অহিংসা পরমো ধর্ম্ম अहिंसा परमं सत्यम अहिंसा परमं शरुतम॥ অহিংসা হল সর্বোচ্চ সত্য এবং পরম ধর্ম ॥ “অহিংসা পরম ধর্ম” – এই মহাজনোক্তি আমরা ছোটকাল হতে শুনে বড় হয়েছি। আমাদের রক্তমাংস অস্থিমজ্জায় এই বাণী প্রোথিত হয়ে আছে। অধিকাংশ ধর্মগুরুগণ আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই শ্লোকটি সম্পূর্ণ শ্লোক নয়, শাস্ত্রে লেখা সম্পূর্ণ শ্লোকটি নিচে দিচ্ছি:---- অর্থাৎ অহিংসা মনুষ্য জীবনের পরম ধর্ম , এবং ধর্ম রক্ষার জন্যে হিংসা করা তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম ॥ অথবা অহিংসা পরম ধর্ম কিন্তু ধর্মের রক্ষা হেতু হিংসা শ্রেয় ধর্ম ॥ অহিংসা পরম ধৰ্ম্মস্তথাহিংসা পরো দমঃ। অহিংসা পরমং দানমহিংসা পরমং তপঃ॥ অহিংসা পরমাে যজ্ঞস্তথাহিংসা পরম ফলম্। হিংসা পরমং মিত্রমহিংসা পরমং সুখম। অহিংসা পরমং সত্যমহিংসা পরমং শ্রুতম্ ॥ সর্বযজ্ঞেসু বা দানং সর্বতীর্থেসু বাপ্লুতম। সর্ব্বদানফলং বাপি নৈতত্তুল্যমহিংসয়া ॥ অহিংস্রোস্য তপােহক্ষয্যমহিংস্রোস্য যজতে সদা। অহিংস্রঃ সর্বভূতানাং যথা মাতা যথা পিতা।। এতৎ ফলমহিংসাযা ভূষশ্চ কুরুপুঙ্গব!। ন হি শক্যা গুণা বক্তমপি বর্ষশতৈরপি ॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় 101, শ্লোকঃ 37-41 ] অনুবাদঃ অহিংসা পরম ধর্ম, অহিংসা উত্তম ইন্দ্রিয়দমন, অহিংসা পরম দানের তুল্য এবং অহিংসা পরম তপস্যা॥ অহিংসা প্রধান যজ্ঞস্বরূপ, অহিংসা উত্তম ফলজনক, অহিংসা পরম বন্ধু- স্বরূপ, অহিংসা উত্তম সুখ উৎপাদন করে। অহিংসা পরম সত্যের তুল্য এবং অহিংসা বিশেষ শাস্ত্রজ্ঞানের সমান ॥ সমস্ত যজ্ঞে যে দান, সকল তীর্থে যে স্নান কিংবা সকল দানের যে ফল ; এই সমস্তও অহিংসার তুল্য নয়॥ হিংসাশূন্য মানুষের অক্ষয় তপস্যা হয়, হিংসারহিত মানুষ সর্বদাই যজ্ঞ করেন এবং হিংসা শূন্য লােক সমস্ত প্রাণীরই পিতা ও মাতার তুল্য হয়ে থাকে ॥ এই অহিংসার প্রচুর ফল ; অহিংসার সমস্ত গুণ শত বছরেও বলে শেষ করা যায় না ॥ …. [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় 101, শ্লোকঃ 37-41 ] কিন্তু হিংসা না করা মানুষের প্রকৃত ধর্ম কিন্তু ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয় নেওয়া তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ॥ উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংসা নয়, হিংসাই কর্তর্ব্য। আমাদের জানা উচিত কোন্ কোন্ ব্যক্তির প্রতি হিংসা করা উচিত। আমাদের ধর্মশাস্ত্রে আততায়ী নামক ঘৃণ্য পশুদের বধের কথা বলা হয়েছে।তাহলে জেনে নেওয়া যাক আততায়ীর সংজ্ঞা কী..?? . অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ । ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে হ্যাততায়িনঃ।।(বশিষ্ঠ স্মৃতি:৩/১৬) অনুবাদ: 1. যে ঘরে আগুন দেয় 2. খাবারে বিষ দেয় 3.. ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করতে উদ্যত 4. ধনসম্পদ অপহরণকারী 5..ক্ষেতখামার অপহরণকারী ও 6..ঘরের স্ত্রী অপহরণকারী – এই ছয় প্রকার দুষ্কৃতিকারীকে আততায়ী বলা হয়। . এই আততায়ীদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে সে প্রসঙ্গে মনুসংহিতা বলছে- গুরুং বা বালবৃদ্ধৌ বা ব্রাহ্মণং বা বহুশ্রুতম্। আততায়িনমায়াস্তং হন্যাদেবাবিচারয়ন্।।(৮/৩৫০) অনুবাদ: সেই আততায়ী যদি গুরু, বালক, বৃদ্ধ, বহুশ্রুত ব্রাহ্মণ অথবা অতিশয় বিদ্বান্ ব্যক্তিও হয় ,তবুও অগ্রসরমান্ সেই আততায়ীকে তখনই বধ করবে। তাছাড়া যারা সনাতন ধর্ম পালন করতে দেয় না, তাদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে তাও বলা আছে। . শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্ম্মো যত্রোপরুধ্যতে। দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে।।(৮/৩৪৮) আত্মনাশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাঞ্চ সঙ্গরে। স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্ম্মেণ ঘ্নন্ ন দুষ্যতি।।(৮/৩৪৯) অনুবাদ:-- : যখন সাহসকারীরা সনাতন ধর্ম্ম করতে না দেয়, তখন ব্রাহ্মণাদি ও তিন বর্ণ দুষ্টদমনের জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবে এবং আত্মরক্ষার্থে ও যজ্ঞীয় দক্ষিণাদি উপদ্রব নিবারণার্থে কিংবা যুদ্ধ উপস্থিত হলে স্ত্রীলোকের রক্ষার জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবেন। যেখানে বেদ জ্ঞান হতেই সকল প্রকার ন্যায়বোধের সৃষ্টি।সেখানে সৃষ্টি থেকে স্রষ্টাকে পৃথক করার প্রয়াস করাটাই মূর্খতা।অহিংসা পরমো ধর্ম্ম, ধর্ম্ম হিংসা তথৈব চ ॥
অহিংসা পরমো ধর্ম্ম । ধর্ম্ম হিংসা তথৈব চ ॥