হরিতকী পূজায় লাগে কেন? আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত পূজা অর্চনার ক্ষেত্রে যে ফলটির নীরব উপস্থিতি সকলের চোখে পড়ে তা হল হরিতকী। শুধু সমস্ত দেবদেবীর পূজা অর্চনার ক্ষেত্রেই নয়, বিবাহাদি, তর্পণ, শ্রাদ্ধে, শ্রীশ্রীচণ্ডীপূজায় এবং অনান্য শুভ ও মাঙ্গলিক কর্মে তিল, হরিতকীর সাহায্য বিনা ক্রিয়াটি যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা হরিতকীকে প্রায় সমস্ত কর্মের ‘মঙ্গলের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয় হরিতকী ফলকে শাস্ত্রকারেরা স্বর্ণমুদ্রার সমান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে গুরু দীক্ষার দক্ষিণাস্বরূপ একটি হরিতকী দেওয়ার প্রচলন চলে আসছে। এক্ষেত্রে অবশ্য শিষ্যের অর্থের অভাব বা অন্য কোন কারণ লক্ষ্যণীয়। হরিতকীর মতো পবিত্র ফল আর নাই। একমাত্র রুদ্রাক্ষের সঙ্গেই হরিতকীর কিছুটা তুলনা করা যেতে পারে। তবে হরিতকীতো শুধুই ‘মঙ্গলের প্রতীক’ নয় - এর নানা গুণাগুণের কথাও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে লেখা আছে। এটি হল বৈদিকযুগের শ্রেষ্ঠফল। হরিতকী স্বভাবগুনে মানুষকে শান্ত, সংযম ও পবিত্র মনোবৃত্তি গঠন করতে সহায়তা করে। এইজন্য হরিতকীর গুণের কথা বলতে গিয়ে শাস্ত্রকারেররা বলেছেন যে, ‘কদাচিৎ কূপ্যততিমাতা নেদারস্থা হরিতকী’ কিনা স্নেহশীলা মাতাও কখনও কখনও ক্রোধান্বিতা হয়ে পড়েন, কিন্তু হরিতকী কখনোই তা হয় না। তা দেহ ও মনকে সর্বদা সুখ প্রদান করে মানুষকে শুভকর্মে নিয়োজিত রাখে। ‘হরিতকী’ ফলটির নামকরনে লক্ষ্য করা যায় যে, এতে ভগবান বিষ্ণুর প্রভাব রয়েছে। এখানে ‘হরি’ শব্দ দ্বারা নারায়ণ / বিষ্ণুকে বোঝায়। আর ‘তকী’ অর্থে “ফল” হতে পারে। কাজেই হরিতকী হল হরির বা নারায়ণের প্রিয় ফল যেমন রুদ্রাক্ষকে শিবের অতি প্রিয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হরিতকী ফলকে নানা নামেও ডাকা হয়ে থাকে। যেমন অভয়া, পথ্যা, কায়স্থা, বয়স্থা, প্রাণদা, অমৃতা, পুতানা প্রভৃতি। আচার্য মহীধর হরিতকীর নানা গুণাগুণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, কাঁচা হরিতকীর রস পান করতে হয়। এতে শরীরের ভোক্ত অন্ন শুদ্ধ হয় এবং সাত্ত্বিক মন গঠিত হয় যা মানুষকে দিব্যগুণ লাভ করতে সহায়তা করে। এখানেও দেখা যাচ্ছে যে, হরিতকী হল পবিত্রতার মূর্ত দ্রব্য। এটি সেবন করলে মানুষের বল, বীর্য, স্মৃতি ও কান্তি বৃদ্ধি পায় এবং মনে দেবভাব বর্তমান থাকে।
"ন তস্য প্রতিমা অস্তি" - এই মন্ত্র টি শুক্ল যজুর্বেদের ৩২ অধ্যায়ের ৩নং মন্ত্র , যা নিয়ে সনাতন বিরোধী তত্ত্ব প্রচার করে অসনাতনীরা সর্বদা মূর্তিপূজার নিন্দা করে। তাদের মত হল "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" এর অর্থ - সেই পরমপিতা পরমাত্মার কোনো প্রতিমা নেই। "প্রতিমা" শব্দের অর্থ বর্তমানে "প্রতিমা ই রেখে দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এই ম্লেচ্ছ অসনাতনীরা , আর সেসবের সুযোগ নিচ্ছে যবনরাও । মজার বিষয় হল এই অসনাতনীরা - বেদ শাস্ত্রের কোনো স্থানে "শিব" শব্দ দেখলেই সবক্ষেত্রেই তার অর্থ মঙ্গলময় বের করে, অর্থাৎ বিশেষ্য থেকে বিশেষণ বানিয়ে দেয়। কিন্তু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য উক্ত বেদ মন্ত্রের "প্রতিমা" শব্দের অর্থ "প্রতিমা" ই রেখে দিয়ে তার অর্থ মূর্তিবিশেষ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এরা, এক্ষেত্রে প্রতিমা শব্দের অর্থ আর বিশেষণ হিসেবে তুলে ধরে না তারা, এটাকে একপ্রকার যা ইচ্ছা তাই মানবো , যা ইচ্ছা তাই করবো অর্থাৎ স্বেচ্ছাচারিতা বলে। আজকে আমরা শৈব সনাতনীরা এই থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটির খ্রিষ্টানদের তার অনুসারী যবনদেরও শাস্ত্রসম্মতভাবে জবাব দেওয়া উচিত।। চলুন এবার দেখা যাক, এই "প্রতিমা" শব্দের দ্বারা এক্ষেত্রে কি অর্থ বলা হয়েছে ? বিশ্লেষণ পর্ব : "প্রতিমা" শব্দের অর্থ দুই ধরণের হয়। যথা - (১) মূর্তি/ভাস্কর্য/বিগ্রহ, (২) তুলনা, পরিমাণ, সমান, সাদৃশ্য। এবার পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যাক উপরোক্ত দুই রকমের অর্থের মধ্যে কোন অর্থটি উপরোক্ত বেদমন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (১) প্রতিমা শব্দের অর্থ যদি "মূর্তি" ধরা হয় তবে তার অর্থ এমন হবে - ‘তার মূর্তি নেই, যার নামে মহৎ যশ’ ***. বিবেচনা করে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, এই অর্থ উপরোক্ত মন্ত্রের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ ।মূর্তি কল্পনা করাই যদি যশস্বী ব্যক্তির যশের ক্ষতি করতো তাহলে পুরাতন মহাত্মাগণ, রাজা, মহারাজা, পণ্ডিত ব্যক্তিদের মূর্তি তৈরি হত না। সংসারে যারা যশস্বী ব্যক্তিরই মূর্তি তৈরী করে স্থাপিত হয়, কোনো হীন ব্যক্তির নয় । (২) প্রতিমা শব্দের অর্থ যদি "তুলনা বা উপমা" হয় তবে তার অর্থ এমন হবে - তার কোনো তুলনা বা উপমা নেই , যার নামে মহৎ যশ । “আপনার তুল্য আর কেউ নেই” - এই কথাটি এই কথাটি একজন যশস্বী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ? প্রতিমা শব্দের মধ্যে থাকা ‘মা’ ধাতুর প্রয়োগ মাপ করা অর্থেই প্রযোজ্য হয় সাধারণত। এখন উক্ত মন্ত্রের মহীধর ভাষ্য দেখা যাক ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশঃ ৷ হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষ যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ ॥(শুক্ল-যজুর্বেদ ৩২৷৩) ***.মহীধরভাষ্য : “তস্য” পুরুষস্য “প্রতিমা” প্রতিমানমুপমানং কি়ঞ্চিদ্বস্তু নাস্তি” অর্থাৎ মহীধর আচার্য এখানে বলছেন যে - সেই পুরুষের প্রতিমা বলতে - প্রতিমান উপমান হবে এমনটাই বুঝিয়েছেন, বিগ্রহ বা মূর্তি বোঝাননি ৷ পণ্ডিত জ্বালাপ্রসাদ জী আরো বলেছেন — “আধুনিক অল্পজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এই মন্ত্রের মধ্যে থাকা প্রতিমা অর্থ কে মূর্তি ধরে নিয়ে বলে যে, ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই আর মূর্তিপূজা উচিত নয় ৷” অতএব, এই যজুর্বেদীয় মন্ত্রের সঠিক অর্থ হল - সেই পরমাত্মার কোনো প্রতিমান( তার সমান, তার তুলনায় ) আর কেউ নেই। তার সমান কেউ নেই, তিনি অদ্বিতীয় - ন তস্য প্রতিমা অস্তি। "প্রতিমা" শব্দের অর্থ বর্তমানে "মূর্তি" মনে করা হয় কিন্তু প্রাচীন বেদের যুগে এবং কালে এর অর্থ ছিল "প্রতিমান"(বরাবর/সমান)। বেদের সঠিক অর্থ বিশ্লেষণের দাবী করা কিছু ব্যক্তি, যারা মূর্তিপূজা বিরোধী, এই শব্দের(প্রতিমা) আধুনিক অর্থ দিয়ে বলা শুরু করেছে যে পরমাত্মার কোনো মূর্তি নেই। অনেক অসনাতনীরা —এটাই দূ্ষ্প্রচার করে এসেছে। হিন্দিতে প্রশংসা করার জন্য একটি শব্দ আছে -"অপ্রতিম" তার অর্থ হল "অদ্বিতীয়" । বাক্যের সময় আমরা এভাবে ব্যবহার করি তেমন - অমুক ব্যক্তি " অপ্রতিম " সে " অপ্রতিম " গুণ ও কলাদ্বারা যুক্ত।এভাবে অপ্রতিম শব্দের বিপরীত "প্রতিম" হয় তার অর্থ সমান। এই অর্থেই "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" তে "প্রতিমা" এর অর্থ বরাবর বা সমান-ই হয়। এবার দেখুন..... অসনাতনীরা বাল্মীকি রামায়ণ নিয়ে খুব আহ্লাদ দেখায়, যদিও তারা সেই রামায়ণেরও বহু অংশকে প্রক্ষিপ্ত বলে চালায়, যখনই তাদের বুদ্ধি কাজ করে না বা তাদের মতের সাথে অমিল হয় তখনই সেই অংশটিকে তারা প্রক্ষিপ্ত বলে পিঠ বাঁচায়। সেই বাল্মীকি রামায়নে -এও অপ্রতিমা শব্দের প্রতিমা- এর অর্থ সাদৃশ্য নিয়ে বলা হয়েছে - "কীর্তিং চাঽপ্রতিমাং লোকে প্রাপস্যসে পুরূষষর্ভ "( বা, কা, - ৩৮/৭) সরলার্থ - তুমি এই লোকে অনুপম কীর্তি প্রাপ্ত করবে। (এখানে অপ্রতিম = অনুপম/অতুলনীয় অর্থে সুস্পষ্ট।) "রূপেণা প্রতিমাভুবি " (বা,ক, - ৩২/১৪) সরলার্থ - এই ভূ-তলে তার রূপ-সৌন্দর্যের কোনো তুলনা ছিল না। সাদৃশ্য অর্থে প্রতিমা শব্দ - "সা সুশীলা বপুঃশ্লাধ্যা রূপেণাপ্রতিমাভুবি" (বাল্মীকি রামায়ন/অরণ্যকাণ্ড -৩৪/২০ ) সরলার্থ - তার রূপের তুলনা করার মতো দ্বিতীয় কোনো স্ত্রী ভূ-মণ্ডলে নেই। সুতরাং, যদি "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" এর ইতিবাচক বাক্য তৈরি করা হয় তাহলে হবে - " সঃ অপ্রতিম অস্তি " অর্থাৎ সেই পরমপিতা পরমাত্মা অপ্রতিম(অদ্বিতীয় অপ্রতিমান) সুতরাং, পরমেশ্বরের কোনো প্রতিমা বা মূর্তি নেই এই কথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বরং, এই বেদ মন্ত্রের ক্ষেত্রে পরমেশ্বরের সাথে অন্য কোনো কিছুর তুলনাই হয় না - এই অর্থই সর্বথা গ্রহণ যোগ্য । হে অসনাতনীরা ! আপনাদের কথা অনুযায়ী যদি কিছুক্ষণের জন্য ধরেও নেয়া হয় যে, ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই, তাতেও এটা কোথাও সিদ্ধ হয় না যে, প্রতিমা পূজা নিষিদ্ধ। বরং ঈশ্বরের প্রতিমা রয়েছে তা স্বয়ং বেদ বলছে, দেখুন সহস্রস্য প্রতিমা অসি [তথ্যসূত্র — যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৫/মন্ত্র নং ৬৫] অর্থ — হে পরমেশ্বর আপনার হাজার রকমের প্রতিমা রয়েছে । সম্বৎসরস্য প্রতিমাং যাং ত্বাং রাত্র্যুপাস্মহে । সা ন আয়ুষ্মতীং প্রজাং রায়স্পোষেণ সং সৃজ ॥ [তথ্যসূত্র : অথর্ব-বেদ/৩/১০/৩] অর্থ — হে রাজ্যভিমানী দেব ঈশ্বর(রাত্রি) ! সম্বৎসর(সমগ্র বৎসর সর্বদা) যার প্রতিমা বিদ্যমান, সেই আপনাকে আমি উপাসনা করে থাকি, আপনি আমাদের সন্তানদের দীর্ঘজীবী করে তাদের গো তথা ধনসম্পন্ন করে তুলুন । স এক্ষত প্রজাপতি হমং বাঽআত্মনঃ প্রতিমামসৃক্ষিযৎসম্বৎসরমিতিতস্মাদাহুঃ প্রজাপতিঃসম্বৎসর ইত্যাৎমনোতংহ্যেতং প্রতিমামসৃজত যদেবচতুরক্ষরঃ সম্বৎসরশ্চতুরক্ষরঃ প্রজাপতি স্তোনো হৈবাস্যেষ প্রতিমা । [ শতপথ ব্রাহ্মণ/১১/১/৬/১৩] অতএব, ঈশ্বর নিজের প্রতিমা সম্বৎসর নামকে উৎপন্ন করেছেন, এই কারণে বলা হয়েছে ঈশ্বর হলেন সম্বৎসর, দেখুন সম্বৎসর-এ চারটি অক্ষর আর প্রজাপতি-তেও চার অক্ষর রয়েছে, এই কারণে সম্বৎসর হল ঈশ্বরের প্রতিমা, এটিই শতপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখ হয়েছে । অসনাতনীরা এটা দেখে প্রশ্ন করবে, প্রথম ক্ষেত্রে আপনি প্রতিমা শব্দের অর্থ করলেন তুলনা আবার দ্বিতীয় ধাপে ই আপনি প্রতিমা শব্দের অর্থ প্রতিমাই রাখলেন কেন? উত্তর — আমাদের সনাতনীদের অনুসারে বেদে স্থান কাল পাত্র ভেদে রুদ্র শব্দের অর্থ পরমেশ্বর রুদ্র হয় আবার রুদ্রগণও হয়। আবার আপনাদের থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটি নামক ম্লেচ্ছ খ্রিষ্টানদের দালাল অসনাতনীরা ইন্দ্র বলতে কখনো নিরাকার ঈশ্বর বুঝিয়েছেন আবার কখনো জীবাত্মা। অসনাতনীরা আপনারা প্রতিমা শব্দের অর্থ কোনোভাবেই "তুলনা/উপমা" বলে স্বীকার করতে নারাজ। দয়ানন্দ সরস্বতীই যজুর্বেদের অধ্যায় ১৫/মন্ত্র নং ৬৫ -এর ভাষ্যে প্রতিমা শব্দের অর্থ (তুল্য) তুলনা লিখেছেন, তাহলে আমাদের সনাতনীদের কাছে স্থান কাল ভেদে প্রতিমা শব্দের অর্থ তুলনা আবার প্রতিমা কেন হবে না ?মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীও একই কাজ করেছিলেন, তিনিও এক এক স্থানে প্রতিমা শব্দের অর্থ কোথাও প্রতিমাই রেখেছেন অন্য স্থানে প্রতিমা শব্দের অর্থ তুলনা বলেছেন । বেদ শাস্ত্রে ঈশ্বরের প্রতিমা নেই বলে দাবী করলে বেদের অন্য মন্ত্রের সাথে তার বিরোধ ঘটে। আমরা জানি যে, বেদ শাস্ত্রে কখনোই পরস্পর স্ববিরোধী মন্তব্য থাকতে পারেনা, তাই যেহেতু বেদে ঈশ্বরের প্রতিমার উল্লেখ রয়েছে, তাই যজুর্বেদে উক্ত ৩২ অধ্যায়ের ৩নং মন্ত্রের প্রতিমা শব্দটির অর্থ কখনোই প্রতিমা হিসেবেই গণ্য হবে না বরং উপমা অর্থ হিসেবে ই তা গণ্য হবে । ফলে বেদের মধ্যে স্ববিরোধী কথারও কোনো আশঙ্কা থাকে না। এবার আমরা তাদের বাকি জবাব গুলো দেবো, যেমন - যদি বলা হয়, পরমেশ্বর হল সূর্যের আলোকের ন্যায় জ্ঞানস্বরূপ , অর্থাৎ এখানে সূর্যে আলো যেমন অন্ধকার বিদূরিত করে তেমনভাবেই পরমেশ্বর আমাদের জ্ঞান প্রদান করে আমাদের অবিদ্যা দূর করেন, এখানে কোথাও পরমেশ্বরের সমান সূর্য বলা হয়নি, বরং সূর্য যেমন প্রকাশ করছে আলো সেই পদ্ধতিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে পরমেশ্বরের জ্ঞান প্রকাশের কথা বলা হয়েছে। যারা পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান মতবাদী থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটির অসনাতনীরা তো মূঢ় মস্তিষ্কের হবেই। তা আপনারা তো এটাও জানেন যে আদি শঙ্করাচার্য সাকার ও নিরাকার উভয় ই মান্য করতেন। তাহলে তার ভাষ্য থেকে শুধু নিরাকারবাদটা তুলে ধরলেন, সাকারবাদটা কোথায় গেল ? আমাদের শৈবদের কাছে পরমেশ্বর শিবের নিরাকার সত্ত্বাকে নির্দেশ করতে পরমশিব বলা হয়, সুতরাং আমরা নিরাকার অশরীরী পরমাত্মাকে অস্বীকার করিনা, কিন্তু তিনি যে দিব্যশরীর ধারণপূর্বক নিরাকার থেকে সাকাররূপে জটা ধারণ করেন, ধনুক ধারণ করেন, গিরিপর্বতে অবস্থান করেন - এটাও তো আমরা স্বীকার করি। আপনারা তো শ্রীমদ্ভগবদগীতা নিয়ে লাফালাফি করেন, ভগবদ্গীতা তে বলছে যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥ পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥" (ভগবদ্গীতা/৪/৭-৮) অর্থ : হে ভারত (অর্জুন), যখনই ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, আমি(পরমাত্মা) সেই সময়ে দেহ ধারণপূর্বক অবতীর্ণ হই। সুতরাং, এখানে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে পরমাত্মা দেহ ধারণ করতেই পারেন, করেও থাকেন। এখন অসনাতনীরা প্যাচাল পাড়বে আর বলবে এখানে কৃষ্ণ আমি নিজেকে সৃজন করি বলতে জীবাত্মাকে বুঝিয়েছেন, অথচ, এই ধূর্তরাই স্বীকার করেছে যে, ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ "আমি" বলতে পরমাত্মাকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু পরমাত্মা অবতীর্ণ হয়ে শরীর ধারণ করেন এই শ্লোকটাতে "আমি" শব্দের অর্থকে জীবাত্মা বলে চালিয়ে দিয়েছে অসনাতনীরা । পরমাত্মা শরীর ধারণ করেন সেটিই এখানে প্রমাণিত। হে অসনাতনীরা একচোখা তাই আপনাদের বুদ্ধিও একচোখা । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদও বলছে, “তাঁর কোনও প্রতিরূপ বা প্রতিমা নেই”(৪/১৯) এবং “সনাতনের কোন রূপ নেই যা চক্ষুর গোচর হয়, দৃষ্টির দ্বারাও তাঁকে কেও দেখে না”(৪/২০) ঈশ্বর সাকার রূপ ধারণ করলে তিনি আর সর্ব ব্যাপী থাকতে পারেন না তাই ঈশ্বর সাকার রূপ ধারণ করেন না, ঈশ্বর সাকার নন, এর কোনো প্রমাণ নেই। এমনকি শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৯ বলছে সেই ঈশ্বরের কোনও লিঙ্গ অর্থাৎ চিহ্নবিশেষও নেই আমরা তো পূজার জন্য প্রতিমা গড়ে পূজা করি মাত্র, যার বিধান পুরাণ শাস্ত্রেই রয়েছে, মহাভারতেও অর্জুন পরমেশ্বর শিবের মাটির শিবলিঙ্গ গড়ে পূজা করেছিল। আপনারা এখন সেটাকে কিভাবে এড়িয়ে যাবেন ? প্রক্ষিপ্ত বলে ? ওটাই তো আপনাদের মুখস্ত বুলি.... তাছাড়া পরমেশ্বর দিব্যশরীর ধারণ করেন, সেই সাকার অবয়বই কল্পনা করে দেবপ্রতিমা গড়ে তার পূজা হয়। মাটি জল আকাশ বায়ু অগ্নি সবেতেই পরমেশ্বর অবস্থিত(শ্বে.উ/৪|২), আরো দেখুন তদেবাগ্নিস্তদাদিত্যস্তদ্বায়ুস্তদু চন্দ্রমাঃ । তদেব শুক্রং তদ্ ব্রহ্ম তা আপঃ স প্রজাপতিঃ ॥ [ যজুর্বেদ/৩২/১] অর্থ — সেই ঈশ্বরই অগ্নি, তিনি আদিত্য রূপ, বায়ু, চন্দ্র সংসারের বীজ, প্রসিদ্ধ জল, প্রজাপতি আদিরূপ সেই ব্রহ্মেরই । এগুলো তো আমরা তৈরি করিনি। এগুলো তো পরমেশ্বর সৃষ্ট, যদিও আপনারা আবার ত্রৈতবাদ নামক কাল্পনিক দর্শনে বিশ্বাসী। দেখে নিন সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টি পরমেশ্বর থেকেই হয়েছে, প্রকৃতি অনাদি নয়। যতো জাতানি ভুবনানি বিশ্বা(শ্বে.উ/৪৪), বিশ্বস্য স্রষ্টারমনেকরূপম(শ্বে.উ/৪|১৪), রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷ অয়মত্মা ব্রহ্ম সর্ব্বানুভূঃ৷” অর্থাৎ তিনি প্রতি বস্তুর রূপ ধারণ করিয়াছেন ৷ এই আত্মাই ব্রহ্ম ৷ তিনি সর্ব্বগত ৷(বৃহদারণ্যক,উ ২|৫|১৯) সুতরাং, কেন উপনিষদে বলা ১/৬ নং শ্লোকের ভাবার্থ বৃহদারণ্যক উপনিষদ অনুসারে হল এই - স্বতন্ত্রভাবে জড়বস্তুই ঈশ্বর নয় বরং জড় বস্তুর রূপ ঈশ্বর ধারণ করেছেন তাই সেই জড়রূপ ধারণকারী জড়বস্তুর মধ্যে থাকা জড়বস্তুর কারণরূপ অদ্বিতীয় পরমেশ্বর কেই উপাসনা করা হয় । জড়বস্তুই স্বয়ং ব্রহ্ম একথা কোনো সনাতনীই বিশ্বাস করে না, তাই এই বোকা বোকা আরোপ করা বন্ধ করুন একচোখাগণ অজ্ঞ অসনাতনীরা দাবি করেছে যে, ঈশ্বর সাকার হলে নাকি তার সর্ব ব্যাপকত্ব খণ্ডন হয়ে যায়। আরে মূর্খ সমাজীরা একটু ভেবে দেখুন অগ্নি সর্বব্যাপী হয়েও একই সময়ে কোনো স্থানে দৃশ্যমান হয়ে জ্বলছে আবার কোনো স্থানে তা সুপ্ত অবস্থায় অদৃশ্য ভাবে নিহিত রয়েছে, তার মানে কি অগ্নি সর্বব্যাপী নয় ? কাঠের মধ্যে অগ্নি অন্তর্নিহিত রয়েছে যতক্ষণ না তা আরেকটি কাঠের সাথে ঘর্ষণ করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অগ্নি দৃশ্যমান হয় না, যখনই ঘর্ষণ করা হয় তখনই অগ্নি দৃশ্যমান হয়, কিন্তু যখন ঘর্ষণ করা হয়নি তখনও সেই কাঠের মধ্যে অগ্নি অন্তর্নিহিত ছিল, অর্থাৎ অগ্নি যদি কোনো স্থানে দৃশ্যমান হয়েও অন্য স্থানে অদৃশ্য হয়ে সর্বত্র বিরাজমান থাকতে পারে তবে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হয়ে সাকার কেন হতে পারবে না ? সর্বব্যাপী হয়েও পরমেশ্বর যক্ষরূপে দিব্য দেহ ধারণ করে সাকার হন , তা কেন উপনিষদেই শব্দপ্রমাণ সহ বলা হয়েছে , দেখুন তদ্বৈষাং বিজজ্ঞৌ তেভ্যো হ প্রাদুর্বভূব তন্ন ব্যজানত কিমিদং যক্ষমিতি ॥ (তথ্যসূত্র : কেন উপনিষদ/অধ্যায় ৩/২নং শ্লোক) সরলার্থ: দেবতাদের মিথ্যা অভিমানের কথা জেনে তাঁদেরই কল্যাণার্থে তাঁদের সামনে স্বয়ং ব্রহ্ম আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই যক্ষরূপী দিব্যমূর্তি ব্রহ্মকে দেবতারা চিনতে পারলেন না। । এরপর ইন্দ্র যক্ষকে দেখে তার কাছে যেতেই পরমেশ্বর অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন আকাশ মার্গ থেকে মাতা পার্বতী নেমে এলেন । আকাশ থেকে প্রকটিত হওয়া অলঙ্কারপরিহিত উমা অর্থাৎ পার্বতী মাতার কাছে যখন দেবতারা জানতে চাইলেন যে - কিমেতদ্ যক্ষমিতি (কেন উপনিষদ/৩|১১) অর্থাৎ ঐ যক্ষস্বরূপ ধারণকারী কে ? তখন মাতা পার্বতী দেবী বললেন, সা ব্রহ্মেতি হোবাচ, ব্রহ্মণো বা এতদ্বিজয়ে মহীয়ধ্বমিতি ততো হৈব বিদাঞ্চকার ব্রহ্মেতি ৷৷ (কেন উপনিষদ/৪|১) সরলার্থ: তিনি (উমা হৈমবতী) বললেন, 'উনি ব্রহ্ম। যে বিজয়ের জন্য তোমরা এত উল্লসিত হয়েছিলে, তা আসলে ব্রহ্মের জয়।' তখন ইন্দ্র জানতে পারলেন যে, ওই যক্ষমূর্তি আসলে ব্ৰহ্ম অর্থাৎ শিব । কি অসনাতনীগণ ! কি যবনেরা ! এবার বলুন, ব্রহ্ম যদি রূপ নাই ধারণ করতো তাহলে ইন্দ্র সেই ব্রহ্মকে কিভাবে দেখলো ? পরমব্রহ্ম নিজেই নিজের ইচ্ছায় রূপ ধারণ করেন আবার নিজের ইচ্ছায় পরমেশ্বর অদৃশ্য হন তা 'কেন উপনিষদ' পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে। প্রয়োজনে পরমব্রহ্ম নিজেই নিজের ইচ্ছায় রূপ ধারণ করে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়ে সাকার হন । সেই পরমব্রহ্ম সম্পর্কে মা উমা অর্থাৎ পার্বতী দেবী ইন্দ্র তথা দেবতাদের বলেছেন যে ইনি অর্থাৎ শিব হল ব্রহ্ম । তৈত্তিরীয় আরণ্যকে পরমেশ্বর শিবের সাকার দিব্যদেহের বর্ণনা করে বলা হয়েছে নমো হিরণ্যবাহবে হিরণ্যবর্ণায় হিরণ্যরূপায় হিরণ্যপতয়ে অম্বিকাপতয় উমাপতয়ে পশুপতয়ে নমো নমঃ॥ ( তৈত্তিরীয় আরণ্যক,১০ম প্রপাঠক, ২২ অনুবাক ) অর্থ — যার হিরণ্যবর্ণের অর্থাৎ সোনার মতো উজ্জ্বল বর্ণের আভাযুক্ত বাহু রয়েছে, যার দিব্যদেহের বর্ণ সোনার মতো উজ্জ্বল, যিনি সোনার মতো উজ্জ্বল রূপধারী, যিনি অম্বিকা অর্থাৎ শিবাদেবীর স্বামী, যিনি উমা অর্থাৎ পার্বতী দেবীর পতি সেই পশুপতি পরমেশ্বর শিবের প্রতি নমস্কার । তাই আর্যসমাজীদের কট্টর নিরাকার বাদ এখানেও টিকলো না। তাই বেদে সাকার ব্রহ্মের প্রমাণ রয়েছে এটি নিঃসন্দেহে বোঝা যায়। আরো প্রমাণ লাগবে ? চলুন, আপনারা যেহেতু শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ টেনেছেন সেহেতু সেখান থেকে আপনাদের একটু সাকার ব্রহ্মের পরিচয় করাই। আর্যনামাজীগণ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৪নং অধ্যায়ের ১৯ আর ২০নং শ্লোক তুলে দিলেন কিন্তু তার অর্থ কি বোধগম্য করতে পেরেছেন আদৌও ? ১৯নং শ্লোকের ন তস্য প্রতিমা শব্দের বিশ্লেষণ উপরেই হয়ে গিয়েছে,তাই ২০নং শ্লোকের ব্যাখা জেনে নিন ন সংদৃশে তিষ্ঠতি রূপমস্য ন চক্ষুষা পশ্যতি কশ্চনৈনম্। হৃদা হৃদিস্থং মনসা য এনমেবং বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি ॥২০ সরলার্থ : ইন্দ্রিয় দ্বারা সাধারণভাবে তার রূপ দেখা যায় না, সাধারণ চক্ষুর দ্বারা তিনি দৃষ্টিগোচর নন, তাকে যোগ দ্বারা হৃদয়ে হদয়স্থিত করলে সেই বিশুদ্ধ মনের দ্বারা তাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন, এরফলে অমরত্ব লাভ হয় । দেখুন অবোধগণ, এখানে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে সাধারণ দৃষ্টিতে সেই পরমেশ্বরের ঐশ্বরীয় রূপ দেখা যায় না, শুদ্ধতা এলে তবেই তাকে দর্শন বা উপলব্ধি করা সম্ভব। শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে ১১নং অধ্যায়ের ৮নং শ্লোকেই বলা হয়েছে অর্জুন সাধারণ দৃষ্টিতে পরমেশ্বরের রূপ দেখতে সমর্থ হননি, তিনি দিব্যচক্ষু লাভের পরই সেই দিব্যরূপ দর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, আর সেই দিব্যচক্ষু পাবার পরেই অর্জুন ব্রহ্মের প্রকাশিত সকল সাকার দেবতাদের দর্শন করেছিলেন, প্রমাণ দেখুন অর্জুন উবাচ পশ্যামি দেবাংস্তব দেব দেহে সর্বাংস্তথা ভূতবিশেষসঙ্ঘন। ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থ- মূখীংশ্চ সর্বানুরগাংশ্চ দিব্যান্ ॥১৫ [ ভগবদ্গীতা/১১নং অধ্যায়] অর্থ — অর্জুন বললেন, হে পরম দেব ! আপনার দেহে আমি সমস্ত দেবতা ও বহু ভূত সমগ্র, পদ্মাসনে অবস্থিত ব্রহ্মা ও ঈশান(রুদ্রদেব) সহ সমস্ত ঋষি এবং দিব্য সর্পদের দেখতে পাচ্ছি । অসনাতনীরা তো আজকাল ভগবদ্গীতা নিয়ে দিনরাত প্রচার করতে শুরু করেছে নিজেদের প্রচার প্রসারের জন্য, কিন্তু সেই ভগবদ্গীতার মধ্যেও পরিষ্কার করে উল্লেখ রয়েছে যে, ব্রহ্মা বা রুদ্র/ঈশান নিরাকার ঈশ্বরের গুণবাচক নাম নয় বরং তারা ব্রহ্মের সাকার ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে তাই শ্লোকের মধ্যে সেই ‘ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থ’ অর্থাৎ ব্রহ্মা কমল আসনে বসে আছেন ও ভগবান ঈশানকেও বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে ভগবদ্গীতার মধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে, তাই অর্জুন সেটি ‘পশ্যামি’ অর্থাৎ দেখতেও পাচ্ছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সুতরাং ভগবদ্গীতা ও উপনিষদের আগাগোড়া বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনাদের এই গুটি কয়েক উপনিষদের শ্লোক নিয়ে অর্ধসত্য প্রচার করাও ধরা পড়ে গেল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যেই ৪নং অধ্যায়ের ২১নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিবের মুখের উল্লেখ পর্যন্ত রয়েছে - অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে। রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ।।২১ দেখুন, অসনাতনীরা অগ্নিবিড়িখোরেরা - আপনারা যজুর্বেদের রুদ্রসূক্ততে থাকা পরমেশ্বর রুদ্রকে একজন পর্বতবাসী রাজা হিসেবে দেখানোর অপপ্রয়াস করেছিলেন, অথচ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেই সেই রুদ্রকে অজন্মা বলা হয়েছে, ব্রহ্ম ছাড়া আর কে অজন্মা ? আর তারই সাথে এখানে পরমেশ্বরের যে মুখ রয়েছে, তার যে দিব্য দেহ রয়েছে তা বারংবার প্রমাণিত হয়েছে। সেই সাকার পরমেশ্বর সর্বব্যাপী হয়েও গিরি পর্বত কৈলাসে অবস্থান করেন, তার প্রমাণ স্বয়ং বেদ দিচ্ছে, দেখে নিন প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ । ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥২০ যো বৈ বেদাদিষু গায়ত্রী সর্বব্যাপীমহেশ্বরাৎ । তদ্বিরুক্তং তথাদ্বৈশ্যং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥২১ কৈলাসশিখরে রম্যে শংকরস্য শুভে গৃহে । দেবতাস্তত্র মোদন্তি তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥২৪ [তথ্যসূত্র - ঋগ্বেদ সংহিতা / খিলানি / ৪ নং অধ্যায় / ১১ নং খিলা এবং শিবসংকল্প উপনিষদ] এখন বেদের মধ্যে সাকার পরমেশ্বর শিবের প্রমাণ দেখে বেদের খিলা সূক্তকে নিশ্চয়ই প্রক্ষিপ্ত বলে পিঠ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠবে অসনাতনী গণ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬/৯ শ্লোকে লিঙ্গ বলতে স্থান কাল পাত্র ভেদে - পুরুষ ও নারীর কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে, অর্থাৎ পরমেশ্বরের নিরাকার সত্ত্বা কোনো লিঙ্গসম্পর্কিত নন, অর্থাৎ তিনি পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ ক্লীবলিঙ্গ নন। পরমেশ্বরের অবশ্যই প্রতিক চিহ্ন হয়, আর সেটির প্রমাণ হিসেবে, পরমেশ্বরের শিবলিঙ্গের উল্লেখ বেদের আরণ্যকভাগে রয়েছে। এমনকি সেখানে লিঙ্গ রূপী পরমেশ্বরের প্রতিমাকে স্থাপন করবার জন্য নির্দেশ দেয়া রয়েছে দেখে নিন শিবায় নমঃ | শিবলিঙ্গায় নমঃ | জ্বলায় নমঃ | জ্বললিঙ্গায় নমঃ | আত্মায় নমঃ |আত্মলিঙ্গায় নমঃ | পরমায় নমঃ | পরমলিঙ্গায় নমঃ | এতৎসোমস্য সূর্যস্য সর্বলিঙ্গং স্থাপযতি পাণিমন্ত্রং পবিত্রম্ | [কৃষ্ণ যজুর্বেদ/তৈত্তিরীয় আরণ্যক/ ১০ম প্রপাঠক/১৬ নং অনুবাক/২নং সূক্ত] অসনাতনীরা তার সত্যার্থ প্রকাশের প্রথম সমুল্লাসে সমস্ত দেবতার নামকে এক পরমেশ্বরের গুণবাচক নাম হিসেবে দেখাতে গিয়ে শৈবদের মান্য কৈবল্য উপনিষদের শ্লোক টেনে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই কৈবল্য উপনিষদের ৭নং শ্লোক থেকে পরমব্রহ্মের সাকার হবার পরিষ্কার বর্ণনা দেখে নিন তমাদিমধ্যান্তবিহীনমেকং বিভুং চিদানন্দমরূপমদভুতম্। তথাদিউমাসহাযং পরমেশ্বরং প্রভুং ত্রিলোচনং নীলকণ্ঠং প্রশান্তম্। ধ্যাত্বা মুনির্গচ্ছতি ভূতযোনিং সমস্তসাক্ষিং তমসঃ পরস্তাৎ ॥৭॥ অর্থ — এইভাবে যিনি অচিন্ত্য, অব্যক্ত তথা অনন্তরূপে যুক্ত, কল্যাণকারী, শান্ত-চিত্ত, অমৃত, যিনি নিখিল ব্রহ্মান্ডের মূল কারণ, যার আদি, মধ্য এবং অন্ত নেই, যিনি অনুপম, বিভু(বিরাট্) এবং চিদানন্দ স্বরূপ, অরূপ এবং অদ্ভুত, এভাবে সেই উমা সহিত পরমেশ্বরকে , সম্পূর্ণ চর-অচরের পালনকর্তাকে, শান্তস্বরূপ, ত্রিনেত্র স্বরূপ, নীলকণ্ঠকে যিনি সমস্ত ভূত সমূহ তথা প্রাণীদের মূল কারণ, সবকিছুর সাক্ষী এবং অবিদ্যা রহিত প্রকাশিত হচ্ছে, এভাবে সেই(প্রকাশপুঞ্জ পরমাত্মা) কে যোগীজন ধ্যানের মাধ্যমে গ্ৰহণ করেন ॥৭ কৈবল্য উপনিষদের শ্লোক থেকে পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে পরমেশ্বর শিবের সাথে উমা অর্থাৎ মাতা পার্বতী রয়েছেন, শিবের ত্রিনেত্র, কণ্ঠ নীল বর্ণের । কি অসনাতনী ম্লেচ্ছ রা.... এবার বুঝলেন তো যে বেদ অনুযায়ী পরমেশ্বর সাকার হন কি না ? তার প্রতিমা আছে কি না ? সেই প্রতিমা স্থাপন করার মন্ত্র আছ কি না ? পবিত্র বেদে পরমেশ্বরের প্রতিমার উল্লেখ রয়েছে, পরমেশ্বর সাকার ও নিরাকার উভয়ই । প্রতিমারূপী শিবলিঙ্গ স্থাপনার মন্ত্র বেদের আরণ্যক অংশে রয়েছে। তাই বেদে সাকার ব্রহ্মের প্রমাণ নেই বলাও ভুল, পরমেশ্বর সাকার হতে পারেন না এটাও ভুল কথা, বেদে প্রতিমা পূজার জন্য প্রতিমা স্থাপনের মন্ত্র নেই বলাও সম্পূর্ণ ভুল ও অজ্ঞতাপূর্ণ দাবি মাত্র অসনাতনীদের ।অসনাতনীর বোকা বোকা যুক্তি গুলো নিয়ে খুব লাফালাফি করে, তাদের যুক্তিও খণ্ডিত হয়ে গেল একত্রে । পণ্ডিত শ্রীজ্বালাপ্রসাদ মিশ্র ভাষ্য : (তস্য) সেই পুরুষের (প্রতিমা) প্রতিমান উপমান সদৃশ উপমা দেওয়ার যোগ্য কোনো বস্তু (ন, অস্তি) নাই ; (যস্য) যার (নাম) নাম প্রসিদ্ধ (মহৎ) বড় (যশঃ) যশ আছে অর্থাৎ সর্বাধিক তাঁর যশ ৷ এই বেদের “হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ” [২৫৷১০-১৩] “মা মা হিংসীদিত্যেষ” [১২৷১০২] এবং “যস্মান্ন জাত ইত্যেষা” [৮৷৩৬,৩৭] ইত্যাদি মন্ত্র দ্বারা তাঁকেই বর্ণনা করা হয়েছে ৷
অসনাতনীর আক্ষেপ 1 : যারা বলে পরমাত্মার উপমা নেই তারাই বরং ভুল বলে। কারণ পুরুষসূক্তসহ বেদের অসংখ্যস্থলে পরমাত্মার মহিমাকে বিভিন্ন উপমার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে৷
খণ্ডন : পরমাত্মার কোনো উপমা নেই বলার অর্থটাই আপনাদের মূঢ় মস্তিষ্কে ঢোকেনি, বেদে বিভিন্ন জায়গায় পরমেশ্বরের মহিমাকে উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু পরমেশ্বরকে সেই উপমায় ব্যবহৃত কোনো বস্তুর সাথে সমান যশস্বী বলা হয়নি। বরং মহান উপমা বস্তুর দ্বারা সেই বস্তুর মাধ্যমে উদাহরণ হিসেবে পরমেশ্বরের মহানতার প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র।
অসনাতনীর আক্ষেপ 2 : যজুর্বেদ ৪০/৮ বলছে ঈশ্বর অকায়ম(সর্বপ্রকার শরীররহিত) -
খণ্ডন : আজকাল আচার্য শঙ্করকেও অমান্য করা শুরু করলেন বুঝি ?
অসনাতনীর আক্ষেপ 3 : এবার তাহলে প্রশ্ন রইল, যার কোনো শরীরই নেই তাঁর মূর্তি বা প্রতিমা আপনারা কিভাবে তৈরি করবেন ?
খণ্ডন : যার কোনো শরীর নেই তার শরীর কে তৈরি করেছে ?
সরলার্থ: হে রুদ্র, তুমি জন্মরহিত। তাইতো মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ তোমার শরণ নেয়। তোমার দক্ষিণ(কল্যাণময়) মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং সর্বদা আমাকে রক্ষা কর।
সেই পরমেশ্বর রুদ্র গিরিপর্বতে অবস্থান করেন (শ্বে.উ/৩|৫/৬)
'পূজা' শব্দের—'প' অর্থে প্রাণ-অপানকে , 'ঊ' অর্থে অন্তর্মুখীন প্রাণ-অপান উর্দ্ধগতি বিদ্যা দ্বারা এবং 'জ' অর্থে ইন্দ্রিয়জয়(ইন্দ্রিয়কে অন্তর্মুখ) করে 'আ-কার ' অর্থে কূটস্থে নিয়ে গিয়ে স্থিতি করা ৷ অর্থাৎ,অন্তর্মুখীন ব্রহ্মবিদ্দ্যা অথবা ক্রিয়াযোগের উর্দ্ধগতি বিদ্যা দ্বারা প্রাণ-অপানকে ইড়া-পিঙ্গলা থেকে গতি পরিবর্তন করে সুষুন্মা পথে মূলাধার থেকে নিয়ে গিয়ে কূটস্থে নিয়ে যাতে পারলেই শাস্ত্রানুসারে প্রকৃত পূজা বলা হয়ে থাকে ৷
শ্রী শ্রী মহাবীর হনুমানের সংক্ষিপ্ত ঝান্ডা পূজা পদ্ধতি ১) আচমন - আসনে বসে কোশা থেকে কুশিতে একটু জল বাম হাতের তালুতে নিয়ে ডান হাতের মধ্যমা ও অনামিকা দিয়ে শুধু মুখে তিনবার জলের ছিটা দিতে হবে| পরে ঠোঁট মুছে নাও। ২)বিষ্ণু স্মরণ - ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু (হাতজোড় করে )| পুনরায় হাত জোড় করে বলো - ওঁ তদ্ বিষ্ণু পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয় দিবিব চক্ষু রাততম | ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু| ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভুজং পীত বাসসম্| ওঁ নমো-অপবিত্র পবিএোবা সর্বা বস্তাংগতোহপিবা য: স্মরেৎ পুন্ডরি কাক্ষ সবাহ্যাভান্তরঃ শুচি:||নম: পুন্ডরি কাক্ষ: | হাতজোড় করে – নম: মাধবো মাধবো বাচি, মাধবো হৃদি | স্মরন্তি সাধব: সর্বে সর্ব কার্যেষু মাধব: ||নম: শ্রী মাধব: | ৩)গন্ধার্দি অর্চনা - মন্ত্র - ওঁ বং এতে গন্ধ পুষ্পে বং এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নম: ( পুষ্প, চন্দন ও ভূমিতে জলের ছিটা দেবে |) এতে গন্ধ পুষ্পে এত দধিপতয়ে শ্রী বিষ্ণুবে নম: | ( জলে গন্ধ পুষ্প দেবে)| এতে গন্ধ পুষ্পে এত সম্প্রদানেভ্য: পূজনীয় দেবতাভ্যো নম:( জলে দেবে) এতে গন্ধ পুষ্পে নারায়নায় নমঃ( জল দেবে) এতে গন্ধ পুষ্পে শ্রীগুরু বে নমঃ( জল দেবে) এতে গন্ধ পুষ্পে ব্রাহ্মণ্যেভ্যো নম: ( জল দেবে) এতে গন্ধ পুষ্পে হনুমতে দেবতায় নম:(জল দেবে)| কেমন করে করতে হবে - কোন দ্রব্যের পূজা না করে দেবী বা দেবতাকে উৎসর্গ করতে নেই। কোশা থেকে কুশিতে জল নিয়ে মন্ত্র পড়ে তিনবার জলের ছিটা দেবে | ৪)সূর্যার্ঘ্য - মন্ত্র - এস অর্ঘ্য ওঁ নম: বিবস্বতে ব্রহ্মণ্য ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিএে শুচয়ে সবিএে কর্ম দায়িনে নম: ভগবতে শ্রী সূর্য্য দেবতায় নম: (তাম্র পাত্রে দাও)| প্রণাম - (হাত জোড় করে) – ওঁ জবা কুসুম সঙ্কাশং কাশ্য পেয়ং মহাদ্যুতিং ধন্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবা করং | কেমন করে করতে হবে - কুশি বা কোশার অগ্রভাগে জলসহ রক্ত জবা বা লাল পুষ্প চন্দন দূর্বা আতব চাল ইত্যাদি নিয়ে দুহাতে ধরে মন্ত্র বলবে তারপর তাম্র পাত্রে ফেলবে | (পুষ্পটি হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে তাম্র পাত্রে দাও)| ৫)মন্ত্র - নারায়নাদির অর্চনা – এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ গনেশায় নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ নারায়নায় নমঃ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শ্রী গুরুবে নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ব্রাহ্মণ্যেভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশ দিক পালেভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ মৎসাদি দশাতারেভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্পদ দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্পদ দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্বেভ্যো দেবীভ্যো নম:( তাম্র পাত্রে পুষ্পদ দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ( তাম্র পাত্রে পুষ্পদ দাও) ৬)সংকল্প – মন্ত্র - ওঁ বিষ্ণু রো তৎসদ অদ্য চৈত্রমাসি মীন রাশিস্থভাস্করে শুক্লপক্ষে গোত্র- শ্রী - শ্রী শ্রী হনুমান দেবতার প্রীতি কাম: গন পত্যাদি নানা দেবদেবী পূজা পূর্বকং শ্রী শ্রী রামনবমী দিবসে সর্ব কল্যাণ হনুমান পতাকা পুজনং কর্মাহং করিষ্যে ( এবার কিছু জল ঈশান কোণে ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট জল সহ কুশি উপর কার মাটিতে ফেলে দাও।) কেমন করে করতে হবে – সংকল্প - উত্তরে মুখ হয়ে দক্ষিণ হাটু মাটিতে স্পর্শ করে কুশিতে তিল হরিতকি পুষ্প চন্দন জল সহ কুশি বাম হাতের তালুতে রেখে ডান হাত দিয়ে ঢেকে মন্ত্র বলবে | ৭)ঘট স্থাপন - ( ঘট মাটি বা পিতলের) ঘট দুহাতে স্পর্শ করে মন্ত্র বলো - মন্ত্র - ওঁ সর্ব তীর্থ তীর্থোদ্ভবং বারি সর্ব দেব সমন্বিতং ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ট দেব দেবী গনৈং সহ || কেমন করে করতে হবে - ঘট মাটি বা পিতলের হোক ঘটের মাঝে সিন্দুর সামান্য তেলের সাথে মিশিয়ে একটি মানুষের আকৃতি আকিয়া তাতে জল পূর্ণ করে তার উপরে সশীষ ডাব বোটা সহ দিবে তার পূর্বে পঞ্চ পল্লব দিয়ে দেবে মাটির ওপর বসাবে| গামছা দিয়ে তারপর আচ্ছাদন করবে ঘট যে মাটিতে বসাবে তার চারিদিকে ধান ,পঞ্চ শস্য, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চরত্ন চারিদিকে দেবে | ৮)জল শুদ্ধি - কেমন ভাবে করতে হবে - যেখানে কোশাকুশি ছিল এবার কোশাকুশি একটু দূরে রেখে ওখানে মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে জলের দ্বারা ত্রিকোণ এঁকে তারপর ত্রিকোনের ওপর একটি গোল ও পুনর্বার চতুষ্কোণ মন্ডল করে তার ওপর চন্দন মেশানো আতব চাল পুষ্প হাতে নিয়ে চতুষ্কোণে হাত রেখে মন্ত্র বল – জল শুদ্ধি – মন্ত্র - ওঁ আধার শক্তয়ে নম: – ওঁ অনন্তায় নম: – ওঁ পৃথ্বীবৌ নম: – ওঁ কুর্মায় নম:-- ওঁ অস্ত্রায় ফট এবং ওঁ মন্ত্র বলতে বলতে কোশাতে জল ভরে ওই চতুষ্কোণের ওপর রেখে জল শুদ্ধির মন্ত্র পাঠ করো |---অঙ্কুশ মুদ্রার দ্বারা মন্ত্র বলবে | মন্ত্র - ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী | নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলে হস্মিন সন্নিধং কুরু || এবার ওঁ মন্ত্রে জলে একটি পুষ্প দিয়ে বং মন্ত্র ধেনু মুদ্রা দেখিয়ে মৎস্য মুদ্রার দ্বারা ঢেকে ওঁ মন্ত্র দশবার জপ কর | ৯)আসনশুদ্ধি – কেমন করে করতে হবে - আসনের নিচে জলের দ্বারা ভূমিতে ত্রিকোন মন্ডল আঁকবে, পরে মন্ডলের ওপর একটি পুষ্প হাতে নিয়ে মন্ত্র বলবে। এবার আসনের উপর একটি পুষ্প দিয়ে মন্ত্র বল – আসনশুদ্ধি – মন্ত্র – ওঁ শ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নম| মন্ত্র – ওঁ আসন মন্ত্রস্য মেরু পৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দং কূৰ্ম্মদেবতা আসন পরিগ্রহে বিনিয়োগঃ।'ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাঃ দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনং ॥' এবার গুরুকে নমস্কার করে, মন্ত্র পাঠ করবে - |[ গুরু প্রনাম ]| প্রথমে বাঁ দিকে ঝুঁকে - (মন্ত্র) - ওঁ গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ তারপর ডানদিকে ঝুঁকে - ওঁ গনেশায় নমঃ এবার মাথার উপর জোড় হাতে - ওঁ নমঃ শিবায় এবার হাত জোড় করে ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ •(১০) |[ কর শুদ্ধি ]| :- একটি গন্ধ পুষ্প হাতে নিয়ে নিচের মন্ত্রটি বলে দুহাতে পিষে বামে ফেলে দিয়ে মন্ত্র :-- ওঁ ঐং বং অস্ত্রায় ফট্ •(১১) |[ পুস্প শুদ্ধি ]| :- ( পুস্প পাত্রের উপর হাত রেখে মন্ত্র পাঠ কর - ওঁ পুস্পে পুস্পে মহাপুস্পে সুপুস্পে পুস্প সম্ভবে। পুস্প চয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা॥ - পুস্পের উপর জলের ছিটা দাও ) •(১২) |[ দ্বারদেবতার পূজা ]| :- এতে গন্ধে পুস্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যোঃ নমঃ <> পুস্প দুয়ারে নিক্ষেপ কর এতে গন্ধ পুস্পে ওঁ ব্রাহ্মণে নমঃ <> তাম্র পাত্রে পুস্প দাও এতে গন্ধ পুস্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ <> ঘটে পুস্প দাও •(১৩) |[ ভূত অপসারণ ]| :- মন্ত্র :-- ওঁ অপসর্পন্তু যে ভূতা যে ভূতা ভূমি সংস্থিতা। যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নাশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া। (তিনবার পড়বে & এবার ফট্ মন্ত্রে তুড়ি দ্বারা দশদিক বন্ধন করতে হবে তিনবার।) -{ভূত অপসারণ কেমন ভাবে করতে হয়}- এই মন্ত্র বলার হাতে শ্বেত সরিষা অভাবে আতপ চাউল চারিদিকে ছড়াতে হবে তিনবার। পরে তিনবার ডান পায়ের গোড়ালি দিয়ে তিনবার মাটিতে আঘাত করবে। •(১৪) |[ পঞ্চ দেবতার পূজা ]| :- এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ। ( ঘটে পুস্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সূর্য্যায় নমঃ। ( ঘটে পুস্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বিষ্ণুবে নমঃ। ( ঘটে পুস্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ। ( ঘটে পুস্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ দূর্গায় নমঃ। ( ঘটে পুস্প দাও ) প্রতিবার ঘটে পুষ্প দিবে। •(১৫) |[ প্রণায়াম ]| :- যে দেবতা ও দেবীর প্রণায়াম করতে হয় তার বীজ মন্ত্রের দ্বারা ৪ - ৮ - ১৬ •(১৬) |[করন্যাস]|:- -{করন্যাস কেমন ভাবে করতে হয়}- মন্ত্র - আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যো নমঃ (উভয় তর্জ্জনী দ্বারা উভয় অঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করে ) মন্ত্র - ঈং তর্জনীভ্যাং স্বাহা ( উভয় অঙ্গুষ্ট দ্বারা উভয় তর্জনী স্পর্শ করে) মন্ত্র - উং মধ্যমাভ্যাং বষট্ ( উভয় অঙ্গুষ্ট দ্বারা উভয় মধ্যমা স্পর্শ করে) মন্ত্র - ঐং অনামিকাভ্যাং হূং ( উভয় অঙ্গুষ্ট দ্বারা উভয় মধ্যমা স্পর্শ করে) মন্ত্র - ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ ( উভয় অঙ্গুষ্ট দ্বারা উভয় কনিষ্ঠা স্পর্শ করে) মন্ত্র - অং অগ্রায় ফট ( উভয় হস্তের তালু মূলে ফুল-প্রেষণ করিয়া গলিত হইবে) •(১৭)[শ্রী রামের পূজা ও প্রণাম ও সীতার পূজা ও প্রণাম]| এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শ্রী রামচন্দ্রায় নমঃ (ঘটে পুস্প দাও) প্রণাম :- রামায় রাম ভদ্রায় রামচন্দ্রায় বেধষে রঘুনাথায় নাথায় সীতায়াঃ পতয়ে নমঃ এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সীতায়ৈ নমঃ (ঘটে পুস্প দাও) প্রণাম :- দ্বিভূজাং স্বর্ণ বর্ণভাং রামা লোকেন তৎপরাং শ্রী রাম বনিতাং সীতাং প্রণমামি পুনঃ পুনঃ ______________________________ •(১৮) |[ শ্রী হনুমান দেবতার দশোপচারে পূজা ]| :- ১) এতৎ পাদ্যং ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (কুশীতে জল নিয়ে তাম্র কুন্ডে বা পাত্রে দাও) ২) ইদমর্ঘং ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (কুশীতে জল, হরতকি, চন্দন, পুস্প নিয়ে তাম্র কুন্ডে দাও) ৩) ইদমাচমনীয় জলং ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ ( কুশীতে জল নিয়ে তাম্র কুন্ডে বা পাত্রে দাও) ৪) এতৎ পানার্থং জলং ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (কুশীতে জল নিয়ে জলের গ্লাসে দাও) ৫) ইদম পুনবাচমনীয় ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (কুশীতে জল নিয়ে তাম্র কুন্ডে বা পাত্রে দাও) ৬) এষ গন্ধ ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (ঘটে চন্দনের ছিটা দাও) ৭) এতৎ পুস্পং ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (পুস্প হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে ঘটে দাও) ৮) এষ ধূপ ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (আরতির মত করে ধূপ দেখাও) ৯) এষ দীপ ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (আরতির মত করে দীপ দেখাও) ১০) এতৎ নৈবদ্য ওঁ হনুমতে দেবতায় নমঃ (নৈবদ্যের থালিতে জলের ছিটা দাও) _______________________________ •(১৯) |[মহাবীর হনুমানের স্তব স্ততি ধ্যান]--(অবশ্যই পাঠ করতে হবে) শ্রী হনুমান চালীসা (পাঠ) সংকট মোচন শ্রী হনুমানাষ্ঠক শ্রী হনুমান স্তবন পাঠের শেষে বলবে :- শ্রী রাম জয় রাম জয় জয় রাম জয় জয় সীতা জয় জয় রাম ______________________________ •(২০) |____[[ ভোগ নিবেদন ]]___| ১) নৈবদ্য বা ভোগের উপর মন্ত্র পাঠ করে জলের ছিটা দাও। মন্ত্র:- বং এতস্মৈ সোপকরন্নায় নমঃ (নৈবদ্যের উপর জলের ছিটা দাও) ২) এবার নৈবদ্যের উপর পুস্প দাও - মন্ত্র:- এতে গন্ধ পুস্প ওঁ এতস্মৈ সোপকরন্নায় নমঃ ৩) এবার মন্ত্র পড়ে তাম্র পাত্রে জল দাও -মন্ত্র:- ওঁ অমৃতো পস্তরণমসি স্বাহা ৪) এবার কোশা থেকে কুশীতে জল নিয়ে মন্ত্র পড়ে (তাম্র পাত্রে জল দাও) এখন থেকে দেবগণ দেবীর পূজার মন্ত্র পড়বে – মন্ত্র:- ইদমাচমনীয়ং ওঁ হনুমান দেবতা নমো ৫) এবার কোশা থেকে কুশিতে জল নিয়ে খাবার গ্লাসে জল দাও মন্ত্র:- ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ হনুমান দেবতা নমো ৬) এবার হনুমান বীজ মন্ত্র ১০ বার এবং হনুমান গায়ত্রী ৩বার জপ কর । ৭) এবার বা হাত খাবার গ্রাসের মত করে কোশা থেকে কুশীতে জল ডান হাতে ধরে মন্ত্র বলবে। মন্ত্র:--ওঁ এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবদ্যং পঞ্চ প্রানায় স্বাহা - হনুমান দেবতা নিবেদয়ামি “ বলে ফল মিষ্টি বা ভোগের উপর জলের ছিটা দাও। এবার শুধু মহাবীরের পুজায় কিভাবে নিবেদন করতে হবে এখানে দেখ এস সোপকরণ পতাকাসহ ফলং মিষ্টি পঞ্চ প্রানায় স্বাহা ওঁ হনুমতে দেবতায় নিবেদয়ামি” বলে পতাকা ও ফল মিষ্টির উপর জলের ছিটা দাও। ___*[]কেন ভোগ নিবেদন করে বা কেমন করে ভোগ নিবেদন করতে হয়[]*___ দেব বা দেবীর পূজা প্রীতির জন্য হলেও তা মন্ত্রাধীন এবং সেই পদ্ধতি মেনেই সকল অনুষ্ঠান শুদ্ধভাবে করতে হয়।যেখানেই কোন নৈবদ্য বা পরমান্ন থাকবে সেখানেই নিবেদনের মন্ত্রের দ্বারাই করতে হয়। এটাই নিয়ম বা পদ্ধতি। পূজার প্রথমেই যখন মন্ত্রের দ্বারা সবকিছু অর্থাৎ পূজার সকল দ্রব্যকেই শুদ্ধ করে নেওয়া হয়। ঠিক সেই ভাবে ভোগ বা নৈবদ্য শুদ্ধ করে নিয়ে ভোগ নিবেদন করতে হয়।ভোগ নিবেদনের সময় কেউ থাকেনা। নিবেদনের পরেও এমনকি যিনি পূজা করেন তিনি ঘর বন্ধ করে কিছুক্ষণ বাইরে থাকেন। এইজন্য ভূত অপসারণ মন্ত্র প্রথমে রয়েছে। ___________________________ •(২১) |[ মার্জনা ]| :- অদ্য --- মাসে --- মীন রাশি ভাস্করে নবমাং তিথৌ --- গোত্র - শ্রী ---কৃতে হস্মিন শ্রী শ্রী হনুমান দেবতায় পূজন কর্ম্মাণি যদ বৈগুন্যং জাতং তোদ্দোষ প্রশমনায় শ্রী বিষ্ণু স্মরণ মহং করিষ্যে। দশবার শ্রী বিষ্ণু জপ কর। •(২২) |[ ঘট বিসর্জন মন্ত্র ]| :- মন্ত্র:-- দেব ক্ষমস্ব (বলার সাথে সাথে দুহাতে ঘট নেড়ে দেবে।) এবার হাত জোড় করে বল- মন্ত্র:-- আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পূজনম্ বিসর্জ্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বর। *[] পূজা সমাপ্ত []* হনুমানচালীসা শ্রীহনূমতে নমঃ হনুমানচালীসা দোহা শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ নিজ মন মুকুরূ সুধারি । বরণউ রঘুবর বিমল জসু জো দায়কু ফল চারি ॥ বুদ্ধিহীন তনু জানিকে সুমিরৌঁ পবন-কুমার | বল বুধি বিদ্যা দেহু মোহিঁ হরহু কলেস বিকার ॥ চৌপাঈ জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর । জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর ॥ রাম দূত অতুলিত বল ধামা । অঞ্জনি-পুত্র পবনসুত নামা ॥ মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী । কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী ॥ কঞ্চন বরণ বিরাজ সুবেসা । কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা ॥ হাথ বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ । কাঁধে মূঁজ জনেউ সাজৈ ॥ সঙ্কর সুবন কেসরীনন্দন । তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন ॥ বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর । রাম কাজ করিবে কো আতুর ॥ প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া । রাম লখন সীতা মন বসিয়া ॥ সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিঁয়হিঁ দিখাবা । বিকট রূপ ধরি লঙ্ক জলাবা ॥ ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে । রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে ॥ লায় সজীবন লখন জিয়ায়ে । শ্রীরঘুবীর হরষি উরলায়ে ॥ রঘুপতি কীনহী বহুত বড়াঈ । তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাঈ ॥ সহস বদন তুমহরো জস গাবৈঁ । অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবৈঁ ॥ সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা । নারদ সারদ সহিত অহীসা ॥ জম কুবের দিগপাল জহাঁ তে । কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে ॥ তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীনহা । রাম মিলায় রাজ পদ দীনহা ॥ তুমহরো মন্ত্র বিভীষণ মানা । লঙ্কেস্বর ভয় সব জগ জানা ॥ জুগ সহস্র জোজন পর ভানূ । লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ॥ প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহীঁ । জলধি লাঁঘি গয়ে অচরজ নাহীঁ ॥ দুর্গম কাজ জগত কে জেতে ।সুগম অনুগ্রহ তুমহরে তেতে ॥ রাম দুআরে তুম রখবারে । হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ॥ সব সুখ লহৈ তুমহারী সরণা । তুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না ॥ আপন তেজ সমহারো আপৈ । তীনোঁ লোক হাঁক তেঁ কাঁপৈ ॥ ভূত পিসাচ নিকট নহিঁ আবৈ । মহাবীর জব নাম সুনাবৈ ॥ নাসৈ রোগ হরৈ সব পীরা । জপত নিরন্তর হনুমত বীরা ॥ সংকট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ । মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ॥ সব পর রাম তপস্বী রাজা । তিন কে কাজ সকল তুম সাজা ॥ ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ । সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ ॥ চারোঁ যুগ প্রতাপ তুমহারা । হৈ প্ররসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ॥ সাধু সন্ত কে তুম রখবারে । অসুর নিকন্দন রাম দুলারে ॥ অষ্ঠ সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা । অস বর দীন জানকী মাতা ॥ রাম রসায়ন তুমহরে পাসা । সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ॥ তুমহরে ভজন রাম কো পাবৈ । জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ॥ অন্ত কাল রঘুবর পুর জাঈ । জহাঁ জন্ম হরি-ভক্ত কহাসয়ী ॥ ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ । হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ ॥ সঙ্কট কটৈ মিটৈ সব পীরা । জো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা ॥ জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈঁ । কৃপা করহু গুরু দেব কী নাঈঁ ॥ জো সত বার পাঠ কর কোঈ । ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ ॥ জো য়হ পঢ়ৈ হনুমান চালীসা । হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা ॥ তুলসীদাস সদা হরি চেরা । কীজৈ নাথ হৃদয় মহঁ ডেরা ॥ দোহাঁ পবনতনয় সংকট হরণ, মঙ্গল মূরতি রূপ | রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ্ ॥ সিয়াবল রামচন্দ্রকী জয় । পবনসুত হনুমানকী জয় । _________________ 0 ________________ সংকটমোচন হনুমানাষ্টক মওগয়ন্দ ছন্দ বাল সময় রবি ভক্ষি লিয়ো তব তীনহুঁ লোক ভয়ো অঁধিয়ারো । তাহি সোঁ ত্রাস ভয়ো জগ কো য়হ সংকট কাহু সোঁ জাত ন টারো || দেবন আনি করী বিনতী তব ছাঁড়ি দিয়ো রবি কষ্ট নিবারো । কো নহিঁ জানত হৈ জগমেঁ কপি সংকটমোচন নাম তিহারো ॥ ১ বালি কী ত্রাস কপীস বসৈ গিরি জাত মহাপ্রভু পন্থ নিহারো । চৌঁকি মহা মুনি সাপ দিয়ো তব চাহিয় কৌন বিচার বিচারো ।| কৈ দ্দ্বিজ রুপ লিবায় মহাপ্রভু সো তুম দাস কে সোক নিবারো ।| ২ অঙ্গদ কে সঁগ লেন গয়ে সিয় খোজ কপীস য়হ বৈন উচারো |। জীবত না বচিহৌ হম সো জু বিনা সুধি লাএ ইহাঁ পগু ধারো । হেরি থকে তট সিন্ধু সবৈ তব লায় সিয়া- সুধি প্রান উবারো ।| ৩ রাবন ত্রাস দঈ সিয় কো সব রাক্ষসী সোঁ কহি সোক নিবারো । তাহি সময় হনুমান মহাপ্রভু জায় মহা রজনীচর মারো ।| চাহত সীয় অসোক সোঁ আগি সু দৈ প্রভু মুদ্রিকা সোক নিবারো ।| ৪ বান লগ্যো উর লছিমন কে তব প্রান তজে সুত রাবন মারো ।| লৈ গৃহ বৈদ্য সুষেন সমেত তবৈ গিরি দ্রোন সু বীর উপারো । আনি সজীবন হাথ দঈ তব লছিমন কে তুম প্রান উবারো ।| ৫ রাবন জুদ্ধ অজান কিয়ো তব নাগ কি ফাঁস সবৈ সির ডারো । শ্রীরঘুনাথ সমেত সবৈ দল মোহ ভয়ো য়হ সংকট ভারো ।| আনি খগেস তবৈ হনুমান জু বন্ধন কাটি সুত্রাস নিবারো ।| ৬ বন্ধু সমেত জবৈ অহিরাবন লৈ রঘুনাথ পতাল সিধারো ।| দেবিহিঁ পূজি ভলী বিধি সোঁ বলি দেউ সবৈ মিলি মন্ত্র বিচারো । জায় সহায় ভয়ো তব হী অহিরাবন সৈন্য সমেত সঁহারো || ৭ কাজ কিয় বড় দেবন কে তুম বীর মহাপ্রভু দেখি বিচারো । কৌন সো সংকট মোর গরীব কো জো তুমসোঁ নহিঁ জাত হৈ টারো || বেগি হরো হনুমান মহাপ্রভু জো কছু সংকট হয় হমারো || ৮ দোহা- লাল দেহ লালী লসে, অরু ধরি লাল লঁগূর । বজ্র দেহ দানব দলন, জয় জয় জয় কপি সূর ॥ ||ইতি সংকটমোচন হনুমানাষ্টক সম্পূর্ণ || _________________ ০ _______________ শ্রীহনুমৎ-স্তবন সোরঠা— প্রনবউঁ পবনকুমার খল বন পাবক গ্যানঘন। জাসু হৃদয় আগার বসহিঁ রাম সর চাপ ধর ।। অতুলিতবলধামং হেমশৈলাভদেহং দনুজবনকৃশানুং জ্ঞানিনামগ্রগণ্যম্। সকলগুণনিধানং বানরাণামধীশং রঘুপতিপ্রিয়ভক্তং বাতজাতং নমামি৷৷ গোষ্পদীকৃতবারীশং মশকীকৃতরাক্ষসম্। রামায়ণমহামালারত্নং বন্দেহনিলাত্মজম্৷৷ অঞ্জনানন্দনং বীরং জানকীশোকনাশনম্। কপীশমক্ষহন্তারং বন্দে লঙ্কাভয়ঙ্করম্ || উল্লঙ্ঘ্য সিন্ধোঃ সলিলং সলীলং যঃ শোকবহ্নিং জনকাত্মজায়াঃ | আদায় তেনৈব দদাহ লঙ্কাং নমামি তং প্রাঞ্জলিরাঞ্জনেয়ম্।। মনোজবং মারুততুল্যবেগং জিতেন্দ্রিয়ং বুদ্ধিমতাং বরিষ্ঠম্। বাতাত্মজং বানরযূথমুখ্যং শ্রীরামদূতং শরণং প্রপদ্যে।| আঞ্জনেয়মতিপাটলাননং কাঞ্চনাদ্রিকমনীয়বিগ্রহম্। পারিজাততরুমূলবাসিনং ভাবয়ামি পবমাননন্দনম || যত্র যত্র রঘুনাথকীর্তনং তত্র তত্র কৃতমস্তকাঞ্জলিম্। বাষ্পবারিপরিপূর্ণলোচনং মারুতিং নমত রাক্ষসান্তকম্ ।। __________________ 0 ________________ শ্রীহনুমানজীর আরতি আরতী কীজৈ হনুমান ললা কী। দুষ্টদলন রঘুনাথ কলা কী। টেক ৷৷ জাকে বল সে গিরিবর কাঁপৈ। রোগ-দোষ জাকে নিকট ন ঝাঁপৈ ৷৷ ১ অঞ্জনি পুত্র মহা বলদাঈ। সন্তন কে প্রভু সদা সহাঈ || ২ দে বীরা রঘুনাথ পঠায়ে। লঙ্কা জারি সীয় সুধি লায়ে ||৩ লঙ্কা সো কোট সমুদ্র সী খাঈ। জাত পবনসুত বার নলাঈ ৷৷ ৪ লঙ্কা জারি অসুর সংহারে। সিয়ারামজীকে কাজ সঁবারে || ৫ লক্ষ্মণ মূর্ছিত পড়ে সকারে। আনি সজীবন প্রান উবারে || ৬ পৈঠি পতাল তোরি জম-কারে। অহিরাবন কী ভুজা উখারে || ৭ বায়েঁ ভুজা অসুর দল মারে। দহিনে ভুজা সন্তজন তারে |। ৮ সুর নর মুনি আরতী উতারে। জৈ জৈ জৈ হনুমান উচারে ।। ৯ কঞ্চন থার কপূর লৌ ছাঈ। আরতি করত অঞ্জনা মাঈ ৷৷ ১০ জো হনুমান(জী) কী আরতী গাবৈ । বসি বৈকুণ্ঠ পরমপদ পাবৈ ৷৷ ১১ _________________ 0 ________________ শ্রীরামবন্দনা আপদামপহর্তারং দাতারং সর্বসম্পদাম্ । লোকাভিরামং শ্রীরামং ভূয়ো ভূয়ো নমাম্যহম্ || রামায় রামভদ্রায় রামচন্দ্রায় মানসে | রঘুনাথায় নাথায় সীতায়াঃ পতয়ে নমঃ ৷৷ নীলাম্বুজশ্যামলকোমলাঙ্গং সীতাসমারোপিতবামভাগম্ | পাণৌ মহাসায়কচারুচাপং নমামি রামং রঘুবংশনাথম্ || _________________ 0 ________________ শ্রীরামস্তুতি শ্রীরামচন্দ্র কৃপালু ভজু মন হরণ ভবভয় দারুণং । নবকঞ্জ-লোচন, কঞ্জ-মুখ, কর-কঞ্জ পদ কঞ্জারুণং ৷৷ কন্দৰ্প অগণিত অমিত ছবি, নবনীল-নীরদ সুন্দরং । পট পীত মানহু তড়িত রুচি শুচি নৌমি জনক সুতাবরং || ভজু দীনবন্ধু দিনেশ দানব-দৈত্যবংশ-নিকন্দনং । রঘুনন্দ আনঁন্দকন্দ কোশলচন্দ দশরথ-নন্দনং ॥ সির মুকুট কুণ্ডল তিলক চারু উদারু অঙ্গ বিভূষণং । আজানুভুজ শর-চাপ-ধর, সংগ্রাম-জিত-খরদূষনং ।| ইতি বদতি তুলসীদাস শঙ্কর-শেষ-মুনি-মন-রঞ্জনং || মম হৃদয়-কঞ্জ নিবাস কুরু, কামাদি খলদল-গঞ্জনং । মনু জাহিঁ রাচেউ মিলিহি সো বরু সহজ সুন্দর সাঁবরো । করুনা নিধান সুজান সীলু সনেহু জানত রাবরো ।। এহি ভাঁতি গৌরি অসীস সুনি সিয় সহিত হিয়ঁ হরর্ষীঁ অলী| তুলসী ভবানিহি পূজি পুনি পুনি মুদিত মন মন্দির চলী |। সোরঠাজানি গৌরি অনুকূল সিয় হিয় হরষু ন জাই কহি । মঞ্জুল মঙ্গল মূল বাম অঙ্গ ফরকন লগে || ।। সিয়াবর রামচন্দ্রকী জয় || _________________ 0 _______________ শ্রীরামাবতার ভএ প্রগট কৃপালা দীনদয়ালা কৌসল্যা হিতকারী । হরষিত মহতারী মুনি মন হারী অদ্ভুত রূপ বিচারী ৷৷ লোচন অভিরামা তনু ঘনস্যামা নিজ আয়ুধ ভুজ চারী । ভূষন বনমালা নয়ন বিসালা সোভাসিন্ধু খরারী ।। কহ দুই কর জোরী অস্তুতি তোরী কেহি বিধি করৌঁ অনন্তা | মায়া গুন গ্যানাতীত অমানা বেদ পুরান ভনন্তা || করুনা সুখসাগর সব গুন আগর জেহি গাবহিঁ শ্রুতি সন্তা । সো মম হিত লাগী জন অনুরাগী ভয়উ প্রগট শ্রীকন্তা ৷৷ ব্ৰহ্মাণ্ড নিকায়া নির্মিত মায়া রোম রোম প্রতি বেদ কহৈ| মম উর সো বাসী য়হ উপহাসী সুনত ধীর মতি থির ন রহৈ । উপজা জব গ্যানা প্রভু মুসুকানা চরিত বহুত বিধি কীন্হ চহৈ । কহি কথা সুহাঈ মাতু বুঝাঈ জেহি প্রকার সুত প্রেম লহৈ| মাতা পুনি বোলী সো মতি ডোলী তজহু তাত য়হ রূপা । কীজৈ সিসুলীলা অতি প্রিয়সীলা য়হ সুখ পরম অনূপা ।। সুনি বচন সুজানারোদন ঠানা হোই বালক সুরভূপা । য়হ চরিত জে গাবহিঁ হরিপদ পাবহি তে ন পরহিঁ ভবকূপা ৷৷ ________________ 0 ________________ শিবপঞ্চাক্ষরস্তোত্রম্ নাগেন্দ্রহারায় ত্রিলোচনায় ভস্মাঙ্গরাগায় মহেশ্বরায় । নিত্যায় শুদ্ধায় দিগম্বরায় তস্মৈ 'ন' কারায় নমঃ শিবায়৷৷ মন্দাকিনীসলিলচন্দনচর্চিতায় নন্দীশ্বরপ্রমথনাথমহেশ্বরায় । মন্দারপুষ্পবহুপুষ্পসুপূজিতায় তস্মৈ 'ম' কারায় নমঃ শিবায় ৷৷ শিবায় গৌরীবদনাব্জবৃন্দসূর্যায় দক্ষাধ্বরনাশকায় । শ্ৰীনীলকণ্ঠায় বৃষধ্বজায় তস্মৈ ‘শি' কারায় নমঃ শিবায় || বসিষ্ঠকুম্ভোদ্ভবগৌতমাৰ্য মুনীন্দ্রদেবার্চিতশেখরায় । চন্দ্রার্কবৈশ্বানরলোচনায় তস্মৈ 'ব’ কারায় নমঃ শিবায় । য (ক্ষ) জ্ঞস্বরূপায় জটাধারায় পিনাকহস্তায় সনাতনায়। দিব্যায় দেবায় দিগম্বরায় তস্মৈ 'য়' কারায় নমঃ শিবায় ।। পঞ্চাক্ষরমিদং পুন্যং যঃ পঠেচ্ছিবসন্দিধৌ, শিবলোকমবাপ্নোতি শিবেন সহ মোদতে ।। ॥ ইতি ॥ _________________ 0 ________________
নবগ্রহ হল - সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। হিন্দুশাস্ত্রে নবগ্রহকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। এই নয়টি গ্রহের পূজা করলে তাঁদের আশীর্বাদ মেলে এবং অনুকূল ফলাফল পাওয়া যায়।দিনে বা রাত্রে যে কোনও সময়ই নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করা যায়। নবগ্রহ স্তোত্র জপের মাধ্যমে নয়টি গ্রহকে শান্ত করা যায়। প্রতিদিন নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি হয়। পরিবারে কোনও কলহ থাকে না, সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে। সূর্য (রবি):-- জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। অর্থ - জবা ফুলের মত রক্তিম, কাশ্যপের পুত্র, প্রচণ্ড জ্যোতি বা তেজ যুক্ত, অন্ধকার নাশক, সর্বপাপ বিনাশক, হে দিবাকর! আমি আপনাকে প্রণাম করি। চন্দ্র :-- দধিশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্ণব সম্ভবম্। নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুট ভূষণম্।। অর্থ - দধি, শঙ্খ এবং বরফের ন্যায় আভা যুক্ত, ক্ষীরসাগর হইতে আবির্ভূত, শিবশম্ভুর মস্তকে ভূষিত, হে চন্দ্রদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। মঙ্গল:- ধরণীগর্ভসম্ভূতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম্। কুমারং শক্তিহস্তঞ্চ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম্।। অর্থ - ভূমিপুত্র, বিদ্যুৎ পুঞ্জের ন্যায় দীপ্তিমান, হাতে শক্তি এবং যাকে কুমার বলা হয়, রক্তিম শরীর, হে মঙ্গলদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। বুধ:- প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্। সৌম্যং সর্বগুণোপেতং তং বুধং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - প্রিয়ঙ্গুফুলের কলির মতো শ্যাম বর্ণ, রূপে তুলনাহীন, সোমের (চন্দ্রের) পুত্র, সর্বগুণী, হে বুধ আমি আপনাকে প্রণাম করি। বৃহস্পতি:- দেবতানামৃষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্। বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশং তং নমামি বৃহস্পতিম্।। অর্থ - দেবতা এবং ঋষিদের গুরু, স্বর্ণকান্তি, তিনলোকে পূজিত, হে বৃহস্পতি! আমি আপনাকে প্রণাম করি। শুক্র:- হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্। সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - পদ্মবৃন্তে শিশির বিন্দুর মতো যার আভা, দৈত্য গুরু, সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী, হে শুক্রদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি শনি:-- নীলাঞ্জনসমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম্। ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং তং নমামি শনৈশ্চরম্।। অর্থ - নীল বর্ণের চক্ষু সমান আভা, সূর্য্য ও ছায়ার পুত্র, যমের জেষ্ঠ্য ভ্রাতা, হে শনিদেব! আমি আপনাকে প্রণাম করি। রাহু:- অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দ্দকম্। সিংহিকায়াঃ সূতং রৌদ্রং তং রাহুং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - অর্ধদেহী, মহাশক্তিশালী, চন্দ্র-সূর্য্য দমনকারী, সিংহিকার পুত্র, হে রাহু! আমি আপনাকে প্রণাম করি। কেতু:- পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দ্দকম্। রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্।। অর্থ - পলিমাটির ধুলার মতো ধোঁয়াটে বর্ণ, গ্রহ-নক্ষত্র দমনকারী, রুদ্রের আত্মজ, নিষ্ঠুর, হে কেতু! আমি আপনাকে প্রণাম করি। নবগ্রহ স্তোত্র পাঠের মাহাত্ম্য ইতি ব্যাসমুখোদ্গীতং যঃ পঠেৎ সুসমাহিতঃ। দিবা বা যদি বা রাত্রৌ শান্তিস্তস্য নঃ সংশয়ঃ।। অর্থ - ব্যাসদেব দ্বারা কথিত এই নবগ্রহ স্তোত্র যে মনোযোগ সহকারে দিন বা রাত্রে পাঠ করে, তাঁর সব দুঃখ-কষ্ট ও বাধা-বিঘ্ন দূর হয়, শান্তি লাভ হয়। ঐশ্বর্য্যমতুলং তেষামারোগ্যং পুষ্টিবর্দ্ধনম্। নর-নারী-নৃপাণাঞ্চ ভবেদ্দুঃস্বপ্ননাশনম্।। অর্থ - অতুল ঐশ্বর্য্য প্রাপ্তি, আরোগ্য লাভ এবং দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। কোনও স্ত্রী, পুরুষ বা রাজাকে নিয়ে দেখা দুঃস্বপ্ন নাশ হয়। নবগ্রহ স্তোত্র
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠেই শান্ত হয় নবগ্রহ
জন্মকুণ্ডলীতে গ্রহের অবস্থান মানব জীবনে ভালো-মন্দ প্রভাব ফেলে। গ্রহের কারণে জীবনে প্রতিকূল প্রভাব দেখা দিলে, সেই বিশেষ গ্রহের শান্তির জন্য বা সমস্ত গ্রহের শান্তির জন্য নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করা হয়। মহর্ষি বেদব্যাস নবগ্রহ স্তোত্র রচনা করেন।
পাঠের সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা
নবগ্রহ স্তোত্র
<--- অর্ঘ্য ---> চন্দন, জল, পুষ্প, আতপ চাল, কুশ, তিল, দূর্বা, সরিসা, যব। <--- পঞ্চামৃত বা মধুপর্ক ---> দধি, দুধ, ঘৃত, মধু, দেশী চিনি, একসঙ্গে মিশ্রিত করে মধুপর্ক তৈরি করা হয়। ----- মধুপর্ক শোধন মন্ত্র :----- ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।। ওঁ মধু নক্ত সু তো ষ সো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ। মধু দ্যৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধুমান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ মাধ্বীগা ভবন্তু নঃ।। ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু _______ ________ ----- অগ্নি জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ অগ্নিমিলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেব মৃত্বিজম্। হোতারং রত্নধাতম্।। ----- দীপ জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ সুপ্রকাশো মহাদীপ সর্বতস্তি মীরাপহঃ সবাহ্য অভ্যন্তর জ্যোতি দীপ হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম। ইতি দীপ।। -----ধূপ জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ বনস্পতি রসো দিব্যো গন্ধাতোঃ সুমনোহরঃ আঘ্ৰেয়ঃ সর্বদেবানং ধূপো হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম। ইতি ধূপ।। _______ ________ <--- গোপীচন্দন শুদ্ধি এবং মৃত্তিকা শুদ্ধি ---> ওঁ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণক্রান্তে বসুন্ধরে। মৃত্তিকা হরমে পাপং যন্ময়া দুস্কৃতং কৃতম।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥ ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু _______ ________ <--- আচমন ---> প্রথমে মুখে জলের তিনবার ছিটা দিয়ে ও মুখে হাত দিয়ে মুছে আচমন করিবে। তারপর তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিত করে মুখ স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা নাসিকা স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা চক্ষুদ্বয় ও পরে কর্ণদ্বয় স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করিবে। হস্তদল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে। সমস্ত অঙ্গুলীর দ্বারা মস্তক স্পর্শ করিবে। অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা বাহুদ্বয় স্পর্শ করিবে। এবং শুচি হইবে । -----[উপরোক্ত সমস্ত কাজটি বিষ্ণুস্মরণ করিতে করিতে করতে হবে]----- ----- বিষ্ণুস্মরণ মন্ত্র :----- ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ।। • পরে হাত জোড় করে :----- ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভূজং পীত বাসসম্। নমঃ অপবিত্র পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা । যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্য অভ্যন্তরঃ শুচিঃ নমঃ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ । নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণী কারয়ে ।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥ _______ ________ " বং এতেভ্য গন্ধাদিভ্য নমঃ " ( এই মন্ত্রে ৩ বার ফুল ও চন্দনে জলের ছিটা দাও ) <----- স্বস্তি বাচন -----> ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ । স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু। ওঁ গণানাং ত্বা গণপতি হঁং হবামহে ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতি হঁং হবামহে ওঁ নিধিনাং ত্বা নিধিপতি হঁং হবামহে। বসো মম॥ ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি <----- সুক্ত মন্ত্র -----> ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিচম্। উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে॥ ওঁ অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু। <----- আসন শুদ্ধি -----> আসনের নিচে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া পরে একটি ফুল নিয়ে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ হ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ পরে আসনে একটি গন্ধ পুষ্প দিয়া বলিবে :--- মন্ত্র:--- 'ওঁ আসন মন্ত্রস্য মেরু পৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূৰ্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।' 'ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাঃ দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম ॥' পরে হাত জোড়ে বামদিকে ঝুঁকে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ ওঁ সশক্তি গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ _______ ________ দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে বল:--- ওঁ গনেশায় নমঃ মাথার ওপরে :--- ও ব্রহ্মণে নমঃ নিচের দিকে :--- ওঁ অনন্তায় নমঃ বুকের কাছে:--- ও নারায়ণায় নমঃ ওঁ সত্য নারায়ণায় নমঃ <----- কর শুদ্ধি -----> একটি রক্ত বর্ণ পুষ্প গ্রহণ করিয়া ওঁ মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া "হে সৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশান কোণে ফেলিবে । <----- করন্যাস -----> আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ [ উভয়হস্তের তর্জ্জনী অঙ্গুলী দ্বারা উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করিবে] ঈং তর্জ্জনীভ্যাং স্বাহা [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের তর্জ্জনী স্পর্শ করিবে] উং মধ্যমাভ্যাং বষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের মধ্যমা স্পর্শ করিবে] ঐং অনামিকাভ্যাং হূং [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের অনামিকা স্পর্শ করিবে] ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের কনিষ্ঠা স্পর্শ করিবে] অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্ [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে] <----- অঙ্গন্যাস -----> আং হৃদয়ায় নমঃ। ঈং শিরসে স্বাহা। উং শিখায়ৈ বষট্। ঐং কবচায় হূং। ঔং নেত্রাভ্যাং বৌষট্। অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্। [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে বেষ্টন করিয়া করতল ধ্বনি করিবে। ] _______ ________ <----- পুষ্প শুদ্ধি -----> পুষ্প পাত্রে হাত রেখে বল:--- মন্ত্র :--- ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্প সম্ভবে। পুষ্প চয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা॥ <----- ভূমি শুদ্ধি -----> গন্ধ পুষ্প ভূমিতে ফেলিতে ফেলিতে বলিবে:- মন্ত্র :--- ওঁ আঁধার শক্তয়ে নমঃ ওঁ কূর্ম্মায় নমঃ ওঁ অনন্তায় নমঃ ওঁ পৃথিবৌ নমঃ এবার ' ফট ' বলিয়া পাত্র ধুবে । পরে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া তাম্র পাত্রটি রাখিবে । পাত্রটি রাখার পর ওঁ মন্ত্র বলিয়া পাত্রে জল দিবে । এবং ফুল দিয়ে মন্ত্র বলিতে বলিতে পূজা করিবে। মন্ত্র :--- ওঁ মং বহির্মন্ডলায় দশ কলাত্মনে নমঃ অং সূর্য মন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ উং সোম মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ ---(উপরোক্ত পদ্ধতির দ্বারা কোষাকুশী শুদ্ধ করিতে হবে)--- <----- জল শুদ্ধি -----> একটি ত্রিকোণ মণ্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি চতুষ্কোণ আকিয়া কোষায় জল ভরিয়া ও চন্দনযুক্ত ফুল ও বিল্ব পত্র দিয়া অঙ্কুশ মুদ্রার দ্বারা জল স্পর্শ করিয়া বল :- মন্ত্র :--- ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলে হস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।। _______ ________ ' ওঁ ' মন্ত্রে জলে গন্ধ পুষ্প দিয়া 'বং' মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দেখাইয়া মৎস মুদ্রা দ্বারা ঢাকিয়া নিজের " বীজ মন্ত্র " দশবার জপ করিবে। জল শুদ্ধির পর ঐ জল বিল্বপত্র দ্বারা পূজোর উপাচারে ও নিজের মাথায় ছিটাইবে । <----- ভূতাপসারণ -----> এই মন্ত্র বলার সময় শ্বেত সরিষা অথবা আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছড়াইবে। মন্ত্র :--- ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতাঃ যে ভূতাঃ ভূমি সংস্থিতাঃ । যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ।। এবার মস্তকের উপর তিনবার "ফট" মন্ত্রে করতালি দিয়া ভূত অপসারণ ও "তুড়ি" দিয়া দশদিক বন্ধন করিবে। <----- ভূত শুদ্ধি -----> নিজের চারিদিকে জলধারা দিয়া 'বং' মন্ত্র উচ্চারন করিয়া হাত জোড় হাত করে বল :----- মন্ত্র :--- ওঁ মূল শৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্না পথেন জীব শিবং পরম শিব পদে যোজয়ামি স্বাহা। ওঁ যং লিঙ্গ শরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা। ওঁ রং সংকোচং শরীরং দহ দহ স্বাহা। ওঁ পরম শিব সুষুম্না পথেন মূল শৃঙ্গাট মূল্ল সোল্লস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল হংস সোহহং স্বাহা। <----- প্রাণায়াম -----> ডান হাতের অঙ্গুষ্ট দ্বারা ডান নাক বন্ধ করে 'ওঁ নমঃ শিবায়' বা 'ওঁ' মন্ত্রে 'চার' বার জপ করিতে করিতে বা নাকে শ্বাস নিবে। তারপর ১৬ বার জব করতে করতে শ্বাস রুদ্ধ রাখবে। পরে ৮ বার জপ করতে করতে শ্বাস ত্যাগ করবে। এইরকম তিনবার করতে হবে। _______ ________ <----- সুর্যার্ঘ্য -----> কুশীর মধ্যে দূর্বা চন্দন পুষ্প জল বেলপাতা দু হাতে ধরে বলবে:--- মন্ত্র :--- ওঁ বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িতে। ইদ্দমর্ঘং ওঁ নমো ভগবতে শ্রী সূর্যায় নমঃ।। ওঁ এহি সূর্য্য সহস্রাংশে তেজোরাসে জগৎপতে। অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥ জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাত জোড় করে বল :--- ওঁ জবা কুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। <----- দ্বারদেবতা পূজা -----> পুষ্প নিয়ে - " এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যোঃ নমঃ " বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিবে। --- এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ব্রাহ্মণে নমঃ এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ <----- পঞ্চ দেবতার পূজা -----> এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সূর্যায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বিষ্ণুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ দূর্গায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শ্রী গুরুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্বদেব দেবীভ্যোঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ পিতৃ লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্ব ঋষি লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) _______ ________ (প্রতি প্রহরে মৃত্তিকা দ্বারা নুতন নুতন মূর্তি তৈরি করে মূর্তিন্যাস করতে হবে -) <----- মূর্তিন্যাস -----> অঙ্গুষ্ঠ যোগে তর্জনী দ্বয়ে - নং তৎপুরুষায় নমঃ। কমন অঙ্গুষ্ঠ যোগে মধ্যমা দ্বয়ে - মং অখোরায় নমঃ। দ্বিতীয় অঙ্গুষ্ঠ যোগে কনিষ্ঠা দ্বয়ে - শিং সদ্যজাতায় নমঃ। চতুর্থ অঙ্গুষ্ঠ যোগে অনামিকা দ্বয়ে - বাং বামদেবতায় নমঃ। তৃতীয় তর্জনী যোগে অঙ্গুষ্ঠ দ্বয়ে - য়ং ঈশানায় নমঃ। প্রথম <----- পূজার সংকল্প -----> কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে। ওঁ বিষ্ণুরোম্ তৎ সদ্ অদ্য ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাষ্করে কৃষ্ণপক্ষে শিব চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম শিবলোক প্রাপ্তি কামঃ যথা শক্ত্যু পচারনাং শিব পূজা তদ্ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মাহং করিষ্যে। <----- শিবের ধ্যান -----> ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসম। রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরা ভীতি হস্তং প্রসন্নম্। পদ্মাসীনং সমস্তাং স্তুত মমরগণৈ ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম। বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্রম ত্রিনেত্রম্।। _______ ________ ------ [[[ প্রথম প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজা জপ পরায়ণঃ । করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বরঃ।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. দুগ্ধ দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দুগ্ধং ওঁ ঈশানায় নমঃ। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ________ ------ [[[ দ্বিতীয় প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপহরায় চ ৷ শিবরাত্রৌ দদমর্ঘ্যং প্রসীদ উমায় সহ ৷৷ (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. দধি দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দধিং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ________ ------ [[[ তৃতীয় প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ দুঃখ দারিদ্র্য শোকেন্ দগ্ধোহহং পার্বতী প্রিয়। শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. ঘৃত দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ______ ------ [[[ চতুর্থ প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্করঃ । শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. মধু দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং মধু ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ _______ <----- শিবের ধ্যান -----> ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজত গিরিনিভ্যং চারু চন্দ্রাবতং সম রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশু মৃগবরা ভীতিহস্তং প্রসন্নম্ পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈ র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম । বিশ্বদ্যং বিশ্ববীজং নিখিল ভয় হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্ ।। ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ _______ ________ <----- শিব প্রণাম মন্ত্র -----> ওঁ নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ । নমস্তে দিব্য চাক্ষুষে । নমঃ পিনাক হস্তায় বজ্র হস্তায় বৈ নমঃ। নমঃ ত্রিশুল হস্তায় দন্ড পাশাসি পানয়ে। নমস্তৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ। নমো শিবায় শান্তায় কারন ত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।। নমস্যে ত্বাং মহাদেব লোকানাং গুরুমীশ্বরম পুংসাম পূর্ণকামানাং কাম পুরামরাঙ্খিপম ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপ হরায় চ । নমঃ শিবায় নমঃ। ওঁ শরনাগত দীনার্ত পবিত্রানায় পরায়নে সর্ব্বস্মার্তে হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে। হরে দেবী নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ _______ ________ -----[ শিবাষ্টক স্তোত্রম ]----- প্রভু মীশ মণীশ মহেশ গুণং গুণ হীন মহীশ গরলাভরণম্। রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম।। গিরিরাজ সুতান্বিত বামতনুং তনু নিন্দিত রাজিত কোটিবিধুম্ বিধি বিষ্ণু শিরোধৃত পাদযুগং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্।। শশলাঞ্ছিত রঞ্জিত সম্মুকুটং কটি লম্বিত সুন্দর কৃত্তিপটং। সুরশৈবালিনী কৃত পূত জটং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।। নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটি বিধুম্। বিধুখন্ড বিখন্ডিত ভল তটং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ বৃষ রাজ নিকেতন মাদি গুরুং গরলাসন মাজি বিষান ধরম। প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জন কং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ মকরধ্বজ মও মাতঙ্গ হরং করিচম্মগ নাগ বিবোধকরম্। বরমার্গণ শূল বিষান ধরং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ জগদুদ্ভব পালন নাশকরং ত্রিদিবেশ শিরোমণি ঘৃষ্টপদম্। প্ৰিয়মানব সাধু জনৈক গতিং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ অনাথং সুদীনং বিভো বিশ্বনাথ পুনর্জন্ম দুঃখাত পরিত্রাহি শম্ভো। ভজতোহখিল দুঃখ সমূহহরং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ ইতি শিবাষ্টকং স্তোত্রম সম্পূর্ণম্ ।। _______ ________ -----[ শিবরাত্রি ব্রতকথা ]----- কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন। গৌরীসহ বসিয়া করেন আলাপন।। ফল পুষ্পে সুশোভিত পর্বত কৈলাস। যক্ষ রক্ষঃ গন্ধর্বগণের নিত্য বাস।। রবির কিরণ পড়ি শিখরে তাহার। মলিন করিয়া দেয় বরন সোনার।। আনন্দে পার্ব্বতি সতী জিজ্ঞাসেন শিবে। কহ দেব! কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভবে।। কিবা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন্ তপস্যায়। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ হয়।। এরূপ কি পূণ্য কর্ম আছে সুবিদিত। জাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।। মর্ত্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরা তলে। অনায়াসে পারে বল কি কর্ম্ম করিলে।। শুনিয়া পার্ব্বতি বাক্য কহেন শঙ্কর। শুন দেবী! কোন কর্ম্ম মম প্রীতিকর।। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দ্দশী। শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকার নিশি।। প্রাণী হিংসা পরায়ণ ব্যাধ একজন। ভীষণ, আকৃতি তার ক্রুর আচরণ।। কৃষ্ণবর্ণ দেহ তার পিঙ্গল নয়ন। জাল বাগুরা হস্তে করয়ে ভ্রমণ।। বনে বনে ভ্রমী করে প্রাণী বধ কত। নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।। একদিন মাংস ভার করিয়া বহন। গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।। বহুদূর বন পথ ব্যাধ পরিশ্রান্ত। বৃক্ষ মূলে শয়ন করিল হয়ে ক্লান্ত।। ক্রমে ক্রমে সূর্যদেব অস্তা চলে যান। হেন কালে নিদ্রিত ব্যাধের হল জ্ঞান।। চতুর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন। চিন্তিত হইয়া ব্যাধ করিল মনন।। আজ গৃহে যাইব না এই রাত্রি কাল। বৃক্ষতে করিব বাস হউক সকাল।। লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া। মাংস ভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।। হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর। উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভর।। ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যাধ অতিশয়। অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।। শীতেতে কাঁপিতে ছিল শরীর তাহার। সর্বাঙ্গে পড়িতে ছিল নিশার তুষার।। দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষ মূলে। স্থাপন করিয়াছিল কেহ কোন কালে।। সেই দিন শিবরাত্রি দৈবের ঘটনা। উপবাসী ব্যাধ তার অন্নের ভাবনা।। তাহার শরীর হতে হিম বিন্দু যত। বৃক্ষ মূলে শিবলিঙ্গে পড়ে অবিরত।। সেই বৃক্ষ বিল্ববৃক্ষ নামে সুবিখ্যাত। যাহার পত্রেতে শম্ভু হল সদা প্রীত।। ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্ব দল। শিবের মস্তকে পড়িতে ছিল অবিরল।। ব্যাধের সে আচরণে দেব আশুতোষ। মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।। এইভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল। ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।। বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল। রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।। মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে। অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্ট মনে।। এই ভাবে তাহার পারন সিদ্ধ হল। শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।। আয়ূ শেষ হল তার বহুকাল পরে। যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।। যমদূত রজ্জু দ্বারা বাঁধিতে উদ্যত। হেন কালে পৌঁছে দূত শিবের নিযুক্ত।। শিবদূত বলে যমদূত যাও দূরে। ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।। যমদূত বলে এই ব্যাধ পাপী অতি। না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।। যমপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি। যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।। এই রূপে উভয়ের বিবাদ হইল। শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।। পরাজিত হয়ে যমদূত যায় ঘরে। এই বার্তা প্রকাশিল যমের গোচরে।। উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন। বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্নন।। শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপাচারী। শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।। আজীবন কেহ যদি পাপ কর্ম করে। শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।। মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর। নাহি ভয় করি আমি শিবের কিঙ্কর।। যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে। গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।। ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন। ভক্তিভাবে করিবে আমার আরাধন।। সদাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি। ব্রতের বিধান দেবী! শুনহ সম্প্রতি।। পূর্বদিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন। নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।। রাত্রিতে তৃণের শর্য্যা নির্মাণ করিবে। তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।। প্রাতঃকালে সত্ত্বর করিয়া গাত্রোত্থান। নদী কিম্বা সরোবর জলে করি স্নান।। বিল্ববৃক্ষে মূলে গিয়া প্রণাম করিবে। অবশ্যক পত্র সংগ্রহ করিবে।। একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই। মনি মুক্তা স্বর্ণ রত্ন প্রবাল না চাই।। রাত্রিতে হইয়া শুচি যে পূজে আমারে। সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।। পার্থিব শংঙ্কর মূর্তি করিয়া নির্মাণ। প্রথম প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।। দ্বিতীয় প্রহরে দধি তৃতীয়তে ঘৃত। চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানেতে বিহিত।। পূজা শেষে যথা বিধি নৃত্য গীত করি। তুষিবে আমারে নর শুনহ শংঙ্করী।। পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচি ব্রত। করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।। এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে। অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।। কঠোর তপস্যা আর দান যজ্ঞ যত। কোন কর্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।। এই ব্রত আচরণে লভিয়া বাঞ্ছিত। অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।। ব্রতের মাহাত্ম্য এবে হরহ শ্রবন। পুণ্য লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।। পৃথিবীতে বারানসী সর্ব্ব তীর্থ সার। যেখানে গমনে খন্ডে কলুষ অপার।। ব্যাধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি। নির্দিষ্ট হইল তার কৈলাস বসতি।। শুনিয়া পার্ব্বতি দেবী ব্রত বিবরণ। আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণন।। তাহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত। এই রূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।। যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে। সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।। আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত। অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।। গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে। শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।। শিবরাত্রি ব্রত কথা শুনে যেই জন। অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।। মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি। শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।। শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্ত হইল। ভক্তিভরে সবে এবে শিব শিব বল।। _______ ________ <----- [[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম ]] -----> কৈলাস শিখরে বসি দেব ত্রিলোচন । গৌরী সহ করে নানা কথোপকথন ।। মৃদুমন্দ বাতাস বহে সেথা ধীরি ধীরি । ফুলের সৌগন্ধ কিবা আহা মরি মরি ।। সুন্দর জোছনারাশি মধুর যামিনী । চন্দ্রের কিরণ ছটা বিকাশে অবণী ৷৷ মহানন্দে হৈমবতী কহে পঞ্চাননে । কহ প্রভু কৃপা করে দাসীরে এক্ষণে ৷৷ বড় সাধ হয় মনে দেব প্রাণপতি । তোমার নামের সংখ্যা শুনি বিশ্বপতি ।। আশুতোষ পরিতোষ হয়ে মোর প্রতি । সে সাধ পুরাও মম ওহে পশুপতি ।। শুনিয়া দেবীর বাণী কহে মহেশ্বর । কি ইচ্ছা হয়েছে বল আমার গোচর ।। শুনিয়া হরের কথা কহেন পার্ব্বতী । শুনিবারে সাধমম হয়েছে বিভুতি ।। তোমার নামের সংখ্যা কহ ত্রিলোচন । তব মুখামৃত বাণী শুনি অনুক্ষণ ।। এতেক শুনিয়া কহে ভোলা মহেশ্বর । শুন দেবী মোর নাম কহি অতঃপর ।। সেইসব নাম আমি করিব কীর্ত্তন । শ্রবন পাঠেতে মুক্ত হবে জীবগন ।। নাহি সংখ্যা মম নাম না যায় বর্ণন । সংক্ষেপেতে বলি যাহা করহ শ্রবণ ।। যেই নাম ধ্যানে জীব পায় দিব্য গতি । সেইসব নাম তবে কহি শুন সতী ।। মম মুর্ত্তি ধরা তলে কেহ না দেখিবে । পাষাণে নির্ম্মিত লিঙ্গ দর্শন পাবে ।। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মোর ভিন্ন ভিন্ন নামে । সকলের বরণীয় হয় ধরাধামে ।। অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা । ১ মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।। ২ জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি । ৩ দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।। ৪ মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী। ৫ গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ॥ ৬ ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি । ৭ ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী ।। ৮ জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ । ৯ রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।। ১০ নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু । ১১ ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।। ১২ তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন । ১৩ পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ॥১৪ রজত বরণ বলি নাম গিরিবর । ১৫ নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।। ১৬ যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।১৭ বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।১৮ সূর্য্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর।১৯ চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।২০ মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা । ২১ বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্ৰাতা ॥ ২২ বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ । ২৩ শুক্রাচার্য্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।২৪ শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার।২৫ রাহুকেতু নাম রাখে সর্ব্ববিঘ্ন হর ।।২৬ মৃত্যুঞ্জয় নাম মম মৃত্যু জয় করি ।২৭ ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ॥২৮ কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ । ২৯ বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।৩০ শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন । ৩১ ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।৩২ পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।৩৩ ভৃগু মুনি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।৩৪ ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ । ৩৫ ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।৩৬ মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।৩৭ বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।৩৮ শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।৩৯ বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।৪০ জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি।৪১ বিজয়া রাখিল নাম অনাথের গতি।।৪২ তালবেতাল নাম রাখে সর্ব্ব বিঘ্নহর । ৪৩ মার্কন্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।। ৪৪ শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।৪৫ ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্ম পরাৎপর ।।৪৬ প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিল তারণ । ৪৭ চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।৪৮ সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী । ৪৯ আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।৫০ বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।৫১ রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।৫২ ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ । ৫৩ দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।৫৪ বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।৫৫ গন্ধর্বেরা নাম রাখে গন্ধর্ব ঈশ্বর ।।৫৬ অঙ্গিরা রাখিল নাম পাপতাপহারী ।৫৭ দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।৫৮ ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান নাম বাঘাম্বর ।৫৯ বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।৬০ কৃত্তিবাস নাম রাখে কত্যায়নী ।৬১ ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুণি ।।৬২ সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দ্দন ।৬৩ আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।৬৪ রতিপতি নাম রাখে মদন দহন ।৬৫ দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।৬৬ জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।৬৭ বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।৬৮ পৌলস্ত্য রাখিল নাম ভবভয়হারী।৬৯ গৌতম রাখিল নাম জন মনোহারী ।।৭০ ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর।৭১ বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘন্টেশ্বর ।।৭২ মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্ব্বপাপহর।৭৩ জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।৭৪ কুরুক্ষেত্র রণস্থলে পামবরদ্বারী ।৭৫ ঋষীগণ নাম রাখে মুণি মনোহারী ।।৭৬ ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।৭৭ ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।৭৮ উদ্দালক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।৭৯ অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংঙ্কর ।।৮০ দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর । ৮১ সেতু বন্ধে হয় নাম মোর রামেশ্বর ।।৮২ হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।৮৩ ভরত রাখিল নাম উমা মহেশ্বর ।।৮৪ জলধর নাম রাখে করুণা সাগর ।৮৫ মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।৮৬ ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।৮৭ চাঁদ সদাগর নাম রাখে হয়গ্রীব ।।৮৮ জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।৮৯ ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।৯০ দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।৯১ দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।৯২ দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।৯৩ বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।৯৪ কালীঘাটে সিদ্ধপাটে নকুল ঈশ্বর ।৯৫ পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।৯৬ গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।৯৭ মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।৯৮ কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।৯৯ ওঁ কার আমার নাম রাখে সান্দীপনি ।।১০০ ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।১০১ শ্বেত ভুধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।১০২ বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।১০৩ মহালক্ষী রাখে নাম অশিব নাশন ।।১০৪ অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ । ১০৫ গঙ্গাজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।১০৬ ভাঙ্গড়ভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ । ১০৭ বুড়াশিব বলি খ্যাত এই তিন ভুবন ।।১০৮ হর হর ব্যোম বলি যে ডাকে আমারে। পরিতুষ্ট হয় সদা তাহার উপরে।। অসংখ্য আমার নাম না হয় বর্ণন। অষ্টোত্তর শতনাম করিনু কীর্ত্তন।। মনেতে যে ভক্তি করি করয়ে পঠন। রোগ শোক নাহি হয় তাহার ভবন।। নির্ব্ব্যাধি হইয়া সে দীর্ঘজীবী হয়। শিব বরে সেই জন মুক্তি পদ পায়।। নামের মাহাত্ম্য আমি করিনু বর্ণন। মম নাম মম ধ্যান করো সর্বজন।। ইহকালে সুখে রবে মরত ভুবনে। অন্তঃকালে হবে গতি কৈলাস ভবনে।। [ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্ত ] _______ _________ <----- মধুসুক্ত -----> ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ। ওঁ মধুনক্ত সুতোষসো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ মধু দৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধু মান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ। মাধ্বীগাব ভবন্তু নঃ ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ।। <----- শান্তি মন্ত্র পাঠ -----> একটি পাত্রে সামান্য জল নিয়ে তাহাতে চন্দন পুষ্প বেলপাতা দিয়ে জলের ছিটা দিতে দিতে পাঠ কর। ওঁ স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ। স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নঃ স্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমী। স্বস্তি নঃ বৃহস্পতি দধাতু।। দৌঃ শান্তিঃ হি অন্তরীক্ষ শান্তি হিঃ পৃথিবী শান্তি হি অপ শান্তি হি ঔষধয় শান্তি হি বনস্পতয় শান্তি হিঃ বিশ্বদেবা শান্তি হিঃ শান্তিরেব শান্তি হিঃ ওঁ শান্তি রস্তু শিবাঞ্চাস্তু বিনশ্যত্য শুভঞ্চ যৎ যতঃ। এবা গতং পাপং তত্রৈব প্রতি গচ্ছতু। ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি <----- বিসর্জন -----> নমঃ মহাদেব ক্ষমস্ব বলিয়া কিঞ্চিৎ জল দিয়া উত্তর শিয়রে শোয়াইয়া দিবেন, সংহার মুদ্রায় একটি পুষ্প নিয়ে আঘ্রাণ করিতে করিতে ঐ দেবতা নিজের হৃদয়ে প্রবেশ করিলেন ভাবিয়া পুষ্পটি ফেলিয়া দিয়া হাত ধুইয়া ঈশান কোণে ত্রিকোণ মন্ডল করিয়া নির্ম্মাল্য লইয়া নমঃ চন্ডেশ্বরায় নমঃ মন্ত্রে মন্ডলের মধ্যে দিবেন।। <----- দক্ষিণাবাক্য -----> এতস্মৈ কাঞ্চন মূল্যায় নমঃ (৩ বার) এতৎ অধিপতয়ে শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ। এতৎ সম্প্রদানায় ব্রাহ্মণায় নমঃ। (হাত জোড় করে বলিবে) <----- সাঙ্গতার্থ সংকল্প -----> কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে—- ওঁ বিষ্ণুরো তৎ সৎ ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাস্করে কৃষ্ণ পক্ষে চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম কৃতৈ তৎ শ্রী শিব দেবতয়া প্রীতি কাম শিব পূজা তদ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মন্ সাঙ্গতার্থং যদ্ বৈগুন্যং জাতং তোদ্দোষ প্রশমনায় বিষ্ণু স্মরণ মনন করিষ্যে। ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম। ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ।। • ওঁ অজ্ঞানাদ যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু যৎ স্মরনা দেব তদ বিষ্ণু সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতি । • ওঁ যদ সাঙ্গং কৃতং কর্ম জানতা বাপ্য জানতা সাঙ্গং ভবতু তৎ সৰ্ব্বং হরে নামানু কীৰ্তনাৎ। ______ ________ ডান হাতের তালুতে জল নিয়ে --- ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ প্রিয়তাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব্বযজ্ঞেশ্বরো হরি তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্টং প্রীনিতে প্রীনিতং জগৎ এতৎ কর্ম শ্রী কৃষ্ণায়াপিত মস্তু। ( জল মাটিতে ফেলে দাও ) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর॥ ( ঘণ্টা ধ্বনি. শঙ্খ ধ্বনি. উলু ধ্বনি. দিবে ) <----- পারন মন্ত্র -----> এই মন্ত্র বলিয়া পারন জল পান করিবে ----> ওঁ সংসার ক্লেশ দগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ সুমুখো নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদোভব।। পরদিন সকালে পারন করার পর ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া নিজে ভোজন করিবে। _______ ________ --- {ফর্দমালা} --- সিদ্ধি, তিল হরিতকী, পঞ্চ শস্য, আসনাঙ্গুরীয়, ঘী, মধু, ধূপ, ধুনা, তুলা, কর্পূর, প্রদীপ, পিলসুজ, দুধ, দই, চিনি, ফুল, বেলপাতা, ধুতরা, আকন্দ, নৈবেদ্য (কমপক্ষে পাঁচ রকমের ফল এবং মিষ্টি), গঙ্গা জল, কুশ, আতপ চাল, চন্দন ।
পূজার সংকল্প :-- কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে। ওঁ বিষ্ণুরোম্ তৎ সদ্ অদ্য _ মাসি _ রাশিস্থ ভাষ্করে _পক্ষে _ তিথৌ __ গোত্র __ নাম _লোক প্রাপ্তি কামঃ যথা শক্ত্যু পচারনাং _ পূজা তদ্ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মাহং করিষ্যে। দক্ষিণাবাক্য:- এতস্মৈ কাঞ্চন মূল্যায় নমঃ (৩ বার) এতৎ অধিপতয়ে শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ। এতৎ সম্প্রদানায় ব্রাহ্মণায় নমঃ। (হাত জোড় করে বলিবে) সাঙ্গতার্থ সংকল্প :- কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে। ওঁ বিষ্ণুরো তৎ সৎ_ মাসি _রাশিস্থ ভাস্করে _পক্ষে _ তিথৌ __ গোত্র __ নাম কৃতৈ তৎ _ দেবতয়া প্রীতি কাম_পূজা তদ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মন্ সাঙ্গতার্থং যদ্ বৈগুন্যং জাতং তোদ্দোষ প্রশমনায় বিষ্ণু স্মরণ মনন করিষ্যে। ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম। ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ।। • ওঁ অজ্ঞানাদ যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু যৎ স্মরনা দেব তদ বিষ্ণু সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতি । • ওঁ যদ সাঙ্গং কৃতং কর্ম জানতা বাপ্য জানতা সাঙ্গং ভবতু তৎ সৰ্ব্বং হরে নামানু কীৰ্তনাৎ। ডান হাতের তালুতে জল নিয়ে --- ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ প্রিয়তাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব্বযজ্ঞেশ্বরো হরি তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্টং প্রীনিতে প্রীনিতং জগৎ এতৎ কর্ম শ্রী কৃষ্ণায়াপিত মস্তু। ...........( জল মাটিতে ফেলে দাও )
মধুসুক্ত :- ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ। ওঁ মধুনক্ত সুতোষসো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ মধু দৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধু মান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ। মাধ্বীগাব ভবন্তু নঃ ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ।। শান্তি মন্ত্র পাঠ :-- একটি পাত্রে সামান্য জল নিয়ে তাহাতে চন্দন পুষ্প বেলপাতা দিয়ে জলের ছিটা দিতে দিতে পাঠ কর। ওঁ স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ। স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নঃ স্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমী। স্বস্তি নঃ বৃহস্পতি দধাতু।। দৌঃ শান্তিঃ হি অন্তরীক্ষ শান্তি হিঃ পৃথিবী শান্তি হি অপ শান্তি হি ঔষধয় শান্তি হি বনস্পতয় শান্তি হিঃ বিশ্বদেবা শান্তি হিঃ শান্তিরেব শান্তি হিঃ ওঁ শান্তি রস্তু শিবাঞ্চাস্তু বিনশ্যত্য শুভঞ্চ যৎ যতঃ। এবা গতং পাপং তত্রৈব প্রতি গচ্ছতু। ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি
ভূতাপসারণ:- এই মন্ত্র বলার সময় শ্বেত সরিষা অথবা আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছড়াইবে। মন্ত্র :--- ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতাঃ যে ভূতাঃ ভূমি সংস্থিতাঃ । যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ।। এবার মস্তকের উপর তিনবার "ফট" মন্ত্রে করতালি দিয়া ভূত অপসারণ ও "তুড়ি" দিয়া দশদিক বন্ধন করিবে। ভূত শুদ্ধি :- নিজের চারিদিকে জলধারা দিয়া 'বং' মন্ত্র উচ্চারন করিয়া হাত জোড় হাত করে বল :----- মন্ত্র :--- ওঁ মূল শৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্না পথেন জীব শিবং পরম শিব পদে যোজয়ামি স্বাহা। ওঁ যং লিঙ্গ শরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা। ওঁ রং সংকোচং শরীরং দহ দহ স্বাহা। ওঁ পরম শিব সুষুম্না পথেন মূল শৃঙ্গাট মূল্ল সোল্লস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল হংস সোহহং স্বাহা। প্রাণায়াম :- ডান হাতের অঙ্গুষ্ট দ্বারা ডান নাক বন্ধ করে 'ওঁ নমঃ শিবায়' বা 'ওঁ' মন্ত্রে 'চার' বার জপ করিতে করিতে বা নাকে শ্বাস নিবে। তারপর ১৬ বার জব করতে করতে শ্বাস রুদ্ধ রাখবে। পরে ৮ বার জপ করতে করতে শ্বাস ত্যাগ করবে। এইরকম তিনবার করতে হবে।
পুষ্প শুদ্ধি:-- পুষ্প পাত্রে হাত রেখে বল:--- মন্ত্র :--- ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্প সম্ভবে। পুষ্প চয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা॥ ভূমি শুদ্ধি:- গন্ধ পুষ্প ভূমিতে ফেলিতে ফেলিতে বলিবে:- মন্ত্র :--- ওঁ আঁধার শক্তয়ে নমঃ ওঁ কূর্ম্মায় নমঃ ওঁ অনন্তায় নমঃ ওঁ পৃথিবৌ নমঃ জল শুদ্ধি:- এবার ' ফট ' বলিয়া কোষাকুশীপাত্র ধুবে । পরে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া তাম্র পাত্রটি রাখিবে । পাত্রটি রাখার পর ওঁ মন্ত্র বলিয়া পাত্রে জল দিবে । এবং ফুল দিয়ে মন্ত্র বলিতে বলিতে পূজা করিবে। মন্ত্র :--- ওঁ মং বহির্মন্ডলায় দশ কলাত্মনে নমঃ অং সূর্য মন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ উং সোম মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ ---(উপরোক্ত পদ্ধতির দ্বারা কোষাকুশী শুদ্ধ করিতে হবে)--- একটি ত্রিকোণ মণ্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি চতুষ্কোণ আকিয়া কোষায় জল ভরিয়া ও চন্দনযুক্ত ফুল ও বিল্ব পত্র দিয়া অঙ্কুশ মুদ্রার দ্বারা জল স্পর্শ করিয়া বল :- মন্ত্র :--- ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলে হস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।। ' ওঁ ' মন্ত্রে জলে গন্ধ পুষ্প দিয়া 'বং' মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দেখাইয়া মৎস মুদ্রা দ্বারা ঢাকিয়া নিজের " বীজ মন্ত্র " দশবার জপ করিবে। জল শুদ্ধির পর ঐ জল বিল্বপত্র দ্বারা পূজোর উপাচারে ও নিজের মাথায় ছিটাইবে ।
কর শুদ্ধি:---- একটি রক্ত বর্ণ পুষ্প গ্রহণ করিয়া ওঁ মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া "হে সৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশান কোণে ফেলিবে । করন্যাস:---- আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ [ উভয়হস্তের তর্জ্জনী অঙ্গুলী দ্বারা উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করিবে] ঈং তর্জ্জনীভ্যাং স্বাহা [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের তর্জ্জনী স্পর্শ করিবে] উং মধ্যমাভ্যাং বষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের মধ্যমা স্পর্শ করিবে] ঐং অনামিকাভ্যাং হূং [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের অনামিকা স্পর্শ করিবে] ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের কনিষ্ঠা স্পর্শ করিবে] অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্ [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে] আদিতে "ওঁ" এবং অন্তে "নমঃ" শব্দ যোগ করিয়া নিম্নলিখিত মন্ত্রে নিম্নলিখিতস্থান সমুদয় স্পর্শ করিবে। যথা হৃদি - ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ (এই ক্রমে) প্রকৃত্যৈ, কূর্ম্মায়, অনন্তায়, পৃথিব্যৈ, ক্ষীরসমুদ্রায়, শ্বেতদ্বীপায়, মণিমণ্ডপায়, কল্পবৃক্ষায়, মণিবেদিকায়ৈ, রত্নসিংহাসনায়, দক্ষিণস্কন্ধে ধর্ম্মায়, বামস্কন্ধে জ্ঞানায়, ঊরুদ্বয়ে বৈরাগ্যায়, ঐশ্বর্য্যায়, মুখে অধর্ম্মায়, বামপার্শ্বে অজ্ঞানায়, নাভৌ অবৈরাগ্যায়, দক্ষিণপার্শ্বে অনৈশ্বর্য্যায়, পুনঃ হৃদি অনন্তায়, পদ্মায়, অং অর্কমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ, উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ, মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে, হ্রীং জ্ঞানাত্মনে নমঃ। অঙ্গুষ্ঠ যোগে তর্জনী দ্বয়ে - নং তৎপুরুষায় নমঃ। কমন তর্জনী যোগে অঙ্গুষ্ঠ দ্বয়ে - য়ং ঈশানায় নমঃ। প্রথম অঙ্গুষ্ঠ যোগে মধ্যমা দ্বয়ে - মং অখোরায় নমঃ। দ্বিতীয় অঙ্গুষ্ঠ যোগে অনামিকা দ্বয়ে - বাং বামদেবতায় নমঃ। তৃতীয় অঙ্গুষ্ঠ যোগে কনিষ্ঠা দ্বয়ে - শিং সদ্যজাতায় নমঃ। চতুর্থ ***************************************************************************************** ★ন্যাস★অঙ্গন্যাস:-
ব্যাপকন্যাস
ঋষ্যাদিন্যাস:
পীঠন্যাস
শিবের শিবরাত্রিমূর্তিন্যাস --
আসন শুদ্ধি:-- আসনের নিচে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া পরে একটি ফুল নিয়ে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ হ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ পরে আসনে একটি গন্ধ পুষ্প দিয়া বলিবে :--- মন্ত্র:--- 'ওঁ আসন মন্ত্রস্য মেরু পৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূৰ্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।' 'ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাঃ দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম ॥' পরে হাত জোড়ে বামদিকে ঝুঁকে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ ওঁ সশক্তি গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে বল:--- ওঁ গনেশায় নমঃ মাথার ওপরে :--- ও ব্রহ্মণে নমঃ নিচের দিকে :--- ওঁ অনন্তায় নমঃ বুকের কাছে:--- ও নারায়ণায় নমঃ ওঁ সত্য নারায়ণায় নমঃ
আচমন :- প্রথমে মুখে জলের তিনবার ছিটা দিয়ে ও মুখে হাত দিয়ে মুছে আচমন করিবে। তারপর তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিত করে মুখ স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা নাসিকা স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা চক্ষুদ্বয় ও পরে কর্ণদ্বয় স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করিবে। হস্তদল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে। সমস্ত অঙ্গুলীর দ্বারা মস্তক স্পর্শ করিবে। অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা বাহুদ্বয় স্পর্শ করিবে। এবং শুচি হইবে । [উপরোক্ত সমস্ত কাজটি বিষ্ণুস্মরণ করিতে করিতে করতে হবে] বিষ্ণুস্মরণ মন্ত্র :----- ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ।। • পরে হাত জোড় করে :----- ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভূজং পীত বাসসম্। । নমঃ অপবিত্র পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা । যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্য অভ্যন্তরঃ শুচিঃ।। নমঃ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ । নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণী কারয়ে ।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥
অগ্নি,দীপ,ধূপ জ্বালাবার মন্ত্র:-----
1. অগ্নি জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ অগ্নিমিলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেব মৃত্বিজম্।
হোতারং রত্নধাতম্।।
2. দীপ জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ সুপ্রকাশো মহাদীপ সর্বতস্তি মীরাপহঃ
সবাহ্য অভ্যন্তর জ্যোতি দীপ হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম।ইতি দীপ।।
3. ধূপ জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ বনস্পতি রসো দিব্যো গন্ধাতোঃ সুমনোহরঃ
আঘ্ৰেয়ঃ সর্বদেবানং ধূপো হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম।ইতি ধূপ।।
অর্ঘ্য ---> চন্দন, জল, পুষ্প, আতপ চাল, কুশ, তিল, দূর্বা, সরিসা, যব। সুর্যার্ঘ্য:--- কুশীর মধ্যে দূর্বা চন্দন পুষ্প জল বেলপাতা দু হাতে ধরে বলবে:--- মন্ত্র :--- ওঁ বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িতে। ইদ্দমর্ঘং ওঁ নমো ভগবতে শ্রী সূর্যায় নমঃ।। ওঁ এহি সূর্য্য সহস্রাংশে তেজোরাসে জগৎপতে। অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥ জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাত জোড় করে বল :--- দ্বারদেবতা & বাস্তুপুরুষ পূজা:---- পুষ্প নিয়ে - " এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যোঃ নমঃ " বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিবে। এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ব্রাহ্মণে নমঃ এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ
পঞ্চামৃত বা মধুপর্ক দধি, দুধ, ঘৃত, মধু, দেশী চিনি, একসঙ্গে মিশ্রিত করে মধুপর্ক তৈরি করা হয়। মধুপর্ক শোধন মন্ত্র :----- ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।। ওঁ মধু নক্ত সু তো ষ সো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ। মধু দ্যৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধুমান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ মাধ্বীগা ভবন্তু নঃ।। ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু
তিলক- ভক্তগণ কর্তৃক ললাটাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অঙ্কিত চিহ্নবিশেষ। সম্প্রদায়ভেদে চন্দন, খড়িমাটি জাতীয় গুঁড়া, ভস্ম প্রভৃতি দিয়ে তিলক অঙ্কিত হয়। কবে কোথায় এর প্রথম প্রচলন হয় তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে ললাটে হোমভস্মের টিকা ধারণ প্রথার সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। সপ্তম শতকে রচিত বাণভট্টের কাদম্বরী গ্রন্থে শিবভক্ত দৃঢ়দস্যু এবং জাবালি ঋষির বর্ণনায় ললাটে ভস্ম দ্বারা ত্রিপুন্ড্র অঙ্কনের কথা জানা যায়, যা থেকে পরবর্তীকালে শৈবদের কপালে তিনটি সমান্তরাল রেখার সমন্বয়ে তিলকচিহ্ন অঙ্কনের প্রথা প্রচলিত হয় বলে অনেকের ধারণা। 10ম-11শ শতকে রচিত বিভিন্ন পুরাণ ও উপপুরাণ থেকে জানা যায় যে, ওই সময় থেকে শৈবাদি সম্প্রদায়ের মধ্যে তিলক ধারণ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময়ের চর্যাপদেও ‘বাণচিহ্ন’ নামে এ তিলক ব্যবহারের পরিচয় পাওয়া যায়। গবেষকদের অনুমান, তিলক ধারণের প্রথা প্রথমে শৈবদের মধ্যে শুরু হয় এবং তদনুসরণে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও তা বিস্তার লাভ করে।তিলক ধারণের প্রথম অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এসেছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, শৈবাদি বিভিন্ন সম্প্রদায় যেসব ভঙ্গিতে তিলক ধারণ করে তার অনুপ্রেরণা এসেছে স্বস্ব ইষ্ট দেবদেবীর মূর্তিতে অঙ্কিত বিভিন্ন চিহ্ন থেকে। যেমন শৈবদের ললাটে অঙ্কিত ত্রিপুন্ড্র চিহ্ন শিবলিঙ্গ বা শিবের কপালে অঙ্কিত চিহ্নের অনুরূপ। আবার দক্ষিণ ভারতের বিষ্ণুমূর্তির ললাটে অঙ্কিত তিনটি ঊর্ধ্বাধ রেখার সমন্বয়ে অঙ্কিত তিরুনামম্ বা শ্রীনামম্ নামে যে চিহ্ন দেখা যায় তা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ব্যবহূত তিলকচিহ্নের অনুরূপ। শক্তিদেবীর ললাটস্থ ত্রিনয়নের নিম্নে যে রক্তবর্ণ বিন্দুচিহ্ন দেখা যায় তার অনুকরণে শাক্তরা কপালে ধারণ করে লাল বিন্দুচিহ্ন। এসব দৃষ্টান্ত থেকে বলা যায় যে, এ তিলকচিহ্ন অনেকাংশেই সম্প্রদায়গত বিশ্বাস, ভক্তি, চিন্তাভাবনা ও স্বাতন্ত্র্যের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয়েছে। তিলকের ব্যবহার সকলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। সাধারণত নিষ্ঠাবান হিন্দুরা নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য এবং পৈত্র্যাদি কর্ম অনুষ্ঠানের পূর্বে তিলকচর্চা করে থাকেন। তবে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর এবং গাণপত্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি নিয়মিত আচার। এদের মধ্যে আবার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অধিক। স্নানের পর বৈষ্ণবরা বিষ্ণুর দ্বাদশ নাম স্মরণ করে দেহের দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণ করেন। এ দ্বাদশ অঙ্গ ও দ্বাদশ নাম হলো: ললাটে কেশব, উদরে নারায়ণ, বক্ষে মাধব, কণ্ঠে গোবিন্দ, দক্ষিণ পার্শ্বে বিষ্ণু, দক্ষিণ বাহুতে মধুসূদন, দক্ষিণ স্কন্ধে ত্রিবিক্রম, বাম পার্শ্বে বামন, বাম বাহুতে শ্রীধর, বাম স্কন্ধে হূষীকেশ, পৃষ্ঠে পদ্মনাভ এবং কটিতে দামোদর। বৈষ্ণবদের মধ্যে যে বিভিন্ন উপবিভাগ রয়েছে তাদের মধ্যে তিলকচিহ্নেরও রকমফের আছে। যেমন কেউ ইংরেজি ভি-অক্ষর, কেউ ইউ-অক্ষর, কেউবা একরেখ বা অধিকরেখ তিলকচিহ্ন ধারণ করে। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গে তারা বিষ্ণুর শঙ্খ, চক্র, গদা ইত্যাদির চিহ্নও ধারণ করে। শৈবরা ললাটে যে তিলকচিহ্ন ধারণ করে তার নাম ত্রিপুন্ড্র। এটি তিনটি সমান্তরাল রেখার সমন্বয়ে রচিত হয়; কখনও ঈষৎ বক্র ও খন্ডচন্দ্রের মতোও হয়। ত্রিপুন্ড্রধারণ শৈবদের জন্য অবশ্যকরণীয়। এতে গঙ্গাস্নান ও বিষ্ণু-মহেশ্বরের কোটি নাম জপের পুণ্য অর্জিত হয় বলে তাদের বিশ্বাস। শৈব তিলকচিহ্নের অন্যান্য রূপ হচ্ছে সবিন্দু অর্ধচন্দ্রাকৃতি, বিল্বপত্রাকৃতি, প্রস্তরগুটিকাকৃতি ইত্যাদি। শাক্ত তিলকচিহ্ন শৈবচিহ্নের প্রায় অনুরূপ। এতে এক বা একাধিক বিন্দুচিহ্নের উপস্থিতি সাধারণ; সে সঙ্গে থাকতে পারে ত্রিপুন্ড্র চিহ্ন, ঈষৎ বক্র একটি রেখা কিংবা অন্য কোনো চিহ্ন। দক্ষিণাচারী, বামাচারী, মহাকালী, শৈব, শাক্ত প্রভৃতি উপসম্প্রদায়ভেদে শাক্ত তিলকচিহ্ন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সৌর ও গাণপত্য তিলকচিহ্নের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য অপেক্ষাকৃত কম। সৌর সম্প্রদায়ের চিহ্ন দুটি স্থূল সরলরেখার সমন্বয়ে রচিত হয়। দ্বিতীয়টির দৈর্ঘ্য প্রথমটির এক-চতুর্থাংশের কম এবং এটি দুই ভ্রূর মধ্যস্থলে প্রথমটির নিচে কেন্দ্র বরাবর সংযুক্ত থাকে। গাণপত্যদের তিলকচিহ্ন ইংরেজি ইউ-অক্ষরের মতো এবং তার মধ্যস্থলে প্রদীপশিখার মতো একটি রেখা থাকে। তিলকচিহ্ন রচনার জন্য কাঠ বা ধাতু নির্মিত মুদ্রা অথবা অফুটন্ত গাঁদাফুল ব্যবহূত হয়। উপর্যুক্ত তিলকচিহ্নসমূহের ব্যবহারে হিন্দুদের অনেক সামাজিক প্রথার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য বর্ণপ্রথা। বর্ণনির্বিশেষে সকল হিন্দুই তিলক ধারণের অধিকারী হলেও বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রগ্রন্থে এ ব্যাপারে কিছু বিধান দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে: ব্রাহ্মণরা ঊর্ধ্বপুন্ড্র, ক্ষত্রিয়রা ত্রিপুন্ড্র, বৈশ্যরা অর্ধচন্দ্রাকৃতি তিলক এবং শূদ্ররা বর্তুলাকার তিলক ধারণ করবে। তবে এ বিধান অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের এবং বর্তমানে এর তেমন প্রয়োগ নেই। লৌকিক দেবতার পূজার্চনার সঙ্গেও কোনো কোনো তিলকচিহ্নের একটা দূরায়ত সংযোগ লক্ষ করা যায়। যেমন দক্ষিণ ভারতের গঙ্গম্মা দেবীর পূজায় ঘরের দেয়ালে যে চিহ্ন অঙ্কিত হয় তা শৈব ত্রিপুন্ড্রের প্রায় অনুরূপ। এ থেকে আর্য সংস্কৃতির সঙ্গে অনার্য সংস্কৃতির একটা সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়। 12টি স্থানে তিলক লাগানো হয়। মাথা, ললাট, কণ্ঠ, হৃদয়, দুই বাহু, বাহুমূল, নাভি, পিঠ ইত্যাদি স্থানে তিলক লাগানো হয়ে থাকে। তিলকের ব্যবহার সকলের জন্য বাধ্যতা মূলক নয়। সাধারণত নিষ্ঠাবান ভক্তরা নিত্য নৈমিত্তিক ও কাম্য এবং পৈত্র্যাদি কর্ম অনুষ্ঠানের পূর্বে তিলকচর্চা করে থাকেন। তবে বৈদিক সভ্যতার পাঁচ সম্প্রদায় শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর এবং গাণপত্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি নিয়মিত আচার। . এদের মধ্যে আবার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অধিক। স্নানের পর বৈষ্ণবরা বিষ্ণুর দ্বাদশ নাম স্মরণ করে দেহের দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণ করেন। এই দ্বাদশ অঙ্গ ও দ্বাদশ নাম হলো:-. 1.ললাটে কেশব, 2.উদরে নারায়ণ, 3.বক্ষে মাধব, 4.কণ্ঠে গোবিন্দ, 5. দক্ষিণ পার্শ্বে বিষ্ণু, 6.দক্ষিণ বাহুতে মধুসূদন, 7. দক্ষিণ স্কন্ধে ত্রিবিক্রম, 8.বাম পার্শ্বে বামন, 9.বাম বাহুতে শ্রীধর, 10.বাম স্কন্ধে হূষীকেশ, 11.পৃষ্ঠে পদ্মনাভ এবং 12.কটিতে দামোদর। . বৈষ্ণবদের মধ্যে যে বিভিন্ন উপবিভাগ রয়েছে, তাদের মধ্যে তিলক চিহ্নেরও রকমফের আছে। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গে তারা বিষ্ণুর শঙ্খ, চক্র, গদা ইত্যাদির চিহ্নও ধারণ করেন। শৈবরা ললাটে যে তিলকচিহ্ন ধারণ করে, তার নাম ত্রিপুন্ড্র। এটি তিনটি সমান্তরাল রেখার সমন্বয়ে রচিত হয়; কখনও ঈষৎ বক্র ও খন্ড চন্দ্রের মতোও হয়। ত্রিপুন্ড্রধারণ শৈবদের জন্য অবশ্যকরণীয়। এতে গঙ্গাস্নান ও বিষ্ণু-মহেশ্বরের কোটি নাম জপের পুণ্য অর্জিত হয়। শৈব তিলক চিহ্নের অন্যান্য রূপ হচ্ছে সবিন্দু অর্ধচন্দ্রাকৃতি, বিল্ব পত্রাকৃতি,প্রস্তরগুটিকাকৃতি ইত্যাদি। তিলক ধারনের প্রয়োজনীয়তা:- বৈষ্ণবের তিলকে অঙ্গ ভূষিত করা প্রয়োজন মন্ত্র উচচারণের মধ্য দিয়ে. যারা তিলক ধারন করেন শ্রীকৃষ্ণ তাদের রক্ষা করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলে গেছেন, "বৈষ্ণব হচ্ছেন তিনি, যাকে দেখা মাত্রই শ্রীকৃষ্ণের কথা মনে পড়ে।" তাই মানুষকে শ্রীকৃষ্ণের কথা মনে করিয়ে দিতে বৈষ্ণবের তিলক ধারন করা আবশ্যক। স্কন্ধ পুরানে বলা হয়েছে:- 1.'যিনি তিলক অথবা গোপীচন্দন দ্বারা বিভুষিত হয়ে সমস্ত শরীর ধারন করেন, যমদূত সেই বৈষ্ণবদের কাছে ও আসতে পারেনা। পদ্মপুরানে বর্নিত হয়েছে:-. 1. তিলক ধারন না করে যজ্ঞ, দান, তপ, হোম, বেদপাঠ, পিতৃ তর্পনাদি যা কিছু ধর্ম কার্য করা হয় সে সমস্ত বিফল হয়।. 2. তিলক ধারন না করে সন্ধ্যা বন্দনা সর্বকর্মাচরন নিত্য রাক্ষসের নিমিত্ত হয়, পরিনামে নরক গমন হয় । . তিলক ধারন কতোটা গুরুত্ব পূর্ণ বোঝা যায়। এই তিলক মাটির অভাবে অনেকে শুধু জল দিয়েও দ্বাদশ অঙ্গে মন্ত্র সহকারে তিলক ফোটা দিয়ে থাকেন। তিলক মাটির কথা আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, তিলকের উৎপওি কিভাবে, তিলকে কে কোথায় বাস করেন, শ্রীকৃষ্ণ কেনো তিলক ধারন করতেন, শ্রীমতি রাধারাণী কেনো তিলক পরেন না, তিলক ছাড়া সন্ধ্যা-বন্দনা হবে না কেনো, যমরাজ কেনো তিলক ধারী বৈষ্ণবকে দেখে পালায় ইত্যাদি সম্পর্কে। "যজ্ঞো দানং তপো হোমঃ স্বাধ্যায়ঃ পিতৃতর্পণম্। ব্যর্থং ভব তত্ সর্বমূর্দ্ধপূনড্রং বিনাকৃতং।।"...(পদ্ম পুরাণ) অর্থাৎ, তিলক ব্যতিরেকে যজ্ঞ, দান, তপস্যা, হোম, বেদ শাস্ত্রাদি পাঠ, পিতৃতর্পণাদি ও শুভ কর্ম যা কিছু করা হয়, সে সমুদয় বৃথা হইয়া থাকে। তিলকের মহিমা:- যা জানতে পারি:--- তিলক না থাকে তবে কপাল শ্মশাণ। সর্বকার্যে তিলক করে শুভ শক্তিদান।। শুভ কার্যে কপালে যদি থাকে তিলক। সর্বলোকে গুন গায় গতি উর্ধ্ব-লোক।। তিলক বিনে গুরু-কৃষ্ণ, সেবা বিফলে গেল ভাই।।" 1.অনামিকা আঙুল দিয়ে তিলক করলে মন ও মস্তিষ্ক শান্তি লাভ করে। 2.মধ্যমার সাহায্যে তিলক করলে আয়ু বৃদ্ধি হয় আবার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে করা তিলক পুষ্টিবর্ধক। 3.তর্জনি দিয়ে তিলক করলে মোক্ষ লাভ করা যায়। অনামিকা আঙুল দিয়ে তিলক করলে মন ও মস্তিষ্ক শান্তি লাভ করে। মধ্যমার সাহায্যে তিলক করলে আয়ু বৃদ্ধি হয় আবার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে করা তিলক পুষ্টিবর্ধক। তর্জনি দিয়ে তিলক করলে মোক্ষ লাভ করা যায়। বিষ্ণু সংহিতা অনুযায়ী, দেব কাজে অনামিকা, পিতৃ কাজে মধ্যমা, ঋষি কাজে কনিষ্ঠা ও তান্ত্রিক কাজে প্রথমা আঙুল ব্যবহার করা হয়। 2. নানা দ্রব্য দিয়ে তৈরি তিলকের উপযোগিতা ও গুরুত্ব পৃথক পৃথক। কুমকুমের তিলক তেজস্বীতা প্রদান করে। জাফরানের তিলক লাগালে সাত্বিক গুণ এবং সদাচারের ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বৃহস্পতি শক্তিশালী হয় এবং ভাগ্যবৃদ্ধি ঘটে। হলুদের তিলক ত্বক শুদ্ধ করে। পাপ নাশের জন্য চন্দনের তিলক লাগানো হয়। আতরের তিলক লাগালে শুক্র শক্তিশালী হয় এবং ব্যক্তির মন-মস্তিষ্কে শান্তি ও প্রসন্নতা থাকে। গোরচনের তিলক আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়। গ্রহ দোষ দূর ও লক্ষ্মীকে প্রসন্ন করার জন্য অষ্টগন্ধের তিলক করা উচিত। বিশুদ্ধ মাটির তিলকে বুদ্ধি ও পুণ্যফল লাভ করা য়ায়। দই বা জলের তিলকে চন্দ্রবলে বৃদ্ধি হয় এবং মন-মস্তিষ্ক শীতল থাকে। 3. ললাটে তিলক লাগালে মস্তিষ্ক শান্ত ও শীতল হয়। এ ছাড়াও বিটাএন্ডোর্ফিন এবং সেরাটোনিন নামক রসায়নের ক্ষরণে ভারসাম্য থাকে। এই রসায়নের অভাবে উদাসীনতা ও হতাশা জন্মাতে শুরু করে। তিলক উদাসীনতা ও হতাশা থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক। এর ফলে মাথা ব্যথাও কম হয়। 4. যে স্থানে তিলক লাগানো হয় সেখানেই আত্মার অবস্থান। এটি আমাদের আত্মসম্মানের প্রতীক। ললাটে ভুরুযুগলের মাঝে, যেখানে তিলক করে থাকি, সেটিকে অগ্নি চক্র বলা হয়। এখান থেকেই পুরো শরীরে শক্তি সঞ্চার হয়। 5. ললাটে ভুরুযুগলের মাঝে নাকের শুরুর স্থানে তিলক করা হয়। এটি আমাদের চিন্তন ও মননের স্থান। এর ফলে চিন্তত ও মনন বৃদ্ধি পায়। এতে স্মরণ শক্তি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, বৌদ্ধিকতা, তার্কিকতা, সাহস ও শক্তি বৃদ্ধি হয়। [এই 5 জিনিস খোলা রাখলে দুর্ভাগ্য তাড়া করবে চিরকাল!] 6. ললাটের এই অংশ চেতন ও অবচেতন অবস্থাতেও জাগৃত ও সক্রিয় থাকে, একে আজ্ঞা চক্রও বলা হয়। এই দুইয়ের সঙ্গম বিন্দুতে স্থিত চক্রকে নির্মল, বিবেকশীল, অবসাদ মুক্ত রাখার জন্য তিলক লাগানো হয়। 7. এই বিন্দুতে সৌভাগ্যসূচক দ্রব্য যেমন- চন্দন, জাফরান, কুমকুম ইত্যাদির তিলক লাগালে ব্যক্তি সাত্ত্বিক ও তেজস্বী হয় এবং তাঁর আত্মবিশ্বাসে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি হয়। পাশাপাশি মনে নির্মলতা, শান্তি এবং ধৈর্য বৃদ্ধি পায়। 8. ললাটে নিয়মিত তিলক লাগালে মস্তিষ্ক শান্ত থাকে এবং স্বস্তি অনুভূত হয়। পাশাপাশি একাধিক মানসিক রোগও ঠিক হয়। 9. শাস্ত্রে শ্বেত চন্দন, লাল চন্দন, কুমকুম, ভস্ম ইত্যাদির তিলক লাগানো শুভ। 10. তিলক বিজয়, পরাক্রম, সম্মান, শ্রেষ্ঠতা ও আধিপত্যের প্রতীক। বোনের দ্বারা তিলক লাগালে তাঁর সুরক্ষার জন্য এই সমস্ত গুণের বিকাশ হয়। গোপীচন্দন শুদ্ধি এবং মৃত্তিকা শুদ্ধি ওঁ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণক্রান্তে বসুন্ধরে। মৃত্তিকা হরমে পাপং যন্ময়া দুস্কৃতং কৃতম।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥ ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু এই তিলক ধারণের কিছু নিয়ম কানুন :---- তিলক গুলিবার মন্ত্র:- "ওঁ নমো কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম। পূণর্যশাস্যামায়ুস্যং তিলকং মে প্রসীদতু।।" তিলক ধারণ মন্ত্র:- দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণের মন্ত্র:- . 1.ললাটে —"শ্রী কেশবায় নমঃ।". 2. উদরে—"শ্রী নারায়নায় নমঃ।" 3.বক্ষে—--"শ্রী মাধবায় নমঃ।". 4. কণ্ঠে—--"শ্রী গোবিন্দায় নমঃ।" 5.ডানকুক্ষিতে—------"শ্রী বিষ্ণবে নমঃ।". 6. ডানহাতে—-----"শ্রী মধুমৃদনায় নমঃ।". 7.ডানস্কন্ধে—--------"শ্রী ত্রিবিক্রমায় নমঃ।". 8.বামকুক্ষিতে—------"শ্রী বামনায় নমঃ।". 9.বামহাতে—------"শ্রী শ্রীধরায় নমঃ।". 10.মস্তকে—--------"শ্রী ঋষীকেশায় নমঃ।". 11.পৃষ্ঠে—-------"শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ।" . 12.কোটিতে—--------"শ্রী দামোদরায় নমঃ।" . অতঃপর হস্ত ধৌত জল, “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ।”— বলে হস্ত ধৌত জল স্বীয় মস্তকে ধারণ করবে।যে কোনও শুভ কাজে যাওয়ার আগে হিন্দু ধর্মে কপালে তিলক কাটার রীতি প্রচলিত আছে। তিলক কাটা অত্যন্ত শুভ। তবে তিলকেরও রকমফের আছে।.
মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজো হয়। বর্তমানে সমস্ত বিদ্যার দেবীরূপে দেবী সরস্বতীর পূজা-অর্চনা করা হয়। সকাল থেকেই উপোস থেকে সকলে বাগ্দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন সরস্বতী মায়ের কাছে। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে কি কি পূজা হয়?? 1.সরস্বতী পূজা সঙ্গে দাওয়াত, কলম, পুস্তক, বাদ্যযন্ত্রাদির পূজা 2.শ্রীলক্ষী পূজা 3.ষট-পঞ্চমী ব্রত 4.বসন্ত পঞ্চমী ব্রত- বসন্তউৎসব 5. শ্রীশ্রীকৃষ্ণ অর্চনপূজা 6.শ্রীশ্রী গুরু পূজা বিদ্যা বুদ্ধি জ্ঞ্যানের জননী দেবী সরস্বতী পূজা। আসুন জেনে নেই পূজার মন্ত্রঃ- “ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।। নমঃ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।। এস সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।” -এই মন্ত্রে তিনবার অঞ্জলি দেবেন। “নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।। জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।”সরস্বতী পূজার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ-
সরস্বতী পূজার প্রনাম মন্ত্রঃ-
স্বস্তি বাচন
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু।
ওঁ গণানাং ত্বা গণপতি হঁং হবামহে
ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতি হঁং হবামহে
ওঁ নিধিনাং ত্বা নিধিপতি হঁং হবামহে। বসো মম॥
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি
সুক্ত মন্ত্র
ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিচম্।
উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে॥
ওঁ অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু।
শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকাস্তোত্রংঃ
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ _______
<----- শিবের ধ্যান ----->
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজত গিরিনিভ্যং
চারু চন্দ্রাবতং সম
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং
পরশু মৃগবরা ভীতিহস্তং প্রসন্নম্
পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈ
র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম ।
বিশ্বদ্যং বিশ্ববীজং
নিখিল ভয় হরং
পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
<----- শিব প্রণাম মন্ত্র ----->
ওঁ নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ ।
নমস্তে দিব্য চাক্ষুষে ।
নমঃ পিনাক হস্তায় বজ্র হস্তায় বৈ নমঃ।
নমঃ ত্রিশুল হস্তায় দন্ড পাশাসি পানয়ে।
নমস্তৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।
নমো শিবায় শান্তায়
কারন ত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং
ত্বং গতি পরমেশ্বর।।
নমস্যে ত্বাং মহাদেব
লোকানাং গুরুমীশ্বরম
পুংসাম পূর্ণকামানাং
কাম পুরামরাঙ্খিপম
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায়
সর্ব্বপাপ হরায় চ ।
নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ শরনাগত দীনার্ত পবিত্রানায় পরায়নে
সর্ব্বস্মার্তে হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।
হরে দেবী নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
-----[ শিবাষ্টক স্তোত্রম ]-----
প্রভু মীশ মণীশ মহেশ গুণং
গুণ হীন মহীশ গরলাভরণম্।
রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম।।
গিরিরাজ সুতান্বিত বামতনুং
তনু নিন্দিত রাজিত কোটিবিধুম্
বিধি বিষ্ণু শিরোধৃত পাদযুগং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্।।
শশলাঞ্ছিত রঞ্জিত সম্মুকুটং
কটি লম্বিত সুন্দর কৃত্তিপটং।
সুরশৈবালিনী কৃত পূত জটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।।
নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং
মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটি বিধুম্।
বিধুখন্ড বিখন্ডিত ভল তটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
বৃষ রাজ নিকেতন মাদি গুরুং
গরলাসন মাজি বিষান ধরম।
প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জন কং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
মকরধ্বজ মও মাতঙ্গ হরং
করিচম্মগ নাগ বিবোধকরম্।
বরমার্গণ শূল বিষান ধরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
জগদুদ্ভব পালন নাশকরং
ত্রিদিবেশ শিরোমণি ঘৃষ্টপদম্।
প্ৰিয়মানব সাধু জনৈক গতিং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
অনাথং সুদীনং বিভো বিশ্বনাথ
পুনর্জন্ম দুঃখাত পরিত্রাহি শম্ভো।
ভজতোহখিল দুঃখ সমূহহরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
ইতি শিবাষ্টকং স্তোত্রম সম্পূর্ণম্ ।।
_______ ________
-----[ শিবরাত্রি ব্রতকথা ]-----
কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন।
গৌরীসহ বসিয়া করেন আলাপন।।
ফল পুষ্পে সুশোভিত পর্বত কৈলাস।
যক্ষ রক্ষঃ গন্ধর্বগণের নিত্য বাস।।
রবির কিরণ পড়ি শিখরে তাহার।
মলিন করিয়া দেয় বরন সোনার।।
আনন্দে পার্ব্বতি সতী জিজ্ঞাসেন শিবে।
কহ দেব! কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভবে।।
কিবা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন্ তপস্যায়।
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ হয়।।
এরূপ কি পূণ্য কর্ম আছে সুবিদিত।
জাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।।
মর্ত্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরা তলে।
অনায়াসে পারে বল কি কর্ম্ম করিলে।।
শুনিয়া পার্ব্বতি বাক্য কহেন শঙ্কর।
শুন দেবী! কোন কর্ম্ম মম প্রীতিকর।।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দ্দশী।
শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকার নিশি।।
প্রাণী হিংসা পরায়ণ ব্যাধ একজন।
ভীষণ, আকৃতি তার ক্রুর আচরণ।।
কৃষ্ণবর্ণ দেহ তার পিঙ্গল নয়ন।
জাল বাগুরা হস্তে করয়ে ভ্রমণ।।
বনে বনে ভ্রমী করে প্রাণী বধ কত।
নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।।
একদিন মাংস ভার করিয়া বহন।
গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।।
বহুদূর বন পথ ব্যাধ পরিশ্রান্ত।
বৃক্ষ মূলে শয়ন করিল হয়ে ক্লান্ত।।
ক্রমে ক্রমে সূর্যদেব অস্তা চলে যান।
হেন কালে নিদ্রিত ব্যাধের হল জ্ঞান।।
চতুর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন।
চিন্তিত হইয়া ব্যাধ করিল মনন।।
আজ গৃহে যাইব না এই রাত্রি কাল।
বৃক্ষতে করিব বাস হউক সকাল।।
লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া।
মাংস ভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।।
হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর।
উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভর।।
ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যাধ অতিশয়।
অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।।
শীতেতে কাঁপিতে ছিল শরীর তাহার।
সর্বাঙ্গে পড়িতে ছিল নিশার তুষার।।
দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষ মূলে।
স্থাপন করিয়াছিল কেহ কোন কালে।।
সেই দিন শিবরাত্রি দৈবের ঘটনা।
উপবাসী ব্যাধ তার অন্নের ভাবনা।।
তাহার শরীর হতে হিম বিন্দু যত।
বৃক্ষ মূলে শিবলিঙ্গে পড়ে অবিরত।।
সেই বৃক্ষ বিল্ববৃক্ষ নামে সুবিখ্যাত।
যাহার পত্রেতে শম্ভু হল সদা প্রীত।।
ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্ব দল।
শিবের মস্তকে পড়িতে ছিল অবিরল।।
ব্যাধের সে আচরণে দেব আশুতোষ।
মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।।
এইভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল।
ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।।
বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল।
রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।।
মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে।
অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্ট মনে।।
এই ভাবে তাহার পারন সিদ্ধ হল।
শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।।
আয়ূ শেষ হল তার বহুকাল পরে।
যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।।
যমদূত রজ্জু দ্বারা বাঁধিতে উদ্যত।
হেন কালে পৌঁছে দূত শিবের নিযুক্ত।।
শিবদূত বলে যমদূত যাও দূরে।
ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।।
যমদূত বলে এই ব্যাধ পাপী অতি।
না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।।
যমপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি।
যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।।
এই রূপে উভয়ের বিবাদ হইল।
শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।।
পরাজিত হয়ে যমদূত যায় ঘরে।
এই বার্তা প্রকাশিল যমের গোচরে।।
উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন।
বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্নন।।
শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপাচারী।
শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।।
আজীবন কেহ যদি পাপ কর্ম করে।
শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।।
মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর।
নাহি ভয় করি আমি শিবের কিঙ্কর।।
যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে।
গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।।
ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন।
ভক্তিভাবে করিবে আমার আরাধন।।
সদাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি।
ব্রতের বিধান দেবী! শুনহ সম্প্রতি।।
পূর্বদিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন।
নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।।
রাত্রিতে তৃণের শর্য্যা নির্মাণ করিবে।
তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।।
প্রাতঃকালে সত্ত্বর করিয়া গাত্রোত্থান।
নদী কিম্বা সরোবর জলে করি স্নান।।
বিল্ববৃক্ষে মূলে গিয়া প্রণাম করিবে।
অবশ্যক পত্র সংগ্রহ করিবে।।
একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই।
মনি মুক্তা স্বর্ণ রত্ন প্রবাল না চাই।।
রাত্রিতে হইয়া শুচি যে পূজে আমারে।
সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।।
পার্থিব শংঙ্কর মূর্তি করিয়া নির্মাণ।
প্রথম প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।।
দ্বিতীয় প্রহরে দধি তৃতীয়তে ঘৃত।
চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানেতে বিহিত।।
পূজা শেষে যথা বিধি নৃত্য গীত করি।
তুষিবে আমারে নর শুনহ শংঙ্করী।।
পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচি ব্রত।
করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।।
এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে।
অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।।
কঠোর তপস্যা আর দান যজ্ঞ যত।
কোন কর্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।।
এই ব্রত আচরণে লভিয়া বাঞ্ছিত।
অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।।
ব্রতের মাহাত্ম্য এবে হরহ শ্রবন।
পুণ্য লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।।
পৃথিবীতে বারানসী সর্ব্ব তীর্থ সার।
যেখানে গমনে খন্ডে কলুষ অপার।।
ব্যাধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি।
নির্দিষ্ট হইল তার কৈলাস বসতি।।
শুনিয়া পার্ব্বতি দেবী ব্রত বিবরণ।
আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণন।।
তাহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত।
এই রূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।।
যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে।
সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।।
আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত।
অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।।
গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে।
শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা শুনে যেই জন।
অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।।
মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি।
শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্ত হইল।
ভক্তিভরে সবে এবে শিব শিব বল।।
_______ ________
<----- [[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম ]] ----->
কৈলাস শিখরে বসি দেব ত্রিলোচন ।
গৌরী সহ করে নানা কথোপকথন ।।
মৃদুমন্দ বাতাস বহে সেথা ধীরি ধীরি ।
ফুলের সৌগন্ধ কিবা আহা মরি মরি ।।
সুন্দর জোছনারাশি মধুর যামিনী ।
চন্দ্রের কিরণ ছটা বিকাশে অবণী ৷৷
মহানন্দে হৈমবতী কহে পঞ্চাননে ।
কহ প্রভু কৃপা করে দাসীরে এক্ষণে ৷৷
বড় সাধ হয় মনে দেব প্রাণপতি ।
তোমার নামের সংখ্যা শুনি বিশ্বপতি ।।
আশুতোষ পরিতোষ হয়ে মোর প্রতি ।
সে সাধ পুরাও মম ওহে পশুপতি ।।
শুনিয়া দেবীর বাণী কহে মহেশ্বর ।
কি ইচ্ছা হয়েছে বল আমার গোচর ।।
শুনিয়া হরের কথা কহেন পার্ব্বতী ।
শুনিবারে সাধমম হয়েছে বিভুতি ।।
তোমার নামের সংখ্যা কহ ত্রিলোচন ।
তব মুখামৃত বাণী শুনি অনুক্ষণ ।।
এতেক শুনিয়া কহে ভোলা মহেশ্বর ।
শুন দেবী মোর নাম কহি অতঃপর ।।
সেইসব নাম আমি করিব কীর্ত্তন ।
শ্রবন পাঠেতে মুক্ত হবে জীবগন ।।
নাহি সংখ্যা মম নাম না যায় বর্ণন ।
সংক্ষেপেতে বলি যাহা করহ শ্রবণ ।।
যেই নাম ধ্যানে জীব পায় দিব্য গতি ।
সেইসব নাম তবে কহি শুন সতী ।।
মম মুর্ত্তি ধরা তলে কেহ না দেখিবে ।
পাষাণে নির্ম্মিত লিঙ্গ দর্শন পাবে ।।
ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মোর ভিন্ন ভিন্ন নামে ।
সকলের বরণীয় হয় ধরাধামে ।।
অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা । ১
মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।। ২
জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি । ৩
দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।। ৪
মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী। ৫
গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ॥ ৬
ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি । ৭
ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী ।। ৮
জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ । ৯
রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।। ১০
নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু । ১১
ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।। ১২
তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন । ১৩
পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ॥১৪
রজত বরণ বলি নাম গিরিবর । ১৫
নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।। ১৬
যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।১৭
বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।১৮
সূর্য্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর।১৯
চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।২০
মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা । ২১
বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্ৰাতা ॥ ২২
বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ । ২৩
শুক্রাচার্য্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।২৪
শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার।২৫
রাহুকেতু নাম রাখে সর্ব্ববিঘ্ন হর ।।২৬
মৃত্যুঞ্জয় নাম মম মৃত্যু জয় করি ।২৭
ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ॥২৮
কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ । ২৯
বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।৩০
শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন । ৩১
ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।৩২
পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।৩৩
ভৃগু মুনি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।৩৪
ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ । ৩৫
ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।৩৬
মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।৩৭
বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।৩৮
শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।৩৯
বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।৪০
জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি।৪১
বিজয়া রাখিল নাম অনাথের গতি।।৪২
তালবেতাল নাম রাখে সর্ব্ব বিঘ্নহর । ৪৩
মার্কন্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।। ৪৪
শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।৪৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্ম পরাৎপর ।।৪৬
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিল তারণ । ৪৭
চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।৪৮
সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী । ৪৯
আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।৫০
বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।৫১
রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।৫২
ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ । ৫৩
দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।৫৪
বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।৫৫
গন্ধর্বেরা নাম রাখে গন্ধর্ব ঈশ্বর ।।৫৬
অঙ্গিরা রাখিল নাম পাপতাপহারী ।৫৭
দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।৫৮
ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান নাম বাঘাম্বর ।৫৯
বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।৬০
কৃত্তিবাস নাম রাখে কত্যায়নী ।৬১
ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুণি ।।৬২
সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দ্দন ।৬৩
আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।৬৪
রতিপতি নাম রাখে মদন দহন ।৬৫
দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।৬৬
জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।৬৭
বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।৬৮
পৌলস্ত্য রাখিল নাম ভবভয়হারী।৬৯
গৌতম রাখিল নাম জন মনোহারী ।।৭০
ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর।৭১
বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘন্টেশ্বর ।।৭২
মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্ব্বপাপহর।৭৩
জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।৭৪
কুরুক্ষেত্র রণস্থলে পামবরদ্বারী ।৭৫
ঋষীগণ নাম রাখে মুণি মনোহারী ।।৭৬
ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।৭৭
ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।৭৮
উদ্দালক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।৭৯
অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংঙ্কর ।।৮০
দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর । ৮১
সেতু বন্ধে হয় নাম মোর রামেশ্বর ।।৮২
হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।৮৩
ভরত রাখিল নাম উমা মহেশ্বর ।।৮৪
জলধর নাম রাখে করুণা সাগর ।৮৫
মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।৮৬
ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।৮৭
চাঁদ সদাগর নাম রাখে হয়গ্রীব ।।৮৮
জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।৮৯
ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।৯০
দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।৯১
দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।৯২
দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।৯৩
বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।৯৪
কালীঘাটে সিদ্ধপাটে নকুল ঈশ্বর ।৯৫
পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।৯৬
গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।৯৭
মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।৯৮
কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।৯৯
ওঁ কার আমার নাম রাখে সান্দীপনি ।।১০০
ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।১০১
শ্বেত ভুধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।১০২
বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।১০৩
মহালক্ষী রাখে নাম অশিব নাশন ।।১০৪
অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ । ১০৫
গঙ্গাজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।১০৬
ভাঙ্গড়ভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ । ১০৭
বুড়াশিব বলি খ্যাত এই তিন ভুবন ।।১০৮
হর হর ব্যোম বলি যে ডাকে আমারে।
পরিতুষ্ট হয় সদা তাহার উপরে।।
অসংখ্য আমার নাম না হয় বর্ণন।
অষ্টোত্তর শতনাম করিনু কীর্ত্তন।।
মনেতে যে ভক্তি করি করয়ে পঠন।
রোগ শোক নাহি হয় তাহার ভবন।।
নির্ব্ব্যাধি হইয়া সে দীর্ঘজীবী হয়।
শিব বরে সেই জন মুক্তি পদ পায়।।
নামের মাহাত্ম্য আমি করিনু বর্ণন।
মম নাম মম ধ্যান করো সর্বজন।।
ইহকালে সুখে রবে মরত ভুবনে।
অন্তঃকালে হবে গতি কৈলাস ভবনে।।
[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্ত ]
তুলসী মা বৃন্দা। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রিয় তুলসী কে পূজা করিলে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। প্রতিদিন তুলসীর অর্চনা করিলে কৃষ্ণ পদ প্রাপ্তি হয়।
প্রতিদিন সকালে স্নান করে উঠে তুলসী তলায় জল ঢালিবেন এবং তুলসীর প্রণাম মন্ত্র পাঠ করিবেন। তুলসীর যথা শক্তি উপচারে পূজা করিয়া মা তুলসীর স্তোত্রম মন্ত্র পাঠ করিবেন।
জগদ্ধাত্রী নমস্তুভ্যং বিষ্ণোশ্চ প্রিয়বল্লতে। যতো ব্রহ্মাদয়ো দেবাঃ সৃষ্টিস্থিত্যন্ত কারিণঃ। নমস্তুলসি কল্যাণি নমো বিষ্ণুপ্রিয়ে শুভে। নমঃ মোক্ষপ্রদে দেবি নমঃ সম্পৎ প্রদায়িকে।
তুলসী পাতৃ মাং নিতাৎ সর্বাপদ্ভোঽপি সর্বদা। কীৰ্ত্তিতাপিস্মৃত বাপি পবিত্রয়তি মানবম্।। নমামি শিবসা দেবীং তুলসীং বিলসত্তনম্। যাং দৃষ্টা পাপিনোমতা মুচ্যন্তে সর্বাকিলতিবসাত ৷৷।
তুলস্যা রক্ষিতঃ সর্বং জগদেতচ্চরাচরম্। যা বিনিহস্তিপাপানি দুষ্টা বা পাপীভির্নরৈঃ।। নমস্তলস্যানিতরাং যসো বদ্ধাঞ্জলিং কলৌ। কলয়ন্তি সুখং সর্বে স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথাপরে।।
তুলস্যাঃ পল্লবং বিষ্ণো শিরস্যারোপিতং কলেী । কলয়ন্তি সুখং সর্বে স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথাপরে। তুলস্যাঃ পল্লবং বিষ্ণোঃ শিরস্যারোপিতং কলো। আরোপয়তি সর্বাণি শ্রেয়াংসি বর মস্তকে।
তুলস্যাং সকলা দেবা বসন্তি সততং যতঃ। অতস্তামর্চয়েলোকে সর্বান দেবান সমচয়েৎ । নামাস্তুলসি সর্বজ্ঞে পুরুষোত্তমবল্লভে। পাহি মাং সর্বপাপেতাঃ সর্বসম্পৎ প্রদায়িকে।
ইতি স্তোত্রং পুরা গীতং পুণ্ডরীকেণ ধীমতা। বিষ্ণুমর্চয়তা নিত্যং শোভনৈস্তুলসী দলৈঃ৷৷ তুলসী শ্ৰীমহালক্ষ্মীর্বিদ্যা বিদ্যা যশস্বিনী। ধৰ্মা ধর্মাননা বৃন্দা দেবদেব নমঃ প্রিয়া।।
লক্ষ্মীপ্রিয়সখী দেবী দৌভূমির চলা চলা। ষোড়শৈতানি নামানি তুলস্যাঃ কীর্তয়েন্নর। লভতে সুতরাং ভক্তিমন্তে বিষ্ণুপদং তথা। তুলসী ভূর্মহালক্ষ্মীঃ পদ্মিনী শ্রীহরিপ্রিয়া।।
তুলসী শ্রীসখী শুভে পাপহারিণি পূণ্যদে। নমস্তে নারদনুতে নারায়ণ মনঃ প্রিয়ে।।” ইতি পুণ্ডরীককৃতং তুলসী স্তোত্রম সম্পূর্ণম্।
যে কর্ম না করিলে প্রত্যবায় অর্থাৎ পাপ হয় তাহাকে নিত্যকর্ম বলে।
দিনমানকে তিন ভাগে ভাগ করিলে প্ৰথম ভাগকে পূর্বাহ্ন, দ্বিতীয় ভাগকে মধ্যাহ্ন এবং তৃতীয় ভাগকে অপরাহ্ন বলা হয়। প্রাতঃকৃত্য এই পূর্বাহ্নের অন্তির্গত।
ব্রাহ্ম মুহূর্ত অর্থাৎ রাত্রি চারিদন্ড বকি থাকিতে রোগিরা ভিন্ন সকলে শয্যার উপর উত্তরমুখ অথবা পূর্বমুখ হইয়া বসিয়া নিম্নোক্ত মন্ত্রগুলী পাঠ করিবেন।
প্রভাতের পাঠ্য মন্ত্র :
ওঁ প্রভাতে যঃ স্মরেন্নিত্যং দূর্গা-দূর্গাক্ষরদ্বয়ম।
আপাদস্তস্য নশ্যান্তি তমঃ সূর্যদয়ে যথা।। ১
ব্রহ্মা মুরারীস্ত্রিপুরান্তকারী ভানুঃ শশী ভূমিসুতো বুধশ্চ । গুরুশ্চ শুক্রঃ শনি-রাহু-কেতু কুর্ব্বন্তু পর্বে মম সুপ্রভাতম্।। ২
ভৃগুর্বশিষ্ঠঃ ক্রতুর্ঙ্গিরাশ্চ মনুঃ পুলস্তঃ পুলহশ্চ গৌতমঃ।
রৈভ্য মরীচিশ্চাবনশ্চ দক্ষঃ কুর্ব্বন্তু পর্বে মম সুপ্রভাতম্ ।। ৩
লোকেশ চৈতন্যময়াধিদেব শ্রীকান্ত বিষ্ণো ভবদাজ্ঞৈব।
প্রাতঃ সমুত্থায় তব প্রিয়ার্থং সংসারযাত্রামনুবর্তয়িষ্যে।। ৪
জানামি ধর্মং না চ মে প্রবৃত্তিজানাম্য ধর্মং না চ মে নিবৃত্তি ঃ।
ত্বয়া হৃষিকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তহস্মি তথা করোমি।। ৫
প্রাতঃ প্রভৃতি সায়ান্তং সয়াদি-প্রাতরন্ততঃ।
যৎকরোমি জগত্যর্থে তদস্তু তবে পুজনম্।। ৬
কর্কোটকস্য নাগস্য দময়ন্তা নলস্য চ।
ঋতুপর্ণস্য রাজর্ষেঃ কীর্ত্তনং কলিনাশনম্।। ৭
কার্ত্তবীর্য্যার্জুনো নাম রাজা বাহুসহস্রভৃৎ।
যেন সাগরপর্য্যন্তা ধনুষা নির্জিতা মহী।। ৮
যস্তস্য সংকীর্ত্তয়েন্নাম কল্যমুত্থায় মানবঃ।
না তস্য বিত্তনাশঃ স্যান্নষ্টঞ্চ লড়তে পুনঃ।। ৯
পুণ্যশ্লোকো নলো রাজা পুণ্যশ্লোকো যুধিষ্ঠির।
পুণ্যশ্লোকো চ বৈদেহী পুণ্যশ্লোকো জনার্দ্দনঃ।। ১০
কালী তারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভুবনেশ্বরী।
ভৈরবী ছিন্নমস্তা চ বিদ্যা ধুমাবতী তথা।। ১১
বগলা সিদ্ধবিদ্যা চ মাতঙ্গী কমলাত্মিকা।
এতা দশমহাবিদ্যা সিদ্ধবিদ্যা চ প্রকীর্ত্তীতাঃ।। ১২
অহোল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা স্মরেন্নিত্যং মহাপাতকনাশনম্।।১৩
তারপর গুরুর ধ্যান এবং প্রনাম করিবেন যথা –
ওঁ প্রাতঃ শিল্পি শুক্লাব্জে দ্বিনেত্রং দ্বিভুজং গুরুম্।
প্রসননং বদনং শান্তং স্মরেৎ তন্নাম পুর্ব্বকম্।।
ওঁ অখন্ডমন্ডলাকারং ব্যপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ১
অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ২
গুরুর্বহ্মা গুরুর্বিষ্ণু্র্গুরুদেব মহেশ্বরঃ।
গুরু সাক্ষাৎ পরংব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ৩
তারপর দীক্ষিত ব্যাক্তিরা যারা দীক্ষা নিয়েছেন তারা গুরুর ইষ্ট মন্ত্র (দীক্ষা মন্ত্র) দশবার জপ করিবেন। তারপর সম্ভব হলে স্তব, কবচ, এবং নানা দেবদেবীর প্রনাম মন্ত্র পাঠ করিতে পারেন।
তারপর শয্যা ত্যাগ করিয়া “ওঁ প্রিয়দত্তায়ৈ ডুবে নমঃ” বলিয়া পৃথিবীকে প্রনাম করিয়া পুরুষ দক্ষিণ-পদ (ডান পা) এবং নারী বাম-পদ (বাম পা) ভূমিতে প্রথম স্থাপন করিবেন।
প্রত্যেকেরই প্রতিদিন স্নান করা কর্তব্য। আমরা প্রত্যেকেরই স্নান করার সময় তেল মেখে থাকি। আজকে আমরা জানব তেল মাখার কিছু নিয়ম ও বিধি।
প্রাতঃস্নান ব্রত দিবস, দ্বাদশী তিথি, গ্রহন দিবস, যে কোন শ্রাদ্ধ দিবস, পর্ব্বদিবস ( অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে) ও তর্পণ করার আগে তিলতেল স্নান নিষিদ্ধ; কিন্তু এই
এই তিলতেল যদি পাক করা হয়, তাহলে এবং সুগন্ধি তেল, নারকেল তেল সরিষার তেল হইলৈ উক্ত নিষিদ্ধ দিনে ও স্নান করবার আগে ব্যবহার করা যায়।
তেল মাখিবার আগে মধ্যমা অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা সামান্য তেল নিয়ে “ওঁ অশ্বত্থামা নে নমঃ” মন্ত্র পাঠ করে মাটিতে ফেলবেন এই ভাবে তিনবার করবেন (ব্রাহ্মন ভিন্ন অন্যরা ও নারী ওঁ এর জায়গায় নম বলবেন)।
তারপর ব্রাহ্মণ বামপায়ে, ক্ষত্রিয় কানে, বৈশ্য ডান পায়ে এবং শুদ্র মাথায় তেল মাখিবেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য মাথায় তেল মাখিবার পর আর অন্যান্য অঙ্গে তেল মাখিবেন না।
সকল বর্ণঐ মাথায়, দুটি কানে দুটি পায়ের তলায় উত্তমরূপে তেল মাখিবেন। কুশাসন বা কম্বলাসন এ বসে তেল মাখিবেন না।
প্রত্যেকেরই প্রতিদিন স্নান করা কর্তব্য। আমরা আগেরদিন জেনেছিলাম তেলমাখার নিয়ম ও বিধি। আজকে আমরা জানব নিত্যস্নান বিষয়ে। স্নান সাত প্রকার – (১) মান্ত্র, (২) ভৌম, (৩) আগ্নেয়, (৪) বায়ব্য, (৫) দিব্য, (৬) বারুণী ও (৭) মানস।
গ্রন্থি যুক্ত বস্ত্র পরিধান করে ও নগ্ন অবস্থায় স্নান করবেন না। রাত্রিকালে গ্রহণ অথবা অন্য কোন যোগ থাকিলে স্নান করা কর্তব্য। একবস্ত্রে স্নান এবং পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা গাত্র মার্জন নিষিদ্ধ।
প্রাতঃস্নান – প্রাতঃস্নানে তেল মাখা নিষিদ্ধ। সুর্যদয়ের আগে অর্থাৎ ভোরবেলা সম্ভব স্থলে জলাশয় অথবা নদী প্রভৃতিতে ডুবদিয়ে স্নান করা কর্তব্য। নিত্যনৈমিত্তিক, কাম্য, পৈত্র এবং দৈব কাজ করবার অবশ্যই সঙ্কল্প করিতে হয়, সঙ্কল্প না করলে কোনো কাজে ফললাভ হয় না।
সঙ্কল্পবাক্য – “ওঁ বিষ্ণুঃ ওম্ তদসদদ্য (ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্যরা ও নারী গণ – শ্রীবিষ্ণুঃ নমঃ ওদ্য) অমুকে মাসি (বর্তমান মাসের নাম) অমুকে পক্ষে ( বর্তমান পক্ষের নাম, শুক্লা পক্ষ/ কৃষ্ণ পক্ষ) অমুকে তিথৌ অমুক গোত্রঃ (নারীগণ – তিথা, গোত্রাঃ বলিবেন) শ্রীঅমুকদেবশর্মা বা দেবী (ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্যরা ও নারী গণ – শ্রীঅমুকদাসো বা দাসী বলিবেন ) পূর্বাহ্নকৃত জ্ঞতাজ্ঞাতপাপপাপক্ষয়কামঃ অরুণদয়স্নানমহং করিষ্যে।”
তারপর জলাশয় প্রভৃতি অথবা নদীতে স্নান করার সময় জলে একহাত পরিমিত চতুস্কোন মন্ডল এঁকে তা তীর্থজল মনেকরে অঙ্কুশ মুদ্রায় জলশুদ্ধি করিবেন।
মন্ত্র – “ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদা সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সন্নিধিন্ কুরু।।” তারপর হাত জোড় করে বলিবেন ” ওঁ কুরুক্ষেত্র গয়াগঙ্গা প্রভাস-পুস্করাণি চ। তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি প্রাতঃস্নানকালে ভবন্তিহ।।”
তারপর প্রথমে আঙ্গুল দিয়ে চোখ, কান, নাক এবং মুখমন্ডল আচ্ছাদন করে পূর্বদিকে মুখ করে তিনবার জলে ডুব দেবেন এবং তারপর মন্ত্র পাঠ করবেন –
“ওঁ গঙ্গা গঙ্গেতি যোগ ব্রুয়াদ্ যোজনানং শতৈরপি। মুচ্যতে সর্বপাপেভ্য বিষ্ণু লোকং সগচ্ছতি।। পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভবতঃ। ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষ সর্বপাপ হরহরিঃ।।”
তারপর গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রনাম করিবেন –
“ওঁ সদ্য পাতক সংহন্তি সদ্য দুঃখ বিনাশিনী। সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমাং গতি।।”
মন্ত্র সত্যং পূজাসত্যং সত্যম্ দেব নিরঞ্জনম্।
গুরুর্বাক্য সদাসত্যং সত্যমেব পরম্ পদম্।। ১
ভাবার্থঃ
গুরু প্রদত্ত মন্ত্র সত্য, পূজাও সত্য। দেবাদিদেব নিরঞ্জনও সত্য। গুরু বাক্য সদা সত্য, সেই পরমপদ সত্যের দ্বারা আস্তীর্ন।
গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ
গুরুরেব পরমব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ২
ভাবার্থঃ
গুরুই সৃষ্টিকর্তা, গুরুই পালনকর্তা, গুরুই ধ্বংসকর্তা, গুরুই সেই পরমব্রহ্ম, আমি সেই পরমগুরুকে নমস্কার করি।
অখণ্ড মন্ডলাকারং ব্যপ্তং যেন চরাচরম্
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ৩
ভাবার্থঃ
যার দ্বারা অখণ্ড মন্ডলাকার চরাচর জগৎ ব্যপ্ত হয়ে আছে, তাঁর স্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার।
অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৪
ভাবার্থঃ
অজ্ঞতায় অন্ধ ব্যাষ্টির চক্ষু যিনি জ্ঞানাঞ্জন শলাকা দিয়ে উন্মীলিত করে দিয়েছেন, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
স্থাবরং জঙ্গমং ব্যাপ্তং যৎকিঞ্চিৎ সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।।৫
ভাবার্থঃ
সপ্রাণ এবং অপ্রাণ সচল ও অচল সমস্ত বস্তুসমুহ যে ব্রহ্মের দ্বারা ব্যাপ্ত, তার স্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই পরম গুরুকে নমস্কার করি।
চিদ্ রূপেন পরিব্যাপ্তং ত্রৈলোকং সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৬
ভাবার্থঃ
চরাচর সহ ত্রিলোক জ্ঞান স্বরূপ (ব্রহ্মের) দ্বারা পরিব্যাপ্ত, তৎস্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
সর্বশ্রুতি শিরোরত্ন সমুদ্ভাসিত মূর্তয়ে।
বেদান্তম্বুজ সূর্যায় তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৭
ভাবার্থঃ
যাহার মূর্তি বেদান্তজ্ঞানের দ্বারা সমুদ্ভাসিত, যিনি বেদান্তরূপ পদ্মের উন্মেলক সূর্য স্বরূপ, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
চৈতন্যং শাশ্বতং শান্তং ব্যোমাতীতং নিরঞ্জনং।
বিন্দুনাদকলাতীতং তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৮
ভাবার্থঃ
যিনি শাশ্বত শান্ত ব্যোমাতীত ও নিরঞ্জন চৈতন্যস্বরূপ এবং যিনি বিন্দু, নাদ ও কলার অতীত, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
অনেক জন্ম সংপ্রাপ্ত কর্মবন্ধ বিদাহিনে।
আত্মজ্ঞান প্রদানেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৯
ভাবার্থঃ
যিনি আত্মজ্ঞান রূপ অগ্নিদান করে বহু জন্মে সঞ্চিত কর্মরূপ কাষ্ঠকে দহন করেন, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
ন গুরোরধিকং তত্ত্বং ন গুরোরধিকং তপঃ।
তত্ত্বজ্ঞানং পরংনাস্তি তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১০
ভাবার্থঃ
গুরুর অধিক তত্ত্ব নাই, গুরুর (সেবা) অধিক তপস্যা নাই, এবং যদ্বিষয়ক তত্ত্বজ্ঞান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কিছুই নাই, সেই পরম গুরুকে নমস্কার করি।
মন্নাথঃ শ্রীজগন্নাথো মদ্ গুরুঃ শ্রীজগদগুরুঃ।
মদাত্মা সর্বভূতাত্মা তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১১
ভাবার্থঃ
নাথই শ্রীজগন্নাথ, গুরুই শ্রীজগদ্ গুরু, আমার আত্মাই সর্বভূতের আত্মা, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
গুরুরাদিরনাদিশ্চ গুরুঃ পরম দৈবতম্।
গুরোঃপরতং নাস্তি তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১২
ভাবার্থঃ
গুরুই কারণ এবং কারণহীন, গুরুই পরম দেবতা, গুরু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কেহ নাই, সেই পরমগুরুকে নমস্কার করি।
ধ্যানমূলং গুরোর্ম্মূর্ত্তি পূজামূলং গুরোঃ পদম্।
মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরো কৃপা।। ১৩
ভাবার্থঃ
একমাত্র গুরুমূর্ত্তির ধ্যানই মূল, গুরুর পদযুগল পূজাই সকল পূজার মূল।
গুরুর বাক্যই সকল পূজার মন্ত্র, গুরুদেবের কৃপাই মোক্ষপ্রাপ্তির মূল–একমাত্র গুরুদেবের কৃপাতেই মুক্তিলাভ হয়ে থাকে।
চিন্ময়ং ব্যাপিতং সর্ব্বং ত্রৈলোকং সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১৪
ভাবার্থঃ
যিনি চিন্ময়রূপে অতি সুক্ষ্মরূপে ত্রিলোকে ব্যাপিয়া বর্তমান আছেন ও যিনি ব্রহ্মপদ দেখাচ্ছেন, অজ্ঞাননাশক সেই গুরুকে নমস্কার করি।
সংসার -বৃক্ষমারুঢ়াঃ পতন্তি নরকার্ণবে।
যেনোদ্ধৃত্মিদং বিশ্বং তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১৫
ভাবার্থঃ
সংসাররূপ বৃক্ষে আরোহন পূর্ব্বক মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞানতাবশতঃ কতই না কুকর্ম করে ভয়ানক নরক সমুদ্রে পতিত হয়।
যিনি নরকে পতিত প্রানীকে জ্ঞান দান করে উদ্ধার করেন সেই ত্রাণকর্তা গুরুদেবকে নমস্কার করি।
ব্রহ্মানন্দং পরম সুখদং কেবলং জ্ঞান মূর্ত্তিং।
বিশ্বাতীতং গগনসদৃশং তত্ত্বমস্যাদি লক্ষ্যম্।। ১৬
ভাবার্থঃ যিনি ব্রহ্মানন্দস্বরূপ পরম সুখদ, নির্লিপ্ত, চিতিশক্তি রূপ জ্ঞানমূর্ত্তি বিশ্বাতীত গগনসদৃশ, তত্ত্বমসি প্রভৃতি বাক্যের লক্ষ্য, সেই পরম গুরুর বেদিমূলে আত্মসমর্পণ করলাম।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্বধীসাক্ষীভূতং।
ভাবাতীতং ত্রিগুণরহিতং সদগুরুং তং নমামি।। ১৭
ভাবার্থঃ
একং নিত্যং সেই অদ্বিতীয় ব্রহ্ম, বিমল, অচল, সকল বুদ্ধির সাক্ষী স্বরূপ, ভাবাতীত এবং ত্রিগুণ রহিত, সেই সদগুরুকে আমি নমস্কার করি।
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং বদামি,
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং ভজামি।
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং স্মরামি,
শ্রীমৎ পরমব্রহ্ম গুরুং নমামি। ১৮
ভাবার্থঃ
শ্রীগুরু পরমব্রহ্মস্বরূপ, গুরুশব্দ সর্বদা মুখে বলি ও পরমব্রহ্মরূপ শ্রীগুরুদেবকে ভজনা করি।
পরমব্রহ্মস্বরূপ শ্রীগুরুদেবকে মনে মনে দিবা রাত্রি চিন্তা করি এবং পরমব্রহ্মস্বরূপ শ্রী গুরুদেবকে প্রণাম করি।
তব দ্রবং জগৎগুরো তুভ্যমেব সমর্পয়ে।
ভাবার্থঃ
হে জগতের গুরু আমার এই মন যা তোমারই জিনিস তোমারই পদমূলে সমর্পণ করলাম।
গুরু কৃপা হি কেবলম্।
ব্রহ্ম কৃপা হি কেবলম্।
ওঁম শান্তি ওঁম শান্তি ওঁম শান্তি
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।। ১
শুক্ল যজুর্ব্বেদীয় (বৃ ৫/১/১)
ওঁ সহ নাববতু, সহ নৌ ভুনক্তু, সহ বীর্যং করবাবহৈ।
তেজস্বি নাবধীমস্ত্ত, মা বিদ্বিষাবহৈ ।।
ওঁ শান্তিঃ, শান্তিঃ শান্তিঃ ।। ২
কৃষ্ণ যজুর্ব্বেদীয় (তৈঃ উঃ ২/১)
অর্থ :- সূক্ষ্ম জগৎ এবং ইহ জগৎ উভয়েই পর ব্রহ্ম দ্বারা পূর্ণ ; পূর্ণ হতে পূর্ণ উদ্গত হন ; পূর্ণের পূর্ণত্ব গ্রহণ করলে পূর্ণই (পরব্রহ্মই) অবশিষ্ট থাকে । আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হউক । ১
পরব্রহ্ম (গুরু ও শিষ্য) আমাদের উভয়কে সমভাবে রক্ষা করুন ; উভয়কে তুল্যভাবে বিদ্যাফল দান করুন ।
উভয়কে সমভাবে বিদ্যার্জনের সামর্থ্য প্রদান করুন । আমাদের অধীত বিদ্যা যেন সফল হয় আর আমরা যেন পরস্পরকে বিদ্বেষ না করি । ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হউক । ২
জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।" যে সূর্য দর্শনে সকল পাপ মুক্ত হয়ে যায় তা কি কখনো আকাশের এই সূর্য হতে পারে? শাস্ত্রে যে সূর্য তথা আত্মসূর্যের কথা বলা আছে যা দর্শনে সকল পাপ তথা সংস্কার জ্বলে পুড়ে যায়,তা যোগসাধনার অত্যন্ত উচ্চাবস্থায় যোগীর অভ্যন্তরেই প্রকাশিত হয়। এই আত্মসূর্য দর্শনে সব সংশয়ের নাশ হয় ও সত্যের জ্ঞান হয়। এই আত্মসূর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে আগমসার বলেছেন - "সূর্য্যকোটিপ্রতিকাশং চন্দ্রকোটি সুশীতলম্ " - এই আত্মসূর্য কোটি সূর্যের ন্যায় প্রকাশসম্পন্ন অথচ কোটি চন্দ্রের ন্যায় স্নিগ্ধতাদায়ক। এটা কি আকাশের সূর্যকে বোঝায়? বলাই তো হয়েছে যে সেই মহাদ্যুতি আত্মসূর্য কোটি সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল। এই আত্মসূর্যকে লক্ষ্য করে গীতায় আরো বলা আছে - "ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্। ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্তং পুরুষো মতো মে।" তুমি পরম জ্ঞানের বিষয়। তোমাতেই এই ব্রহ্মাণ্ড চলার শেষে লীন হয়ে যায়।তুমিই শাশ্বত তথা সনাতন ধর্মের গুপ্ত রহস্য, তুমি সনাতন পুরুষ। এই প্রদীপ্যমান উৎসই হল আত্মসূর্য। এই আত্মসূর্য সম্বন্ধে কঠোপনিষদ্ বলেছেন - "ন তএ সূর্য্যভাতি ন চন্দ্রতারকে নেমে বিদ্যুতো ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ। ত্বমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং তস্যভাসা সর্বমিদং বিভাতি।" অর্থাৎ যেখানে সূর্যের কিরণ পৌঁছায় না, চন্দ্রতারকার কিরণও পৌঁছায় না, বিদ্যুতের দ্যুতিও তাহার অপেক্ষা উজ্জ্বল নয়, এই অগ্নির তো কথাই নেই। তিনি নিত্যকাল দেদীপ্যমান আছেন বলেই এই দৃশ্যমান সূর্য চন্দ্র তারকাসহ গোটা জগৎব্রহ্মাণ্ড তাঁর জ্যোতিতেই প্রকাশিত।
সত্যনারায়ণ পূজা সত্যনারায়ণ পূজার নিয়ম এই ব্রতের কোন তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নেই। যে কোন ব্যক্তি প্রদোষকালে এই ব্রত করতে পারেন। নারী-পুরুষ, কুমার-কুমারী নির্বিশেষে এই ব্রত করতে পারে। পূর্ণিমা বা সংক্রান্তি এই ব্রতের সঠিক দিন। উপবাস থেকে এই ব্রত করতে হয়। সত্যনারায়ণ হলেন বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি। ব্ৰতের ফল - যে কোনও বয়সের নর-নারী এই ব্রত করিতে পারে। এই ব্রত করিলে সংসারে কোনও প্রকার দুঃখ কষ্ট থাকে না। মনের সমস্ত কামনা-বাসনা নারায়ণ পূর্ণ করেন। পূজা শুরুর আগের কিছু নিয়ম:- নারায়ণ পূজায় তেমন বাহুল্য নেই বললেই চলে।তাই এই পূজার আয়োজন খুব সহজ। যে যার সাধ্য মত আয়োজন করে। যেকোনো পূর্ণিমার তিথিতেই এই পূজা করা যায়। অনেকে বাড়ির পরিবেশ শুদ্ধ রাখতে, প্রতিটা বড় পূর্ণিমাতেই পূজা করে থাকেন।পূজার আগের নিয়ম বলতে, সবচেয়ে আগে পূজার স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখুন। পরিষ্কার করে যেখানে ঘট পাতবেন, সেখানে আলপনা দিয়ে দিন। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিন। ঘটে আমপাতা, শিষ ডাব দিন। অবশ্যই ঘটে ও ডাবে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দেবেন। বিজোড় সংখ্যক আমপাতা রাখবেন। এতে সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন। এরপর নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবেন। একটি থালায় তিনটি জায়গায় একটু করে চাল, ও তার সঙ্গে কলা, বাতাসা, অন্যান্য ফল, তার ওপর সিকি মানে কয়েন, পঞ্চ শস্য এসব দিয়ে সাজান। পঞ্চ শস্য মানে পাঁচ রকম শস্য। এই ভাবেএকটি থালায় তিনটি ও আরেকটি থালায় পাঁচটি নৈবিদ্য সাজিয়ে রাখুন।সিন্নির জন্য একটি গামলায় ময়দা, গুড়, দুধ, খোয়া ক্ষীর, একটু নারকেল কোরা, কাজু, কিশমিশ ঠাকুরের সামনে রাখবেন। পূজার পর ঠাকুরমশাই সিন্নি তৈরি করবেন। এছাড়াও নারায়ণের ছবির দু’পাশে দুটো পান পাতা রাখুন। এর ওপর একটা সুপারি, একটা কয়েন, একটা কলা রাখুন।বাড়িতে নারায়ণ মূর্তি যদি থাকে তাহলে স্নান করানোর সময় তা কোনওভাবেই বাঁ-হাত ব্যবহার করবেন না। সবসময় ডান হাতে মূর্তি ধরবেন। এছাড়াও শুধু ঘট স্থাপন করেও পুজো করতে পারেন। সায়ং সন্ধ্যা সমাপন করিয়া নববস্ত্র পরিধান করিয়া শুদ্ধ চিত্তে পূর্বমুখী হইয়া পূজা করিতে বসিবেন। নারায়ণ পূজার জন্য প্রথমে নারায়ণ শিলা স্থাপন করতে হয়। সেদিন সারাদিন ওই নারায়ণ শিলা থাকবে। পরদিন সুতো কেটে সেটি নিয়ে চলে যাবেন। নারায়ণ শিলা স্থাপন করে ও নারায়ণ দেবতাকে প্রণাম জানিয়ে পূজা শুরু করা হয়। সঙ্গে মা লক্ষ্মীকেও ফুল দেবেন, প্রণাম জানাবেন। এরপর আপনার সমস্ত আয়োজন তাঁকে নিবেদন করার পালা। এই সাধারণ পূজার পর অঞ্জলি। অঞ্জলি শেষ হয়ে গেলে হোম। হোম-যজ্ঞের জন্য ছোট ছোট করে বেশ কয়েকটি হোমের কাঠ,একটি পাত্রে ঘি, ৫১টি বেলপাতা, একটি লাল চেলি কাপড়, একটু দুধ একটি কলা ও একটি সন্দেশ এবং হোমকুণ্ড রেডি রাখবেন। যজ্ঞ শেষে দুধ ঢেলে যজ্ঞ শেষ হবে। এবং সবাই যজ্ঞের টিপ পড়বেন। এটিই হল নারায়ণ পূজার নিয়ম। তাহলে দেখলেন নারায়ণ পূজার আয়োজন করা কত সহজ। শুধু শুদ্ধ, শান্ত মনে পূজার আয়োজন করুন। আয়োজন সামান্য হলেও দেবতা নারায়ণের আশীর্বাদ প্রবেশ করবে আপনার ঘরে। সত্যনারায়ণ পূজাপদ্ধতি আচমন :- কোশাকুশি থেকে কুশি সাহায্যে জল নিয়ে সেই জল বাম হাতের তালুতে ধারণ করে -ডান হাতের মধ্যমা এবং অঙ্গুষ্ঠ একসঙ্গে স্পর্শ করে বাম হাতের তালু থেকে জল নিয়ে মুখে প্রথমে তিনবার জলের ছিটা দেবে । তারপর হাত ধুয়ে মুখ মুছে হাত জোড় করে আচমন মন্ত্র বলিবে। আচমনঃমন্ত্র- নমো আত্মতত্ত্বায় নমঃ, নমো বিদ্যাতত্ত্বায় নমঃ, নমো শিবতত্ত্বায় নমঃ। হরিস্মরণঃ “ ওঁ বিষ্ণু- ওঁ বিষ্ণ- ওঁ বিষ্ণু- ওঁ তদ্ বিষ্ণু পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয় দিবিব চক্ষু রাততম্ ||” পরে হাত জোড় করে :- ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভূজং পীতবাসম্ || তারপর আবার হাত জোড় করে :- “ওঁ নমঃ অপবিত্র পবিত্রবা সর্বাবস্থাং গতো হপিবা যঃ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষং স বাহ্য অভ্যন্তরং শুচি ||” ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেন্য বরদং শুভম্। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মানি কারয়েৎ। শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু, শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু, শ্রীহরি, শ্রীবিষ্ণু। গন্ধাদির অর্চনা :- “এতভ্যো গন্ধ্যাদিভ্য নমঃ” [ এই মন্ত্র পাঠ করে কোশার ওপর ফুল বেল পাতা চন্দন নিয়ে সমস্ত উপাচারে তিনবার জলের ছিটা দেবে ] সুর্য্যার্ঘঃ – [ কুশীর মধ্যে দূর্বা , চন্দন, পুষ্প , জল, ফুল, বেলপাতা দুহাতে ধরিয়া বলিবে ] ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগত সবিত্রে শুচয়ে কৰ্ম্ম দায়িনে ইদম অর্ঘং নমঃ শ্রী সূৰ্য্যায় নমঃ। জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাতজোড় করে বলেো "ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাসং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম ধন্তারিম সর্বপাপঘনং প্রনতোহস্মি দিবাকরম ৷৷ " স্বস্তিবাচনঃ নমঃ স্বস্তি ভবন্তু ব্রুবন্তু (৩ বার)। সংকল্পঃ বিষ্ণুরোতৎসদ ওম অদ্য অমুকে মাসি অমুক তিথৌ অমুক গোত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্ম্মা সর্ব্বা-পছান্তি সৌভাগ্য বর্দ্ধ নমনোগতাভীষ্ট সিদ্ধপূর্বক শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ দেব প্রসাদালাভথং স্কন্দ পুরানীয় রেবাখস্তোক্ত সত্যনারায়ণ দেব পূজন তকথা শ্রবণমহং করিস্যে। অপাত্ৰস্থাপনঃ– কোষার নীচে মাটিতে চন্দন দ্বারা ত্রি-কোন মন্ডল করিয়া অতঃপর মন্ডলে চাউল দ্বারা অর্চ্চনা করিবেন ও বলিবেন নমঃ অনন্তায় নমঃ কুর্ম্মায় নমঃ, পৃথিব্যৈ নমঃ আধারে শক্তয়ে নমঃ আধারে বহ্নি মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ||” জল শুদ্ধি :- “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলে হস্মিন সন্নিধং কুরু ||” এই মন্ত্রপাঠ করার পর জল স্পর্শ করিয়া “ওঁ” মন্ত্র 10বার জপ করিবে || (এরপর 10বার গায়েত্রী মন্ত্র ) আসন শুদ্ধি :- [ আসনের নিচে ত্রিকোণমন্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি ফুল দিয়া বলিবে ] “ওঁ আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ” আসনে যেখানে ফুল দেওয়া হয়েছে সেখানে ধরে বলিবে - “ ওঁ আসন মন্ত্রস্যা মেরুপৃষ্ট ঋষি: সুতলং চান্দ কুম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিযোগ” - “ওঁ পৃথ্বিত্ত্বয়া ধৃতা লোকা তঞ্চ ধারয় মং নিত্যং পবিত্রং করু আসনম ||” তারপর হাত জোড় করে বামদিকে ঝুঁকে বলো - গুরু পংতি প্রণামঃ- ওঁ গুরুবে নমঃ , ডানদিকে ঝুঁকে বলো - ওঁ গণেশায় নমঃ, মাথার ওপর হাত রেখে বলো - ওঁ ব্রহ্মনে নমঃ, নিচের দিকে হাত জোড় করে বলো - ওঁ অন্ততায় নমঃ , বুকের মাঝে হাত জোড় করে বলো - ওঁ নারায়নায় নমঃ- ওঁ সত্য নারায়নায় নমঃ পুষ্প শুদ্ধি :- পুষ্প পাত্রের উপর হাত রেখে বলো - “ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুস্পে সুপুষ্প পুষ্প সম্ভবে পুষ্প চয়াবকির্নে চ ওঁ ফট স্বহা ||” কর শুদ্ধি :- একটি রক্তবর্ণ পুষ্প লইয়া " ওঁ " মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া " হেঁসৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশানকোণে ফেলিবে।। করশুদ্ধিঃ একটি সচন্দন পুষ্প /লাল ফুল হাতে নিয়ে ‘ফট’ মন্ত্রে উভয় হাত দিয়ে পেষণ করে ঘ্রান নিয়ে ঈশাণ কোণে নিক্ষেপ করতে হবে । ঊদ্ধে তিন তালি এবং তুড়ি দিয়ে দশদিক বন্ধন করতে হবে। অঙ্গন্যস ক্রম:- আং হৃদয়ায় নমঃ | ঈং শিরসে স্বহাঃ | উং শিখায়ে বষট্ | ঐং কবচায় হূং | ওঁ নেত্রাভ্যং বষট্ আং করতল পৃষ্ঠাভ্য মন্ত্রায় ফট্ | করন্যাস :- আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ ঈং তর্জনীভ্যং স্বহা উং মধ্যমাভ্যং বষট্ ঐং অনামিকাভ্যং হূং ওঁ কনিষ্ঠাভ্যং বষট্ আং করতল পৃষ্ঠাভ্য মন্ত্রায় ফট্ || [ তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলী দ্বারা বামহস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে ] দ্বারদেবতার পূজা :- পুস্প নিয়ে " এতে গন্ধপুষ্প ওঁ দ্বারদেবতাভ্যং” বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিতে হবে ৷ ভূতাপসারন :- এই মন্ত্র বলিবার সময় আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছিটাইবে এবং নিচের মন্ত্র বলিবে৷ " ওঁ অপসর্পন্তু যে ভূতা যে ভূতা ভূমি সংস্থিতা যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নাশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ৷” [ এরপর মস্তকের উপর তিনবার 'ফট ' মন্ত্র বলে করতালি দিয়া ভূত অপসারন ও তুড়ি দ্বারা দশ দিক বন্ধন করিবে৷ ] চন্দন লিপ্ত করিয়া একটা একটা করে সাদা দুর্গা পুষ্প নিয়ে নিচের প্রতিটি মন্ত্র প্রতিবার বলে পূজার তামার পাত্রে দাও:- এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সূর্যায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে লাল জবা পুষ্প দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ দুর্গায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে লাল জবা পুষ্প দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বিষ্ণু দেবায় নমঃ ( সাদা দুর্গা পুষ্প এর সঙ্গে তুলসীপত্র দাও) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ ( বেলপত্র এর সঙ্গে ধুতরা ফুল দাও ) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গুরুবে নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহভ্য নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদি দশদিক পালেভ্য নমঃ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বেভ্য দেবেভ্য নমঃ এতে গন্ধপুস্পে সর্বেভ্য দেবীভ্য নমঃ এতে গন্ধপুস্পে বাস্তুপুরুষ দেবায় নমঃ এতে গন্ধপুস্পে দ্বারদেবতায় নমঃ { বিশেষ নির্দেশ:- এবার মূল যে দেবতার পূজা করা হবে তার মন্ত্র বলে নিচের পূজা করতে হবে—----------- প্রতিটি দেব/দেবীর পূজা এই সংক্ষিপ্ত পূজা পদ্ধতিতে পূজা করা যাবে কিন্তু এই নিচের উপাচার পূজা একমাত্র মূল যে দেব/দেবীর পূজা করা হবে -সেক্ষেত্রে সেই দেব বা দেবীর মন্ত্র বলতে হবে বাকি পদ্ধতি সব একই থাকবে |) সত্যনারায়ণ মূল উপচার পূজা :- (সত্যনারায়ণপূজা) [তিন বার সত্যনারায়ণ গায়ত্রীমন্ত্র জপ] (যে দেবতার পূজা করা হবে সেই দেবতার গায়ত্রী বলতে হবে গায়ত্রী জানা না থাকলে সেই দেবতার মন্ত্র বলতে হবে যেমন এক্ষেত্রে “ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ” ) ঘটস্থাপনঃ– নমো সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেব সমন্বিতং ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেব হিরোভব। স্বস্তিবাচন:- ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্ত্যি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যোঅরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।। ওঁ গণানাং ত্বা গণপতিগুং হবামহে, ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতিগুং হবামহে, ওঁ নিধীনাং ত্বা নিধিপতিগুং হবামহে, বসো মম। ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।। তারপর একে একে গণেশ, শ্রীগুরু, শিব, সূর্য, নারায়ণ, দুর্গা, নবগ্রহ, দশমহাবিদ্যা, দশাবতার, সর্বদেবদেবী ও আপনার ঠাকুরের আসনে অন্যান্য ঠাকুরদেবতা থাকলে তাঁদেরকে এবং আপনার ইষ্টদেবতাকে প্রত্যেককে একটি করে সচন্দন ফুল দিয়ে পূজা করবেন। . বৈদিক স্মার্ত সম্প্রদায়ের পূজা-উপাসনার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হইল পঞ্চদেবতা পূজা। গনেশের প্রনামঃ ঔঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজানন। বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্। . গুরু প্রনামঃ ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।১ অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া। চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।২. গুরু ব্রক্ষা গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রক্ষ তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।৩ . শিবের প্রনাম মন্ত্রঃ ওঁ নমস্তভ্যঃ বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুসে নমঃ । পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ ।। নমত্রিশূলহস্তায় দন্ড পাশাংসিপাণয়ে । নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ ।। ওঁ বানেশ্বরায় নরকার্ণবতারনায় , জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায় । কর্পূরকুন্ডবলেন্দুজটাধরায় , দারিদ্রদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ।। ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে । নিবেদয়ানি চাত্মানংত্তৃংগতিপরমেশ্বরঃ ।। . দূর্গা প্রণামঃ ওঁ জয়ন্তি,মঙ্গলা, কালী,ভদ্রকালী,কপালিনী। দূর্গা,শিবা,ক্ষমা,ধাত্রি,স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।। . নারায়ণের প্রনামঃ নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।। . সূর্যপ্রণাম: ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।। নারায়ণের স্নান: ধ্যানান্তে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ঘণ্টা বাজাইতে বাজাইতে স্নান করাইবে— ওঁ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপাৎ। স ভূমিং সর্বতঃ স্পৃত্বা অত্যত্তিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলাম্।। ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।। স্নানান্তে ‘ওঁ নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা’ মন্ত্রে দুইটি তুলসীপত্র ৺নারায়ণের উপরে ও নীচে দিবেন। নারায়ণের ধ্যানঃ কূর্মমুদ্রায় পুষ্প লইয়া পূর্ববৎ ধ্যান করিবে— ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ। কেয়ূরবান্ কনককুণ্ডলবান্ কিরীটীহারী হিরণ্ময়বপুর্ধৃতশঙ্খচক্রঃ।। পঞ্চপচারে নারায়ণ পূজাঃ ওঁ নমো নারায়ণায় এষ গন্ধঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনপুষ্পং নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনতুলসীপত্রং ওঁ নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় এষ ধূপঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় এষ দীপঃ নারায়ণায় নমঃ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং নৈবেদ্যং নারায়ণায় নমঃ। . নারায়ণের প্রনামঃ ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতঃ শ্রীমান্ সদাবিজয়বর্ধনঃ। শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোঽস্তু তে।। নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ . লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান মন্ত্র: ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।। গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্। রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।। . শ্রীশ্রীলক্ষ্মী স্তোত্রম্ঃ ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে। যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।। ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া। পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।। দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত। স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।…(তিন বার পাঠ করতে হবে) শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্রঃ ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে। ধ্যায়েৎঃ– ওঁ সনাং গুণাতীতং গুণত্রয় সমন্বিতং। লোকনাথং ত্রিলোকেশং পীতাম্বর ধরং বিভুঃ। ইন্দি বরদল শ্যামং শঙ্খ চক্র গদাধরং। নারায়ণ চর্তুবাহুং শ্রীবৎস পদ ভূষিতং গোবিন্দং গোকুলানন্দং জগতং পিতরং গুরু। এইরূপে ধ্যানান্তে গন্ধ পুষ্প যোগে পাঠাৰ্চ্চনা করিবেন যথাঃ এতে গন্ধে পুষ্পে ও আঁধার শক্তয়ে নমঃ এবং প্রকৃত্যৈ কুৰ্ম্মায় নমঃ অনন্তায় নমঃ পৃথিব্যৈ নমঃ ক্ষীরসমুদ্রায় নমঃ রত্নদীপায় নমঃ কল্পদ্রুমায় নমঃ মসিমন্তপয়ে নমঃ রত্ন সিংহাসনায় নমঃ পুনঃ ধ্যায়েৎ পুষ্পটি ঘটে দিয়া শ্রীভগবৎ সত্যনারায়ণ দেব ইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ, ইহতিষ্ঠ অত্রধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজা গৃহাণ যাবত্বং পূজয়ামি তাবত্ত্বং সুস্থিরো ভব। আহবানঃ– ওঁ আগচ্ছ ভগবান দেব সর্বকামফলপ্রদ মৎ পূজন সু-সিদ্ধার্থ সান্নিধ্যমিহ কল্পয়। তারপর ষোড়শপচারে, দশোপচারে বা পঞ্চোপচারে ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ মন্ত্রে পূজা করিবেন। পাদ্য, অর্ঘ, গন্ধ, পুষ্প, আচমনীয়, স্নানীয়ং, পুনরামচীনীয়, বিল্বপত্র, সোপকরণ নৈবেদং পানার্থ জলং, শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণ নমঃ। পরে নৈবৈদ্য নিবেদন করিতে হয়। মন্ত্র যথাঃ– ওঁ সম্পাদং গোধুম চুর্ণদুগ্ধ রম্ভাদি শর্করম্। সঘৃতৈ কীকৃতং সর্বং নৈবৈদ্যং ও সত্যনারায়ণ দেব গৃহ্যতাং প্রভো। এতদ্ গোধুমচূর্ণ-দুগ্ধ শকরা উষ্ণী কৃত নৈবৈদ্যং ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ।। পরে বাম করে ব্যাসমুদ্রা প্রদর্শন পূর্বক দক্ষিণ করের অঙ্গুষ্ঠা, কনিষ্ঠা ও অনামিকা যোগে-“প্রাণায় স্বাহা, তর্জনী মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠযোগে অ-পানায় স্বাহা, মধ্যমা অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠযোগে সমানায় স্বাহা, অঙ্গুলী পঞ্চক যোগে বানায় স্বাহা বলিত হয়” পানার্মোদক পুনরাশ্চনীয় তাম্বুল ইত্যাদি দিয়া জলপাত্রে গুহ্যাতি গুহ্য ইত্যাদি মন্ত্রে জল নিক্ষেপ করিয়া গুহ্যাতি গুহ্য গোপ্তাত্বং গৃহানাস্যাৎ কৃতং জপং সিদ্ধি ভবতু মে তৎ প্রসাদাৎ সুরেশ্বর। তৎপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে মন্ডল প্রদক্ষিণ করিতে হয়। যথা- ওঁ যানি যানি চ পানি সর্বকাল কৃতানিচ। তানি তানি বিনশ্যস্তু প্রদক্ষিণং পদে পদে। " এতদ্ পাদ্যং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( পাত্রে একটু জল দিবে) " ইদম্ অর্ঘ্যং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( শঙ্খ এ জল নিয়ে আরতির মত করে দেখাবে ) " ইদম্ আচমনীয়ং জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( পাত্রে একটু জল দেবে) "এস মধুপর্ক শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ | " ( দধি, ঘী, মধু জল পাত্রে দাও -না থাকিলে চন্দন জল পাত্রে দাও) (নিচের মন্ত্র গুলি পাঠ করিতে করিতে স্নান মন্ত্র উচ্চারণ করিবে ) " এতদ্ স্নানীয় জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ " ৷ ( তিনবার মন্ত্র বলে পাত্রে 3 বার জল দাও) তারপর পুনরায়:----- এষ গন্ধ ওঁ শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (পাত্রে চন্দনের ছিটা দেবে) পুস্পাঞ্জলীঃমন্ত্রঃ – ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্ত্তী, নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ। কেয়ূরবান্ কণককুণ্ডলবান্ কিরীটীহারী হিরণ্ময়বপুর্ধ্বতশঙ্খচক্রঃ।। এব সুগন্ধ বিল্বপত্র পুস্পাঞ্জলী নমঃ সাহুধায়,সবাহনায় সপরিবারায় সাঙ্গপাঙ্গায়ৈ নমো শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ।। ………………………………………….(তিনবার) এরপর হাত জোড় করে প্রণাম এর মতন করে বল:- ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতঃ শ্রীমান্ সদাবিজয়বর্ধনঃ। শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোঽস্তু তে।। নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ। নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।। ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে।। এষ ধূপ শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (পাত্রে / শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ এর প্রতিচ্ছবি সামনে আরতির মত করে কমপক্ষে 3 বার ধূপ দেখাবে) এরপর আবরণ দেবতাদের পূজাঃ শঙ্খে ফুল, জল দিয়ে ভোগ নিবেদন :- ওঁ এতস্মৈ সোপকরন্মায় নম: (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধপুষ্প ওঁ এতস্মৈ সোপকরন্মায় নম: (নৈবেদ্য উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতপস্তরন মসি স্বহা (তাম্রপাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয় জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (তাম্রপাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ (গ্লাসে খাবার জল দাও এবং দশবার “ওঁ” মন্ত্র জপ কর) এষ সোপকরন ফলং মিষ্টি নৈবদ্যং পঞ্চ প্রনয় স্বহা ওঁ নমঃ শ্রী সত্যনারায়ণ নিবেদয়ামি ৷ ( এবার হাতে গ্লাসের মত করে কোথা থেকে কুশীতে জল নিয়ে মন্ত্র পড়ে জল দেবে ) তারপর দরজা বন্ধ করে বাইরে যেতে হবে অথবা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে এবং মনে মনে “ওঁ” মন্ত্র জপ করা উচিত - তারপর পুনরায় চোখ খুলে বা ওই ঘরে প্রবেশ করে নিচের পদ্ধতিটি করতে হয় ইদম্ পুনরাচমনীয়ং জলং শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ ( তাম্রপাত্রে জল দাও) স্তবঃ-ওঁ জলময়া ভক্তিযোগের পত্রং পুষ্পং ফলং। নিবেদিতঞ্চনৈবেদ্যং তদ্গৃহানুকম্পয়া। তদ্বিয়বস্তু গোবিন্দ তুভ্যাময় সমর্পয়ে। গৃহান সু মুখোখাতুত্বা প্রদীদ পুরুষোত্তম। মন্ত্র হীনং ক্রীয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন। যৎ পুজিতাংময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তু মে। অমোঘা পুন্ডরী কাক্ষং নৃসিংহ দৈত্যনিসুদনং। হৃষীকেশং জগন্নাথং বাজীশং বরদায়কম। সগুনঞ্চ গুনাতীথ গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্। জনার্দনং জনানন্দং জানকী জীবনং হরিম্। প্রণমামি সদা দেবং পরং ভক্তা জগৎপতিং। দুর্গমে বিষমে ঘোরে শত্রু ভিঃ প্রপীড়িতে। নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্ঠ ভবেষু চ নাতান্যেতানি সংকীর্তন ঈপিদতং ফলংমাপুয়াৎ। সত্যনারায়ণ দেবং বন্দেহং কামদংপ্রভুং, লীলয়া বিত্ততং বিশ্বং যেন তস্ম্যৈ নমো নমঃ। বন্দনা নম নমঃ গজানন বিঘ্ন বিনাশন। ভূমে লুটি বন্দি দেব দেবীর চরণ।। মাতাপিতা বন্দি আমি গুরু চরণ। সত্যনারায়ণ ব্রত কথা করি যে বর্ণন।। জীবের দুর্গত রাশি নাশিবার তরে। ভকত বৎসল হরি এ’ল লীলা করে।। সত্যনারায়ণ রূপে যে মতে প্রকাশ। স্কন্দ পুরাণে সেই কহি ইতিহাস।। ব্রতকথা— প্রথমে বন্দিনু আমি দেব গজানন।সর্ব সিদ্ধিদাতা আর বিঘ্ন বিনাশন। হর-গৌরী বন্দিনু বিরিঞ্চি নারায়ণ। বশিষ্ঠ বাল্মীকি আদি বন্দি মুনিগণ। প্রণমিনু সত্যপীর নিয়ত হাসিন। যাহার কৃপায় হয় ভুবন অখিল।লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দি কালী করালিনী। সত্যপীর উপাখ্যান অপূর্ব কাহিনী।। শুন শুন সর্বজন হয়ে এক চিত। যার যে পাইবে বর মনে বাঞ্ছিত।। গরীব ব্রাহ্মণ এক ছিল মথুরায়। ভিক্ষা করি কাটে কাল সুখ নাহি পায়।। একদিন সেই দ্বিজ ভ্রমিয়া নগর। কিছু না পাইয়া = ভিক্ষা হইল কাতর। বৃক্ষতলে এসে বিপ্র বিষাদিত মন কান্দিতে লাগিল দ্বিজ ভিক্ষার কারণে। কান্দিতে কান্দিতে দ্বিজ হইল অস্থির। দেখিয়া দয়ার্দ্র বড় হৈল সত্যপীর।। দয়াময় প্রভুদেব সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে তারে দিল দরশন। দ্বিজে কয় নারায়ণ, শুন মহাশয়। কি কারণে কাঁদে তুমি বসিয়া হেথায়।। দ্বিজ বলে, কি হইবে বলিলে তােমায়। ফকির বলেন দ্বিজ ক্ষতি কিবা তায়।। দ্বিজ বলে নিত্য আমি ভিক্ষা মাগি খাই। আজ না পাই ভিক্ষা দুঃখ ভাবি তাই। ফকির কহিল, দ্বিজ যাও নিজ ঘরে। আমারে পূজা তব দুঃখ যাবে দূরে।। দ্বিজ বলে, নিত্য পৃজি শিলা নারায়ণ। তাহা ভিন্ন না করিব স্নেচ্ছ আচরণ।। হাসিয়া ফকির বলে, শুন দ্বিজবর। পুরাণ কোরাণে কিছু নাহি মতান্তর।। রাম ও রহিমে জেনাে নাহি ভেদাভেদ। ত্রিজগতে এই দুই জানিবে অভেদ।। এত বলি নিজমূ্তি ধরে জগন্নাথ। শখ চক্র গদা পদ্মধারী চারি হাত।। মুক্তিহেরি দ্বিজবর পড়িল ধরণী। করিল প্রচুর স্তব গদগদ বাণী।। দেখিতে দেখিতে পুনঃ ফকির হইল। দেখি তাহা দ্বিজবর বিস্মিত হইল।ব্রাহ্মণ বলেন, প্রভু পূজিব তােমায়। পূজার পদ্ধতি কিবা বল হে আমায়। ফকির বলিল, তবে শুন দ্বিজবর। ছড়া কলা করিবে আয়ােজন। সওয়া গণ্ডা গুবাক আর পন সওয়া পান।। সওয়া সেরা চিনি কিংবা গুড় আর ক্ষীর। তাহাতে সস্তুষ্ট হই আমি সত্যপীর।। চিনি আর ক্ষীর দিতে যার নাই শক্তি। দুগ্ধ আর গুড় দিয়ে করিবে ভক্তি। বসিবে সকল ভক্ত হয়ে একমন। এক মনে ভক্তিভরে করিবে পূজন৷ পূজা অন্তে ব্রতকথা শুনিবে শ্রবণে। ভক্তিতে পূজা কর শাস্ত্রের বিধানের সত্যপীর বলি সবে মাথে দিবে হাত। নারায়ণ বলিয়া করিবে প্রণিপাত। প্রসাদ লইবে সবে শাস্ত্রের বিধান। এত বলি নারায়ণ হন অন্তর্ধান ভক্তিভাবে দ্বিজবর হয়ে হরষিত। কিছু ভিক্ষা করি গৃহে হন উপনীত। ব্রাহ্মণী শুনিয়া সব হয়ে আনন্দিত। পূজা হেতু আয়ােজন করে বিধিমত। ভক্তিভাবে পূজা দ্বিজ নারায়ণ পদ। প্রভুর কৃপায় দ্বিজ লভিল সম্পদ৷৷ কাঠুরিয়াগণ সবে বিস্ময় মানিল। ভক্তিভরে ব্রাহ্মণের জিজ্ঞাসা করিল ৷৷ ব্রাহ্মণ তাদের বলে বিধান সমস্ত। কাঠুরিয়া পুজিবারে হৈল বড় ব্যস্ত। সিন্নি যে করিল তারা বিধি সহকারে। দুঃখ দূর হইল আনন্দ ঘরে ঘরে। অতঃপর সদানন্দ সাধু একজন। কাঠুরের সম্পদ দেখিয়া হৃষ্টমন। জিজ্ঞাসিয়া সবকথা জানিতে পারিল। শুনিয়া সাধুর মনে ভক্তি উপজিল।। সাধু বলে অপ্রতুল নাহি অন্যধনে। কন্যা নাই দুঃখ তাই সদা উঠে মনে। যদ্যপি আমার এক জনমে তনয়া। সত্যদেব পূজা করি আনন্দিত হৈয়া।এত বলি গেল সাধু অঙ্গীকার করি। যথাকালে জন্মে কন্যা পরমাসুন্দরী।সত্যনারায়ণ পূজা সে সাধু ভুলিল। যথাকালে কন্যাটির বিবাহ যে দিল। অতঃপর সাজাইল সপ্তমধুকর। জামাতা সহিত সাধু চলিল সত্বর। দক্ষিণ পাটনা রাজা নাম কলানিধি। সেই রাজ্যে সদাগরে মিলাইল বিধি৷৷ রাজা সম্ভাষিয়া তাকে তরণী চাপিয়া। প্রমাদ ঘটিল তার সিন্নি নাহি দিয়া।। রাজার ভাণ্ডার মাঝে ধনাদি যা ছিল। রাত্রিতে আসিয়া সাধুর তরী পূর্ণ হল৷৷ ছল পেয়ে রাজা তার তরী লুঠ করে। শ্বশুর জামাতা লয়ে রাখে কারাগারে রাজাদেশে কোটাল মশানে লয়ে যায়। পাত্র অনুরােধে তারা উভে প্রাণ পায়৷৷ কারাগারে বন্দী থাকে শ্বশুর জামাই। কি কহিব উভয়ের দুঃখের সীমা নাই। এখানে সাধুর পত্নী আর তার সুতা। পতির বিলম্ব দেখি মহা শােকযুক্তা।। সঙ্গতি বিনষ্ট হৈল পড়িল দুঃখেতে। দাসীত্ব করিয়া খায় পরের গাহতে৷ একদিন সাধুকন্যা বেড়াইতে গিয়া। আনন্দিত দ্বিজ-গুহে সিন্নি দেখিয়া।। সব শুনি কন্যা সেথা মানত করিল। পিতা আর পতি-আশে কামনা করিল।। শ্বশুর জামাতা যেথা বন্দী কারাগারে। নারায়ণ স্বপ্নে কন সেই নৃপবরে৷৷ শুন ওহে মহারাজ আমার বচন। কলিকালে পূজী আমি সত্যনারায়ণ৷ সদাগর দুইজন শ্বশুর জামাই। বিনাদোষে বন্দী আছে তােমারে জানাই৷৷ প্রভাত হইলে তুমি দুই সদাগরে। দশগুণ ধন দিয়া তুষিবে আদরে।। এত বলি ধরিলেন আপন মূরতি।স্বপ্ন দেখি চমকিয়া উঠিল নৃপতি।মুক্ত করি সদাগরে বহুধন দিল। তরী পূর্ণ করি রাজা বিদায় করিল।। বুঝিতে সাধুর মন সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে পথে দিল দরশন।। ফকির বলেন, শুন ওহে সদাগর। ফকিরেরে কিছু ভিক্ষা দিয়া যাও ঘর৷৷ শুনি সদাগর তারে অবজ্ঞা করিল। তরীর সামগ্রী যত তুষাঙ্গর হৈল। দেখি তাহা সদাগর করে হায় হায়। ধরণী লােটায়ে ধরে ফকিরের পায়। অবশেষে ফকির তাহারে কৃপা কৈল। ধনৈশ্বর্যে তরী পুনঃ পরিপূর্ণ হৈল।। উতরিল ঘাটে সাধু হৈল কোলাহল। নাধুর রমণী কন্যা শুনি কুতুহল।। তরীর সামগ্রী যত ভাণ্ডারেতে লৈয়া। সিন্নি করিল সাধু আনন্দিত হৈয়া।। সকলে প্রসাদ নল যােড় করি পাণি। প্রসাদ ভূমিতে ফেলে সাধুর নন্দিনী।। তাহা দেখি সত্যদেব কৃপিত হইল। জামাতা সহিত তরী জলেতে ডুবাল।৷ হাহাকার করে সরবে পড়িয়া ভূমেতে।শুনি সাধু কন্যা যায় ডুবিয়া মরিতে। হেনকালে দৈববাণী হৈল আচম্বিত । সিরনি ফেলিয়া কন্যা কৈল বিপরীত।। শুনি কন্যা সেই সিন্নি চার্টিয়া খাইল। জামাতা সহিত তরী ভাসিয়া উঠিল তরীর সকল দ্রব্য ভাণ্ডারেতে আনি। করিলেক সওয়া সের সোনার সিরনী। স্বপ্নে কহিলেন দেব, শুন সাধু তুমি। সোনা হতে আটায়, সন্তোষ হই আমি। স্বপ্ন দেখি সদাগর পরম হরিষে। আটার সিন্নী করি পূজে সবিশেষে।। ক্রমেতে প্রচার হ’ল সবার আলয়। ভক্তিভরে পূজিলেই আশা পূর্ণ হয়। একমনে শুনে কিংবা পূজে নারায়ণ। সর্বদুঃখ দূরে যায় শাস্ত্রের বচন।। সিন্নি মেনে যেই জন হয় দুই মনা। কদ্যপি না হয় সিদ্ধ তাহার কামনা। - অথ সত্যনারায়ণের ব্রতকথা সমাপ্ত- দ্বাপরের শেষ ভাগে রাজা যুধিষ্ঠির। কলি প্রাদুর্ভাব দেখে হলেন অস্থির।। একদিন শ্রীকৃষ্ণকে করে জিজ্ঞাসন। কলির প্রভাব হতে কিসে পাবে ত্রান।। শ্রীকৃষ্ণ কহেন শুন কহি সে বিস্তর। জীব লাগি যুগে যুগে মোর অবতার।। লক্ষগুণ পূণ্য কেহ সত্য যোগে করে। ত্রেতার অযুত গুণ সমফল ধরে।। দ্বাপরে শতেক গুণ সু-কৃৎ কলিতে। যদিও ভীষণ কলি সহজ তরিতে।। কলি আরম্ভের পাঁচ হাজার বৎসরে।। অবতীর্ণ হব আমি অবন্তি নগরে।। স্বর্গ বাসে যাবে তোক আমার কৃপায়। হরিনাম অগ্নি সম কলি তুল্য প্রায়।।। কলি অন্তে এক বর্ণ হইবে যখন। কল্কি অবতারে তাহে করিব নিধন।। এত শুনি যুধিষ্ঠির গোবিন্দ ভাবিয়া।। শরীরে স্বর্গপুরে গেলেন চলিয়া।। অবন্তী নগরে অতঃপর নারায়ণ। সত্যনারায়ণ নামে অবতীর্ণ হন।। সন্ন্যাসী বেশে প্রভু সত্যনারায়ণ। ভিক্ষুক ব্রাহ্মণে এক দেন দরশন।। একদিন সেই দ্বিজ সত্যনারায়ণে। সন্ন্যাসীর বেশে ডাকি কহেন ব্রাহ্মণে।। কোথায় কি হেতু দ্বিজ করেছ গমন। প্রণাম করিয়া দ্বিজ কহে বিবরণ।। দরিদ্র ব্রাহ্মণ আমি অবন্তীতে বাস। কর্মদোষে দরিদ্রতা আসে ভিক্ষা আশ ।। ভিক্ষা করি দেড় সের লয়ে যাই ঘরে। দিনে লাগে দুই সের পেট নাহি ভরে।। এত শুনি দয়া করি বলে নারায়ণ।। শুনি দ্বিজ আমি হই সত্যনারায়ণ।। আমারে পূজিলে হয় দুঃখ অবসান। যাগ যজ্ঞ টাকা কড়ি নাহি প্রয়ো জন।। ভক্তিতে ভজনে পূর্ণ হয় সর্বআশ। অভক্তি করিলে তার হয় সর্বনাশ।। দ্বিজ বলে নিজরূপ দেখাও আমারে। তবে প্রতি মম হইবে অচিরে।। নিজরূপ ধরিলেন দেব নারায়ণ। পূর্বাজিত কর্মফলে দেখিল ব্রাহ্মণ। ব্রহ্মা আদি দেব যারে ধ্যানে নাহি পায়।। কমলা সেবিত পদ দেখিল দয়ায় । শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম চতুভূজধারী।। পরিধান পিতাম্বর যাই বলি হারী।। কুন্ডল কর্ণেতে আর শিখি পুচ্চচূড়ে। মকরন্দ লোভেকত মধুকর উড়ে।। অঙ্গের ভূষণ কত শোভে নানা মতে। দেখি অচেতন দ্বিজ পড়িল ভূমিতে।। চেতনা পাইয়া দ্বিজ লোটায়ে চরণে। বলে প্রভু দেখা মোরে দিলে কেন শুলে।। দয়া করে কন তারে সত্যনারায়ণ। অবতীর্ণ অবনীতে জীবের কারণ।। কলির কলুষ রাশি বিনাশ করিতে। সত্যনারায়ণ রূপ প্রকাশি জগতে।। যাগ যজ্ঞ ক্রিয়া হীন ঘোর কলিকাল।। আমাকে পূজিতে নাহি কিছুই জঞ্জাল।। দিব্যপীঠে শুভ্র বস্ত্র করি আচ্ছাদন।। পুষ্প মাল্য দিয়া তাহে করিবে রচন। রাখিবে গুবাক পান চতুর্দিকে তার। ধুপ দীপ নৈবৈদ্যাদি অনেক প্রকার।। সোয়া করিয়া নানা, দ্রব্যাদি দিবে। দুগ্ধ চিনি আটা আনি তাতে মিশাইবে।। জ্ঞাতি বন্ধু সহযোগে মনোযোগ দিয়া। পূজা কিংবা ভক্তি ভরে পাঁচালী শুনিয়া।। প্রসাদ লইয়া সাধু অন্তরে করিবে। অশান্তি অরিষ্ট ব্যাধি সবই ঘুচিবে।। এত বলি সত্যদেব হন অদর্শন। আনন্দে গেলেন দ্বিজ ভিক্ষার কারণ।। সেইদিন ভিক্ষা প্রচুর পাইল। গৃহে ফিরি ব্রাহ্মণীকে বার্তা সব দিল।। ভিক্ষালবধ জিনিসের অগ্রভাগ দিয়া। সত্যনারায়ণ পূজে ভকতি করিয়া।। সেই মত আজ্ঞা পেল প্রভু নারায়ণ। নিত্য সেই মত করি পূজিল ব্রাহ্মণ।। ধনে জনে সম্পদে বাড়িল বহুতর। সেই দেশের রাজা হৈল এই দ্বিজবর।। একদিন কাষ্ঠ বেচি কাঠুরিয়া গণ। তৃষ্ণাযুক্ত হয়ে যায় দ্বিজের ভবন।। অশ্ব, গজ পদাতিক ঐশ্বর্য দেখিল। দুঃখী দ্বিজ রাজা দেখি বিস্মৃতি হইল।। দেখে সত্যনারায়ণে পূজিছে ব্রাহ্মণ। তারা সবে দেখি পূজা করিল গমন।। প্রসাদ লইয়া যায় কাষ্ঠ বেচিবারে। চতুর্গুণ লভ্য তারা করিল সত্বরে।। পূজার সামগ্রী আনি কাঠুরিয়া গণ। ভক্তি ভরে সত্যদেবে সতত পূজয়।। কাঠুরিয়া নদীতীরে পূজে নানা মতে। ধনেশ্বর সওদাগর যায় সেই পথে।। গৌড়েতে বসতি তার ডিঙ্গা বেয়ে যায়। বাণিজ্য করিছে সাধু এথায় সেথায়।। পূজা দেখি ডিঙ্গা রাখি উঠি তট দেশে। কাঠুরিয়াগণে কহে সু-মধুর ভাষে।। কার পূজা করিতেছ কিবা ফল তার। কাঠুরিয়াগণে তারে কহিল বিস্তার।। সাধু বলে মোর নাহি কোন দুঃখ। একমাত্র সন্তানের দেখি নাই মুখ।। পুত্র কিম্বা কন্যা এক যদি মোর হয়। হাজার টাকার ভোগ মানিনু নিশ্চয়।। কামনা করিয়া সাধু লইল প্রসাদ। গৃহে গিয়া অবিলম্বে ঘুচিল বিষাদ।। কন্যা এক জনমিল নারায়ণের বরে। শশীকলা সমকন্যা দিনে দিনে বাড়ে। ক্রমেতে বিবাহ কাল হইল উপনীত। জামাতা আনিতে সাধু হলেন বিব্রত।। রূপে গুনে চন্দ্র কেতু ছিল সওদাগর। বিবাহ দিলেন কন্য করি সমাদর।। অল্পকালে তাহার বিয়োগ হল মাতা পিতা। পুত্র-বৎ নিজগৃহে রাখিল জামাতা।। তবে কত দিনে সাধু বাণিজ্যেতে যাইয়া। নানা দ্রব্য পুরি সপ্ত ডিঙ্গা সাজাইয়া।। জামাতা সহিত যায় বাহি ভাগিরথী। সত্যনারায়ণ পূজা হইল বিস্মৃতি।। দৈবের নির্বন্ধ কেবা করয়ে খন্ডন। অতঃপর যা হইল শুন তার বিবরণ।। নদ-নদী অতিক্রম ডিঙ্গাবেয়ে দিবানিশি আসিলেন সুরথ বন্দর। রাজ ভেট দিয়া নানা, করে কথা বেচা কিনা, রজত কাঞ্চন বহুতর।। সূৰ্য্য চন্দ্র কান্তমনি, মতিহীরা লাল চুণী, প্রবাল পরশ শিলাকত। শঙ্খ চূনি গজমতি, কস্তুরী চামর ইতি ,রেশমী ও পশমী বনাও।। অগুরু চুয়া চন্দন। নানা দ্রব্যে সম্মোহন ডিঙ্গা ভরি লইলেক কিনে।। হেথায় রাজার পূরে, চোরে দ্রব্য চুরি করে, সস্তায় বেচিল সাধু স্থানে।। অল্প মূল্য বহুধন, কিনে আনন্দিত মন। কেবা জানে ঘটিবে প্রমাদ।। আমোদ আহলাদে মাতি; সুখে মত্ত দিবারাতি। হেন কালে ঘটিল বিষাদ।। ডাকি কহে মহিপাল, শুন নরে কোটাল, অকাতরে পড়ি নিদ্রা যাও।। চোর ঢুকে রাজপুরে, বহু দ্রব্য চুরি করে। শীঘ্রচোর ধরি আনি দাও। কোটাল ঘুরিছে তবে, হেন কালে সত্য দেবে। ভিক্ষুকের ছলে কহে তারে।। ধর সাধু সওদাগরে। পাবে দ্রব্য তথাকারে শুনিয়া কোটালে ডিঙ্গা ধরে। রাজার কন্ঠ হার গলে সাধু জামাতার । দেখিয়া কুপিল ভয়ঙ্কর।।। সাধু আর জামাতারে রাখে দোহে কারাগারে ,ক্রমান্বয়ে দ্বাদশ বৎসর।। হেথায় বহুদিন হয় সাধুর রমনী কন্যা সহ আকুলিতা দিবস রজনী।। গৃহদাহে সর্বস্বান্ত হয়ে অতিশয়। বহু কষ্টে কাটে কাল নগরে ভ্রময়।। একদা দেখিল গ্রামে সাধুরে দুহিতা। সত্যনারায়ণের পূজা যতেক বর্ণিতা।। মানস করিলা মনে পিতা পতি তার। গৃহে যদি ফিরে পূজি সত্য-দেবতায়।। গৃহে আসি জননীরে বলিলা সকল। এক মনে নারায়ণে পূজে অবিকল।। ভক্তিতে করিল দয়া সত্য দেবতায়। স্বপ্ন ছলে আজ্ঞা করে সুরথ রাজায়।। আমার কিংকর দুই সাধু সদাগরে। কারাগার হতে দোঁহে ছাড়হ সত্বরে। আপনার মঙ্গল যদি রাজা তুমি চাও। ধন-রত্ন ডিঙ্গা সব ছেড়ে তারে দাও।। স্বপ্ন ভেঙ্গে নৃপতির হল বড় ভয়। দুই সাধু স্থানে তবে করজোড়ে কয়।। ক্ষমা কর সদাগর না জানি বিশেষ। লহ ডিঙ্গা, লহ ধন, যাও নিজ দেশে। সাধু কহে নৃপবর তব দোষ নাই। কর্ম দোষে ভুগিলাম এবে মোরা যাই। এই বলি ডিঙ্গা খুলি সাধু চলে যায়। সত্যদেব ছল করি জিজ্ঞাসে তাহায়। কোথা যাও সওদাগর যাও কি লইয়া। আমি ব্রাহ্মণ ভিক্ষা দাও তো ফেলিয়া।। সাধু বলে লয়ে যাও লতাপাতা সবে। ব্রাহ্মণ রোষিয়া বলে হৌক তাই তবে। দেখিতে দেখিতে ধন সব হল লতা পাতা।।ডিঙ্গা ভরি গেছে তার বহু লতাপাতায়।। ধন না দেখিয়া সাধু জলে ঝাপ দিল। চড়া হেতু প্রাণে সেই মরিতে নারিল।। জামাতা লয়ে যায় ব্রাহ্মণের কাছে। দোঁহে মিলি ব্রাহ্মণের পদে ধরি আছে।। তবে সত্যনারায়ণ দয়াবান হয়ে। ধনপূর্ণ কর ডিঙ্গা রোষ তেয়াগিয়ে।। “অসত্যের লাগি মানি সহস্রেক টাকা। আনি সত্যনারায়ণ ভূলিয়াছ পূজা”।। তাই দোঁহে বার বর্ষ রাজপুরে সাজা। এত বলি প্রভু যদি হল অন্তর্ধান। সহস্র সুবর্ণ তোড়া বাধিল তখন। দেশে আমি পূজা দিব মানস করিয়া ।। তাড়াতাড়ি উপনীত হল দেশে গিয়া। সংবাদ শুনিল সবে সাধুর দুহিতা।। প্রসাদ মাটিতে ফেলি খাইল সৰ্ব্বথা। সত্যনারায়ণ পুনঃ ক্রোধান্ধ হইয়ে। চন্দ্রকেতু সাগরে ফেলিল ডুবায়ে ।। জামাতা শশাকেতে আর সাধুর বর্ণিতা। নন্দিনী সহিত কাঁদে ক্ষণেক মুচ্ছিতা।। হায় হায় মরি মরি কোথা যাই কিবা করি, কাঁদে বামা সাধুর নন্দিনী। কিবা মোর কর্ম ফল পেলাম কত প্রতিফল কেন নাহি যায় মোর প্রাণ। পিতা মাতা প্রতি কহে কিবা কাজ এই দেহে পতি যথা যায় সেই স্থানে। এতবলি সাধু সুতা। হতে যায় অনুমৃতা হেনকালে দৈব বাণী শুণে।। পতির আনন্দে মেতে প্রসাদ ফেলে ভূমিতে এখন যে চাও মরিবারে। পতির জীবন পাবে প্রসাদ তুলিয়া খাবে তারপর পূজো ভক্তি ভরে।। মুক্ত কেশী হয়ে ধায় প্রসাদ মাটিতে পায়। খাইলেক মৃত্তিকা সহিতে। সত্যদেব দয়া হেতু গদাধর চন্দ্র কেতু ডিঙ্গা ভেসে উঠে আচম্বিতে ।।সওদাগর উল্লাসিত জামাতা পাইয়া।। অঙ্গনা সকলে উঠে জয়ধ্বনি দিয়া।। আম্রশাখা সারি সারি রম্ভা শত শত। পূর্ণ কুম্ভ দিয়া করে মঙ্গল বিহিত।।আনন্দে পুরিত মন হল সবাকার। শকটে পুরিয়া ধন নিল নিজাগার।। ভাঙ্গিয়া সহস্র তংকা সন্ধ্যাকালে সবে। নানা বিধ ভোগদ্রব্যে পূজে সত্যদেবে। সোয়াভাগ আটা চিনি দুধ আনি দিল। তাম্বুলাদি দিয়া শেষে পাঁচালী শুনিল। এইরূপে পূজিয়া নিত্য সত্যনারায়ণে। রাজ্যপেল সদাগর তার কৃপাগুণে।। অন্তকালে পত্নী সহ স্বর্গ পুরে পুরে যায়। দেখি শুনি সত্যদেব পূজিল সবায়।। পঙ্গু পদ অন্ধে চক্ষু বধিরে শ্রবণ। কুষ্ঠরোগী ভাল হয় পূজি নারায়ণ।। এতদূরে পাচালী যে সমাপ্ত হইল। সত্যনারায়ণ প্রীতে একবার হরি হরি বল।। শ্রী বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র – ওঁ পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মা পাপসম্ভব। ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষ সর্ব্বপাপ হরি।। নমঃ কমলনেত্রায় হরয়ে পরমাত্মনে। অশেষ ক্লেশনাশায় লক্ষ্মীকান্ত নমোহস্তুতে।। ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রাষ্টং মন্ত্রহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ। পূণং ভবতু তৎসব্বং তৎপ্রসাদাৎ জনার্দ্দনায় নম।। সত্যযুগের মন্ত্র:-নারায়ণ পরাবেদা নারায়ণ পরাক্ষরা,নারায়ণ পরা মুক্তিঃ নারায়ণ পরা গতি ৷৷ ত্রেতা যুগের মন্ত্র:-রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসূদন,কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুন্ঠ বামন ৷৷ দ্বাপর যুগের মন্ত্র:- হরে মুরারে মুধকৈটভারে,গােপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে,যজ্ঞের নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো, নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ ৷৷ কলিযুগের মন্ত্র:-হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ৷৷ ক্ষমা প্রাথনা মন্ত্র :- ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ভবেৎ পূর্নংভবতু ত্বৎ সর্বং ত্বৎ প্রসাদাৎ সুরেশ্বরি। ওঁ মন্ত্র হিনং ক্রিয়া হিনং ভক্তি হিনং সুরেসরী যত পুজিতং ময়া দেবী পরিপুর্নং তদুস্তুমে ।। চরণামৃত লওয়ার মন্ত্রঃ ওঁ অকাল-মৃত্যু-হরণং সর্ব্ব ব্যাধি-বিনাশনং । কৃষ্ণ পাদোদকং পীত্বা শিরসা ধারয়াম্যহং ।। ব্রতের উপকরণ:— ঘট, আম্রপল্লব, ডাব বা কলা, গামছা, সিন্দুর, গঙ্গামাটি, ধান, পিড়ে বা চৌকী, পাতন বস্ত্র,তীরকাঠি, পান, কলা, সন্দেশ বা বাতাসা, পয়সা, ফুলের মালা, পতাকা, ফুলের তােড়া, ছুরি, তিল, হরীতকী, ফুল, তুলসী, দূর্বা, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, পূজার বস্ত্র, গামছা, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, দধি, মধু, গব্যঘৃত, সিন্নির সামগ্রী নানাপ্রকার ফল কুচা, নৈবেদ্য, মিষ্টান্ন, দধি, গােময়, গােরােচনা, দক্ষিণা। শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা – সত্যনারায়ণ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি।পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সত্যনারায়ণ সত্যপীর নামেও পরিচিত। সত্যনারায়ণের পাঁচালি ও ব্রতকথায় উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সত্যনারায়ণ পীরের ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজের পূজা প্রচলন করেছিলেন। আমি যার উপর অনুগ্রহ করি , ধীরেধীরে তার সমস্ত ধন সম্পদ অপহরণ করে নিই, এভাবে যখন সে ধনসম্পদহীন হয়ে যায় তখন তার আত্মীয় স্বজন তাকে অবজ্ঞাপূর্বক পরিত্যাগ করে চলে যায় । সে আবার ধনসম্পদ আহরণের প্রয়াসী হলে আমি তার সমস্ত উদ্যম কে বিফল করে দিই । বারে বারে ব্যর্থ হয়ে সে ধন সম্পদ আহরণে নিবৃত্ত হয়ে তাকে দুঃখময় জ্ঞান করে আর আমার প্রেমী ভক্ত দের সঙ্গে আর সাধু সঙ্গে মগ্ন হয় । তখন আমি তার উপ্রর অহৈতুকী কৃপা বর্ষণ করে থাকি । তিলক ধারনঃ- বাম হাতের তালুতে অথবা কোন পাত্রে একটু জল নিয়ে তিলক গুলবে। মন্ত্র –“ওঁ কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম পুণ্যং যশস্যমায়ুস্য তিলকং মে প্রসাদাতু”
এরপর মধ্যমা বা অনামিকার অগ্রভাগে তিলক নিয়ে যথাক্রমে –
(১) ললাটে – কেশবায়ে নমঃ (৭) বাম বাহুতে – শ্রীধরায় নমঃ
(২) উদরে – নারায়নায় নমঃ (৮) ডান বাহুমূলে – ত্রিবিক্রমায় নমঃ
(৩) কন্ঠে – গোবিন্দায় নমঃ (৯) বাম বাহুমূলে – হৃষিকেশায় নমঃ
(৪) ডান পাজরে – বিষ্ণবে নমঃ (১০) স্কন্ধে – পদ্ম নাভায়ে নমঃ
(৫) বাম পাজরে – বামনায় নমঃ (১১) কোমরে – দামোদরায় নমঃ
(৬) ডান বাহুতে – মধুসূদনায় নমঃ
শেষে তিলকের হাত ধুয়ে জল মাথায় দিয়ে – বাসুদেবায় নমঃ বলতে হবে ।
এরপর গায়ত্রী জপ করবে ।
বাম ও ডান হাতের সব আঙ্গুলের মিলিত অগ্রভাগ দ্বারা উভয় বাহুমূল স্পর্শ করে ‘নৈং কবচায় হুং‘ডানহাতের অঙ্গুষ্ঠ, অনামিকা ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ মিলিত করে দুই চোখ স্পর্শ করে ‘নৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষ্ট‘ ডান হাতে তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হাতের পৃষ্ঠ ও তালু স্পর্শ করে তিন বার তালি দিয়ে ‘ণঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্ ‘
কুর্ম মুদ্রায় (বা হাতের তর্জনীতে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও ডান হাতের তর্জনীতে বা হাতে বৃদ্ধাঙ্গুল সংযুক্ত করে বাহাতের বুড়া আঙ্গুল উন্নত থাকবে, বা হাতের মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা ডানহাতের পৃষ্ঠদেশে সংযুক্ত করতে হবে। পরে তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের মধ্যভাগে ডান হাতের মধ্যমা ও অনামিকা সংলগ্ন করতে হবে । ডানহাতের পৃষ্ঠদেশ কূর্ম্পৃষ্ঠের মত উন্নত করাই কূর্মমুদ্রা) হাতে সচন্দন পুষ্প নিয়ে নারায়ণের ধ্যান করতে হবে –
ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃ মন্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসন – সন্নিবিষ্ট । কেয়ূরবান কনককুন্ডলবান কিরীটীহারী হিরন্ময় বপু ধৃত শঙ্খ চক্রঃ (ধ্যান শেষে ফুল নিজের মাথায় দিতে হবে )।
বিশেষার্ঘঃ নিজেজ বামে ভূমিতে জল দ্বারা প্রথমে ত্রিভুজ, এরপর ত্রিভুজকে বেষ্টন করে বৃত্ত এবং বৃত্তকে বেষ্টন করে বর্গ এঁকে তার উপর গন্ধপুষ্প দিয়ে পূজা করতে হবে ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ , এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ কূর্মায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ অনন্তায়ে নমঃ , এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ পৃথিব্যে নমঃ
এরপর মন্ডলের উপর ত্রিপদিকা (শঙ্খের স্ট্যান্ড) স্থাপন করে ‘হু ফট‘ মন্ত্রে শঙ্খ ধুয়ে ঐ ত্রিপদিকার উপর রাখতে হবে । নমঃ মন্ত্রে শঙ্খে ফুল, দুর্বা দিয়ে অর্ঘ্য সাজাতে হবে । পরে বিলোম মাতৃকা বর্ণ পাঠ করে অর্থাৎ উলটো দিকে বর্ণমালা পাঠ –ক্ষং হং সং ষং শং বং লং রং যং মং ভং বং ফং পং নং ধং দং থং তং ণং ধং ডং ঠং টং ঞং ঝং জং ছং চং ঙং ঘং গং খং কং অঃ অং ঔং ওং ঐং ৯ং ৯ঙ ঋং ঊং উং ঈং ইং আং অং নমঃ । ওঁ নমঃ নারায়ণায় নমঃ মন্ত্রে শঙ্খের তিন ভাগ জল পূর্ন করতে হবে । এরপর গন্ধপুষ্প দিয়ে মং বহ্নিমন্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ মন্ত্রে ত্রিপদিকায় অং সূর্যমন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ মন্ত্রে শঙ্খে উং সোমমন্ডলায় ষোড়ষ কলাত্মনে নমঃমন্ত্রে জলে পূজা করতে হবে । পরে অংকুশ মুদ্রা দিয়ে ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চোইব গোদাবরি সরস্বতী ; নর্মদে, সিন্ধু, কাবেরী জলহস্মিন সন্নিধিং কুরু মন্ত্রে সূর্য মণ্ডল হতে তীর্থ আহ্বান করে জলে নারায়ণের ধ্যান করতে হবে ।
হাতে একটি ফুল নিয়ে ধ্যান – ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃ মন্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণঃ সরসিজাসন – সন্নিবিষ্ট ।
কেয়ূরবান কনককুন্ডলবান কিরীটীহারী হিরন্ময় বপু ধৃত শঙ্খ চক্রঃ ধ্যানের পর পুষ্পটি নারায়ণের উপরে দিতে হবে । পরে অর্ঘের জল কোশায় কিছু রেখে এবং নিজেকে ও পূজা উপকরণে ছিটিয়ে দিতে হবে ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শঙ্খায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ চক্রায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গদায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ পদ্মায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ বনমালায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নন্দকায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গরুড়ায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শ্রী বৎসায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ কৌস্তভায় নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নারদাদি পার্ষদেভ্যো নমঃ
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ মৎস্যাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ
গুরু প্রনাম – ওঁ গুরুভ্যো নমঃ , ওঁ পরম গুরভ্যো নমঃ , ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ , ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ
এরপর আরতি করতে হবে ত্রিকোন মন্ডল এঁকে ভূমি শুদ্ধ করতে হবে । তারুপর একে একে আরতি দ্রব্য যথা ধূপ, দীপ, শঙ্খ, ধোয়া কাপড়, ফুল, চামর, ও পাখা রেখে তা দিয়ে আরতি করতে হবে । আরতি করার সময় দাঁড়িয়ে বামহাতে ঘন্টা বাজাতে হবে । প্রদর্শনের স্তর
প্রথমে দেবতার পদতলে ———— ৪ বার দ্বিতীয়ত নাভি দেশে ————- ২ বার
তৃতীয়ত মুখমন্ডলে ————- ১ বার চতুর্থত সর্বাঙ্গে ————- ৭ বার