শ্রী শ্রী রাধাষ্টমী / দূর্বা অষ্টমী ব্রত
শ্রী শ্রী রাধাষ্টমী / দূর্বা অষ্টমী ব্রত
'আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত, তাই তো আগে রাধানাম'! সূর্যদেবকে বর দিয়ে বলেছিলেন কৃষ্ণ ।
কথিত আছে, এক বার রাধানাম
উচ্চারণ করলে শ্রীকৃষ্ণ সন্তুষ্ট হন।
এই জন্যই ভক্তরা প্রথমে কৃষ্ণের পুজো করার আগে, রাধার পুজো করেন। বিশ্বাস করা হয় রাধা অষ্টমীর উপবাস করলে সমস্ত পাপস্খলন হয়।
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রী রাধার জন্ম। এদিনই রাধাষ্টমী হিসাবে পালন করা হয়। এই ব্রতপালনে দুঃখ দুর্দশা দূর হয়। পরম শান্তি লাভ হয়। গৃহে অভাব থাকে না। সব অমঙ্গল দূর হয়, বলে বিশ্বাস।
এরপর বৃন্দাবনে নন্দালয়ে অবতীর্ণ হন শ্রীকৃষ্ণ। আর সূর্যদেব আগেই সেখানে বৃষভানু নামে রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীরাধা তাঁরই সন্তান। আজীবন রাধা নাম শ্রীকৃষ্ণের আগে উচ্চারিত হয়।
এইদিন শ্রীমতি রাধারানী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সকল ভক্তরা এইদিন খুব ভক্তির সঙ্গে পালন করেন রাধারানীর কৃপা পাওয়ার আশায়। কারণ শাস্ত্রে বলা হয় রাধারানী কৃষ্ণের গুরু। তাই রাধারানীর কৃপা পেলে অনায়াসেই কৃষ্ণ কৃপা পাওয়া যায়।
রাধাষ্টমী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম
রাধার জন্ম মধ্যাহ্ন সময়ে হয়েছিল তাই উপবাস সময় দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। রাধাষ্টমী এর আগের দিন নিরামিষ খেতে হয় একে সংযম বলা হয়। আর ঘুমানোর আগে অবশ্যই ব্রাশ করতে হয়। যাতে খাবারের কুচি মুখে লেগে না থাকে। এরপর রাধাষ্টমীর দিন ভোর ভোর শয্যা ত্যাগ করতে হয়। তারপর রাধারানী কে ভোগ দেওয়ার জন্য প্রসাদ নিবেদন করুন।
রাধাষ্টমী ব্রত পালন করার জন্য ফুল, আতপ চাল, সিদ্ধ চাল ও নৈবেদ্য হিসাবে দেওয়ার জন্য আট রকমের ফল সংগ্রহ করুন।এরপর রাধাষ্টমীর দিন সকল উপকরণ দিয়ে রাধারানীর সেবা করুন। এরপর ব্রতের পরদিন ব্রাহ্মণ বৈষ্ণবদের ভোজন করাতে হয়।এইভাবেই সম্পন্ন হয় রাধাষ্টমী ব্রত।
রাধাষ্টমী উপাসনা পদ্ধতি
সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার পোশাক পরুন। ঠাকুরের স্থানে লাল বা হলুদ কাপড় পেতে তার উপরে, শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধার মূর্তিটি স্থাপন করুন। পাশাপাশি পুজোর ঘটও স্থাপন করুন।পঞ্চামৃত দিয়ে রাধা ও কৃষ্ণের স্নান করান। এরপর দুজনকেই নতুন বস্ত্র পরিয়ে সাজিয়ে দিন। আপনার নিয়ম মেনে পুজো সারুন, ফুল-ফল নৈবেদ্য সাজিয়ে দিন, প্রয়োজনে ভোগও দিতে পারেন। এরপর রাধা কৃষ্ণের মন্ত্রগুলি জপ করুন, ও রাধা কৃষ্ণের আরতি করুন।
রাধা অষ্টমীর তাৎপর্য
রাধা-কৃষ্ণ ভক্তদের জন্য রাধা অষ্টমীর বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। হিন্দু শাস্ত্রে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে, যিনি এই ব্রত রাখেন তাঁর কোনওদিন অর্থের অভাব হয় না। শ্রী কৃষ্ণ ও রাধা আশীর্বাদ সর্বদা তাঁধের উপর বজায় থাকে।
রাধাষ্টমী ব্রতের মাহাত্ম্য
১। ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মধ্যাহ্ন কালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাধারানী। সেইজন্য প্রতিবছরই ভক্তরা এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন।
২। কেউ যদি একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন তাহলে তার জন্ম জন্মান্তরের পাপরাশি সকল মুহূর্তের মধ্যে বিনষ্ট হবে।
৩। রাধাষ্টমী ব্রত হচ্ছে লক্ষাধিক একাদশী ব্রতের সমতুল।
৪। রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে সমস্ত পবিত্র নদীতে স্নান করলে যে পূণ্য ফল পাওয়া যায় সেই পূণ্যফল লাভ হয়।
৫। শাস্ত্রে আরও বলা হয় যে এক পর্বতসমান সোনা দান করলে যে পরিমাণ পূণ্য লাভ হয় এক রাধাষ্টমী ব্রত পালনেই সেই পরিমাণ পূণ্য লাভ হয়।
৬।কেউ যদি কৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে চান তাহলে তাকে রাধারানীর চরণ ধরতেই হবে। রাধার কৃপা ভিন্ন কৃষ্ণ লাভ হয় না।
৭।রাধারানীর জন্ম যেহেতু দুপুরবেলায় বারোটা পর্যন্ত উপবাস করে তারপর ভোগ নিবেদন করতে হয়।
৮।রাধারাণী কে ভোগের উপাদান হিসেবে দুধের তৈরি উপাদান দিন। ভোগ নিবেদন করার আগে অবশ্যই তুলসী পাতা দেবেন।এই দিন যদি তিলক কেটে তারপর রাধারানী সেবা করেন তাহলে রাধারানী আরো বেশি তুষ্ট হবেন।