আদা হলুদ ব্রতের সময় বা কাল – চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তিতে এই ব্রত নিতে হয় আর সধবা স্ত্রীলোক এরাই এই ব্রত নিতে পারে।
আদা হলুদ ব্রতের নিয়ম – চৈত্র মাসের সংক্রান্তি থেকে আরম্ভ করে সারা বৈশাখ মাস প্রতিদিন একজনে এয়োকে একমুঠো ধান, একমুঠো ধনে, পাঁচটি হলুদ, পাঁচটি টুকরো আদা, বিভিন্ন মিষ্টি ওপয়সা দিয়ে ব্রত পালন করার নিয়ম এইভাবে এই ব্রত চার বছর করে শেষ বছরে উদযাপন করতে হয়।
আদা হলুদ ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের নিয়ম – শেষ বছরে চার জনে ও স্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে বেশ তৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করাতে হবে ও প্রত্যেককে কড় লোহা (নোয়া), সিঁদুর, আলতা, মাথার চিরুনি,
আয়না ও সামর্থ্য কুলালে শাড়ি বা গামছা দিতে হবে কিন্তু যাকে দিয়ে প্রথম ব্রত নেওয়া হয়েছে তাকে কাপড়, সোনার নোয়া, রুপোর সিঁদুর কৌটো, আয়না, চিরুনি, পাখা ও ষোলআনা দক্ষিণা দেওয়া কর্তব্য।
আদা হলুদ ব্রতের ফল – এই ব্রত পালন করলে বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না
মন্ত্র –
আদা হলুদ ব্রত করে এই পেলাম বরং
এ জীবনে থাকবে নাকো বৈধব্যের ডর।।
রূপ হলুদ ব্রতের সময় বা কাল – আদা হলুদ ব্রতের মত রূপ হলুদ ব্রতও চার বছর করতে হয়। চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত এই রূপ হলুদ ব্রত করতে হয়।
রূপ হলুদ ব্রতের নিয়ম – চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন সকালে একজন এয়োর কপালে বাটা হলুদ ছুইয়ে দেবেন। বিকেলে সুগন্ধি তেল দিয়ে কেশবিন্যাস করে দিয়ে করে দিয়ে তাকে সিঁদুর পরিয়ে দিতে হবে।
কপালে সিন্দুরের বেশ বড় ফোঁটা পরিয়ে দিতে হবে। এইভাবে সারা বৈশাখ মাস করতে হয়।
রূপ হলুদ ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের নিয়ম – পরের বছরের বহইটর সংক্রান্তিতে দুজন করে এয়োকে, তৃতীয় বছরে তিনজন করে এয়োকে, আর চতুর্থ অর্থাৎ শেষ বছরের চারজনকে ঐভাবে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন চারজন এয়োকে
সকালে বাড়িতে নিমন্ত্রন করে নিয়ে এসে ভাল সুগন্ধ তেল তাদের চুল ভাল করে বেঁধে দিতে হবে। সিঁথিতে ও কপালে সিঁদুর দিয়ে সাজাতে হবে। প্রত্যেককে একটি করে নতুন শাড়ি পরিয়ে পরিপাটি করে ভোজন করতে হবে।
প্রত্যেককে লোহা, কড়, সিঁদুর-চুপড়ি, আলতা, মাথাঘষা, হলুদ ছোপানো গামছা, মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা ধরে দিতে হবে। যাকে দিয়ে প্রথম ব্রত নেওয়া হয়েছিল তার লালপেড়ে শাড়িখনি, হলুদে চুপিয়ে দিতে হয় এবং তাকে অতিরিক্ত স্বরুপ রূপোর সিঁদুর কৌটো, এন, চিরুনি, পাখা ও একটি টাকা দিতে হবে।
রূপ হলুদ ব্রতের ফল – এই ব্রতের ফলে স্ত্রীলোক রূপ ও লাবণ্য বতী হয়।
মন্ত্র –
রূপ হলুদের ব্রত করে চাইছি এমন বর।
জন্মে জন্মে রূপ যেমন হয় হলুদের মতন।।
নানা রকম ফুল, তুলসী পাতা, দূর্বা, আলোচাল, কাঁঠালি কলা, মালা, ঘট, আম পাতা ও নৈবেদ্য।।
হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত সময় বা কাল – বৈশাখ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এ এই ব্রত করতে হয়। সধবা আর বিধবা দুই শ্রেণীর মেয়েরাই এই ব্রত করতে পারে।
এক গ্রামের এক গয়লার বউ সেই গ্রামেরই এক ব্রাহ্মণ এর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল। এদের মধ্যে ভাবছিল খুব। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণী হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করতেন আর গয়লার বৌও তার ব্রত করা দেখতো।
এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর গয়লা বউয়ের এই ব্রত করার ইচ্ছে হল আর সে ব্রাহ্মণী কে জিজ্ঞাসা করলো যে এই ব্রত করলে কি ফল হয়। ব্রাহ্মণী তার কথা শুনে বললেন যে এই ব্রত করলে জীবনে কারোর চোখের জল পড়ে না
উল্টে তার সারা জীবন কেটে যায় খুব আনন্দে। এই কথা শুনে গয়লার বউ এর খুব আনন্দ হল। সে ব্রাহ্মণী কে বলল যে সেও এই ব্রত করতে চায়। ব্রাহ্মণী গয়লার বউকে অনেক বোঝালেন তিনি বললেন তুমি পারবেনা বন্ধু এই ব্রত করা খুবই কঠিন।
কিন্তু গয়লা বউ তো তার কোন কথাই শুনতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণী বাধ্য হয়ে তাঁকে ব্রতের সব কথা বলে দিলেন এরপর বৈশাখ মাস পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গয়লা বউও
এই হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করতে আরম্ভ করে দিল এইভাবে দুটো ব্রত করার পরই মা মঙ্গলচন্ডীর তার উপর দয়া হলো আর সঙ্গে সঙ্গে ঐশ্বর্য্য সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠল গয়লা বউয়ের সংসার।
এর আগে গয়লা বউ খুবই গরীব ছিল। এখন তার এত ধনৈশ্বর্য হওয়ার ফলে সে কেমন যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল। সে আর সহ্য করতে পারলো না তার অবস্থার এই পরিবর্তন দেখে।
এখন খাবার ইচ্ছে হতে লাগল তার। কিন্তু যার এত ধনৈশ্বর্য তার কান্না আসবে কেমন করে ! শেষে গয়লা বউ আবার গিয়ে ব্রাহ্মণী কে ধরে বসলো আর বলল “সই, আমি আর এসব সহ্য করতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে খুব খানিকটা কাঁদি।
তুমি আমাকে বলে দাও সই, কি করলে আমি কিছুটা কাঁদতে পারি ?” গয়লা বউয়ের কথা শুনে ব্রাহ্মণী তো একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলেন তিনি বললেন “সে কি সই, তুমি কাঁদবে কেন ?
তোমার এখন সুখের সংসার হয়েছে এত আনন্দ ভোগ করছো এতে কাঁদতে আবার কেউ চায় নাকি ? এযে হরিষ মঙ্গলচন্ডী ব্রতের ফল। এই ব্রত করলে শুধু আনন্দই নয় কান্নাকাটি এর ধারে কাছে আসতে পারে না।
আমি তো আগেই তোমাকে বলেছিলুম যে এই ব্রত করা খুবই কঠিন তখন তুমি আমার কথা শুনলে না। এখন কাঁদতে চাইলে চলবে কেন বল ?” গয়লা বউয়ের তখন প্রায় পাগলের মত অবস্থা।
সে বললে “আমি কাঁদতে না পারলে আমি বাঁচবো না সই! তুমি আমাকে বলে দাও কি করলে আমার কান্না পাবে।” প্রাণের সই এর কথা শুনে ব্রাহ্মণী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কি বলবেন কিছু ভেবে পেলেন না।
এমন সময় তার চোখে পরল একটু দূরে একটা চাষের ক্ষেত। সেখানে অনেকগুলো লাউ আর কুমড়ো ফলে ছিল। ব্রাহ্মণী গয়লা বউকে বললেন, ‘যাও সই, ওই ক্ষেতটা দেখা যাচ্ছে,
খুব লাউ আর কুমড়ো ফলেছে ওখানে-ওই ক্ষেতে গিয়ে লাউ কুমড়ো গুলোকে তুলে নাও আর গাছগুলোকে একেবারে ছেড়ে লন্ডভন্ড করে দাও। তাহলেই চাষিরা খুব রেগে গিয়ে তোমাকে খুব গালমন্দ দেবে,
আর তাহলেই তোমার কান্না আসবে।’ সইয়ের কথা শুনে, গয়লা বউ তখনি ছুটে গেল সেই ক্ষেতের ভিতর ঢুকে গাছগুলো সব ছিড়ে খুঁড়ে দিয়ে চলে এলো। কিন্তু এতে আসল কাজ কিছু হল না বরং ফলটা উল্টো হল মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায়
আবার গাছগুলো জ্যান্ত হয়ে উঠলো আর চাষিদের খুব আনন্দ হল। চাষিরা তখনই সেই গয়লা বউয়ের কাছে এসে বলল, ‘মা! তোমার হাতের ছোঁয়া লেগে আমাদের আধমরা গাছগুলো আবার সতেজ হয়ে উঠেছে।
তুমি মা সাক্ষাৎ লক্ষ্মী।’ এর ফলে গয়লা বউ টাকা দেবার সুযোগ পেল না। সে তখন তার শরীরকে গিয়ে সব কথা জানালো। ব্রাহ্মণী বললেন যে মা মঙ্গলচন্ডীর দয়াতেই এটা হয়েছে। তিনি তখন গয়লা বউকে বললেন,
‘দেখো সই, ওই দূরে পাহাড়ের ধারে রাজার হাতিটা মরে পড়ে আছে তুমি ওখানে গিয়ে হাতিটার গলা জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করো। তাহলে রাজার লোকেরা ভাববে যে তুমি হাতির দাঁতে চুরি করতে এসেছ,
তখন তারা তোমায় খুব মারধর করবে আর তুমিও খুব কাঁদবার সুযোগ পাবে।’কিন্তু এবারেও কোন কাজ হলোনা। গয়লা বউ হাতিটার গায়ে হাত দিতেই হাতিটা বেঁচে উঠল।
তাই দেখে রাজার লোকেরা একেবারে অবাক হয়ে গেল আর সব কথা রাজাকে গিয়ে জানালো। সব কথা শুনে রাজা খুব খুশি হলেন আর গোয়ালা বউকে ডেকে তাকে অনেক ধনরত্ন করে পুরস্কার হিসেবে দিলেন।
এবারেও কোন কাজ হলোনা দেখে ব্রাহ্মণী বুঝলেন যে, মা মঙ্গলচন্ডীর দয়াতে এবারও তাই হয়েছে। ব্রাহ্মণী তখন গয়লা বউকে আবারো একটা পরিকল্পনা বললেন, ‘দেখো সই, এক কাজ করো, কতগুলো বিষের নাড়ু তৈরি করে
তোমার মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। তাহলে ওই নাড়ুগুলো খেয়ে তারা সবাই মরে যাবে আর তুমিও তখন কাঁদতে পারবে।’ সইয়ের কথামতো গয়লা বউ তাই করলো, কিন্তু মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় বিষের নাড়ু গুলো সব অমৃত হয়ে গেল।
মেয়ের বাড়ির লোকেরা সেই নারীকে খুব খুশি হলো আর আরো অনেক নাড়ু পাঠাবার জন্য লিখে পাঠালো। এতেও যখন কাজ হলো না তখন ব্রাহ্মণী গয়লা বউকে বললেন যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তখন তুমি হরিষ মঙ্গলচন্ডী ব্রত করা ছেড়ে দাও সই।’
গয়লা বউ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা ছেড়ে দিল। ফলে মা মঙ্গলচন্ডী খুব রেগে গেল। মা মঙ্গল চন্ডী গয়লা বউয়ের উপর রেগে গিয়ে তার স্বামী পুত্র দাস-দাসী হাতি ঘোড়া ছিল সকলকে কেড়ে নিলেন এবং যত ধনরত্ন ছিল সবই কেড়ে নিলেন।
গয়লা বউ স্বামী পুত্র আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। এখন তার দিনরাত কান্না ছাড়া আর কিছুই নেই। এতো কান্না সহ্য করতে না পেরে শেষে
ব্রাম্ভনের কাছে গিয়ে বলল, ‘সই আমি আর কাঁদতে পারছি না আমি আর সহ্য করতে পারছি না যেমন করে পারো আমার কান্না থামিয়ে দাও।’
ব্রাহ্মণী তখন বললেন ‘তুমি তো এটাই চেয়েছিলে এখন কান্না থামাতে বললে কি হবে যাক যা হবার হয়ে গেছে, এখন বাড়ি গিয়ে মরা গুলো জড়িয়ে ধরে খুব খারাপ তারপর সেগুলো কে খুব সাবধানে রেখে
সামনের মঙ্গলবার থেকে আবার মা মঙ্গলচন্ডীর হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা আরম্ভ করো।’ সইয়ের কথা শুনে গয়লা বউ বাড়ি ফিরে এসে গ্রামের কথা মত সবই করল আর ক্ষোভ খানিক মাথা খুঁড়ে কাঁদবার পর মা মঙ্গলচন্ডীর স্তব করতে লাগলো।
তারপর মঙ্গলবার আসতেই সে খুব শুদ্ধাচারে মা মঙ্গলচন্ডীর হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা শুরু করলো সবশেষে দুই হাতে মার ঘর ধরে মাকে খুব ডাকতে লাগল
এমন সময় সে শুনতে পেল কে যেন বলছে- ‘আর কখনো এমন কাজ করিস নি, যা তোর আর কোন ভয় নেই এই ঘটের জল মরা গুলোর গায়ে ছিটিয়ে দে তাহলেই সবাই বেঁচে উঠবে।’
ঘটের জল ছিটিয়ে দেওয়ার ফলে গয়লা বউয়ের সবাই মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় বেঁচে উঠলো আর তার আগের অবস্থা ফিরে পেল। গয়লা বউ তখন খুব শুদ্ধ চারে মা মঙ্গলচন্ডীর ঘটটি তুলে রেখে ছুটে গেল ব্রাহ্মণীর কাছে
তাকে সব কথা জানালো আর তার পা জড়িয়ে ধরে আশির্বাদ চেয়ে নিল। এদিকে গয়লা বউয়ের এই অবস্থার পরিবর্তনের ব্যবহার দেখে পাড়াসুদ্ধ সবাই অবাক হয়ে গেল, আর গয়লা বউকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো।
হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত যেই নারি করে।
সব দুঃখ চোখের জল মা তার হরে।
আদর সিংহাসন ব্রতের সময় বা কাল- আদর সিংহাসন ব্রত একটি বৈশাখ মাসের ব্রত। মহাবিষুব চৈত্র সংক্রান্তি তে এই ব্রত নিতে হয় আর চার বছর এই ব্রত পালন করে বৈশাখী সংক্রান্তি (বিষ্ণুপদী)-তে এর উদযাপন করার নিয়ম। সকল এয়ো-স্ত্রীলোক বা সধবা রা এই ব্রত নেওয়ার অধিকারিণী।
আদর সিংহাসন ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- সারা বৈশাখ মাস ধরে প্রতিদিন সকালে একজন সধবা স্ত্রীলোক একজন ব্রাহ্মণ কে ফুলের মালা পরিয়ে কপালে চন্দনের ফোটা আর হাতে কিছু মিষ্টান্ন ও কিছু দক্ষিণা দিতে হবে।
সধবা স্ত্রীর মাথায় গন্ধ তেল দিয়ে, ভালো করে চুল আঁচড়ে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়ে দেবে। পায়ে আলতা, হাতে কর ও লোহা (নোয়া) পরিয়ে দেওয়া কর্তব্য।
এরপর সিঁদুর চুপড়ি, আয়না ,চিরুনি, আলতা ও পয়সা দিয়ে, খুব তৃপ্তি করে ভজন করাবে আর বিকালে নানা রকমের ফলমূল, মিষ্টান্ন,ক্ষীর ইত্যাদি তার হাতে তুলে দেবে।
এই সঙ্গে ব্রাহ্মণকেও কাপড় ,চাদর, খড়ম, ছাতি ,চন্দন ও ফুলের মালা পরিয়ে খুব যত্ন করে ভজন করাতে হয় আর বিকেলে নানা রকম ফল – মূল মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দেওয়ার নিয়ম।
সারা বৈশাখ মাস ধরে এই ভাবে ব্রত পালন করে যেতে হবে। দ্বিতীয় বছরের দুজন সধবা ও দু’জন ব্রাহ্মণ, তৃতীয় বৎসরে তিনজন সধবা ও তিনজন ব্রাহ্মণ ও চতুর্থ বছরে চার জন সধবা ও চার জন ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করতে হবে।
এরপর চারজন সধবা কে একত্রে বসিয়ে তাদের পায়ে ধুয়ে আলতা পরিয়ে দিতে হবে আর লাল পেড়ে শাড়ি ,সিঁদুর কৌটো, সিঁদুর চুপড়ি, পাখা, গামছা, চিরুনি, আয়না, আলতা, মাথা ঘষা,
ইত্যাদি দিয়ে চন্দন মালা পরিয়ে খুব তৃপ্তির সঙ্গে ভজন করাতে হবে, আর বিকেল নানারকম ফল – মূল , মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দেওয়া প্রয়োজন। চারজন ব্রাহ্মণ এর পরিবর্তে একজন ব্রাহ্মণ হলেও চলবে।
তবে সেই ব্রাহ্মণকেও এই রকম গন্ধদ্রব্য, মালা, কাপড়, চাদর ,পাদুকা, ছাতা, ও পৈতে দেওয়ার নিয়ম। ব্রাহ্মণকেও সকালে বেশ ভালো করে ভোজন করাতে হবে আর বিকেলে ফলমূল মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দিতে হবে।
আদর সিংহাসন ব্রতের ফল- আদর সিংহাসন ব্রত একটি বৈশাখ মাসের ব্রতকথা। এই আদর সিংহাসন ব্রত সব ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রত। এর ফলে যে স্ত্রীলোক এই ব্রত পালন করে সে সকলের কাছেই আদর পায়। ব্রতের শেষে ব্রতকথা পড়া বা শোনা অবশ্যই কর্তব্য।
সকল ব্রতের সেরা আদর সিংহাসন।
সবার আদর পায় সে নারী যে করে পালন।
জল সংক্রান্তির ব্রত সময় বা কাল- বৈশাখ মাসে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তির দিন এই ব্রত পালন করার নিয়ম।
জল সংক্রান্তি ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপন বিধি –এই ব্রত উদযাপন করার সময় একটি নতুন তামার কুন্ড, এক খানি নতুন কাপড় বা গামছায় জড়িয়ে নিতে হবে। এরপর তিনটি ডালা, একটি ভুজ্যি, পৈতে ও দক্ষিণা ব্রাহ্মণকে দান করা কর্তব্য।
জল সংক্রান্তি ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- বৈশাখী সংক্রান্তির দিন, সকালে ভালোভাবে স্নান করে, ষোড়শ উপচারে লক্ষ্মী জনার্দনের পূজো করতে হবে ও একজন ব্রাহ্মণকে জলভরা কলসি ও একটি ভুজ্যি দান করতে হবে।
এইভাবে প্রত্যেক সংক্রান্তিতে ব্রত পালন করে বছরের শেষে উদযাপন করার সময় সোনার লক্ষ্মী মূর্তি ও জনার্দনের রুপোর মূর্তি গড়িয়ে পূজো করার বিধান।
জল সংক্রান্তি ব্রতকথা- কুরু- পিতামহ ভীষ্ম যখন ইচ্ছা মৃত্যুর সময় শরশয্যায় শুয়ে ছিলেন সেই সময় রাজা যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্ম কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মানুষ কি কাজ করলে পৃথিবীতে ধনবান, গুনবান ও জিতেন্দ্রিয় হয়ে সব ব্যাপারে জয়লাভ করতে পারে।
আর তাকে নরকে যেতে হয় না সেই বিষয় আমরা কিছু জানতে চাই। পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরের ওপর খুব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন,–তবে শোন যুধিষ্ঠির।
পুরা কালে ঋষি মন্তিবের গুণবতী নামে এক স্ত্রী ছিল। গুণবতী নানা রঙের গুঁড়ো দিয়ে তাদের কুটির খানি প্রতিদিন সাজিয়ে রাখতো আর তাতে তার স্বামী ঋষি মন্তব্য খুবই খুশি হতেন।
গুণবতী একদিন এইভাবে তাদের কুটির খানি সাজিয়ে, তার স্বামীকে বললেন ,প্রভু! কি কাজ করলে মানুষ পৃথিবীতে ঠান্ডা জল পেতে পারে, নীরোগ থাকতে পারে, আর কখনো তাকে নরকে যেতে হয় না – তা আমাকে বুঝিয়ে বলুন।
মন্তিব্য খুব সন্তুষ্ট হয়ে গুণবতীকে বললেন যে, জল সংক্রান্তি ব্রতই তোমার পক্ষে সকলের চেয়ে ভালো, আর সমস্ত ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই ব্রত সৃষ্টি করেছেন ব্রহ্মা। আমি এই ব্রতের বিষয় তোমাকে বলছি শোনো।
প্রত্যেকেরই খুব ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই ব্রত পালন করা উচিত তার ফলে সেই ব্যক্তি অফুরন্ত ঠান্ডা জল পায় আর অনেক সুখ ভোগ করে মৃত্যুর পর বিষ্ণুপদ প্রাপ্ত হয়। গুণবতী তখন এই ব্রতের বিধান শোনাতে বললেন তার স্বামীকে।
গুণবতীর কথা শুনে ঋষির মন্তিব্য বললেন, এর নিয়ম অনুসারে সকালের স্মান করে শুদ্ধ হয়ে নারায়নের আচনা ও সংকল্প গ্রহণ করতে হবে, তারপর লক্ষী- জনার্দনের পূজা করে ভুজ্যি,
জল ভরা কলসি আর দক্ষিণা দান করে ব্রতকথা শোনা দরকার। পরে সামর্থ্য অনুসারে ব্রাহ্মণ ভোজন করানো কর্তব্য। যে স্ত্রী জল সংক্রান্তির ব্রত পালন করে- সর্বত্রই তার জয়লাভ হয়ে থাকে, আর সে পিতৃকুল ও স্বামীর কুলকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এরপর ভীষ্ম বললেন, আর বেশি বলা বাহুল্য মাত্র যুধিষ্ঠির।
জল সংক্রান্তি ব্রতের ফল- জল সংক্রান্তির ব্রত পালন করলে নারী কোনদিনই স্বামীকে না হারিয়ে আর স্বামী সোহাগিনী হয়ে খুব সুখ শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে।
কলাছড়া ব্রত সময় বা কাল- চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে এই ব্রত নিতে হয়। তারপর নিয়ম মত ৪ বছর এই ব্রত পালন করে উদযাপন করায় বিধান। এয়ো স্ত্রীরাই এই ব্রত নিতে পারেন।
কলাছড়া ব্রত বিধান- একজন ব্রাহ্মণ কে চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন নিমন্ত্রণ করে আনতে হবে, আর তাকে এক ছড়া কলা, মিষ্টান্ন , পান, সুপারি ও পয়সা দিতে হবে ৷
পুরো বৈশাখ মাস ধরে এই করে যাওয়ার নিয়ম ৷এরপর দ্বিতীয় বছরে দুই, তৃতীয় বছরে তিন ও চতুর্থ বছরে চারজন ব্রাহ্মণকে এইভাবে দানের বস্তু দেওয়া কর্তব্য।
কলাছড়া ব্রত দ্রব্য ও উদযাপন বিধি – চতুর্থ বছরে বৈশাখী সংক্রান্তির দিন,চারজন ব্রাহ্মণ কে আমন্ত্রণ করে এনে খুব যত্নের সঙ্গে পরিতোষ করে ভজন করানো প্রয়োজন৷যে ব্রাহ্মণ কে দিয়ে ব্রত নেওয়া হয়েছে তাঁকে এক ছড়া সোনার কলা,
জামা ,কাপড় ,ছাতা ,পাখা, আর ষোলআনা দক্ষিণা দেওয়ায় বিধি |অন্যান্য ব্রাহ্মণদের সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষিণা প্রত্যেকে এক খানা করে গামছা দেওয়া উচিত ৷
নিত সিঁন্দুর ব্রতের বিধান- চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত প্রতিদিন নিত সিঁন্দুর এই ব্রত পালন করতে হয়।
প্রতিদিন সকালে একজন এয়োকে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে ভালো করে জল যোগ করতে হয় আর বিকালে নানারকম ফলমূল ও মিষ্টান্ন দিতে হয়। সারা বৈশাখ মাস এইভাবে এই ব্রত পালন করতে হয়।
চার বছর নিত সিঁন্দুর ব্রত পালনের নিয়ম। প্রথম বছর একটি ,দ্বিতীয় বছর দুটি, তৃতীয় বছর তিনটি আর চতুর্থ বছরের বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে, এইভাবে চারটি ওকে সকালে সিঁদুর আর বিকেলে ফলমূল, মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দিয়ে ব্রত উদযাপন করার নিয়ম।
নিত সিঁন্দুর ব্রতের ফল- সধবারা নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়ার অধিকারিনী। এই ব্রত নিলে সধবা দের সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হয়। যে স্ত্রীলোক নিত্য সিঁদুরের ব্রত পালন করে ,তাকে বৈধব্য – যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না, আর সে আদরিনী ও স্বামী- সোহাগিনী হয়ে থাকে।
নিত সিঁন্দুর ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের বিধি- চতুর্থ বছরে, বৈশাখী সংক্রান্তিতে চারজনে এয়োকে নিমন্ত্রণ করে খুব তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াতে হয়।
যাকে দিয়ে নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়া হয়, সম্ভব হলে তাকে সোনা লোহা (নোয়া) আর রুপোর সিন্দুর কৌটো দিতে পারলে ভালো হয়। আর যদি এই ভাবে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে, শুধু কাপড়, সিঁদুর কৌটো, সিঁদুর চুপড়ি, রুলি, আলতা, লোহা (নোয়া), আয়না আর চিরুনি ও দেওয়া যায়।
এইভাবে সকলকেই দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রথম যাকে দিয়ে এই নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়া হয় কেবল তাকেই সোনার নোয়া আর রূপর সিঁদুর কৌটো দিয়ে এই ব্রত উদযাপন করতে হয়।
গুপ্তধন ব্রত সময় বা কাল- এই ব্রত প্রতিবছর চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তি থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত চার বছর পালন করার নিয়ম। এও স্ত্রী রায় এই ব্রত পালন করার অধিকারিনী।
গুপ্তধন ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- এই ব্রত নিতে হয় চৈত্র মাসের মহাবিশুব সংক্রান্তির দিন, একজন ব্রাহ্মণ কে দিয়ে। প্রথম বছরে কোন মিষ্টির মধ্যে একটি দুয়ানি ভরে দিয়ে সারা বৈশাখ মাস প্রত্যেক দিন একজন ব্রাহ্মণ কে দিতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের ওইভাবে মিষ্টির মধ্যে একটি সিকি ভরে দিয়ে সারা বৈশাখ মাস প্রত্যেকদিন একজন ব্রাহ্মণকে দান করবে।
এইভাবে তৃতীয় বছরে আধুলি আর শেষে বছরের মিষ্টির মধ্যে একটি পয়সা ভরে দিয়ে বৈশাখ মাসে সারা বছর ধরে প্রত্যেক দিন একজন ব্রাহ্মণকে দান করে যাওয়া প্রয়োজন।
চার বছর পুরো হওয়ার সময় বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে চারজন ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করে, তাদের ধুতি ও চাদর দিয়ে খুব যত্ন করে ভোজন করানোই বিধান।
অবশ্য সব ব্রাহ্মণকে যদি ধুতি ও চাদর দেয়া সামর্থ্য না হয়, তাহলে যে ব্রাহ্মণকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে শুধুমাত্র তাকেই ধুতি, চাদর ,গামছা, ছাতা ,পাদুকা আর ষোল আনা দক্ষিণা দেবে।
অপর সব ব্রাহ্মণকে পরিতোষ করে ভোজন করিয়ে সাধ্যমত দক্ষিণা দিলেই চলবে।
চৈত্র সংক্রান্তি থেকে সারা বৈশাখ মাস এই ব্রত পালন করার নিয়ম। কুমারী মেয়েরাই এই ব্রত নেওয়া ও পালনের অধিকারী।
আতপ চালের পিটুলি গোলা, ছোট শাঁক, মধু ,দুধ ও গাওয়া ঘি দিয়ে পৃথিবী পুজো করতে হয়। মাটি র উপর পরিষ্কার করে, পিটুলি দিয়ে একটা পদ্ম পাতা আঁকতে হবে।
তারপর পৃথিবীও ধরিত্রী দেবীকে আঁকতে হবে। পুজোর সময় শাখের মধ্যে ঘি, দুধ ও মধু ঢেলে দিয়ে সেই আঁকা আলপনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তিনবার পৃথিবী পূজার মন্ত্র পাঠ করার নিয়ম।
শেষে ওই শাখের মধ্যে ঢালা জিনিসগুলো আঁকা আলপনার উপর ঢেলে দিতে হবে। এইভাবে চার বছর এই পৃথিবী ব্রত করে উদযাপন করা কর্তব্য আর উদযাপনের সময় একটি সোনার পদ্মপাতা গড়িয়ে দান করা বিধি।
এই পৃথিবী আমাদের মা। আমরা এই পৃথিবীর প্রতি অনেক রকমের অত্যাচার করি কিন্তু পৃথিবী সমস্ত ই সহ্য করেন, এই সর্বংসহা মাকে আমাদের সন্তুষ্ট রাখা দরকার আর সেই জন্যই পৃথিবী পুজোর ব্রত প্রচলিত হয়েছে পৃথিবীর ব্রত।
এই পৃথিবীর ব্রত পালন করলে সংসারের সব রকমের অমঙ্গল দূর হয়ে, মঙ্গল হয়ে থাকে। সীমান্তের পশ্চিম প্রান্তে সুবীর নামে এক রাজার রাজত্ব ছিল। এই রাজার দুই রানী সুনন্দা ও রত্না।
সুনন্দার গর্ভে রাজার দুটি মেয়ে হয়, তাদের নাম মন্দা আর স্নিগ্ধা। ছোট রানী রত্নার একটি মেয়ে হয়েছিল তার নাম ছিল বীর বালা। রাজা, সুনন্দা আর মন্দা ও স্নিগ্ধাগে খুবই ভাল বাসতেন, কিন্তু রত্নার এইজন্যে মনে কোন শান্তিই ছিল না।
কি করে সুনন্দা আর তার মেয়ে দুটির অনিষ্ট করা যায় , এই চিন্তাতেই ছোট রানী রত্না অস্থির হয়ে থাকতো সব সময়। সে তার মেয়ে বীরবালা কে দিয়ে, ওদের সব কাজ সবসময়ই পন্ড করে দেওয়ার চেষ্টা করত।
মন্দা আর স্নিগ্ধা কিন্তু পৃথিবীর ব্রত নিয়ে রেখেছিল আর খুব ভক্তির সঙ্গে ব্রত পালন করতো। প্রথম বছর কেটে যাওয়ার পর তারা যখন দ্বিতীয় বছরের পুজোর আয়োজন করে তাদের উঠোনে বসে পুজোর মন্ত্র পড়ছে
সেই সময় ছোট রানীর মেয়ে বীর বালা ছুটে এসে তাদের বলল, তোমরা শিগগির বাড়ির ভেতরে এসো বড় মা যেন কেমন একরকম হয়ে হা হুতাস করছে।
মন্দা আর স্নিগ্ধা তাদের পুজোর শেষ না করেই তাদের মা কাছে ছুটে গেল। সেখানে গিয়ে তারা তাদের মার কাছে শুনল যে ছোট রানী রত্না তাদের মা ও মেয়েদের নামে অনেক মিথ্যে কথা বলেছে।
রাজার হুকুম তাদের সেই দ্বন্দ্বেই বনবাসে যেতে হবে। মার মুখে সব কথা শুনে মেয়েরাও খুব মর্মাহত হল। কিন্তু এখন আর কোন উপায় নেই বনবাসে তাদের যেতেই হবে।
এরপর তারা বনবাসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল এবং শেষে এক নিবিড় অন্ধকারে বনে গিয়ে পৌঁছল। ভাগ্যক্রমে সেই বনে তারা একটি খালি কুটির দেখতে পেল।
আর কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে তারা সেই কুটিরের ভেতরে বাস করবার ব্যবস্থা করল। এইভাবে কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন মন্দা ও স্নিগ্ধা কুটির থেকে কিছু দূরে একটি পুকুরের পাড়ে বসে পৃথিবীর পুজো ও ব্রত শেষ করে কুটিরে ফিরে এসে দেখলো যে তাদের মা কুটিরে নেই।
তারা অনেক কান্নাকাটি করে খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু কোথাও মার সন্ধান পেল না। তারা একথাও জানতে পারল না যে এক দস্যু তাদের মাকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
তারা কেবল হাঁ হু তাস করে তাদের দুঃখের কথা মার ধরিত্রীকেই জানাতে লাগলো। এমন সময় বনের মধ্যে থেকেই কে যেন বলে উঠলো, তোদের ভয় নেই আর কিছু সময় অপেক্ষা কর।
মন্দা আর স্নিগ্ধা এই কথায় আশ্বস্ত হল আর তাদের ব্রত অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রাজা সুবীরের মনেও কোন শান্তি ছিল না।
এছাড়া ছোট রানী রত্নার পরামর্শ মত রাজ্য পাঠ চালানোর ফলে প্রজারা বিদ্রোহ করল। এবং রাজ পরিবারকে পুড়িয়ে মারবার সংকল্প করল।
ছোট রানী রত্না আর তার মেয়ে বীরবালা কে তারা পুড়িয়ে মেরে ফেলে রাজা সুবীরকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুনে দেওয়ার যোগাড় করছে এমন সময় এক সাধু বড়রানী সুনন্দাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত
হলেন বললেন মূর্খ রাজা বুদ্ধির দোষে তুমি তোমার সর্বনাশ দেখে এনেছ কিন্তু আর ভয় নেই তোমার কোন লক্ষী বড় নানি সুনন্দাকে আমি নিয়ে এসেছি।
প্রজারা ও বড় রানী সুনন্দাকে দেখে আনন্দে অধীর হয়ে উঠল। চিৎকার করে প্রজারা বলতে লাগলো আর আমাদের ভয় নেই।
এইবার আমরা শান্তিতে বাস করতে পারবো। এই বলে তারা মহারাজের বাঁধন খুলে দিয়ে মহারাজকে রাজপুরীতে নিয়ে গেল।
অবশেষে রাজার জীবন রক্ষা হল আর রাজ্যে ও শান্তি ফিরে এলো। রাজা শেষে মন্দা ও স্নিগ্ধাকে এনে দেওয়ার জন্য সেই সাধুকে অনুরোধ করলো।
সাধু তখন রাজা কে বলল যে তার তার দুটি মেয়ের পৃথিবীর ব্রত পালন করার ফলেই রাজা আজ তার সব ফিরে পেয়েছে আর তার মেয়েরাও শীঘ্রই ফিরে আসবে। এই কথা বলে সেই সাধু অদৃশ্য হয়ে গেলেন
অল্প দিনেই মধ্যেই মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজ্যে ফিরে এলো। রাজ্যে তখন চলল আনন্দ উৎসব। মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজপুরীর উঠোনে ভালো করে আলপনা দিয়ে আবার পৃথিবীব্রত পালন আরম্ভ করল।
এসো মা পৃথিবীর বস মা পদ্মপাতে শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম ধরি দুই হাতে।
খাওয়াবো ক্ষীর আর মাখন ননী আমি যেন হই মাগো বড় রাজার রানী।
পৃথিবী পূজার শেষে পৃথিবী কে প্রণাম করবেন। প্রণাম মন্ত্র ও প্রার্থনা মন্ত্র ও পৃথিবীর স্তোত্রম নিচে দেওয়া হল।
ওঁ শুভেচ শোভনে দেবি চতুরস্রে মহীতলে। শুভদে সুখদে দেবি গৃহে কাশ্যপি রম্যতাম্।। ওঁ অব্যঙ্গে চাক্ষতে পুণ্যে মুনেশ্চাঙ্গিরসঃ সুতে। তব ময়া কৃতা পূজা সমৃদ্ধিং গৃহিণঃ কুরু।। ওঁ বসুন্ধরে বরারোহে স্থানং মে দীয়তাং শুভে। ত্বৎ প্রসাদাম্মহাদেবি কার্যং মে সিদ্ধতাৎ দ্রুতম্।।
পৃথিবীর প্রার্থনা মন্ত্র পাঠ শেষে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবেন। যথা –
ও সর্বাধারে সর্ববীজে সর্বশক্তি সমন্বিতে। সর্বকামপ্রদে দেখি বসুধায়ৈ নমোহস্তুতে।।
পৃথিবী পূজার সময় বা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ধরিত্রীর ধ্যান মন্ত্র ও প্রণাম মন্ত্র পাঠ করা আবশ্যক। এখানে তিনটি ধ্যান মন্ত্র দেওয়া হল। যেকোনো একটি ধ্যান মন্ত্র পাঠ করলেই হবে।
(১) ও সুরূপাং প্রমদারূপাং দিব্যাভরণভূষিতাম্। ধ্যাত্বা তামৰ্চয়ে দেবীং পরিতুষ্টাং স্মিতাননাম।
(২) ও শ্বেতচম্পক বর্ণাভাং শরচ্চন্দ্র সমপ্রভাম্। চন্দনোক্ষিত সর্বাঙ্গীং রত্নভূষণ ভূষিতাম্।। রত্নাধারাং রত্নগর্ভাং রত্নাকর সমন্বিতাম্। চন্দনোক্ষিত সর্বাঙ্গীং রত্নভূষণ ভূষিতাম্।।
(৩) ধ্যায়ে তাং বসুধাং দেবীং ত্রিদশৈরপি পূজিতাম্। প্রিয়কলিকাশ্যামাং মুকুটাদ্যৈরলম্ তাম্।। দিব্যবস্ত্র পরীধানাং দিব্যগন্ধানুলেপনাম্। যজ্ঞপুণ্যপ্রদাং সৌম্যাৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।।
বিষ্ণুরুবাচ – জয় জয় জয়াধারে জয়শীলে জন্মগ্রদে। যজ্ঞশূকরজায়ে চ জয়ং দেহি জয়দে৷৷ ॥ মঙ্গলে মঙ্গলাধারে মঙ্গলে মঙ্গলপ্রদে। মঙ্গলাংশে মঙ্গলং দেহিমে ভবে। ২।।
সর্বাধারে সর্ববীজে সর্বশক্তি সমন্বিতে। সর্বকামপ্রদে দেবি সর্বেষ্টং দেহি মে ভবে। ৩। পুণ্যস্বরূপে জীবানাং পুণ্যরূপে সনাতনি। পুণ্যাশ্রয়ে পুণ্যবতামালয়ে পুণ্যদে ভবে।। ৪ ।।
রত্নাধারে রত্নগর্ভে রত্নাকর সমন্বিতে। স্ত্রীরত্নরূপে রত্নাঢ্যে রত্নসারপ্রদে ভবে।। ৫।। সর্বশস্যালয়ে সর্বশস্যাঢ্যে সর্বশস্যদে। সর্বশস্য হরে কালে সর্বশস্যাত্মিকে ভবে৷৷ ৬॥
ভূমে ভূমিপসর্বস্বে ভূমিপাল পরায়ণে। ভূমিপাহঙ্কাররূপে ভূমিং দেহি চ ভূমিদে৷৷৭৷৷ ইদং স্তোত্রং মহাপুণ্যং তাং সম্পুজ্য যঃ পঠেৎ। কোটি কেটি জন্ম জন্ম স ভবেদ ভূমিপেশ্বরঃ।।
ইতি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে প্রকৃতিখণ্ডে পৃথিবীস্তোত্রম্।
চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তিতে এই ব্রত নেয়ার নিয়ম। এই ব্রত চার বছর পালন করতে হয় আর চার বছর পরে বৈশাখ মাসে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তিতে এই ব্রতের উদযাপন করায় বিধি। কেবলমাত্র এও স্ত্রী রায় এই ব্রত গ্রহণ করতে পারেন।
একজন ব্রাহ্মণকে চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন একটি পৈতে, একটি সুপারি ও একটি পয়সা দিয়ে প্রণাম করতে হবে। সারা বৈশাখ মাস ধরে প্রতিদিন একজন করে ব্রাহ্মণ কে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত এমনিভাবে দিতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের সুপারি না দিয়ে তার বদলে কলা, পৈতে, মিষ্টি ও পয়সা দিয়ে একটি ব্রাহ্মণকে প্রতিদিন সারা মাস ধরে প্রণাম করা কর্তব্য। তারপরের বছর অর্থাৎ তৃতীয় বছরের কলার বদলে আম ও তার সঙ্গে পৈতে, মিষ্টান্ন ও পয়সা দিয়ে ব্রাহ্মণকে প্রণাম করার নিয়ম।
এইভাবে তিন বছর কেটে যাওয়ার পর অর্থাৎ চতুর্থ বছরের আমের বদলে ডাব পৈতে ও পয়সা দিয়ে প্রণাম করা প্রয়োজন। সবশেষে মহাবিষুব সংক্রান্তিতে চারজন ব্রাহ্মণ কে আমন্ত্রণ করে তাদের পরিতোষ সহকারে ভোজন করিয়ে,
প্রত্যেক ব্রাহ্মণকে কাপড় ও গামছা দিতে হয় তবে সামর্থ্য না থাকলে যাকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে তাকে ধুতি, চাদর, গামছা ,পাদুকা , ছাতা ও পাখা দেওয়াই রীতি। উদযাপনের সময় রুপোর ডাব, সোনার সুপারি ও সোনার কলা গড়িয়ে দান করে ব্রত উদযাপন করতে হবে।
যাকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে তিনি যদি উদযাপনের সময় বেঁচে না থাকেন তাহলে তার বংশের অপর কোন ব্রাহ্মণকে খুব তৃপ্তি করে ভোজন করিয়ে ওই জিনিসগুলো দান করা উচিত।