আদ্যাপীঠ
আদ্যাপীঠ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী অন্নদাঠাকুর তাঁর গ্রামের বাড়িতে পরপর কয়েকবার এক সন্ন্যাসীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন। স্বপ্নে সন্ন্যাসী তাঁকে কলকাতায় আসার কথা বলেন। কলকাতায় আসার পর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব স্বয়ং তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব এসেছেন অন্নদার কাছে ! বাস্তবে নয় ! স্বপ্নে ! ১০০ আমহার্স্ট স্ট্রিট সিদ্ধেশ্বর ভবনে ! রাত্রিবেলা ! চমকে উঠলেন অন্নদা !
এ কী ! এ যে স্বপ্ন ! স্বয়ং ঠাকুর ! তাঁর একান্ত প্রিয় স্বামী বিবেকানন্দের প্রাণেশ্বর ! প্রাণের দেবতা !
শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন , "কি রে ! আমায় চিনতে পারছিস তো ?"
অন্নদা বললেন "হ্যাঁ পারছি।"
"আমি এক সাধুকে পাঠিয়েছিলাম তোর কাছে ! তু্ই তাঁর কথা শুনলি না কেন ?"
অন্নদা বললেন "ঠাকুর আমিতো জানিনা ! আপনার সাধুটি তো আমায় কিছুই খুলে বলেনি।"
"আচ্ছা ! আমি এখন যা বলব শুনবি তো ?"
"তুই খুব ভোরে উঠে, মাথা মুড়িয়ে গঙ্গাস্নান করে আসবি ! তারপর বিশুদ্ধ আহার করবি ! বিশুদ্ধ বিছানায় শুবি ! কেমন ?"
"এ রকম কত দিন করতে হবে ?"
"শুধু আজকের দিনটা ! তারপর যেমন যেমন আদেশ করব, সেই মতো কাজ করে যাবি ! আমি এখন চললাম।"
শ্রীরামকৃষ্ণগত প্রাণ অন্নদা এলেন শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর মন্ত্র শিষ্য 'যেন কতকালের চেনা' শচীনবাবুর কাছে !
শচীন বললেন, "তুমি তো ভাগ্যবান ! এখনই যাও ! মাথা মুড়াতে এতো লজ্জা কেন ?"
ইচ্ছা-অনিচ্ছা দো টানায় পা বাড়ালেন গঙ্গার দিকে ! যাচ্ছেন, আর ভাবছেন "কোথায় ভেবেছিলাম পয়লা বৈশাখ কবিরাজ সেজে বসব ! আর আজ একুশে চৈত্র ! এসব কি হচ্ছে।"
শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশমত সব কিছু করলেন ! রাতে শুয়েছেন ! ঘুম আসতে না আসতে, আবার স্বপ্নেই দেখা দিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ !
বললেন, "ওরে, ওঠ ! সময় হয়েছে ! ইডেন গার্ডেনের যেখানে পাকুড় গাছ আর নারকেল এক সঙ্গে উঠেছে, তার ঠিক নীচেই একটা মুর্তি পাবি ! সেটা নিয়ে আয় !"
"তিনজন ভক্ত সঙ্গে করে নিয়ে যাবি ! আর তু্ই মৌনী হয়ে থাকবি ! কথা বলবি না ! মূর্তিটি যতদূর সম্ভব গোপনে রাখবি ! তারপর যেমন আদেশ হয়, সেই মত কাজ করবি।"
স্বপ্ন শেষ ! শ্রীরামকৃষ্ণ চলে গেলেন !
দুই শচীন আর সত্যকে নিয়ে অন্নদাঠাকুর অগ্নিকোণ দিয়ে প্রবেশ করলেন ইডেনে। খুঁজে পেলেন নির্দিষ্ট স্থানটি। কাঠ-কুটো জোগাড় করে শুরু হল খোঁজাখুঁজি। জায়গাটা পরিষ্কার। তখন সত্যি মনে হল তাহলে কি জলে ? কাঠ দিয়ে খুঁজতে গিয়ে সত্যর মনে হল কী যেন ঠেকছে। অন্নদা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে জলে ঝাঁপ দিলেন।
স্পর্শও পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জল থেকে তুলে আনলেন মূর্তিটি। তারপর সোজা গাড়ি ভাড়া করে শচীনের বাড়ি।
মূর্তিখানি মা কালীর। এক ফুট থেকে সামান্য উঁচু। গোটা মূর্তি একখণ্ড কালো কষ্টিপাথর কে খোদাই করে তৈরি। মায়ের মাথার মুকুট থেকে হাতের খাড়া, পদ্মাকৃতি প্রস্তরাসন এবং তার উপর শায়িত শিবমূর্তি, সবই যেন নিখুঁত। এমনকী শিবের হাতের মালা ও ডমরুও দৃশ্যমান। মায়ের প্রকাশিত জিহ্বা এবং হাতের মুণ্ডটিও অক্ষত।
দক্ষিণাকালী হইতে মূর্তিখানির এই পার্থক্য ছিল যে, ইহার কোমরে হাতের বেড়া বা কেশপাশ আলুলায়িত ছিল না, কেশের পরিবর্তে তিনটি জটা যা বেণীর আকার। দুইটি, মূর্তির সম্মুখে। গ্রীবার দুই ধারে। একটি পৃষ্ঠদেশে লম্বা ছিল। অন্নদা ঠাকুর লিখেছেন, তাঁর স্বপ্ন জীবনে।
রামনবমীর দিন মা এলেন তাঁকে পুজো করা হবে না ? কিন্তু অন্নদা ঠাকুর বুঝে উঠতে পারছেন না যে এই মূর্তি কার আর তাঁর পুজোই বা কীভাবে করা হয়। তবু আয়ােজন হল, আবার পুজোও হল, এরপর মাকে লুকিয়ে রাখলেন তালাবন্ধ ট্রাঙ্কে। পাছে কেউ দেখে ফেলে।
সে রাতেই মা স্বপ্নে দেখা দিলেন। নির্দেশ হল, "কাল বিজয়া দশমী। আমাকে নিয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে আসবে। তাহলে আমি বড় সন্তুষ্ট হব।"
অন্নদা মায়ের এই নির্দেশ কিছুতেই মানতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত তাকে মায়ের আদেশ শুনতেই হল। নৌকায় চাপিয়ে মাঝ গঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছিলেন সেই মূর্তি। যদিও তার আগে মায়ের অনুমতি নিয়ে মূর্তির একটা ছবি তুলে রেখেছিলেন — বর্তমান দেবীমূর্তি তারই প্রতিরূপ। মা স্বয়ং স্বপ্নে শুনিয়েছিলেন নিজের স্তব ও পুজোর পদ্ধতি।
বাংলা ১৩২৫ সালে ঝুলন পূর্ণিমার রাতে আবার স্বপ্নে দেখা দিলেন ঠাকুর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব অন্নদাঠাকুরকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে লছমনঝুলা যাবার কথা বলেন। এই আদেশ অনুযায়ী শ্রীঅন্নদাঠাকুর লছমনঝুলাতে এক সন্ন্যাসীর আশ্রমে ওঠেন।
সেখানেও ঠাকুর আবার তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন — মানুষের কল্যাণে কাজ করবার জন্য তাঁকে কুড়ি বছর কঠিন তপস্যা করতে হবে। সেই তপস্যার শেষে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এক মন্দির। সেই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশে আসবে এক ধর্মীয় নবজাগরণ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব এক ত্রিরত্নবিশিষ্ট মন্দির দর্শন করিয়ে বলেন — সাধনার শেষে এমনই এক মন্দির গড়তে হবে।
কুড়ি বছরের কঠিন সাধনা মাত্র দুবছরে সম্পূর্ণ করেন শ্রীশ্রী অন্নদাঠাকুর। বাংলা ১৩২৭ সালের পৌষ সংক্রান্তির দিন আদ্যামায়ের আদেশে ব্রত উদযাপন করলেন অন্নদাঠাকুর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব এর কথামতো বাংলা ১৩২৮ সালে আদ্যাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সাধনগৃহের লাগোয়া হরি দাসের জমিতে ছোট একটা মন্দির তৈরি হল। আদ্যা মায়ের এক প্রতিমূর্তি ছবি স্থাপন করা হল।
বাংলা ১৩৩৩ সালে বর্তমান আদ্যাপীঠের জমি কেনা হয়। যার মধ্যে ছিল জীর্ণ ছটা শিবমন্দির। বাংলা ১৩৩৪ সালে নিজের জটা প্রোথিত করে মন্দিরের ভিত নির্মাণ শুরু করেন। কাজ শেষ হয় বাংলা ১৩৭৫ সালে। এখনকার মন্দির অন্নদাঠাকুর দেখে যেতে পারেনি।
মন্দিরের গর্ভগৃহে সবার উপরে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি। বারাে বছরের ছেলে-মেয়ের ন্যায়। লেখা আছে প্রেম। দ্বিতীয় চুড়ােয় আট বৎসরের কুমারী সম আদ্যামা। লেখা জ্ঞান ও কর্ম। আর প্রথম চুড়াতে গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ ঠাকুরের নির্দেশে অন্নদা ঠাকুর বোঝাতে চেয়েছেন গুরুকে ধরে জ্ঞান ও কর্মের মাধ্যমে প্রেমের সন্ধান পেতে হবে। আদ্যামার মূর্তিটি অষ্টধাতুর তৈরি। আর অন্য দুটি পাথর খোদাই করে গড়া।
এই মন্দিরের দেবী আদ্যাপক্তি হলেন চতুর্ভুজা। আদ্যামা মহাদেবের বুকের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের দক্ষিণ বা ডানদিকের দুই হাতে আছে বর ও অভয় মুদ্রা। বামদিকের একটি হাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে আছে নরমুন্ডের মালা।
ভোগেও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে বত্রিশ সের চালের রান্না হয়। দেবীর জন্য সাড়ে বাইশ সের চাল বরাদ্দ। এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্য সাড়ে বারো সের চালের রান্না হয়। এ ব্যবস্থা প্রতিদিনের।
মূল মন্দিরের নির্মাণেও বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। মন্দিরের চূড়ায় সর্ব ধর্মের প্রতীক ব্যবহৃত। আছে হিন্দু ধর্মের ত্রিশুল, বৌদ্ধ ধর্মের পাখা, খ্রীষ্ট ধর্মের ক্রুশ এবং ইসলাম ধর্মের চাঁদ-তারা। জনশ্রুতি, এমন ভাবনা স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী দেবী যে সর্বজনীন। নির্দেশ ছিল, বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেই মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ অবাধ থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। তাই নাট মন্দির থেকেই দর্শন করতে হয় দেবীকে।
আদ্যা মা — মায়ের মধুর নামে রয়েছে শক্তি৷ সেই শক্তিতেই জীবনের সমস্ত বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷
প্রচলিত আছে প্রতিদিন যদি আদ্যাস্তোস্ত্র পাঠ করা যায় তবেই জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব৷ কঠিন ব্যাধি থেকে জীবনের বাধা বিপত্তি, আর্থিক অনটন থেকে সুখের সময়ের বাধা৷
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী, রামেশ্বরী সেতুবন্ধে, বিমলা পুরুষোত্তমে, কালিকা বঙ্গদেশে, মহামায়া মথুরায়, কুবের ভবনে শুভা৷ মায়ের বিভিন্ন রূপেই রয়েছে মুক্তির পথ৷
অন্নদাঠাকুর আদ্যা মায়ের উপাসনা করতেন মায়ের এক অনুগত সন্তান ছিলেন৷ তিনি আদ্যাপীঠ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা৷ স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তেরা বিপুল সংখ্যায় আদ্যাপীঠে জমায়েত হয়ে থাকেন৷
মায়ের মধুমাখা নামে রয়েছে মুক্তির আস্বাদ৷ মনের শান্তি, শারীরিক সুস্থতা মায়ের কল্যাণে জীবন বেশ সুন্দর হয়ে ওঠে৷
তবে আদ্যাপীঠে গেলে মায়ের দর্শন সব সময়ে পাওয়া যায়না৷ সকাল-সন্ধ্যা মায়ের নাম জপ করলে মনের শান্তি আসে৷ মন ভাল থাকলে সব থাকে ভাল৷
শৃণু বৎস প্রবক্ষ্যামি আদ্যা স্তোত্রং মহাফলম্।
যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব বিষ্ণুবল্লভঃ॥১॥
মৃত্যুর্ব্যাধিভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিৎ কলৌ যুগে।
অপুত্রা লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি॥২॥
দ্বৌ মাসৌ বন্ধনান্মুক্তি বিপ্রবক্ত্রাৎ শ্রুতং যদি।
মৃতবৎসা জীববৎসা ষণ্মাসং শ্রবণং যদি॥৩॥
নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয়মাপ্নুয়াৎ।
লিখিত্বা স্থাপয়েদ্গেহে নাগ্নিচৌরভয়ং ক্বচিৎ॥৪॥
রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্নাঃ সর্বদেবতাঃ।
ॐ হ্রীং ব্রহ্মাণী ব্রহ্মলোকে চ বৈকুণ্ঠে সর্বমঙ্গলা॥৫॥
ইন্দ্রাণী অমরাবত্যামবিকা বরুণালয়ে।
যমালয়ে কালরূপা কুবেরভবনে শুভা॥৬॥
মহানন্দাগ্নিকোনে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী।
নৈঋত্যাং রক্তদন্তা চ ঐশাণ্যাং শূলধারিণী॥৭॥
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী।
সুরসা চ মণিদ্বীপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা॥৮॥
রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে।
বিরজা ঔড্রদেশে চ কামাক্ষ্যা নীলপর্বতে॥৯॥
কালিকা বঙ্গদেশে চ অয়োধ্যায়াং মহেশ্বরী।
বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী॥১০॥
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা।
দ্বারকায়াং মহামায়া মথুরায়াং মাহেশ্বরী॥১১॥
ক্ষুধা ত্বং সর্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ।
নবমী শুক্লপক্ষস্য কৃষ্ণসৈকাদশী পরা॥১২॥
দক্ষস্য দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।
রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণধ্বংসকারিণী॥১৩॥
চণ্ডমুণ্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী।
নিশুম্ভশুম্ভমথিনী মধুকৈটভঘাতিনী॥১৪॥
বিষ্ণুভক্তিপ্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা।
আদ্যাস্তবমিমং পুণ্যং যঃ পঠেৎ সততং নরঃ॥১৫॥
সর্বজ্বরভয়ং ন স্যাৎ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনম্।
কোটিতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ॥১৬॥
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ।
নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্বাঙ্গে সিংহবাহিনী॥১৭॥
শিবদূতী উগ্রচণ্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী।
বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী শঙ্খিনী শিবা॥১৮॥
চক্রিণী জয়ধাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া।
দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরী॥১৯॥
নারসিংহী চ বারাহী সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা।
ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয়বিনাশিনী॥২০॥
ইতি ব্রহ্মযামল ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে আদ্যাস্ত্রোত্রং সমাপ্তম্॥
ॐ নম আদ্যায়ৈ ॐ নম আদ্যায়ৈ ॐ নম আদ্যায়ৈ॥
আদ্যা শক্তি মা মহামায়া বলেন — হে বৎস ! মহাফলপ্রদ আদ্যাস্তোত্র বলিব শ্রবণ কর। যে সর্ব্বদা ভক্তিপূর্বক ইহা পাঠ করে সে বিষ্ণুর প্রিয় হয়। এই কলিযুগে পাঠ অথবা শ্রবণকারীর অপমৃত্যু ও কোন দূরারোগ্য ব্যাধির ভয় কখনও থাকে না। অপুত্রা তিন পক্ষকাল আদ্যাস্তোত্র শ্রবণ করলে বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। ছয় মাস শ্রবণ করলে মৃতবৎসা নারী অবশ্যই জীববৎসা হয়।
তাছাড়াও আদ্যাস্তোত্র পাঠ করলে নৌকায়, সঙ্কটে ও যুদ্ধে সহজে জয়লাভ করা যায়, লিখে গৃহে রেখে দিলে কখনো অগ্নি বা চোরের ভয় থাকে না। রাজ স্থানে তিনি সর্বদা জয়ী হয় এবং তার প্রতি সকল দেবতাগণ সর্বদা সন্তুষ্ট থাকেন।
হে মাতঃ ! তুমি ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মাণী, বৈকুণ্ঠে সর্ব্বমঙ্গলা, অমরাবতীতে ইন্দ্রাণী, বরুণালয়ে অম্বিকা, যমালয়ে কালরূপা, কুবের ভবনে শুভা, অগ্নিকোণে মহানন্দা, বায়ুকোণে মৃগবাহিনী, নৈঋতকোণে রক্তদন্তা, ঈশানকোণে শূলধারিণী।
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা, সিংহলে দেবমোহিনী, মণিদ্বীপে সুরসা, লঙ্কায় ভদ্রকালিকা, সেতুবন্ধে রামেশ্বরী, পুরুষোত্তমে বিমলা, ঔড্রদেশে বিরজা, নীলপর্ব্বতে কামাখ্যা।
বঙ্গদেশে কালিকা, অযোধ্যায় মহেশ্বরী, বারাণসীতে অন্নপূর্ণা, গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী, কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী, ব্রজে শ্রেষ্ঠা কাত্যায়নী, দ্বারকায় মহামায়া, মথুরায় মাহেশ্বরী।
হে মাতঃ! তুমি সমস্ত জীবের ক্ষুধাস্বরূপা, সমুদ্রের বেলা, তুমি শুক্ল পক্ষের নবমী এবং কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী। তুমি দক্ষের দক্ষযজ্ঞ-বিনাশিনী কন্যা, তুমি রাবণ ধ্বংসকারিণী, রামের জানকী।
তুমি চণ্ডমুণ্ড বধকারিণী দেবী এবং রক্তবীজ বিনাশিনী, তুমি নিশুম্ভ শুম্ভমথনী ও মথুকৈটভ ঘাতিনী। তুমি বিষ্ণু ভক্তি প্রদায়িনী, ধরাধামের সকল জীবের সুখদা ও মোক্ষদা দুর্গারূপিনী।
ইহ জগতের যে মনুষ্য এই পবিত্র আদ্যাস্তব সর্ব্বদা পাঠ করে থাকেন। তাহার সর্ব্ববিধ জ্বরের ভয় থকে না এবং সর্ব্বব্যধি বিনাশ হয়। এমন কি তাহার কোটি তীর্থের ফল লাভ হয়ে থাকে। ইহাতে বিন্দু মাত্রও কোন প্রকার সন্দেহ অবকাশ থাকে না।
মা জয়া আমার সম্মুখ সর্বদা ভাগ রক্ষা করুন। মা বিজয়া আমার পশ্চাৎ ভাগ সর্বদা রক্ষা করুন। মাতা নারায়ণী আমার মস্তক ভাগ সর্বদা রক্ষা করুন। এবং সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা আমার সর্ব্বাঙ্গ সবসময় রক্ষা করুন।
শিবদূতী, উগ্রচণ্ডা, পরমেশ্বরী, বিশালাক্ষী মহামায়া, কৌমরী, শঙ্খিণী, শিবা, চক্রিণী, জয়দাত্রী রণমত্তা, রণপ্রিয়া, দুর্গা, জয়ন্তী, কালী, ভদ্রকালী, মহোদরী, নারসিংহী, বারাহী, সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা, ভয়ঙ্করী, মহারৌদ্রী, মহাভয় বিনাশিনী আমার সমস্ত প্রত্যঙ্গ রক্ষা করুন।
ব্রহ্মযামলে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে আদ্যাস্ত্রোত্র সমাপ্ত।
ॐ নম আদ্যায়ৈ ॐ নম আদ্যায়ৈ ॐ নম আদ্যায়ৈ॥