পঞ্চ 'ম' কার সাধন:---- পঞ্চমকার বা পঞ্চতত্ত্ব হল তান্ত্রিক অনুশীলনে ব্যবহৃত পাঁচটি পদার্থ। এই পাঁচটি পদার্থকে পঞ্চ 'ম' বলা হয়। পঞ্চ 'ম' হল: মদ্য (মদ), মাংস (প্রাণীর মাংস), মৎস্য (মাছ), মুদ্রা (শস্যকণা), মৈথুন (যৌনকর্ম). পঞ্চমকার বা পঞ্চতত্ত্বকে পাঁচটি কুমারী নামেও ডাকা হয়। দিব্যাচারে মুদ্রা হচ্ছে সৎসঙ্গ। একজন সাধক যত সৎসঙ্গ, সাধুসঙ্গ এবং গুরুসঙ্গ করবে তত বেশি দিব্য শরীরের ক্ষুধা মিটতে শুরু করবে। ১. মদ্য - অর্থাৎ, আমাদের জিহ্বার দ্বারা মস্তিষ্কের তালু গ্রন্থ ভেদ করে রাজিকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াকে খেচরী মুদ্রা বলে। এবং এই খেচরি মুদ্রার দ্বারা ওই রাজিকা গ্রন্থে থাকা অমৃত জিহ্বার দ্বারা আস্বাদন করাকে মদ্য পান বা মদ্য সাধন বলে। ২. মাংস- 'মা' শব্দের অর্থ জিহ্বা, ং এর অর্থ করা, 'স' শব্দের অর্থ ভক্ষণ। খেচরী মুদ্রার সাহায্যে তালু গ্রন্থি ভেদ করতে পারলেই, তখন আমাদের আপনা থেকেই বাক সংযম এবং স্বাদ সংযম আপনা থেকেই হয়ে যাই, যেটা আমাদের সাধনার একান্তই প্রয়োজন, একেই মাংস ভক্ষণ বা মাংস সাধন বলে। ৩. মৎস্য - সাধারণত আমাদের শ্বাস অর্থাৎ প্রাণ ও অপান বায়ু আমাদের ইরা এবং পিঙ্গলা তে চলে। যখন আমরা বিশেষ গুরু প্রদত্ত ক্রিয়ার দ্বারা এই শ্বাসকে (প্রাণ ও অপান) সুসুমা নাড়ীতে প্রবেশ করাতে সক্ষম হই, তখন মৎস্য ভক্ষণ বা মৎস্য সাধনা হয়। ৪. মুদ্রা - যোগ শাস্ত্রে বিভিন্ন যোগ এর কথা বলা হয়েছে (কমরালি মুদ্রা, মহামুদ্রা, যোনিমুদ্রা, etc)। গুরু শিষ্যের আঁধার অনুসারে এই মুদ্রার সাধনা দিয়ে থাকেন, এবং যা নিষ্ঠা সহকারে করাকে মুদ্রা সাধন বলে। ৫. মৈথুন - এই চার রকম সাধনা গুরু প্রদত্ত ক্রিয়ার দ্বারা নিষ্ঠা সহকারে করার পর গুরুর অপার কৃপার দ্বারা জীবাত্মা কে পরমাত্মা তে মেলানোর ক্রিয়াকে মৈথুন সাধনা বলা হয়।
সিদ্ধবিদ্যা প্রাণায়াম / কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম আমাদের দুটি ফুসফুসে মোট মৌচাক এর জালির মতন শ্বাস যন্ত্রের বাতাস থেকে অক্সিজেন পরিশোধন কারী মোট সাত কোটি তিরিশ লক্ষ জালিকা আছে | সাধারণ মানুষ কার্য ভেদে– আস্তে শ্বাস অথবা জোরে শ্বাস নিক না কেনো তাতে দু কোটি থেকে সর্বোচ্চ দু কোটি তিরিশ লক্ষ শ্বাস জালিকা পূর্ণ হয় তার বেশি কোনো কারণেই হয়না, এবং এই শ্বাস এর দ্বারাই প্রতিটি সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা দু কোটি থেকে সর্বোচ্চ দু কোটি তিরিশ লক্ষ মধ্যে যে বাতাসের পূর্ণতা তাঁহার দ্বারাই পরিচালিত হয় | ইহাকেই সাধারণ মানুষের জীবন যাপন বলে বা ইহাকেই সাধারণ মানুষের শ্বাস পক্রিয়া বলে | ইহাই জীবন ধারণ এর জন্য এবং সর্ব সাধারণ এর জন্য সর্বদা প্রযোজ্য | গুরুমুখী অতি গোপন যে যোগ বিদ্যার সাহায্যে বা যেগুরুমুখী অতি গোপনযোগ ক্রিয়া পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের শ্বাসক্রিয়ার পরিবর্তন করে –বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়াকে প্রাণায়াম বলে |এটি কোন আধুনিক জগতের যুগশিক্ষার প্রাণায়াম কেন্দ্রের প্রাণায়াম নয় বা যোগী বাবাদের মতন শেখানো কোন প্রাণায়াম নয়। ইহা অত্যন্ত গোপন এবং সম্পূর্ণ গুরুমুখী বিদ্যা -ইহা বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়ার প্রাণায়ামকে সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম বলা হয় | ইহা লাভ করার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা অর্জন অতি আবশ্যক। বিনা যোগ্যতায় কেউ ইয়া করার চেষ্টা করলে তার সিদ্ধি লাভ তো দূরের কথা বহু রকম বিক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া জনিত কুফল ইহজীবন এবং পরকালেও দুরর্ভোগ করতে হয়। 1.অধম প্রাণায়াম:- প্রথম প্রজনীয়তা বা আবশ্যক যোগ্যতা:- 1. অহোরাত্রে কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় বিধি সম্মত দ্বিআহার | 2. কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আসন সিদ্ধি | 3. খেচরী মুদ্রা দ্বিতীয় স্তর সিদ্ধি | 4. নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে কমপক্ষে 12 বছর অনুশাসনে অখণ্ড বা মনুষ্যভাবে স্থিতি । 5. মহামুদ্রা, মূলবদ্ধমুদ্রা,যোনিমুদ্রা,সহিতক্রিয়া,বিপরীতকরোনি মুদ্রা,শাম্ভাব্যি মুদ্রা-এই সব মুদ্রার প্রথম স্তর সিদ্ধি । 6. গুরু বাক্যের প্রতিপালন ও গুরু সেবা । 7. সম্পূর্ণরূপে স্ত্রী বা মহিলা কামনা বা বুদ্ধি পরিত্যাগ এবং ধন তৃষ্ণা পরিত্যাগ এবং প্রতিষ্ঠা তৃষ্ণা পরিত্যাগ । গুরুর কাছে বিশেষ বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়ার-প্রাণায়াম যোগ দীক্ষার পর , যোগ বিদ্যার সাধনার ফলে দু কোটি তিরিশ লক্ষ থেকে চার কোটি শ্বাস জালিকাতে বাতাস কে পরিপূর্ণ রূপে পূর্ণ করার যে শাস্ত্রীয় অতি গুপ্ত পদ্ধতি তাকে অধম প্রাণায়াম বলে | 2. মধ্যম প্রাণায়াম:- প্রথম প্রজনীয়তা বা আবশ্যক যোগ্যতা:-:- 1. অহোরাত্রে কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় বিধি সম্মত একাহার | 2. কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আসন সিদ্ধি | 3. খেচরী মুদ্রা তৃতীয় স্তর সিদ্ধি | 4. নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে কমপক্ষে 24 বছর অনুশাসনে অখণ্ড বা দেবভাবে স্থিতি । 5. মহামুদ্রা, মূলবদ্ধমুদ্রা,যোনিমুদ্রা,সহিতক্রিয়া,বিপরীতকরোনি মুদ্রা,শাম্ভাব্যি মুদ্রা-এই সব মুদ্রার দ্বিতীয় স্তর সিদ্ধি । 6. সর্বথা রূপে অসৎ সঙ্গ পরিতেজ্জ ও নির্জন বাস । 7. গুরু বাক্যের প্রতিপালন ও গুরু সেবা । 8. সম্পূর্ণরূপে স্ত্রী বা মহিলা কামনা বা বুদ্ধি পরিত্যাগ এবং ধন তৃষ্ণা পরিত্যাগ এবং প্রতিষ্ঠা তৃষ্ণা পরিত্যাগ । গুরুর কাছে বিশেষ বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়ার-প্রাণায়াম যোগ দীক্ষার পর , যোগ বিদ্যার সাধনার ফলে 4 কোটি থেকে 5.5 কোটি শ্বাস জালিকাতে বাতাস কে পরিপূর্ণ রূপে পূর্ণ করার যে শাস্ত্রীয় অতি গুপ্ত পদ্ধতি তাকে মধ্যম প্রাণায়াম বলে | 3.উত্তম প্রাণায়াম:- প্রথম প্রজনীয়তা বা আবশ্যক যোগ্যতা:-: 1. অহোরাত্রে কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় বিধি সম্মত একাহার | 2. কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা আসন সিদ্ধি | 3. খেচরী মুদ্রা চতুর্থ স্তর বা সম্পূর্ণ সিদ্ধি | 4. মহামুদ্রা, মূলবদ্ধমুদ্রা,যোনিমুদ্রা,সহিতক্রিয়া,বিপরীতকরোনি মুদ্রা,শাম্ভাব্যি মুদ্রা-এই সব মুদ্রার তৃতীয় স্তর সিদ্ধি । 5. নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে 30 বছর অনুশাসনে অখণ্ড বা দেবভাবে স্থিতি । 6. সর্বথা রূপে অসৎ সঙ্গ পরিতেজ্জ ও নির্জন বাস । 7. সর্ব আত্মীয়তা এবং সর্ব সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যাগ । 8. গুরু বাক্যের প্রতিপালন ও গুরু সেবা । 9. জ্ঞানকাণ্ডের সম্পূর্ণ শাস্ত্রজ্ঞান ধর্ম জ্ঞান এবং জড়জাগতিক সংসার পরিচালনিকারী জ্ঞান এর পূর্ণবিকাশ । 10.. সম্পূর্ণরূপে স্ত্রী বা মহিলা কামনা বা বুদ্ধি পরিত্যাগ এবং ধন তৃষ্ণা পরিত্যাগ এবং প্রতিষ্ঠা তৃষ্ণা পরিত্যাগ । গুরুর কাছে বিশেষ বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়ার-প্রাণায়াম যোগ দীক্ষার পর , যোগ বিদ্যার সাধনার ফলে 5.5 কোটি থেকে 6.5 কোটি শ্বাস জালিকাতে বাতাস কে পরিপূর্ণ রূপে পূর্ণ করার যে শাস্ত্রীয় অতি গুপ্ত পদ্ধতি তাকে উত্তম প্রাণায়াম বলে | 4.ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম :- প্রথম প্রজনীয়তা বা আবশ্যক যোগ্যতা:-::- 1.অহোরাত্রে কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় বিধি সম্মত একাহার | 2. কমপক্ষে আট+ ঘণ্টা আসন সিদ্ধি | 3. খেছরী মুদ্রা চতুর্থ স্তর বা সম্পূর্ণ সিদ্ধি | 4. মহামুদ্রা, মূলবদ্ধমুদ্রা,যোনিমুদ্রা,সহিতক্রিয়া,বিপরীতকরোনি মুদ্রা,শাম্ভাব্যি মুদ্রা-এই সব মুদ্রার চতুর্থ স্তর সিদ্ধি । 5. নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে 36 বছর অনুশাসনে অখণ্ড বা ব্রহ্মভাবে স্থিতি । 6. সর্বথা রূপে অসৎ সঙ্গ পরিতেজ্জ ও নির্জন বাস । 7. সর্ব আত্মীয়তা এবং সর্ব সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যাগ । 8. গুরু বাক্যের প্রতিপালন ও গুরু সেবা । 9. জ্ঞানকাণ্ডের সম্পূর্ণ শাস্ত্রজ্ঞান ধর্ম জ্ঞান এবং জড়জাগতিক সংসার পরিচালনিকারী জ্ঞান এর পূর্ণবিকাশ । 10. সম্পূর্ণরূপে স্ত্রী বা মহিলা কামনা বা বুদ্ধি পরিত্যাগ এবং ধন তৃষ্ণা পরিত্যাগ এবং প্রতিষ্ঠা তৃষ্ণা পরিত্যাগ । 11. জ্ঞানময় প্রজ্ঞাব এবং সর্ববিভূতি পরিত্যাগ । 12. শাস্ত্রীয় বিবেক এবং বৈরাগ্য পূর্ণ স্থিতি লাভ 13. উন্মনি অবস্থায় স্থিতি লাভ । গুরুর কাছে বিশেষ বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় পদ্ধতির শ্বাসক্রিয়ার-প্রাণায়াম যোগ দীক্ষার পর , যোগ বিদ্যার সাধনার ফলে 6.5 কোটি থেকে 7.3 কোটি শ্বাস জালিকাতে বাতাস কে পরিপূর্ণ রূপে পূর্ণ করার যে শাস্ত্রীয় অতি গুপ্ত পদ্ধতি তাকে ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম বলে | এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম কে গীতাতে বা বেদে বা দর্শন শাস্ত্রে রাজ বিদ্যা রাজ গুপ্ত যোগ বলিয়াছে| এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম এক আসনে 12 বার করলে প্রত্যাহার যোগ আপনা আপনি উপস্থিত হয় | এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম এক আসনে 144 বার করলে ধারণা যোগ আপনা আপনি উপস্থিত হয় | এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম এক আসনে 1728 বার করলে ধ্যান যোগ আপনা আপনি উপস্থিত হয় | এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম এক আসনে 1728 বার করলে ধ্যান যোগ আপনা আপনি উপস্থিত হয় | এই ঊর্ধ্বমুখ অতিউত্তম প্রাণায়াম/ সিদ্ধ বিদ্যা প্রাণায়াম/ কৈবল্য বা কেবলি প্রাণায়াম এক আসনে 20736 বার করলে প্রাথমিক সমাধি যোগ আপনা আপনি উপস্থিত হয় | এই সমাধির বারবার অভ্যাসের দ্বারা সবিকল্প সমাধি লাভ হয় , এবং এইসব বিকল্প সমাধির বহুবার অভ্যাসে কখনো কভু নির্বিকল্প সমাধি লাভ হয় , এবং নির্ বিকল্প সমাধির বহু অভ্যাসে কখনো কভু একবার নির্বীজ সমাধি অর্থাৎ পূর্ণ ব্রহ্ম জ্ঞান স্থিতি লাভ হয় / সম্পূর্ণ মোক্ষলাভ সম্ভব হয় | যা সম্পূর্ণরূপে বৈদিক সনাতন শাস্ত্রীয় বিজ্ঞানসম্মত পথ |
খাবার বাছাই করা একটি ব্যাক্তিগত, পরম্পরাগত ও নির্দিষ্ট মতবাদের বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। কাজেই এমন অনেক হিন্দু আছেন যারা তাদের বংশানুক্রমিক পরম্পরা ও বিশ্বাসের জন্য কিছু জিনিস খাওয়া ত্যাগ করেছে। যেমন – ভারতের অনেক বৈষ্ণব সম্প্রদায় ভুক্ত হিন্দু (উত্তর ভারত) আছেন যাদের বাড়িতে মাছ তোলা নিষিদ্ধ। আবার অনেকের হিন্দু বাড়িতে (উত্তর-পশ্চিম ভারত) মাছ মাংশ দুটোই তোলা নিষিদ্ধ। কাজেই হিন্দুদের মধ্যে পরম্পরাগত, ব্যাক্তিগত ও বিশ্বাসী মতবাদগত ফ্যাকটর গুলির উপর অনেক অংশে নির্ভর করে নিষিদ্ধ খাবার গুলি বাছাই এর ক্ষেত্রে। তাই কারো ব্যাক্তিগত বা পরম্পরাগত পছন্দ তে হস্তক্ষেপ করার জন্য এই নিবন্ধটি লিখা হয়নি! বরং উক্ত নিবন্ধটি সেইসব সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য লিখা হয়েছে যারা সনাতন বৈদিক শাস্ত্রকে অবলম্বন করে চলেন এবং জানতে ইচ্ছা রাখেন কোন কোন খাবার গুলো শাস্ত্রের সাপেক্ষে সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু শাস্ত্র বলতে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্রের মূল গ্রন্থ গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বৈধ-অবৈধ খাবারের সূচীটি বানানো হয়েছে। প্রাণীজ:----------- দুধ 1. উট ও ভেড়ার দুধ পান করা নিষিদ্ধ। —--তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২২-২৩, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১১-১২, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০ 2.এক খুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – ঘোড়া) দুধ পান করা নিষিদ্ধ। —-- তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৩, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০ 3.গরু, মোষ, ছাগলের বাচ্চা জন্মানোর পর থেকে ১০দিন যাবৎ তাদের দুধ পান নিষিদ্ধ।—----তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৪, বসিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৫, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৯, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০ 3. নিচুস্তরের পশু (যেমন – কুকুর, বেড়াল) ও মাংসাশী পশুর (যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল) দুধ পান নিষিদ্ধ।—--তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৮৪ ডিম মাছ-মাংস 1. সাপ, কুমীর, ঘড়িয়াল, শুশুক, সর্প আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, অনিয়তকার মস্তক বিশিষ্ট মাছ (যেমন – ইল, কুঁচে মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি) ও জলজ শামুক, ঝিনুক, গুগলি ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ।—--------তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪১, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৬, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৮-৩৯ 2. মোরগ/মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ।…….তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪ 3. যে সমস্ত পাখী শুধু তাদের পা দিয়ে মাটিতে আঁচড়ে আঁচড়ে খাবারের সন্ধান করে এবং যেসব পাখীরা লিপ্তপদী (যেমন – হাঁস) তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭ 4. রাজহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, বক, কাক, পায়রা, টিয়া, ঘুঘু, তিতির, বাজ, চিল, শকূন, বাদুড়, ময়ূর, স্টার্লিং, দোয়েল, চড়ুই, কাঠঠোঁকরা, মাছরাঙা এবং নিশাচর পাখীর মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ।—----তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২-১৭৪ 5 মাংসাশী পাখির মাংশ আহার নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৪, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২ 6. যেকোনো বিস্বাদ ও খাদ্য অনুপযোগী মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – মনু স্মৃতি ৫.১১-১৭, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৪ 7. যে সমস্ত পশুর দুধের দাঁত ভাঙেনি তাকে জবাই করা নিষিদ্ধ অর্থ্যাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক পশুর মাংস আহার নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৫, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩০-৩১ 8. যে সমস্ত পশুর একটি মাত্র চোয়ালে দাঁত আছে (যেমন-ঘোড়া) তাদের মাংস আহার নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪০, মনু স্মৃতি ৫.১৪, বিষ্ণু স্মৃতি LI.৩০ 9. যে সমস্ত প্রাণীর পা বহু অংশে বাঁকা। যেমন শজারু, কাঁটাচয়া, শশক, খরগোশ, কচ্ছপ, গোধা, গোধিকা ইত্যাদির মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৯, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.২৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪ 10. গণ্ডার ও বন্য শূকরের মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।—---তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫ 11 নরমাংস বা নরাকার যন্তুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।—--তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮ 12. গৃহপালিত ছাগল এবং ভেড়ার মাংস খাওয়া বৈধ।—তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১-৪ 13. গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।—---তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯ 14. যেকোনো মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা নিষিদ্ধ। —----তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.১৬ 15. বহু উপকারী গোজাতির মাংস আহার সর্বদা নিষিদ্ধ।—---তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, বিষ্ণু পুরাণ ৩.৩.১৫, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ ১.৯.৯, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩-৪৫ 16. গৌর, ঘায়ল, সরাভ, ষাঁড় প্রভৃতি গো সম্প্রদায় ভুক্ত জীবের মাংস নিষিদ্ধ।—--তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯ 17. মাংসাশী প্রাণীর মাংস নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪ ★ মূলত মাংসাশী প্রাণী বলতে যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বন্য কুকুর ইত্যাদি। 18. একখুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – উটের) মাংস নিষিদ্ধ।—---তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯ 19. কৃষ্ণসার, হরিণ, সাধারণ হরিণ, বন্য শূকরের মাংস খাওয়া বৈধ।—-তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৬ 20. স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মাছ আহার হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ।—-তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৮ 21. কুকুর, বিড়াল, বানর, মহিষ প্রভৃতি বন্য প্রাণীর মাংস আহার নিষিদ্ধ।—--- অন্যান্য 3. ব্যাঙের ছাতা, শালগম নিষিদ্ধ।—তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৮, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭১, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ 4. যেকোনো আহারে উপযোগী বীজ, ফল, মূল, সব্জি খাওয়া বৈধ।—তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১১.১২-২২ 7. টকে যাওয়া (ব্যাতিক্রম – দই) বা পচে যাওয়া বা কোনো খাবারে উভয়ে মিশ্রিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।—-তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২০, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭ উক্ত নিষিদ্ধতার বাইরের খাদ্য বস্তু বা আহার সামগ্রী সমূহ বৈধ, কারণ সেইসব আহার সামগ্রীর উপরে নিষিদ্ধতা আরোপ হয়নি সনাতনশাস্ত্র সমূহে। “যজ্ঞের জন্য ও অবশ্যপালনীয় জীবনধারণের জন্য প্রশস্ত পশুপাখি বধ্য। প্রাচীনকালে অগস্ত মুনি এরুপ আচরণ করেছিলেন।” (মনুসংহিতা, ৫/২২) “সকল স্থাবর (উদ্ভিদ) ও জঙ্গম (প্রাণী) ব্রহ্মা প্রাণীর প্রাণধারণের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। সুতরাং প্রাণী সকল প্রয়োজনে ভোজ্য।” (মনুসংহিতা, ৫/২৮) “প্রতিদিন ভক্ষ্য প্রাণী সকল ভক্ষণ করে ভোক্তা দোষভাগী হয় না। বিধাতাই ভক্ষ্য প্রাণী ও ভক্ষকগণকে সৃষ্টি করেছেন।” (মনুসংহিতা, ৫/৩০) “ব্রহ্মা নিজেই যজ্ঞের জন্য পশুগণকে সৃষ্টি করেছেন। যজ্ঞ সকলের উন্নতির কারণ, সুতরাং যজ্ঞে পশুবধ বধ নয়।” (মনুসংহিতা, ৫/৩৯) “ক্রীত বা নিজে পশু পালন করে তার মাংস বা অপর কর্তৃক প্রদত্ত মাংস দেবগণ ও পিতৃগণকে অর্চনা করে ভক্ষণ করলে দোষভাগী হয় না।” (মনুসংহিতা, ৫/৩২) বনবাসে ভরদ্বাজ মূনি রাম সীতা লক্ষণের ভোজনের জন্যে পশুর মাংস ও ফলমূলের ব্যবস্থা করেছিলেন। (বাল্মীকি রামায়ণ, ২/৫৪)। নিষাদরাজের অতিথি হয়ে মৎস্য এবং নানান রকমের শূষ্ক ও আর্দ্র মাংস ভোজন করেছিলেন। (বাল্মীকি রামায়ণ, ২/৮৪)। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠিরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে রাজা “রন্তিদেবের” মাহাত্ম্য সম্বন্ধে উদাহারণ দিতে গিয়ে বললেন যে এই রাজা দ্বারা যজ্ঞে নিহত অসংখ্য পশুর চামড়া থেকে নির্গত রসে চর্মম্বতী নামক নদী (আধুনিক চম্বল) সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি অতিথি সৎকার ও সেবা করতেন কুড়ি হাজার একশত পশু কেটে তাদের মাংস পরিবেশন করে। (বেদব্যাসী মহাভারত, ১২/২৯)। এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণ রাজা রন্তিদেবের পুণ্যতাকে যুধিষ্ঠিরের উর্ধ্বে স্থান দেন। এছাড়া অর্জুনসহ পঞ্চপাণ্ডবরা মাংস খেতেন। কৃষ্ণ খান্ডব বন দাহনের সময় ঝলসে যাওয়া হরিনের মাংস খেয়েছিলেন। গীতায় কোথাও মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়নি। "যে আহার আয়ু, সত্ত্ব, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্ধনকারী এবং রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, স্থায়ী ও মনোরম, সেগুলো সাত্ত্বিক আহার হিসেবে সর্বদা বিবেচ্য হয়ে থাকে" (গীতা, ১৭/৮) "যে আহার অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবনাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ণ, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ সেগুলো রাজসিক আহার হিসেবে বিবেচ্য" (গীতা, ১৭/৯) "যে আহার অনেক পূর্বে রাঁধিত, যা নীরস, দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, পচা, যা র ঘ্রান গ্রহনে নাসিকা সরে আসে এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধ্য দ্রব্য, সেই সমস্ত তামসিক হিসেবে বিবেচ্য" (গীতা, ১৭/১০) কিন্ত বস্তত দুধ ও আমিষ হিসেবে কথিত আছে! যদিও বা দুধের মধ্যে প্রোটিনের মাত্রা অন্যসব আমিষ আহারের চাইতে অনেক কম, প্রায় ৩% এর মত। যার দরুন তাকে সাধারণত নিরামিষভোজী রা নিরামিষ ভাবে। কিন্ত শাস্ত্রে এই আমিষ, নিরামিষ নয়! সাত্ত্বিক আহার হিসেবেই ঘোষিত করেছে।শাস্ত্র সাপেক্ষে নিষিদ্ধ খাবারের সূচী
1. হাঁস, মুরগি, ময়ুরের ডিম খাওয়া সিদ্ধ। —--তথ্যসূত্র – মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪, ভেল সংহিতা – চিকিতসাস্থানম – ২৬৭, চরক সংহিতা ২৭.৬৩-৬৪
তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৯৩, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩, মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪
1. মাদক দ্রব্য মিশ্রিত পানীয় নিষিদ্ধ।—তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২১
2. সুরা ও সুরা প্রস্তুতের জন্য ব্যাবহৃত দ্রব্য সমূহ নিষিদ্ধ।—তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৫
5. সুস্বাদু আহারে উপযোগী রস (যেমন – খেঁজুরের রস, তালের রস, আখের রস, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি), দুগ্ধজাত পদার্থ (যেমন – দুধ, ঘি, মাখন, দই) মধু ইত্যাদি বৈধ।—-তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১৮.১২-১৩
6. রসুন,পলাণ্ডু,মসুর ডাল, হিং, খেসারি ডাল,কুল বা বদ্রি ফল খাওয়ার উপর নিষিদ্ধ বিধান আছে ।—-তথ্যসূত্র –আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৬, মনু স্মৃতি ৫.৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ১.১৭৬, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ অনুসারে রসুন খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
9. যে খাবারে কোনো পশু মুখ দিয়েছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ। —--তথ্যসূত্র – গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.১০, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
10. যে সব খাবারে পোকা জন্মছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।—--- তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.২৬, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
আসলে শাস্ত্রে নিরামিষ আমিষ নিয়ে নয়। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক আহারের কথাই বলা আছে। আর নিরামিষ ভোজী রা সাধারণত সাত্ত্বিক আহারকেই কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজেকে নিরামিষ ভোজী দাবী করেন।
পদ্ধতি : : বাঁ উরুর ওপর ডান পা এবং ডান উরুর ওপর বাঁ পা রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। দু' হাত সোজা করে হাঁটুর ওপর রাখুন। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এটি হল পদ্মাসন। প্রণালী - পা দুটি সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসতে হবে। এইবার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ জানুর ওপর রাখতে হবে। যাতে ডান পায়ের গোড়ালী তলপেটে বাঁ দিকের মূলাধার স্পর্শ করে। এখন বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান পায়ের উপর এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে বাঁ পায়ের গোড়ালী ডান দিকের মূলাধার স্পর্শ করে। এই অবস্থায় যাতে হাঁটু ভূমি থেকে না উঠে পড়ে, সে দিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি। এই আসনে অবস্থানকালে শির, গ্রীবা ও মেরুদণ্ড সোজা ও সরলভাবে তাকবে। হাত দুটি পাশের ছবির মতো কোলের উপর রাখলে ভালো হয়।পদদ্বয়ের এইরূপ অবস্থানের সঙ্গে পদ্মের সাদৃশ্য আছে। তাই মনে হয় এই আসনটির নাম পদ্মাসন। উপকারিতা - এই আসন অভ্যাসে পায়ের বাত ইত্যাদি দূর হয়। পদ্মাসন একটি শারীরিক অবস্থান, যাতে মেরুদণ্ড বক্র হয় না। মেরুদণ্ডের কর্মক্ষমতার উপরই আমাদের যৌবন ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে। আমরা একে যত অবক্র ও নমনীয় রাখতে পারব, দেহভ্যন্তরের যন্ত্রগুলি তত ভালোভাবে কাজ করার দরুন আমাদের যৌবন অটুট থাকবে। কাজেই যাদের বসে কাজকর্ম করতে হয় (যেমন ছাত্র, কেরানী ইত্যাদি) তাদের সমস্ত দিনের মধ্যে অবসর সময়ে অন্তত প্রতিবারে ২ বার করে ৪ বার এই আসন অভ্যাস করা বিশেষ ফলপ্রদ।ধ্যান-ধারণা অভ্যাসে এই আসন অপরিহার্য। এই আসন অভ্যাসে একাগ্রতা বাড়ে। দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। আমরা এখন ক্রমানুসারে বদ্ধ পদ্মাসন করার পদ্ধতি ও বদ্ধ পদ্মাসন করলে কি কি উপকার পাবো সে সম্পর্কে জানবো। ১. প্রথমে ডান উরুর উপর বাম পা ও বাঁ উরুর উপর ডান পা রেখে পদ্মাসন করে বসুন। ২. এরপর ডান হাত পিছন দিক দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং বাঁ হাত ডান হাতের তলা দিয়ে নিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ভালোভাবে ধরুণ। মনে রাখবেন এই অবস্থায় হাঁটু কিন্তু মাটিতে ঠেকে থাকবে। দু’কাঁধ যতটা সম্ভব সোজা রাখার চেষ্টা করুণ। ১. কাঁধ ও পিঠের ভাল ব্যায়াম হয়। ২. হাত, পায়ের ও হাঁটুর স্নায়ু-পেশীর দুর্বলতা দূর করে। ৩. মেরুদণ্ড সরল হয়। ৪. কাঁধ উঁচু-নীচু থাকলে সমতা ফিরে আসে। ৫. যাঁদের কণ্ঠার হাড় উঁচু, বদ্ধ পদ্মাসন অভ্যাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।বদ্ধ পদ্মাসন
বদ্ধ পদ্মাসন করার পদ্ধতি
বদ্ধ পদ্মাসন করার উপকারিতা
মানুষ যখন ইচ্ছা তখনই কিছু উপভোগ করে। ভোগের সময়, তবে, যদি সে তার ইন্দ্রিয়ের অঙ্গগুলিকে, যার মাধ্যমে সে উপভোগ করে, তার ইচ্ছার বস্তুর দিকে পরিচালিত করে, তবে সে কখনই সন্তুষ্ট হতে পারে না এবং তার আকাঙ্ক্ষা দ্বিগুণ শক্তিতে বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে, যদি সে তার ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলিকে তার নিজের দিকে অভ্যন্তরীণ দিকে পরিচালিত করতে পারে, সে সময় সে তার হৃদয়কে অবিলম্বে সন্তুষ্ট করতে পারে। সুতরাং পূর্বোক্ত প্রত্যহার অনুশীলন, স্বেচ্ছাসেবী স্নায়ু স্রোতের অভ্যন্তরীণ দিক পরিবর্তন করা তার পার্থিব বাসনা পূরণের একটি কাম্য উপায়। যতক্ষণ না তার সমস্ত পার্থিব আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় এবং সে সমস্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে বারবার পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হবে।
শাস্ত্র বলে যে যে অবস্থায় যোগীর মন হৃদয়ে(কুটস্থ এ) নিবদ্ধ থাকে এবং যোগী বহির্জগতের প্রতি উদাসীন থাকে তাকে ব্রহ্মজ্ঞান অবস্থা বলে। এই সময়ে (ব্রহ্মজ্ঞান অবস্থা) যোগীকে মনেহয় সবার দিকে যেন গভীরভাবে তাকাচ্ছে-সবার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে, কিন্তু আসলে সে বাইরের জগতে বাইরের চোখ থাকলেও প্রকৃত দৃষ্টি সবসময়ের জন্য অন্তর্মুখী থাকে। যোগীর বাহ্যিক দৃষ্টি স্থির (প্রায় পলকহীন) থাকে এবং মন কুটস্থ এ সর্বদা জন্য সংযুক্ত থাকে । এই ব্রহ্মজ্ঞান অবস্থা একটি আশীর্বাদ. এই অবস্থায় যোগী বাহ্যজগত সম্বন্ধে পূর্ণরূপে সজাগ- সর্বকর্মযুক্ত- সর্ববিচার যুক্ত থেকেও অন্তর্জগত এ সর্বদার জন্য নিরালম্ব অবস্থায় পরিপূর্ণ রূপে ব্রহ্ম-সংযুক্ত থাকে।…….এই অবস্থাকেই শাস্ত্রে ব্রহ্মজ্ঞান অবস্থা বলে।
মানব শরীরে সাড়ে-তিনশকোটি নাড়ি
মানব শরীরে সাড়ে-তিনশকোটি নাড়ি বিদ্যমান, তার মধ্যে বাহাত্তর হাজার নাড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ভাবে কার্যকারী এবং তার মধ্যে কার্যকারিতার গুরুত্ব অনুসারে 14টি গুরুত্বপূর্ণ নাড়ি আছে এবং
এই 14 টি নাড়ির মধ্যে আবার প্রধান তিনটি নাড়ি রয়েছে, যা হল ইড়া, পিঙ্গলা এবং সুষুম্না। ইড়া
এবং পিঙ্গলাকে দুটি প্রধান শক্তির পথ বলা হয়, যা মূল বা সর্বপ্রধান নাড়ি অর্থাৎ সুষুম্না নাড়ির
উভয় পাশে প্রবাহিত হয়।
সুষুম্না নাড়ি মূল বা সর্বপ্রধান নাড়ি, এবং যা মানব শরীরের মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এই নাড়িটি আমাদের দেহের সমস্ত শক্তিগুলির মধ্যে ভারসাম্যের প্রতিনিধিত্ব করে, যখন কেউ
এই সুষুম্না নাড়ি শক্তিকে অন্তর্মুখী ভাবে ভারসাম্য রাখতে পারে তখন সেই ব্যক্তি নিজের মধ্যে
উচ্চ চেতনা-জ্ঞান জাগ্রত করতে পারে।
ইড়া নাড়িটি নিষ্ক্রিয় বাম এবং চন্দ্র শক্তি হিসাবে পরিচিত। এটি শরীরে প্রকৃতি শক্তির প্রতিনিধিত্ব
করে, যা শরীরের নিষ্ক্রিয় শক্তি। প্রধান নদীটির বাম দিকে প্রবাহিত, এটি মানসিক শক্তি নিয়ে
কাজ করে এবং চন্দ্রএর সঙ্গে যুক্ত। যাদের প্রভাবশালী ইড়া শক্তি রয়েছে তাদের লালন-
পালনকারী করে তোলে।
পিঙ্গলা নাড়ি সক্রিয় ডান এবং সৌর শক্তি হিসাবে পরিচিত। এটি শরীরে পুরুষ শক্তির
প্রতিনিধিত্ব করে। এটি শরীরের সক্রিয় এবং তরুণ শক্তি। ডান দিকে প্রবাহিত,
এটি বুদ্ধি শক্তি নিয়ে কাজ করে এবং সূর্যের সাথে যুক্ত, পিঙ্গলা শক্তি আমাদের
সৃজনশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
14টি গুরুত্বপূর্ণ নাড়ির মধ্যে রয়েছে:------
1. সুষুম্না নাড়ি:- মূলাধার চক্র থেকে শুরু করে, এই নদীটি সহস্রার চক্রে শেষ হয়,
এই নাড়িটি হল কেন্দ্রীয় নাড়ি যা শরীরের চারপাশে অন্যান্য নাড়িতে প্রাণ প্রবাহিত করে।
2. পিঙ্গলা নাড়ি:- উপলব্ধি এবং বিশ্লেষণকে উন্নীত করার জন্য বলা হয়েছে,
পিঙ্গলা নাড়ি ডান দিকে শুরু হয় এবং ডান নাসারন্ধ্রে শেষ হয়। এটি সৌর, বা
গরম করার শক্তি হিসাবেও পরিচিত।
3. ইড়া নাড়ি:- ইড়া নাড়িটি মূলাধার চক্র থেকে শুরু হয় এবং তারপরে, বাম
নাকের ছিদ্রে শেষ হয় এবং বলা হয় বাম মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে। এটি আবেগ
এবং ভালবাসার অনুভূতিকে উন্নীত করতে পারে, কারণ এটি মস্তিষ্কে চন্দ্র
এবং শীতল শক্তি নিয়ে আসে।
4. অলম্বুশা নাড়ি:-এই নাড়ি শরীরের অঙ্গ এবং অংশে শক্তি আনতে সাহায্য
করে যা দূষিত এবং বর্জ্য দূর করে। এটা মুখ পর্যন্ত শরীরের সব পথ যায়. !
5. গান্ধারী নাড়ি:- এই গান্ধারী নাড়ি মূলাধার চক্র থেকে শুরু হয়, মেরুদণ্ডের গোড়ায়
এবং শেষ হয় বাম চোখে এবং এটি বাম চোখে শক্তি সরবরাহ করে !
6. পুষা নাড়ি :- এই পুষা নাড়ি মুলাধার চক্র থেকে শুরু করে এবং ডান চোখে শেষ হয়
এবং এই নাড়িটি আপনার ডান চোখে শক্তি সরবরাহ করে।
7. হস্তিজীব নাড়ি:-এই নাড়িটি আমাদের বাহু ও পায়ে শক্তি সরবরাহ করে এবং
আবার মুলাধার চক্র এবং মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে শুরু হয় এবং নাভির পিছনে
থাকা মণিপুর চক্রে শেষ হয়।
8. কুহু নাড়ি:- এই নাড়িটি গলা থেকে শুরু হয় এবং যৌনাঙ্গে শেষ হয় এবং
এই যৌনাঙ্গ এলাকায় শক্তি নিয়ে আসে।
9. পয়স্বিনী নাড়ি:-এই পয়স্বিনী নাড়ি ডান দিক থেকে শুরু হয়, এবং
ডান কানে শেষ হয়ে শরীরে প্রবাহিত হয়।
10. শঙ্খিনী নাড়ি:- এই নাড়িটি মূলাধার চক্র থেকে বাম দিক থেকে শুরু হয় এবং
বাম কানে শেষ হয়ে শরীরে প্রবাহিত হয় ।
11. সরস্বতী নাড়ি:- এই নাড়ি মুখ, জিহ্বা এবং গলাকে শক্তি দেয়। এটি মূলাধার চক্র
থেকে শুরু হয় এবং গলার গোড়ায় অবস্থিত বিশুদ্ধি চক্রে শেষ হয়।
12. বরুণ নাড়ি:- এই নাড়ি স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে পুরো শরীরে শক্তি নিয়ে আসে।
এটি মূলাধার চক্র থেকে শুরু হয় এবং অনাহত চক্রে শেষ হয়।
13. বিশ্বধারা নাড়ি:- এই নাড়ি পাচনতন্ত্রকে শক্তি প্রদান করে, এই নাড়িটি
মূলাধার চক্র থেকে শুরু হয় এবং মণিপুর চক্রে শেষ হয়।
অঙ্গে শক্তি নিয়ে আসে এবং মণিপুরা চক্রে শেষ হয়।
“ওঁ” হল পরানাদ বা মুখ্যপ্রাণশক্তি আকাশ এর গুণ হল “শব্দ” রুপি তন্মাত্র । বায়ু এর গুণ হল শব্দ &স্পর্শের রুপি তন্মাত্র। অগ্নি এর গুণ হল রূপ, স্পর্শ ও শব্দের রুপি তন্মাত্র। বরুণ/জল এর গুণ হল রস, রূপ, স্পর্শ ও শব্দের রুপি তন্মাত্র। পৃথ্বী এর গুণ হল গন্ধ, রস, রূপ, স্পর্শ ও শব্দের রুপি তন্মাত্র। গন্ধ , রস(স্বাদ যে কোন প্রকারের রস), রূপ (রূপ/আকার ), স্পর্শ (স্পর্শ) এবং শব্দ (শব্দ)---এইগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্পন্দন বা কম্পন ছাড়া আর কিছুই নয়। “ওঁ” এই সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন স্পন্দন বা কম্পন এর উৎস। তাই এই “ওঁ” কে বলা হয় সুক্ষ্ম প্রাণশক্তি/সূক্ষ্ম প্রাণশক্তি/মুখ্যপ্রাণশক্তি । এই “ওঁ” সূক্ষ্ম প্রাণশক্তি/সূক্ষ্ম জীবনী শক্তি অর্থাৎ, “ওঁ” মানবদেহে প্রাণশক্তিরূপে প্রকাশ পাবার পর এই জীবনী শক্তি স্থূল-সূক্ষ্ম-কারণ অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাণ, আপান, ব্যান, সমান এবং উদান (মুখ্য 5প্রাণ) শরীরের বিভিন্ন স্থানে এর কাজ অনুসারে। মারুত মানে প্রাণবায়ু। প্রতিটি মারুত(প্রাণবায়ু) মানবদেহে একটি বিশেষ কাজ করে। মুখ্য প্রাণ/প্রাণশক্তির সাথে এই সমস্তগুলি আরও 44টি উপপ্রাণ মুখ্য 5 প্রাণের উপপ্রাণ হিসাবে প্রকাশিত হয় এবং শরীরের সূক্ষ এবং ভেতরের অনেক ছোট ছোট এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজকে পূর্ণ করতে সহায়তা করে। মূল 49টি অক্ষর (বর্ণমালা) এই 49টি মারুত(প্রাণবায়ু) ছাড়া আর কিছুই নয়। “ওঁ” প্রধান 1 টি অক্ষর,মূলাধার এ 4 টি অক্ষর, স্বাধিস্থান এ 6 টি অক্ষর, মণিপুরা এ 10 টি অক্ষর, অনাহত এ 12 টি অক্ষর, বিশুদ্ধ এ 16 টি অক্ষর= 49টি অক্ষর (বর্ণমালা) অথবা মারুত(প্রাণবায়ু)। 49টি প্রাণবায়ু রয়েছে যার উৎস সূক্ষ্ম জীবনী শক্তি। আর সূক্ষ্ম জীবনী শক্তির শক্তি এবং চেতনা উভয়ই রয়েছে এবং এর উৎপত্তিস্থল সহস্রার চক্র। সহস্রারচক্র হল মহাজাগতিক শক্তির মূলকেন্দ্র আধার। এছাড়াও আজ্ঞা চক্র এরমধ্যে আরো 2টি অক্ষর(“হ” & “ক্ষ”) থাকলেও 49 টি প্রাণবায়ু 49 টি অক্ষরের উপরে পূর্ণরূপে ক্রিয়াশীলতা বিদ্যমান থাকে। তাই আজ্ঞা চক্রের এই দুটি অক্ষর নিয়ে মোট অক্ষর সংখ্যা দাঁড়ায় 51 টি, কিন্তু পাঁচটি চক্র এরমধ্যে 48 টি অক্ষর এবং সর্বস্থানে শক্তিসঞ্চারী ওঙ্কার কে নিয়ে 49 টি অক্ষরের উপরে 49 প্রাণের ক্রিয়াশীলতা পূর্ণরূপে বিদ্যমান থাকে । তাই 49টি অক্ষর (বর্ণমালা) অথবা মারুত(প্রাণবায়ু)। “ওঁ” সূক্ষ্ম প্রাণশক্তি আজ্ঞা চক্র কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে এবং কপালের ভ্রুগুলির মধ্যবর্তী স্থান কুটস্থ হয়ে সহস্রার চক্রে পৌঁছে। প্রতিটি চক্রের নিজ নিজ অক্ষর জপ করার মাধ্যমে এই 49টি মারুত(প্রাণবায়ু) গুলির কারণে শক্তিগুলিকে জাগ্রত বা সক্রিয় করানো হয়। প্রতিটি প্রাণের নিজস্ব নিজস্ব বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্বগুলি চক্রের মাধ্যমে বিশুদ্ধ, অনাহত, মণিপুর, স্বাধিস্তান এবং মূলাধারে পালিত হয়, এবং এই চক্রগুলি থেকে স্নায়ু কেন্দ্রে এবং স্নায়ুকেন্দ্র থেকে তারপরে বিভিন্ন অঙ্গে। উদাহরণ:- যখন একটি মোবাইল ব্যাটারি চার্জশেষ হয়ে যায়, তখন আমরা ব্যাটারি আবার চার্জ করি। তখন আবার মোবাইলটি সুস্থভাবে কাজ করা শুরু করে। ঠিক তেমনি ভাবে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র রুপি অক্ষরগুলি জপ করলে 49টি মারুত(প্রাণবায়ু) এবং চক্র গুলি সঠিকভাবে কাজ করে। যে সাধক নিদ্রার উপর বিজয়ী হয়েছে অর্থাৎ সে একমাত্র বুঝতে পারে যে দৃশ্যমান সকল পদার্থই মায়া আর পরব্রহ্মই সব কিছু ।
গোমাংসং ভক্ষয়েতনিত্যং পিবেদমরবারুনীম।
কুলীনং তমহং মন্যে ইতরে কুলঘতকা:।।
গোশব্দেনদিতা জিহ্বা তৎপ্রবেশা হি তালুনি।
গোমাংস ভক্ষনং তত্তু মহাপাতকনাশানম।।
জিহ্বাপ্রবেশসভূতবহ্নিনোৎপাদিত: খলু।
চন্দ্রাৎ স্রবতি য: সার: স স্যাদমরবারুণী।।
মদ্যদানে মহাপুন্যং সর্বতন্ত্রে শ্রুতং ময়া।
গুরুমুখী ব্রহ্মবিদ্যার প্রথমবিদ্যা হলো খেচরীমুদ্রা । “খেচরী”র অর্থ হল→‘খ’ তে বিচরণ করা I →‘খ’ এর অর্থ→”আকাশ” I ”আকাশ” শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে→ ‘কাশৃ’ ধাতু থেকে I ‘কাশৃ’ ধাতু→দীপ্তো I কাজেই ”আকাশ” অর্থাৎ দীপ্তিমস্ত “ব্রহ্মতত্ত্ব”এ তা সম্ভব হয় I
ভগবান দত্তাত্রেয় বলেছেন →“কপাল বিবরের অভ্যন্তরে জিহ্বাকে ব্যবৃত্ত ও বন্ধ করে ভ্রুমধ্যে দৃষ্টি স্থাপন করবে”→এরই নাম “খেচরী” I
“প্রভুর জন্য যদি প্রাণে আর্তি থাকে শরণাগতির ভাব নিয়ে বুক ভরা কান্না নিয়ে ধ্যান করতে থাকলে”→“নিবিড় ধ্যান”এ “প্রভুর দর্শন” মিলে I প্রগাড় ধ্যানাবস্থায় “জিহ্বা” স্বতঃই→ বিপরীতগামী হয়ে যায় I “ধ্যান” ভাঙলে “সাধক” অনুভব করতে পারেন→“দিব্যানুভুতি”র কালে বিনা চেষ্টায় বিনা কসরতেই “জিহ্বা” →“তালুকুহর”এ প্রবিষ্ট ছিল I
“শুদ্ধিশ্বর মহাদেব”কে→“শুণ্ডিকেশ্বর” নামেও অভিহিত করা হয় I “শুণ্ডিক” শব্দের অর্থ→ “আলজিভ/আলজিহ্বা” I “শুণ্ডিক” শব্দের দ্বারা→একটি গুহ্য যোগক্রিয়া “খেচরী মুদ্রা”র ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে I “খেচরী মুদ্রা”র আন্তর ক্রিয়ায় “জিহ্বা”কে→“আলজিহ্বা”র উর্ধ্বস্থিত গর্তে প্রবিষ্ট করিয়ে “সহস্রার” মন্ডলে গিযে→“জিহ্বা”কে দিয়ে ঠোক্কর মারতে হয় I
“যোগী ব্যক্তি” →“রসনা”কে বিপরীতগামিন করে লম্বিকা অর্থাৎ “আলজিহ্বা”র উর্ধ্বস্থিত গর্তে “তালুকুহর”এ প্রবেশ করিয়ে “জিহ্বা”কে স্থিরতর রেখে ধ্যান করতে থাকবেন I
“খেচরী মুদ্রা সাধনা”র দ্বারা→“জিহ্বা”কে বিপরীতগামী করতঃ তালুমধ্যে প্রবেশ করিয়ে→ “কপালকুহর”এ উর্ধ্বগত করে রাখতে হয় I এই গুহ্য “যোগক্রিয়া”র অনুষ্ঠান যখন ভালভাবে আয়ত্ব হয়ে যায়→তখন অন্যান্য সাধারণ ক্রিয়া এবং পুজানুষ্ঠান ত্যাগ করে “জিহ্বা”কে“কপালকুহর”এ স্থির রাখতে হয় I তাতেই “সাধক”এর “শিব দর্শন” ঘটে অর্থাৎ “সাধক” নিজেই শিব্স্বরুপ হয়ে যান ।
বিশেষতঃ “সমাধি” লাভ করতে হলে→“খেচরী মুদ্রা” [ জিহ্বা কন্ঠকূপের মধ্যে আলজিহ্বার উপর] আয়ত্ত করা বিশেষভাবে প্রয়োজন I
এই “মুদ্রায় সিদ্ধ” হতে হলে→“ছেদন-দোহন- মর্দন”ক্রিয়া অপরিহার্য I “যোগশাস্ত্র”এ ইহা বর্ণিত আছে যাহা হল→“জিহ্বার নিম্নভাগের সঙ্গে মুখগহ্বরের মধ্যে নীচের দিকে যে শিরা সংলগ্ন আছে, তা ছেদন করে জিহ্বার অগ্রভাগ”এ চালনা করতে হবে I“জিহ্বা”কে প্রতিদিন ননী মাখন দিয়ে “দোহন” করে→লৌহযন্ত্র [লৌহ নির্মিত এক প্রকার সুক্ষ্মযন্ত্র অভাবে জীবছোলা দ্বারা] দ্বারা “কর্ষণ” করতে হয় I কিছুদিন এইভাবে করতে করতেই→ “জিহ্বা” ক্রমশঃ “দীর্ঘতর” হয়ে যাবে I যখন দেখা যাবে যে “জিহ্বা”→“ভ্রুমধ্যস্থ স্থান স্পর্শ” করতে পারছে→তখন ঐ “জিহ্বা”কে “তালুর মধ্যপথ”এ “উর্ধ্বদিকে কপালকুহরে” প্রবেশ করিয়ে→“ভ্রুমধ্যে দৃষ্টি” স্থির করতে হয় I এর নাম→“খেচরী মুদ্রা” I “খেচরী মুদ্রা”য় ভালভাবে “অভ্যস্ত” হলে তবেই→“সাধক”এর “নাদযোগ সমাধি অভ্যাসের অধিকার” জন্মেI
“যোগী” ব্যক্তি “জিহ্বা”কে→বিপরীতগামী করে লম্বিকার অর্থাৎ “আলজিহ্বার উর্ধ্বর্স্থিত গর্ত তালুকুহর”এ ঢুকিয়ে দিয়ে ঐ স্থানে “জিহ্বা”কে স্থির কর “ধ্যান” করতে থাকবেন→তাতে সকল রকম “কর্মবন্ধনের ভয়” দূর হয় I ঐ “ধ্যান পরিপক্ক” হলে “প্রগাড় ধ্যান”এর অবস্থায় “সহস্র চক্রক্ষরিত সুধা বা মধুক্ষরণ” হতে থাকে→সেই “মধু পান” করলে “শরীর রোগহীন হয়-অতীন্দ্রিয় জগতের অনেক আলৌকিক দৃশ্যের দর্শন” ঘটে I
“খেচরী মুদ্রা[র কৌশল” শিখতে হয় I এই “দুটি স্তর অতিক্রম” করলে→দত্তাত্রেও কথিত “তৃতীয় ক্রিয়া”র→“”ধ্যান কৌশল শিক্ষা” নিতে হয় I
সেই “ধ্যান কৌশল” হচ্ছে, “সাধক” যদি “শিবনেত্র হয়ে অর্থাৎ দুটো চোখের তারাকে নাসামূলের অতি নিকটে এনে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থলে ললাটের অভ্যন্তরে প্রণব বিজড়িত দিব্য জ্যোতির্ময় অন্তরাত্মার ভাবনা করেন” তাহলে→“বিদ্যুত প্রভা সদৃশ ব্রহ্মজ্যোতিঃ” প্রত্যক্ষ হয় I “ব্রহ্মজ্যোতিঃপ্রত্যক্ষ” হলে→“সাধনা”র আর কি বাকি থাকে I
সুপ্রসিদ্ধ “যোগীরাজ শ্যামা চরণ লাহিড়ী” যেভাবে→“খেচরী মুদ্রার কৌশল” শিখিয়ে গেছেন→সেই “ক্রিয়া”কে তিনি সহজতর নিরাপদ পদ্ধতি বলে ভাবতেন I তিনি→“ছেদন- “দোহন”আদির বিষম বিপক্ষে ছিলেন I তিনি যে “পদ্ধতি”র উপদেশ দিতেন→তার নাম “তালব্য মুদ্রা” I
“ঋগ্বেদ”এর একটি “বিশেষ মন্ত্র” আছে I “পস্মাসনে বা সিদ্ধাসনে বসে জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টিয়ে তালুতে ঠেকিয়ে সেই সিদ্ধ বেদমন্ত্র ছন্দানুসারে উচ্চারণ করতে থাকলে→সেই মন্ত্রের এমনি বর্ণবিন্যাস যে তা উচ্চারণ করতে আরম্ভ করলেই→প্রতি বর্ণের উদ্ ঘাত ও স্পন্দন অভ্যাস কালের মধ্যেই জিহ্বাকে তালুকুহরে প্রবিষ্ট হতে বাধ্য করে” I
“যোগশাস্ত্র”এ এসব বর্ণনা থাকলেও “শুণ্ডিকেশ্বর মহাদেব”এর ক্ষেত্রের “বৈশিষ্ট্য” এই যে→ এখানে “খেচরী মুদ্রা” আয়ত্ব করার জন্য→বেচারা “জিহ্বা”কে টেনে হিছড়ে কোন “ছেদন-দোহন-কর্ষণ-মার্জন”আদির বিড়ম্বনা বা অত্যাচার সহ্য করতে হয় না I “শুণ্ডিকেশ্বর মহাদেব”এর কৃপায় →“জিহ্বা”কে কেবল সাধ্যমত “বিপরীতগামী” করে “জপ” করতে করতেই “খেচরী মুদ্রা”য় →“সিদ্ধিলাভ” ঘটে I
“প্রভুর জন্য যদি প্রাণে আর্তি থাকে শরণাগতির ভাব নিয়ে বুক ভরা কান্না নিয়ে ধ্যান করতে থাকলে”→“নিবিড় ধ্যান”এ “প্রভুর দর্শন” মিলে I প্রগাড় ধ্যানাবস্থায় “জিহ্বা” স্বতঃই→ বিপরীতগামী হয়ে যায় I “ধ্যান” ভাঙলে “সাধক” অনুভব করতে পারেন→“দিব্যানুভুতি”র কালে বিনা চেষ্টায় বিনা কসরতেই “জিহ্বা” →“তালুকুহর”এ প্রবিষ্ট ছিল I
এখানে “ব্রহ্মজ্যোতিঃ” বিষয়ক কিছু তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যাহা হল→ “শিবনেত্র” হয়ে চোখের তারা দুটোকে নাসামূলের অত নিকটে এনে ললাটের অভ্যন্তরে প্রণব বিজড়িত অন্তরাত্মার জ্যোতির্ময় রূপ কল্পনা করতে করতে যে “জ্যোতি”র প্রকাশ ঘটে থাকে→সে “জ্যোতির আভাস হতে পারে-সর্বাংশে তাকে ব্রহ্মজ্যোতিঃ বলা যাবে না” I
“কান্না” অর্থ→কেদে আনা I “নিষ্কাম”ভাবে “ঈশ্বর”এর জন্য কাদলে “ঈশ্বর”কে পাওয়া যায় I
“সাধকের আকুতি এবং আশুতোষের কৃপা”→এই হল “ব্রহ্মদর্শন”এর মূল কথা I
যে “জ্যোতি বিনা কল্পনায় উৎপন্ন হয়-যে জ্যোতি স্বয়ং প্রকাশিত হয়- যে জ্যোতি হঠাৎ দেখা যায়”→সেই “জ্যোতি”→“পরমাত্মা”য় অবস্থিত বলে জানবে I সেই “দিব্যজ্যোতি”ই→যথার্থতঃ “ব্রহ্মজ্যোতিঃ”I
যার সাহায্যে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরের অমৃতগ্রন্থি (পাইনিয়াল গ্রন্থি) যা বহু সাধকের কাছেই রহস্যময় এবং অমৃতকর তাহা জাগ্রত করা হয় । গুরুমুখী ব্রহ্ম-বিদ্যায় ব্যখ্যা আছে যে কিভাবে বেদান্তের খেচরীমুদ্রা যৌগিক প্রক্রিয়াকে প্রস্তুত করা হয়েছে এই অমৃতগ্রন্থিকে (পাইনিয়াল গ্রন্থিকে ) সক্রিয় করার জন্য - যা অতন্ত্য ভাবে গুরুমুখী । এই অমৃতগ্রন্থি (পাইনিয়াল গ্রন্থি) জাগ্রত হলে একজন মানুষের মধ্যে এমন এক পরমদিব্যজ্ঞান -পরমদিব্যআনন্দ বা পরমদিব্যসুখ সৃষ্টি করতে পারে যা আপনার আজীবনের সমস্থ অর্জিত জড়োজগতের জ্ঞান এবং জড়োজগতের সুখের বাইরে।গোভক্ষণের আধ্যাত্মিক নাম খেচরিমুদ্রা। এই যোগশাস্ত্রে বলা রয়েছে গো অর্থাৎ বেদে জিহ্বাকে বোঝাই, আর এই জিহ্বাকে গুরুমুখী বিদ্যা সাহায্যে তালুকুহরে প্রবেশ করানোই গো মাংস ভক্ষণ- তন্ত্র শাস্ত্রে ইহাকেই মাংস সাধনা বলেছে। এই প্রকারে যিনি গো মাংস ভক্ষণ করেন অর্থাৎ জিহ্বাকে নিশ্চল অবস্থার তালুকুহরে রেখে কূটস্থে ধ্যানরত থাকেন সেই সাধকই অমৃত পান করেন। কারণ সহস্রার থেকে ক্ষরিত যে অমৃতসুধা তা তিনি পান করতে সমর্থ হন। জিহ্বা উপরে উঠিয়ে তালুরন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে জিহ্বাকে নিশ্চল ভাবে রাখলে গলমধ্যে যে মিষ্টরস অনুভূত হয় তাকেই অমৃত বলে।খেচরী অমৃতগ্রন্থি অথবা পিনাইল গ্ল্যান্ড (Pineal gland ) এবং মূলহরমোন গ্রন্থি অথবা পিটুইটারি গ্ল্যান্ড (Pituitary gland ) এর বিভিন্নতা জানা সকলের উচিত। আজ্ঞাচক্রে দুই ভুরুর মাঝখানে দেড় ইঞ্চি ভেতরে পিনিয়াল গ্যান্ড অবস্থিত– এটি অর্ধ সেঃ মিঃ লম্বায় & 20-25 গ্রাম ওজন। আমরা যখন খেচরীমুদ্রা করি, তখন পিনিয়াল গ্রান্ড উত্তেজিত হয়ে একটি
ক্ষরণের সৃষ্টি হয়, যাকে বলে মেলাটনিন। এই মেলাটনিন ক্ষরণের ফলে শরীরের কোষগুলি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রতিদিন আমরা 21600 বার নিঃশ্বাস- প্রশ্বাস নিই, তার ফলে শরীরের কোষগুলি যে ধ্বংস হয় তার হাত থেকে রক্ষা পেতে পিনিয়াল গ্যান্ডকে নিয়মিত উত্তেজিত রাখার অভ্যাস থাকা ভাল।এই পিনিয়াল গ্যান্ডের আয়ু বড় কম- চল্লিশ বছর বয়সে শুকিয়ে যায়। তখন থেকে ধীরে ধীরে মানুষের জীবনে অকাল বার্ধক্য নেমে আসে। তাই অল্প বয়স থেকেই খেচরীমুদ্রা দ্বারা ঐ পিনিয়াল গ্যান্ডকে সক্রিয় রাখলে এর আয়ু বেড়ে যায় এবং বার্ধক্য তখন বহুদূরে থাকে। পিনিয়াল গ্যান্ড আলো এবং অন্ধকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সূর্য উঠলে মেলাটনিনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। খেচরীমুদ্রা করার ফলে পিনিয়াল গ্যান্ড যে ক্ষরণ হয়, তাতে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায় & শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে এবং রক্তের উর্দ্ধচাপ হয় না।
ধ্যানের উচ্চতর অবস্থায় একজন যোগী যখন ইন্দ্রিয়ের থেকে তার জীবনী শক্তিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং তার মনকে আত্মার সাথে একত্রিত করে, তখন সে তার শারীরিক দেহে পরমানন্দের রোমাঞ্চ হিসাবে একটি অনুরূপ প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। উন্নত যোগীরা জানেন কীভাবে খেচরী মুদ্রা নামক একটি নির্দিষ্ট কৌশলের মাধ্যমে যা শুধুমাত্র একজনের গুরুর নির্দেশ অনুসারে অনুশীলন করা উচিত - জিহ্বায় পুংলিঙ্গ স্রোতকে স্ত্রীলিঙ্গ নেতিবাচক স্রোতের সাথে একত্রিত করা। সমাধি ধ্যানে, এই স্রোতের সংমিশ্রণ ঐশ্বরিক আনন্দের রোমাঞ্চ তৈরি করে এবং মুখের মধ্যে অমৃতের ক্ষরণও করে।
ওই অবস্থায় সাধক ধীরে ধীরে অন্তরমুখে গভীর থেকে গভীরতর অবস্থায় প্রবেশ করে। তাই যোগসাধনায় খেচরীমুদ্রা অত্যন্ত আবশ্যক ক্রিয়া ।"এই খেচরীমুদ্রার অনুধাবন গভীর চেতনার গভীর আধ্যাত্মিক আগমনকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।" বেদে বা সনাতন শাস্ত্রে খেচরীমুদ্রাকে "সমস্ত মুদ্রার মধ্যে সেরা শ্রেষ্ঠ মুদ্রা" হিসাবে বর্ণনা করা আছে।1. ক্রিয়াই সত্য।
1. দেবভূমি হিমালয়ে চিরঅমর-চিরযুবা মহাবতার বাবাজি মহারাজ লোক কল্যাণ হেতু বিচরণ করছেন। মহাবতার বাবাজি মহারাজ কখনো বৈদিক অনুশাসন ত্যাগ করেন না এবং যারা শরীর -মন - বাক্য দ্বারা আন্তরিক ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালন করেন তাদেরকেও তিনি ত্যাগ করেন না কিন্তু যারা যারা শরীর -মন - বাক্য দ্বারা আন্তরিক ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালন করেন না তাদেরকে তিনি কখনো গ্রহণ করেন না।। এই সত্য কে জেনে প্রত্যেকের শরীর -মন - বাক্য দ্বারা আন্তরিক ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালন করা উচিত মুক্তির মার্গকে পাবার জন্য।
2. কিংবদন্তি আছে যে বদ্রীনাথের কাছাকাছি কোথাও মহাবতার বাবাজি মহারাজ এর -অনন্ত মৃত্যুহীন মহাগুরুর অবস্থান রয়েছে। বদ্রীনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রাভালজির বদ্রীনাথ মন্দিরে একটি খুব পুরানো অঙ্কন আছে। রাভালজি একটি পেন্সিল বা ওই ধরণের কিছু দিয়ে দিয়ে একটি ছবি আঁকেন। কথিত আছে যে এই ছবিটি আঁকার পর তিনি হিমালয়ের নির্জন দিকে গিয়েছিলেন, আর কখনো ফিরে আসেননি। এই পেন্সিল ছবিটি তারিখহীন এবং বলা হয় যে এটি অনেক পুরানো। এটা আসল আঁকা ছবি এবং এটি মহাবতার বাবাজি মহারাজ এর প্রথম ছবি।