নবগ্রহ হল - সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। হিন্দুশাস্ত্রে নবগ্রহকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। এই নয়টি গ্রহের পূজা করলে তাঁদের আশীর্বাদ মেলে এবং অনুকূল ফলাফল পাওয়া যায়।দিনে বা রাত্রে যে কোনও সময়ই নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করা যায়। নবগ্রহ স্তোত্র জপের মাধ্যমে নয়টি গ্রহকে শান্ত করা যায়। প্রতিদিন নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি হয়। পরিবারে কোনও কলহ থাকে না, সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে। সূর্য (রবি):-- জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। অর্থ - জবা ফুলের মত রক্তিম, কাশ্যপের পুত্র, প্রচণ্ড জ্যোতি বা তেজ যুক্ত, অন্ধকার নাশক, সর্বপাপ বিনাশক, হে দিবাকর! আমি আপনাকে প্রণাম করি। চন্দ্র :-- দধিশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্ণব সম্ভবম্। নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুট ভূষণম্।। অর্থ - দধি, শঙ্খ এবং বরফের ন্যায় আভা যুক্ত, ক্ষীরসাগর হইতে আবির্ভূত, শিবশম্ভুর মস্তকে ভূষিত, হে চন্দ্রদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। মঙ্গল:- ধরণীগর্ভসম্ভূতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম্। কুমারং শক্তিহস্তঞ্চ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম্।। অর্থ - ভূমিপুত্র, বিদ্যুৎ পুঞ্জের ন্যায় দীপ্তিমান, হাতে শক্তি এবং যাকে কুমার বলা হয়, রক্তিম শরীর, হে মঙ্গলদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। বুধ:- প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্। সৌম্যং সর্বগুণোপেতং তং বুধং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - প্রিয়ঙ্গুফুলের কলির মতো শ্যাম বর্ণ, রূপে তুলনাহীন, সোমের (চন্দ্রের) পুত্র, সর্বগুণী, হে বুধ আমি আপনাকে প্রণাম করি। বৃহস্পতি:- দেবতানামৃষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্। বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশং তং নমামি বৃহস্পতিম্।। অর্থ - দেবতা এবং ঋষিদের গুরু, স্বর্ণকান্তি, তিনলোকে পূজিত, হে বৃহস্পতি! আমি আপনাকে প্রণাম করি। শুক্র:- হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্। সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - পদ্মবৃন্তে শিশির বিন্দুর মতো যার আভা, দৈত্য গুরু, সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী, হে শুক্রদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি শনি:-- নীলাঞ্জনসমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম্। ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং তং নমামি শনৈশ্চরম্।। অর্থ - নীল বর্ণের চক্ষু সমান আভা, সূর্য্য ও ছায়ার পুত্র, যমের জেষ্ঠ্য ভ্রাতা, হে শনিদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। রাহু:- অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দ্দকম্। সিংহিকায়াঃ সূতং রৌদ্রং তং রাহুং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - অর্ধদেহী, মহাশক্তিশালী, চন্দ্র-সূর্য্য দমনকারী, সিংহিকার পুত্র, হে রাহু! আমি আপনাকে প্রণাম করি। কেতু:- পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দ্দকম্। রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - পলিমাটির ধুলার মতো ধোঁয়াটে বর্ণ, গ্রহ-নক্ষত্র দমনকারী, রুদ্রের আত্মজ, নিষ্ঠুর, হে কেতু! আমি আপনাকে প্রণাম করি। নবগ্রহ স্তোত্র পাঠের মাহাত্ম্য ইতি ব্যাসমুখোদ্গীতং যঃ পঠেৎ সুসমাহিতঃ। দিবা বা যদি বা রাত্রৌ শান্তিস্তস্য নঃ সংশয়ঃ।। অর্থ - ব্যাসদেব দ্বারা কথিত এই নবগ্রহ স্তোত্র যে মনোযোগ সহকারে দিন বা রাত্রে পাঠ করে, তাঁর সব দুঃখ-কষ্ট ও বাধা-বিঘ্ন দূর হয়, শান্তি লাভ হয়। ঐশ্বর্য্যমতুলং তেষামারোগ্যং পুষ্টিবর্দ্ধনম্। নর-নারী-নৃপাণাঞ্চ ভবেদ্দুঃস্বপ্ননাশনম্।। অর্থ - অতুল ঐশ্বর্য্য প্রাপ্তি, আরোগ্য লাভ এবং দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। কোনও স্ত্রী, পুরুষ বা রাজাকে নিয়ে দেখা দুঃস্বপ্ন নাশ হয়। নবগ্রহ স্তোত্র
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠেই শান্ত হয় নবগ্রহ
জন্মকুণ্ডলীতে গ্রহের অবস্থান মানব জীবনে ভালো-মন্দ প্রভাব ফেলে। গ্রহের কারণে জীবনে প্রতিকূল প্রভাব দেখা দিলে, সেই বিশেষ গ্রহের শান্তির জন্য বা সমস্ত গ্রহের শান্তির জন্য নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করা হয়। মহর্ষি বেদব্যাস নবগ্রহ স্তোত্র রচনা করেন।
পাঠের সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা
নবগ্রহ স্তোত্র
শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকাস্তোত্রংঃ
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ _______
<----- শিবের ধ্যান ----->
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজত গিরিনিভ্যং
চারু চন্দ্রাবতং সম
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং
পরশু মৃগবরা ভীতিহস্তং প্রসন্নম্
পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈ
র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম ।
বিশ্বদ্যং বিশ্ববীজং
নিখিল ভয় হরং
পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
<----- শিব প্রণাম মন্ত্র ----->
ওঁ নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ ।
নমস্তে দিব্য চাক্ষুষে ।
নমঃ পিনাক হস্তায় বজ্র হস্তায় বৈ নমঃ।
নমঃ ত্রিশুল হস্তায় দন্ড পাশাসি পানয়ে।
নমস্তৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।
নমো শিবায় শান্তায়
কারন ত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং
ত্বং গতি পরমেশ্বর।।
নমস্যে ত্বাং মহাদেব
লোকানাং গুরুমীশ্বরম
পুংসাম পূর্ণকামানাং
কাম পুরামরাঙ্খিপম
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায়
সর্ব্বপাপ হরায় চ ।
নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ শরনাগত দীনার্ত পবিত্রানায় পরায়নে
সর্ব্বস্মার্তে হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।
হরে দেবী নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
-----[ শিবাষ্টক স্তোত্রম ]-----
প্রভু মীশ মণীশ মহেশ গুণং
গুণ হীন মহীশ গরলাভরণম্।
রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম।।
গিরিরাজ সুতান্বিত বামতনুং
তনু নিন্দিত রাজিত কোটিবিধুম্
বিধি বিষ্ণু শিরোধৃত পাদযুগং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্।।
শশলাঞ্ছিত রঞ্জিত সম্মুকুটং
কটি লম্বিত সুন্দর কৃত্তিপটং।
সুরশৈবালিনী কৃত পূত জটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।।
নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং
মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটি বিধুম্।
বিধুখন্ড বিখন্ডিত ভল তটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
বৃষ রাজ নিকেতন মাদি গুরুং
গরলাসন মাজি বিষান ধরম।
প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জন কং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
মকরধ্বজ মও মাতঙ্গ হরং
করিচম্মগ নাগ বিবোধকরম্।
বরমার্গণ শূল বিষান ধরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
জগদুদ্ভব পালন নাশকরং
ত্রিদিবেশ শিরোমণি ঘৃষ্টপদম্।
প্ৰিয়মানব সাধু জনৈক গতিং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
অনাথং সুদীনং বিভো বিশ্বনাথ
পুনর্জন্ম দুঃখাত পরিত্রাহি শম্ভো।
ভজতোহখিল দুঃখ সমূহহরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
ইতি শিবাষ্টকং স্তোত্রম সম্পূর্ণম্ ।।
_______ ________
-----[ শিবরাত্রি ব্রতকথা ]-----
কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন।
গৌরীসহ বসিয়া করেন আলাপন।।
ফল পুষ্পে সুশোভিত পর্বত কৈলাস।
যক্ষ রক্ষঃ গন্ধর্বগণের নিত্য বাস।।
রবির কিরণ পড়ি শিখরে তাহার।
মলিন করিয়া দেয় বরন সোনার।।
আনন্দে পার্ব্বতি সতী জিজ্ঞাসেন শিবে।
কহ দেব! কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভবে।।
কিবা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন্ তপস্যায়।
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ হয়।।
এরূপ কি পূণ্য কর্ম আছে সুবিদিত।
জাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।।
মর্ত্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরা তলে।
অনায়াসে পারে বল কি কর্ম্ম করিলে।।
শুনিয়া পার্ব্বতি বাক্য কহেন শঙ্কর।
শুন দেবী! কোন কর্ম্ম মম প্রীতিকর।।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দ্দশী।
শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকার নিশি।।
প্রাণী হিংসা পরায়ণ ব্যাধ একজন।
ভীষণ, আকৃতি তার ক্রুর আচরণ।।
কৃষ্ণবর্ণ দেহ তার পিঙ্গল নয়ন।
জাল বাগুরা হস্তে করয়ে ভ্রমণ।।
বনে বনে ভ্রমী করে প্রাণী বধ কত।
নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।।
একদিন মাংস ভার করিয়া বহন।
গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।।
বহুদূর বন পথ ব্যাধ পরিশ্রান্ত।
বৃক্ষ মূলে শয়ন করিল হয়ে ক্লান্ত।।
ক্রমে ক্রমে সূর্যদেব অস্তা চলে যান।
হেন কালে নিদ্রিত ব্যাধের হল জ্ঞান।।
চতুর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন।
চিন্তিত হইয়া ব্যাধ করিল মনন।।
আজ গৃহে যাইব না এই রাত্রি কাল।
বৃক্ষতে করিব বাস হউক সকাল।।
লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া।
মাংস ভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।।
হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর।
উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভর।।
ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যাধ অতিশয়।
অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।।
শীতেতে কাঁপিতে ছিল শরীর তাহার।
সর্বাঙ্গে পড়িতে ছিল নিশার তুষার।।
দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষ মূলে।
স্থাপন করিয়াছিল কেহ কোন কালে।।
সেই দিন শিবরাত্রি দৈবের ঘটনা।
উপবাসী ব্যাধ তার অন্নের ভাবনা।।
তাহার শরীর হতে হিম বিন্দু যত।
বৃক্ষ মূলে শিবলিঙ্গে পড়ে অবিরত।।
সেই বৃক্ষ বিল্ববৃক্ষ নামে সুবিখ্যাত।
যাহার পত্রেতে শম্ভু হল সদা প্রীত।।
ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্ব দল।
শিবের মস্তকে পড়িতে ছিল অবিরল।।
ব্যাধের সে আচরণে দেব আশুতোষ।
মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।।
এইভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল।
ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।।
বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল।
রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।।
মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে।
অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্ট মনে।।
এই ভাবে তাহার পারন সিদ্ধ হল।
শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।।
আয়ূ শেষ হল তার বহুকাল পরে।
যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।।
যমদূত রজ্জু দ্বারা বাঁধিতে উদ্যত।
হেন কালে পৌঁছে দূত শিবের নিযুক্ত।।
শিবদূত বলে যমদূত যাও দূরে।
ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।।
যমদূত বলে এই ব্যাধ পাপী অতি।
না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।।
যমপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি।
যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।।
এই রূপে উভয়ের বিবাদ হইল।
শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।।
পরাজিত হয়ে যমদূত যায় ঘরে।
এই বার্তা প্রকাশিল যমের গোচরে।।
উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন।
বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্নন।।
শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপাচারী।
শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।।
আজীবন কেহ যদি পাপ কর্ম করে।
শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।।
মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর।
নাহি ভয় করি আমি শিবের কিঙ্কর।।
যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে।
গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।।
ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন।
ভক্তিভাবে করিবে আমার আরাধন।।
সদাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি।
ব্রতের বিধান দেবী! শুনহ সম্প্রতি।।
পূর্বদিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন।
নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।।
রাত্রিতে তৃণের শর্য্যা নির্মাণ করিবে।
তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।।
প্রাতঃকালে সত্ত্বর করিয়া গাত্রোত্থান।
নদী কিম্বা সরোবর জলে করি স্নান।।
বিল্ববৃক্ষে মূলে গিয়া প্রণাম করিবে।
অবশ্যক পত্র সংগ্রহ করিবে।।
একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই।
মনি মুক্তা স্বর্ণ রত্ন প্রবাল না চাই।।
রাত্রিতে হইয়া শুচি যে পূজে আমারে।
সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।।
পার্থিব শংঙ্কর মূর্তি করিয়া নির্মাণ।
প্রথম প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।।
দ্বিতীয় প্রহরে দধি তৃতীয়তে ঘৃত।
চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানেতে বিহিত।।
পূজা শেষে যথা বিধি নৃত্য গীত করি।
তুষিবে আমারে নর শুনহ শংঙ্করী।।
পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচি ব্রত।
করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।।
এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে।
অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।।
কঠোর তপস্যা আর দান যজ্ঞ যত।
কোন কর্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।।
এই ব্রত আচরণে লভিয়া বাঞ্ছিত।
অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।।
ব্রতের মাহাত্ম্য এবে হরহ শ্রবন।
পুণ্য লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।।
পৃথিবীতে বারানসী সর্ব্ব তীর্থ সার।
যেখানে গমনে খন্ডে কলুষ অপার।।
ব্যাধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি।
নির্দিষ্ট হইল তার কৈলাস বসতি।।
শুনিয়া পার্ব্বতি দেবী ব্রত বিবরণ।
আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণন।।
তাহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত।
এই রূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।।
যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে।
সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।।
আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত।
অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।।
গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে।
শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা শুনে যেই জন।
অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।।
মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি।
শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্ত হইল।
ভক্তিভরে সবে এবে শিব শিব বল।।
_______ ________
<----- [[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম ]] ----->
কৈলাস শিখরে বসি দেব ত্রিলোচন ।
গৌরী সহ করে নানা কথোপকথন ।।
মৃদুমন্দ বাতাস বহে সেথা ধীরি ধীরি ।
ফুলের সৌগন্ধ কিবা আহা মরি মরি ।।
সুন্দর জোছনারাশি মধুর যামিনী ।
চন্দ্রের কিরণ ছটা বিকাশে অবণী ৷৷
মহানন্দে হৈমবতী কহে পঞ্চাননে ।
কহ প্রভু কৃপা করে দাসীরে এক্ষণে ৷৷
বড় সাধ হয় মনে দেব প্রাণপতি ।
তোমার নামের সংখ্যা শুনি বিশ্বপতি ।।
আশুতোষ পরিতোষ হয়ে মোর প্রতি ।
সে সাধ পুরাও মম ওহে পশুপতি ।।
শুনিয়া দেবীর বাণী কহে মহেশ্বর ।
কি ইচ্ছা হয়েছে বল আমার গোচর ।।
শুনিয়া হরের কথা কহেন পার্ব্বতী ।
শুনিবারে সাধমম হয়েছে বিভুতি ।।
তোমার নামের সংখ্যা কহ ত্রিলোচন ।
তব মুখামৃত বাণী শুনি অনুক্ষণ ।।
এতেক শুনিয়া কহে ভোলা মহেশ্বর ।
শুন দেবী মোর নাম কহি অতঃপর ।।
সেইসব নাম আমি করিব কীর্ত্তন ।
শ্রবন পাঠেতে মুক্ত হবে জীবগন ।।
নাহি সংখ্যা মম নাম না যায় বর্ণন ।
সংক্ষেপেতে বলি যাহা করহ শ্রবণ ।।
যেই নাম ধ্যানে জীব পায় দিব্য গতি ।
সেইসব নাম তবে কহি শুন সতী ।।
মম মুর্ত্তি ধরা তলে কেহ না দেখিবে ।
পাষাণে নির্ম্মিত লিঙ্গ দর্শন পাবে ।।
ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মোর ভিন্ন ভিন্ন নামে ।
সকলের বরণীয় হয় ধরাধামে ।।
অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা । ১
মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।। ২
জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি । ৩
দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।। ৪
মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী। ৫
গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ॥ ৬
ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি । ৭
ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী ।। ৮
জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ । ৯
রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।। ১০
নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু । ১১
ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।। ১২
তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন । ১৩
পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ॥১৪
রজত বরণ বলি নাম গিরিবর । ১৫
নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।। ১৬
যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।১৭
বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।১৮
সূর্য্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর।১৯
চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।২০
মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা । ২১
বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্ৰাতা ॥ ২২
বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ । ২৩
শুক্রাচার্য্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।২৪
শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার।২৫
রাহুকেতু নাম রাখে সর্ব্ববিঘ্ন হর ।।২৬
মৃত্যুঞ্জয় নাম মম মৃত্যু জয় করি ।২৭
ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ॥২৮
কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ । ২৯
বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।৩০
শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন । ৩১
ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।৩২
পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।৩৩
ভৃগু মুনি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।৩৪
ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ । ৩৫
ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।৩৬
মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।৩৭
বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।৩৮
শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।৩৯
বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।৪০
জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি।৪১
বিজয়া রাখিল নাম অনাথের গতি।।৪২
তালবেতাল নাম রাখে সর্ব্ব বিঘ্নহর । ৪৩
মার্কন্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।। ৪৪
শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।৪৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্ম পরাৎপর ।।৪৬
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিল তারণ । ৪৭
চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।৪৮
সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী । ৪৯
আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।৫০
বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।৫১
রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।৫২
ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ । ৫৩
দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।৫৪
বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।৫৫
গন্ধর্বেরা নাম রাখে গন্ধর্ব ঈশ্বর ।।৫৬
অঙ্গিরা রাখিল নাম পাপতাপহারী ।৫৭
দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।৫৮
ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান নাম বাঘাম্বর ।৫৯
বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।৬০
কৃত্তিবাস নাম রাখে কত্যায়নী ।৬১
ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুণি ।।৬২
সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দ্দন ।৬৩
আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।৬৪
রতিপতি নাম রাখে মদন দহন ।৬৫
দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।৬৬
জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।৬৭
বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।৬৮
পৌলস্ত্য রাখিল নাম ভবভয়হারী।৬৯
গৌতম রাখিল নাম জন মনোহারী ।।৭০
ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর।৭১
বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘন্টেশ্বর ।।৭২
মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্ব্বপাপহর।৭৩
জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।৭৪
কুরুক্ষেত্র রণস্থলে পামবরদ্বারী ।৭৫
ঋষীগণ নাম রাখে মুণি মনোহারী ।।৭৬
ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।৭৭
ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।৭৮
উদ্দালক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।৭৯
অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংঙ্কর ।।৮০
দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর । ৮১
সেতু বন্ধে হয় নাম মোর রামেশ্বর ।।৮২
হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।৮৩
ভরত রাখিল নাম উমা মহেশ্বর ।।৮৪
জলধর নাম রাখে করুণা সাগর ।৮৫
মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।৮৬
ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।৮৭
চাঁদ সদাগর নাম রাখে হয়গ্রীব ।।৮৮
জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।৮৯
ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।৯০
দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।৯১
দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।৯২
দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।৯৩
বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।৯৪
কালীঘাটে সিদ্ধপাটে নকুল ঈশ্বর ।৯৫
পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।৯৬
গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।৯৭
মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।৯৮
কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।৯৯
ওঁ কার আমার নাম রাখে সান্দীপনি ।।১০০
ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।১০১
শ্বেত ভুধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।১০২
বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।১০৩
মহালক্ষী রাখে নাম অশিব নাশন ।।১০৪
অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ । ১০৫
গঙ্গাজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।১০৬
ভাঙ্গড়ভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ । ১০৭
বুড়াশিব বলি খ্যাত এই তিন ভুবন ।।১০৮
হর হর ব্যোম বলি যে ডাকে আমারে।
পরিতুষ্ট হয় সদা তাহার উপরে।।
অসংখ্য আমার নাম না হয় বর্ণন।
অষ্টোত্তর শতনাম করিনু কীর্ত্তন।।
মনেতে যে ভক্তি করি করয়ে পঠন।
রোগ শোক নাহি হয় তাহার ভবন।।
নির্ব্ব্যাধি হইয়া সে দীর্ঘজীবী হয়।
শিব বরে সেই জন মুক্তি পদ পায়।।
নামের মাহাত্ম্য আমি করিনু বর্ণন।
মম নাম মম ধ্যান করো সর্বজন।।
ইহকালে সুখে রবে মরত ভুবনে।
অন্তঃকালে হবে গতি কৈলাস ভবনে।।
[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্ত ]