রামসেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া
এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে রামসেতুর মতো এত বড় প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার তাহলে কে..??
প্রশ্ন আসাটাই অবশ্য স্বাভাবিক! কারন এত বড় প্রকল্প একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্ব ছাড়া কিভাবেইবা সম্ভব হতে পারে..?
.
তাহলে কে সেই বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার?যার নেতৃত্বে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ এবং সর্ব প্রাচীন সেতুর নির্মাণ হলো.?
.
এই প্রশ্নের উওর রামায়ণের যুদ্ধকান্ডেই দেয়া রয়েছে।
রামসেতু নির্মাণকারী ব্যাক্তি হলেন "ইঞ্জিনিয়ার নল"।
হ্যা,এই ইঞ্জিনিয়ার নলের নেতৃত্বেই তৈরী হয় রামসেতু।
এই ইঞ্জিনিয়ার নল হলেন দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মার পুত্র।সুতরাং পিতার মতো তিনিও প্রকৌশল বিদ্যায় সমান দক্ষ ছিলেন।অর্থাৎ এমন বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং দক্ষতা ইঞ্জিনিয়ার নলের কাছে পূর্ব হতেই ছিলো।শ্রীরামচন্দ্রের সাথে দেখা হওয়ার পর নিজের জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগটা পেয়েছিলেন মাত্র।
.
এখন আরেকটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে,রামসেতুর ইঞ্জিনিয়ারের নাম তো পাওয়া গেলো।কিন্তু সমুদ্রের জলের উপর পাথর ভাসানো কিভাবে সম্ভব.?
হ্যা,এটারও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে এক ধরনের বিশেষপাথরের সৃষ্টি হয় যার নাম পিউমিস (Pumice).এই পিউমিস পাথরই একমাত্র পাথর যা জলের উপর ভাসতে সক্ষম।
আর রামায়ণে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে
এই সেতু শুধুমাত্র একজনের দ্বারা নির্মিত নয়।
প্রভু শ্রীরামচন্দ্র,প্রকৌশলী নলসহ লক্ষ লক্ষ
মানুষের পরিশ্রমের দ্বারা এই রামসেতু নির্মিত হয়েছিলো।
আর এই রামসেতুর পাথরগুলো আনা হয় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে।বর্তমান বিভিন্ন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী যেভাবে দুর্গম স্থানে দ্রুত সেতু/রাস্তা নির্মাণ করতে সক্ষম।শ্রীরামচন্দ্রের সেনাবাহিনীও তেমনই সক্ষমতা ছিলো।সুতরাং ইঞ্জিনিয়ার নলের নেতৃত্বে তারা যে পিউমিস পাথর নিয়ে এসে সেতু নির্মাণে ব্যবহার করেছে এই বিষয়ে সন্দের কোনো অবকাশ নেই।
.
আরেকটি বিষয় বর্তমানে প্রাকৃতিক পিউমিস পাথর ছাড়াও কনক্রিট বা কাঠ ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ায়
ফাপা বস্তু নির্মাণ করেও, জলে ভাস্যমান বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা যায়।ঠিক একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রামায়ণের সময়ও ভাস্যমান বস্তু নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে..?এর উওরও রামায়ণেই দেয়া আছে।রামসেতু নির্মাণে শুধুমাত্র পাথর নয়,ব্যবহার করা হয়েছে অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষ
এবং জড়িবুটি।সুতরাং পর্যাপ্ত প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়েই যে বাস্তব সম্মত ভাবে তৎকালীন সময় রামসেতুর নির্মাণ করা হয়েছিলো,
এই বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়।এটা বর্তমানে প্রমাণিত সত্য।
.
রামসেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া কতটা নিখুঁত এবং উন্নত ছিলো সেটা সেতুর নির্মাণ শৈলী দেখেও অনুমান করা যায়।নাসার সেটেলাইটে তুলা রামসেতুর ছবি যদি আপনি জুম করে দেখেন,তবে দেখতে পাবেন সেতুটি সম্পূর্ণ সরল আকৃতির নয়।মাঝে মাঝে আঁকাবাকা/বাক টাইপের ট্রান রয়েছে সেতুতে।এর কারন কি হতে পারে..?
এর কারন হল সেতুটি শুধুমাত্র সরল রেখা বরাবর হলে সমুদ্রের টেউয়ের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।কিন্তু মাঝে মাঝে বাকটাইপের থাকার ফলে সম্পূর্ণ সেতুতে একই সময় সমুদ্রের টেউ সমানভাবে আঘাত আনতে পারবে না।বুঝুন তাহলে সেই সময়ে কতটা নিখুঁত ছিলো তাদের ক্যালকুলেশন।
বর্তমানে বিভিন্ন স্থাপত্যের জয়েন্টের জন্য যেমন রড,সিমেন্ট,বালির ব্যবহার করা হয়।সেই সময়ও
ব্যবহার করা হতো অনেক ধরনের জড়িবুটির মিশ্রন।
কিন্তু তাদের এই উন্নত প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং পরিশ্রমকে এতকাল আমরা শুধুমাত্র অলৌকিকতার নাম দিয়ে চালিয়ে দিয়েছি,বাস্তবতা অনুধাবনে চেষ্টা খুব কম সংখ্যক ব্যাক্তিই হয়তো করেছেন।
আর সেই সুযোগে একদল আব্রাহামিক গোষ্ঠি।
নাসা কর্তৃক রামসেতুর সেটেলাইট ছবি প্রকাশের পর থেকে,রামসেতুকে আদম সেতুর ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা শুরু করলো।তাদের মতে আদম সৃষ্টি প্রথম মানব।আর তিনি উপর থেকে সোজা শ্রীলঙ্কায় পতিত হয়েছিলো এবং পরে একাই সমুদ্রে সেতু বানিয়ে অন্যপারে চলে আসে।

কিন্তু একজন ব্যাক্তির পক্ষে একা যে এত বৃহৎ সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়,সেটা বুঝার জন্য হয়তো খুব বেশি জ্ঞান বা পড়াশোনার প্রয়োজন হয় না।
যেখানে ৭০০০ বছর পূর্বেই রামায়ণে রামসেতু নির্মাণের বিস্তারিত তথ্য এবং নিখুত রুটম্যাপ বর্ণিত হয়েছে।আর বর্তমানে স্বয়ং নাসা যার সত্যতা প্রমাণ করেছে।সেই রামসেতুকে কোন প্রকার তথ্য প্রমান ছাড়া কাল্পনিক আদম সেতু বানানোর চেষ্টা মূর্খতা মাত্র।
সেই সাথে রামসেতু নির্মানের প্রকৌশল ট্রাম না জেনে,সব কিছু অলৌকিক বলে চালিয়ে দেওয়াও অজ্ঞতা মাত্র।এত মিথ আর ষড়যন্ত্রের মাঝে রামসেতু নির্মাণের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরাই ছিলো আমার আজকের পোস্টের উদ্দেশ্য।আশাকরি রামসেতু নির্মাণের বাস্তবিকতা নিয়ে কারও মনে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।রামসেতু শ্রীরাম এবং ইঞ্জিনিয়ার নলের নেতৃত্বেই যে তৈরী হয়েছিলো রামায়ণই তার প্রমান আর রামসেতুর বাস্তবিকতার প্রমাণ স্বয়ং নাসাই প্রদান করেছে।সুতরাং এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই।রামসেতু এখন প্রমাণিত সত্য মাত্র।আশাকরি কারও মনে আর কোন সংশয় নেই।আজকের মতো লিখা এখানেই সমাপ্ত করছি।পরবর্তীতে আবার লিখা হবে অন্যকোনো টপিক নিয়ে।সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ এবং সুরক্ষিত থাকুন।সকলের কল্যাণ হোক।