পুষ্পক বিমান
পুষ্পক বিমান - রামায়ণে বিমান বিদ্যা
রামায়ণে কুবেরের পুষ্পক বিমানের উল্লেখ অনেক স্থানে এসেছে। কুবেরকে যুদ্ধে পরাজিত করে রাবণ পুষ্পক বিমানটি জিতেছিল। এখন কিছু লোক বলছে যে, কেবল একটা বিমানেরই স্পষ্ট বর্ণন এসেছে, এরজন্য বিমান বিদ্যা ছিল না। এরকম লোকেদের পঙ্গু বুদ্ধির উপর দুঃখ আসে। যেই কুবেরের কাছে পুষ্পকের মতো বিমান ছিল, রাবণ কি পারতো বিনা বায়ুসেনায় তার সঙ্গে যুদ্ধে জিততে? অস্ত্র, সেই সময় বিশ্বের সবথেকে উত্তম, সবথেকে সুন্দর, শীঘ্রগামী, স্বর্ণময় তথা প্রসিদ্ধ পুষ্পক বিমানই
ছিল। এইজন্য তার বর্ণন এসেছে। সেসময় উড়োজাহাজের বিদ্যা সামান্য ছিল, তাই সামান্য কথার বারংবার উল্লেখ হয় না। তবুও রামায়ণে অনেক স্থানে উড়োজাহাজের বিদ্যার উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। যখন শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ মূর্ছিত হয়ে ভূমিতে পরে ছিলেন তখন রাবণ রাক্ষসীদের বলে যে, যাও সীতাকে পুষ্পক বিমানে বসিয়ে মৃত রাম-লক্ষ্মণকে দর্শন করিয়ে নিয়ে আসো।
বিমানম্ পুষ্পকম্ তত্ত্ব সন্নিবর্ত্যেম্ মনোজবম্।
দীনা ত্রিজটয়া সীতা লঙ্কামেব প্রবেশিতা।।
(বাল্মীকি রামায়ণ যুদ্ধকাণ্ড ২৮/২০)
রাম-লক্ষ্মণকে দেখিয়ে ত্রিজটা রাক্ষসী মনের সমান দ্রুতগামী পুষ্পক বিমানকে ফিরিয়ে দুঃখী সীতাকে লঙ্কাতে নিয়ে আসলো।
এই প্রকার যুদ্ধ সমাপ্তির পরে লঙ্কারাজ বিভীষণ শ্রীরামের প্রস্থানের জন্য পুষ্পক বিমানকে প্রস্তুত করেছিলেন-
ক্ষিপ্রমারোহ সুগ্রীব বিমানম্ বানরৈঃ সহ।
ত্বমপ্যারোহ সামাত্যো রাক্ষসেন্দ্র বিভীষণ।।
(বাল্মীকি রামায়ণ যুদ্ধকাণ্ড ৬৮/২০)
শ্রীরামের আজ্ঞা পেয়ে বানর সহিত বিভীষণ আদিও পুষ্পক বিমানে বসে অযোধ্যায় শ্রীরামের রাজ্যাভিষেকে যান।
ভাবুন, বিমানটি কত বড় হবে! অযোধ্যাতে যাওয়ার সময় পুষ্পক বিমান দ্বারা অনেক স্থানের নিরীক্ষণও সকলে করেছিল যাকে
আজকাল হাওয়াই নিরীক্ষণও বলা হয়।
সুগ্রীবেণৈবমুক্তস্ত হৃষ্টো দধিমুখঃ কপিঃ।
স প্রণম্য তান্ সর্বান্ দিবমেবোৎপাত হ।।
(বাল্মীকি রামায়ণ সুন্দরকাণ্ড ৪০/১)
সুন্দরকাণ্ডে সুগ্রীব তার নিজের বনরক্ষক দধিমুখকে বলেন যে, এখন আপনি গিয়ে পূর্ববনের রক্ষা করুন।
আর হনুমান আদি সৈনিকদের শীঘ্রই এখানে পাঠিয়ে দিন। সুগ্রীবের এরকম বলার পর দধিমুখ প্রসন্নতাপূর্বক
"আকাশ মার্গ" দ্বারা চলে যায়।
এতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, না কেবল পুষ্পক বিমান বরং রামায়ণে আকাশ মার্গ দ্বারা যাওয়ার জন্য
অনেক ব্যক্তিদের কাছে নিজের নিজের উড়োজাহাজ ছিল।