কুন্ডলিনী তত্ত্ব & 10 চক্র (পদ্ম)
কূল - কুন্ডলিনী তত্ত্ব
মেরুদণ্ডের একদম নিচে ঠিক সুষুম্না নাড়ির ঠিক নিচে বা মূলাধার চক্রের নিচে এক শিবলিঙ্গ আছে। সেই শিবলিঙ্গকে সাড়ে তিন পাকে বিদ্যুৎ বর্ণ কোটি সূর্যতুল্য জোতির্ময় সর্পাকার দুই মুখ বিশিষ্ট "কূল - কুণ্ডলিনী " শক্তি আছেন। এই কূল - কুণ্ডলিনী দুইটি মুখ বিশিষ্ট। সকলের সুষুম্না নাড়িকে একটি মুখ দ্বারা রুদ্ধ করিয়া মায়া - মোহের প্রভাবে ফেলিয়া রাখেন এবং সাড়ে তিন পাক শিবলিঙ্গকে বেষ্টন করিয়া আরেকটা মুখ পুরুষ শরীরে ডানদিকে এবং মহিলা শরীরে বামদিকে রাখিয়া জীবকে জড় মায়ায় মোহিত করে মহানিদ্রিত করে থাকেন। ইহা প্রত্যেক জবের প্রত্যেক শরীরে থেকে ঊনপঞ্চাশ প্রাণশক্তিকে পরিচালিত করেন। ইহাই মহামায়ার আদিশক্তির সুক্ষ শক্তি যা শরীররূপী ব্রহ্মান্ডকে পূর্ণরূপে পরিচালনা করেন। শাস্ত্রে এই দিব্য শক্তিকে কূল - কুণ্ডলিনী শক্তি বলিয়াছে। ইনি জাগ্রত না হইলে কারোরই জীবনে মূল উদ্দেশ্য মুক্তি লাভ - এই লক্ষ্য কোনো জীবই লক্ষ্য করতে পারে না।
মূলাধার চক্র (পদ্ম)
মেরুদণ্ডের শুরুতে সুষুন্মানাড়ী এর ভিতরে বজ্রানাড়ী । বজ্রার অভ্যান্তরে চিত্রানীনাড়ী আছে। এই চিত্রানীনাড়ীর অভ্যান্তরে সব পদ্ম এবং সর্বপ্রথম মূলাধার চক্র অথবা মূলাধার পদ্ম অবস্থিত।ইহাই স্থুলশরীরের সবিনী (প্রসাবদ্বার এবং পায়ুদ্বার এর মধ্যে স্থান ) স্থানে বোঝানো যায়। এই মূলাধার পদ্ম মানব শরীরের আধার। সেইজন্য একে মূল-আধার পদ্ম বলা হয়।
মূলাধার চক্র রক্তবর্ণ (লাল রঙের ) এবং চতুর্দল পাপড়ি বিশিষ্ট হয়।এই চারটি পাপড়িতে স্বর্ণ রং দ্বারা চারটি বর্ণ অবস্থিত আছে।এই চারটি বর্ণ হল - "ব", "শ", "ষ", "স"। এই চারটি পাপড়িতে দোষ আছে । এই চারটি দোষ হল - (১) কাম (২) লোভ (৩) ক্রোধ (৪) মোহ |
মূলাধার পদ্মে পৃথিবীতত্ত্ব ও পৃথিবীর বীজমন্ত্র (লং) আছে। এই পৃথিবীতত্ত্বের মধ্যে ইন্দ্রদেব আছেন।এই ইন্দ্রদেবের অভ্যন্তরে ব্রহ্মা আছেন। ব্রহ্মার উভয় হস্তের উপরে আদি শক্তির "ডাকিনী" নামক দিব্যশক্তি বিদ্যমান ।
এই সমগ্র দেবমন্ডলটিকে পর্যবেক্ষন ও পরিচালনা করেছেন ভগবান গণেশ। সেইজন্য মূলাধার চক্রের দেবতা হইলেন গণেশ। মূলাধার চক্রের সাধনায় বাকসিদ্ধি লাভ হয়।
মূলাধার চক্রের গতিপথকে পর্যবেক্ষন করেন সূর্যদেব বা রবি গ্রহ।
মূলাধার চক্র পৃথিবীতে তারাপীঠ নামক জায়গায় মূল শক্তিরূপে অবস্থান করছে।
মূলাধার চক্রের সাধনায় সাহায্য কারী রুদ্রাক্ষ হল - একমুখী রুদ্রাক্ষ, মূল হল বিল্বমূল , ধাতু হল স্বর্ণ এবং রত্ন হল মানিক্য (রজ গুনের প্রতীক )। মূলাধার চক্র হল চুম্বকীয় বা আকর্ষণ শক্তির প্রতীক।
স্বাধীষ্ঠান চক্র বা পদ্ম
চিত্রানীনাড়ীর অভ্যন্তরে দ্বিতীয় পদ্ম বা চক্র হল "স্বাধীষ্ঠান" । মানব স্থুলশরীরের লিঙ্গদ্বারের সোজাসুজি মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থান ধরা হয়।
এই চক্র ছয়টি পাপড়ি বিশিষ্ট সুপ্রদীপ্ত অরুন বর্ণের (রং) হয়। ইহার ছয়টি পাপড়িতে ছয়টি বর্ণের অবস্থান। এই ছয়টি বর্ণ হলো - "ব", "ভ", "ম", "য", "র", "ল" । এক - একটি পাপড়িতে এক - একটি দোষ বিদ্যমান। দোষগুলি হলো - (১) অবজ্ঞা , (২) সুযোগ - সন্ধানী , (৩) প্রশয় অধর্ম , (৪) ক্রুরতা , (৫) অবিশ্বাস (সন্দেহ ), ( (৬) সর্বনাশ।
স্বাধীষ্ঠান পদ্মের অভ্যন্তরে অর্ধা - চন্দ্রাকার বরুনমণ্ডল আছে। ইনি জলতত্ত্বের অধিপতি। বরুণদেবের বীজমন্ত্র - "বং " বিদ্যমান আছে। বরুণদেবের মধ্যে "হরি" আছেন। "হরির" উভয় হস্তমধ্যে আদিশক্তির "রাকিনি" নামক চতুর্ভুজা ও গৌরবর্ণা দিব্য দেবীশক্তি বিদ্যমান। এই সমগ্র দেবমন্ডলটিকে পরিচালনা করছেন স্বয়ং মা দূর্গা। সেই স্বাধীষ্ঠান চক্রের দেবতা হলেন মা দূর্গা।
স্বাধীষ্ঠান চক্রের সাধনা করলে ভক্তিরূপী শক্তির বৃদ্ধি হয়।
স্বাধীষ্ঠান চক্রের গতিপথকে পর্যবেক্ষণ করছেন শুক্র গ্রহ।
স্বাধীষ্ঠান চক্র পৃথিবীতে কাশী বিশ্বনাথ নামক জায়গায় মূল শক্তিরূপে অবস্থান করছেন।
স্বাধীষ্ঠান চক্রের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ হল - ছয়মুখী রুদ্রাক্ষ, মূল হল- রাম বাসক, ধাতু হল- প্লাটিনাম ,রত্ন হল- হীরা ( রজ গুনের গুণী )।
স্বাধীষ্ঠান চক্র হল নারী - পুরুষের আকর্ষণের প্রতীক।
মনিপুর চক্র বা পদ্ম
চিত্রানাড়ীর অভ্যন্তরে তৃতীয় পদ্ম বা চক্র হলো মনিপুর। মানব শরীরের নাভির সোজাসুজি মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থান ধরা হয়।
এই পদ্মটি দশটি পাপড়িবিশিষ্ট। পীত বর্ণের (রং) হয়। ইহার দশটি পাপড়িতে দশটি বর্ণের অবস্থান। সেই দশটি বর্ণ হলো - "ড", "ঢ", "ণ", "ত", "থ", "দ", "ধ", "ন", "প ", "ফ এই দশটি বর্ণ ঘোর নীল বর্ণের এবং এক - একটি পাপড়িতে এক - একটি দোষ বিদ্যমান। দোষগুলি হলো - (১) লজ্জা , (২) কৃপণতা , (৩) ঈর্ষা , (৪) অলসতা , (৫) বিষাদ , (৬) অবসাদ , (৭) তৃষ্ণা , (৮) আসক্তি , (৯) ঘৃণা ও (১০) ভয়।
মনিপুর পদ্মের অভ্যন্তরে ত্রিকোণ অগ্নিমন্ডল আছে। এই অগ্নিমণ্ডলের বীজ মন্ত্র "রং" এই অগ্নিমণ্ডলের মধ্যে অগ্নিদেব বিদ্যমান আছেন। অগ্নিদেবের মধ্যে রুদ্রদেব আছেন। রুদ্রদেবের উভয়হস্তে চতুর্ভুজা সিঁদুরবর্ণা "লাকিনি " নামক দিব্য দেবীশক্তি বিদ্যমান। এই সমগ্র মনিপুর দেবমন্ডলটি পরিচালনা করছেন স্বয়ং সূর্যদেব। সেইজন্য মনিপুরের দেবতা হলেন সূর্যদেব।
মনিপুর চক্রের সাধনা করলে আরোগ্য - ঐশ্বর্যলাভ হয়। মনিপুর চক্রের গতিপথকে পর্যবেক্ষণ করছেন চন্দ্রগ্রহ। মনিপুর চক্র পৃথিবীতে পুরুষোত্তম ধাম জগন্নাথ পুরীতে মূল শক্তিরূপে অবস্থান করছেন।
মনিপুর চক্রের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ – দুই মুখী রুদ্রাক্ষ ,মূল হলো - ক্ষিরিকা, ধাতু হলো - রুপা, রত্ন হলো -মুক্তা/চন্দ্রাকান্তমণি (রজ গুনের প্রতীক), মনিপুর চক্র ক্রোধের প্রতীক।
অনাহত চক্র
চিত্রানীনাড়ীর অভ্যন্তরে চতুর্থ পদ্ম বা চক্র হলো "অনাহত । মানবশরীরের বক্ষের সোজাসুজি মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থান ধরা হয়।
এই চক্রটি বারোটি পাপড়িবিশিষ্ট। তৃণ সবুজ বর্ণের (রং )হয়। ইহার বারোটি পাপড়িতে বারোটি বর্ণের অবস্থান। সেই বারোটি বর্ণ হলো - "ক ", "খ", "গ", "ঘ", "ঙ", "চ", "ছ", "জ", "ঝ", "ঞ", "ট", "ঠ"। এই বারোটি বর্ণ সিঁদুর বর্ণের এবং এক - একটি পাপড়িতে এক - একটি দোষ বিদ্যমান। দোষগুলি হলো - (১) আশা , (২) চিন্তা , (৩) চেষ্টা , (৪) মমতা , (৫) দম্ভ , (৬) বিকলতা, (৭) অবিবেক , (৮ ) অহংকার , (৯) লোলুপতা , (১০) কপটতা , (১১) বিতর্ক ও (১২) অনুতাপ।
অনাহত চক্রের অভ্যন্তরে ষটোকোণযুক্ত বায়ুমণ্ডল এবং বায়ুর বীজ মন্ত্র - "যং" বিদ্যমান আছেন। বায়ুদেবের মধ্যে বাণলিঙ্গ শিব "হংসতত্ত্ব", "অষ্টদলপদ্ম " আছে। অষ্টদল পদ্মের মধ্যে পুরাণপুরুষ ও জীবাত্মার হংসতত্ত্ব বিদ্যমান আছেন। এই অষ্টদল পদ্মের এই আটটি পাপড়িতে অনিমা ,লঘিমা ইত্যাদি অষ্টসিদ্ধি বিদ্যমান আছেন। এই অষ্টদল পদ্মের বাইরে বাণলিঙ্গ শিবের হাতে "পীতবর্ণা কাকিনী" নামক দিব্যশক্তি সম্পন্ন দেবী বিদ্যমান আছেন। আর অষ্টদল পদ্মের মধ্যবিন্দু হতে ব্রহ্মনাড়ী -৭২০০০ নাড়ীর জালকে অতিক্রম করে উর্দ্ধগমন করেছে । অনাহত চক্রের এই দিব্যমন্ডলটিকে পূর্ণরূপে ভগবান বিষ্ণু পরিচালনা করেন। তাই অনাহত চক্রের দেবতা হলেন স্বয়ং বিষ্ণু।
অনাহত চক্রের সাধনা করে অনিমাদি অষ্ট - ঐশ্বর্য্য লাভ করা যায়।
অনাহত চক্রের গতিপথকে পর্যবেক্ষণ করেন বুধ গ্রহ।
অনাহত চক্র পৃথিবীতে বৃন্দাবন ধামে মূল শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত আছেন।
অনাহত চক্রের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ হলো - চার মুখী রুদ্রাক্ষ ,মূল হলো - দারুক, ধাতু হলো - স্বর্ণ ,রত্ন হলো - পান্না ((রজ গুনের প্রতীক), অনাহত চক্র হলো বাসনার প্রতীক।
বিশুদ্ধ চক্র
চিত্রানাড়ীর অভ্যন্তরে ব্রহ্ম নাড়ীর অভ্যন্তরে পঞ্চম পদ্ম বা চক্র হলো বিশুদ্ধ পদ্ম বা চক্র। মানবশরীরের গলার সোজাসুজি মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থান ধরা হয়।
এই চক্রটি ষোলটি পাপড়ি বিশিষ্ট। আকাশি বর্ণের (রং) হয়।
ইহার ষোলটি পাপড়িতে ষোলটি বর্ণের অবস্থান। সেই ষোলটি বর্ণ হলো - 'অ', 'আ', 'ই ',ঈ '', 'উ', 'ঊ',ঋ ''ঋ-,৯ ,৯-'এ', 'ঐ', 'ও', 'ঔ, আঃ অং',। এই বর্ণগুলি শোন্ পুষ্পের রং এর হয়। এর প্রত্যেকটা পাপড়িতে বিভিন্ন শক্তি সমাহার হয়েছে। ১)নিষাদ, ২)ঋষভ, ৩)গান্ধার, ৪)ষড়্জ, ৫)মধ্যম, ৬)ধৈবত, ৭)ওংহং, ৮)ফট, ৯)বৌশট, ১০)বসত ১ ১ ) স্বহা, ১২)নমঃ ১৩)বিষ ,১৪)অমৃত, ১৫)পঞ্চম , ১৬) সপ্তস্বর ।
এই পদ্মের কর্ণিকায় সফটিক সদৃশ, আকাশ দেবতা এবং তার বীজমন্ত্র 'হং' প্রতিষ্ঠিত আছে। আকাশ দেবতার অভ্যন্তরে সদা শিব বিদ্যমান আছেন। আসনস্ত সদা শিবের হস্তগত 'শাকিনী ' রূপে পীত বাসনা।, অর্ধ -নারীশ্বর , মহান দিব্য শক্তি সম্পন্ন দেবী অবস্থান করেছেন।
এই চক্রের পরিচালনাকারী মূল দেবতা হলেন ভগবান শিব।
বিশুদ্ধ চক্র পৃথিবীতে কেদারনাথে মূল শক্তি রূপে অবস্থান করছে।
বিশুদ্ধ চক্রের সাধনা করলে ক্ষুদা- তৃষ্ণার উপর বিজয় প্রাপ্ত হয় এবং উপরোক্ত দিব্যগুন ও দিব্যশক্তি লাভ হয়।
বিশুদ্ধ চক্রের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ - তিন মুখী, মূল হলো- অনন্ত , ধাতু হলো - তামা , রত্ন হলো - লাল প্রবাল।
বিশুদ্ধ চক্র উদারতার প্রতীক।
কূটস্থ
মনুষ্য শরীরে দুইটি ভুরুর মধ্যখানে কূটস্থ যাহা আজ্ঞাচক্রের মূল প্রবেশদ্বার বলা হয়। এই কূটস্থ - এর মধ্যে এক দিব্য গুহা আছে ইহাকে "ধর্মগুহা " বলা হয়। এই গুহাতে যোগসাধনের মধ্যে প্রবিষ্ট হলে কর্ম তত্ত্বের জ্ঞান (আরাদ্ধ - প্রারাদ্ধ- সঞ্চিত ) লাভ হয়। এই গুহার মধ্যে আমাদের লক্ষ লক্ষ জন্মের স্মৃতি , লক্ষ লক্ষ কর্মমল সঞ্চিত থাকে। এই কর্মমূলের মধ্যে গভীর অন্ধকারময় কালরাত্রি পথের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই কূটস্থ ভেদ হওয়ার পরে আজ্ঞাচক্রে প্রবেশ করা যায়। তাই যোগীকে প্রথমে কূটস্থে স্থিতি করতে হয় , তবেই কূটস্থ ভেদ করা সম্ভব হয়।
এই কূটস্থের আকার বর্তমানে আবিষ্কৃত এক ইলেক্ট্রন কণার আকারে থেকে আর ও ৪২ হাজার গুন্ সূক্ষতম। আর মন ইলেক্ট্রন কণার থেকে ৪৮ গুন্ ছোট , যাহা কূটস্থের প্রবেশের রাস্তা হতে মনের আয়তন ৩৯৫২ গুন্ বড়। তাই মন কখনোই কূটস্থের ওপরে উঠতে পারে না । তাই সাধনার সময় মন কূটস্থের নিচে আটকে যায়, কূটস্থ আর প্রবেশ করতে পারে না। সেজন্য কূটস্থ মনের অতীত অবস্থা। তাই ইহাই " এবং মানুষ গোচরম " অবস্থার শুরু হয়। অর্থাৎ , জড় জগৎ থেকে চৈতন্যময় জগতের 'জংশন ' ধরা হয়। সৃষ্টিতে এই কূটস্থ কে "ব্রহ্মযোনি " বলা হয়।
মানুষের "দিব্যচক্ষু " হল আধ্যাত্মিক /ধার্মিক চোখ যা আমাদের ভ্রুর মধ্যবর্তী অল্প উপরে কপালের মধ্যে পরাসুষুম্নার মধ্যে কুটস্থকেন্দ্র এর অভন্তরে অবস্থিত - যার সাহায্যে গভীরভাবে ধ্যানরত যোগী পরাজ্যোতির সুন্দর অভ্যন্তরীণ পরাজগতকে দেখেন এবং আনন্দের গভীর ধ্যানে প্রবেশ করেন
আজ্ঞাচক্র
অপরা সুষুম্নানাড়ির অভ্যন্তরে (মূল ব্রহ্ম নাড়ি) দুই পাপড়ি বিশিষ্ট আজ্ঞাচক্র। এটি মানবশরীরের দুই ভুরুর মধ্যে অবস্থিত কূটস্থ এর ঠিক ওপরে অবস্থিত।
এই চক্র টি দুটি পাপড়ি বিশিষ্ট। বেগুনি, নীল , স্বেত বর্ণের - এই তিনটি বর্ণ (রং) মিশ্রিত হয়। ইহার দুটি পাপড়িতে দুটি বর্ণের অবস্থান। এই দুটি বর্ণ হলো -' হ ', 'ক্ষ',।
আজ্ঞাচক্রের মূল কর্ণিকা ত্রিকোণ মন্ডলের মধ্যে। ব্রহ্মা , বিষ্ণু , মহেশ্বর, স্বত্ব, রজ:, তম: গুন। চন্দ্রবীজ 'ঠং' এবং শুক্লা বর্ণা , 'হাকিনী ' রুপি দিব্য শক্তি সম্পূর্ণ দেবী। এই চক্রের মূল পরিচালনা শক্তি অক্ষর পুরুষ । তাই এই চক্রের দেবতা হলেন অক্ষর পুরুষ। যাহা ত্রিদেবের মিলিত শক্তি।
এই চক্রে ইরা, পিঙ্গলা, সুষমা তিনটি নাড়ির সংযোগস্থল হয়েছে। তাই এটিকে ত্রিকূট বা ত্রিবেণী সঙ্গম বলে। এই ত্রিবেণী অন্ত স্নান করলে আর পূর্নর্জন্ম হয় না।
আজ্ঞাচক্রের কর্ণিকার মধ্যে অর্ধ চন্দ্র বিদ্যমান। এই অর্ধ চন্দ্রের উপরের বিন্দু এবং বিন্দুর উপরে প্রশন্তিনাদ বিদ্যমান আছে।
এই বিন্দুর অভন্তররে , মহান জ্ঞান চক্ষু বা দিব্যচক্ষুর অবস্থান। এই জ্ঞান চক্ষুর উন্মিলিত হলে সাধকের আত্মস্বরূপে দর্শন হয়ে আত্মজ্ঞান লাভ হয় । এই আত্মজ্ঞান লাভ করলে জন্ম মৃত্যুর চক্রে বন্ধন হতে বিলুপ্ত হয়ে মুক্তির পথ লাভ হয়। তাই এই আজ্ঞাচক্র কে জ্ঞান চক্র বলা হয়। ইহাকে বিজ্ঞানময় কোষ বলা হয়।
আজ্ঞাচক্রের গতিপথকে পর্যবেক্ষণ করছেন বৃহস্পতি গ্রহ। আজ্ঞাচক্র পৃথিবীতে বদ্রীনাথ ধামে মূল শক্তি রূপে অবস্থান করছেন।
আজ্ঞাচক্রে সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ - পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ , মূল - ব্রহ্মযষ্টি, ধাতু - স্বর্ণ, রত্ন – পোখরাজ | আজ্ঞাচক্র আত্মজ্ঞানের প্রতীক।
ললনা চক্র বা পদ্ম
কপালের উপরে অপরা সুষুম্নার অভ্যন্তরে ৬৪ টি পাপড়ি বিশিষ্ট ললনা চক্র অবস্থিত আছে। এই পদ্মে 'অহং ' তত্ত্বের স্থান। এই পদ্মে অমৃতক্ষরণকারী গ্রন্থি আছে। নিষ্কাম সাধনা ও ঈশ্বর সমর্পনের দ্বারা এই চক্রে পৌঁছানো যায়। ইহা অতি গুপ্ত ও সূক্ষ্য।
এই চক্রের সাধনা করিলে খেচরী সিদ্ধ হওয়া যায়। এই চক্রের বৃহস্পতি গ্রহের পর্যবেক্ষিত ধরা হয়। এই চক্র পৃথিবীতে "ওম " পর্বতরূপী তীর্থস্থানে অবস্থান করছে। এই চক্রের সাধনায় সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ হলো - নয় মুখী রুদ্রাক্ষ , মূল হলো - ব্রহ্মযোষ্টি , ধাতু হলো - স্বর্ণ। এই চক্রের দেবতা হলেন আদিশক্তি।
গুরু চক্র বা পদ্ম
মস্তিষ্কের ব্রহ্মরূপে শ্বেতবর্ণ শতদল বিশিষ্ট অষ্টম পদ্ম গুরু পদ্ম বা গুরু চক্র নামে অবস্থিত। এই পদ্মের মণিকর্ণিকায় ত্রিকোনমণ্ডল আছে। এই ত্রিকোনমণ্ডলে তিনটি বর্ণ আছে। যথাক্রমে :- 'হ', 'ল', 'ক্ষ', এই ত্রিকোনমণ্ডলকে শক্তিমণ্ডল বলে। এই শক্তি মন্ডলের ওপরে তেজোময় হংসবিদ্যা (আগম ও নিগম ) অবস্থান করছে। এই হংস তত্ত্বই গুরুদেবের পাদপীঠ ধরা হয়।
এই পাদপীঠের মধ্যে গুরুবিজ বিদ্যমান। যাহা কোটি সূর্যতুল্য। এই বীজের বাঁপাশে গুরুপত্নী শক্তি বিদ্যমান। এই গুরু এবং গুরু শক্তি তত্ত্বের উপরে সহস্র দল পদ্মটি ছাতার মতন অবস্থান করছে। এই গুরুপদ্মে দিব্যজ্ঞান এবং সর্বসিদ্ধি বিদ্যমান থাকে। এই গুরু চক্রকে ও গ্রহ বৃহস্পতির ও শনির নিরীক্ষণের মধ্যে থাকে। এই গুরু পদ্মের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ হলো - ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, মুখী রুদ্রাক্ষ , মূল হলো - বিল্ব মূল , অশ্বগন্ধা মূল , চন্দন মূল , ধাতু হলো - স্বর্ণ , শাস্ত্রের "অখন্ডমন্ডলকারণম".......................................... তত্ত্ব এই চক্রে অবস্থান।
সহস্রার চক্র বা পদ্ম
গুরু চক্রের ঠিক ওপরে ব্রহ্মরন্ধ্রে সহস্রার চক্র অবস্থিত। সহস্রদল পদ্মের চারিদিকে পঞ্চাশদল পাপড়ি অবস্থিত এবং এক এর ওপরে এক কুড়িস্তরে সজ্জিত। প্রত্যেক স্তরে পঞ্চাশ মাত্রিক বর্ণ আছে। এই সহস্রদল পদ্মের কণিকার মধ্যে ত্রিকোণ মন্ডল আছে। ত্রিকোণ মন্ডলের মধ্যে "হ", "ল", "ক্ষ" তিনটি বর্ণ বিদ্যমান। এই তিনটি অক্ষরের মধ্যবিন্দুতে "অমা" নামক কলা আছে। তাঁর মধ্যে "আনন্দ ভৈরবী" নামক দিব্য যোগমায়া শক্তি বিদ্যমান।তাঁর মধ্যে এক কোটি সূর্য বৎ পরমব্রম্ভ স্বরূপ বিদ্যমান আছেন, ইহাকে জানিলেই ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার বলা হয়। ইহাকে জানিলেই নির্বাণ মুক্তি হয়।
এই সহস্রারচক্রে মহারুদ্র ও মহাকালীর অবস্থান।
এই পদ্মের তীর্থস্থান কৈলাস , এই পদ্মের গ্রহ হলো - শনি, এই চক্রের মূল তত্ত্ব ব্রহ্মসাক্ষাৎ, এই পদ্মের মূল দেবতা হলো- পরব্রহ্ম , এই পদ্মের সাহায্যকারী রুদ্রাক্ষ হলো ১ থেকে ১৪ মুখী ( মূল রুদ্রাক্ষ ৭ মুখী ) রুদ্রাক্ষ।
মূলা চক্র
সহস্রদল চক্রের ওপরে মূলাচক্রের অবস্থান।এই চক্রে কোনো পাঁপড়ি নেই।এখানে পরম ব্রহ্ম রয়েছে।শরীর থাকাকালীন এই চক্রে পৌঁছে গেলে ভগবান স্তরে পৌঁছান যাই।যেমন- ভগবান রাম।মূলা চক্রে কৈবল্য লাভ ও ব্রহ্ম বিদ্যা লাভ হয়।মস্তক গ্রন্থি থেকে দুইটি নাড়ি ভাগ হয়েছে।একটা নাড়ি মস্তিস্কের পিছন দিয়ে মুলা চক্রে গেছে তার নাম অপরা সুষুম্না।আর একটা পরা সুষুম্না নাড়ি যেটি মস্তিকের সামনে দিয়ে গেছে।অপরা সুষুম্না নাড়ি বন্ধ থাকে।তাই এই নাড়ি দিয়ে মূলা চক্রে সহজে পৌঁছানো যাই না।যোগীরা সাধনা করে এই নাড়ি ভেদ করে । এইভাবে ব্রাহ্মরন্ধ্র ভেদ করে দেহ ছাড়ে।আবার পরা সুষম্না নারিটি মস্তকগ্রন্থি থেকে আঞ্জাচক্র সেখান ললনাচক্র তারপর গুরুচক্র ও সহস্রার চক্র ভেদ করে মূলা চক্রে প্রবেশ করে।মূলচক্রে নির্বীজ সমাধি লাভ করে পুনরায় আঞ্জচক্রে এসে সংসারিক প্রারাদ্ধ কর্ম করে।একে অচ্যুত নারায়ন স্থিতি বলে।মূলাচক্রে ভগবান স্তরে যাওয়ার পর পুনরায় সহস্রার চক্র, গুরু চক্র, ললোনা চক্র,আঞ্জাচক্র,বিশুদ্ধ চক্র ,অনাহত চক্র ,মনিপুর চক্র,স্বা ধিস্থান ও মূলাধার চক্রে পুনারায় আসে।একে দশ চক্রে ভগবান ভূত বলা হয়।আমাদের শরীরটা পঞ্চমহা ভূতে লয় হয়ে পুনরায় পঞ্চমহা ভূতে ফিরে আসে।এইভাবে চক্রাকারে চলতে থাকে।
