মা রোগ দিতে নয়, রোগ হরণ করতে আসেন। মা শীতলা ঝাঁটা, শূর্প ধারন করেন। ঝাটা, শূর্প অর্থাৎ কূলো দ্বারা আমরা ময়লা ঝাড়ি। মা রোগ তাড়ান তাই তিনি প্রতীক রূপ ঝাঁটা শূর্প ধারন করেন। মায়ের হাতে অমৃত কুম্ভ থাকে, সেই শান্তি বারি দিয়ে সর্বত্র শান্ত করেন। মা শীতলার হাতে পাখা থাকে। পাখার দ্বারা তিনি শীতল করেন, তাই তিনি মা শীতলা । মা শীতলার বাহন গর্দভ। গর্দভ কে আমরা বোকা বললেও আসলে সে চুপচাপ ভাবে কাজ করে মালিকের। গর্দভ আমাদের নিস্কাম কর্ম, নিঃস্বার্থ ভাব শেখায়। আবার কবিরাজী চিকিৎসায় গর্দভীর দুধ দিয়ে বসন্ত রোগের প্রতিষেধক বানানো হয়। তাই মায়ের বাহন গর্দভ। মাকে দেখে কোনরূপ ভীত হবার কারন নেই। মায়ের নাম শীতলা। মায়ের নাম স্মরণ করলে রোগ নাশ হয়। মায়ের কাছে আমরা আয়ু, আরোগ্য, বল, যশ প্রার্থনা করি।
ওঁ ওঁ নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাং দিগম্বরীম্ । মার্জনীকলসোপেতাং শূর্পালঙ্কৃতমস্তকাম্ ।। শীতলে ত্বং জগম্মাতঃ শীতলে ত্বং জগৎপিতা । শীতলে ত্বং জগদ্ধাত্রী শীতলায়ৈ নমো নমঃ ।।
****************************************************************************************************
মা শীতলা কোন বৈদিক বা পৌরাণিক দেবী নন, এক গ্রাম্য দেবী। মহাভারতের যুগে, ভগবান শিবের ধ্যানের সময় কপালের ঘাম থেকে জন্ম হয় জ্বরাসুর-এর। জ্বরাসুর নামটি এই দুটি শব্দের সমন্বয় - জ্বর (অর্থাত জ্বর) এবং অসুর (অর্থাৎ দৈত্য) - জ্বরাসুর। জ্বরাসুর মানে জ্বরের দৈত্য। একবার ভগবান বিষ্ণু হয়গ্রীব অবতারে জ্বরাসুরের আক্রমণে জ্বরে পড়েন। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে জ্বরাসুরকে সুদর্শন চক্র দিয়ে তিন টুকরো করে ফেলেন। পরে জ্বরাসুর ব্রহ্মার বরে পুনঃজীবিত হয়। ব্রহ্মা তার তিনটি অংশ যোগ করে দেন। কিন্তু ততদিনে তিনটি অংশের প্রতিটির মাথা ও অঙ্গ গজিয়ে গিয়েছিল। এতে তার তিনটি মুখ, তিন পা এবং সব দিক থেকে যাতায়াত করবার অসাধারণ ক্ষমতা হয়েছিল। জ্বরাসুর যুবকের ছদ্মবেশ ধারন করে সমস্ত জায়গায় সমস্ত শিশুদের নির্বিশেষে জ্বরের সংক্রমণ করতে থাকে। ছোট শিশুদের এই অবস্থা তাদের মাতা-পিতারা সহ্য করতে না পেরে ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতী-র শরণাগত হয়।
তখন মা ভগবতীর কাত্যায়নী রূপ থেকে মা শীতলা প্রকট হন। শীতলা অর্থাৎ "শীতলতা প্রদানকারী"। মা শীতলা সমস্ত শিশুদের থেকে রোগ সংক্রমণাদি সংগ্রহ করে, সমস্ত সংক্রমণ জীবাণু জ্বরাসুরের উপরে নিক্ষেপ করে। ফলে জ্বরাসুরের মৃত্যু হয়।
মা শীতলা জ্বর, জল বসন্ত, পক্স, ঘা, ব্রণ, ফুস্কুড়ি প্রভৃতি রোগ নিরাময় করেন এবং পিশাচ (মড়া খেকো ভুত) এর হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করেন।
শীতলা উত্তর ভারতের অঞ্চলে ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়। শীতলাকে মাতা, মরশুমি দেবী (বসন্ত) হিসাবে সম্বোধন করা হয় এবং ঠাকুরানী, জগৎরানী (বিশ্বের রাণী), করুণাময়ী (যিনি করুণায় পূর্ণ), মঙ্গলা (শুভ), ভগবতী (দেবী), দয়াময়ী (যিনি দয়া ও করুণায় পূর্ণ) নামে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ ভারতে দেবী শীতলা কে মারিয়ম্মান বা মারিয়াত্থা নামে দ্রাবিড় ভাষী লোকেরা উপাসনা করে। "শীতলা মঙ্গলকাব্যে" দেবী শীতলার মহিমা বর্ণনা পাওয়া যায়।
দেবীকে কোথাও দুই হাত, কোথাও চার হাত আবার কোথাও আট হাতে বর্ণনা করা হয়েছে। হাতে যথাক্রমে ত্রিশুল, ঝাড়ু, চক্র, জল ভরা পাত্র, নিম পাতা, বাঁকানো তরবারি, শঙ্খ এবং ভদ্র মুদ্রা রয়েছে। দেবী মাথায় কুলো ধারণ করে রয়েছেন এবং দেবী সল্প বস্ত্র ও অলংকার পরিহিতা। তার অবস্থান গাধার উপর(আয়ুর্বেদ হিসাবে গাধার দুধ হাম বা পক্সের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়)।
ওঁ নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাং দিগম্বরীম্। মার্জ্জনীকলসোপেতাং সূর্পালঙ্কৃতমস্তকাম্।