নারায়ণশিলা পূজন এবং সেই পূজার অধিকারী ব্যক্তি কারা?? ❝স্ত্রীণামনুপনীতানাং শূদ্রাণাঞ্চ মহীশ্বর। স্পর্শনে নাধিকারোহস্তি বিষ্ণোর্ব্বা শঙ্করস্য চ।। শূদ্রো বানুপনীতো বা স্ত্রী বাপি পতিতোহপি বা। কেশবং বা শিবং বাপি স্পৃষ্ট্বা নরকমাপ্নুয়াৎ।।❞ —(বৃহন্নারদীয় পুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— স্ত্রী, শূদ্র এবং অনুপবীতের শালগ্রামশিলা এবং ব্রাহ্মণ প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ স্পর্শ করিবার অধিকার নেই, স্পর্শ করিলে পতিতপূর্ব্বক নরকগামী হইতে হবে। ❝স্ত্রীশূদ্রপতিতানাঞ্চ ষন্ডানাঞ্চ বিকর্ম্মণাম্। নৈবাধিকারে। বিজ্ঞেয়ঃ শালগ্রাম শিলার্চ্চনে।❞ বাংলা অনুবাদঃ— স্ত্রী, শূদ্র, পতিত, পাষন্ড এবং বিকর্ম্মীদের শালগ্রামশিলার্চ্চনে কোনপ্রকার অধিকার নেই। ❝স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শে বজ্রস্পর্শাধিকো মতঃ।। মোহাদ্ যঃ সংস্পৃশেচ্ছূদ্রো যোষিদবাপি কদাচন শয়তে নরকে ঘোরে যাবদাভূতসংপ্লবম্।।❞ —(বরাহপুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— বরাহদেব নিজ মুখে বলছেন— স্ত্রীলোক এবং শূদ্র জাতির করস্পর্শ বজ্রের স্পর্শাপেক্ষার অধিক হয়। মোহের বশবর্তী হয়ে যদি কোন শূদ্র বা নারী শালগ্রামশিলা স্পর্শ করে থাকেন তাহলে প্রলয়কাল পর্যন্ত তাহাকে নরকযাপন করতে হবে। ❝ন জাতু বৈ স্ত্রিয়া কার্য্যং শালগ্রামস্য পূজনম্। ভর্ত্তৃহীনাথ সুভগা স্বর্গলোকহিতৈষণী।। মোহাৎ স্পৃষ্ট্বাত মহিলা জন্মশীলগুণান্বিতা। হিত্বা পুণ্যসমূহন্তু সত্বরং নরকং ব্রজেৎ।। স্ত্রীপাণিমুক্তপুষ্পাণি শালগ্রামশিলোপরি। সর্ব্বাভ্যধিকপাপানি বদন্তি ব্রাহ্মণোত্তমাঃ।। চন্দনং বিষপঙ্কাভং কুঙ্কুমং বজ্রসন্নিভম্। নৈবেদ্যং কালকূটাভং ভবেদ্ভগবতঃ কৃতম্।। তস্মাৎসর্ব্বাত্মনা ত্যাজ্যঃ স্ত্রিয়া স্পর্শঃ শিলোপরি। কুর্ব্বতী যাতি নরকং যাবদিন্দ্রাশ্চতুর্দ্দশ।।❞ —(পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড)— বাংলা অনুবাদঃ— পরলোকশুভাভিলাষিণী স্বামীসৌভাগ্য-শালিনী বা ভর্ত্তৃহীনা নারী কখনোই শালগ্রামশিলার পূজা করিবেন না। সৎকূলজাতা সর্ব্বসদ্ গুণাসম্পন্না নারী মোহবশতঃ শালগ্রাম স্পর্শ করিলে পূর্ব্বকৃত পূণ্যরাশি হারাইয়া সত্বর নরকগামিনী হইবেন। শালগ্রাম শিলার উপর নারীহস্ত মুক্ত পুষ্পই সর্ব্বপেক্ষা অধিকতর পাপজনক। স্ত্রী হস্তক্ষিপ্ত চন্দন বিষপঙ্কবৎ, কুমকুম বজ্র সদৃশ এবং নৈবেদ্য কালকূটবৎ কথিত হইয়া থাকে। তজ্জন্য স্ত্রীগণের শালগ্রাম স্পর্শ সর্ব্বদা অবিহিত। নিষেধবিধি অতিক্রম করিয়া কোন নারী শালগ্রাম স্পর্শাদি করিলে নিশ্চয়ই চতুর্দ্দশ- ইন্দ্রাধিকার ব্যাপককালে নরক বাস করিবে। ❝ব্রাহ্মণস্যৈব পূজ্যোহহং শুচেরপ্যশুচেরপি। স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শো বজ্রপাতোধিকো মম।।❞ —(লিঙ্গ পুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— স্বয়ং ভগবান বলিতেছেন- কেবলমাত্র ব্রাহ্মণই শুচি কিনবা অশুচি অবস্থায় আমার পূজা করিতে পারে। স্ত্রী এবং শূদ্রের স্পর্শ আমার নিকট বজ্রপাতের চেয়েও অধিক পীড়াদায়ক। ❝বিপ্র-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যানাং শালগ্রামশিলার্চ্চনে। অধিকারো ন শূদ্রানাং হরেরেবার্চ্চনে তথা।।❞ —(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড)— বাংলা অনুবাদঃ— বিপ্র ক্ষত্রিয় বৈশ্যর শালগ্রামশিলার্চ্চনে অধিকার আছে কিন্তু শূদ্রের তাহাতে নেই। ❝বৃহৎ তন্ত্রসার❞ নামক কালজয়ী পুস্তকে উল্লেখ — ❝প্রণবোচ্চারণাৎ হোমাৎ শালগ্রামশিলার্চ্চনাৎ। ব্রাহ্মণীগমনাচ্চৈব শূদ্রশ্চান্ডালতাং ব্রজেৎ।।❞ বাংলা অনুবাদঃ— প্রণব উচ্চারণ, যজ্ঞ এবং শালগ্রামশিলা স্পর্শ এবং ব্রাহ্মণী বিবাহ করলে শূদ্র চন্ডালে পরিণত হয়। বৃহৎ তন্ত্রসারে সুস্পষ্টরূপে — ❝স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শো বজ্রপাতো মমোপরি ইতি ভগদ্বচনাৎ।❞ সুতরাং স্ত্রী-শূদ্রের হাতের ছোঁয়া স্বয়ং ভগবানের মস্তকে বাজ পরার সমান। ইহা কোন মনুষ্যকল্পিত বচন নয়; ইহা স্বয়ং বিরাট পুরুষ নারায়ণের উক্তি। অতএব কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ যখন এই ভগবদুক্তি বিষয়ে নিশ্চিত তখন অযথা সন্দেহ প্রকাশ করিবার কোন অবকাশ নেই। ❝যদি ভক্তির্ভবেত্তস্য স্ত্রীণাং বাপি বসুন্ধরে। দূরাদেবাস্পৃশন্ পুজাং কারয়েৎ সুসমাহিতঃ।। চরণামৃতপানেন সর্ব্বপাপক্ষয় ভবেৎ।❞ —(বরাহপুরাণ)— অস্যার্থ এই যে, যদি শূদ্র কিনবা নারী দূর হইতে স্পর্শ না করিয়া ভক্তি যোগে অনন্য মনে পূজা করে তবে সে বিষ্ণুর চরণামৃত পানে সকল পাপ হইতে মুক্ত হয়। পূর্ব্বোক্ত শ্লোকগুলি পর্যালোচনা করলে সহজেই প্রতীতি হয় স্ত্রী (উচ্চকোটি স্তরের হলেও) এবং শূদ্রের শালগ্রাম স্পর্শ তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। স্বয়ং ভগবানের বচন দ্বারা তাহাই অনুমিত হয়। তাহারা স্পর্শ না করে পূজা করানোর অধিকারী। যথা পদ্মপুরাণে— ❝দীক্ষাযুক্তৈস্তথা শূদ্রৈর্মদ্যপানবিবর্জ্জিতৈঃ। কর্ত্তব্যং ব্রাহ্মণদ্বারা শালগ্রামশিলার্চ্চনম্।।❞ অতএব নিঃসংকোচে প্রতিষ্ঠিত হয় নারীদের এবং শূদ্রগণের শিলাচক্রের স্পর্শনীয়পূজাধিকার নেই।