"গুরু ব্রক্ষ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর গুরুদেব পরমব্রক্ষ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।"
একের পর এক ধাপ ওপরে উঠতে সাহায্যর গুনাবলী নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান সদ্গুরু। তিনি ঠিক একইভাবে একের পর এক উন্নতির ধাপ পেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন।আমাদের কানকে যদি যোনি ধরা হয় তাহলে গুরুদত্ত বীজ হলো সেই বীর্য যা আমাদের শরীরে এবং মনে গিয়ে ভক্তি ও বিশ্বাসে নিষিক্ত হয়ে সৃষ্টি করে জ্ঞানের ভ্রুণ। এই ভ্রুনটিকেই সযত্নে লালন করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাহায্য করেন গুরু। তাই তাঁকে একাধারে পিতা ও মাতা উভয়ই বলা হয়।
অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে তিনি শুভত্বের আলোয় নিয়ে আসেন শিষ্যকে।কিন্তু যেমন সব শুক্রাণু এবং ডিম্বানু নিষিক্ত হয় না, তেমনি যে কোন বীজ এই জ্ঞানের ভ্রুন সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষের ক্ষেত্রে জানা যায় না যে কোনটি নিষিক্ত হবে কিন্তু এই ক্ষেত্রে গুরু জানেন যে কোনটি শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারজন্য আসে সাধন চক্র বিচার। এখানেই নির্ধারিত হয় শিষ্যর ইষ্ট। তারপর আসে সেই মহালগ্ন যেখানে নির্ধারিত হয় কোন বীজ বপন করা হবে শিষ্যর চেতনার মাটিতে যা অঙ্কুরিত হয়ে ছায়া দান করবে ভবিষ্যতে। গুরু আর শিষ্যর সম্পর্কে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধন - যাকে এক কথায় বলা যায় মুক্তির বন্ধন।
কিন্তু এর কোনটাই হয় না যদি সময় না হয়। জ্যোতিষ আমাদের বলে দেয় সেই মহাক্ষনটি। বলে দেয় আমাদের ইষ্ট দেব বা দেবীর নাম। তাই সদ্গুরু ছাড়া আর কেউ নেই যিনি আমাদের উদ্ধার করতে পারেন এই দুঃখের সাগর থেকে। যদি গুরু না থাকে তাহলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করতে হয় গুরুলাভের জন্য।
আপনি যেকোন সাধককে বা স্বয়ং শিব কেও গুরুপদে বরন করে এগোতে পারেন। তিনিই প্রয়োজন বুঝে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবেন দেহধারী তাঁরই অংশীভূত কোন মানুষকে যিনি রক্ত মাংসের শরীরে আসলেও আপনার কাছে তিনি হবেন একাধারে ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। তিনিই হবেন আপনার সদ্গুরু।
গুরু:------------------------
"গু" মানে অন্ধকার, "রু", যা তাদের দূর করে,
তাই অন্ধকার দূর করার ক্ষমতার কারণে গুরুর নামকরণ করা হয়েছে।
- অদ্বৈতারক উপনিষদ, শ্লোক 16
গুরু মানে "অভিভাবক, পথপ্রদর্শক, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক"। সত্যই অন্ধকার দূর করে। গুরু হলেন আধ্যাত্মিক জগতের পথপ্রদর্শক। তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান দেন। একজন সত্যিকারের গুরু হলেন কুল-অর্ণব, যিনি তাঁর দ্বারা প্রচারিত সাধারণ গুণের জীবনযাপন করেন, তাঁর জ্ঞানে দৃঢ় এবং দৃঢ়, আত্মা (আত্মা) এবং ব্রহ্ম (চূড়ান্ত বাস্তবতা) সম্পর্কে জ্ঞানের সাথে একজন যোগী। গুরু হলেন একজন যিনি একজন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানার্জন এবং আত্ম-উপলব্ধির যাত্রায় সূচনা করেন, প্রেরণ করেন, আলোকিত করেন, বিতর্ক করেন এবং সংশোধন করেন। একজন সফল গুরুর বৈশিষ্ট্য হল যে তিনি শিষ্যকে অন্য গুরু হতে সাহায্য করেন এবং অভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিকতা এবং নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জন্য গুরু হন।যেমন উদ্যমী শিষ্য গুরুকে জপ করে এবং গুরুর সাথে হাঁটে, হাসে, আনন্দে খেলে এবং ধীরে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছে যায় এবং গুরু শিষ্য হয়ে ওঠে এক ও এক আত্মা।
শাস্ত্রানুসারে -- দীক্ষা যে কোনো লোক দিতে পারে না বা যে কোনো লোকর শাস্ত্র সম্মত লক্ষণ সাধন যোগ্যতা না হয়ে থাকে তার নিজেরও কাহাকেও দীক্ষা দেওয়া উচিত নয় -কারণ তাতে শাস্ত্র বিরুদ্ধে কাজ করে অধঃপাতের কর্ম হয় অথবা যে কোনো লোকের কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়া ঠিক না- কারণ ভুল পথে চালতা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
তাই শাস্ত্র সম্মত লক্ষণ সাধন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে সর্বদা দীক্ষা নেওয়া উচিত। শাস্ত্র সম্মত লক্ষণ সাধন যোগ্যতা হীন ব্যাক্তির কাছ থেকে কখনোই দীক্ষা গ্রহণ করা উচিত নয় ।
কারণ শাস্ত্রে আছে যার মধ্যে প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে সর্বদা দীক্ষা নেওয়া উচিত ...একমাত্র শাস্ত্রানুসারে সেই সেই ব্যাক্তির দীক্ষা দেওয়া শাস্ত্র সম্মত হয়। তাই শাস্ত্র সম্মত লক্ষণ প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে সর্বদা দীক্ষা নেওয়া উচিত।
এখানে কোন কোন প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতা হিসাবে কোন কোন দীক্ষা দেবার যোগ্যতা হয় -সেটা আমরা বর্ণনা করবো :---
1. যিনি আত্মজ্ঞান লাভ অথবা ঈশ্বর দর্শন করেছেন --- তিনি শাস্ত্রানুসারে নাম দীক্ষা , বীজ এবং গায়িত্রী দীক্ষা দিতে পারেন।
2. যিনি আত্মজ্ঞান এবং পরমাত্মজ্ঞান লাভ করেছেন --- তিনি শাস্ত্রানুসারে নাম দীক্ষা , বীজ ও গায়িত্রী দীক্ষা এবং ক্রিয়াযোগে ক্রিয়াদীক্ষা দিতে পারেন।
3. যিনি আত্মজ্ঞান ও পরমাত্মজ্ঞান এবং ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন --- তিনি শাস্ত্রানুসারে নাম দীক্ষা , বীজ ও গায়িত্রী দীক্ষা এবং ক্রিয়াযোগে ক্রিয়াদীক্ষা এবং ব্রহ্মবিদ্যাদীক্ষা দিতে পারেন।
4. যিনি আত্মজ্ঞান ও পরমাত্মজ্ঞান এবং ব্রহ্মজ্ঞান এ ব্রহ্মস্থিতি লাভ করেছেন --- তিনি শাস্ত্রানুসারে নাম দীক্ষা , বীজ ও গায়িত্রী দীক্ষা এবং ক্রিয়াযোগে ক্রিয়াদীক্ষা এবং ব্রহ্মবিদ্যাদীক্ষা ও মুলাসমাধিবিদ্যা দিতে পারেন।
তাই উপরুক্ত প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে সর্বদা দীক্ষা নেওয়া উচিত।
আর প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতাহীন ব্যাক্তির কাছ থেকে কখনোই দীক্ষা নেওয়া উচিত নয়-তাতে ধর্মের গ্লানি বাড়ে এবং অধঃপতন হয়।
কোনো আশ্রমের মাহান্ত / মহারাজ , গেরুয়াবস্ত্র বা কথাবার্তা বলার ক্ষমতা , বই পড়া জ্ঞান এর কথা শুনে বা কোনো জড়জাগতিক প্রতিভা দেখে দীক্ষা নেওয়া উচিত নয়।
শাস্ত্রানুসারে প্রতক্ষ্য সাধন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে সর্বদা দীক্ষা নেওয়া উচিত এবং দীক্ষার যে শাস্ত্রীয় উদ্দেশ্য সেটা পূর্ণ হয়।
গুরু যখন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তখন আপন সাধনশক্তি দিয়ে সৃষ্ট উর্জাশক্তিকে তিনি মন্ত্রের সাথে শিষ্যের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করে দেন। এজন্যে কম শক্তি ব্যয় হয় না। এর ফলে দীক্ষার পর শিষ্যের একটা সাধন দুষ্কর্ম রুপি বাধা কর্মের অংশ গুরুকে টেনে নিতে হয়। জগতের অন্য কোন সম্পর্ক কিন্তু কারোর দুষ্কর্ম রুপি বাধা কর্মের অংশ নেয় না কোন কারণেই। একমাত্র গুরুই এই দুষ্কর্ম রুপি বাধা কর্মের অংশ টানেন। শুধু তাই নয়। এরপর শিষ্য অনেকসময়েই নানা ভুল করে,অন্যায় করে আর তার শাস্তির একটা বড় অংশ গিয়ে পরে গুরুর উপরে।দোষ করে শিষ্য আর দুষ্কর্ম ভোগ ভোগেন গুরু। তাই দীক্ষার পর প্রতিটি শিষ্যের উচিত - কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গুরুর থেকে মত নেয়া। গুরুর প্রতি কখনোই অসম্মান প্রদর্শন করতে নেই। তাতে ইষ্ট রুষ্ট হয়ে যান।