মা লক্ষ্মীর ব্রতঃ
লক্ষ্মীদেবীর ধ্যানঃ
পাশাক্ষমালিকান্তোজ-সৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্। রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদং দক্ষিণেনতু।। পূজামন্ত্র-শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্ত্বদর্চ্চনাৎ।
প্রণাম মন্ত্রঃ
বিশ্বরূপস্য ভার্ষাসি পদ্মে পদ্মলয়ে শুভে।
সর্ব্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে।।
স্তবঃ
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবি কমলে বিষ্ণবল্লভে।
যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতির্হরিপ্রিয়া।
পদ্মপদ্মলয়া সম্পদ্ সৃষ্টি শ্রীঃ পদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সংপূজ্য যঃ পঠেৎ।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেস্তস্য পুত্রদারদিভিঃ সহ।।
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ।
ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস ।।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
করিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন ||
সেইকালে বীণা হস্তে নারদ মুনিবর।
লক্ষ্মী নারায়ণে নমি কহিল বিস্তর।
ঋষি বলে মাগাে তব কেমন বিচার।
সর্বদা চঞ্চলা হয়ে ফির দ্বারে দ্বার ৷
মর্ত্যবাসী সদা তাই ভুগিছে দুর্গতি।
ক্ষণেকের তরে তব নাহি কোথা স্থিতি।
প্রতিদিন অন্নভাবে সবে দুঃখ পায়।
প্রতি গৃহে অনশন জীর্ণ-শীর্ণকায় ॥
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।।
সঘনে নিঃশ্বাস ত্যজি কহে মৃদুবাণী ।।
বৃহস্পতিবারে মিলি যত এয়ােগণে।
বাড়িবে ঐশ্বৰ্য্য তাহে তােমার কৃপায়।
দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে তােমার দয়ায় ॥
শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে।
মর্তে চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে।
অবন্তী নগ,রে লক্ষ্মী হ’ল উপনীত।
দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।
নগরের লক্ষপতি ধনেশ্বর রায়।
অগাধ ঐশ্বৰ্য্য তার কুবেরের প্রায়।
সােনার সংসার তার শূন্য হিংসা দ্বেষ ।
প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষে ॥
যথাকালে সসম্মানে গেল লােকান্তর ।।
কভুনা কাহার প্রতি আমি করি রােষ।
পিতার মৃত্যুর পর সপ্ত সহােদর।
হইল পৃথক অন্ন সপ্ত সহােদর ||
নরনারী দুঃখ পায় নিজ কর্মদোষ ॥
যাও তুমি ঋষির ত্রিলােক ভ্রমণে।
ইহার বিধান আমি করিব যতনে ॥
অতঃপর চিন্তি লক্ষ্মী নারায়ণে কয়।।
কিরূপে হরিব দুঃখ কই দয়াময় ।
হরি কহে শুন সতী বচন আমার।
মর্ত্যধামে লক্ষ্মী ব্রত করহ প্রচার ।।।
বৃহস্পতিবারে মিলি যত এয়ােগণে।
সন্ধ্যাবেলা পূজার কথা শুনি ভক্তিমনে।
বাড়িবে ঐশ্বর্যা তাহে তােমার কৃপায়।।
দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে তােমার দয়ায় ||
শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে।
মর্তে চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে ॥
অবন্তী নগরে লক্ষ্মী হ’ল উপনীত।
দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।
নগরের লক্ষপতি ধনেশ্বর রায়।
অগাধ ঐশ্বর্য তার কুবেরের প্রায়।
সােনার সংসার তার শূন্য হিংসা দ্বেষ।
প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষে ৷
এক অন্নে সাত পুত্র রাখি ধনেশ্বর।
যথাকালে সসম্মানে গেল লােকান্তর ||
পিতার মৃত্যুর পর সপ্ত সহােদর।
হইল পৃথক অন্ন সপ্ত সহােদর ।
ক্রমে ক্রমে লক্ষ্মীদেবী ছাড়িল সবারে।
সােনার সংসার সব গেল ছারখারে।
বৃদ্ধা ধনেশ্বর পত্নী না পারি তিষ্ঠিতে।
গহণ কাননে যায় জীবন ত্যজিতে।
হেনকালে ছদ্মবেশে দেবী নারায়ণী।
বন মাঝে উপনীত হলেন আপনি।
মধুর বচনে দেবী জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে।
কিজন্য এসেছ তুমি গহণ কান্তারে ।
কাঁদিতে কাদিতে বৃদ্ধা অতি দুঃখভরে।
তাহার ভাগ্যের কথা বলিল লক্ষ্মীরে।
সহিতে না পারি আর সংসার যাতনা।
ব্রতকথা শুনি তার ভক্তি উপজিল।
ত্যজিব জীবন আমি করেছি বাসনা ।
লক্ষ্মীদেবী বলে শুন আমার বচন।
মহাপাপ আত্মহত্যা নরকে গমন।
আমি বলি সাধবী তুমি কর লক্ষ্মীব্রত।
দুঃখ রবি অস্ত যাবে হবে পূবমত।
মনেতে লক্ষ্মীর মূর্তি করিয়া চিন্তন।
একমনে ব্রতকথা করিবে শ্রবণ ।
ঘরে গিয়ে এয়াে লয়ে কর লক্ষ্মীব্রত।
যেই গৃহে লক্ষ্মীব্রত গুরুবারে হয়।
বাঁধা থকে লক্ষ্মী তথা জানিও নিশ্চয় ।
বলিতে বলিতে দেবী নিজ মূর্তি ধরি।
দরশন দিল তারে লক্ষ্মী কৃপা করি ।
মূর্তি হেরি বৃদ্ধা তারে প্রণাম করিল।
আনন্দিত হয়ে বৃদ্ধা গৃহেতে ফিরিল ৷
গৃহেতে ফিরিয়া বৃদ্ধা করিল বর্ণন।
যেরূপে ঘটিল তার দেবী দরশন।
ব্রতের বিধান সব বধূদের বলে ।
শুনি বধুগণ ব্রত করে কৌতূহলে ॥
বধূগণ লয়ে বৃদ্ধা করে লক্ষ্মীব্রত।
হিংসা দ্বেষ-স্বার্থ ভাব হৈল তিরােহিত।
মালক্ষ্মী করিল তথা পুনরাগমন।
অচিরে হইল গৃহ শান্তি নিকেতন।
দৈবযােগে একদিন বৃদ্ধার আলয়ে।
উপনীত এক নারী ব্রতের সময়ে ||
ব্রতকথা শুনি তার ভক্তি উপজিল ।
লক্ষ্মীব্রত করিবারে মানস করিল ৷
স্বামী তার চিররুগ্ন অক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি যাহা পায় খায় দুইজনে।
এই কথা চিন্তি নারী করিছে কামনা।
নিরােগ স্বামীরে কর চরণে বাসনা ॥
ঘরে গিয়ে এয়ো লয়ে করো লক্ষ্মীব্রত ।
ভক্তিসহ সাধবী নারী পুজে বিধিমত ৷৷
দেবীর কৃপায় তার দুঃখ হলাে দূর।
পতি হলাে সুস্থ দেহ ঐশ্বৰ্য্য প্রচুর ॥
কালক্রমে শুভদিনে জন্মিল তনয়।
সংসার হইল তার সুখের আলয় ।
দয়াময়ী লক্ষ্মীমাতা সদয় হইল।
রূপবান পুত্র এক তাহার জন্মিল ||
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করে ঘরে ঘরে।
প্রচারিত হলো ক্রমে অবন্তী নগরে।।
শুন শুন এয়ােগণ এক অপূর্ব ব্যাপার
ব্রতের মাহাত্ম হ’ল যে ভাবে প্রচার ।
অবন্তী নগরে এক গৃহস্থ ভবনে।
এয়ােগণ লক্ষ্মীব্রত করে একমনে ||
সহসা সেখানে এলাে বণিক তনয়।
উপনীত হলাে তথা ব্রতের সময় ।
ধনরত্ন আদি করি ভাই পঞ্চজন।
পরস্পর অনুগত রয় সবর্জন ।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়।
বলে একি ব্রত, ইথে কিবা ফলােদায় ॥
সদাগর বাক্য শুনি বলে বামাগণ।
করি লক্ষ্মীব্রত যাতে কামনা পূরণ ॥
পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে |
এই ব্রত যে করিবে ধনে জনে তার।
লক্ষ্মী বরে হবে তার সােনার সংসার
শুনি তাহা সদাগর বলে অহঙ্কারে
যে জন অভাবে থাকে সে পূজে উহারে ॥
সাধুর সংসার হলাে পূর্বের মতন।
ধনৈশ্বৰ্য ভােগ আদি যা কিছু সম্ভবে।
সবই তাে আমার আছে আর কিবা হবে৷৷
ভাগ্যে না থাকিলে লক্ষ্মী কিবা দিবে ধন।
হেন কথা কভু আমি না শুনি কখন।
অহঙ্কার বাক্য লক্ষ্মী সহিতে না পারে।
গর্বের কারণে লক্ষ্মী ছাড়িল তাহারে ||
অহঙ্কার বাক্য লক্ষ্মী সহিতে না পারে
গর্বের কারণে লক্ষ্মী ছাড়িল তাহারে ॥
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।
নানা রত্ন পূর্ণ তরী বাণিজ্যেতে গেলা।।
দৈবযােগে লক্ষ্মী কোপে সহ ধনজন।
সপ্ততরী জলমধ্যে হইল নিমগন ।
গৃহমধ্যে ধনৈশ্বর্য যা ছিল তাহার।
বজ্রাঘাতে দগ্ধ হয়ে হলাে ছারখার।
দূরে গেল ভ্রাতৃভাব হলাে ভিন্ন অন্ন।
সােনার সংসারে তার সকলে বিপন্ন।
ভিক্ষাজীবী হায়ে সবে ফিরে ঘরে ঘরে।
পেটের জ্বালায় ঘােরে দেশ দেশান্তরে।
এরূপ হইল কেন বুঝিতে পারিল।।
কেঁদে কেঁদে লক্ষ্মীস্তব করিতে লাগিল৷৷
সদয়া হইল লক্ষ্মী তাহার উপরে।
পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে ।
মনে মনে মা লক্ষ্মীরে করিয়া প্রণাম
ব্রতের সংকল্প করি আসে নিজ ধাম॥
লক্ষ্মীব্রত করে সাধু লয়ে বধুগণ।।
সাধুর সংসার হলাে পূর্বের মতন |
এইভাবে লক্ষ্মীব্রত মর্ত্যেতে প্রচার।
সদা মনে রেখাে সবে লক্ষ্মীব্রত সার।
এই ব্রত যেই নারী করে একমনে।।
লক্ষ্মীর কৃপায় সেই বাড়ে ধনে জনে ।
যােড় করি হাত ভক্তি যুক্ত মনে।
করহ প্রণাম এবে যে থাক যেখানে।
ব্রতকথা যেবা পড়ে যেবা রাখে ঘরে ।
লক্ষ্মীর কৃপায় তার মনােবাঞ্ছা পুরে ॥
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড় মধুময়।
প্রণাম করিয়া যাও যে যার আলয় ।
লক্ষ্মী ব্রতকথা হেথা হৈল সমাপন।
মনের আনন্দে বল লক্ষ্মীনারায়ণ।
OR
মা লক্ষ্মীর পাঁচালী........................................
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ।ধীরে ধীরে বইতেছে মলয় বাতাস ।।বৈকুন্ঠেতে একাসনে লক্ষ্মী নারায়ন ।করিতেছে কত কথাসুখে আলাপন।।সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব কত কথাহয় ।শুনিয়া পুলকিতহয় দেবীর হৃদয়।।অকস্মাৎ দেবর্ষি নারায়ন স্বরে ।আসিলেন ভক্তি চিত্তে বৈকুন্ঠ নগরে ।।প্রনাম করি দেবর্ষি বলেন বচন ।মর্ত্যে দুর্ভিক্ষ মাগো কিভীষন ।। ঋষিবলে মাতুমি চঞ্চলা মন । সর্বদা ঘোরোভবনহতে ভবন ।।
তাইমর্ত্যবাসী কষ্টকত পায় । দেখি তাহা কেমনে মমপ্রানে সয় ।। অন্নাভাবে লোকে কতকষ্ট ভোগে । মরিতেছে অনাহারেকৃশকায়রোগে ।। ধর্মাধর্ম লোকে সবেত্যাগ করিদেয় । স্ত্রী কন্যাবিক্রিকরে ক্ষুধার জ্বালায় ।।দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন।দয়াকরে মাগো তুমি করো নিবারন ।।এই দুর্দশা দেখি প্রানে নাহি সয় ।করো নিবারন মাগো হইয়াসদয় ।।নারদের বাক্য শুনি কহেন হরিপ্রিয়া।বিশ্বমাতাআমিদেবী বিষ্ণুজায়া ।। যেযেমন করে সে তেমন পায় । সে দোষেকর্মফল, করে হায়হায়।। মহামায়ারস্বরূপে নারী সত্যবচন । মর্ত্যবাসীনা মানে এই কথন।। সদাচার কুলশীলদিয়া বিসর্জন । ঘরের লক্ষ্মীকেকরে সদা বর্জন ।। এমনমনুষ্যজাতিমহাপাপ করে । কর্ম দোষেলক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।। নারীর পরমগতিস্বামী ভিন্ন কেবা । ভুলেও নাকরে নারী পতিপদসেবা ।।যথায়স্বেচ্ছায়ঘুরিয়া বেড়ায় ।গুরুজনে নানা কটুবাক্য শোনায় ।।সর্বদা হিংসা করে নামানে আচার ।হিংসাতেতারমজে সংসার ।। ছড়ানাহিদেয়, প্রভাতকালে । লক্ষ্মী সে স্থানছাড়িয়া চলে ।। অতিথি যদিউপস্থিতহয় দ্বারে । দূর দূর করি তারায়তাহাড়ে ।। যেবা গুরু, ব্রাহ্মণ দেখিভক্তি নাহি করে।মম নিবাস কভু নহে সেই ঘরে ।।এঁয়োতির চিহ্ন সিঁদুর শাখা নাদেয় ।বাসী কাপড়ে যথাতথাবেড়ায় ।। স্নাননিত্য নাহি করে যে মনুষ্য গণ ।ত্যাজিয়া তাহারে, করি অন্যত্র গমন।।তিথি ভেদে যেবা নিষিদ্ধদ্রব্য খায়।হই না কভুতারওপর সহায়।।যে মনুষ্য ভক্তিভাবে একদশী না করে ।কদাপি নাহি থাকি তাহার ঘরে ।।উচ্চহাসিহাসিয়াযে নারী ঘোরে ।গুরুজন দেখি ঘোমটা না টানে ।।বয়োজ্যেষ্ঠ দেখি যারা প্রনামনাকরে ।সন্ধ্যাকালে ধূপ দীপনাহি দেয় ঘরে ।।ঠাকুর দেবতা আদিকভু নাপূজে । সাধুসন্ন্যাসী দেখি হাসাহাসি করে ।।এমন নারী যে গৃহেতে বসতি রয় ।লক্ষ্মী ত্যাজে তাহাকে জানিবেনিশ্চয় ।।এত বলি লক্ষ্মী দেবী বলেন মুনিকে ।কর্মদোষে মনুষ্য নিজফল ভোগে ।। ঋষিবলে মাগো তুমিজগতজননী । সন্তান কেকরো ক্ষমা হে সনাতনী ।। দূর করিদাওমাভীষন মহামার । বর দিয়েজীবেরে করহ নিস্তার ।। এইবলিবিদায় হইলেন মহামুনি । চিন্তিতহইয়াকহেন নারায়নী ।। কহ কহকৃপাময়প্রভু নারায়ন । কিরূপে নিস্কৃতিপাইবে জীবগণ।। লক্ষ্মীদেবীর কথাশুনি কহেন জনার্দন ।শুনদেবী মন দিয়া আমারবচন ।। তুমিযে পরমা প্রকৃতি দেবী ভগবতী ।তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাসৃষ্টি ।।যে জন গুরুবারে লক্ষ্মী ব্রত করে ।সুখে জীবন কাটাইবে তোমার বরে ।।লক্ষ্মী কভু নাহি ছাড়িবেতাহারে ।জীবনান্তে আসিবে সে বৈকুন্ঠ নগরে ।।মর্ত্যে গিয়া কর এই ব্রত প্রচার ।তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাচার ।।গমন করেন দেবী শুনি হরিরকথা ।পেঁচকে মর্ত্যে আইলেন জগতমাতা ।।অবন্তী নামক নগরী পাশে এক বন ।তথা আসি মাকমলাউপস্থিত হন ।।হেথায় ছিল ব্যবসায়ীধনেশ্বর রায়।অগাধধন, চৌদ্দকূল বসি খায় ।। পত্নীসুমতি ছিলসাতকুমার। সংসারছিলতারলক্ষ্মীর ভান্ডার।। যথাকালেধনেশ্বর করিলগমন । বিধবা হইলোপত্নী- ভাগ্যের লিখন ।। সর্বদা কলহকরে সপ্ত বধূ গণ । মারমার কাটকাটহইত সর্বক্ষণ ।। সংসার রচিলযেযারমতো যার। সুখের পরিবার হইলছারখার ।। এই দুঃখে ধনেশ্বর পত্নীভীষন শোকে । বনে গমন করিল জীবনত্যাজিতে ।। সেই বনে বৃদ্ধা বসি করেহায়হায়। এই বুঝিলেখা ছিলবিধাতারখাতায় ।। এই দেখি হরিপ্রিয়াবৃদ্ধারূপধরে । ছদ্দবেশে দেখা দিলেনধনেশ্বর ভার্যারে ।।দেবী কহেন কে তুমি দাহ পরিচয়।কোথা হতে আসিলে বলোহ আমায়।। স্থানবড় ভয়ানক নির্জন বন । হেথা হোথানানা জন্তু করে বিচরণ । বুড়িবলেমাগো পোড়া কপালআমার। ভয় আমিকরিনাআর মরিবার ।। এত বলি বৃদ্ধাসবকথাকন । শুনিয়া দুঃখিত হইলোকমলারমন ।। বৃদ্ধা প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়াকহেন বচন । আত্মহত্যা মহাপাপশাস্ত্রের লিখন।। যাওতুমি গৃহে ফিরিকরো লক্ষ্মী ব্রত । অবশ্যই আসিবে সুখপূর্বের মতো ।। গুরুবারে সন্ধ্যাকালেমিলি এঁয়োগন । ব্রতের সকল কিছুকরিবে আয়োজন ।। আসন পাতি তাহেলক্ষ্মী মূর্তি বসাইবে ।আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট সাজিবে ।।বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবদ্য সকল ।দিবে কলা,শর্করা আতপ তণ্ডুল ।।একটিকরে মুদ্রা রাখিবে লক্ষ্মী ঘটে।একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী ভাঁড়ে।।আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর তৈলেগোলা।চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে দিবেআলিপনা ।।ধূপ দীপজালি সম্মুখে রাখিবে । আসনপাতি লক্ষ্মী পূজায়বসিবে ।। একমনেপূজাদিবে লক্ষ্মী নারায়ন । পূজাশেষেব্রত কথাকরিবে পাঠন।। নাকরিয়োপূজায়ঘণ্টা বাদন । পূজান্তে উলু দিবেমিলি এঁয়োগন ।। এই ভাবে যেই জনলক্ ক্ষ্মী ব্রত করে । কোন দুঃখ তারআরনাহি রহিবে ।। শুনিয়া বৃদ্ধাকহিলআনন্দিত মনে । কে মা তুমি কহোপরিচয়দানে ।। এই শুনি লক্ষ্মী দেবীস্ব মূর্তি ধরে । ভক্তি চিত্তে বৃদ্ধাকাঁদে ভূমি ওপরপড়ে ।।লক্ষ্মী বলে যাহতুমি নিজের ভবন ।গুরুবারে আমাকে পূজিবে নিয়মমতোন ।।এত বলি বিদায় লইল সাগর নন্দিনী( মালক্ষ্মী সাগররাজার কন্যা ) ।ঘরে ফিরি আসিলধনেশ্বর পত্নী ।। বধূগনে কহিললক্ষ্মীর ব্রতের কথন ।গুরুবারে লক্ষ্মী ভজে সপ্ত বধূ গণ ।।ধীরে ধীরে হইল সুখের ভবন । যেমনআছিলঘর পূর্বের মতোন ।। সপ্ত ভাইমিলে মিশে কলহ বিসর্জন । সংসারহইলো যেন স্বর্গের দেবভবন ।। এইদেখি এক রমণী পূজামানতকরে ।স্বামী চিররোগী, উপার্জন হীনসংসারে।।ভক্তি ভরে সেই নারী লক্ষ্মী দেবীভজে । হরিপ্রিয়ারকৃপায়তাহার দুঃখসকল ঘোচে ।।রোগ ছাড়ি তারস্বামী সুস্থ হইল। এইভাবে সকল দুঃখ তারঘুচিল।। আনন্দেদিনে জন্মিল তাঁহাদের সুন্দর নন্দন ।লক্ষ্মীর কৃপায়তারবাড়িলধন জন ।। এইভাবে লক্ষ্মী ব্রত ছড়ায় দেশদেশান্তরে ।সকলে শুনি লক্ষ্মী দেবীর পূজাকরে ।।লক্ষ্মী কৃপায় সকলের দুঃখ চলি যায় ।কমলারকৃপাসকলের ওপর বর্ষায় ।।একদিন লক্ষ্মী পূজাকরে বামাগন ।আসিলএক বনিক তাঁহাদের সদন ।। বনিককহে কোন দেবী কি পরিচয় । করিলেপূজা দেবীর, কি ফলহয় ।। বামারা বলেইনিলক্ষ্মী দেবী জগত জননী।লক্ষ্মী কৃপায় সুখে রহে ব্রতিনী ।।গুরুবারে যে জন লক্ষ্মী পূজা করে ।অবশ্যই থাকিবে সুখে কমলারবরে ।। এইবাক্য শুনে হাসে বনিক মহাশয়।মানিনা এই সত্য তব কথায় ।। কপালেযদিনাথাকে ধনের লিখন। কিরূপেদিবে লক্ষ্মী বর- ধন- জন ।।শুধুশুধুলক্ষ্মীপূজা করি কি হয়।বৃথাকাটাইতেছো কমলাপূজায়।। গর্বেভরাবাক্য লক্ষ্মী সইতে নারে । ধীরেধীরে মাকমলাছাড়িল তাহারে।। ঝড়উঠিতারনৌকা জলে ডোবে । ধন জনআদিগেলো নানা রোগে ভোগে ।। মড়কেরোগে তারগৃহ হইল ছারখার । ভিখারীহইয়া বনিকঘোরে দ্বারে দ্বার ।।এককালে সে থাকিত রাজার হালে । আজসে ভিখারী, পথে কষ্টে চলে ।। এইভাবে বহু দেশ ঘোরে সদাগর । একদিনআইলো সে অবন্তী নগর ।। সেই স্থানেব্রত করে যতেক বামাগনে ।বসি তারা মন দেয় লক্ষ্মীর ভজনে ।।এই দেখি পূর্ব কথাহইলো স্মরণ । এইস্থানে দেবীরে করিছে অবমানন ।।সেই পাপে সব ধ্বংসহইলো তার।ভূমিতে লোটাইয়ে সদাগর কান্দেবারবার ।।এই স্থানে করেছি মাগো বহু অহঙ্কার ।সেই পাপে সব কিছু হইলো ছারখার ।।ধন গর্বে মত্ত হয়ে করিনুঅবহেলা ।সেই অপরাধে মাতুমিমোরে ত্যাজিলা।।ক্ষুধার জ্বালায় মাগো ঘুরিদেশদেশান্তরে ।ধন- জন- আত্মীয় গেলা আমাকে ছেড়ে ।।তুমি মাতা দয়াময়ী বিষ্ণু বক্ষবিলাসিনী ।তুমি মাতা ভগবতী জগতপালিনী ।। তুমিযারে রক্ষা করো কিসের তারভয় । তুমিযারে ত্যাজিযাও,সে সব হারায় ।।তুমি যারে কৃপাকর, সেই ধন্য হয় ।তোমার আশিসে মাগো সর্ব সিদ্ধিহয় ।।এই ভাবে সদাগর লক্ষ্মী স্তব করে ।কমলারকৃপাদৃষ্টিবনিকের উপর পড়ে ।।লক্ষ্মীর কৃপায়বনিক সব ফিরি পায়।গৃহে ফিরি মন দেয় লক্ষ্মীর পূজায় ।।লক্ষ্মীর কৃপায়তাহার ধন জন বাড়ে ।এই ভাবে ব্রত প্রচার হয় দেশদেশান্তরে ।এই ভাবে সকলে লক্ষ্মী পূজাকরে । ধনেজনে বাড়িল কমলারবরে ।। খাদ্য ধনজন বাড়িল লক্ষ্মীর কৃপায়। হরিহরিবলতুলিয়া হস্ত দ্বয় ।। যেই জন ভক্তিভরিলক্ষ্মী পূজিবে । অবশ্যই তাহারদুঃখ সকল ঘুচিবে ।। যে পড়ে ব্রতকথা,আর যেবা করে শ্রবন ।অবশ্যই পাইবে সে মালক্ষ্মীর চরণ ।।ব্রত কথা শুনিবে অবশ্যই ভক্তি মনে ।লক্ষ্মীর কৃপায়বাড়িবে ধনে জনে ।। জয়জয় ব্রহ্মময়ী, মানারায়নী । তোমারকৃপায় শেষ করিনুগ্রন্থ খানি ।