কুটস্থই হল অনাদি চোখ
কুটস্থই হল অনাদি চোখ
এই দুই চোখের অতীতে আরও এক চোখ আছে যাকে জ্ঞানচক্ষু, তৃতীয় নয়ন বা কুটস্থ বলে।
সেই জ্ঞানচক্ষুরূপী কুটস্বরূপী চক্ষু সব মানবদেহেই আছে কিন্তু যােগী ব্যতীত অপরে এর সন্ধান জানে না। তাই তাদের জ্ঞান চক্ষু থেকেও নেই বলা চলে। সদগুরু বা যােগীগুরুর আজ্ঞামতে ক্রিয়াযোগসাধনে রত হলে মানুষের সেই জ্ঞানচক্ষুর প্রকাশ হয়। বাইরের সবকিছুর থেকে মন অন্তর্হিত হয়ে এক অদ্বিতীয় জ্ঞানচক্ষুতে নিবন্ধ থাকায় অন্তরতম প্রদেশের বা অধ্যাত্ম জগতের সবকিছু দেখা যায় অর্থাৎ দিব্যচক্ষুর উন্মিলন হয়।
যে সদগুরু এই কূটস্থরূপী দিব্যচক্ষুর সন্ধান দেন -সেই গুরুকেই নমস্কার।
এই দুই চোখের দ্বারা জগতের বস্তুকে দেখা যায়। এই দুই চোখ ইন্দ্রিয়, বস্তু, গুণ এবং অণুর অন্তর্গত জগতের বস্তু দেখা যায়। কারণ জগতের বস্তুও গুণ, বস্তু এবং অণুর অন্তর্গত। যখন চোখের অণু বস্তুর অণুর সন্নিকর্ষ হয় তখনই দেখা যায়। সন্নিকর্ষ হওয়ায় সাথে সাথে সেই বস্তুর রূপ গুণ ইত্যাদি বিষয় চক্ষুরূপী ইন্দ্রিয়গােচর হয়।
কিন্তু ব্রহ্ম বস্তু, গুণ এবং অণু না হওয়ায় ইন্দ্রিয়ের গােচর হয় না অর্থাৎ দেখা যায় না। চোখ ছাড়া যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন ব্ৰহ্মও দেখা যাবে না।
আবার এই চোখের দ্বারা যখন দেখা সম্ভব নয় তখন যে চোখ দেখা যাবে সেটা কোন চোখ?
এই চোখ হল একচোখ, জ্ঞানচোখ, ত্রিনয়ন, কুটস্থ ইত্যাদি। এই কুটস্থ সব দেহে থাকা সত্বেও ব্ৰহ্মদর্শন হয় না কেন?
কারণ কুটস্থে স্থিতির অভাব। জীব যখন কূটস্থে স্থিতি লাভ করে তখন অবশ্যই ব্ৰহ্ম দর্শন হয়।
জীব কূটন্থে স্থিতিলাভ করা মাত্রই সে তখন বস্তু, গুণ ও অণুর অতীতে অবস্থান করায় বস্তু, গুণ ও অণুর অতীতে যে ব্ৰহ্ম তার সন্নিকর্ষ হয় এবং তখনই ব্ৰহ্ম দর্শন হয়। একারণে সকলের উচিত সদগুরুপদিষ্ট ক্রিয়াযোগ সাধনের মাধ্যমে কূটস্থে স্থায়ী স্থিতিলাভ করা।
তাই যােগিরাজ বলেছেন ক্রিয়ার দ্বারায় এই কুটস্বরূপী চক্ষু উন্মীলন হয় অর্থাৎ ক্রিয়া সাধন করলে এই কূটস্থরূপী জ্ঞান চক্ষুর প্রকাশ হয়।
যখন যােগী এই জ্ঞানচক্ষে স্থিতিলাভে সমর্থ হন তখন তিনি যেমন ব্রহ্ম দর্শনে সমর্থ হন, তেমনি ওই জ্ঞান চক্ষুর মাধ্যমে জগতের সকল বস্তু তা সে যত ক্ষুদ্রই হােক বা যত দূরেরই হোক সবকিছু দেখতে সমর্থ হন। তার আর অদেখা কিছু থাকে না।
তাই কুটস্থই হল অনাদি চোখ।