বৈদিক সংস্কৃতির বিশিষ্ট লক্ষণ হলো যে পরমতত্ত্বের অনুসন্ধান ও বৈদিক গুরু পরম্পরা এর মধ্যে দিয়ে গিয়ে তা উপলব্ধি করা ।
ঈশ্বর লাভের আকাঙ্ক্ষা আমার জীবনে এমন এক ঈশ্বরকোটিক গুরুকে এনে দিয়েছিল, যার অপূর্ব্ব সুন্দর বেদান্তের উপদেশ যা সকল যুগেরই আদর্শরূপে গঠিত । আমার গুরুদেব হচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন মহাপুরুষ —জ্ঞানাবতার ও মহাক্রিয়াযোগী শ্রী শ্রী স্বামী অমৃতানন্দ পরমহংস তীর্থঅবধূত ।
আমার বেশ স্পষ্ট মনে পড়ে যে অতীত জীবনে আমি কত কত প্রদেশে,তীর্থে-তীর্থে,বনে-জঙ্গলে হিমালয়ে, সমুদ্রের পারে, নদীরপারে ঈশ্বরলাভের জন্যে ব্যাকুল হয়ে হাহাকার করে কেঁদে কেঁদে বেরিয়েছিলাম -- অতীতের জন্মের এই সব ক্ষণিক-ক্ষণিক স্মৃতি কোন অদৃশ্য যোগসূত্রে আমার এই জন্মের ভবিষ্যৎ জীবনেরও কিঞ্চিৎ আভাস দিয়েছিল ।
আমার বাল্যদেহের অপটুতার কথা স্মরণ হলে মনের মধ্যে প্রার্থনার তরঙ্গ উদ্বেলিত হয়ে উঠত । আমার গভীর ভাবপ্রবণ অবস্থা আমার জীবন অন্তরের নীরবভাব এর রূপ পেয়েছিল । আপনাকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে না পেরে আমি অত্যন্ত ব্যথিত বোধ করতাম । আমার হৃদয়ের ভাব মনের মধ্যে নানাভাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত আর আমি আমার পরিবারের কাহাকেও আমার এই নীরবভাব অনেক চেষ্টা করেও বোঝাতে পারতাম না ।
যখন আমার এই জন্মের শরীরের বয়স 12 তখনি ঈশ্বর এর কৃপায় কোনো এক উপলক্ষে আমার পূর্বজন্মের সংস্কার বসত আমার অন্তরে ঈশ্বরলাভের জন্যে ব্যাকুল হয়ে হাহাকার সবসময়ের জন্যে শুরু হলো , মনে হলো যেন ঈশ্বরকে না লাভ করার পরমবেদনা ও প্রচন্ড কষ্ট সবসময় আমার হৃদয়কে ও বুদ্ধিকে যেন মোচড় দিচ্ছে --24 ঘন্টা তাকে না পাওয়ার প্রচন্ড কষ্ট আমার চোখ কে কখনো অশ্রুজল থেকে শুকাতে দিচ্ছে না। যত দিন যেতে লাগলো আমার অন্তরে
তাকে না পাওয়ার প্রচন্ড কষ্ট এতটাই বাড়লো যে আমি বুদ্ধি স্থির রাখতে না পেরে আমি তাকে চিরকালের মতো পাবার জন্যে এবং তার চরণে নিজেকে চিরকালের জন্যে সমর্পন করে জন্যে আমি পাগলে পরিণত হলাম। অহরহ তাকে পাবার আকুলতা ছাড়া 1 সেকেন্ডের জন্যেও আমার মাথায় আর কোনো কিছু কাজ করত না --আমি পরিবারের নজরে / সমাজের নজরে পাগলে পরিণত হলাম তবুও আমি আমার প্রাণগোবিন্দকে পেলাম না। আমার অন্তরের কষ্ট অসীম বাড়তে লাগলো আর আমি পাগল থেকে মহাপাগলের রূপান্তরণ হতে লাগলাম ।
আমার এই শরীরের বয়স 12 বৎসর চলা কালীন বহু চেষ্টা করে বহু জনকে অর্থাৎ প্রত্যেককে-জনে জনে ( মা-বাবা-ঠাকুমা-দাদু,সমাজ-গ্রাম,আত্মীয়-স্বজন, কুলগুরু বা যারা সমাজে ধার্মিক বলে পরিচিত এই রকম বহু লোককেই ) জিগ্যেস করে যখন আমার প্রাণগোবিন্দকে চিরকালের মতো পাবার জন্যে এবং তার চরণে নিজেকে চিরকালের জন্যে সমর্পন করে পথ বলতে পারলো না তখন বাধ্য হয়ে মহাপাগল হয়ে অবশেষে একদিন আমি তাকে পাবার আকুলতায় আমার মা-বাবা-বোন-ঠাকুমা-দাদু , ঘরবাড়ি, টাকা-পয়সা , সুখ-সুবিধা , সমাজ -আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব,পড়া-শুনা,সমস্থ ভবিষ্যৎ কর্মজীবন, সমস্থ ভবিষ্যৎ চিন্তা ত্যাগ করে অর্থাৎ কি খাবো, কি পরবো, কোথায় থাকবো, শরীর খারাপ হলে কি করবো, রোগ হলে কি করবো ,শীতকালে কি করবো , বর্ষায় মাথায় ছাদ কোথায় পাবো ইত্যাদি সব ভবিষ্যৎ চিন্তা ত্যাগ করে একদিন রাতের অন্ধকারে আমার এই শরীরের বয়স 12 বৎসর চলা কালীন অর্থাৎ 12 বয়সে আমি আজীবনের জন্যে গৃহ ত্যাগ মনোভাবে বাড়ি ছাড়লাম । .......... ক্রমশ লিখবো