বলরাম হলের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। বিষ্ণুর দশ অবতারের অন্যতম অবতার তিনি। ইনি শেষ নাগের অবতার।
ইনি বসুদেবের আরেক স্ত্রী রোহিনীর গর্ভে জন্ম নেন। রাজা কংস দেবকীর ছয়টি সন্তান হত্যা করেছেন। দেবকীর যখন সপ্তম গর্ভ হয়, তখন যোগমায়া গর্ভ সঙ্কর্ষণ করে রোহিনীর উদরে ওনাকে স্থাপন করেন। এই রূপে গর্ভ সঙ্কর্ষণের জন্য উক্ত গর্ভে যে পুত্র হয়, ঐ পুত্র সঙ্কর্ষণ নামে অভিহিত হয়। ইনি নিজ বলে অতিশয় উন্নীত হন বলে বলভদ্র নামে ও পরিচিত। আবার তিনি বলদেব নামে ও প্রসিদ্ধ। বলরামের অস্ত্র
হল 'হল ‚ এই জন্য ওনার অপর নাম হলধর বা হলায়ুধ। জন্ম হওয়া মাত্র কংসের হাত থেকে পরিত্রান পাবার জন্য বলরাম গোকুলে নীত হন। নন্দ কর্তৃক কৃষ্ণের সঙ্গে একত্রে ইনি প্রতিপালিত হন।
বলরামের স্ত্রীর নাম রেবতী। তিনি ছিরেন রাজা রৈবতের কন্যা। রেবতীর গর্ভে ওনার দুই পুত্র জন্ম গ্রহন করেন নিশধ ও উল্মক।
সান্দীপনি মুনির কাছে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বেদবিদ্যা, কলাবিদ্যা, ধনুর্বেদ, ধর্মশাস্ত্র ও নীতিমার্গ ইত্যাদিতে পারদর্শী হন। গদাযুদ্ধে বলরাম অদ্বিতীয় ছিলেন। ইনি কৃষ্ণের সকল কর্মের সহায়ক ও লীলা সহচর। এঁরা উভয়ে একত্রে গোচারণ ও ক্রীড়া করতেন।
বলরামের বাল্যকালের প্রধান ঘটনা গর্দভরূপী বিরাট রাক্ষস ধেনুকাসুর হত্যা। এই রাক্ষস তাঁকে আক্রমন করলে, বলরাম তাঁর চারটি পা ধরে ঘুরিয়ে নিহত করেন। কৃষ্ণের মথুরায় গমনকালে বলরাম ও তাঁর সঙ্গে গমন করেন এবং বলরামের সাহায্যেই কৃষ্ণ কংসকে বধ করতে সমর্থ হন।
কোনো এক সময় বলরাম স্নার্নাথ গমন করেন। জলক্রীড়ার জন্য যমুনা নদীকে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে আহবান করেন, কিন্তু যমুনা সে আদেশ অবজ্ঞা করায় তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের হল দ্বারা যমুনাকে তীরের দিকে আকর্ষণ করে নিগৃহীত করেন। তখন যমুনা নিজ রূপ ধারণ করে বলরামের কাছে ক্ষমা পার্থনা করেন। বলরাম তাঁকে মুক্তি দিয়ে নিজে স্নান শেষ করেন।
দুর্যোধনের কন্যা লক্ষ্মণার স্বয়ংবর সভায় শ্রীকৃষ্ণপুত্র শাম্বকে কৌরবরা বন্দি করেন। বলরাম এই ঘটনা জ্ঞাত হয়ে কৌরবদের কাছে উপস্থিত হন। দু্র্যোধন শাম্বকে মুক্তি না দিলে বলরাম ক্রুদ্ধ হয়ে কৌরবপুরী গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করার জন্য লাঙ্গলাগ্র ঐ নগরীর প্রাকার ভিত্তিতে সংলগ্ন করেন। এতে হস্তিনাপুর সবেগে ঘূর্নিত হয়। দুর্যোধন তখন শাম্ব সহ লক্ষ্মণাকে বলরামের হাতে তুলে সমর্পন করেন এবং তাঁর কাছে গদাযুদ্ধ শিক্ষার জন্য শিষ্যত্ব গ্রহন করেন।
এই দিকে কংস হত্যার খবর পেয়ে কংসের শ্বশুর মগধ রাজ জরাসন্ধ মথুরায় আক্রমন করেন। তখন জরাসন্ধের সাথে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের যুদ্ধ হয়। জরাসন্ধ পরাজিত হন বটে কিন্তু নিহত হলেন না।
ভগিনী সুভদ্রা হরনে অর্জুনকে শাস্তি দিতে উদ্যাত হয়েছিলেন বলরাম। কিন্তু কৃষ্ণের অনুরোধে তাঁকে ক্ষমা করেন।
কুরু পাণ্ডবদের যুদ্ধে তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন।উভয়ের প্রতি স্নেহ বসত তিনি কোনো পক্ষই অবলম্বন করেন নি। তিনি তীর্থ ভ্রমনে বহিগর্ত হন।
বলরাম দুর্যোধন ও ভীমকে গদাযুদ্ধোর কৌশল শিক্ষা দেন। দ্বৈপায়ন হ্রদে দুর্যোধন ও ভীমের গদাযুদ্ধে সময় তিনি তীর্থভ্রমন শেষে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এই যুদ্ধে ভীম নিয়ম বিরুদ্ধভাবে দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করলে তিনি এত বেশি ক্রুদ্ধ হন যে নিজেই পাণ্ডব দের আক্রমন করতে উদ্যত হন। কিন্তু কৃষ্ণ অতিকষ্টে তাঁকে শান্ত করেন।
আগেই বলে রাখি ভগবানের কোনো মৃত্যু নেই। ওনার লীলা করেন। আবার লীলা সাঙ্গ করে বৈকুন্ঠে চলে যান।
যদুবংশ ধ্বংসের পূর্বে কৃষ্ণের মৃত্যুর ঠিক আগে দ্বারকায় বট বৃক্ষের নিচে যোগসমাহিত অবস্থায় থাকাকালীন বলরামের ও মুখ থেকে এক সহস্রমুখ সর্প নিগর্ত হয়ে সমুদ্রে গমন করে। তখন ই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।