রত।। রূপে গুনে চন্দ্র কেতু ছিল সওদাগর। বিবাহ দিলেন কন্য করি সমাদর।। অল্পকালে তাহার বিয়োগ হল মাতা পিতা। পুত্র-বৎ নিজগৃহে রাখিল জামাতা।। তবে কত দিনে সাধু বাণিজ্যেতে যাইয়া। নানা দ্রব্য পুরি সপ্ত ডিঙ্গা সাজাইয়া।। জামাতা সহিত যায় বাহি ভাগিরথী। সত্যনারায়ণ পূজা হইল বিস্মৃতি।। দৈবের নির্বন্ধ কেবা করয়ে খন্ডন। অতঃপর যা হইল শুন তার বিবরণ।। নদ-নদী অতিক্রম ডিঙ্গাবেয়ে দিবানিশি আসিলেন সুরথ বন্দর। রাজ ভেট দিয়া নানা, করে কথা বেচা কিনা, রজত কাঞ্চন বহুতর।। সূৰ্য্য চন্দ্র কান্তমনি, মতিহীরা লাল চুণী, প্রবাল পরশ শিলাকত। শঙ্খ চূনি গজমতি, কস্তুরী চামর ইতি ,রেশমী ও পশমী বনাও।। অগুরু চুয়া চন্দন। নানা দ্রব্যে সম্মোহন ডিঙ্গা ভরি লইলেক কিনে।। হেথায় রাজার পূরে, চোরে দ্রব্য চুরি করে, সস্তায় বেচিল সাধু স্থানে।। অল্প মূল্য বহুধন, কিনে আনন্দিত মন। কেবা জানে ঘটিবে প্রমাদ।। আমোদ আহলাদে মাতি; সুখে মত্ত দিবারাতি। হেন কালে ঘটিল বিষাদ।। ডাকি কহে মহিপাল, শুন নরে কোটাল, অকাতরে পড়ি নিদ্রা যাও।। চোর ঢুকে রাজপুরে, বহু দ্রব্য চুরি করে। শীঘ্রচোর ধরি আনি দাও। কোটাল ঘুরিছে তবে, হেন কালে সত্য দেবে। ভিক্ষুকের ছলে কহে তারে।। ধর সাধু সওদাগরে। পাবে দ্রব্য তথাকারে শুনিয়া কোটালে ডিঙ্গা ধরে। রাজার কন্ঠ হার গলে সাধু জামাতার । দেখিয়া কুপিল ভয়ঙ্কর।।। সাধু আর জামাতারে রাখে দোহে কারাগারে ,ক্রমান্বয়ে দ্বাদশ বৎসর।। হেথায় বহুদিন হয় সাধুর রমনী কন্যা সহ আকুলিতা দিবস রজনী।। গৃহদাহে সর্বস্বান্ত হয়ে অতিশয়। বহু কষ্টে কাটে কাল নগরে ভ্রময়।। একদা দেখিল গ্রামে সাধুরে দুহিতা। সত্যনারায়ণের পূজা যতেক বর্ণিতা।। মানস করিলা মনে পিতা পতি তার। গৃহে যদি ফিরে পূজি সত্য-দেবতায়।। গৃহে আসি জননীরে বলিলা সকল। এক মনে নারায়ণে পূজে অবিকল।। ভক্তিতে করিল দয়া সত্য দেবতায়। স্বপ্ন ছলে আজ্ঞা করে সুরথ রাজায়।। আমার কিংকর দুই সাধু সদাগরে। কারাগার হতে দোঁহে ছাড়হ সত্বরে। আপনার মঙ্গল যদি রাজা তুমি চাও। ধন-রত্ন ডিঙ্গা সব ছেড়ে তারে দাও।। স্বপ্ন ভেঙ্গে নৃপতির হল বড় ভয়। দুই সাধু স্থানে তবে করজোড়ে কয়।। ক্ষমা কর সদাগর না জানি বিশেষ। লহ ডিঙ্গা, লহ ধন, যাও নিজ দেশে। সাধু কহে নৃপবর তব দোষ নাই। কর্ম দোষে ভুগিলাম এবে মোরা যাই। এই বলি ডিঙ্গা খুলি সাধু চলে যায়। সত্যদেব ছল করি জিজ্ঞাসে তাহায়। কোথা যাও সওদাগর যাও কি লইয়া। আমি ব্রাহ্মণ ভিক্ষা দাও তো ফেলিয়া।। সাধু বলে লয়ে যাও লতাপাতা সবে। ব্রাহ্মণ রোষিয়া বলে হৌক তাই তবে। দেখিতে দেখিতে ধন সব হল লতা পাতা।।ডিঙ্গা ভরি গেছে তার বহু লতাপাতায়।। ধন না দেখিয়া সাধু জলে ঝাপ দিল। চড়া হেতু প্রাণে সেই মরিতে নারিল।। জামাতা লয়ে যায় ব্রাহ্মণের কাছে। দোঁহে মিলি ব্রাহ্মণের পদে ধরি আছে।। তবে সত্যনারায়ণ দয়াবান হয়ে। ধনপূর্ণ কর ডিঙ্গা রোষ তেয়াগিয়ে।। “অসত্যের লাগি মানি সহস্রেক টাকা। আনি সত্যনারায়ণ ভূলিয়াছ পূজা”।। তাই দোঁহে বার বর্ষ রাজপুরে সাজা। এত বলি প্রভু যদি হল অন্তর্ধান। সহস্র সুবর্ণ তোড়া বাধিল তখন। দেশে আমি পূজা দিব মানস করিয়া ।। তাড়াতাড়ি উপনীত হল দেশে গিয়া। সংবাদ শুনিল সবে সাধুর দুহিতা।। প্রসাদ মাটিতে ফেলি খাইল সৰ্ব্বথা। সত্যনারায়ণ পুনঃ ক্রোধান্ধ হইয়ে। চন্দ্রকেতু সাগরে ফেলিল ডুবায়ে ।। জামাতা শশাকেতে আর সাধুর বর্ণিতা। নন্দিনী সহিত কাঁদে ক্ষণেক মুচ্ছিতা।। হায় হায় মরি মরি কোথা যাই কিবা করি, কাঁদে বামা সাধুর নন্দিনী। কিবা মোর কর্ম ফল পেলাম কত প্রতিফল কেন নাহি যায় মোর প্রাণ। পিতা মাতা প্রতি কহে কিবা কাজ এই দেহে পতি যথা যায় সেই স্থানে। এতবলি সাধু সুতা। হতে যায় অনুমৃতা হেনকালে দৈব বাণী শুণে।। পতির আনন্দে মেতে প্রসাদ ফেলে ভূমিতে এখন যে চাও মরিবারে। পতির জীবন পাবে প্রসাদ তুলিয়া খাবে তারপর পূজো ভক্তি ভরে।। মুক্ত কেশী হয়ে ধায় প্রসাদ মাটিতে পায়। খাইলেক মৃত্তিকা সহিতে। সত্যদেব দয়া হেতু গদাধর চন্দ্র কেতু ডিঙ্গা ভেসে উঠে আচম্বিতে ।।সওদাগর উল্লাসিত জামাতা পাইয়া।। অঙ্গনা সকলে উঠে জয়ধ্বনি দিয়া।। আম্রশাখা সারি সারি রম্ভা শত শত। পূর্ণ কুম্ভ দিয়া করে মঙ্গল বিহিত।।আনন্দে পুরিত মন হল সবাকার। শকটে পুরিয়া ধন নিল নিজাগার।। ভাঙ্গিয়া সহস্র তংকা সন্ধ্যাকালে সবে। নানা বিধ ভোগদ্রব্যে পূজে সত্যদেবে। সোয়াভাগ আটা চিনি দুধ আনি দিল। তাম্বুলাদি দিয়া শেষে পাঁচালী শুনিল। এইরূপে পূজিয়া নিত্য সত্যনারায়ণে। রাজ্যপেল সদাগর তার কৃপাগুণে।। অন্তকালে পত্নী সহ স্বর্গ পুরে পুরে যায়। দেখি শুনি সত্যদেব পূজিল সবায়।। পঙ্গু পদ অন্ধে চক্ষু বধিরে শ্রবণ। কুষ্ঠরোগী ভাল হয় পূজি নারায়ণ।। এতদূরে পাচালী যে সমাপ্ত হইল। সত্যনারায়ণ প্রীতে একবার হরি হরি বল।। শ্রী বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র – ওঁ পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মা পাপসম্ভব। ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষ সর্ব্বপাপ হরি।। নমঃ কমলনেত্রায় হরয়ে পরমাত্মনে। অশেষ ক্লেশনাশায় লক্ষ্মীকান্ত নমোহস্তুতে।। ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রাষ্টং মন্ত্রহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ। পূণং ভবতু তৎসব্বং তৎপ্রসাদাৎ জনার্দ্দনায় নম।। সত্যযুগের মন্ত্র:-নারায়ণ পরাবেদা নারায়ণ পরাক্ষরা,নারায়ণ পরা মুক্তিঃ নারায়ণ পরা গতি ৷৷ ত্রেতা যুগের মন্ত্র:-রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসূদন,কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুন্ঠ বামন ৷৷ দ্বাপর যুগের মন্ত্র:- হরে মুরারে মুধকৈটভারে,গােপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে,যজ্ঞের নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো, নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ ৷৷ কলিযুগের মন্ত্র:-হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ৷৷ ক্ষমা প্রাথনা মন্ত্র :- ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ভবেৎ পূর্নংভবতু ত্বৎ সর্বং ত্বৎ প্রসাদাৎ সুরেশ্বরি। ওঁ মন্ত্র হিনং ক্রিয়া হিনং ভক্তি হিনং সুরেসরী যত পুজিতং ময়া দেবী পরিপুর্নং তদুস্তুমে ।। চরণামৃত লওয়ার মন্ত্রঃ ওঁ অকাল-মৃত্যু-হরণং সর্ব্ব ব্যাধি-বিনাশনং । কৃষ্ণ পাদোদকং পীত্বা শিরসা ধারয়াম্যহং ।। ব্রতের উপকরণ:— ঘট, আম্রপল্লব, ডাব বা কলা, গামছা, সিন্দুর, গঙ্গামাটি, ধান, পিড়ে বা চৌকী, পাতন বস্ত্র,তীরকাঠি, পান, কলা, সন্দেশ বা বাতাসা, পয়সা, ফুলের মালা, পতাকা, ফুলের তােড়া, ছুরি, তিল, হরীতকী, ফুল, তুলসী, দূর্বা, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, পূজার বস্ত্র, গামছা, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, দধি, মধু, গব্যঘৃত, সিন্নির সামগ্রী নানাপ্রকার ফল কুচা, নৈবেদ্য, মিষ্টান্ন, দধি, গােময়, গােরােচনা, দক্ষিণা। শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা – সত্যনারায়ণ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি।পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সত্যনারায়ণ সত্যপীর নামেও পরিচিত। সত্যনারায়ণের পাঁচালি ও ব্রতকথায় উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সত্যনারায়ণ পীরের ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজের পূজা প্রচলন করেছিলেন। আমি যার উপর অনুগ্রহ করি , ধীরেধীরে তার সমস্ত ধন সম্পদ অপহরণ করে নিই, এভাবে যখন সে ধনসম্পদহীন হয়ে যায় তখন তার আত্মীয় স্বজন তাকে অবজ্ঞাপূর্বক পরিত্যাগ করে চলে যায় । সে আবার ধনসম্পদ আহরণের প্রয়াসী হলে আমি তার সমস্ত উদ্যম কে বিফল করে দিই । বারে বারে ব্যর্থ হয়ে সে ধন সম্পদ আহরণে নিবৃত্ত হয়ে তাকে দুঃখময় জ্ঞান করে আর আমার প্রেমী ভক্ত দের সঙ্গে আর সাধু সঙ্গে মগ্ন হয় । তখন আমি তার উপ্রর অহৈতুকী কৃপা বর্ষণ করে থাকি । তিলক ধারনঃ- বাম হাতের তালুতে অথবা কোন পাত্রে একটু জল নিয়ে তিলক গুলবে। মন্ত্র –“ওঁ কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম পুণ্যং যশস্যমায়ুস্য তিলকং মে প্রসাদাতু”
এরপর মধ্যমা বা অনামিকার অগ্রভাগে তিলক নিয়ে যথাক্রমে –
(১) ললাটে – কেশবায়ে নমঃ (৭) বাম বাহুতে – শ্রীধরায় নমঃ
(২) উদরে – নারায়নায় নমঃ (৮) ডান বাহুমূলে – ত্রিবিক্রমায় নমঃ
(৩) কন্ঠে – গোবিন্দায় নমঃ (৯) বাম বাহুমূলে – হৃষিকেশায় নমঃ
(৪) ডান পাজরে – বিষ্ণবে নমঃ (১০) স্কন্ধে – পদ্ম নাভায়ে নমঃ
(৫) বাম পাজরে – বামনায় নমঃ (১১) কোমরে – দামোদরায় নমঃ
(৬) ডান বাহুতে – মধুসূদনায় নমঃ
শেষে তিলকের হাত ধুয়ে জল মাথায় দিয়ে – বাসুদেবায় নমঃ বলতে হবে ।
এরপর গায়ত্রী জপ করবে ।
বাম ও ডান হাতের সব আঙ্গুলের মিলিত অগ্রভাগ দ্বারা উভয় বাহুমূল স্পর্শ করে ‘নৈং কবচায় হুং‘ডানহাতের অঙ্গুষ্ঠ, অনামিকা ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ মিলিত করে দুই চোখ স্পর্শ করে ‘নৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষ্ট‘ ডান হাতে তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হাতের পৃষ্ঠ ও তালু স্পর্শ করে তিন বার তালি দিয়ে ‘ণঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্ ‘
কুর্ম মুদ্রায় (বা হাতের তর্জনীতে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও ডান হাতের তর্জনীতে বা হাতে বৃদ্ধাঙ্গুল সংযুক্ত করে বাহাতের বুড়া আঙ্গুল উন্নত থাকবে, বা হাতের মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা ডানহাতের পৃষ্ঠদেশে সংযুক্ত করতে হবে। পরে তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের মধ্যভাগে ডান হাতের মধ্যমা ও অনামিকা সংলগ্ন করতে হবে । ডানহাতের পৃষ্ঠদেশ কূর্ম্পৃষ্ঠের মত উন্নত করাই কূর্মমুদ্রা) হাতে সচন্দন পুষ্প নিয়ে নারায়ণের ধ্যান করতে হবে –
ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃ মন্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসন – সন্নিবিষ্ট । কেয়ূরবান কনককুন্ডলবান কিরীটীহারী হিরন্ময় বপু ধৃত শঙ্খ চক্রঃ (ধ্যান শেষে ফুল নিজের মাথায় দিতে হবে )।
বিশেষার্ঘঃ নিজেজ বামে ভূমিতে জল দ্বারা প্রথমে ত্রিভুজ, এরপর ত্রিভুজকে বেষ্টন করে বৃত্ত এবং বৃত্তকে বেষ্টন করে বর্গ এঁকে তার উপর গন্ধপুষ্প দিয়ে পূজা করতে হবে ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ , এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ কূর্মায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ অনন্তায়ে নমঃ , এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ পৃথিব্যে নমঃ
এরপর মন্ডলের উপর ত্রিপদিকা (শঙ্খের স্ট্যান্ড) স্থাপন করে ‘হু ফট‘ মন্ত্রে শঙ্খ ধুয়ে ঐ ত্রিপদিকার উপর রাখতে হবে । নমঃ মন্ত্রে শঙ্খে ফুল, দুর্বা দিয়ে অর্ঘ্য সাজাতে হবে । পরে বিলোম মাতৃকা বর্ণ পাঠ করে অর্থাৎ উলটো দিকে বর্ণমালা পাঠ –ক্ষং হং সং ষং শং বং লং রং যং মং ভং বং ফং পং নং ধং দং থং তং ণং ধং ডং ঠং টং ঞং ঝং জং ছং চং ঙং ঘং গং খং কং অঃ অং ঔং ওং ঐং ৯ং ৯ঙ ঋং ঊং উং ঈং ইং আং অং নমঃ । ওঁ নমঃ নারায়ণায় নমঃ মন্ত্রে শঙ্খের তিন ভাগ জল পূর্ন করতে হবে । এরপর গন্ধপুষ্প দিয়ে মং বহ্নিমন্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ মন্ত্রে ত্রিপদিকায় অং সূর্যমন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ মন্ত্রে শঙ্খে উং সোমমন্ডলায় ষোড়ষ কলাত্মনে নমঃমন্ত্রে জলে পূজা করতে হবে । পরে অংকুশ মুদ্রা দিয়ে ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চোইব গোদাবরি সরস্বতী ; নর্মদে, সিন্ধু, কাবেরী জলহস্মিন সন্নিধিং কুরু মন্ত্রে সূর্য মণ্ডল হতে তীর্থ আহ্বান করে জলে নারায়ণের ধ্যান করতে হবে ।
হাতে একটি ফুল নিয়ে ধ্যান – ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃ মন্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসন – সন্নিবিষ্ট ।
কেয়ূরবান কনককুন্ডলবান কিরীটীহারী হিরন্ময় বপু ধৃত শঙ্খ চক্রঃ ধ্যানের পর পুষ্পটি নারায়ণের উপরে দিতে হবে । পরে অর্ঘের জল কোশায় কিছু রেখে এবং নিজেকে ও পূজা উপকরণে ছিটিয়ে দিতে হবে ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শঙ্খায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ চক্রায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গদায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ পদ্মায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ বনমালায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নন্দকায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গরুড়ায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শ্রী বৎসায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ কৌস্তভায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নারদাদি পার্ষদেভ্যো নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ মৎস্যাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ
গুরু প্রনাম – ওঁ গুরুভ্যো নমঃ , ওঁ পরম গুরভ্যো নমঃ , ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ , ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ
এরপর আরতি করতে হবে ত্রিকোন মন্ডল এঁকে ভূমি শুদ্ধ করতে হবে । তারুপর একে একে আরতি দ্রব্য যথা ধূপ, দীপ, শঙ্খ, ধোয়া কাপড়, ফুল, চামর, ও পাখা রেখে তা দিয়ে আরতি করতে হবে । আরতি করার সময় দাঁড়িয়ে বামহাতে ঘন্টা বাজাতে হবে । প্রদর্শনের স্তর
প্রথমে দেবতার পদতলে ———— ৪ বার দ্বিতীয়ত নাভি দেশে ————- ২ বার
তৃতীয়ত মুখমন্ডলে ————- ১ বার চতুর্থত সর্বাঙ্গে ————- ৭ বার