কলিযুগের কিছু বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য
কলিযুগের কিছু বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য
ঋষি মার্কন্ডেয় মহাভারতে কলিযুগের কিছু বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছেন
যেমন:-
1. কলিযুগে বেশিরভাগ (99.99 %) নারীদের সতীত্ব, সততা ও সত্য থাকবে না।
2. শাসকরা প্রজাদের সুরক্ষা দেবে না বরং তারা বিপজ্জনক এবং ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হবে।
3.
কাম ও লোভ এবং কামে বাধা পাইয়া ক্রোধ সাধারণ প্রবণতা হবে।
4. শুধুমাত্র স্বার্থের কারণে কোন ধর্ম-অধর্ম বিচার না করে মানুষ একে অপরকে হত্যা করবে।
5. কারো সামনে শপথ / প্রতিজ্ঞা / প্রতিশ্রুতি / কাহাকেও কথা দেওয়ার কোনো মূল্য থাকবে না।
6. নেশাজাতীয় পানীয় ও মাদকের প্রতি আসক্তি একটি সাধারণ উন্মাদনায় পরিণত হবে।
7. বেশিরভাগ (99.99 %) নারীরা বিবেকগত ভাবে & চরিত্রগতভাবে & নৈতিকভাবে এবং মনুষ্য জীবনের মূল উদ্দেশ্য রুপি দায়িত্ব-কর্তব্যকর্ম বোধগত ভাবে পুরুষের চেয়ে বেশি কলুষিত হবে। বেশিরভাগ (99.99 %) নারীরা জ্ঞান-বুদ্ধি থাকুক বা না থাকুক- সবকিছুকে নিজের অনুসারে সবকিছু পরিচালনা করার চেষ্টা করবে
8. প্রকৃত সাধুদের সম্মান করা হবে না এবং পরিবর্তে তারা তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সরল ও ধার্মিক জীবনধারা এবং মূল্যবান শিক্ষার জন্য বারবার বিনা কারণে উপহাস ও অপমানিত হবে।
9. শক্তিশালী প্রভাবে ধর্ম, সত্যবাদিতা, পরিচ্ছন্নতা, সহনশীলতা, দয়া, জীবনের সময়কাল, শারীরিক শক্তি এবং স্মৃতিশক্তি দিন দিন হ্রাস পাবে।
10. শুধুমাত্র সম্পদই একজন মানুষের শুভ জন্ম, সঠিক আচরণ এবং সূক্ষ্ম গুণাবলীর চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং আইন ও ন্যায়বিচার প্রয়োগ করা হবে শুধুমাত্র ক্ষমতার ভিত্তিতে।
11. পুরুষ এবং মহিলারা একত্রে বসবাস করবে শুধুমাত্র শারীরিক আকর্ষণের কারণে এবং নারীত্ব এবং পুরুষত্ব বিচার করা হবে একজনের যৌনতার দক্ষতা অনুযায়ী।
12. একজন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ হিসাবে পরিচিত হবেন কারণ তারা বেদে লিখিত ব্রাহ্মণের দায়িত্ব পালন না করে বরং পৈতা ধারণ পরার কারণে।
13. ব্যবসায় সাফল্য প্রতারণার % উপর নির্ভর করবে।
14. একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক মর্যাদা বাহ্যিক প্রতীক(যেমন সাধক, নিপুণ ভক্ত, পণ্ডিত ইত্যাদি) শুধুমাত্র বাহ্যিক চিহ্ন অনুসারে নির্ণয় করা হবে" যেমন রুদ্রাক্ষ বা তুলসী মালা, তিলক (কপালে একটি চিহ্ন), —---সাধুতা বিচার করা হবে শুধু বাহ্যিক পোশাক & মালা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।
15. একজন ব্যক্তি যোগ্যতা নিয়ে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে যদি সে ভাল জীবিকা অর্জন না করে। আর কথার ছলচাতুরিতে খুব চতুর সে একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত বলে বিবেচিত হবে।
16. একজন ব্যক্তির জীবনকে ধন্য সার্থক জীবন বলা হবে যদি তার কাছে অনৈতিক পথে উপার্জিত অর্থ এর পরিমাণ বেশি থাকে, এবং তার অনৈতিক , অন্যায়, অধর্ম, ভন্ডামি,লোকদেখানো পরোপকার রুপি কর্মকে পুণ্য এবং প্রকৃত কর্ম হিসাবে গ্রহণ করা হবে।
17. শুধুমাত্র মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে কাগজে লেখা চুক্তির মাধ্যমে বিবাহের ব্যবস্থা করা হবে; বিবাহের বন্ধনকে নৈতিক মূল্যবোধ এবং একটি সঠিক বৈদিক অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন হবে না।
18. শাস্ত্রের শৌচ অবস্থাকে বাহ্যিক পরিছন্নতা (উদাহরণস্বরূপ একটি স্নান-বা বাইরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বস্ত্র ) মহাপবিত্রতার নিদর্শন এর সম্পূর্ণতাকে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
19. নিত্য-অনিত্য বিবেক বিচার, বৈদিক অনুশাসন, প্রকৃত শাস্ত্রজ্ঞান, চিন্তার বিশুদ্ধতা বা জীবনযাপন পদ্ধতিতে করার প্রয়োজন হবে না। আধ্যাত্মিক বিষয়ের কোন গুরুত্ব থাকবে না — তথাকথিত শ্রম সন্ন্যাসী, সাধু ও ব্রাহ্মণদের ঘরেও নৈতিকতা থাকবে না —- ধর্ম ও দয়ার কোন কর্ম থাকবে না ।
20. ভগবান কৃষ্ণ ব্রহ্মপুরাণে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, "কলিযুগ - আদর্শ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের জন্য চরম কষ্টে পূর্ণ হবে"।
কলিযুগের এই সব দোষগুলি প্রকৃত মানুষের জীবনযাত্রাকে খুব অবাঞ্ছিত করে তোলে, তবে এই যুগের একটি বড় গুণ রয়েছে যা কলিযুগের সমস্ত ত্রুটিগুলি পূরণ করে।
যেমন ভাগবত বলেছেন- —---সেই গুণটি হচ্ছে "শুধুমাত্র প্রেমময় মানসিক স্মরণের সাথে নিত্য-অনিত্য বিচারের সাথে বৈদিক অনুশাসন পালন এবং গুরু প্রদত্ত ইষ্টমন্ত্র / ঐশ্বরিক নাম জপ করার মাধ্যমে বা গুরুদত্ত সাধনার মাধ্যমে, যে কেউ জড় জগতের জন্ম-মৃত্যু রুপি ভবসমুদ্র অতিক্রম করতে পারে এবং সেই মুহুর্ত থেকে অনন্তকালের জন্য ঐশ্বরিক বাসস্থান অর্জন করতে পারে" এবং যা সমস্ত ঈশ্বর লাভ বা মোক্ষলাভ প্রত্যাশীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই গুণের কারণে মহান পরমহংসরাও এই কলিযুগে পৃথিবীতে অবতরণ করতে চান।
সংশ্লিষ্ট কলিযুগে উল্লিখিত সময়ের জন্য ভক্তি করার সুফল
সত্যযুগে 48 বছর এ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে অখন্ডিত ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালনে পশুত্ব ভাবের নাশ হয় এবং মনুষ্য ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 48 বছর পালনে দেব ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 48 বৎসর পালনে ব্রহ্ম ভাবের উদয় হয় - অর্থাৎ 144 বছর অখন্ডিত ভাবে পালনে কোন জীবাত্মা এর মধ্যে ব্রহ্ম ভাব সূচনা হয় তারপর জীবাত্মা আত্মজ্ঞানের যোগ্যতা লাভ করে
ত্রেতাযুগে 36 বছর এ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে অখন্ডিত ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালনে পশুত্ব ভাবের নাশ হয় এবং মনুষ্য ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 36 বছর পালনে দেব ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 36 বৎসর পালনে ব্রহ্ম ভাবের উদয় হয় - অর্থাৎ 108 বছর অখন্ডিত ভাবে পালনে কোন জীবাত্মা এর মধ্যে ব্রহ্ম ভাব সূচনা হয় তারপর জীবাত্মা আত্মজ্ঞানের যোগ্যতা লাভ করে
দ্বাপর যুগে 24 বছর এ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে অখন্ডিত ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালনে পশুত্ব ভাবের নাশ হয় এবং মনুষ্য ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 24 বছর পালনে দেব ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 24 বৎসর পালনে ব্রহ্ম ভাবের উদয় হয় - অর্থাৎ 72 বছর অখন্ডিত ভাবে পালনে কোন জীবাত্মা এর মধ্যে ব্রহ্ম ভাব সূচনা হয় তারপর জীবাত্মা আত্মজ্ঞানের যোগ্যতা লাভ করে
কলিযুগে 12 বছর এ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে অখন্ডিত ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালনে পশুত্ব ভাবের নাশ হয় এবং মনুষ্য ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 12 বছর পালনে দেব ভাবের উদয় হয়, তারপর আরো 12 বৎসর পালনে ব্রহ্ম ভাবের উদয় হয় - অর্থাৎ 36 বছর অখন্ডিত ভাবে পালনে কোন জীবাত্মা এর মধ্যে ব্রহ্ম ভাব সূচনা হয় তারপর জীবাত্মা আত্মজ্ঞানের যোগ্যতা লাভ করে
মনুষ্য জাতির গড় পূর্ণ আয়ু শাস্ত্র অনুসারে:----
সত্যযুগে মনুষ্য জাতির গড় পূর্ণ আয়ু = 120 মানব সৌর বছর
ত্রেতাযুগে মনুষ্য জাতির গড় পূর্ণ আয়ু = 108 মানব সৌর বছর
দ্বাপরযুগে মনুষ্য জাতির গড় পূর্ণ আয়ু = 96 মানব সৌর বছর
কলিযুগে মনুষ্য জাতির গড় পূর্ণ আয়ু = 84 মানব সৌর বছর
মনুষ্য জাতির ধর্মের আচার আচরণ এর গতিবিধি এবং যুগের প্রভাব অনুযায়ী মনুষ্য জাতির পূর্ণ আয়ুর গড় আয়ু প্রতি যুগে 10%( 10 শতাংশ ) করে কমতে থাকে এবং সেই দিকেই সেই যুগের মানুষদের পূর্ণ গড় আয়ু ধরা হয়
( এখানে ব্যতিক্রমী দের কথা বলা হচ্ছে না কারণ ব্যতিক্রম প্রতি যুগে যুগেই থাকে- এখানে শুধু সর্বসাধারণের জন্য বলা হচ্ছে)
কলিযুগে নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে অখন্ডিত ভাবে বৈদিক অনুশাসন পালনে বা ক্রিয়াযোগ যোগসাধনায় বা যে কোন সাধনায় বা যে কোনো ব্রহ্মবিদ্যা সাধনায় জ্ঞানযোগ বা ভক্তিযোগ বা তন্ত্র যোগ বা কর্মযোগ বা সেবাযোগ —- অর্থাৎ যেকোন প্রকারে সাধনায় —-- যে সময় লাগে সত্যযুগের তার চারগুন সময় লাগে তাই – এক কথায় বলা যায় যে এই যুগে ঈশ্বর-উপলব্ধি করা অন্য যুগের তুলনায় সবচেয়ে সহজ।
শাস্ত্র অনুসারে 2036 খ্রিস্টাব্দে যে যেদিন অক্ষয় তৃতীয়া তিথি পড়বে সেদিন থেকে আবার বৈবস্বত মনুর 28 তম দিব্যযুগ মন্বন্তরের কলিযুগের অবসান হয়ে 29তম দিব্য যুগ মন্বন্তরের নূতন চারটি যুগের ক্রমান্বয়িক ধারায় প্রথম সত্যযুগ শুরু হবে ।
তাই শাস্ত্র এর নিয়ম অনুসারে কলিযুগের 12 বছরের সাধনায় যে স্থিতি লাভ হয় সেইটি যদি কেউ 2036 সালের পর শুরু করে (29তম দিব্য যুগ মন্বন্তরের নূতন সত্যযুগ শুরু হওয়ার কারণে) সেই অবস্থায় প্রাপ্ত (সম্পূর্ণ অখণ্ডিত ভাবে সাধনা করলেও) করতে কমপক্ষে 48 বছর সময় লাগবে ।
তাই শাস্ত্র এর নিয়ম অনুসারে এই কলিযুগে আমাদের আর 13 -14 বছর সময় আছে সাধনায় স্থিতি লাভ করার জন্য— কলিযুগকে দেওয়া ভগবানের অপূর্ব কৃপার সুযোগকে (যে কোন সাধনায় চার গুণ কম সময় এ সাফল্য ) কাজে লাগাবার জন্য এই সময় আমাদের কাছে অতীব দুর্মূল্য— তাই কারোরই আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা উচিত নয় । আমরা এই কলিযুগের অন্তিম চরণে বাস করছি যদি কেউ এই দুর্মূল্য অমূল্য সময় কেউ নষ্ট করে তার মতন দুর্ভাগা আর কেউ থাকবে না—- কারণ এই একই সাধনা করতে তার কমপক্ষে 48 বছর অখন্ডিত সময় লেগে যাবে— আরজে 12 বছর পারেনা সে 48 বছর আর কি করবে এটা অতীব নিজের নিজের কাছে সন্দেহের বিষয়—--- তাই আমাদের কারুরই আর এক মুহূর্ত এই ভগবত প্রদত্ত কলিযুগের অমূল্য সময় নষ্ট করা উচিত নয় ।