সধবা নারী,যে কোন প্রকারের উপবাস পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ। আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।। ( বিষ্ণু সংহিতা ২৫-১৬) অর্থাৎঃ- যে স্ত্রী স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস ব্রতের আচরন করে, সে স্বামীর আয়ু হরণ ও নরক গমন করে। তাই স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস বাঞ্ছনীয় নয়। উপবাসস্তথায়াসো বিত্তোৎসর্গস্তথা কলৌ। ধর্ম্মো যথাভিরুচিতৈরনুষ্ঠানৈরনুষ্ঠিতঃ""।। (ব্রহ্মপুরাণ ২৩০ অধ্যায়ে শ্লোক ১৫) কলি যুগে -উপবাস,আয়াস,ধন-দানাদি ধর্ম্মকর্ম্ম নিশ্চয় যথেচ্ছা রুপে অনুষ্ঠিত হতে থাকবে। তিন। সধবা স্ত্রীলোকের উপবাসাদি ব্রত নাই। এ প্রসঙ্গে ভগবান ব্যাসদেব বলেছেন- সধবানাং হি নারীণাংনেপবাসাদিকংব্রতম। (বৃহদ্ধর্ম্মপুরাণ, উত্তরখণ্ডম ৮ম অধ্যায় ৭নং শ্লোকে) অর্থাৎঃ- সধবা স্ত্রীলোকের উপবাসাদি ব্রত নাই। অত্রিমুনি বলেছেন- জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী। আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।। (অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।) অর্থাৎঃ- যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন। এই বচন অনুসারে কোন হিন্দু সধবা নারী,যে কোন প্রকারের উপবাস ব্রত পালন করে স্বর্গে যাওয়া ত দুরের কথা, সাথে স্বামীর আয়ু হরণ কারিনী হন।
হিন্দুধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক উৎসব অম্বুবাচী (Ambubachi)। এই অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতী বলেও পরিচিত। মনে করা হয়, আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে ঋতুমতী হন ধরিত্রী। পূর্ণ বয়স্কা ঋতুমতী নারীরাই কেবল সন্তান ধারণে সক্ষম হন।তাই অম্বুবাচীর পর ধরিত্রীও শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন। ভারতের একাধিক স্থানে অম্বুবাচী উৎসব, 'রজঃউৎসব' নামেও পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। সতীপিঠের অন্যতম এই অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরে সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠ এই মন্দির। প্রতি বছর অম্বুবাচীর তিন দিন কামাক্ষ্যা মন্দিরে বিশেষ উৎসব এবং মহামেলার আয়োজন হয়। সেই সময় মন্দির বন্ধ থাকে। তবে চতুর্থ দিনে সর্বসাধারণের ভক্তকুলের জন্য মন্দিরের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। দেশ- বিদেশ থেকে ভক্তেরা ভিড় জমান মন্দিরে। অম্বুবাচী শুরুর পর 3 / 4 দিন চলে এই উৎসব। অম্বুবাচী অম্বুবাচীর নিয়মকানুন— অম্বুবাচীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু আচার অনুষ্ঠান। এই তিনদিন সন্ন্যাসী এবং বিধবারা বিশেষ ভাবে পালন করেন। শুধু তাই নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন কৃষিকাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনদিন পর অম্বুবাচী ফের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ও চাষাবাদ শুরু হয়। একই ভাবে মনে করা হয় পৃথিবীও সময়কালে অশুচি থাকেন। সেজন্যেই এই তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী,যোগীপুরুষ এবং বিধবা মহিলারা 'অশুচি' পৃথিবীর উপর আগুনে–.আগুনের রান্না করে কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটাতে হয়। এখনও বিভিন্ন পরিবারের বয়স্ক বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করেন৷ তিনদিন পরে জামাকাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে ধুয়ে, নিজেরা সাবান- শ্যাম্পুতে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন। শুধু কামাখ্যা নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের মাতৃ শক্তির প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এ সময় কোনও শুভ অনুষ্ঠান করা হয় না। অম্বুবাচীতে হাল ধরা, গৃহপ্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ নিষিদ্ধ। অম্বুবাচীতে কী করবেন: 1. এ সময় দেবী মূর্তি বা পট লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। 2. অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে, স্নান করিয়ে পুজো দেওয়া উচিত। 3. এ সময় গুরুপুজো করা উচিত বলে মনে করা হয়। গুরু প্রদত্ত জপ মন্ত্র মালাতে করবেন না কিন্তু মনে মনে অবশ্যই করতে পারবেন 4. অম্বুবাচীতে তুলসীর গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখুন। অম্বুবাচীতে যে কাজ ভুলেও করবেন না 1. বৃক্ষ রোপণ, কৃষি কাজে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার শুভ কাজ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। 2. মন্ত্রোচ্চারণ ছাড়াই পুজো করুন। ধূপ-প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করতে হয়। 3. তুলসীর গাছে জল দেবেন না 4. কোন প্রকারের শাক খাবেন না 5. আগুনে পোড়ানো বা ছেকা রুটি খাওয়া উচিত নয় 6. কোন কারনেই মাটি খনন করবেন না ***************************************************** অম্বুবাচী র ভিতরে বিপদতারিনী পূজা পড়েছে পূজা কী করা যাবে ?....অবশ্যই করা যাবে।
অক্ষয় তৃতীয়া (সংস্কৃত: अक्षय तृतीय) হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। এই শুভদিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। এদিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়। এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। সংস্কৃত ভাষায়, "অক্ষয়" (अक्षय) শব্দটি "সমৃদ্ধি, প্রত্যাশা, আনন্দ, সাফল্য", "ত্রিত্য" অবিস্মরণীয়, চিরস্থায়ী । অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। অক্ষয় তৃতীয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়। কখনো যেন কটু কথা না বেরোয় মুখ থেকে। কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরী। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা। অক্ষয় তৃতীয়ায় রোহিনী নক্ষত্র ও শোভন যোগ সবচেয়ে শুভ বলে মনে করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, মহাভারতে পাণ্ডবরা যখন নির্বাসনে ১৩ বছর কাটিয়ে ফেলেন, তারপর একদিন ঋষি দুর্বাসা তাঁদের আস্তানায় প্রবেশ করেন। দ্রৌপদী তাঁকে অক্ষয় পাত্রে খেতে দেন। এই আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে দুর্বাসা বলেন, ‘আজ অক্ষয় তৃতীয়া। আজ যে ছোলার ছাতু, গুড়, ফল, বস্ত্র, জল ও দক্ষিণা দিয়ে বিষ্ণুর পুজো করবে, সে সম্পদশালী হয়ে উঠবে।’ অক্ষয় তৃতীয়া লোকবিশ্বাসের সর্বভারতীয় চরিত্রের একটি চমৎকার নিদর্শন কৃষিতে হোক অথবা বাণিজ্যে, অক্ষয় তৃতীয়ায় সমৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয় এবং তা থেকেই বোঝা যায়, হিন্দু জীবনাদর্শে জাগতিক বিষয়কে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দিন দেবী অন্নপূর্ণার জন্মদিন, ধনসম্পদের দেবতা কুবেরের আরাধনাও এ তিথির সঙ্গে জড়িত। কুবের এক আশ্চর্য দেবতা। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত বিবিধ উপকথায় সমাজ-ইতিহাসের মূল্যবান রসদ আছে। ব্রাহ্মণ্য কাহিনিগুলি পশ্চিমী উপাখ্যানের মতো সরল নয়, বহুমাত্রিক, সেখানে সমাজের বিবর্তন সম্পর্কে নানা ধারণা খুঁজে নেওয়া যায়। কুবেরকে বর্ণনা করা হয় এক কুদর্শন, খর্বকায় এবং স্ফীতোদর যক্ষ রূপে। প্রথম যুগে ভারতে নবাগত আর্যদের জীবিকা ছিল পশুচারণ, সুতরাং তাঁরা ভ্রাম্যমাণ জীবন যাপন করতেন। অন্য দিকে, পুরনো অধিবাসীদের স্থায়ী বসতি ছিল, তাঁদের আর্থিক অবস্থাও ছিল আর্যদের তুলনায় সমৃদ্ধ। কিন্তু তাঁদের গায়ের রং আর্যদের মতো ফরসা নয়, এবং আর্যরা তাঁদের তুলনায় দীর্ঘাঙ্গী। দেখতে খারাপ বলে আর্যরা তাঁদের নিচু চোখে দেখতেন। বৈদিক, বেদ-উত্তর এবং পৌরাণিক কাহিনিতে অনার্য জনগোষ্ঠীর বিপুল ঐশ্বর্যের বিস্তর উল্লেখ আছে। এই সম্পদের একটা কারণ হল, তাঁরা পশুপালন এবং কৃষি থেকে অর্জিত সম্পদের একটা অংশ স্বর্ণ ও মণিরত্নের আকারে সঞ্চিত রাখতেন। অক্ষয় তৃতীয়ায় সঞ্চয় করা ও সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সোনারূপো কেনার ঐতিহ্য এই সূত্রেই এসেছে। এর ছ’মাস পরে ধনতেরাসেও একই রীতি অনুসৃত হয়। অর্থনীতিবিদ ও লগ্নি-বাজারের উপদেষ্টারাও এই উপদেশই দেন। কুবেরকে বৈদিক সাহিত্যে প্রথমে দেখা যায় ‘ভূতেশ্বর’ রূপে। দেবতা হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি মেলে পুরাণের যুগে, হাজার বছর পরে। তত দিনে মনু-কথিত ‘মিশ্র জনগোষ্ঠী’ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করছেন। ক্রমশ কুবেরকে বৌদ্ধরা বৈশ্রবন্ত নামে এবং জৈনরা সর্বন-ভূতি নামে স্বীকৃতি দেন। লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া অবধি কুবের হিন্দুদের কাছে সম্পদের দেবতা হিসেবে পূজিত হয়ে চলেন। দেবতাদের সম্পদরক্ষী হিসেবে তাঁর গায়ের রংও ক্রমশ পরিষ্কার হতে থাকে, যদিও তিনি গণ, যক্ষ, কিন্নর, গন্ধর্ব গুহ্যক প্রমুখ ‘পশ্চাত্পদ গোষ্ঠী’র প্রতিনিধিই থেকে যান। লোকদেবতা থেকে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের উচ্চতর কোটিতে ওঠার স্পর্ধা দেখিয়েছেন তিনি, তার মূল্য দিতে হয়েছে কুবেরকে, তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়েছে, একেবারে মনসার মতোই। লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না। অক্ষয় তৃতীয়া এবং ধনতেরাসে অনেক হিন্দু তাঁর আরাধনা করে। হিন্দুধর্ম কোনও দেবতাকেই একেবারে ছেঁটে ফেলে না, দরকার মতো একটা সাম্মানিক আসন দিয়ে এক পাশে সরিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, বৌদ্ধধর্মের আধারে কুবের দিব্যি অন্য একাধিক দেশে পৌঁছে গেছেন। জাপানে তিনি বিশামন নামে পূজিত। কোন কাহিনি যুধিষ্ঠিরকে শুনিয়েছিলেন শতানিক? তখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু সিংহাসনে বসেও মনে শান্তি নেই মহারাজ যুধিষ্ঠিরের। যুদ্ধে এত প্রাণ গিয়েছে, বিপুল অপচয় হয়েছে সহায় সম্পদের। স্বামী, পুত্র, স্বজনহারা মানুষের কান্নায় ধর্মরাজ কাতর হয়ে পড়েছেন। এই পাপের বোঝা কে বহন করবে? মহারাজ যুধিষ্ঠিরের মনের অস্থিরতা বুঝতে পেরে মহামুনি শতানিক তাঁকে শুনিয়েছিলেন সে কাহিনি। অনেক কাল আগে রাগী ও নিষ্ঠুর এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। ব্রাহ্মণ হলে কি হবে? ধর্ম বিষয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ ছিল না। এক বার এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ক্ষুধার জ্বালায় তাঁর কাছে কিছু খেতে চাইলেন। কিছু দেওয়া দূরে থাক, সেই নাস্তিক ব্রাহ্মণ ভিখারি বলে গালমন্দ করে গরিব ব্রাহ্মণকে দরজা থেকেই তাড়িয়ে দিলেন। খিদে-তেষ্টায় কাতর সেই ব্রাহ্মণ অপমানিত হয়ে চলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সে সময় তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ব্রাহ্মণী সুশীলা। অতিথির কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বললেন, ‘ভরদুপুরে অতিথি রুষ্ট ও অপমানিত হয়ে ফিরে গেলে সংসারের অমঙ্গল হবে। গৃহের শান্তি-সমৃদ্ধি আর থাকবে না।’ দরিদ্র ব্রাহ্মণকে তিনি বললেন, ‘আপনি এখানেই অন্ন জল গ্রহণ করবেন। আপনার কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’ ব্রাহ্মণপত্নী অতিথি ভিক্ষুকের সামনে ঠাণ্ডা জল এবং অন্নব্যঞ্জন পরিবেশন করলেন। মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে যাওয়ার আগে সন্তুষ্ট ব্রাহ্মণ সুশীলাকে আশীর্বাদ করে বললেন, ‘তোমার এই অন্নজল দান হোক অক্ষয় দান।” বহু বছর কেটেছে। সেই ক্রোধী ব্রাহ্মণ বৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁর মৃত্যু আসন্ন। তাঁকে নিয়ে যেতে হাজির একই সঙ্গে যমদূত ও বিষ্ণুদূতের দল। মৃত্যুর পর তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এই নিয়ে বিবাদ শুরু হল দুই দল দূতের মধ্যে। এক দল তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যেতে চায়। অন্য দলের দাবি, ওই পাপী ব্রাহ্মণের একমাত্র স্থান নরক। এরই মাঝে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর ব্রাহ্মণ একটু জল খেতে চাইলেন। যমদূতেরা তখন ব্রাহ্মণকে অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে বললেন, ‘একদা তুমি তোমার গৃহ থেকে অতিথি ভিখারিকে জল না দিয়ে বিতাড়িত করেছিলে। সুতরাং তুমি জল পাবে না।’ তাঁরা ব্রাহ্মণকে নিয়ে যমরাজের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু যম তাঁর দূতদের বললেন, ‘ওঁর মতো পুণ্যবান ব্রাহ্মণকে আমার কাছে আনলে কেন? বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে এই ব্রাহ্মণপত্নী তৃষ্ণার্ত অতিথিকে অন্নজল দান করেছেন। এ দান অক্ষয়। স্ত্রীর পুণ্যে ইনিও পুণ্যাত্মা। সেই পুণ্যফলে ব্রাহ্মণের স্থান হবে স্বর্গে।’ কাহিনি শেষে শতানিক মুনি যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ‘মহারাজ, বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে ব্রাহ্মণকে অন্ন বস্ত্র জল দান করলে যাবতীয় পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। এবং সেই দানের পুন্য অক্ষয় হয়ে থাকে।’ সোজা কথায় অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি তিথি হল অক্ষয় তৃতীয়া। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল, যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোনও শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। যদি ভাল কাজ করা হয় তার জন্য লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য। যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে অক্ষয় পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। তাই শাস্ত্রের নির্দেশ, এ দিনের প্রতিটি কাজ খুব সাবধানে করা উচিত। কোনও খারাপ কাজ, কোনও কটু কথা যেন মুখ থেকে না বের হয়। কোনও কারণে যেন কারও ক্ষতি না হয়। তাই এ দিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরি। পূজা, ধ্যান, দান বা অন্যকে আনন্দ দেওয়া উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ করতে হয় সতর্ক ভাবে। তবে শতানিক মুনির গল্পের শেষে আরও একটু আছে। বিষ্ণুলোকে পৌঁছনোর পরে ভগবান বিষ্ণু সেই ব্রাহ্মণকে বলেন, তাঁর স্ত্রী মাত্র এক বার অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে ব্রাহ্মণকে অন্নজল দান করেছেন। কিন্তু সেই দান বা ‘অক্ষয়ব্রত’ পর পর আট বার করতে হবে। তবেই অক্ষয় পুণ্যলাভ হবে। এই বলে বিষ্ণু ব্রাহ্মণকে কী ভাবে অক্ষয় ব্রত পালন করতে হবে তা বিশদে বলে ফের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে আরও সাত বার অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে বিষ্ণু কথিত পদ্ধতিতে অক্ষয়ব্রত পালন করেন। এই ব্রতের প্রধান উপকরণ হল যব। শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে যব দিয়ে লক্ষী-নারায়ণের পুজো করে ব্রাহ্মণকে অন্ন, বস্ত্র, ভোজ্য, ফল ইত্যাদি দিয়ে বরণ করতে হয়। ব্রতীরা এ দিন যব দিয়ে তৈরি খাবার খান। এ পার-ও পার দুই বাংলাতেই এখনও এই দিনে সেই রীতি মেনে পালন করা হয় অক্ষয়ব্রত। সধবা মহিলারা (এয়ো) সূর্য ওঠার আগেই নদীঘাটে ফুল, দূর্বা, বেলপাতা, সিঁদুর, সরষের তেল প্রভৃতি উপকরণ নিয়ে জড়ো হন। সূর্য এবং গঙ্গাদেবীকে আবাহন এবং পরিবারের মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে স্নান সম্পূর্ণ করেন। গোত্রভেদে কোনও কোনও পরিবারে ‘সরিষা ধোওয়া’ রেওয়াজের প্রচলন রয়েছে। এই সরষে দিয়ে কাসুন্দি তৈরি করা শুরু হয়। ক্রমশ কমে এলেও গ্রামবাংলায় এখনও এই ব্রত পালনের রেওয়াজ রয়েছে। স্মার্ত রঘুনন্দন তাঁর ‘স্মৃতি তত্ত্বে’ অক্ষয়ব্রতের চারটি ভাগ করেছেন। অক্ষয়ঘট ব্রত, অক্ষয়সিঁদুর ব্রত, অক্ষয়কুমারী ব্রত এবং অক্ষয়ফল ব্রত। এই ব্রতগুলি চার বছর একটানা পালন করতে হয়। ব্রাহ্মণ থেকে কুমারী, সধবা, সর্বস্তরের মানুষকে জড়িয়ে অক্ষয়তৃতীয়া লৌকিক ধর্মাচরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সেই পৌরাণিক যুগ থেকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল বলে জানা যাচ্ছে। বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে ঘটা কিছু তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা একনজরে— অক্ষয়তৃতীয়ার দিন বাড়িতে সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা যায় সহজ কিছু উপায়ের মাধ্যমে— পরিবারে শুভ শক্তির আগমন ঘটাতে, অশুভকে বিনাশ করতে এবং সুখ সম্বৃদ্ধি বাড়াতে এদিন কী কী করবেন? অক্ষয় তৃতীয়ার, আজকের দিনে ভুলেও করবেন না এই সকল কাজ, ভিখারি হতে পারেন মা লক্ষ্মীর রোষে এই জিনিসগুলি রেখে অক্ষয় তৃতীয়ার পূজা করতে পারেন অক্ষয় তৃতীয়া হল একটি উত্সব যা মা লক্ষ্মীর সাথে যুক্ত - মা দেবী যিনি তাঁর ভক্তদের তাদের জীবনে প্রচুর সম্পদ, ঐশ্বর্য এবং সমৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেন। যিনি মা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করেন, প্রচুর ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি উপভোগ করেন এবং জীবনে কখনও কোনো আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হন না। অক্ষয় তৃতীয়ার আধ্যাত্মিক তাত্পর্য এমন যে এই দিনে মা লক্ষ্মীকে খুশি করা খুব সহজ, কারণ একই দিনে মা লক্ষ্মী মহাজাগতিক মহাসাগর থেকে আবির্ভূত হয়ে ভগবান বিষ্ণুকে তার স্বামী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। অতএব, বুদ্ধিমান পদক্ষেপ নিন এবং মা লক্ষ্মীকে খুশি করুন এবং 2023 সালের অক্ষয় তৃতীয়ার আধ্যাত্মিকভাবে অভিযুক্ত অনুষ্ঠানে তাঁর অবিশ্বাস্যভাবে শুভ আশীর্বাদ পান। লক্ষ্মী পূজা করুন এবং মা লক্ষ্মীর অনুগ্রহের দ্বার খুলে দিন ঐশ্বর্য, প্রচুর সম্পদ এবং সমৃদ্ধি, আপনার জীবনে একটি বাস্তবতা! অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুধু সোনা কিনলেই যে ঘরে লক্ষ্মী বিরাজ করবেন তা কিন্তু একেবারেই নয়। সোনা ছাড়া আপনি আপনার সাধ্যমত আরও অনেক কিছুই কিনতে পারেন। তাই মা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করতে কী কী কিনবেন তা জেনে নিন – Akshaya Tritiya 2023 Date and Time
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ায় বিষ্ণুর পুজো করলে সম্পদ বৃদ্ধি হয়। একইসঙ্গে বিষ্ণু ও শিবের পুজো করলেও ফল পাওয়া যায়। গঙ্গায় স্নান করতে যাওয়া সম্ভব না হলে বাড়িতেই গঙ্গাজলে স্নান করার পর বিষ্ণুমূর্তিতে চন্দন মাখাতে হবে। এর সঙ্গে দিতে হবে তুলসিপাতা। সম্ভব হলে বেলফুলও দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি দিয়ে পঞ্চমৃত তৈরি করা যেতে পারে।
ভারত জুড়ে বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়। ভারত জুড়ে বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এই দিন স্নান করে ব্রাহ্মণকে পাখা, ছাতা এবং অর্থ দান করলে অক্ষয় পুণ্য অর্জিত হয়। ফলে এই তিথি উদযাপন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতের বহু প্রদেশে পালিত এই উত্সব হিন্দি বলয়ে আখা তীজ নামে অভিহিত। জৈনরাও এই তিথি পালন করেন। অক্ষয় তৃতীয়া লোকবিশ্বাসের সর্বভারতীয় চরিত্রের একটি চমত্কার নিদর্শন। এবং এই তিথি হল হিন্দুদের সাড়ে তিনটি সর্বাধিক শুভমুহূর্তের অন্যতম। অন্য দুটি হল পয়লা চৈত্র এবং বিজয়া দশমী, আর কার্তিকের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনটি হচ্ছে আধখানা তিথি। কথিত আছে, এই তিথিতেই ব্যাসমুনি গণেশকে মহাভারত বলতে শুরু করেছিলেন; এই দিনেই কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বস্ত্রহরণের অমর্যাদা থেকে রক্ষা করেছিলেন; এই দিনেই সূর্যদেব পাণ্ডবদের ‘অক্ষয়পাত্র’ দান করেছিলেন, যে পাত্রের খাবার কখনও ফুরোবে না। আরও নানা উপকথা এই দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অনেকের মতে এই দিন ত্রেতাযুগ শুরু হয়েছিল, আবার অনেকে বলেন সত্যযুগ। মুশকিল হল, এগুলো একটু পুরনো দিনের ব্যাপার, তর্কের মীমাংসা করতে পারেন এমন কেউ বেঁচে নেই। আবার, এই তিথিতেই নাকি গঙ্গার মর্তে অবতরণ ঘটেছিল। অন্য দিকে, কৃষ্ণ এই দিনেই পরশুরাম রূপে জন্ম নিয়েছিলেন এবং সমুদ্রের বুক থেকে জমি উদ্ধার করেছিলেন, কয়েক শতাব্দী পরে ওলন্দাজারা যেমনটা করবেন। কোঙ্কণ ও মালাবার উপকূলে অক্ষয় তৃতীয়ায় পরশুরাম এখনও পূজিত হন। বাংলায় পরশুরামের কোনও ভক্ত নেই, বোধহয় এই কারণে যে, এখানে সমস্যাটা উল্টো, নদীতে পলি এবং মাটি জমে চর জেগে উঠছে, এখানে বরং পরশুরাম তাঁর কুঠার চালিয়ে পবিত্র ভাগীরথীর বুকে জমা পলি নিকেশ করতে পারতেন।
১) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৪) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৫) এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৬) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৭) এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুখ্হ মোচন করেন।
৮) এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
১১) এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।
১২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চন্দনযাত্রা শুরু হয় এই তিথিতে।
• অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সকাল বেলা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে যথা সম্ভব কিছু দান করুন। এই দিন দান বা পূণ্য করলে সংসারে অত্যন্ত মঙ্গল হয়।
• এই দিন সোনা, রুপো বা যে কোনও ধাতুর কোনও জিনিস গৃহে ক্রয় করা অত্যন্ত শুভ।
• অক্ষয়তৃতীয়ার দিন রাধাকৃষ্ণের চরণে চন্দনের ফোঁটা দিন।
• এই দিন বিবাহিত মহিলারা সাধ্য মতো কয়েক জনকে আলতা ও সিঁদুর দান করুন।
• অক্ষয়তৃতীয়ার দিন তামার ঘট, নারকেল, সুপারি ও চন্দন কাঠ দান করুন।
• এই দিন সামর্থ মতো কিছু জামা কাপড় দান করুন। এর ফলে অত্যন্ত শুভ ফল ভাল করা যায়।
১. এদিন সকাল সকাল স্নান সেরে নিন। শুদ্ধ পোশাক গায়ে চাপিয়ে যথা সম্ভব কিছু দান করুন। এতে সংসারের মঙ্গল হয়।
২. গণেশ ও লক্ষ্মীর মূর্তিতে সিদুঁর লাগান।
৩. ঈশ্বরকে ফল মিষ্টি নিবেদন করুন।
৪. বিবাহিত হলে এবং সম্ভব হলে কয়েকজন এয়োতিকে আলতা ও সিঁদুর দান করতে পারেন।
৫. তামার ঘট, নারকেল, সুপারি ও চন্দন কাঠ দান করাও অত্যন্ত শুভ।
৬. সোনা, রুপো কিংবা অন্য কোনও ধাতুর জিনিস কিনতে পারলে খুব ভাল।
৭. জামা-কাপড় কিংবা অন্ন তুলে দিতে পারেন দুস্থদের মুখে। এতে সংসারে শান্তি আসে।
৮. সন্ধেয় আবার হাত-মুখ ধুয়ে গণেশের আরতি করুন।
৯. লোভ সংযত করে ঈশ্বরের আরাধণা করার পর পরিবারে প্রসাদ বিতরণ করুন। এতে মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
অক্ষয় তৃতীয়া অত্যন্ত মাহেন্দ্র ক্ষণ শাস্ত্রজ্ঞ বিষয়ে নিপুণ পণ্ডিতরা জানাচ্ছেন৷ মা লক্ষ্মী সংসারে বাঁধা পড়েন সেই দিন বিশেষভাবে পুজো করলে৷ তবে মা লক্ষ্মীর রোষ দৃষ্টিও পড়তে পারে এ দিনটিতে কয়েকটি কাজ করলে৷ আর তার ফলে দেখা দিতে পারে অর্থাভাব৷ সাবধান হয়ে যান সেই কারণে৷ সে সম্পর্কে জেনেনিন
১. স্নান না করে তুলসী পাতা ছিড়বেন না অক্ষয় তৃতীয়ার দিন৷ তুলসী পাতা ভীষণ প্রিয় ভগবান বিষ্ণুর, সেই কারণে মা লক্ষ্মী কূপিত হন এমনটা করলে৷ আশপাশ পরিষ্কার রাখুন এ দিন মা লক্ষ্মীর পুজো করার সময়৷ মায়ের পুজো করুন পরিষ্কার বস্ত্র পরে৷
২. উপবাস ভাঙবেন না ব্রত শেষ হওয়ার আগে৷ উপনয়ন সংস্কার করা ঠিক নয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন৷ অশুভ মনে করা হয় এদিন এমন কাজ করাকে৷ এইদিন কেনা যায় নতুন বাড়ি৷ তবে নির্মাণ কাজ করা যায় না নতুন বাড়ি৷
প্রদীপ: আপনি যদি অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সোনার কেনাকাটা করতে সক্ষম না হন তবে কোনও মাটির পাত্র বা প্রদীপ এই দিনটিতে আপনার বাড়িতে আশীর্বাদ আনতে পারে।
নুন: অক্ষয় তৃতীয়ার দিন নুন খাওয়া এড়ানো উচিত। ব্রতী-দের একেবারেই লবণ খাওয়া উচিত নয়। তবে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বাড়িতে সন্ধক লবণ রাখা শুভ বলে বিবেচিত হয়।
সরিষা: সরিষার ব্যবহার প্রায় প্রতিটি ঘরেই হয়। যদি আপনি এক মুঠো খাঁটি হলুদ সরিষা রাখেন তবে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ আপনার উপর থাকবে।
ফল: অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোর জন্য আপনি যেকোনও ফল আনতে পারেন। মরসুম অনুসারে যেকোনও ফল রাখতে পারেন।
তুলা: অক্ষয় তৃতীয়ায় তুলা রেখেও পুজো করতে পারেন।
১) বিনিয়োগ করুন কোনও স্কীমে সোনা নয়, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কোনও বিশেষ স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। নিজের, সন্তানের কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এই ধরনের প্ল্যানের দিকে মন দিন।
২) গাড়ি যেহেতু এই দিনটি অত্যন্ত শুভ একটি দিন তাই সোনা ছাড়াও এই দিনটিতে কিনতে পারেন আপনার পছন্দসই একটি গাড়ি। গাড়ি প্রেমী ব্যক্তিরা এই দিনে গাড়ি কিনলে ফিরতে পারে আপনার সৌভাগ্য।
৩) বাড়ি এই দিন কিনতে পারেন বাড়ি। বাড়ি কেনার পরিকল্পনা যদি আগেই থেকে থাকে, তবে এই দিনেই কিনে ফেলুন। এতে মা লক্ষ্মী তুষ্ট হবেন এবং ঘরে লক্ষ্মী বিরাজ করবেন। সৌভাগ্য ফিরে আসবে আপনার।
৪) জমি-জায়গা ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এই শুভ দিনে কোনও জমি বা ছোট্ট জায়গা কিনতে পারেন। এতেও মা লক্ষ্মী তুষ্ট হবেন। ফিরবে আপনার সৌভাগ্য।
৫) ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বাড়ির কিছু প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনতে পারেন। যেমন – সোফা, ঘর সাজানোর সামগ্রী, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, বাসনপত্র ইত্যাদি। এতেও মা লক্ষ্মী তুষ্ট হয়ে বিরাজ করবেন আপনার ঘরে।
৬) কাঁচা সবজি সোনা, বাড়ি, গাড়ি কেনার সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। তাই এই শুভক্ষণে নিজের সৌভাগ্য ফেরাতে এবং মা লক্ষ্মী-কে সন্তুষ্ট করতে কিনে আনুন কাঁচা শাক-সবজি। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, পাতাওয়ালা সবজি আর্থিক সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনে।
৭) শস্যদানা এই দিনে গৃহস্থলীর প্রয়োজনীয় শস্যদানা কিনতে পারেন। যেমন – চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, বার্লি ইত্যাদি। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, এগুলি কিনলে ঘরের সৌভাগ্য ফেরে এবং অশুভ প্রভাব-কে দূরে সরিয়ে রাখে।
৮) ঘি হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এই দিনে বাড়িতে ঘি কিনলে শুভ শক্তির আগমন ঘটে এবং ঘরে লক্ষ্মী বিরাজ করেন। তাই ঘি কিনে লক্ষ্মী পূজার সময় ঘি দিয়ে প্রদীপ জ্বালান। সৌভাগ্য ফিরবে আপনারও।
সরস্বতী পুজো বা বসন্ত পঞ্চমী এই উত্সব প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়। তবে এই বছর তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফাল্গুন মাসে। সঠিক নিয়ম মেনে এই দিন দেবী সরস্বতীর পুজো করলে একজন ব্যক্তি জ্ঞান ও বুদ্ধি লাভ করেন। মায়ের পুজোর আগে তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর এই বিষয়গুলি জেনে রাখা প্রয়োজন। পুজোর সময় মায়ের অঞ্জলি দানের মাধ্যমে মায়ের আশীর্বাদ বা কৃপাদৃষ্টি পেতে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই এই বিষয়ে অবগত থাকা উচিৎ। অন্যথায় ফল হতে পারে উল্টো। 1.শাস্ত্র অনুসারে এমন কিছু কাজ রয়েছে যা বসন্ত পঞ্চমীতে করা নিষেধ। আসুন জেনে নেওয়া যাক বসন্ত পঞ্চমীর দিন সেই নিষিদ্ধ কাজগুলি সম্পর্কে। 2.মা সরস্বতীর হলুদ রঙ বেশি পছন্দ। এই দিনে কোনও কালো পোশাক নয় বরং বসন্ত পঞ্চমীতে হলুদ রঙের পোশাক পরলে মা সন্তুষ্ট হন। 3.এই দিন কোনও গাছ কাটা উচিত নয়। ভুল করেও এই দিনে দিনও গাছ কাটার মত ভুল কাজ করবেন না। কারণ বসন্তের আগমনে বসন্ত পঞ্চমী আসে এবং এই দিনটিতে বসন্তের সুন্দর এবং নতুন পরিবেশ পুরোপুরি প্রকৃতির সেজে ওঠে। 4.এই দিনে স্নান না করে কোনও খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। ধর্মতত্ত্ব অনুসারে বসন্ত পঞ্চমীর দিন স্নান করে তবেই প্রথম মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করে দিন শুরু করা উচিৎ। 5.এই দিনে জ্ঞান, শিল্প ও সংগীতের দেবী দেবী সরস্বতীর উপবাস করা উচিত এবং পুজোর পরে প্রসাদ গ্রহণ করে তবেই খাওয়া উচিত। 6.এই দিনটি মনে কোনও খারাপ ধারণা আনবে না। বসন্ত পঞ্চমীর এই শুভ তিথিতে কাউকে কোনও খারাপ কথা বলা বা বড়দের আপত্তিজনক কথা বলা উচিত নয়। 7.এই দিনটি মাংস এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। যেহেতু বসন্ত পঞ্চমী শুভ এবং জ্ঞানের দেবী হিসেবে মা পূজিত হন তাই দিন অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং, এই দিনে মাংস এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা উচিত। সরস্বতী পুজোর দিন এই কাজ ভুলেও নয়, অন্যথায় ভুগতে হতে পারে অবসাদে
বাংলার ১২ মাসের মধ্যে ফাল্গুন মাস বিষ্ণু ও শিব ভক্তদের অনুকূল বলে মনে করা হয়। ঠিক এই কারনেই বিষ্ণু ও শিবের মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তদের সমাগম হয়ে থাকে। কারণ এই মাসেই পালিত সকল ব্রতের সেরা শিবচতুর্দশী ব্রত বা মহাশিবরাত্রি ব্রত। তাই এই মাসে নিষ্ঠা সহকারে কয়েকটি বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবাদিদেব মহাদেব তুষ্ট হন সহজেই। তাই ফাল্গুন মাস জুড়ে মেনে চলুন এই সাধারণ নিয়মগুলি তাহলেই ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি বজায় থাকবে আপনার উপর। জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়মগুলি- 1.ফাল্গুন মাসের প্রতিদিন সন্ধ্য়াবেলা পূর্ব পুরুষের উদ্দেশে প্রদীপ দান করুন। পুরো মাস এই নিয়ম পালন করুন প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলা। 2.সম্ভব হলে প্রতি সোমবার সকালে স্নান সেরে শিবলিঙ্গে জল ঢালুন। তিনটি নিঁখুত বেলপাতা ও বাতাসা দিলেই তুষ্ট হন মহাদেব। 3.প্রদীপ জ্বালিয়ে এক মনে স্মরণ করুন মহাদেবের, আরাধনা করুন। মহাদেব সন্তুষ্ট হলে আপনার সকল মনোবাঞ্ছা পূরণ করবেন। 4.এই মাসে কোনও দুঃস্থ ব্যক্তি সাহায্য চাইলে তাকে ফেরাবেন না। সাধ্যমত দান করুন, সব সময় আর্থিক দান হতে হবে তা নয়। আপনার যেমন সাধ্য সেই মতই দান করুন। 5.পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন বাড়ির আনাচ-কানাচ, এই মাসে ঘর-বাড়ির কোনও অংশ নোংরা করে রাখবেন না। 6.সেই সঙ্গে বাড়ির প্রধান দরজার সামনে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ঘর থেকে কেউ বাইরে যাওয়ার আগে দরজার সামনের অংশ জল দিয়ে ধুয়ে দিন। পুরো ফাল্গুন মাস জুড়ে পালন করুন এই কটি নিয়ম। তাহলেই ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি বজায় থাকবে আপনার উপর। জীবনের সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজেই। ফাল্গুন মাস জুড়ে পালন করুন এই নিয়ম, সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজেই
শিবরাত্রিতে ভুলেও এই কাজগুলি করবেন না-রুষ্ট হবেন মহাদেব পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রির উৎসব পালন .. করা হবে। মানা হয় যে, মহাশিবরাত্রি ভগবান শিবের উপাসনার জন্য সর্বোচ্চ দিন বলে মনে করা হয়। আজকে মহাশিবরাত্রির ব্রত রাখবেন সকলে। এইদিন ব্রত যাঁরা রাখেন তাঁদের কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করে চলতে হয়— মহাশিবরাত্রির ব্রত রাখার সময় কোন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কালো পোশাক নয় মহাশিবরাত্রির সময় স্নান না করে কিছু খাবেন না। ব্রত যদি নাও রাখেন তাও স্নান করে খাবার গ্রহণ করবেন না। মহাশিবরাত্রির দিন কালো রঙের পোশাক এইদিন কালো রঙের পোশাক পরাকে অশুভ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি শিবলিঙ্গে অর্পণ করা প্রসাদও খাবেন না, কারণ এতে দুভাগ্য আসতে পারে। এর পাশাপাশি শিবলিঙ্গে অর্পণ করা প্রসাদও খাবেন না, কারণ এতে দুভাগ্য আসতে পারে। এরকম করলে অর্থের ঘাটতি হতে পারে। এই জিনিসগুলি খাবেন না শিবরাত্রির উৎসবে চাল, ডাল বা গমের তৈরি কোনও খাবার সেবন করবেন না। ব্রতের সময় আপনি দুধ বা ফল খেতে পারেন। সূর্যাস্তের পর কিছুই খাওয়া চলবে না। এইদিন সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে দেহ ও মনকে শুদ্ধ করে নিন। এই কাজের মাধ্যমেই দিনের শুরুটা করুন। রাতে ঘুমোবেন না শিবরাত্রির সময় খুব বেশিক্ষণ সকালে শুয়ে থাকবেন না এবং রাতের সময় না ঘুমিয়ে কাটানোই এই ব্রতের নিয়ম। রাত জাগার সময় ভগবান শিবের ভজন শুনতে পারেন এবং আরতি করতে পারেন। ব্রতের পরের দিন সকালে স্নান করে প্রসাদ গ্রহণ করে শিবজিকে তিলক লাগিয়ে তবেই এই ব্রত খোলা যেতে পারে। শিবলিঙ্গে কুমকুম দেবেন না শিবলিঙ্গে কখনও কুমকুমের তিলক লাগাবেন না। মহাশিবরাত্রির সময় ভোলেনাথকে প্রসন্ন করার জন্য চন্দনের টিকা লাগানো যেতে পারে। মাতা পার্বতী ও গণেশ মূর্তিতে কুমকুমের টিকা লাগানো যেতে পারে। ভাঙা অক্ষত ব্যবহার করবেন না ভগবান শিবের পুজোয় কখনও ভুলেও ভাঙা চাল অর্পণ করবেন না। অক্ষতের অর্থ হল অটুট চাল, এটি পূর্ণতার প্রতীক। অক্ষতের অর্থ হল অটুট চাল, এটি পূর্ণতার প্রতীক। তাই শিবজিকে অক্ষত অর্পণ করার সময় এটা দেখে নেবেন যে যেন সেটা কোনওভাবেই ভাঙা না হয়। শিবরাত্রির ব্রত সকালে শুরু হয় এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত থাকে। ব্রতের সময় ফল ও দুধের সেবন করা উচিত, তবে সূর্যাস্তের পর কিছুই খাওয়ার নিয়ম নেই। কেতকী ফুল দেবেন না ভঘবান শিবকে ভুলেও কেতকী ও চাঁপা ফুল অর্পণ করবেন না। বিশ্বাস করা হয় যে এই ফুলগুলিকে ভগবান শিব শাপ দিয়েছিলেন। কেতকী ফুল সাদা হওয়া সত্ত্বেও তা ভগবান শিবের পুজোয় ব্যবহার হয় না। ছেঁড়া বেলপাতা শিবরাত্রিতে তিন পাতা সম্পন্ন বেলপাতা অর্পণ করতে হবে। ছেঁড়া-ফাটা বেলপাতা ব্যবহার করা চলবে না শিবের এই বিশেষ পুজোয়।
পবিত্র শ্রাবণমাস -যা ভগবান শিবের অতি প্রিয় মাস--- এই মাসে রুদ্রাধ্যায় জপ , রুদ্রযজ্ঞ এবং রুদ্রাভিষেক অত্যন্ত ফলদায়ক । রুদ্র অর্থাৎ ভগবান শিব এবং অভিষেক অর্থাৎ স্নান এই দুইয়ের সন্ধি শব্দ রুদ্রাভিষেক ।
<--- অর্ঘ্য ---> চন্দন, জল, পুষ্প, আতপ চাল, কুশ, তিল, দূর্বা, সরিসা, যব। <--- পঞ্চামৃত বা মধুপর্ক ---> দধি, দুধ, ঘৃত, মধু, দেশী চিনি, একসঙ্গে মিশ্রিত করে মধুপর্ক তৈরি করা হয়। ----- মধুপর্ক শোধন মন্ত্র :----- ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।। ওঁ মধু নক্ত সু তো ষ সো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ। মধু দ্যৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধুমান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ মাধ্বীগা ভবন্তু নঃ।। ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু _______ ________ ----- অগ্নি জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ অগ্নিমিলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেব মৃত্বিজম্। হোতারং রত্নধাতম্।। ----- দীপ জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ সুপ্রকাশো মহাদীপ সর্বতস্তি মীরাপহঃ সবাহ্য অভ্যন্তর জ্যোতি দীপ হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম। ইতি দীপ।। -----ধূপ জ্বালাবার মন্ত্র :----- ওঁ বনস্পতি রসো দিব্যো গন্ধাতোঃ সুমনোহরঃ আঘ্ৰেয়ঃ সর্বদেবানং ধূপো হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম। ইতি ধূপ।। _______ ________ <--- গোপীচন্দন শুদ্ধি এবং মৃত্তিকা শুদ্ধি ---> ওঁ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণক্রান্তে বসুন্ধরে। মৃত্তিকা হরমে পাপং যন্ময়া দুস্কৃতং কৃতম।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥ ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু _______ ________ <--- আচমন ---> প্রথমে মুখে জলের তিনবার ছিটা দিয়ে ও মুখে হাত দিয়ে মুছে আচমন করিবে। তারপর তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিত করে মুখ স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা নাসিকা স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা চক্ষুদ্বয় ও পরে কর্ণদ্বয় স্পর্শ করিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করিবে। হস্তদল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে। সমস্ত অঙ্গুলীর দ্বারা মস্তক স্পর্শ করিবে। অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা বাহুদ্বয় স্পর্শ করিবে। এবং শুচি হইবে । -----[উপরোক্ত সমস্ত কাজটি বিষ্ণুস্মরণ করিতে করিতে করতে হবে]----- ----- বিষ্ণুস্মরণ মন্ত্র :----- ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ।। • পরে হাত জোড় করে :----- ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু দ্বিভূজং পীত বাসসম্। নমঃ অপবিত্র পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা । যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্য অভ্যন্তরঃ শুচিঃ নমঃ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ । নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণী কারয়ে ।। নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥ _______ ________ " বং এতেভ্য গন্ধাদিভ্য নমঃ " ( এই মন্ত্রে ৩ বার ফুল ও চন্দনে জলের ছিটা দাও ) <----- স্বস্তি বাচন -----> ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ । স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু। ওঁ গণানাং ত্বা গণপতি হঁং হবামহে ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতি হঁং হবামহে ওঁ নিধিনাং ত্বা নিধিপতি হঁং হবামহে। বসো মম॥ ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি <----- সুক্ত মন্ত্র -----> ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিচম্। উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে॥ ওঁ অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু। <----- আসন শুদ্ধি -----> আসনের নিচে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া পরে একটি ফুল নিয়ে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ হ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ পরে আসনে একটি গন্ধ পুষ্প দিয়া বলিবে :--- মন্ত্র:--- 'ওঁ আসন মন্ত্রস্য মেরু পৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূৰ্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।' 'ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাঃ দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম ॥' পরে হাত জোড়ে বামদিকে ঝুঁকে বলিবে :--- মন্ত্র:--- ওঁ গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ ওঁ সশক্তি গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ _______ ________ দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে বল:--- ওঁ গনেশায় নমঃ মাথার ওপরে :--- ও ব্রহ্মণে নমঃ নিচের দিকে :--- ওঁ অনন্তায় নমঃ বুকের কাছে:--- ও নারায়ণায় নমঃ ওঁ সত্য নারায়ণায় নমঃ <----- কর শুদ্ধি -----> একটি রক্ত বর্ণ পুষ্প গ্রহণ করিয়া ওঁ মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া "হে সৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশান কোণে ফেলিবে । <----- করন্যাস -----> আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ [ উভয়হস্তের তর্জ্জনী অঙ্গুলী দ্বারা উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করিবে] ঈং তর্জ্জনীভ্যাং স্বাহা [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের তর্জ্জনী স্পর্শ করিবে] উং মধ্যমাভ্যাং বষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের মধ্যমা স্পর্শ করিবে] ঐং অনামিকাভ্যাং হূং [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের অনামিকা স্পর্শ করিবে] ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের কনিষ্ঠা স্পর্শ করিবে] অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্ [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে] <----- অঙ্গন্যাস -----> আং হৃদয়ায় নমঃ। ঈং শিরসে স্বাহা। উং শিখায়ৈ বষট্। ঐং কবচায় হূং। ঔং নেত্রাভ্যাং বৌষট্। অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্। [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে বেষ্টন করিয়া করতল ধ্বনি করিবে। ] _______ ________ <----- পুষ্প শুদ্ধি -----> পুষ্প পাত্রে হাত রেখে বল:--- মন্ত্র :--- ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্প সম্ভবে। পুষ্প চয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা॥ <----- ভূমি শুদ্ধি -----> গন্ধ পুষ্প ভূমিতে ফেলিতে ফেলিতে বলিবে:- মন্ত্র :--- ওঁ আঁধার শক্তয়ে নমঃ ওঁ কূর্ম্মায় নমঃ ওঁ অনন্তায় নমঃ ওঁ পৃথিবৌ নমঃ এবার ' ফট ' বলিয়া পাত্র ধুবে । পরে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া তাম্র পাত্রটি রাখিবে । পাত্রটি রাখার পর ওঁ মন্ত্র বলিয়া পাত্রে জল দিবে । এবং ফুল দিয়ে মন্ত্র বলিতে বলিতে পূজা করিবে। মন্ত্র :--- ওঁ মং বহির্মন্ডলায় দশ কলাত্মনে নমঃ অং সূর্য মন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ উং সোম মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ ---(উপরোক্ত পদ্ধতির দ্বারা কোষাকুশী শুদ্ধ করিতে হবে)--- <----- জল শুদ্ধি -----> একটি ত্রিকোণ মণ্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি চতুষ্কোণ আকিয়া কোষায় জল ভরিয়া ও চন্দনযুক্ত ফুল ও বিল্ব পত্র দিয়া অঙ্কুশ মুদ্রার দ্বারা জল স্পর্শ করিয়া বল :- মন্ত্র :--- ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলে হস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।। _______ ________ ' ওঁ ' মন্ত্রে জলে গন্ধ পুষ্প দিয়া 'বং' মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দেখাইয়া মৎস মুদ্রা দ্বারা ঢাকিয়া নিজের " বীজ মন্ত্র " দশবার জপ করিবে। জল শুদ্ধির পর ঐ জল বিল্বপত্র দ্বারা পূজোর উপাচারে ও নিজের মাথায় ছিটাইবে । <----- ভূতাপসারণ -----> এই মন্ত্র বলার সময় শ্বেত সরিষা অথবা আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছড়াইবে। মন্ত্র :--- ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতাঃ যে ভূতাঃ ভূমি সংস্থিতাঃ । যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ।। এবার মস্তকের উপর তিনবার "ফট" মন্ত্রে করতালি দিয়া ভূত অপসারণ ও "তুড়ি" দিয়া দশদিক বন্ধন করিবে। <----- ভূত শুদ্ধি -----> নিজের চারিদিকে জলধারা দিয়া 'বং' মন্ত্র উচ্চারন করিয়া হাত জোড় হাত করে বল :----- মন্ত্র :--- ওঁ মূল শৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্না পথেন জীব শিবং পরম শিব পদে যোজয়ামি স্বাহা। ওঁ যং লিঙ্গ শরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা। ওঁ রং সংকোচং শরীরং দহ দহ স্বাহা। ওঁ পরম শিব সুষুম্না পথেন মূল শৃঙ্গাট মূল্ল সোল্লস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল হংস সোহহং স্বাহা। <----- প্রাণায়াম -----> ডান হাতের অঙ্গুষ্ট দ্বারা ডান নাক বন্ধ করে 'ওঁ নমঃ শিবায়' বা 'ওঁ' মন্ত্রে 'চার' বার জপ করিতে করিতে বা নাকে শ্বাস নিবে। তারপর ১৬ বার জব করতে করতে শ্বাস রুদ্ধ রাখবে। পরে ৮ বার জপ করতে করতে শ্বাস ত্যাগ করবে। এইরকম তিনবার করতে হবে। _______ ________ <----- সুর্যার্ঘ্য -----> কুশীর মধ্যে দূর্বা চন্দন পুষ্প জল বেলপাতা দু হাতে ধরে বলবে:--- মন্ত্র :--- ওঁ বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িতে। ইদ্দমর্ঘং ওঁ নমো ভগবতে শ্রী সূর্যায় নমঃ।। ওঁ এহি সূর্য্য সহস্রাংশে তেজোরাসে জগৎপতে। অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥ জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাত জোড় করে বল :--- ওঁ জবা কুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। <----- দ্বারদেবতা পূজা -----> পুষ্প নিয়ে - " এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যোঃ নমঃ " বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিবে। --- এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ব্রাহ্মণে নমঃ এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ <----- পঞ্চ দেবতার পূজা -----> এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সূর্যায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বিষ্ণুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ দূর্গায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শ্রী গুরুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্বদেব দেবীভ্যোঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ পিতৃ লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্ব ঋষি লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও ) _______ ________ (প্রতি প্রহরে মৃত্তিকা দ্বারা নুতন নুতন মূর্তি তৈরি করে মূর্তিন্যাস করতে হবে -) <----- মূর্তিন্যাস -----> অঙ্গুষ্ঠ যোগে তর্জনী দ্বয়ে - নং তৎপুরুষায় নমঃ। কমন অঙ্গুষ্ঠ যোগে মধ্যমা দ্বয়ে - মং অখোরায় নমঃ। দ্বিতীয় অঙ্গুষ্ঠ যোগে কনিষ্ঠা দ্বয়ে - শিং সদ্যজাতায় নমঃ। চতুর্থ অঙ্গুষ্ঠ যোগে অনামিকা দ্বয়ে - বাং বামদেবতায় নমঃ। তৃতীয় তর্জনী যোগে অঙ্গুষ্ঠ দ্বয়ে - য়ং ঈশানায় নমঃ। প্রথম <----- পূজার সংকল্প -----> কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে। ওঁ বিষ্ণুরোম্ তৎ সদ্ অদ্য ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাষ্করে কৃষ্ণপক্ষে শিব চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম শিবলোক প্রাপ্তি কামঃ যথা শক্ত্যু পচারনাং শিব পূজা তদ্ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মাহং করিষ্যে। <----- শিবের ধ্যান -----> ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসম। রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরা ভীতি হস্তং প্রসন্নম্। পদ্মাসীনং সমস্তাং স্তুত মমরগণৈ ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম। বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্রম ত্রিনেত্রম্।। _______ ________ ------ [[[ প্রথম প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজা জপ পরায়ণঃ । করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বরঃ।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. দুগ্ধ দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দুগ্ধং ওঁ ঈশানায় নমঃ। ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ________ ------ [[[ দ্বিতীয় প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপহরায় চ ৷ শিবরাত্রৌ দদমর্ঘ্যং প্রসীদ উমায় সহ ৷৷ (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. দধি দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দধিং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ।। ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ________ ------ [[[ তৃতীয় প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ দুঃখ দারিদ্র্য শোকেন্ দগ্ধোহহং পার্বতী প্রিয়। শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. ঘৃত দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ।। ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> 'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ ______ ------ [[[ চতুর্থ প্রহর ]]] ------ <----- শিব পূজা -----> ১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ২. ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্করঃ । শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে) ৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও) ৫. মধু দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ----> মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং মধু ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ।। ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।। • এস গন্ধ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও) • এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও) • এস ধূপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও) • এস দীপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও) • এস বস্ত্র ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা) • এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও) • এস চামর ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও) <----- পুষ্পাঞ্জলি -----> এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (৩ বার) <----- ভোগ নিবেদন -----> ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও) ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও) ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও) এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও) এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । ( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )---> '' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং। ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥ যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং। ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥ প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং । তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷ _______ _______ <----- শিবের ধ্যান -----> ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজত গিরিনিভ্যং চারু চন্দ্রাবতং সম রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশু মৃগবরা ভীতিহস্তং প্রসন্নম্ পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈ র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম । বিশ্বদ্যং বিশ্ববীজং নিখিল ভয় হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্ ।। ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ _______ ________ <----- শিব প্রণাম মন্ত্র -----> ওঁ নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ । নমস্তে দিব্য চাক্ষুষে । নমঃ পিনাক হস্তায় বজ্র হস্তায় বৈ নমঃ। নমঃ ত্রিশুল হস্তায় দন্ড পাশাসি পানয়ে। নমস্তৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ। নমো শিবায় শান্তায় কারন ত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।। নমস্যে ত্বাং মহাদেব লোকানাং গুরুমীশ্বরম পুংসাম পূর্ণকামানাং কাম পুরামরাঙ্খিপম ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপ হরায় চ । নমঃ শিবায় নমঃ। ওঁ শরনাগত দীনার্ত পবিত্রানায় পরায়নে সর্ব্বস্মার্তে হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে। হরে দেবী নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ _______ ________ -----[ শিবাষ্টক স্তোত্রম ]----- প্রভু মীশ মণীশ মহেশ গুণং গুণ হীন মহীশ গরলাভরণম্। রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম।। গিরিরাজ সুতান্বিত বামতনুং তনু নিন্দিত রাজিত কোটিবিধুম্ বিধি বিষ্ণু শিরোধৃত পাদযুগং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্।। শশলাঞ্ছিত রঞ্জিত সম্মুকুটং কটি লম্বিত সুন্দর কৃত্তিপটং। সুরশৈবালিনী কৃত পূত জটং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।। নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটি বিধুম্। বিধুখন্ড বিখন্ডিত ভল তটং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ বৃষ রাজ নিকেতন মাদি গুরুং গরলাসন মাজি বিষান ধরম। প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জন কং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ মকরধ্বজ মও মাতঙ্গ হরং করিচম্মগ নাগ বিবোধকরম্। বরমার্গণ শূল বিষান ধরং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ জগদুদ্ভব পালন নাশকরং ত্রিদিবেশ শিরোমণি ঘৃষ্টপদম্। প্ৰিয়মানব সাধু জনৈক গতিং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ অনাথং সুদীনং বিভো বিশ্বনাথ পুনর্জন্ম দুঃখাত পরিত্রাহি শম্ভো। ভজতোহখিল দুঃখ সমূহহরং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷ ইতি শিবাষ্টকং স্তোত্রম সম্পূর্ণম্ ।। _______ ________ -----[ শিবরাত্রি ব্রতকথা ]----- কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন। গৌরীসহ বসিয়া করেন আলাপন।। ফল পুষ্পে সুশোভিত পর্বত কৈলাস। যক্ষ রক্ষঃ গন্ধর্বগণের নিত্য বাস।। রবির কিরণ পড়ি শিখরে তাহার। মলিন করিয়া দেয় বরন সোনার।। আনন্দে পার্ব্বতি সতী জিজ্ঞাসেন শিবে। কহ দেব! কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভবে।। কিবা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন্ তপস্যায়। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ হয়।। এরূপ কি পূণ্য কর্ম আছে সুবিদিত। জাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।। মর্ত্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরা তলে। অনায়াসে পারে বল কি কর্ম্ম করিলে।। শুনিয়া পার্ব্বতি বাক্য কহেন শঙ্কর। শুন দেবী! কোন কর্ম্ম মম প্রীতিকর।। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দ্দশী। শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকার নিশি।। প্রাণী হিংসা পরায়ণ ব্যাধ একজন। ভীষণ, আকৃতি তার ক্রুর আচরণ।। কৃষ্ণবর্ণ দেহ তার পিঙ্গল নয়ন। জাল বাগুরা হস্তে করয়ে ভ্রমণ।। বনে বনে ভ্রমী করে প্রাণী বধ কত। নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।। একদিন মাংস ভার করিয়া বহন। গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।। বহুদূর বন পথ ব্যাধ পরিশ্রান্ত। বৃক্ষ মূলে শয়ন করিল হয়ে ক্লান্ত।। ক্রমে ক্রমে সূর্যদেব অস্তা চলে যান। হেন কালে নিদ্রিত ব্যাধের হল জ্ঞান।। চতুর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন। চিন্তিত হইয়া ব্যাধ করিল মনন।। আজ গৃহে যাইব না এই রাত্রি কাল। বৃক্ষতে করিব বাস হউক সকাল।। লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া। মাংস ভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।। হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর। উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভর।। ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যাধ অতিশয়। অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।। শীতেতে কাঁপিতে ছিল শরীর তাহার। সর্বাঙ্গে পড়িতে ছিল নিশার তুষার।। দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষ মূলে। স্থাপন করিয়াছিল কেহ কোন কালে।। সেই দিন শিবরাত্রি দৈবের ঘটনা। উপবাসী ব্যাধ তার অন্নের ভাবনা।। তাহার শরীর হতে হিম বিন্দু যত। বৃক্ষ মূলে শিবলিঙ্গে পড়ে অবিরত।। সেই বৃক্ষ বিল্ববৃক্ষ নামে সুবিখ্যাত। যাহার পত্রেতে শম্ভু হল সদা প্রীত।। ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্ব দল। শিবের মস্তকে পড়িতে ছিল অবিরল।। ব্যাধের সে আচরণে দেব আশুতোষ। মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।। এইভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল। ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।। বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল। রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।। মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে। অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্ট মনে।। এই ভাবে তাহার পারন সিদ্ধ হল। শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।। আয়ূ শেষ হল তার বহুকাল পরে। যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।। যমদূত রজ্জু দ্বারা বাঁধিতে উদ্যত। হেন কালে পৌঁছে দূত শিবের নিযুক্ত।। শিবদূত বলে যমদূত যাও দূরে। ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।। যমদূত বলে এই ব্যাধ পাপী অতি। না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।। যমপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি। যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।। এই রূপে উভয়ের বিবাদ হইল। শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।। পরাজিত হয়ে যমদূত যায় ঘরে। এই বার্তা প্রকাশিল যমের গোচরে।। উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন। বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্নন।। শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপাচারী। শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।। আজীবন কেহ যদি পাপ কর্ম করে। শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।। মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর। নাহি ভয় করি আমি শিবের কিঙ্কর।। যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে। গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।। ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন। ভক্তিভাবে করিবে আমার আরাধন।। সদাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি। ব্রতের বিধান দেবী! শুনহ সম্প্রতি।। পূর্বদিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন। নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।। রাত্রিতে তৃণের শর্য্যা নির্মাণ করিবে। তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।। প্রাতঃকালে সত্ত্বর করিয়া গাত্রোত্থান। নদী কিম্বা সরোবর জলে করি স্নান।। বিল্ববৃক্ষে মূলে গিয়া প্রণাম করিবে। অবশ্যক পত্র সংগ্রহ করিবে।। একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই। মনি মুক্তা স্বর্ণ রত্ন প্রবাল না চাই।। রাত্রিতে হইয়া শুচি যে পূজে আমারে। সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।। পার্থিব শংঙ্কর মূর্তি করিয়া নির্মাণ। প্রথম প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।। দ্বিতীয় প্রহরে দধি তৃতীয়তে ঘৃত। চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানেতে বিহিত।। পূজা শেষে যথা বিধি নৃত্য গীত করি। তুষিবে আমারে নর শুনহ শংঙ্করী।। পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচি ব্রত। করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।। এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে। অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।। কঠোর তপস্যা আর দান যজ্ঞ যত। কোন কর্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।। এই ব্রত আচরণে লভিয়া বাঞ্ছিত। অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।। ব্রতের মাহাত্ম্য এবে হরহ শ্রবন। পুণ্য লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।। পৃথিবীতে বারানসী সর্ব্ব তীর্থ সার। যেখানে গমনে খন্ডে কলুষ অপার।। ব্যাধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি। নির্দিষ্ট হইল তার কৈলাস বসতি।। শুনিয়া পার্ব্বতি দেবী ব্রত বিবরণ। আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণন।। তাহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত। এই রূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।। যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে। সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।। আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত। অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।। গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে। শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।। শিবরাত্রি ব্রত কথা শুনে যেই জন। অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।। মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি। শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।। শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্ত হইল। ভক্তিভরে সবে এবে শিব শিব বল।। _______ ________ <----- [[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম ]] -----> কৈলাস শিখরে বসি দেব ত্রিলোচন । গৌরী সহ করে নানা কথোপকথন ।। মৃদুমন্দ বাতাস বহে সেথা ধীরি ধীরি । ফুলের সৌগন্ধ কিবা আহা মরি মরি ।। সুন্দর জোছনারাশি মধুর যামিনী । চন্দ্রের কিরণ ছটা বিকাশে অবণী ৷৷ মহানন্দে হৈমবতী কহে পঞ্চাননে । কহ প্রভু কৃপা করে দাসীরে এক্ষণে ৷৷ বড় সাধ হয় মনে দেব প্রাণপতি । তোমার নামের সংখ্যা শুনি বিশ্বপতি ।। আশুতোষ পরিতোষ হয়ে মোর প্রতি । সে সাধ পুরাও মম ওহে পশুপতি ।। শুনিয়া দেবীর বাণী কহে মহেশ্বর । কি ইচ্ছা হয়েছে বল আমার গোচর ।। শুনিয়া হরের কথা কহেন পার্ব্বতী । শুনিবারে সাধমম হয়েছে বিভুতি ।। তোমার নামের সংখ্যা কহ ত্রিলোচন । তব মুখামৃত বাণী শুনি অনুক্ষণ ।। এতেক শুনিয়া কহে ভোলা মহেশ্বর । শুন দেবী মোর নাম কহি অতঃপর ।। সেইসব নাম আমি করিব কীর্ত্তন । শ্রবন পাঠেতে মুক্ত হবে জীবগন ।। নাহি সংখ্যা মম নাম না যায় বর্ণন । সংক্ষেপেতে বলি যাহা করহ শ্রবণ ।। যেই নাম ধ্যানে জীব পায় দিব্য গতি । সেইসব নাম তবে কহি শুন সতী ।। মম মুর্ত্তি ধরা তলে কেহ না দেখিবে । পাষাণে নির্ম্মিত লিঙ্গ দর্শন পাবে ।। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মোর ভিন্ন ভিন্ন নামে । সকলের বরণীয় হয় ধরাধামে ।। অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা । ১ মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।। ২ জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি । ৩ দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।। ৪ মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী। ৫ গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ॥ ৬ ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি । ৭ ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী ।। ৮ জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ । ৯ রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।। ১০ নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু । ১১ ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।। ১২ তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন । ১৩ পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ॥১৪ রজত বরণ বলি নাম গিরিবর । ১৫ নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।। ১৬ যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।১৭ বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।১৮ সূর্য্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর।১৯ চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।২০ মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা । ২১ বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্ৰাতা ॥ ২২ বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ । ২৩ শুক্রাচার্য্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।২৪ শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার।২৫ রাহুকেতু নাম রাখে সর্ব্ববিঘ্ন হর ।।২৬ মৃত্যুঞ্জয় নাম মম মৃত্যু জয় করি ।২৭ ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ॥২৮ কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ । ২৯ বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।৩০ শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন । ৩১ ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।৩২ পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।৩৩ ভৃগু মুনি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।৩৪ ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ । ৩৫ ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।৩৬ মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।৩৭ বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।৩৮ শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।৩৯ বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।৪০ জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি।৪১ বিজয়া রাখিল নাম অনাথের গতি।।৪২ তালবেতাল নাম রাখে সর্ব্ব বিঘ্নহর । ৪৩ মার্কন্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।। ৪৪ শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।৪৫ ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্ম পরাৎপর ।।৪৬ প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিল তারণ । ৪৭ চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।৪৮ সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী । ৪৯ আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।৫০ বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।৫১ রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।৫২ ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ । ৫৩ দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।৫৪ বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।৫৫ গন্ধর্বেরা নাম রাখে গন্ধর্ব ঈশ্বর ।।৫৬ অঙ্গিরা রাখিল নাম পাপতাপহারী ।৫৭ দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।৫৮ ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান নাম বাঘাম্বর ।৫৯ বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।৬০ কৃত্তিবাস নাম রাখে কত্যায়নী ।৬১ ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুণি ।।৬২ সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দ্দন ।৬৩ আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।৬৪ রতিপতি নাম রাখে মদন দহন ।৬৫ দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।৬৬ জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।৬৭ বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।৬৮ পৌলস্ত্য রাখিল নাম ভবভয়হারী।৬৯ গৌতম রাখিল নাম জন মনোহারী ।।৭০ ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর।৭১ বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘন্টেশ্বর ।।৭২ মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্ব্বপাপহর।৭৩ জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।৭৪ কুরুক্ষেত্র রণস্থলে পামবরদ্বারী ।৭৫ ঋষীগণ নাম রাখে মুণি মনোহারী ।।৭৬ ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।৭৭ ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।৭৮ উদ্দালক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।৭৯ অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংঙ্কর ।।৮০ দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর । ৮১ সেতু বন্ধে হয় নাম মোর রামেশ্বর ।।৮২ হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।৮৩ ভরত রাখিল নাম উমা মহেশ্বর ।।৮৪ জলধর নাম রাখে করুণা সাগর ।৮৫ মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।৮৬ ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।৮৭ চাঁদ সদাগর নাম রাখে হয়গ্রীব ।।৮৮ জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।৮৯ ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।৯০ দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।৯১ দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।৯২ দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।৯৩ বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।৯৪ কালীঘাটে সিদ্ধপাটে নকুল ঈশ্বর ।৯৫ পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।৯৬ গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।৯৭ মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।৯৮ কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।৯৯ ওঁ কার আমার নাম রাখে সান্দীপনি ।।১০০ ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।১০১ শ্বেত ভুধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।১০২ বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।১০৩ মহালক্ষী রাখে নাম অশিব নাশন ।।১০৪ অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ । ১০৫ গঙ্গাজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।১০৬ ভাঙ্গড়ভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ । ১০৭ বুড়াশিব বলি খ্যাত এই তিন ভুবন ।।১০৮ হর হর ব্যোম বলি যে ডাকে আমারে। পরিতুষ্ট হয় সদা তাহার উপরে।। অসংখ্য আমার নাম না হয় বর্ণন। অষ্টোত্তর শতনাম করিনু কীর্ত্তন।। মনেতে যে ভক্তি করি করয়ে পঠন। রোগ শোক নাহি হয় তাহার ভবন।। নির্ব্ব্যাধি হইয়া সে দীর্ঘজীবী হয়। শিব বরে সেই জন মুক্তি পদ পায়।। নামের মাহাত্ম্য আমি করিনু বর্ণন। মম নাম মম ধ্যান করো সর্বজন।। ইহকালে সুখে রবে মরত ভুবনে। অন্তঃকালে হবে গতি কৈলাস ভবনে।। [ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্ত ] _______ _________ <----- মধুসুক্ত -----> ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ। ওঁ মধুনক্ত সুতোষসো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ মধু দৌ রস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধু মান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ। মাধ্বীগাব ভবন্তু নঃ ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ।। <----- শান্তি মন্ত্র পাঠ -----> একটি পাত্রে সামান্য জল নিয়ে তাহাতে চন্দন পুষ্প বেলপাতা দিয়ে জলের ছিটা দিতে দিতে পাঠ কর। ওঁ স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ। স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নঃ স্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমী। স্বস্তি নঃ বৃহস্পতি দধাতু।। দৌঃ শান্তিঃ হি অন্তরীক্ষ শান্তি হিঃ পৃথিবী শান্তি হি অপ শান্তি হি ঔষধয় শান্তি হি বনস্পতয় শান্তি হিঃ বিশ্বদেবা শান্তি হিঃ শান্তিরেব শান্তি হিঃ ওঁ শান্তি রস্তু শিবাঞ্চাস্তু বিনশ্যত্য শুভঞ্চ যৎ যতঃ। এবা গতং পাপং তত্রৈব প্রতি গচ্ছতু। ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি <----- বিসর্জন -----> নমঃ মহাদেব ক্ষমস্ব বলিয়া কিঞ্চিৎ জল দিয়া উত্তর শিয়রে শোয়াইয়া দিবেন, সংহার মুদ্রায় একটি পুষ্প নিয়ে আঘ্রাণ করিতে করিতে ঐ দেবতা নিজের হৃদয়ে প্রবেশ করিলেন ভাবিয়া পুষ্পটি ফেলিয়া দিয়া হাত ধুইয়া ঈশান কোণে ত্রিকোণ মন্ডল করিয়া নির্ম্মাল্য লইয়া নমঃ চন্ডেশ্বরায় নমঃ মন্ত্রে মন্ডলের মধ্যে দিবেন।। <----- দক্ষিণাবাক্য -----> এতস্মৈ কাঞ্চন মূল্যায় নমঃ (৩ বার) এতৎ অধিপতয়ে শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ। এতৎ সম্প্রদানায় ব্রাহ্মণায় নমঃ। (হাত জোড় করে বলিবে) <----- সাঙ্গতার্থ সংকল্প -----> কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে—- ওঁ বিষ্ণুরো তৎ সৎ ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাস্করে কৃষ্ণ পক্ষে চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম কৃতৈ তৎ শ্রী শিব দেবতয়া প্রীতি কাম শিব পূজা তদ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মন্ সাঙ্গতার্থং যদ্ বৈগুন্যং জাতং তোদ্দোষ প্রশমনায় বিষ্ণু স্মরণ মনন করিষ্যে। ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম। ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ।। • ওঁ অজ্ঞানাদ যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু যৎ স্মরনা দেব তদ বিষ্ণু সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতি । • ওঁ যদ সাঙ্গং কৃতং কর্ম জানতা বাপ্য জানতা সাঙ্গং ভবতু তৎ সৰ্ব্বং হরে নামানু কীৰ্তনাৎ। ______ ________ ডান হাতের তালুতে জল নিয়ে --- ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ প্রিয়তাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব্বযজ্ঞেশ্বরো হরি তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্টং প্রীনিতে প্রীনিতং জগৎ এতৎ কর্ম শ্রী কৃষ্ণায়াপিত মস্তু। ( জল মাটিতে ফেলে দাও ) <----- প্রণাম -----> ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর॥ ( ঘণ্টা ধ্বনি. শঙ্খ ধ্বনি. উলু ধ্বনি. দিবে ) <----- পারন মন্ত্র -----> এই মন্ত্র বলিয়া পারন জল পান করিবে ----> ওঁ সংসার ক্লেশ দগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ সুমুখো নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদোভব।। পরদিন সকালে পারন করার পর ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া নিজে ভোজন করিবে। _______ ________ --- {ফর্দমালা} --- সিদ্ধি, তিল হরিতকী, পঞ্চ শস্য, আসনাঙ্গুরীয়, ঘী, মধু, ধূপ, ধুনা, তুলা, কর্পূর, প্রদীপ, পিলসুজ, দুধ, দই, চিনি, ফুল, বেলপাতা, ধুতরা, আকন্দ, নৈবেদ্য (কমপক্ষে পাঁচ রকমের ফল এবং মিষ্টি), গঙ্গা জল, কুশ, আতপ চাল, চন্দন ।
নারদ উবাচ। ইন্দ্রাদ্যমরবর্গেষু ব্রহ্মন্ যৎ পরমাদ্ভুতম। অক্ষয়ং কবচং নাম কথয়স্ব ময়ি প্রভো। যদ্ ধৃত্বা কর্ণবীরস্তু ত্রৈলোক্যবিজয়ী ভবেৎ ।।১ ॥
ব্রহ্মোবাচ। শৃণু পুত্র মুনিশ্রেষ্ঠ কবচং পরমাদ্ভুতম্। ইন্দ্রাদিদেববৃন্দৈশ্চ নারায়ণমুখাদ্ভুতম্ ॥২॥ ত্রৈলোক্যবিজয়স্যাস্য কবচস্য প্রজাপতিঃ। ঋষিশ্ছন্দো দেবতা চ সদা নারায়ণঃ প্রভৃঃ ॥ ৩॥
ওঁ পাদৌ রক্ষতু গোবিন্দো জঙেঘ পাতু জগৎপ্রভূঃ। ঊরু চকেশবঃ পাতু কটিং দামোদরস্তথা ॥৪॥ বদনং শ্রীহরিঃ পাতু নাড়ীদেশঞ্চ মেঽচ্যুতঃ। বামপার্শ্বং তথা বিষ্ণুদক্ষিণঞ্চ সুদর্শনঃ ॥৫॥
বাহুমূলং বাসুদেবো হৃদয়ষ্ণ জনাৰ্দ্দনঃ। কণ্ঠং পাতু বরাহশ্চ কৃষ্ণশ্চ মুখমণ্ডলম্ ॥৬॥ কর্ণো মে মাধবঃ পাতু হৃষীকেশশ্চ নাসিকে। নেত্রোঃ নারায়ণঃ পাতু ললাটং গরুড়ধ্বজঃ ॥৭॥
কপোলং কেশবঃ পাতু চক্রপাণিঃ শিরস্তথা। প্রভাতে মাধবঃ পাতু মধ্যাহ্নে মধুসূদনঃ। দিনান্তে দৈত্যনাশশ্চ রাত্রৌ রক্ষতু চন্দ্রমাঃ ॥৮॥ পূর্ব্বস্যাং পুণ্ডরীকাক্ষো বায়ব্যাঞ্চ জনাৰ্দ্দনঃ।। আকাশে স্যাদজঃ পাতু পাতালে চ সুদর্শনঃ ॥৯॥
ইতি তে কথিতং বৎস সর্ব্বমন্ত্রৌঘবিগ্রহম্। তব স্নেহান্ময়াখ্যাতং প্রবক্তব্যং ন কস্যচিৎ ॥ ১০ ॥
কবচং ধারয়েদ্ যস্ত সাধকো দক্ষিণে ভুজে। দেবা মনুষ্যা গন্ধৰ্ব্বা বশ্যাক্তস্য ন সংশয়ঃ ৷৷ ১১ ৷৷ যোষিদ বামভূজে চৈব পুরুষো দক্ষিণে ভুজে। বিভৃয়াৎ কবচং পুণ্যং সর্ব্বসিদ্ধিযুতো ভবেৎ ॥ ১২ ॥
কণ্ঠে যো ধারয়েদেতৎ কবচং মৎস্বরূপিণম্। যুদ্ধে জয়মবাপ্নোতি দ্যুতে বাদে চ সাধকঃ। সর্ব্বথা জয়মাপ্নোতি নিশ্চিতং জন্মজন্মনি ॥ ১৩ ৷৷ অপুত্ৰো লভতে পুত্রং রোগনাশস্তথা ভবেৎ। সৰ্ব্বপাপপ্রমুক্তশ্চ বিষ্ণুলোকং সগচ্ছতি ॥ ১৪
ইতি শ্রীব্রহ্মসংহিতায়াং দেবদুৰ্ল্লভং নাম অক্ষয়কৰচং সমাপ্তম্ ॥ ০ ॥
প্রাচীন কালে এক গরীব ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তার স্ত্রী সব সময় ময়লা বেশভূষা পরে থাকতো, স্নান করতো না, কোনও দেবতার পূজা বা ব্রতাদি করতো না।
সকালে উঠেই আগে যা খাবার পেতো খেতো। তার ফলে ব্রাহ্মণ খুবই দুঃখিত ছিলেন। স্ত্রীকে তিনি অনেক বলেও কিছু প্রতিকার করতে পারেন নি।
এই সময় ঈশ্বরের কৃপায় ব্রাহ্মণের একটি কন্যা হলো। দেখতে দেখতে মেয়েটি বড় হতে লাগলো । সে প্রতিদিন স্নান করে ঈশ্বরের আরাধনা করতো। তারপর সে বৃহস্পতিবার ব্রত করতে লাগলো।
পূজা পাঠ সমাপ্ত করে কন্যাটি যখন পাঠশালায় যেতো, তখন একমুঠো যব হাতে করে নিয়ে যেত আর পথে ছড়াতে ছড়াতে যেতো। দেবতার কৃপায় সেই যব সোনা হয়ে যেতো।
পাঠশালা থেকে ফেরার পথে সেই সব সোনার যব ঐ কন্যাটি আঁচলে বেঁধে ঘরে আনতো।
একদিন সেই কন্যাটি সোনার যব দিয়ে পায়স রান্না করছিল। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ব্রাহ্মণ তাই দেখে বললে—মা, সোনার যবে কি পায়েস হয়?
বাবার কথা শুনে মেয়েটি মনে মনে বললে — হে বৃহস্পতিদেব! সোনার পায়েস দিয়ে তোমার পূজা দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা হলো না। আশ্চর্য ব্যাপার, মেয়েটি চিন্তা করবার সাথে সাথে সোনার পায়েস হয়ে গেল ।
তারপর থেকেই মেয়েটি রোজ সোনার যব পেতে লাগলো, তার ফলে দিনে দিনে সেই গরীব ব্রাহ্মণের অবস্থা ফিরতে লাগলো।
একদিন কন্যাটি সোনার যব পরিষ্কার করছিল, সেই সময় সেই দেশের রাজপুত্র ভ্রমণে বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণের কুটিরের সামনে এসে, ব্রাহ্মণ কন্যাকে সোনার যব পরিষ্কার করতে দেখে সে অবাক হয়ে গেল।
তারপর রাজপুত্র কাউকে কোন কথা না বলে ফিরে গেল প্রাসাদে, আর খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে নিজের ঘরে শুনে রইলো চুপ করে।
রাজা-রানী এই সংবাদ পেয়ে রাজপুত্রের কাছে এসে এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে রাজপুত্র বললে — বাবা, আপনার দয়ায় আমার কোনও দুঃখ নেই, কেউ আমাকে কটু কথাও বলেনি। কিন্তু রাজ্যের শেষপ্রান্তে আমি যে ব্রাহ্মণ কন্যাকে দেখে এসেছি তাকেই আমি বিবাহ করতে চাই। যে সোনার যব পরিষ্কার করছিল।
রাজপুত্রের কথা শুনে রাজা আশ্চর্য হয়ে বললেন – একি কখনও সম্ভব হয়? যদি তুমি আমাকে দেখাতে পারো, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, তারই সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব।
রাজপুত্র তখন সব বললে, রাজা সব শুনে মন্ত্রীকে পাঠালেন ব্রাহ্মণের কাছে। মন্ত্রী ব্রাহ্মণকে সব কথা বললেন। ব্রাহ্মণ আনন্দিত মনে রাজপুত্রের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত হলেন। তারপর শুভদিনে শুভক্ষণে রাজপুত্রের সঙ্গে ব্রাহ্মণ কন্যার বিবাহ হয়ে গেল।
কন্যাটি স্বামীর ঘরে যাবার পরই আবার ব্রাহ্মণের দুঃখ-দারিদ্র্য দেখা দিল। একদিন ব্রাহ্মণ দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজের মেয়ের কাছে গেল। মেয়ে বাপের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে দুঃখিত হলো
আর মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলো। তখন ব্রাহ্মণ তার স্ত্রীর কথা সব বললে । ব্রাহ্মণ কন্যা তখন অনেক অর্থ দিয়ে পিতাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
সেই অর্থে ব্রাহ্মণের কিছুদিন সুখে কাটলো বটে, কিন্তু আবার দুঃখে পড়লো, তখন ব্রাহ্মণ আবার গেল মেয়ের কাছে। তাকে সব কথা বললে।
কন্যা সব কথা শুনে বললে – বাবা! আপনি মাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমি তাকে বিধি-ব্যবস্থা সব বলে দেব, সেই সব মেনে চললে, দুঃখ-দারিদ্র্য আর থাকবে না।
মেয়ের কথা শুনে ব্রাহ্মণ তার স্ত্রীকে নিয়ে মেয়ের ঘরে গেলেন । মেয়ে মাকে বললে—মা, তুমি প্রাতঃকালে উঠে প্রথমে স্নানাদি করে শ্রীবিষ্ণু ভগবানের পূজা করলে, তোমার সব দুঃখ-কষ্ট দূর হবে। এই বলে মাকে কাছে রেখে দিল।
মা কিন্তু মেয়ের কথা না শুনে, সকালে উঠেই মেয়ের এঁটো খাবার খেয়ে নিলো। মায়ের ব্যবহারে মেয়ের খুব রাগ হলো। সে সব জিনিস পত্র একটা ঘরে বন্ধ করে রাখলো আর মাকে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখলো ৷
সকালে সে উঠে মাকে স্নানাদি করিয়ে পূজা পাঠ করালো, তার | ফলে মায়ের সুবুদ্ধি হলো এবং প্রতি বৃহস্পতিবার ব্রত করতে লাগলো।
এই ব্রতের প্রভাবে তার মা খুব ধনবতী হলো এবং পুত্রবর্তী হলো। দেবগুরু বৃহস্পতি দেবের কৃপায় সন্তানাদি সহ বহু সুখ ভোগ করে, পরলোকে স্বর্গে গেলেন।
এই ঘটনা দেখে এবং পুত্রবধূর কাছে ব্রতের কথা শুনে রাজাও বৃহস্পতিবার ব্রত করতে শুরু করলেন। ব্রতের প্রভাবে রাজার ধনৈশ্বর্য দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো। কিন্তু রাজা দুবার ব্রত করতে ভুলে গেল।
তার ফলে বৃহস্পতিদের খুব রুষ্ট হলেন। তখন রাজার রাজত্বে নানারকম অভাব-অনটন দেখা দিল। একদিন রাজাকে বৃহস্পতিদের সব বললেন। রাজা তখন নগরে ঘোষণা করে দিলেন যে, আমার রাজ্যে | সকলে বৃহস্পতিবার ব্রত করবে।
এছাড়া আরও ঘোষণা করে দিলেন যে, | আমার প্রজারা আজ এই বৃহস্পতিবারে কেউ রান্না করবে না। ঘরে আগুন জ্বালাবে না। সকলেই আমার এখানেই আহার করবে। যদি কেউ আমার আজ্ঞা পালন না করে, তার মৃত্যুদণ্ড হবে।
রাজার আজ্ঞানুসারে সমস্ত প্রজা রাজবাড়ীতে খেতে এলো, কিন্তু একজন কাঠুরে খুব দেরীতে এলো। রাজা তাকে গোপনে নিয়ে গিয়ে পৃথক ঘরে আহার করাতে বসালেন।
সেই ঘরে রানীর মুক্তাহার ছিল। হঠাৎ সেটা পাওয়া গেল না। রানী ভাবলেন, এই লোকটাই মুক্তাহার চুরি করেছে। এই সন্দেহ করে কাঠুরিয়াকে বন্দী করে কারাগারে রাখা হলো।
এই কাঠুরিয়া ছিল একজন রাজা। দেবতার কোলে রাজ্যহারা হয়ে তাকে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছিল। যাই হোক, কাঠুরিয়া কারাগারে বন্দী হবার পর চিন্তা করতে লাগলো, কি জানি পূর্বজন্মে কি পাপ করেছিলাম। যার জন্যে এই শান্তি ভোগ করতে হচ্ছে।
ঠিক এই সময় দেবগুরু বৃহস্পতি সাধুর ছদ্মবেশে সেখানে উপস্থিত হয়ে রাজাকে বললেন— ওরে মূর্খ। তুই বৃহস্পতি দেবতার কোপে এই দুঃখ পাচ্ছিস। যাক্ চিন্তা করিস না, বৃহস্পতিবার দিন তুই কারাগারের দরজায় কিছু পয়সা পাবি। তাই দিয়ে বৃহস্পতিদেবের পূজা করবি, তাহলেই তোর সব কষ্ট দূর হবে।
বৃহস্পতিবারে কারাগারের দরজায় বন্দী কিছু পয়সা পেল। সেই পয়সা দিয়ে বন্দী দেবগুরু বৃহস্পতিদেবের পূজা করলো। সেইদিনই রাত্রে সেই দেশের রাজাকে বৃহস্পতিদের স্বপ্ন দিয়ে বললেন –রাজা তুমি যাকে বন্দী করে রেখেছ, সে নির্দোষ। ওকে ছেড়ে দাও। রানীর হার রানীর ঘরে বিছানায় পড়ে আছে। যদি তুমি আমার আদেশ অমান্য করো, তাহলে আমি তোমার রাজ্য ধ্বংস করে দেব।
রাত্রে স্বপ্ন দেখে রাজ্য প্রাতঃকালে উঠে রানীর ঘরে হার পেরে গেল, এবং কারাগার থেকে কাঠুরিয়াকে মুক্ত করে এনে ক্ষমা চেয়ে, রাজার উপযুক্ত বসন ভূষণ দিলেন। তারপর অর্থ দিয়ে বিদায় দিলেন। রাজা বৃহস্পতিদেবকে স্মরণ করে কাঠুরিয়া বেশ ত্যাগ করে রাজবেশে নিজের রাজ্যের দিকে রওনা হলেন।
রাজ্যে ফিরে এসে রাজা খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন। চারদিকে নতুন নতুন ধর্মশালা, মন্দির, পুকুর, সরোবর, কুয়া, বাগান গড়ে উঠেছে। চারদিক যেন ঝলমল করছে। রাজা জিজ্ঞাসা করে জানলেন রানী, এই সব করেছেন।
শুনে রাজার রাগ হলো। তিনি প্রাসাদের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেই সময় রাজার পুরাতন চাকরটি বাইরে ছিল, সে রাজাকে দেখেই চিনতে পারলো আর রানীকে সংবাদ দিল। রানী এসে রাজাকে
অভ্যর্থনা করে অন্তঃপুরে নিয়ে গেল। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন—এত ঐশ্বর্য তুমি কোথায় পেলে?
রানী বললেন—মহারাজ! আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে। আমি বৃহস্পতিবার ব্রত করতাম বলে আপনি আমাকে কত ঠাট্টা করতেন। এমন কি একদিন আপনি রাগে আমার ব্রতের জিনিসপত্র নষ্ট করে দিয়েছিলেন।
তারপর থেকেই আমাদের রাজ্যে নানা রকম অমঙ্গল দেখা দেয়। মড়ক লাগে, রাজভাণ্ডার অর্থশূন্য হয়, অন্নাভাব দেখা দেয়। আপনি ক্ষুধার জ্বালায় প্রাসাদ ত্যাগ করে চলে যান, দাস-দাসীরাও চলে যায়।
আমি নিরুপায় হয়ে দেবগুরু বৃহস্পতি দেবের শরণাপন্ন হয়ে পড়ে থাকি। কতদিন অনাহারে, আধপেটা খেয়ে কেটেছে তার ঠিক নেই, তারপর দেবগুরু বৃহস্পতি দেবের কাছে তোমার কথা জানাই, তিনি স্বপ্নে বলেন—তোর স্বামী এখন কাঠুরিয়া পল্লীতে আছে পাশের রাজ্যে, আর কাঠ কেটে কোনরকমে
জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে তুই চিন্তা করবি না। সে খুব শীঘ্র আসবে। তাঁরই দয়ায় আমি এতদিন রাজ্য পরিচালনা করেছি। তাঁরই দয়ায় আজ এত ধনৈশ্বর্য। প্রজারা সকলেই সুখী। তাই বলছি মহারাজ! আপনি | বৃহস্পতিবার ব্রত করুন।
রানীর কথায় রাজা জ্ঞান হলো, তিনি বুঝলেন দেবগুরু বৃহস্পতির | কোপেই একদিন তাকে রাজ্য ত্যাগ করতে হয়েছিল, রানীর পুণ্যেই সে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।
রাজা আর কিছু বলতে পারলেন না। সেই বৃহস্পতিবার থেকে রাজা রাজ-পুরোহিতকে এনে বৃহস্পতিবার ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। গরীব দুঃখীদের অর্থ, অন্ন, বস্ত্র দান করা হতে লাগলো । ধীরে ধীরে রাজা ইন্দ্রতুল্য হয়ে পড়লেন।
ওঁ বৃহস্পতি দেবা, জয় বৃহস্পতি দেবা। ছিন ছিন্ ভোগ লাগাও কদলী ফল মেওয়া।। ওঁ ।।
ও বৃহস্পতি দেবের আরতী এ তুমি পূর্ণ পরমাত্মা তুমি অন্তৰ্য্যামী। জগৎপতি জগদীশ্বর তুমি সকলের স্বামী।। ওঁ ।।
চরণামৃত নিত্য নির্মল সব পাতক হর্তা। সকল মনোরথ দায়ক কৃপা করো ভর্তা।। ওঁ ।।
তবু মন মন অর্পণ কর জো তোমার শরণ পড়ে। প্রভু পরগট্ তার আগে খড়ে।। ওঁ ।।
দীন দয়াল কৃপানিধি, ভক্তের হিতকারী। পাপ দোষ দুঃখ হর্তা, ভব বন্ধন মোচন কারী।। ওঁ ।।
সকল মনোরথ দায়ক সব সংশয়হারী। বিষয় বিকারো মিটাও সাধু না সুখকারী।। ওঁ ।।
জো কো আরতী তেরী ভক্তি সহিত গায়ে। জ্যেষ্ঠানন্দ বসন্ত সো ফল নিশ্চয় পাবে।। ওঁ ।।
জয় শ্রীবিষ্ণু ভগবান কী জয়। জয় বৃহস্পতিদেব ভগবান কী জীয়।
সেই থেকে মর্ত্যলোকে বৃহস্পতিবার ব্রত প্রচারিত হলো।
জয় বৃহস্পতিদেব কী জয়।
জয় শ্রীবিষ্ণু ভগবান কী জয়।।
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতিথিতে অশোকষষ্ঠী ব্রত পালন করতে হয়। স্ত্রীলোকেরাই এই ব্রত পালন করে থাকে।
অশোক ফুল, মুগকড়াই, দই।
চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে স্ত্রীলোকেরা অশোকষষ্ঠী ব্রত পুজো করবে। তারপর প্রত্যেকে ছ’টি মুগ কড়াই ও ছটি অশোক ফুলের কুঁড়ি দই মাখিয়ে খাবে। ঐদিন ভাত খাওয়া নিষেধ। লুচি পরটা ইত্যাদি খাওয়ার কোনো বাধা নেই। ফল-মূল ও খাওয়া যেতে পারে।
অশোক ষষ্ঠীর ব্রতকথা— সে যুগে তপোবনে এক মুনি থাকতেন। বনটির চারিদিকে অনেক অশোক গাছ জন্মেছিল। মুনি একদিন সকালে পুজোর ফুল তুলতে তুলতে দেখলেন, একটা অশোক গাছের গোড়ায় খুব সুন্দর একটি সদ্যোজাত মেয়ে কাঁদছে।
মুনি তখনই মেয়েটিকে তুলে নিয়ে তাঁর আশ্রমে ফিরে গেলেন। পরে ধ্যান করে তিনি জানতে পারলেন যে, শাপের ফলে হরিণরূপিণী এক স্ত্রীলোক এই মেয়েটিকে প্রসব করেছে।
মুনি মেয়েটিকে খুব যত্নে লালন-পালন করতে লাগলেন। হরিণীও রোজ একবার করে এসে মেয়েটিকে দুধ খাইয়ে যেতে লাগল। অশোক গাছের গোড়ায় তাকে পাওয়া গিয়েছিলো বলে মুনি মেয়েটির নাম রাখলেন অশোকা।
এই ভাবে মেয়েটি ক্রমে বেশ বড় হয়ে উঠল। এখন তার বিয়ে দেওয়া দরকার। মুনি তখন মনে মনে স্থির করলেন যে, পরের দিন সকালে প্রথমে তিনি যার মুখ দেখবেন, তারই সঙ্গে অশোকার বিয়ে দেবেন।
দৈবের লীলা কে বুঝবে? পরের দিন সকালে উঠে মুনি দেখতে পেলেন যে, এক রাজপুত্র তার অনেক লোকজন নিয়ে আশ্রমের দরজায় অপেক্ষা করছে।
মুনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এখানে এসেছো কেন?” রাজপুত্র বলল, “আমি মৃগয়া করতে বেরিয়েছিলাম কাল রাত্তিরে খুব ঝড় জল হওয়ায় আর ফিরতে পারিনি, আপনার কুটীরে আশ্রয় নিয়েছিলাম।”
মুনি দেখলেন ভাল সুযোগ, তখন তিনি রাজপুত্রকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। মুনির কথা শুনে রাজপুত্র মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজী হল আর মুনি রাজপুত্রের হাত ধরে অশোকাকে তার হাতে সঁপে দিলেন।
মুনি পরে বললেন, “কুমার! আমি তোমার পরিচয় জানি না আর তুমিও এর পরিচয় জানো না, তবুও আমার কথায় তুমি একে বিয়ে করলে—তুমি আর তোমার বাবা, এ বিয়েতে খুশীই হবেন। অশোকা খুবই গুণের মেয়ে।”
তারপর মুনি আবার অশোকাকে বললেন, “মা অশোকা, এই অশোক ফুলের বীচিগুলো দিচ্ছি নিয়ে যা আর এখান থেকে যাবার পথে বীচিগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে দিস, তাহলে রাজবাড়ি পর্যন্ত অশোকগাছের সারি হয়ে যাবে আর দরকার হলে তুই একলাই এই অশোকগাছের সারি ধরে আমার কাছে পথ চিনে আসতে পারবি।
আর অশোক ফুলগুলো শুকিয়ে রেখে দিস, চৈত্র মাসে অশোক ষষ্ঠীর দিনে ওগুলো খাস, তাহলে জীবনে কখনো শোক তাপ পাবি না।”
মুনিকে প্রণাম করে রাজপুত্র অশোকাকে সঙ্গে নিয়ে রাজবাড়িতে ফিরে গেল। রাজা-রাণী সব শুনে খুশী মনেই ছেলে-বৌকে বরণ করে ঘরে তুললেন। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল।
অশোকার সাত ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছে, রাজা-রাণী সময়মতো সকলেরই বিয়ে দিয়ে স্বর্গে গেছেন। একবার চৈত্র মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে রাজার বাৎসরিক শ্রাদ্ধের তিথি পড়ল।
অশোকা বৌয়েদের ডেকে বলল, “আজ অশোক ষষ্ঠী, আমি আজ ভাত খাবো না।” বৌয়েরা তখন মুগকড়াই সেদ্ধ করে দিল। সারা দিন কাজকর্ম করার পর ক্লান্ত হয়ে রাত্তিরে সকলেই ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন অশোকা দেখল যে, ছেলের বৌয়েরা কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। শেষে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলে অশোকা দেখলে যে, সকলেই বিছানায় মরে পড়ে আছে। এই অবস্থায় পড়ে অশোকার হঠাৎ মুনির কথা মনে পড়ে গেল।
অমনি সে অশোক গাছের সারি ধরে মুনির কাছে গিয়ে হাজির হল। মুনি অশোকার সব কথা শুনে ধ্যান করে সব কথা জানতে পারলেন আর অশোকাকে বললেন যখন সেদ্ধ করছিল তখব অসাবধানে একটা ধান তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল,
আর তাই খাওয়ার জন্যে সেই পাপে ওই দুর্দশা হয়েছে তাদের। যাক তুই এই কমণ্ডলুর জল নিয়ে গিয়ে তাদের গায়ে ছিটিয়ে দে, তাহলেই সকলে বেঁচে উঠবে। অশোক ষষ্ঠীর দিন খুব সাবধানে ছ’টি অশোক কুঁড়ি, ছ’টি মুগ কড়াই, দই দিয়ে খেয়ে তবে অন্য জিনিস খাস্।”
মুনির কাছ থেকে কমণ্ডলুর জল নিয়ে এসে, অশোকা সবার গায়ে ছিটিয়ে দিতে তারা সকলেই বেঁচে উঠলো। তার পর মায়ের মাহাত্ম্য ক্রমে ক্রমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল।
অশোক ষষ্ঠীর ব্রতের ফল— অশোকষষ্ঠী ব্রত পালন করলে নিজের ছেলে-মেয়েরা দীর্ঘজীবী হয়ে থাকে।
রামায়ণের কাহিনী অনুসারে, রামনবমীতে রাজা দশরথের ঘরে ভগবান রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন । রাবণকে বধ করার জন্য ত্রেতাযুগে রামের জন্ম হয় । রামচন্দ্রকে শ্রী ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসেবে দেখা হয় । চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ থেকে শুক্লপক্ষের নবমী তিথি পর্যন্ত – এই নবরাত্রির নবম দিনে রামনবমী উদযাপিত হয় । ভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও ভগবান রামের উল্লেখ আছে। প্রতি বছর এই দিনটিকে ভগবান রামের জন্ম তিথি হিসেবে পালন করা হয় ভারত সহ গোটা বিশ্বে। এই রাম নবমীতে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তিকে আমন্ত্রণ জানান হয়।
রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়। হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থগুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলেন রাম। সারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাম জনপ্রিয় দেবতা। লোকবিশ্বাসানুসারে, রামের জন্মস্থান হল ভারতের অযোধ্যা শহর।
এই উৎসবের দিনে মন্দ শক্তিকে পরাজিত করে ভালোর প্রতিষ্ঠা করা হয়, অর্ধমকে নিক্ষেপ করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উৎসবের দিন সকালে হিন্দুদের আদি দেবতা সূর্য দেবকে জল প্রদান করে, সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয়। রাম নবমী উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন। কিছু বৈষ্ণব হিন্দু একটি মন্দিরে যান যখন অন্যরা তাদের বাড়িতে প্রার্থনা করেন এবং কেউ কেউ পূজা এবং আরতির অংশ হিসাবে সঙ্গীত সহ ভজন বা কীর্তনে অংশগ্রহণ করেন।
রাম নবমীতে মর্যাদার প্রতিমূর্তি ভগবান রামের পুজো করলে খ্যাতি এবং সৌভাগ্য আসে। জীবনে সর্বদা সুখ এবং সমৃদ্ধি থাকে। ভগবান রামের উপাসনা করলে জীবনে ইতিবাচকতা বজায় থাকে এবং সমস্ত কাজ বিনা বাধায় সম্পন্ন হয়।রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে বিনাশ করে ধর্মকে স্থাপন করা।
এ দিন নিষ্ঠা নিয়ে পুজো করলে মনের অনেক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। ভগবানের কৃপায় সব ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এ দিন পুজো করলে।রামনবমীর দিন ভগবান রামের সঙ্গেই দেবী দুর্গারও পুজো করেন। সেক্ষেত্রে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে।
এ বছর (2023) [বাংলার 1429 সাল] চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ শুরু হবে নবমী তিথি 21th March 2023(মঙ্গলবার) রাত 10:53 মিনিট থেকে শুরু হবে কিন্তু 22nd March 2023(বুধবার)সূর্য উদয়ের সঙ্গে শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ শুরু হবে— তাই 22nd March 2023(বুধবার) থেকে নবরাত্রীর প্রথম দিন প্রতিপদ শুরু ধরা হবে।
রামনবমী-নবরাত্রীর প্রথম দিন প্রতিপদ 22nd March 2023(বুধবার) থেকে শুরু ধরা হবে।
রামনবমী-নবরাত্রীর নবম দিন অর্থাৎ নবমী তিথি 30th March 2023(বৃহস্পতিবার) রাত 11:31 পর্যন্ত থাকবে। তাই রামনবমী 30th March 2023(বৃহস্পতিবার) পালিত হবে এবং রামপূজা, সীতাপূজা এবং হনুমান ঝান্ডা পতাকা পূজন করা হবে। রাম নবমীর দিন সারা দেশের রাম মন্দিরে ভগবান শ্রী রামের আরাধনা করা হয়।
2023 সালের রাম নবমীর সময়সূচী:
নবমী তিথি শুরু – 29th March 2023 (বুধবার) রাত 09:08 PM থেকে শুরু।
নবমী তিথি শেষ – 30th March 2023 (বৃহস্পতিবার) রাত 11:31 PM পর্যন্ত।
তারিখ : 30th March 2023 (বৃহস্পতিবার)
রামনবমী বিশেষ পূজা মুহুর্ত : 10:27 AM থেকে 12:54 PM.( সময়কাল = 02 ঘন্টা 27 মিনিট )
চৈত্র নবরাত্রির রাম নবমী, মন্ত্র জপে কাটবে বাস্তুদোষ থেকে গ্রহদোষ
রাম নবমীর দিন[30th March 2023(বৃহস্পতিবার)] শুভ মুহুর্তে ভগবান রামকে ধ্যান করার সময়, "শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজমান হারান ভাবা দারুণম" এর প্রশংসায় ভগবান শ্রীরামের পূজা করুন। এতে আপনার জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায়।
রামনবমীর দিন, শুভ সময়ে রাম রক্ষা স্তোত্র পাঠ “চরিতম্ রঘুনাথস্য শতকোটি প্রবিষ্টম্। একাইকাক্ষরম পুনসান মহাপত পাঠ করুন.." পদ্ধতিগতভাবে। এতে করে আপনার জীবন থেকে সঙ্কট দূর হবে, আপনি সর্বদা সুখী থাকবেন।
হনুমান চালিসায় শ্রী রামজির পরম ভক্ত হনুমান জির প্রশংসা পাওয়া যায়। অতএব, আপনি যদি আপনার মনের কোনও ইচ্ছা রেখে রামনবমীতে হনুমান চালিসা পাঠ করেন, তবে ভগবান রাম এবং ভক্ত হনুমান উভয়ের কৃপায় আপনার ইচ্ছা পূরণ হয়।
যদি আপনার জীবনে কোনো সংকট বা বিপর্যয় আপনাকে ছেড়ে না যায়, তাহলে রামনবমীর দিন রামায়ণ বা রামচরিত মানস পাঠ করুন। এতে করে আপনার জীবনের সকল ঝামেলা দূর হয়ে যাবে।
যদি আপনি চান যে আপনার জীবনে মঙ্গল থাকুক, তাহলে এই দিনে "মঙ্গল ভবন অমঙ্গল হরি দ্রভূ সুদাসারথ আজির বিহারী" চৌপাই প্রয়োগ করে সুন্দরকাণ্ড পাঠ করুন।
আপনার বাড়িতে যদি কোনও বাস্তু ত্রুটি থাকে তবে তা দূর করার জন্য, রাম নবমীর দিন একটি পাত্রে গঙ্গাজল নিন, তারপরে ভগবান রামের ধ্যান করে, শ্রী রামের প্রতিরক্ষা মন্ত্র 'ওম শ্রীম হ্বিন ক্লেইন রামচন্দ্রায় শ্রীম নমঃ'। 108 বার জপ করুন। এর পর পাত্রে রাখা জল বাড়ির চারদিকে ছিটিয়ে দিন। এটি করলে আপনার ঘরের বাস্তু দোষ ও দৃষ্টির ত্রুটি দূর হয়।
আপনি যদি আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে রাম নবমীর দিন পদ্ধতিগতভাবে রামাষ্টক পাঠ করুন। এতে করে অর্থ উপার্জন হয়।
ব্রতকথাঃ- একসময় পদ্মযোনি ব্রহ্মাকে মহর্ষি সনক প্রশ্ন করেছিলেন ও জানতে চেয়েছিলেন যে কীভাবে দশরথ ও কৌশল্যা শ্রীরামচন্দ্রের মতো পুত্র লাভ করেছিলেন। উত্তরে ব্রহ্মা বলেছিলেন যে—মহারাজ দশরথ ও কৌশল্যা দীর্ঘদিন পুত্রাদি লাভ না করে বড়ই চিন্তিত ছিলেন। তাঁরা দুজনে একসময়ে পুত্র লাভের আশায় ভগবান সদাশিবের আরাধনা করেন। পুত্রশোকে কাতর এই দুজনের ভক্তিতে ভগবান সদাশিব খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তাঁদের কাছে এসে তাঁদের কী কামনা তা জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে তাঁরা দুজন বলেছিলেন যে কী করলে তাঁরা পুত্রলাভ করতে পারবে তার উপায় তিনি বলেছিল। এই কথা শুনে ভগবান সদাশিব বলেছিলেন যে তাঁরা যদি পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করে তাহলে স্বয়ং নারায়ণকে সন্তান হিসাবে পাবেন। এই কথা শুনে মহারাজ দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করলেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই কৌশল্যা গর্ভবর্তী হলেন এবং সঠিক সময়ে শুভলগ্নে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে, পুনর্বসু নক্ষত্রে নবমী তিথিতে স্বয়ং নারায়ণ শ্রীরামচন্দ্র রূপে জন্মগ্রহণ করলেন দশরথ গৃহে।"
এই কথা শোনার পর মহর্ষি সনক ব্রহ্মাকে এই ব্রতের নিয়ম জানতে চাইলে ব্রহ্মা বললেন যে—ব্রত পালনের আগের দিন নিরামিষ খেয়ে সংযমী হয়ে তৃণ শয্যায় শয়ন করতে হয়। পরদিন সকালে উঠে স্নান করে শুদ্ধাচারে সংকল্প করে প্রথমে কৌশল্যা, তারপর দশরথ ও পরে রামচন্দ্রের পূজা করতে হয়। পাদ্য অর্থ দিয়ে পূজা করে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে সেদিন অষ্টম প্রহরে অষ্টবিধ পূজা করতে হয় এবং ব্রতকথা শুনে রাত্রি অতিবাহিত করতে হয়। আবার পরদিন সকালে স্নান করে বিধিমতো শ্রীরামচন্দ্রের পূজা করতে হয় এবং ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে খাওয়াতে হয়। তারপর নিজে পারন করে ব্রত শেষ করতে হয়। এই ব্রতকথা শুনলে রোগী রোগমুক্ত হয়, দরিদ্র ধনবান এবং পুত্রহীনা পুত্রবর্তী হয়। ওই শ্রীরামনবমীর দিন রামচন্দ্রকে প্রণাম করে যেকোন কাজ করলে সুফল মেলে। এই তিথিতে উপোস করে রাত্রি জেগে ও তর্পন করলে ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি ঘটে। রামচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে ইষ্টমন্ত্র জপ করতে মন্ত্রের পুনঃশ্চরণ হয়। দশমীর দিন ব্রাহ্মণদের যাওয়াতে ও দক্ষিনা দিতে হয়।
ব্রতফলঃ- এই ব্রতপালনে শ্রীরামচন্দ্র সন্তুষ্ট হয়ে ব্রতীর মনবাসনা পূরণ করেন। এই ব্রত পালন করলে দুর্বিসহ গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। এই রামনবমীর দিন রামচন্দ্রকে স্মরণ করে যে কাজ করা হয় তা সর্বাঙ্গীন সুসম্পন্ন সফল হয়ে থাকে। এই ব্রতটি অতি পূণা একটি ব্রত। এই ব্রত পালনে মহাপুণ্যি হয়।
ওঁ ধ্যাত্বা নীলোৎপলশ্যামং রামং রাজীবলোচনম্। জানকীলক্ষ্মণোপেতং জটামুকুটমণ্ডিতম্ ॥১॥ শাসিতুণধনুর্ব্বাণ পাণিং নক্তঞ্চরান্তকম্। স্বলীলয়া জগৎ ত্রাতুমাবির্ভূতমজং বিভুম্। রামরক্ষাং পঠেৎ প্রাজ্ঞঃ পাপঘ্নীং সৰ্ব্বকামদম্ ৷৷ ১ ৷৷
অস্য শ্রীরাম বচস্য বুধকৌশিক ঋষিগায়ত্রীচ্ছন্দঃ শ্রীরামচন্দ্রো দেবতা শ্রীরামচন্দ্রপ্রীত্যর্থং জপে বিনিয়োগঃ ॥ ওঁ শিরো মে রাঘবঃ পাতুঃ ভালং দশরথাত্মজঃ। কৌশল্যেয়ো দৃশৌ পাতু বিশ্বামিত্রপ্রিয়ঃ শ্রুতী ॥ ২॥
ঘ্রাণং পাতু মখত্রাতা মুখং সৌমিত্রিবৎসলঃ। জিহ্বাং বিদ্যানিধি পাতু কণ্ঠং ভরত বন্দিতঃ ॥ ৩॥ স্কন্ধৌ দিব্য যুধঃ পাতু ভুজৌ ভগ্নেশকার্ম্মকঃ। করৌ সীতাপতিঃ পাতু হৃদয়ং জামদগ্নজিৎ ।। 8 ॥
বক্ষঃ পাতু কবন্ধারি স্তনৌ গীৰ্ব্বাণবন্দিতঃ। পার্শ্বৌ কুলপতিঃ পাতু কুক্ষিমিক্ষাকুনন্দনঃ ৷৷ ৫ ॥ মধ্যং পাতু খরধ্বংসী নাভিং জাম্ববদাশ্রয়ঃ। গুহ্যং জিতেন্দ্রিয়ঃ পাতু পৃষ্ঠং পাতু রঘুত্তমঃ ॥৬॥
সুগ্রীবেশঃ কটিং পাতু সখিনি হনুমপ্রভু। ঊরু রঘুত্তমঃ পাতু রক্ষঃকুলবিনাশকৃৎ ॥৭॥ জানুনী সেতুকৃৎ পাতু জঙঘদেশমখাস্তকঃ। পাদৌ বিভীষণঃ শ্রীদঃ পাতু রামোঽখিলং বপুঃ ॥৮॥
এতাং রামবলোপেতং রক্ষাং যঃ সুকৃতী পঠেৎ। স চিরায়ুঃ সুখী পুত্রী বিজয়ী বিনয়ী ভবেৎ ॥৯॥ পাতাল ভূতলব্যোমচারিণ ছদ্মচারিণঃ। ন দ্রুষ্টুমপি শক্তাস্তে রক্ষিতং রামনামভিঃ ॥ ১০॥
রামেতি রামভদ্রেতি রামচন্দ্রেতি বা স্মরন। নরো ন লিপ্যতে পাপৈর্তুক্তিং মুক্তিক বিন্দতি ৷৷ ১১ ৷৷ জগজ্জৈত্রৈক মন্ত্রেণ রামনাম্নাভি রক্ষিতম্। যঃ করে ধারয়েৎ তস্য 0 করস্থাঃ সব্বসিদ্ধয়ঃ ॥ ১২॥
ভূর্জপত্রে ত্রিমাং বিদ্যাং গন্ধচন্দনচর্চ্চিতাম্। কৃত্বা বৈ ধারয়েদ্ যস্তু সোহভীষ্টং ফলমাপুয়াৎ ॥ ১৩॥ কাকবন্ধ্যা চ যা নারী মৃতাপত্যাচ যা ভবেৎ। বহ্বপত্যা জীববৎসা সা ভবেন্নাত্র সংশয়ঃ ॥ ১৪॥
বজ্রপঞ্জরনামেদং যে রামকবচং পঠেৎ। অব্যাহতাজ্ঞঃ সর্ব্বত্র লভতে জয়মঙ্গলম্ ॥১৫ ॥ আদিষ্টবান্ যথা স্বপ্নে রামরক্ষামিমাং হরিঃ। তথা লিখিতবান্ প্রাতঃ প্রবুদ্ধো বুধকৌশিকঃ ৷৷ ১৬ ৷৷
ধন্বিনৌ বদ্ধনিস্ত্রিংশৌ কাকপক্ষধরৌ শুভৌ। বীরৌ মাং পথিরক্ষেডাং তাবুভৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥ ১৭॥ তরুণৌ রূপসম্পন্নৌ সুকুমারৌ মহাবলৌ। পুণ্ডরীক বিশালাক্ষৌ চীরকৃষ্ণাজিনাম্বরৌ ॥ ১৮ ॥
ফলমূলাশিনৌ দান্তৌ তাপসৌ ব্রহ্মচারিণৌ, পুত্রৌ দশরথস্যেতৌ ভ্রাতরৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥১৯॥ শরণ্যৌ সর্ব্বসত্ত্বানাং শ্রেষ্ঠো সৰ্ব্বধনুত্থতাম্। রক্ষঃকুলনিহস্তা রৌ ত্রায়েতাং বো রঘুপ্তমৌ৷৷ ২০ ৷৷
আত্তসজ্য ধনুযাবিষু স্পৃশাবক্ষয়া শুগণিযঙ্গ সঙ্গিনৌ। রক্ষণায় মম রামলক্ষ্মণাবগ্রতঃ পথি যদৈব গচ্ছতাম্ ॥ ২১ ॥ সন্নদ্ধঃ কবচী খড়গী চাপবাণধরো যুবা। যচ্ছন মনোরথং চাস্মান্ রামঃ পাতু সলক্ষ্মণঃ ॥ ২২ ৷৷
অগ্রতত্ত্ব নৃসিংহো মে পৃষ্ঠতো গরুড়ধ্বজঃ। পার্শ্বয়োস্ত ধনুষ্মন্তৌ সশরৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥ ২৩ ৷৷ রামো দাশরথিঃ শূরো লক্ষ্মণানুচরো বলী। কাকুৎস্থঃ পুরুষঃ পূর্ণঃ কৌশল্যেয়ো রঘৃত্তমঃ ॥ ২৪ ৷৷
বেদাস্তবেদ্যো যজ্ঞেশঃ পুরাণঃ পুরুষোত্তমঃ। জানকীবল্লভঃ শ্রীমানপ্রমেয়পরাক্রমঃ ॥ ২৫ ॥ দক্ষিণে লক্ষ্মণো ধন্বী বামে চ জানকী শুভা। পুরতো মারুতির্যস্য তং নমামি রঘুত্তমম্ ॥ ২৬ ॥
আপদামপহত্তরং দাতারং সর্ব্বসম্পদাম্। গুণাভিরামং শ্রীরামং ভূয়ো ভূয়ো নমাম্যহম্ ॥ ২৭ ॥ এতানি মম নামানি মভক্তো যঃ সদা পঠেৎ । অশ্বামেধাযুতং পুণ্যং স প্রাপ্নোতি ন সংশয়ঃ ॥ ২৮ ॥
3. কয়েকটি কলাইয়ের ডালের সঙ্গে অল্প দই এবং সিঁদুর মাখিয়ে নিন। তার পর সেগুলো অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় সন্ধ্যাবেলা চুপচাপ রেখে আসুন। রাখার পর পিছন ফিরে আর দেখবেন না।
4. এই দিন 9 জন কুমারীকে নিজের বাড়িতে খাওয়ান। খাওয়ানোর সময় তাঁদের পছন্দ মতো কিছু জিনিস দান করুন।
5. এই দিন একটি পিতলের থালায় মাটির ন’টি গাওয়া ঘিয়ের প্রদীপ ঘরে জ্বেলে রাখুন। যত ক্ষণ পর্যন্ত প্রদীপগুলো নিজে থেকে না নিভে যায় তত ক্ষণ জ্বলতে দিন। এর ফলে বাড়িতে ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
6. এই দিন লাল কাপড়ে 11টি কড়ি কালো সুতো দিয়ে বেঁধে আলমারিতে রেখে দিন।
7. এই দিন অবশ্যই পশু পাখিদের খাবার খাওয়ান।
8. 11টি অশ্বত্থ পাতা ভাল করে গঙ্গাজলে ধুয়ে পাতার ওপর সিঁদুর দিয়ে ‘শ্রীরাম’ লিখে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের চরণে নিবেদন করুন।
নীলষষ্ঠী ব্রতের সময় বা কাল– চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠীর দিন মেয়েরা এই ব্রত করবে।
নীলষষ্ঠী ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান— বেলপাতা, ডাব, বেল, শশা, আতপচাল আর ফল। নীলষষ্ঠীর দিন উপোস করে থেকে সন্ধ্যের সময় শিবের মাথায় ডাবের জল ঢেলে শিবকে প্রণাম করে তারপর জল খেতে হয়।
নীলষষ্ঠী ব্রতকথা – এক বামুন আর বামনীর কোনো ছেলেপুলে হয়েই মারা যেত কেউ বাঁচতো না। তারা দু’জনে পরামর্শ করে একদিন তীর্থে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল।
ক্রমে তারা যখন সরযু নদীর তীরে এসে পৌঁছল তখন বামুন বলল, “চল এই জলে ডুবেই আমাদের জীবন শেষ করি, বংশ রক্ষার জন্যে যখন একটি ছেলেও রইল না, তখন বেঁচে থেকে আর ফল কী?” এই কথা বলে তারা নদীতে নামতে লাগল।
এমন সময় মা ষষ্ঠী এক বুড়ীর রূপ ধরে এসে বললেন, “ওগো বাছারা, তোমরা আর বেশী দূরে যেও না, আরও দূরে গেলে ডুবে মারা যাবে।” বামুন আর বামনী তখন তাঁকে নিজেদের দুঃখের কথা সব বলল।
মা ষষ্ঠী সব শুনে বললেন, “দোষতো তোমাদেরই বাছা, সদ্যোজাত শিশুর কান্না শুনে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তোমরা সব সময় আমায় বলতে, ‘বাবা! আপদ গেলে বাঁচি।’
কখনো বলেছ কি যে, ‘আহা, ষষ্ঠীর দাস বেঁচে থাক!’ সেই পাপেই তোমাদের এই দুর্দশা। “বামনী তখন বুড়ীর পায়ে ধরে বলল, “কে তুমি বল মা।” বুড়ী বললেন, “আমিই মা ষষ্ঠী।
শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করবি আর শিবপুজো করবি। সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে থেকে নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবেরঘরে বাতি জ্বেলে দিবি তারপর আমায় প্রণাম করে জল খাবি। একে বলে নীলষষ্ঠা। দেবী এই কথা বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এর পর বামুন আর বামনী দেশে ফিরে এসে নীলের দিন খুব ভক্তি আর নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করল। এরপর কিছুদিনের ভেতর মা ষষ্ঠীর দয়ায় বামনীর একটি সুন্দর ছেলে হল।
মা ষষ্ঠীর কথামত তার কোন অনিষ্ট হল না। বামনীর ব্রতের মাহাত্ম্য দেখে দেশে দেশে সবাই এই ব্রত পালন করতে আরম্ভ করল।
এই সময়ের প্রচণ্ড গরমে সারাদিন নির্জলা উপবাস করে সন্ধের পর নীলের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে , অর্থাত্ মহাদেবের পুজো করে, তারপর উপবাস ভঙ্গ করা হয়ে থাকে। সন্তানবতী মায়েরা সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা এই ব্রত পবালন করেন বলে নীল ষষ্ঠীর সঙ্গে প্রচলিত কথা হল - 'নীলের ঘরে দিয়ে বাতি, জল খাওগো পুত্রবতী।'
নীলষষ্ঠী ব্রতের ফল— ছেলে-মেয়ের মায়েরা নীলষষ্ঠী ব্রত করলে তাদের সন্তানদের অমঙ্গল কোনো দিনই হয় না।
শিবরাত্রি ব্রতের সময় বা কাল- ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে সারা রাত জেগে চার প্রহর ধরে শিবরাত্রি ব্রত পালন করার নিয়ম। পুরুষ ও স্ত্রী লোক সকলেই ব্রত করতে পারে।
শিবরাত্রি ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- গঙ্গা মাটি, বেলপাতা, ফুল, দুধ, দই, ঘি, মধু আর কলা। শিবরাত্রির আগের দিনে নিরামিষ খেয়ে থাকতে হয়। রাত্রিরে বিছানায় না শুয়ে, কম্বল কিংবা খরের বিছানায় সংযমী হয়ে শোয়ার নিয়ম।
শিবরাত্রির দিন সকালে স্নান করে বেল পাতা তুলে রাখতে হবে। এরপর সমস্ত দিন উপোস করে থেকে গঙ্গা মাটি দিয়ে চারটি শিবলিঙ্গ তৈরি করে রাত্রিরে চার প্রহর চারবার শিব পুজো করতে হয়।
যেমন- প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে শিব পুজো করার নিয়ম।
দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে দ্বিতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গ
কে স্নান করিয়ে আর চতুর্থ প্রহরে শিব লিঙ্গে মধু দিয়ে স্নান করে পুজো করাতে হবে। এইভাবে প্রত্যেক প্রহরেই শিব পুজো করতে হবে। এই সঙ্গে সমস্ত রাত্রি জেগে কাটাতে হয় এবং পরদিন প্রভাত হলে
প্রথম কথা শুনে শিবকে প্রণাম করে ব্রাহ্মণ কে পরিতোষ সহকারে জলযোগ এবং ভজন করিয়ে দক্ষিণা দেওয়ার কর্তব্য।
শিবরাত্রি ব্রত কথা- পুরাকালের কথা-একদিন কৈলাস পর্বতে হরো পার্বতী বসে বিশ্রাম করছিল, এমন সময় দেবী পার্বতী বললেন,”প্রভু! ধর্ম ,অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য কি কাজ বা ব্রত পালন করলে আপনাকে সন্তুষ্ট করা যায়?”
সেই প্রশ্ন শুনে মহাদেব তখন বললেন,”শোনো দেবী পার্বতী, ফাগুন মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথি অন্ধকার রাত্রিকে ‘শিবরাত্রি ‘ বলে। সেইদিন যে উপোস করে থাকে, আমি যথার্থই তার উপর প্রসন্ন হয়।
শিবরাত্রি ব্রত আমার খুব প্রীতিকর, এই ব্রতের গুণেই গণেশ সপ্তদ্বীপ এর অধীশ্বর হয়েছে। এখন এই তিথির মাহাত্ম্য বলছি শোনো। পুণ্যতীর্থ কাশিনগরের এক ব্যাধ বাস করত। বদ করাই ছিল তার কাজ।
একদিন সে তীর-ধনুক নিয়ে স্বীকার করতে বেরুলো। একটা বনে গিয়ে সে অনেক রকমের পশুপাখি স্বীকার করল। সে যখন শিকার জড়ো করে বাড়িতে ফিরছিল তখন সে দেখল তার মাংসগুলো খুব ভারী হয়ে গেছে সেগুলো তার
একার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন সে সে গুলোকে নিয়ে বোনের একটা গাছের তলায় রেখে একটু বিশ্রাম করতে লাগলো। খুব ক্লান্ত হয়ে থাকার দরুন কিছুক্ষণের মধ্যেই সে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ল।
সূর্য ডুবে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর তার ঘুম ভাঙলো, তখন সে দেখল যে, এখন সেখানে বসে থাকতে সাপ কিংবা বাঘ ভাল্লুকের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে। এই অন্ধকারে পথ চিনে কুটিরের ফেরাও এখন সম্ভব নয়।
তখন সে হাতরে হাতরে সেই গাছটার ওপরে মাংসের বোঝাটা নিয়ে উঠে পড়ল এবং মাংসের বোঝাটা গাছের লতাপাতা দিয়ে একটা ডালে বেঁধে রেখে কোনরকমে গাছে বসেই রাত কাটাবে ঠিক করল।
একে সে খিদের জ্বালায় অস্থির তার ওপর শিশির পড়তে থাকায় শীতে তার কাঁপুনি ধরল, কাজেই সে জেগে বসে রইল সারা রাত। সেটা ছিল বেল গাছ আর ঘটনাচক্রের আমার একটা লিঙ্গ মূর্তি ও ছিল সেই গাছের তলায়।
সেদিন ছিল শিবরাত্রি তিথি আরও ব্যাধ ও সারাদিন উপোসী ছিল। তার নড়াচড়াতে গাছের কয়েকটা পাতা শিশিরে ভিজে তার গা বেয়ে এসে পড়ল সেই শিব লিঙ্গের মাথায়।
যদিও শিবরাত্রি ব্রতের নিয়ম পালন করার জন্য তার পক্ষে স্নান করা আর পূজার নৈবেদ্য দেওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না, কিন্তু আমি পেলুম কেবল বেলপাতা।
তবুও চতুর্দশী তিথি মাহাত্ম্যের গুনে সে পেল মহাফল, অথচ সে এব্যাপারে কিছুই জানত না। সকাল হতেই সে ফিরে গেল তার কুটিরে।
বেশ কিছুকাল পরে তার মৃত্যু হল, কখন যমদূত আর আমার দূতেরা ও তার কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাকে আমার কাছে আনা হবে না বেঁধে যমরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে এই
নিয়ে যমদূত দের সঙ্গে আমার দূত দের খুব ঝগড়া বাঁধলো। শেষে শিব দূতেরা যমদূত দের পরাস্ত করে ব্যাধকে আমার কাছে নিয়ে এলো। জম এই ব্যাপার সব জানতে পেরে আমার কাছে আসছিল,
পথে নন্দী কে দেখে ব্যাধের সারা জীবন ধরে কুকর্মের কথা বলল।
নন্দী ও যমকে ব্যাধের শিবরাত্রির ঘটনার কথা সমস্ত বলে আরও বলল যে,
সে শুধু কুকর্ম করেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই-সে মহা পাপী ও ছিল, কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের ফলে সে শিবলোক লাভ করেছে। যম সব শুনে সন্তুষ্ট হয়ে নিজের পুরীতে ফিরে গেল।
দেখলে পার্বতী, এই ব্রথের শক্তি কতটা?”সেই থেকে পৃথিবীতে এই ব্রতের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
শিবরাত্রি ব্রতের ফল- শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে মানুষের ধর্ম, অর্থ ,কাম ও মোক্ষএই চার রকম ফল লাভ হয়ে থাকে।।
শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের সময়- মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অর্থাৎ সরস্বতী পূজার পরেরদিন, সকল মেয়েদের এই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করার নিয়ম।
শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- দই, হলুদ, কড়াই, ফল ,মিষ্টান্ন ইত্যাদি পুজোয় প্রয়োজন হয়। দই ও হলুদে সাদা সুতো ছুটিয়ে ছেলে – মেয়েদের হাতে বেঁধে দিতে হয়।
আগের দিনে ভাত আর গোটা সেদ্ধ করে রেখে দিয়ে ষষ্ঠী পুজোর দিন সেই ভাত আর গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম।
শীতল ষষ্ঠী ব্রত কথা-কোন এক দেশে এক বুড়ো বামুন ও তার স্ত্রী বাস করত। বামুনের স্ত্রীর নাম ছিল বিন্দি ঠাকরুণ। বিন্দি ঠাকরুনের ঠাকুর দেবতার উপর খুব নিষ্ঠা ছিল। সে ছেলে, বউ নাতি- নাতনীদের নিয়ে খুব আনন্দের দিন কাটছিল।
একদিন মাঘ মাসের শীতল ষষ্ঠীর দিন খুব ঠান্ডা পড়েছিল। তো সেইদিন বিন্দি ঠাকরুণ শীতে কাতর হয়ে ব্রত করতে পারলো না। সে বেশ করে লেপ চাপা দিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলো।
বিন্দি ঠাকুরাণী কে তার নাতি নাতনি বউ মারা সবাই ডেকে ডেকে ব্রতের কথা স্মরণ করাতে লাগল। তিনি দাও বিছানা আর লেপ ছেড়ে উঠলেন না বরং বললেন ,”আমি শীতে আর উঠতে পারছি, না যা করার তোমরা করো।
আর বৌমাদের বললেন আমার জন্য একটু গরম ভাত রান্না করো আর সান করার জন্য গরম জল করো । এই শীতে শীতল ষষ্ঠী ব্রত কি করে করব?” বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়ীর কথামত কাজ করলো।
বিন্দি ঠাকুরণ গরম জলে স্নান করল ও গরম ভাত খেলো, অথচ এইদিন ঘরে উনুন জ্বালাতে নেই। তারই একটু পরে খবর এলো যে তার ঘর আগুন ধরেছে আর তার মেয়ে জামাই পুড়ে মারা গেছে।
মেয়ে-জামাইয়ের শোকে বিন্দি ঠাকুরানী হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। রাত্রিরে সে কিছুতেই ঘুমোতে না পেরে জেগে বসে রইল।
তারই মধ্যে শুনতে পেল কে যেন বলছে,”তোর বড় অহংকার হয়েছে, তাকে সেই অবজ্ঞা করার পাপেই আজ তোর এই দুর্দশা। তাকে যেমন অবহেলা করেছিস, তেমনি এখন তার ফল ভোগ কর”।
এই কথা শুনে বিন্দি ঠাকুরণ কাঁদতে কাঁদতে মা ষষ্ঠীর কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল – বলল ,”দোহাই মা ষষ্ঠী ,এ বারে আমায় ক্ষমা করো মা , এমন কাজ
আমি আর কখনো করবো না।”বিন্দি ঠাকুরুণ অনেক কাকুতি-মিনতি করাতে তার ওপর মা ষষ্ঠীর দয়া হল। মা ষষ্ঠীর তখন বললেন, “তুই এক্ষুনি মানত কর যে সামনের বছর মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর
দিনে তোর মেয়ে জামাইয়ের কল্যাণের জন্য উপোস করবি, আর আমার পুজো দিবি-জীবনে আর কখনো এমন দুর্বুদ্ধি করবি না। তোর মেয়ে জামাইকে এখনো দাহ করা হয়নি।
যারা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল-আমার ইচ্ছায় ভয় পেয়ে তারা বনের ধারে মৃতদেহ ফেলে সবাই পালিয়ে গেছে। তুই আমার পুজো করে ঘরের জল আর নির্মাল্য নিয়ে, লোকজন ওঠার আগেই ভোরবেলা সেই বনের ধারে গিয়ে আমার নাম করে মৃতদেহের উপর জল ছিটিয়ে নির্মাল্য ছড়িয়ে দিবে, তাহলে ই তোর মেয়ে জামাই বেঁচে উঠবে।”
বিন্দি ঠাকুরণ মা ষষ্ঠীর আদেশ মত সকাল হতেই, বনের ধারে গিয়ে তার মেয়ে জামাই এর মৃতদেহ দেখতে পেল। তাদের ওপর ফুল জল ছড়াতেই, তারা বেছে উঠে বিন্দি ঠাকুরন কে প্রণাম করলো।
বিন্দি ঠাকুরণ এই দেখে খুব আনন্দ পেল। সে তাদেরকে নিজের বাড়িতে সঙ্গে করে নিয়ে এল।
পরের বছরে আবার বিন্দি ঠাকুরণ, মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন উপোস করে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য শীতল ষষ্ঠী পুজো দিল। বামনির মেয়ে জামাইকে বেঁচে উঠতে দেখার পর থেকে সকলেই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে লাগলো।
শীতল ষষ্ঠী ব্রতের ফল- মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সংসারের মধ্যে থেকেও শোক তাপ পেতে হয় না।।
পাটাই ষষ্ঠীরর ব্রতের সময় – পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত পালন করতে হয়।
পাটাই ষষ্ঠী ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান -আতপ চালের ৫ খানি নৈবেদ্য, ফল ও মিষ্টান্ন। নৈবেদ্য এর মধ্যে একখানি বাড়ির ধোপা বউয়ের জন্য, একখানা বাড়ির জন্য আর তিনখানা তিনজন এয়োর জন্য।
পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন , বাড়ির উঠোনে একটা ছোট পুকুর কাটিয়ে তাতে বেনা গাছের পাঠাই পুঁতে পুজোর জায়গা করা হয় ।
পুরহিতকে দিয়ে পূজা করার নিয়ম। পুজোর পর ছেলে মেয়েদের মায়েদের চিঁড়ে দই ফলার করে দিতে হয় ।
পাটাই ষষ্ঠীর ব্রতকথা – এক দেশে এক বিধবা বামনী তার ছেলে আর বউকে নিয়ে বাস করত। বউটি ছিল খুবই ভালো মানুষ। দোষের মধ্যে সে খাবার দাবারের লোভ কিছুতেই সামলাতে পারত না,
এমন কি ঠাকুর দেবতার পূজার জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলমূল, মিষ্টান্ন সে অনায়াসে খেয়ে ফেলত। সেই পাপের ফলে তার যত ছেলে মেয়ে হয় সবাই মরে যায়।
বামনী একবার ঠিক করলো যে, সেবারের পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে সে বউকে দিয়ে পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত করাবে। অনেকগুলো কাপড় কেচে আনবার জন্য ষষ্ঠীর ব্রতের দিন বামনী বউকে সকালেই পুকুরঘাটে পাঠিয়ে দিল,
আর নিজে বাড়ির উঠোনে উঠোনে ব্রত করার সব আয়োজন করতে লাগলো। সে একটা ছোট্ট পুকুর কেটে তার পাশে বেনা গাছের পাটাই পুঁতে রোহিত কে পুজোয় বসিয়ে দিল।
বউ কাপড় কাচতে কাচতে চারিদিক থেকে শাঁখের শব্দ শুনতে পেল। তখনি তার মনে পড়ে গেল যে-সেদিন পাটায় ষষ্ঠী ব্রত। সে জানত যে বাড়িতে অনেক ফলমূল আর মিষ্টান্ন আনা হয়েছে।
সে আর লোভ সামলাতে পারল না, ছুটল বাড়ির দিকে কাপড় চোপড় সব ঘাটে ফেলে রেখে। ছুটতে ছুটতে বেনা গাছের পাশ দিয়ে যাবার সময় বেনা গাছে পা আটকে সে পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে গেল।
সেই সময় ধোপা তার নৈবেদ্য আর প্রসাদ নিয়ে সেইখানে দিয়ে আসলো। বামুন বউকে সেইখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে সে তখুনি গিয়ে বামনী কে খবর দিলো। বামনী ও খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো।
সে বউয়ের মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে গেল। তারপর বউকে স্নান করিয়ে খুব শুদ্ধাচারে ষষ্ঠীর ব্রত করল।
ব্রতের শেষে বামনী বউকে বলল, ” ভক্তির সঙ্গে মা ষষ্ঠী কে প্রণাম করে বর চেয়ে নাও। এই বলে বর চেয়ে নাও যে, বছরের মধ্যে যেন ছেলের মুখ দেখতে পাই আর যেন আমার কোন দুঃখ কষ্ট না হয়।”
বউকে শাশুড়ির কথামতো বড় চাইল। তাতে মা ষষ্ঠীর দয়া হল তার ওপর, আর বছরের মধ্যে একটি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে তার কোলে আলো করে ঘরে এল ।
তারপর থেকে প্রত্যেক বছর তারা পাটায় ষষ্ঠী ব্রত করতে লাগলো। এইভাবে পাটাই ষষ্ঠীর গুনাগুন চারিদিকে আস্তে আস্তে প্রচার হয়ে গেল।
পাটাই ষষ্ঠী ব্রতের ফলাফল – পাটায় ষষ্ঠীর ব্রত করলে গৃহস্থের ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয় সজনের অকালে মৃত্যু হয় না।
সুয়ো-দুয়োর ব্রতের সময় বা কাল- পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তির দিন এই ব্রত করার নিয়ম । এই ব্রত স্ত্রী-পুরুষ সকলেই করতে পারে।
সুয়ো-দুয়োর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- কলা পেটোর ডিঙি, গাঁদা ফুল, জোড়া কলা, জোড়া পান, সুপারি, পৈতা, করির ভার দিয়ে সাজাতে হবে।
ব্রতের বিধান অনুসারে মকর সংক্রান্তির দিন উপোস করে থেকে পরের দিন ওই পেটোতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে জলে ভাসিয়ে দিতে হবে।
সুয়ো দুয়োর ব্রতকথা – এক দেশে এক সওদাগর বাস করত। তার একটি কন্যা সন্তান আর সাতটি পুত্র সন্তান ছিল। ছেলেদের জন্মবার আগেই সে তার কন্যা সন্তানকে বিবাহ দিয়ে দিয়েছিল।
মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর থেকে সওদাগর তার মেয়ের কোন খোঁজখবর রাখতে পারেনি। এইজন্য সওদাগরের ছেলেরা শুধুমাত্র তার বোনের কথা শুনেছিল, তাকে দেখবার সুযোগ সেই ভাই গুলোর হয়নি।
কিছুদিন যাওয়ার পর সওদাগর মারা গেলেন। এরপর সওদাগরের ছেলেরা বড় হয়ে বাণিজ্য করতে বেরোলো। বাণিজ্যে বেরিয়ে, তাদের খাবার জোগাড় করার জন্য তারা নদীর
একটা মোহনায় তাদের ডিঙা বেঁধে রেখে খাবারের ব্যবস্থা কথা ভাবছি এমন সময় কাছের ই একটা গায়ের লোক বলে পরিচয় দিয়ে জনক তখন লোক তাদের বলল,
“এখানে খাবার মত কিছুই তোমরা পাবে না- তোমরা আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে চলো, সেখানে আমরা তোমাদের খাবার দাবার সব ব্যবস্থা করে দেব ,
আর তোমরা খাওয়া-দাওয়া করে জিরিয়ে আবার এসে ডিঙ্গা ছাড়তে পারবে। ডিঙা এখন এখানেই বাধা থাক।”
সওদাগরের ছেলেরাও দেখল যে, এখানে কোন দোকানপাট যখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন এদের সঙ্গে যাওয়াই যায় বোধহয় ভালো।
এই ভেবে তারা ঐ লোকদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গেল। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, সেই লোক গুলো সওদাগরের ছেলেদের খুব খাতির যত্ন করল আর বলল, “আপনারা জলখাবার খেয়ে এখানে খানিক জিরিয়ে নিয়ে,
আমরা এখন যাচ্ছি, কাজ সেরে খুব শিগগির ফিরে আসবো।”এই কথা বলে তাদের জন্য জলখাবার এনে দিয়ে একটু পরেই তারা বেরিয়ে গেল। সেই বাড়ির ভিতরে একটি বউ রান্না করছিল।
বাড়ির পুরুষরা বেরিয়ে যেতে সে একবার উঁকি মেরে দেখল যে, সাতজন সুন্দর ছেলেকে তার স্বামী আর দেওরের একটি ফন্দি করে ভুলিয়ে বাড়িতে এনেছে, এদের তারা মেরে ফেলবে।
বউটি তখন তাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল,”আপনাদের বাড়ি কোথায়?”সাত ভাইয়েরা তখন তাদের পরিচয় দিল। বউটি তখন বলল,”তোমরা তো দেখছি আমার ভাই- তোমরা এখানে আর এক দন্ড ও থেকো না- পালিয়ে যাও। যারা তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছে , তারা ডাকাত, ফিরে এসে তোমাদের মেরে ফেলবে আর ডিঙার পত্র নিয়ে নেবে।
তোমরা যেমন করে হোক এই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাও, আর তোমরা উত্তর মুখে যেও। “সওদাগরের ছেলেরা তার কথামতো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল এবং
ঘাটে গিয়ে তখনই তাদের ডিঙ্গা ছেড়ে দিল। ডাকাতরা সেই সময় বাড়িতে ফিরছিল, তারা দূর থেকে দেখতে পেল যে, তাদের বাড়িতে আগুন লেগেছে। তারা ছুটে এলো আগুন নেভাবার জন্য।
এসে দেখলো যে, সওদাগরের পালিয়ে গেছে। বউটি তখন তাদের বলল যে, তারা দক্ষিণ দিকে যাবে বলে গেছে। এরপরই ওই সাত সদাগরের ডিঙা তাদের দেশের ঘাটে এসে পৌছালো।
সেখানে নেমে তারা দেখল যে, তাদের মা, সেই ঘাটে কলার পেটক সাজিয়ে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তারা মাকে তাদের বোনের সঙ্গে দেখা হওয়ার সব কথা বলল।
অনেকদিন পরে মেয়ের খবর পেয়ে তাদের মায়ের খুব আনন্দ হল। তাদের মা তখন মেয়ে জামাই ও তার ভাই এদের চিঠি দিয়ে নিমন্ত্রণ করে পাঠালো।
চিঠি পেয়ে তার মেয়ে, স্বামী আর দেওরের নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে পৌছালো। সওদাগরের সাত ছেলে মিলে বোন , ভগ্নিপতি আর বোনের দেওরের খুব খাতির যত্ন করল।
তারা তাদের ওই ডাকাতি ব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করলো। তারাও ডাকাতি ছেড়ে দিতে রাজি হলো বটে, কিন্তু বলল যে,
এতদিন তারা যে পাপ করেছে সে পাপ খন্ডন হবে কেমন করে।
তখন সাত সাগরের মা বলল,”দেখো বাছারা! তোমরা সুয়ো-দুয়োর ব্রত পালন করো, তাহলে তোমাদের আর কোন পাপ থাকবে না।”
এরপর থেকে সুয়ো- দুয়োর ব্রত করে তারা বেশ সুখে দিন কাটাতে লাগলো।
সুয়ো দুয়োর ব্রতের ফল- এই ব্রত পালন করলে হারানো আত্মীয়দের সন্ধান পাওয়া যায়।।
কুলুই মঙ্গল চণ্ডীর ব্রতএর সঠিক সময় বা কাল – অগ্রহায়ণ মাসের মঙ্গলবারে এই ব্রত করার নিয়ম।
কুলুই মঙ্গল চণ্ডীরব্রতের দ্রব্য ও বিধান – পিটুলি গোলা, কুল গাছের ডাল, জোড়া কুল, জোড়া কলা, দুর্বা এবং ফুল। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি মঙ্গলবারে উঠোনে পিটুলির আলপনা দিয়ে সেখানে কুল গাছের ডাল পুঁততে হবে।
তার নিচে ঘট বসিয়ে জোড়া কলা, জোড়া কুল, চিড়ে, মিষ্টি ও পাটালি দিয়ে ধান-দুর্বার অর্ঘ্য গড়ে মা মঙ্গলচণ্ডীর পুজো। করাই বিধি। পুজোর শেষে পাঁচজন এয়োকে
নিয়ে ব্রতকথা শুনে, মন্ত্র বলে ফলার খাওয়া কর্তব্য। জল পান ও ফলার করার আগে স্ত্রীলোকেরা নিচের মন্ত্র গুলি পাঠ করবনে।
এই মন্ত্রটি পাঠ করবনে –
সোনার মঙ্গলচণ্ডী রূপোর বালা।
কেন মা মঙ্গলচণ্ডী এতো বেলা?
হাসতে খেলতে–পাটের শাড়ী পরতে, তেল-হলুদ মাথাতে—আঘাটায় ঘাট করণীতে,
অসহ্য সহ্য করতে–রাজ্যহীনকে রাজ্য দিতে,
আইবুড়োর বিয়ে দিতে—হা-পুতির পুত্র দিতে,
নির্ধনেরে ধন দিতে—কানার চক্ষু দিতে
অন্ধেরে নড়ী দিতে তাই এতো বেলা।
কুলুই মঙ্গল চণ্ডীরব্রতের ব্রতকথা—অনেক দিন আগেকার কথা। এক ব্রাহ্মণ আর এক ব্রাহ্মণী এক গ্রামে বাস করত। তারা রোজ মা মঙ্গলচণ্ডীর ঘটে পুজো করত, পুজোর যোগাড় করে দিত তাদের মেয়ে।
একদিন ঠাকুরঘর পরিষ্কার করতে এসে মেয়েটি দেখল যে, একটা জোড়া কলা রাখা রয়েছে। সে ভাবল যে জোড়া কলায় তো আর পুজো হবে না, তাই মনে করে সে কলাটি খেয়ে ফেলল।
এর ফলে মা মঙ্গলচণ্ডীর ইচ্ছেয় কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটির গর্ভ হল। কুমারী মেয়ের গর্ভ হয়েছে দেখে তার বাপ-মা সমাজের ভয়ে আর লোকলজ্জায় মেয়েটিকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিল।
মেয়েটি কোথাও জায়গা না পেয়ে শেষে এক গভীর বনের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নিল। সেখানে সে গাছের ডালপালা দিয়ে একটা কুঁড়ে ঘর তৈরী করে বাস করতে লাগল। কিছুদিন যাবার পর মেয়েটির দু’টি যমজ ছেলে হল। সে তাদের নাম রাখল আকুলী ও সুকুলী।
বড় হয়ে দুই ভাই একদিন কাছেই নদীর তীরে খেলা করছিল। সেই সময় এক সওদাগর বাণিজ্যের পর সাতটি নৌকোয় ধন-রত্ন বোঝাই করে দেশে ফিরছিল। ছেলে দু’টি তাকে বলল,
“আমরা বড় গরীব, আমাদের কিছু দিয়ে যাও।” সওদাগর বলল, “নৌকোয় শুধু গাছপালা ছাড়া আর কিছু নেই।” ছেলে দু’টি বলল, “তবে তাই হোক”।
কিছুদূর যাবার পর সওদাগর দেখল যে, সত্যিই নৌকোয় গাছপালা ছাড়া আর কিছু নেই। তখন সে নৌকো ফিরিয়ে তখুনি ছুটে এল ছেলে দু’টির কাছে আর তাদের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“বাবা! আমার সব গেছে, সর্বনাশ হয়েছে, আমার যেমন ছিল তোমরা আবার তেমনটি করে দাও বাবা তোমাদের পায়ে ধরছি আমি।”
ছেলেরা বলল যে, তারা এর কিছুই জানে না। তারা তাদের মার কাছে গিয়ে সব কথা বলল। তাদের মা তখন মা মঙ্গলচণ্ডীকে সব কথা জানাল, মা মঙ্গলচণ্ডী দৈববাণী করে তখন সওদাগরকে বললেন,
“তুই আমার ব্রতদাসের অপমান করেছিস তাই তোর এই অবস্থা হয়েছে। তুই ঘরে ফিরে গিয়ে এখুনি মা কুলুই মঙ্গলচণ্ডীর পুজো করার ব্যবস্থা কর, আবার তোর সব ফিরে পাবি।
এই পুজোর নিয়ম হল যে, অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি মঙ্গলবার উঠোনে আলপনা দিয়ে কুল-ডাল পুঁতে ঘট বসাতে হবে, তারপর জোড়া কলা, জোড়া কুল, চিড়ে, গুড় ও ধান-দুর্বার অর্ঘ্য সাজিয়ে পুজো করতে হবে।
পাঁচজন এয়ো এক জায়গায় বসে আকুলী, সুকুলীর কথা শুনে ফলার করবে। মা মঙ্গলচণ্ডীর কাছে যে যা প্রার্থনা করবে সে তাই পাবে। তার কুলেও কখনো কলঙ্ক পড়বে না।
সওদাগর বাড়িতে এসে খুব ঘটা করে ভক্তির সঙ্গে মা মঙ্গলচণ্ডীর পুজো আর ব্রত করার পর তার হারানো সব জিনিসই ফিরে পেল।
এরপর একদিন মা মঙ্গলচণ্ডী আকুলী, সুকুলী আর তাদের মাকে সঙ্গে নিয়ে সেই ব্রাহ্মণের বাড়িতে গেলেন। সেখানে গিয়ে ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণীকে দেবী বললেন, “তোদের মেয়ে মহাসতী। মঙ্গলবারে জোড়া কলা খেয়েছিল বলে
আমার ইচ্ছেয় কুমারী অবস্থাতেই তার যমজ ছেলে জন্মেছে। আকুলী, সুকুলী নামে যমজ ছেলে দু’টি আমার ব্রতদাস, এদের যে অপমান করবে তার আর সর্বনাশের শেষ থাকবে না।” এই কথা বলে দেবী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
কিছুদিন পরে মা মঙ্গলচণ্ডী সেই দেশের রাজাকে স্বপ্নে গুল দিয়ে বললেন, “তুই রাজপুত্রের সঙ্গে ওই ব্রাহ্মণের মেয়ের বিয়ে দে—তা না হলে তোর সর্বনাশ হবে।” রাজা ভীষণ ভয় পেয়ে রাজপুত্রের সঙ্গে ব্রাহ্মণ-কন্যার বিয়ে দিলেন।
আকুলী-সুকুলীকে তখন সকলে দেবতার মত ভক্তি শ্রদ্ধা করতে লাগল। সেই সময় থেকে মা কুলুই মঙ্গলচণ্ডীর মাহাত্ম্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
কলুই মঙ্গলচন্ডী ব্রত করলে ব্রতকথার শেষে মন্ত্র পাঠ করতে হয় –
মন্ত্র –
সোনার মঙ্গলচণ্ডী রূপোর বালা।
কেন মা মঙ্গলচণ্ডী এতো বেলা?
হাসতে খেলতে–পাটের শাড়ী পরতে, তেল-হলুদ মাথাতে—আঘাটায় ঘাট করণীতে,
অসহ্য সহ্য করতে–রাজ্যহীনকে রাজ্য দিতে,
আইবুড়োর বিয়ে দিতে—হা-পুতির পুত্র দিতে,
নির্ধনেরে ধন দিতে—কানার চক্ষু দিতে
অন্ধেরে নড়ী দিতে তাই এতো বেলা।
ব্রতের ফল—অগ্রহায়ণ মাসের মঙ্গলবারে এই ব্রত করলে ব্রতীর কুলে কখনও কলঙ্ক পড়ে না।
মূলা ষষ্ঠীর ব্রত এর সঠিক সময় বা কাল–অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন স্ত্রীলোকেরা উপোস করে থেকে এই ব্রত করতে পারে।
মূলা ষষ্ঠী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান—মূলো, কলা, পান আর ময়দা। এই ব্রতের বিধান অনুসারেসেদিন উপোস করে থেকে মা ষষ্ঠীর পুজো করতে হয়। সেই দিন মাছ ও মাংস খাওয়া একেবারে বারণ। রুটি আর মূলোর তরকারী খাওয়াই ব্রতের বিধান।
মূলা ষষ্ঠী ব্রতের ব্রতকথা—এক খুব গরীব ব্রাহ্মণ ছিল। সে ছেলে বৌ নিয়ে কোনো রকমে এক বেলা এক পেটা খেয়ে দিন কাটাতো। একবার তার একটু মাংস খাবার খুব ইচ্ছে হল।
বেচারা অনেক কষ্টে কিছু পয়সা যোগাড় করে আধপোয়া মাংসা এনে তার ছেলের বৌকে রান্না করতে বলল। ছেলের বৌকে মাংসটুকু রাধবার কথা বলে দিয়ে ব্রাহ্মণ নিজের কাজে বেরিয়ে
গেল। এদিকে তার ছেলের বৌ শ্বশুরের অনেক কষ্টে যোগাড় করা মাংসটুকু খুব ভালো করে রান্না করল। সেই সময় বৌয়ের কাছে একজন প্রতিবেশী বসেছিল।
বৌ সেই প্রতিবেশীকে একটু মাংস খেতে দিয়ে বলল, “দ্যাখতো খেতে কেমন হয়েছে?” প্রতিবেশী মাংসটুটু খেয়ে বলল, “একটুখানি মাংস তো, খেয়ে কোনো স্বাদই বুঝতে পারা গেল না।” বৌ তখন তাকে আরও একটু মাংস দিল, কিন্তু প্রতিবেশী সেবারও একই কথা বলল।
বৌ তখন তাকে আরও একটু মাংস চাখতে দিয়ে দেখল, এমনি করে সব মাংসই ফুরিয়ে গেছে। এদিকে শ্বশুর শিগ্গিরই স্নান করে খেতে আসবেন, তখন সে কী করবে সেই কথা ভেবে বৌ অস্থির হয়ে উঠল।
শেষে কোনো রকমে রক্ষে পাবার জন্যে প্রতিবেশীকে বলল, “এই নাও আটআনা পয়সা, যত শিগ্গির পার আমাকে আধপোয়া মাংস এনে দাও, আমি তাড়াতাড়ি রেঁধে রাখি, আমার শ্বশুর হয়ত এখুনি এসে পড়বেন।”
প্রতিবেশী পয়সা নিয়ে মাংস আনবার জন্যে বেরুলো, সে একটু দূরে গিয়েই দেখল যে, একটা বাছুর মরে পড়ে আছে। সে সঙ্গে সঙ্গে পয়সাগুলো নিজের আঁচলে বেঁধে নিয়ে সেই বাছুরের দেহ থেকে আধপোয়াটাক মাংস কেটে এনে বৌকে দিল।
কিন্তু এমন আশ্চর্য্য যে—অনেকটা সময় কেটে গেলেও মাংস কিন্তু একটুও সেদ্ধ হল না! বৌয়ের তখন ভয়ানক ভয় হল। সে শুনতে পেল যে, শ্বশুর ভাত খেতে আসছেন, সে আর সহ্য করতে পারল না, ভয়ে ভাবনায় অজ্ঞান হয়ে গেল। মাংস আর ঝোল ছড়িয়ে পড়ে রইল চতুর্দিকে।
শ্বশুর ও স্বামী জানতে পেরে অচৈতন্য বৌকে তাড়াতাড়ি ঘরে তুলে নিয়ে গেলেন। বৌয়ের জ্ঞান হতে সে ভয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার স্বামীকে সব কথা বলল। তার স্বামী তখন প্রতিবেশীকে গিয়ে ধরল।
সে তাকে বলল, “মাংস সেদ্ধ হল না কেন, চলো তো দেখি কোথা থেকে মাংস এনেছ।” প্রতিবেশী তখন আর কোনো উপায় না দেখে আসল কথা স্বীকার করল। সেদিন ছিল অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি।
বৌ তাড়াতাড়ি মা ষষ্ঠীর পুজো করে মরা বাছুরের ওপর সব ফল, জল ছিটিয়ে দিল আর বাছুরও সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে উঠল।
এই ঘটনা দেখে সকলে বৌয়ের খুব প্রশংসা করতে লাগল। সেই সময় হঠাৎ দৈববাণী হল—“মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন মাছ মাংস খেলে গোমাংস খাওয়া হয়, আর সে পাপের কোনো রকমেই খণ্ডন নেই।
এই ষষ্ঠীর দিনে যে মাছ-মাংসের বদলে মুলোর তরকারী দিয়ে রুটি খাবে তার অক্ষয় পূণ্য সঞ্চয় হবে। সেই থেকে এই ষষ্ঠীর নাম হল “মূলাষষ্ঠী”।
মূলা ষষ্ঠী ব্রতের ফল—এই ব্রত পালন করলে সংসারে ছেলে-মেয়ের কোনো রোগ হয় না,তারা নীরোগ হয়ে সংসারে বাস করে।
নাটাই চণ্ডীর ব্রতএর সঠিক সময় বা কাল—অগ্রহায়ণ মাসে প্রতি রবিবার সন্ধ্যের সময় প্রদীপ জ্বেলে ধূপ-ধুনো দিয়ে ষোড়শোপচারে নাটাই চণ্ডীর পুজো করতে হয়।
সঙ্গে নৌকো ভর্তি সোনা-দানা -” তারপর তিনি সওদাগরের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমার জন্যে একটি সুন্দর টুকটুকে বউ আর তোমার বোনের জন্যে রাজপুত্তুরের মত একটা যেন জামাই নিয়ে আসেন।” গিন্নীর কথামতো তারা সেই বরই চাইল। পরের দিন গিন্নী তাদের বেশ ভাল করে খাইয়ে-দাইয়ে মাঠে পাঠিয়ে দিলেন। তারা মাঠে এসে দেখল যে, গরুগুলো বেশ আনন্দে চরে বেড়াচ্ছে এবং ঘাস খাচ্ছে। এরই মধ্যে সওদাগরও অনেক ধন-সম্পদ আর বউ-জামাই নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। বাড়িতে এসে ছেলে-মেয়েকে দেখতে পেলেন না। স্ত্রীর মুখে শুনলেন যে, গতকাল থেকে তারা বাড়িতে আসেনি। তাদের কোনো খোঁজ-খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।
সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত করার সঠিক সময় বা কাল – আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের যে কোনো মঙ্গলবার এই ব্রত নিতে হয়। দু’জন সধবা স্ত্রীলোকের একসঙ্গে এই ব্রত পালন করার নিয়ম।
সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতে কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান- দূর্বা, আতপচাল, রেশমী কাপড়ের একটা টুক রো, কলাপাতা ও নিরামিষ তরকারী।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের যে কোনো মঙ্গলবার, আটগাছা দুর্বা ও আটটি আতপচাল, একটা রেশমী কাপড়ের টুকরোয় বেঁধে অর্ঘ্যতৈরি করে রাখতে হবে।
তারপর নিজে কুটনো কুটে আর বাটনা বেটে রান্না করবে। দু’জন সধবা স্ত্রীলোককে একসঙ্গে এই ব্রত পালন করতে হয়। দুজনে একসঙ্গেই কুটনো বাটনা করে নিয়ে নিরামিষ তরকারী রান্না করে একসঙ্গে খেতে বসবে।
খাওয়ার শেষে ভাতের সঙ্গে দই মেখে নেওয়া প্রয়োজন। খেতে বসে কোনো কথা বলা চলবে না। এবং বা হাত, দুই হাটুর ভেতর রাখার নিয়ম।
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে দুজনেই দু’জনকে জিজ্ঞাসা করবে, “সঙ্কট থেকে উঠবো কী?” দুজনেই দু’জনকে বলবে, “হ্যাঁ ওঠো।” খাওয়ার পর পাতা জলে ভাসিয়ে দিয়ে, নিজের হাতে এঁটো জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ব্রতকথা–চন্দ্ৰপতি নামে এক সওদাগর উজানীতে বাস করতেন। চন্দ্রপতি সওদাগর একবার বাণিজ্যে বেরিয়ে বহুদিন ধরে বাড়িতে না ফিরে প্রায় নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন।
বাড়িতে তাঁর সতীসাধ্বী স্ত্রী তার স্বামীর কোনো খবর না পাওয়ার দরুণ খুবই চিন্তা ভাবনা আর মনোকষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। সতীর এই মনোকষ্ট দেখে মা ভবানীর তার ওপর দয়া হল।
মা তখন এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে সওদাগরের স্ত্রীর কাছে এসে বললেন, “মা, তুমি এমন মনোকষ্টে দিন কাটাচ্ছো কেন?” সাধ্বী তখন বলল, “মা! আমার স্বামী আজ অনেক দিন থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন, তাঁর কোনো খবরই পাচ্ছি না। অনেক সহ্য করেছি, আর আমি পারছি না।ভাবছি আত্মহত্যা করে এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাবো।”
মা ভবানী বললেন, “আত্মহত্যা করবার দরকার নেই। তুমি এক কাজ কর মা। সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রত কর। এই ব্রত করলে, তোমার স্বামী শিগগিরই বাড়িতে ফিরে আসবেন। আমি ব্রতের সব নিয়ম বলে দিচ্ছি, সেইভাবে তুমি ব্রত কর, তোমার মনস্কামনা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে।”
এই কথা বলে ব্রাহ্মণী ব্রতের সব নিয়ম সাধ্বীকে বলে দিয়ে চলে গেলেন। ব্রাহ্মণীর কথামত সাধ্বী পাড়ারই তার অন্তরঙ্গ একজন সধবাকে ডেকে এনে, একসঙ্গে দু’জনে এই ব্রত করল আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একটা মঙ্গলবারে।
ব্রতের পরে দু’জনে যখন খেতে বসেছে, সেই সময় তার দাসী এসে খবর দিল যে, কর্তা বাড়ি আসছেন।এই কথা শুনে সাধ্বীর আর আনন্দ ধরে না, সে খাওয়া শেষ হবার আগেই তাড়াতাড়ি উঠে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গেল।
ইতিমধ্যে দাসী দেখল যে, ভাত-তরকারী সবই পড়ে আছে। দাসী সেগুলো খেয়ে নিল আর এঁটো তুলে পাতাগুলো জলে ভাসিয়ে দিয়ে কর্তাকে দেখতে গেল।
কর্তা বাড়ি ঢুকেই দাসীকে দেখতে পেলেন এবং তাকেই নিজের স্ত্রী ভেবে সব জিনিসপত্তর, সোনা দানা, তারই হাতে তুলে দিলেন। নিজের স্ত্রীর দিকে ফিরেও চাইলেন না—দাসীকেই স্ত্রী ভেবে নিয়ে তার সঙ্গেই ঘর করতে লাগলেন।
এদিকে তাঁর সাধ্বী স্ত্রীর আবার আগের মত দুরবস্থা হল। সে আবার দুঃখে পড়ে কেঁদে কেঁদে দিন কাটতে লাগল। সাধ্বীর এই রকম অবস্থা দেখে মা ভবানীর আবার দয়া হল।
তিনি সেই বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশে আবার সাধ্বীর কাছে দেখা দিয়ে বললেন, “মা, ব্রতের নিয়ম বলবার সময়ে আমি তো তোমাকে বলেছিলাম যে, খেতে খেতে উঠতে নেই। খাওয়ার শেষে পাতাগুলো জলে ভাসিয়ে দিতে হয়।
কিন্তু তুমি তো সে সব নিয়ম পালন কর নি মা। স্বামী এসেছে শুনে তুমি খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়েছিলে, তাতেই ব্রতের নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। তোমার দুঃখ আমি আর দেখতে পারছি না তাই দেখা দিলাম। তুমি আবার অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবারে ব্রত কর।
ঠিক ঠিক সব নিয়ম পালন করলে তোমার আর মনোকষ্ট থাকবে না—স্বামীকেও ফিরে পাবে।” এই কথা বলে। ব্রাহ্মণী চলে গেলেন। সওদাগরের স্ত্রী ব্রাহ্মণীর কথা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে আবার ব্রত করে সমস্ত নিয়ম ঠিক ভাবে পালন করল।
তার ফলে সে আবার তার স্বামীর ভালবাসা ফিরে পেল এবং বেশ আনন্দের সঙ্গে ঘর করতে লাগল। মা মঙ্গলচণ্ডীর দয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী খুব সুখে দিন কাটাতে লাগল। এইভাবে চারিদিকে সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রতের কথা প্রচার হল। ব্রতের ফল—এই ব্রত পালনের ফলে সমস্ত রকম বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
সেঁজুতি ব্রত কখন করে করা হয় – কার্তিক মাসের সংক্রান্তি অর্থাৎ শেষ দিন থেকে আরম্ভ করে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত প্রত্যেক দিন বিকেলে সেঁজুতি ব্রত বা পুজো করতে হয়। কুমারী মেয়েরাই সেঁজুতি ব্রত করে থাকে।
সেঁজুতি ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান- দূর্বা, মধুপর্কের বাটি, এই বাটির মধ্যে থাকবে— দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি আর চন্দন। সেঁজুতি ব্রত চার বছর পালন করে উদযাপন করতে হয়। উদযাপনের সময় তিনজন ব্রাহ্মণকে পরিতোষ করে ভোজন করিয়ে প্রত্যেক ব্রাহ্মণকে একখানি কাপড়, একখানি চাদর, একটি বাটি আর সাধ্যমত ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিতে হবে।
সেঁজুতি ব্রতের ব্রতকথা—সেঁজুতির ৫২টি ঘর। সেঁজুতির পুজোয় খুব বেশী পরিমাণে দূর্বার দরকার হয়। এর প্রত্যেক ঘরে দূর্বা দিয়ে (পরে লেখা) মন্ত্র বলে পুজো করতে হবে। বাড়ির উঠোনে,’ ছাতে বা দালানে পিটুলি দিয়ে সেঁজুতির প্রত্যেকটি ছবি আঁকতে হবে। মাঝখানে গোল করে একে, তার ওপর ঘট বসাতে হয়।
শিবের চারদিকে থাকবে ১৬টি ঘর। (১) জলভরা ঘট আর ঘটের পাশে একটি প্রদীপ জ্বালাতে হবে। (২) ষোলো ঘর ও শিব, (৩) দোলা,(8) কড়া, (৫) বেগুন পাতা, (৬) শরগাছ, (৭) বেনাগাছ, (৮) বাশের কোড়া, (৯) -যমুনা, (১০) সুপুরি গাছ, (১১) চন্দ্র-সূর্য, (১২) হাট-ঘাট, (১৩) গোয়াল, (১৪) অশ্বত্থ গাছ, (১৫) বঁটি, (১৬) খ্যাংরা,
(১৭) শিবমন্দির, (১৮) লতাপাতা, (১১) নাটমন্দির, (২০) পাকা পান, (২১) ত্রিকোণা প্রদীপ, (২২) হাতে ছেলে, কাঁখে ছেলে, (২৩) ঢেঁকি, (২৪) খাট-পালঙ্ক, (২৫) ধাতা কাতা, (২৬) আম-কাঁঠালের পিঁড়ি, (২৭) যি ও চন্দনের বাটি, (২৮) গহনা, (২৯) রান্নাঘর, (৩০) ঢেঁকি কর্কটি, (৩১) আয়না (৩২) উদ্বিড়ালী, (৩৩) বেড়ি, (৩৪) হাতা, (৩৫) পাখী,
(৩৬) কুলগাছ, (৩৭) কাজললতা, (৩৮) নক্ষত্র, (৩১) সিঁদুর চুপড়ি, (৪০) পানের বাটা, (৪১) শাখ, (৪২) ময়না, (৪৩) দশপুতুল, (৪৪) পাখী, (৪৫) ইন্দ্ৰ, (৪৬) তেরাজ, (৪৭) খট্টা ডুমুর, (৪৮) ধানের মরাই, (৪৯) তালগাছ, (৫০) থুথু -ফেলা, (৫১) থৌ, (৫২) কুঁচ কুঁচতি।
(১) জলের ঘট ও প্রদীপে
হাত দিয়ে-
সাজন পূজন সেঁজুতি।
ষোলো ঘরে ষোলো ব্ৰতী
তার এক ঘরে আমি ব্রতী:
ব্রতী হয়ে মাগি বর ।
ধনে-পুত্রে বাড়ুক বাপ-মার ঘর ॥
(২) ষোলো ঘর ও শিবে
হাত দিয়ে—
হে হর শঙ্কর দিনকর নাথ।
কখনো না পড়ি মূর্খের হাত ।
(৩) দোলায় হাত দিয়ে
দোলায় আসি দোলায় যাই ।
সোনার দর্পণে মুখ চাই ॥
বাপের বাড়ির দোলাখানি।
শ্বশুরবাড়ি যায় ।
আসতে যেতে দোলাখানি
ঘৃত মধু খায় ॥
(৪) কোঁড়ায় হাত দিয়ে—
কোঁড়ার মাথায় ঢালি মৌ।
আমি যেন হই রাজার বউ ।
কোঁড়ার মাথায় ঢালি ঘি।
আমি যেন হই রাজার ঝি।।
কোঁড়ার মাথায় ঢালি চিনি।
আমি হেন হই রাজ-ঘরণী ॥
(৫) বেগুন পাতায় হাত দিয়ে—
বেগুন পাতা ঢোলা ঢোলা ।
মায়ের কোলে সোনার ডেলা ॥
হেন মা পুত বিওলি।
শুভক্ষণে রাত পোহালি।।
(৬) শরগাছে হাত দিয়ে—
শর শর শর
আমার ভাই গায়ের বর
বর বর ডাক পড়ে।
গুয়াগাছে গুয়া ফলে ॥
আমার ভাই চিবিয়ে ফ্যালে ।
অন্যের ভাই কুড়িয়ে গেলে ॥
(৭) বেনাগাছ-
বেনা বেনা বেনা
আমার ভাই গাঁয়ের সোনা ।
সোনা সোনা ডাক পাড়ে।
গা গুচি গুয়া পড়ে ৷
আমার ভাই চিবিয়ে ফ্যালে।
অন্যের ভাই কুড়িয়ে খেলে।।
(৮) বাঁশের কোঁড়া
বাঁশের কোঁড়া, রূপের ঝোড়া ।
বাপ রাজা, ভাই চড়ে ঘোড়া ॥
(৯) গঙ্গা-যমুনায় হাত দিয়ে—
গঙ্গা-যমুনা পুজন।
সোনার থালে ভোজন ॥
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড়ু॥
(১০) গুয়াগাছে হাত দিয়ে—
গুয়াগাছ গুয়াগাছ
মূলটি ধরে মজা ।
বাপ হয়েছেন দিল্লীশ্বর,
ভাই হয়েছেন রাজা ॥
(১১) চন্দ্র-সূর্যে হাত দিয়ে—
চন্দ্ৰ-সূর্য পূজন
সোনার থালে ভোজন ॥
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড়ু ॥
(১২) হাট-ঘাটে হাত দিয়ে—
হাটে-ঘাটে পূজন
সোনার থালে ভোজন ৷।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু ।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড় ॥
(১৩) গোয়ালে হাত দিয়ে-
গোয়াল ঘর পূজন
সোনার থালে ভোজন ॥
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড় ॥
(১৪) অশ্বত্থ গাছে হাত দিয়ে
অশ্বত্থ তলায় বাস করি।
সতীনের ঝাড় বিনাশ করি ॥
সাত সতীনের সাত কৌটা।
তার মাঝে আমার সোনার ॥
কৌটা
সোনার কৌটা নাড়ি চাড়ি ।
সাত সতীনকে পুড়িয়ে মারি ॥
(১৫) বঁটিতে হাত দিয়ে—
বঁটি বঁটি বঁটি,
সতীনের শ্রাদ্ধে কুটনো কুটি ।
(১৬) খ্যাংরায় হাত দিয়ে—
খ্যাংরা খ্যাংরা খ্যাংরা,
সতীদাকে খ্যাংরে করবো দেশ ছাড়া।
(১৭) শিবমন্দিরে হাত দিয়ে—
হে হর মাগি বর
স্বামী হোক রাজ্যেশ্বর ॥
সতীন হোক দাসী ।
বছর বছর একবার করে
বাপের বাড়ি আসি ॥
(১৮) লতাপাতায় হাত দিয়ে—
লতাপাতা কুলদেবতা ।
সিঁথেয় সিঁদূর পায়ে আলতা।।
(১৯) নাটমন্দিরে হাত দিয়ে—
নাটমন্দির বাড়ি জোড়া।
দোরে হাতি বাইরে ঘোড়া ।।
দাস-দাসী, গো-মহিষী ॥
রূপ যৌবন রাশি রাশি।।
সরুধানে সাত পুতে।
জন্ম কাটুক মোর এয়োস্ত্রীতে ।
(২০) পাকা পানে হাত দিয়ে-
পাকা পান মর্তমান।
আমার স্বামী নারায়ণ ॥
যদি পান পাসুরে ।
তবে দিব সুমূর ॥
(২১) প্রদীপে হাত দিয়ে –
ত্রিকোণা প্রদীপ চৌকোণা
আলো।
অমুক দেবী ব্রত করে জগতের
আলো |
(২২) হাতে ছেলে, কাখে ছেলে-
হাতে পো কাঁখে পো ।
পৃথিবীতে আমার যেন না পড়ে লো ॥
(২৩) ঢেঁকিতে হাত দিয়ে-
ঢেঁকি পড়ন্ত, গাই বিয়স্ত,উনুন জ্বলন্ত ।
কালো ধানে রাঙ্গা পুতে।
জন্ম যেন যায় এয়োস্ত্ৰীতে।।
(২৪) খাট-পালঙ্কে হাত দিয়ে-
খাট পালঙ্ক, লেপ, দোলঙ্গ ।
গির্দ্দে আশে-পাশে ॥
রূপ যৌবন সদাই সুখী।
সোয়ামী ভালবাসে ৷।
পাড়াপড়শী প্রতিবেশী ।
মধু বর্ষে মুখে ।
জন্ম এয়োস্ত্রী পুত্রবর্তী
জন্ম যায় সুখে।।
(২৫) ধাতা কাতায় হাত দিয়ে-
যাতা কাতা বিধাতা
তুমি দাও এই বর।
আমার স্বামী হন যেন
রাজ্যেশ্বর।
(২৬) আম-কাঁঠালের পিড়িতে
হাত দিয়ে—
আম-কাঁঠালের পিড়িখানি
ঘি চপ্ চপ্ করে।
আমার ভাই রাজ্যেশ্বর
সেই বসতে পারে ॥
(২৭) ঘি ও চন্দন বাটিতে
হাত দিয়ে—
ঘি চন্দন দিয়ে পূজি গো হরিষে ।
বেনারসী শাড়ী পরি যেন
রাত্রিবাসে ।
(২৮) গহনায় হাত দিয়ে-
পিটুলিতে আঁকা যে গহনা তার
ওপর দুর্বা দিয়ে পুজো
করবে, সেই গহনার প্রত্যেকটির
নাম বলে মন্ত্র বলবে—যেমন—
আমি দিই পিটুলির বালা।।
আমার হোক সোনার বাসা ।
আমি দিই পিটুলির নথ।
আমার হোক সোনার নথ ॥
(২৯) রান্নাঘরে হাত দিয়ে-
রান্নাঘর পূজন ।
সোনার থালে ভোজন ॥
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু ।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।।
(৩০) ঢেঁকি কর্কটিতে হাত-
ঢেঁকিলো লো কর্কটি
তোর সো হাটে ঘাটে ।
আমার সো সুবর্ণের খাটে।।
(৩১) আয়নায় হাত দিয়ে—
আয়না আয়না, সতীন যেন হয়
না ।
যদি সতীন হয়, মরে যেন যায় ।।
(৩২) উদবিড়ালীতে হাত দিয়ে—
উদ্বেড়ালী খুদ খা।
স্বামী রেখে সতীন খা।।
(৩৩) বেড়িতে হাত দিয়ে—
বেড়ি, বেড়ি, বেড়ি ৷
সতীন বেটী চেড়ী ॥
(৩৪) হাতায় হাত দিয়ে—
হাতা হাতা হাতা।
খা সতীনের মাথা।।
(৩৫) পাখীর গায়ে হাত দিয়ে-
পাখী পাখী পাখী ।
সতীনকে ঘাটে নিয়ে যায়।
তেতালায় বসে দেখি।।
(৩৬) কুলগাছে হাত দিয়ে-
কুলগাছটি ঝেঁকড়ী ।
সতীন বেটী খেঁকড়ী।।
(৩৭) কালজলতায় হাত দিয়ে—
কাজললতা কাজললতা
বাসরঘর ।
আমার যেন হয় একটি সুন্দর
বর।
(৩৮) নক্ষত্রে হাত দিয়ে –
যতগুলি নক্ষত্র ততগুলি ভাই।
বাসোয়া পুজো করে ঘরে
চলে যাই।
(৩৯) সিঁদূর চুপড়িতে হাত দিয়ে—
সিঁদূর চুপড়ি পূজন ।
সোনার থালে ভোজন।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু ।
শাঁখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।
(৪০) পানের বাটায় হাত দিয়ে—
পানের বাটা পূজন।
সোনার থালে ভোজন ।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাঁখার আগে সোনার খাড়ু॥
(৪১) শাঁখে হাত দিয়ে
শাখ সেওল গাঙ নেওল।
বাপ রাজা ভাই বাদশা।।
(৪২) ময়নায় হাত দিয়ে—
ময়না ময়না ময়না ।
সতীন যেন হয় না ।।
(৪৩) দশ পুতুলে হাত দিয়ে –
এক একটি পুতুলে একটি করে
দুর্বা দিয়ে বলতে হবে—
(১) এবার মরে মানুষ হব ।
রামের মত পতি পাব।।
(২) এবার মরে মানুষ হব।
লক্ষ্মণের মত দেওর পাব ।
(৩) এবার মরে মানুষ হব।
দশরথের মত শ্বশুর পাব ।
(৪) এবার মরে মানুষ হব।
কৌশল্যার মত শাশুড়ী পাব।
(৫) এবার মরে মানুষ হব ।
সীতার মত সতী হব ।
(৬) এবার মরে মানুষ হব।
কুম্ভীর মত পুত্রবর্তী হব।
(৭))এবার মরে মানুষ হব।
দ্রৌপদীর মত রাধুনি হব।
(৮) এবার মরে মানুষ হব।
পৃথিবীর মত ধীর হব।
(৯) এবার মরে মানুষ হব।
দুর্গার মত সোহাগী হব।
(১০)এবার মরে মানুষ হব।
যটির মত জেওজ হব।
(৪৪) পাখীতে হাত দিয়ে—
সো পাখী সো পাখী।
আমি যেন হই জন্মমুখী।
(৪৫) ইন্দ্ৰেতে হাত দিয়ে –
ইন্দ্র পুঁজি জোড় করে।
সাত ভাইয়ের বোন হয়ে ।
আলো ধানে রাঙা পূতে।
জন্ম যায় যেন এয়োস্ত্রীতে ।
(৪৬) তেরাজে হাত দিয়ে-
তেরাজ ভেজন তিন কুলে
শ্বশুর-স্বামী, পিতার কুলে।
এক তেরাজ বাপ-মার
এক তেরাজ শ্বশুর-শাশুড়ীর
অন্য তেরাজ আমার স্বামীর।।
(৪৭) খট্টা ডুমুরে হাত দিয়ে—
খট্টা ডুমুর মত মাজাখানি।
হই যেন স্বামী সোহাগিনী।
হিংসেয় মরে সতীন কালি।
দিন রাত পড়ুক চোখে পানি।।
(৪৮) ধানের মরায়ে হাত দিয়ে—
আমার যেন হয় সাত গোলা।
আমি দিই পিটুলির গোলা।
(৪৯) তালগাছে হাত দিয়ে—
তালগাছেতে খাবুই বাসা।
সতীন মরুক দেখতে খাসা।
(৫০) থুথু ফেলা (থুথু ফেলা) –
থুতকুড়ি থুতকুড়ি।
সতীন বেটি আঁটকুড়ি ।
(৫১) থৌতে হাত দিয়ে –
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম মৌ।
আমি যেন হই রাজার বউ।।
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম ঘি।
আমি যেন হই রাজার ঝি।।
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম চিনি।
আমি যেন হই রাজার রাণী।।
দেওয়া দূর্বাগুলো নিম্নমন্ত্র
বলে
কুড়িয়ে নিতে হবে ।
অরুণ ঠাকুর বরণে
ফুল ফুটেছে চরণে
যখন ঠাকুরের আজ্ঞা পাই।
ফুল কুড়িয়ে ঘরে যাই ॥
ওই দূর্বাগুলো শেষ সেঁজুতি
কুঁচ কুঁচুতির ওপর চাপিয়ে “মন চলে
যা” মন্ত্র বলে দূর্বা দিয়ে ঘষবে
(৫২) কুঁচ কুঁচুতি—
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।
মোহর এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কনরে কুঁচুই এতক্ষণ।
টাকা এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা ।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।
ধান এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা ।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।
চাল এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা
এরপর পৌষ মাসের জন্য দূর্বাগুলো
ভাল করে রেখে দিতে হবে
সেঁজুতি প্রণাম মন্ত্র
সাঁজ সেঁজুতি করি নতি।
আমার হোক ধর্মে মতি ।।
এই বলে প্রণাম করতে হবে।
সেঁজুতি ব্রতের ফল—কুমারী মেয়েরা এই ব্রত পালন করলে তাদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে থাকে।
অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার এই পুজো করে অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন পুকুর, নদী বা গঙ্গায় ইতু বিসর্জন দিতে হয়। কুমারী ও সধবা সকলেই এই ব্রত করতে পারে।
সিঁদূর, ফুল, দূর্বা, বেলপাতা, তিল হরিতকী, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সেঁয়াকুল এবং ফল। কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন, একটি বেশ পরিষ্কার সরার মাঝখানে ঘট বসিয়ে তার চারিদিকে ধান, হলুদ, মান ও কচু গাছ একটা করে বসাতে হবে।
এই সঙ্গে মটর, সরষে, শুষনী, কলমী আর পাঁচটি ছোট বটের ডাল দিতে হয়। পুজোর শেষে নীচে লেখা মন্ত্র বলে ঘটে প্রণাম করার নিয়ম।
মন্ত্র –
অষ্ট চাল অষ্ট দূর্বা কলস্ পাত্রে থুয়ে।
শুন একমনে ইতুর কথা সবে প্রাণ ভরে ॥
ইতু দেন বর।
ধন-ধান্যে, পুত্র-পৌত্রে বাড়ুক তাদের ঘর ॥
কাঠি-কুটি কুড়াতে গেলাম ইতুর কথা শুনে এলাম ।
এ কথা শুনলে কী হয়। নির্ধনের ধন হয়।
অপুত্রের পুত্র হয়।অশরণের শরণ হয়।
অন্ধের চক্ষু হয়, আইবুড়োর বিয়ে হয়, অন্তিম কালে স্বর্গে যায়।।
অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার এই পুজো করে অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন পুকুর, নদী বা গঙ্গায় ইতু বিসর্জন দিতে হয়। যে কোনো একজন উপোসী থেকে ইতুর কথা শুনবে। একজন কথা বলবে অপর জন কথা শুনবে।
ইতুপূজা ব্রতকথা—এক রাজ্যে এক খুব গরীব বামুন -বামনী বাস করত। তাদের উমনো আর ঝুমনো নামে দু’টি মেয়ে ছিল। একদিন বামুনের খুব পিঠে খাবার ইচ্ছে হওয়ায় সে সব জিনিস যোগাড় করে নিয়ে এল,
বামনী রাত্তির বেলায় পিঠে করতে লাগল আর বামুন রান্নাঘরের পেছনে চুপ করে বসে পিঠে গুণতে লাগল। এরপর বামুনকে খেতে বসিয়ে বামনী যখন পরিবেশন করছে তখন বামুন বলল, “দু’খানা পিঠে কম হল কেন?” বামনী বলল যে, সে তার মেয়ে দু’টিকে দু’খানা পিঠে দিয়েছে।
এই কথা শুনে বামন খুবই রেগে গেল কিন্তু কিছু বলল না। এরপর একদিন সকাল বেলা বামুন বাসনীকে বলল, আজ উম্নো-ঝুম্নোকে ওদের পিসির বাড়ি রেখে আসব। পিসির বাড়ি থাকলে দুটো খেতেও পাবে আর পরে ওখান থেকেই ওদের বে-ধারও ব্যবস্থা হতে পারবে।
আমার বোনের অবস্থা তো খুব ভাল—আমিই এতদিন অভিমান করে যাইনি। বামনী খুশী না হলেও মুখে কিছুই বলতে পারলো না।
বামুন উম্নো-ঝুম্নোকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হল। অনেকখানি হাঁটার পর বেলা প্রায় দুপুরে বামুন মেয়ে দু’টিকে নিয়ে একটা বনের মধ্যে ঢুকলো।
মেয়ে দু’টি খিদে-তেষ্টায় খুবই কাতর হয়ে পড়েছিল, তারা আর বসে থাকতে পারল না, একটি বটগাছের ছায়ায় তাদের বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।
বামুন এইটাই চাইছিল, সুযোগ দেখে সে ইটের ওপর মেয়ে দু’টির মাথা রেখে চুপি চুপি পালিয়ে গেল। যাবার সময় কয়েকটি শামুক ও গুলি ভেঙ্গে তাতে আলতা মাখিয়ে ছড়িয়ে রেখে গেল।
মেয়ে দু’টির ঘুম ভাঙ্গতে দেখল যে—তাদের বাবা সেখানেই নেই আর চারিদিকে খানিক রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। উমনো তখন ঝুমনোকে বলল, “বাবাকে বোধহয় বাঘে খেয়েছে।” ঝুম্নো বলল, “না না, আমরা যে দু’খানা পিঠে লুকিয়ে খেয়েছিলুলম, তাই বাবা রাগ করে আমাদের পিসির বাড়ি রেখে আসার নাম করে বনে ফেলে চলে গেছে। পিসি বলতে কোনো কালেই আমাদের কেউ নেই।”
এই ভয়ানক, বনের মধ্যে তাদের খুব ভয় করতে লাগল। দু’জনেই চোখের জলে ভাসতে লাগল— কোথায় বা তারা যাবে, তাও ঠিক করতে পারল না। এমন সময় দূরে বাঘের গর্জন শোনা গেল।
বাঘের গর্জন শুনে তার ভয়ে আর আড়ষ্ট হয়ে উঠল , এবার বুঝি তাদের বাঘের পেতে যেতে হবে! তারা তখন ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, এমন সময় উমনো বলে উঠল, ” ঝুমনো দি , ঐ দূরে একটি খুব বড় বটগাছ দেখা যাচ্ছে, চলো আমরা ওখানেই আশ্রয় নিই।”
উমনোর কথা শুনে দুজনে ছুটে গেল সেই বট গাছের কাছে। দুজনেই বট গাছের সামনে হাত জোর করে বলল, “বাবা বতরূপী নারায়ণ, আমরা ভয়ানক বিপদে পড়েছি, ঐ শোনো দূরে বাঘের গর্জন – বাঘটা এসে এখুনি আমাদের খেয়ে ফেলবে – তুমি আমাদের আশ্রয় দিয়ে বাচাও।”
উমনো-ঝুমনোর এই কাতর কথা শুনে বট গাছটি তখন দু ফাঁক হয়ে গেল, উমনো ঝুমনো তার সেই কোটরের মধ্যে ঢুকে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে কোটরটা বন্ধ হয়ে গেল।
বাঘটা কাছে এসে মানুষের গন্ধ পেয়ে চারপাশে খানিকটা ঘোরাঘুরি করে সেখান থেকে চলে গেল। বাঘটা চলে যেতেই বটগাছটি আবার দু ফাঁক হয়ে গেল আর উমনো ঝুমনো কোটরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল।
এখন তার কি করবে কোথায় যাবে কি করবে ভাবতে ভাবতে জঙ্গলের মধ্যে চলতে লাগলো। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর তার জনবস্তি দেখতে পেল। বন তখন তার পেরিয়ে এসেছে। তার একটু দূরে দেখল যে তাদের বয়সী কয়েকজন মেয়ে একটা পুকুরের পারে ঘট বসিয়ে কি সব পূজা করছে।
উমনো ঝুমন তাদের কাছে দাঁড়াতেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুজোর ঘট গুলি সব উল্টে পড়ে গেল। সেই মেযেগুলো তখন খুব রেগে গিয়ে বলল ” কথা থেকে অলক্ষ্মী তোমরা এলে যে – আমাদের ইতু পূজার ঘট গুলি সব উল্টে পাল্টে গেল।”
উমনো – ঝুমনো তখন খুব কাঁদতে কাঁদতে তাদের দুখের কথা গুলো সেই সব মেদের কাছে বলতে লাগলো। সব কথা দুই বোনের কাছ থেকে সোনার পর মেয়ে গুলোর তাদের প্রতি দয়া হল।
তখন তারা বলল উমনো ঝুমনো কে বলল, “তোমাদের কোন ভয় নেই, কাঁদতে ও হবেনা তোমরা আমাদের মত ইতু পূজা করো তাহলে তোমাদের আর কোন দুখ থাকবেন।
যাও এখন তোমরা ঐ পুকুর থেকে স্নান করে এসো।” সেই মেয়েদের কথা মত উমনো ঝুমনো যেই পুকুরে নেমেছে অমনি পুকুরের সব জল শুকিয়ে গেল ও পুকুরের মাছ গুলো ছটফট করে লাফাতে লাগলো।
উমনো ঝুমনো এই ব্যাপার দেখে কাঁদতে কাঁদতে আবার মেয়ে গুলর কাছে ফিরে এসে সব কথা বলল। মেয়েরা বলল এই নও ঘটের দুর্ববা দিচ্ছি, নিয়ে পুকুরে গিয়ে ফেলো।”
ওদের কথা মত উমনো ,ঝুমনো দুর্ববা গুলি নিয়ে পুকুরে গিয়ে ফেলতেই আবার পুকুর জলে ভরে গেল।
তখন তারা দুজনে পুকুর থেকে স্নান করে এল । স্নান করে ফিরে এসে মেয়ে দুটি তাদের ঘট আর দূর্বা দিয়ে ইতু পূজা সম্পূর্ণ করল । পুজোর পর দুই মেয়ে বলল ,”এই বার ইতুর কাছে বর চেয়ে নাও ।’
উমনো -ঝুমনো তখন ইতুর কাছে বর চাইল -”ইতু দেবি !এই বর দাও ,যাতে আমাদের বাবা -মায়ের দুখ দূর হয় ,আর ঘর ভর্তি সোনা -দানা ও টাকা -কড়ি হয়। ”তারপর মেয়ে দুটি বলল ,”এইবার তোমরা খুব ভক্তি করে ঘট নিয়ে বাড়ির দিকে যাও ।” তখন ঘট নিয়ে উমনো -ঝুমনো বাড়ির দিকে চলে গেল । ইতু দেবিই তাদের পথ দেখিয়ে দিলেন ।
এ দিকে উমনো -ঝুমনোর বাবা- মা ইতুর বরে রাজার মত ধনবান হল । দুই বোন ক্রমে ঘট হাতে করে বাড়িতে এসে পছল । তাদের বাবা -মা ভেবেছিল যে ,এতদিন মেয়ে দুটিকে অবশই বাঘে খেয়ে ফেলেছে ।
আর ওদের আপদ দূর হয়েছে । এমনি সময় হঠাৎ উমনো ঝুমনোকে বাড়ি ফিরতে দেখে তাদের বাবা অবাক হয়ে বলল ,”তোরা এতদিন বেঁচেছিলি ?কোথা থেকে ফিরে এলি এখন ?মরিস নি তোরা ?”
উমনো বলল, ”বাবা !আমরা যদি মরতুম তাহলে আজ তোমরা এত বড় লোক হতে পড়তে না । আমরাই ইতু পুজো করে মা কে সন্তষ্ট করে তোমার রাজ্য হওয়ার বর চেয়েছিলুম -তাই তুমি আজ এত বড় লোক হতে পেরেছো । ”
তখন তাদের বাবা মা তাদের আদর করে ঘরে নিয়ে গেল । বমনীও তাদের কথা শুনে ইতু পূজা আরম্ভ করল । বছর কয়েক পরে বামন – বামনীর সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নিল ।
তখন তাদের আনন্দ আর ধরেনা । ধন , ঐশ্বর্য ও ছেলে পেয়ে , মেয়ে দের নিয়ে তারা মনের সুখে ঘর সংসার করতে লাগল ।
এই ভাবে কিছুদিন কেটে যাবার পর একদিন এক রাজপুত্র কোটাল পুত্র দুই বন্ধু মিলে অনেক লোকজন সঙ্গে নিয়ে বামুনের বাড়িতে এসে হাজির হল । বেলা তখন দুপুর ,তাঁরা তখন খিদে তেষ্টায় অস্থির ।
রাজপুত্র এসে সামনে উমনো কে দেখে বললেন “আমাদের খুব তেষ্টা পেয়েছে, আমাদের একটু জল খাওয়াতে পর ?” উমনো তক্ষুনি ছুটে গিয়ে একটা ছোট্ট ভাঁড়ে করে জল এনে দিল।
এক ভাঁড় জল খেয়ে রাজপুত্রের খুব ভয়ানক রাগ হল, কিন্তু কি আর করবেন, ভাবলেন যেটুকু জল পাওয়া গেছে, সেই টুকুই এখন খেয়ে নেওয়া যাক। এইভেবে রাজপুত্র ভাঁড় টি মুখে তুলে জল খেতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য, যত জল ক্ষণ ভাঁড়ের জল আর কিছুতেই ফুরায় না।
তখন তিনি তার লোক লস্কর সকলকে সেই ভাঁড়ের জল খেরতে দিলেন, তারাও রান ভরে জল ,খেল তবুও ভাঁড়তের জল যেমন ছিল তেমনি রইল। তখন সকলে উমনোকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো।
রাজপুত্র উমনোকে বললেন তার বাবাকে ডেকে আনতে। ,উমনো গিয়ে বামুন কে ডেকে আনলো।
রাজপুত্র বামুনকে বললেন “আপনার মেয়েটি বড় ভাল আমি মদ্র দেশের যুবরাজ, যদি আনার কোনোম আপত্তি না থাকে তাহলে আমি আনার এই মেয়েটি কে বিয়ে করতে চাই।”
বামুন তখন বললেন , ” আপত্তি আমার কিছু নেই তবে আমার আর একটি মেয়ে আছে, তারও এখন বিয়ে হয়নি।” যুবরাজ বললেন ” আমার সঙ্গে আছে কোটাল পুত্র আমার বন্ধু। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের দুইজনকে দুই মেয়ে দান করতে পারেন।”
বামুন দেখে চমত্কার সুযোগ সে আর দেরি করলনা, গধূলি লগ্নে উমনোর সঙ্গে যুবরাজের আর কোটাল পুত্রের সঙ্গে ঝুমনোর বিয়ে দিয়ে দিল। অরের দিন উমনো ঝুমনো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় বামনী বললেন “তোরা কি খেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবি” উমনো বলল
“আমি এখন রাজার রানী দাদ খনি চলের ভাত আর মাগুর ম্যাচের ঝোল ভাত করে রেঁধে দাও, আমি তাই খেয়ে পান চিবুতে চিবুতে হাতির পিঠে বসে শ্বশুর বাড়িতে যাব। আর ঝুমনো বলল “আজ অগ্রহায়ন মাসের রবিবার, ফলমূল নিরামিষ খেয়ে ইতুর ঘট মাথায় নিয়ে আমি হাতির পিঠে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাব।”
শেষ পর্যন্ত দুই বোনের খাওয়ার দুইরকম ব্যবস্থা হল। তারা খেয়ে দিয়ে যে যার স্বামীর সঙ্গে হাতির পিঠে চড়ে শ্বশুর বাড়িতে রওনা হল।
উমনো যে পথ দিয়ে যেতে লাগলো সেখানে তাদের সামনে পড়ল গৃহ দাহ, মড়ক, দুর্ভিক্ষ ও যত সব অমঙ্গলের চিহ্ন। আর ঝুমনো যে পথ দিয়ে যেতে লাগলো দেখতে পেল বিয়ে, সভা সমিতি, অন্ন প্রাশন ও অন্যান্য পূজা পার্বণ।
এইভাবে উমনো যবরাজের সঙ্গে রাজার বাড়িতে এসে হাজির হল। রনি মা ওদের আসবার খবর বয্ব বউ বরণ করতে এলেন। কিন্তু বউ যেমনি হাতি থেকে নামলো তেমনি রাজার বাড়ির সিংহ দরজা তা হুড়মুর করে ভেঙে পড়ল,
যুবরাজের মা অনেক বোকা ঝক করে বোউকে ঘরে তুললেন। এইদিকে কোটাল পুত্রের মা বউ বরণ করতে এসে দেখলেন তাদের বাড়ির লোহার গরদ গুলো সব সোনার হয়ে গেছে। কোটাল পুত্রের মা বোউকে কোলে করে আদর করে ঘরে তুললেন।
উমনো রাহবাড়িতে আসার পর মদ্র যুবরাজের ধন ঐশ্বর্য বিষয় সম্পত্তি সব ক্রমে ক্রমে কোথায় চলে গেল। যুবরাজ একেবারে ভিখারী হয়ে পড়লেন। আর ঝুমনো কোটলের বাড়িতে আসার পর থেকে কোটলের বাড়ি ধন এশ্বর্য পরিপূর্ণ হয়ে সংসার
একেবারে উতলে পড়তে লাগলো, সারা দেশে প্রচার হয়ে গেল যে কোটাল পুত্র এক খুবই সুলক্ষণ যুক্ত মেয়ে বিয়ে কে এনেছে। তাদের এখন সব দিকে বার্বারন্ত।
মদ্র যুবরাজ উমনোকে অলক্ষী ভেবে নিয়ে তার উপর খুবই চোটে গেলেন, উমনো তার সামনে এলে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে লাগলেন। শেষ একদিন ঘাতক ডেকে বললেন এই দণ্ডেই উমনোকে কেটে তার রক্ত এনে ম আমাকে দেখাও।
ঘাতক যুবরাজের হুকুমে উমনোকে মশানে নিয়ে গিয়ে ছেড়েদিল, আর একটা শিয়ালকে কেটে এনে তার রক্ত যুবরাজে কে দেখাল। উমনো তখন ঝুমনোর কাছে গিয়ে সবটাই খুলে বলল।
মায়ের পেটের বোনের এই রকম দুর্গতির কথা শুনে ঝুমনো কাউকে জানতে না দিয়ে তার বনে তার বাড়িতে লুকিয়ে রাখল। এমন কি তার স্বামী কোটাল পুত্র ও জানতে পারলেন না ঝুমনো বুঝল যে তার বোন ইতুর অসম্মান করেছে তাই সে আজ এই বিপদে পড়েছে।
তখন থেকে ঝুমনো আবার উমনোকে নিয়ে ঠিক নিয়ম মত ইতু পুজো করতে লাগলো। শেষে ইতু দেবী আবার উমনোর উপর সন্তুষ্ট হলেন। সঙ্গে সঙ্গে যুবরাজের দিন দিন বার্বারন্ত হতে লাগলো।
যুবরাজ একদিন স্বপ্নে দেখলেন যে, এক দেবী তাকে বলছেন “এখুনি উমনো রানীকে খুঁজে বাড়িতে না নিয়ে এলে তর সর্বনাশ হয়ে যাবে”। মদ্র যুবরাজ স্বপ্ন দেখার পর থেকে খু বই চিন্তায় পড়লেন।
তিনি তো জানতেন যে ঘাতক উমনকে কেটে ফেলেছে। শেষে যুবরাজ কোটাল পুত্রকে ডেকে এনে স্বপ্নের কথা জানালেন। কোটাল পুত্র তখন ঘাতক কে ডেকে উমনোর কথা শুনলেন এবং খুব ভাবতে ভাবতে বাড়ি তে চলে গেলেন।
কোটাল পুত্র উমনো আর যুবরাজ এর জন্য খুব দুঃখ করতে লাগলেন। ঝুমনো স্বামীর এই রকম চিন্তার কারণ জিজ্ঞেস করে উমনোর ব্যাপারে জানতে পারল।
তখন সে তার স্বামী কে বলল ” মা ইতুদেবির আশীর্বাদে যুবরাজ আবার উমনকে ফিরে পেতে পারেন যদি আমার কথা মত কাজ করেন। তুমি যুবরাজকে বল যে আমাদের বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত কলাগাছ পুঁতে
তাঁবু ফেলে যদি কড়ির জাঙ্গাল দিয়ে দিতে পাড়েন তাহলে আবার উমনকে ফিরে পেতে পারেন।” কোটাল যুবরাজকে সেই কথা বলল। যুবরাজ উমনকে পাওয়ার আশায় সমস্ত ব্যবস্থাই করে দিলেন।
ঝুমনো তখন উমনকে রাণীর সাজে সাজিয়ে তাঁবুর মধ্যে দিয়ে রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দিল। উমনোর চলার ওঠে দুর্বার শিকড় পড়েছিল সেই দুর্বার শিকড়ে লেগে উমনোর প কেটে গেল।
যুবরাজ এটাতে খুবই রেগে গিয়ে হুকুম দিলে এই দণ্ডে আঠারো হাঁড়ির মাথা আর তাদের বুড়ি মাযের চোখ দুটো উপরে অন হক। যুবরাজের বলার সঙ্গে সঙ্গেই হুকুম মত কাজ করো হল।
যুবরাজ উমনকে নিয়ে রাজবাড়িতে ঢুকলেন। তারপর অগ্রহায়ন মাসে উমনো ইতুপুজো করল কিন্তু ইতুর কথা সুনবর মত রাজবাড়িতে কোন স্ত্রীলোক পেলনা।
উমনো তখন যুবরাজকে বলল য়ে একজন উপসি স্ত্রীলোক চাই, যে ইতুর কথা সংবে। যুবরাজ তখনই লোক পাঠালেন, রাজ্যের মধ্যে যে স্ত্রীলোক উপসি আছে টেক রাজবাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।
রাজবাড়ির লোক ছুটল চারিদিকে কিন্তু রাজ্যে কোন উপসি মেয়ে পেল না। শেষে তার সেই বুড়ি হাঁড়িনীকে জেনে ধরে আনলো। সে কিছুতেই অসবেনা-সে বলতে লাগলো “ঐ অলক্ষ্মী রাক্ষসীর জন্য আমার আঠারো ছেলের মাথা গেল আর আমি অন্ধ হয়ে গেলুম-আমি কিছুতেই সেখানে যাবনা।”
যায় হক রাজবাড়ির লোকের তাকে জোর ধরে আনলো। সে উমনোর কাছে আসতেই উমনো তাকে বলল “বুড়িমা, তোমার কোন ভয় নেই, তুমি আমার ইতুর কথা শোনো, আবার তোমার সব হবে।”
বুড়ি তখন তার আঠারো ছেলের আর তার চোখ ফিরে পাওয়ার জন্য বর চাইল। মা ইতু লক্ষ্মীর আশীর্বাদে তাই হল। বুড়ি তার আঠারো ছেলেকে আর নিজের চোখ ফিরে পেল। এরপর হাঁড়িনী চারিদিকে বলে বেড়াতে লাগলো যে
রাণী মা উমনোর ইতু লক্ষ্মী পুজোর কথা শুনে সে আবার তার সব ফিরে পেয়েছে। তখন থেকে গোটা দেশ বাসী সকলে ইতুর পুজো করে আনন্দে বসবাস করতে লাগলো।
ইতু লক্ষ্মী ব্রতের ফল -এই ইতু ব্রত পূজা করলে মেয়ের যথার্থ সুখ-সম্পদের অধিকারিণী ও স্বামীর প্রিয়া হয়ে থাকেন।
সময় বা কাল – কার্তিক মাসের সঙ্ক্রান্তিতে অর্থাৎ শেষ দিনে কার্তিক পূজা বা কার্তিকেয় ব্রত করা বিধেয়।
ব্রতকথা – একদিন ধর্মাত্মা বসুদেব দেবর্ষি নারদকে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন— হে ঋষিবর! আমার পত্নী দেবকী যে সব পুত্র প্রসব করছে তাদের সকলকেই দুরাত্মা কংস হত্যা করেছে।
এখন কি করলে আমদের পুত্র দীর্ঘায়ু লাভ করবে দয়া করে তা আমাকে বলুন।’ দেবর্ষি বললেন, “হে বসুদেব! পূর্বকালে সুভগা নামে এক ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণের দক্ষিণা নাম্নী সত্যবাদিনী ও পতিব্রতা এক পত্নী ছিল।
তাদের কোন সন্তানাদি ছিল না। এই দুঃখে একদিন সুভগা গৃহ ত্যাগ করে গভীর বনে যাত্রা করলে তার স্ত্রী দক্ষিণাও তাকে অনুসরণ করল।
ব্রাহ্মণ পত্নীসহ সেই বনে ঘুরতে ঘুরতে এক সরোবর তীরে উপস্থিত হয়ে দেখল, কয়েকজন নারী সেই স্থানে সমবেত হয়ে ধানের অঙ্কুর দ্বারা শোভিত স্থানে অষ্টদলপদ্ম রচনা করে তার মধ্যে কার্তিকের মূর্তি স্থাপন করে ব্রত করছে।
দক্ষিণা তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল, তারা কার্তিকেয় ব্রত করছে। তখন সেই নারীদের কাছে দক্ষিণা জানতে চাইল যে, এই ব্রত করলে কি ফল হয়।
তারা বলল, ‘নারীরা পুত্র কামনা করে কার্তিক মাসের বৃশ্চিকরাশিস্থিত সংক্রান্তির দিনে এই ব্রত করবে।
ধানের অঙ্কুরে শোভিত স্থানে অষ্টদলপদ্ম রচনা করে তার মধ্যে সামর্থ্যানুযায়ী সোনার, রূপোর, তামার বা মাটির কার্তিকেয়-মূর্তি স্থাপন করে মূর্তির সামনে ঘট স্থাপন করবে।
এই ঘটে যথাক্রমে-গণেশ, নারায়ণ, ব্রহ্মা, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, লোকপাল, নবগ্রহ এবং ময়ূর ও গরুড়ের পুজো করে যথাবিধি কার্তিকের ধ্যান করবে।
তারপর কার্তিকের ষোড়শোপচারে পুজো করে লোহার তৈরী খড়্গ প্রদান করবে। এইভাবে প্রহরে প্রহরে স্নানাদি পুজো করে ব্রতকথা শুনবে।
কার্তিকের পুজো সন্ধ্যার সময় আরম্ভ করে পরের দিন প্রভাতকালে মূর্তি বিসর্জন করতে হয়। এইভাবে চার বছর পূজো করার পর উদযাপন করতে হয়।
উদযাপনের সময় চারখানা ডালা, বস্ত্র, ভোজ্যাদি ও নানারকমের বস্তু দান করতে হয়। নারীরা এই ব্রত পালন করলে ইহকালে পুত্র-পৌত্রাদি নিয়ে সুখে জীবনযাপন করে পরকালে পরম প্রীতিলাভ করে থাকে।
কার্তিকের পুজো করলে সন্তানহীনা নারীদের সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিমান পুত্র লাভ হয়।
এরপর দক্ষিণা নিজগৃহে ফিরে এসে ভক্তি ও নিষ্ঠাসহকারে কার্তিকেয় ব্রত আরম্ভ করল। এই ব্রতের মাহাত্ম্যে তারা পুত্র-পৌত্র লাভ করে সুখে কালযাপন করে যথাসময়ে দেহত্যাগ করে বৈকুণ্ঠে যাত্রা করল।
এরপর দেবর্ষি নারদ পুত্রহারা বসুদেবকে উপদেশ দিলেন, ‘হে পুণ্যাত্মা বসুদেব! তোমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে কার্তিকেয়-ব্রত আচরণ কর,
তাহলে পরবর্তী যে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করে ত।ত্রিজগতের অশেষ কল্যাণসাধন করবেন।’
দেবর্ষির কথামত বসুদেব ও দেবকী কার্তিকেয়-ব্রত করে ত্রিলোকপতি নারায়ণকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন।
যম পুকুর ব্রতের সময় বা কাল— এই ব্রত মেয়েদের করতে হয় সকালবেলায়, আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত। চার বছর পরে ব্রতের উদ্যাপন করতে হয়।
যম পুকুর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান— উঠোনে একটি ছোট পুকুর কেটে তার মধ্যে, কচু, হলুদ, কলমী, শুষনী ও হিংচে গাছ পুঁততে হবে এবং পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে,
মাটির যমরাজা ও যমরাণী, যমের পিসিকে বসাবে। উত্তর পাড়ে মেছো ও মেছুনী, পূর্ব পাড়ে ধোপা ও ধোপানী আর পশ্চিম পাড়ে বসাতে হবে—কাক, বক, চিল, কুমীর ও কচ্ছপ ইত্যাদি।
প্রতি পাড়ে, একটা করে হলুদ, সুপুরি আর কড়ি পোতার নিয়ম আছে। এরপর পূর্বমুখে বসে মন্ত্র বলে পুজো করা কর্তব্য। চার কাহন কড়ি ও দক্ষিণা উদযাপনের সময় দিতে হয়।
পুকুরের জল দেবার ছড়া
রাজার বেটা পক্ষী মারে
শুষনী কলমী ল’ ল’ করে। মারণ পক্ষী শুকোয় বিল।
খিল খুলতে লাগলো ছড়
সোনার কৌটো রূপোর খিল। আমার বাপ-ভাই (বা স্বামী) হোক
লক্ষেশ্বর ॥
গাছে জল দেবার ছড়া
কালো কচু সাদা কচু ল’ ল’ করে। খিল খুলতে লাগলো ছড়
রাজার বেটা পক্ষী মারে।
আমার বাপ-ভাই হোক লক্ষেশ্বর
লক্ষ লক্ষ দিলে বর।
ধনে পুত্রে বাড়ুক ঘর ।।
পুতুল পুজোর ছড়া
(এক একটি হাতে ধরে ফুলে দেবে)
যম রাজা সাক্ষী থাকো যম রাণী সাক্ষী থাকো
যম পুকুরটি পূজি। যম পুকুরটি পূজি
এই ভাবে পর পর সমস্ত পুতুলের পুজো করে পুকুরে এক একবার জল দেবে আর মন্ত্র বলবেন।
এক ঘটি জল আমি দিই বাপ-মার।
এক ঘটি জল দিই শ্বশুর-শাশুড়ীর ।
এক ঘটি জল দিই পাড়া-পড়শীর।
শেষ ঘটি জল দিই আমার স্বামীর ।
সাত ভায়ের বোন আমি ভাগ্যবতী। যম পুকুর পূজি আমি সাক্ষী জগৎপতি।
যম পুকুর ব্রতকথা— যমের বুড়ী শাশুড়ী, যমের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে খুব কষ্ট ও অশাস্তি ভোগ করতে লাগল। তখন তার একটি মাত্র ছেলের বিয়ে দিয়ে, ঘরে সুন্দরী বউ নিয়ে এল।
বউটি কাজে কর্মে খুবই লক্ষ্মীমন্ত ছিল। হলে কী হবে, যমের ওপর থেকে কিছুতেই বুড়ীর রাগ পড়ল না। – তার প্রধান কারণ হল যে, যম বুড়ীর মেয়েকে এক বছর বিয়ে হয়ে গেলেও কিছুতেই তাকে তার বাপের বাড়িতে আসতে দিচ্ছিলেন না।
এদিকে বউ এসে, আশ্বিন সংক্রান্তির দিন, বাড়ির উঠোনে একটা ছোট পুকুর কাটিয়ে যম পুকুর ব্রত করার ব্যবস্থা করল। শাশুড়ী যখন জানতে পারল যে, বউ যমের ব্রত করছে, তখন ব্রতের সব জিনিস লাথি মেরে ভেঙ্গেচুরে নষ্ট করে দিল।
বউ কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না — সে যমকে ডেকে বলল, হে ধর্মরাজ যম। প্রথম বছর আমি তোমার ব্রত করার ব্যবস্থা করলুম, আর আমার শাশুড়ী এসে সব নষ্ট করে দিল, তুমি এর সাক্ষী থেকো।”
পরের বছরেও এই দিনে বউ লুকিয়ে পুকুর ধারে এত করছে, শাশুড়ী জানতে পেরেই ছুটে এসে আবার লাথি মেরে সব ভেঙ্গে নষ্ট করে দিল। এবারেও বউ যমকে সাক্ষী করে রাখল।
তৃতীয় বছরেও বউ রান্নাঘরের উনুনের ভেতর সব লুকিয়ে রেখে যখন লুকিয়ে ব্রত করছিল তখনও বুড়ী জানতে পারল আর সব নষ্ট করে দিয়ে বউকে খুব মারধোর করল। বুড়ী বলল,
“তুই রান্নাঘরে লুকিয়ে বসে আমার সর্বনাশের ব্যবস্থা করছিস, তুই কি আমাকে আর আমার ছেলেকে খেতে চাস নাকি ?” এবারেও বউ খুব কাদতে কাদতে যমকে সাক্ষী করে রাখল।
চার বছরের বেলায় বউ বাগানে একটা কলাগাছের তলায় যখন ব্রত করছে অমনি বুড়ী ব্যাপারটা টের পেল আর বউকে খুব গালাগাল দিয়ে মারধোর করে আনার সব জিনিস নষ্ট করে দিল।
বউ তখন খুব কাঁদতে লাগল আর পুজো করতে না পারার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিল যম রাজাকে সাক্ষী রেখে। এইভাবে কিছুদিন যাবার পর বুড়ীর খুব শক্ত অসুখ করল – ছেলে অনেক চেষ্টা করেও বুড়ীকে বাচাতে পারল না
শেষ পর্যন্ত বুড়ী মারা গেল। মা মারা গেছে শুনে, বুড়ীর মেয়ে যমের বউ, খুব খানিকটা কান্নাকাটি করল। তারপর বাপের বাড়িতে এসে, মার শ্রাদ্ধ শান্তি করে আবার যমপুরীতে ফিরে গেল।
মায়ের জন্যে রাতদিন বউয়ের মন খারাপ দেখে যম তাকে বললেন, “তুমি রোজ একটু করে ইচ্ছেমত এদিক ওদিকে বেড়াবার চেষ্টা করো, তাহলে মনটা ক্রমেই ভাল হবে—তবে সব দিকেই যেতে পার দক্ষিণ দিকে মোটেই যেও না।”
যমের কথা মত যমের বউ এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়াতে আরম্ভ করল। এই সময় হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল যে, যমরাজ তাকে দক্ষিণ দিকে যেতে বারণ করেছেন।
কিন্তু কী আছে ওদিকে, একবার দেখতে দোষ কী। এই মনে করে যমের বউ দক্ষিণ দিকে কী আছে দেখতে গেল। সেখানে সে যা দেখল তাতে তার মাথা ঘুরে গেল।
সে দেখল যে নরকের মধ্যে একটা কৃমির কুণ্ড রয়েছে, আর তার মধ্যে অগণিত পাপীর দল নরকভোগ করছে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করছে—তার ওপর যমদূতেরা ভয়ানক মুষল দিয়ে ক্রমাগত তাদের মাথায় মারছে।
তারই মধ্যে সে দেখল তার মাও সেই কুণ্ডের ভেতর রয়েছে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে তার মেয়ের নাম ধরে তাকে রক্ষা করবার জন্যে বার বার বলছে।
যমের বউ এই দৃশ্য আর দেখতে পারল না, সে তাড়াতাড়ি যমপুরীতে ফিরে গেল, সে দুঃখে খুব প্রিয়মান হয়ে চুপ করে এক জায়গায় বসে রইল। যম তার স্ত্রীকে ওইভাবে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে, তার কারণ জিজ্ঞাসা
করলেন। বউ তখন যমের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলল, “আমি তোমার বারণ না শুনে দক্ষিণ দিকে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখলাম আমার মাও সেই নরকে পড়ে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করছে আর ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করছে— যেমন করেই হোক আমার মাকে তোমায় উদ্ধার করতেই হবে।”
যম তখন বললেন, “তোমার মা অনেক পাপ করেছে, তোমার ভাজের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে তাকে মারধোর করেছে আর তার যম পুকুরের ব্রত নষ্ট করে দিয়ে আমায় খুবই অপমান করেছে— তাই তাকে এই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে, সেই সব পাপের জন্যে।
তবে তার উদ্ধারের একটা মাত্র পথ আছে—আর তোমার ভাজই মনে করলে তার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু সে ‘শাশুড়ীর কাছ থেকে যে অত্যাচার আর লাঞ্ছনা ভোগ করেছে, সে তাতে রাজী হবে কিনা সন্দেহ।”
যমের বউ তখন যমকে কোনো একটা উপায় করে দেবার জন্যে খুবই অনুনয় বিনয় করতে লাগল। যম তখন বললেন, “বেশ, তবে একটা উপায় যদি করতে পার তাহলে তোমার মা উদ্ধার হতে পারে।
তোমার ভাজের এখন সন্তান হওয়ার সময় এসেছে—সন্তান প্রসবের সময় আমি তার ওপর ভর করব, তার সন্তান কিছুতেই প্রসব হবে না—সে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে।
সেই সময় যদি তুমি তোমার ভাজকে বুঝিয়ে রাজী করাতে পার যে, সে তোমার মায়ের নামে চারটে পুকুর কাটিয়ে আমার পুজো করবে তাহলে তার সন্তান প্রসব হতে দেরি হবে না। এইভাবে ব্রত করতে রাজী হলে তখুনি তার সস্তান প্রসব হবে।”
যমের বউ এই কথা শুনে ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হল – আর তার ভাজের প্রসব বেদনা হতেই তার মায়ের অর্থাৎ বউয়ের শাশুড়ীর নামে চারটে পুকুর কাটিয়ে যম পুকুর ব্রত করার জন্যে প্রতিজ্ঞা করতে বলল।
কিন্তু তার ভাজ প্রথমে কিছুতেই রাজী হল না–তার শাশুড়ীর অত্যাচারের কথা মনে করে। শেষে যখন যন্ত্রণা সহ্য করাও অসম্ভব হয়ে পড়ল– তখন সে কথা দিল যে, হ্যা, শাশুড়ীর নামে চারটে পুকুর কাটিয়ে সে যম পুকুর ব্রত করবে। কথা দেবার সঙ্গে সঙ্গে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হল।
আর তার শাশুড়ীও উদ্ধার হয়ে স্বর্গে চলে গেল। এই ঘটনার পর বাড়িতে খুব আনন্দ উৎসব হতে লাগল, সব দেখে শুনে যমের বউও তখন যমপুরীতে ফিরে গেল।
যম পুকুর ব্রতের ফল— এই ব্রত করলে মৃত্যু হওয়ার পর কোনো রকম নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না।
জন্মাষ্টমী ব্রত সময় বা কাল– ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত পালন করতে হয়। স্ত্রী ও পুরুষ সকলেই এই ব্রত পালন করতে পারে।
জন্মাষ্টমী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান—তিল, ফুল, তুলসী, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুঁড়ি, আতপচালের নৈবেদ্য, ফলের নৈবেদ্য, পাট, বালি, মধুপর্কের বাড়ি, আসন, অঙ্গুরী, পূর্ণপাত্র, দই, মধু, চিনি, তেল ও হলুদ।
জন্মাষ্টমী ব্রতের আগের দিন নিরামিষ খেয়ে সংযম করে থাকতে হবে আর ব্রতের দিন উপোস করতে হবে। কুলপুরোহিতকে দিয়ে পুজো করিয়ে দক্ষিণা দিয়ে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করবে।
জন্মাষ্টমী ব্রতকথা— মথুরায় উগ্রসেন নামে এক অতি ধার্মিক রাজা ছিলেন। তাঁর ছেলে কংস এক সময় খুব অত্যাচারী হয়ে উঠল। সে তার বাবার রাজসিংহাসন জোর করে কেড়ে নিল।
তারপর সে মহাদেবকে আরাধনায় সন্তুষ্ট করে বর পেল যে, শুধুমাত্র নিজের বোনের অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতেই সে মরবে, অন্য আর কারুর হাতে তার মৃত্যু নেই। এই বর পাবার পর তার সাহস আর অত্যাচার অনেক গুণ বেড়ে গেল।
শেষে অন্য সব অসুরদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সে প্রচার করে দিল যে, রাজ্যে কেউ হরিনাম করতে পারবে না যে হরিনাম করবে তার আর রক্ষে নেই।
তারপর সে তার বোন দেবকী আর তার স্বামী বসুদেবকে এনে কারাগারে বন্দী করে রাখল, কারণ সে জানত যে, তার বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতেই তার মৃত্যু হবে।
এইভাবে কারাগারে থাকতে থাকতে দেবকীর সাতটি ছেলে হল আর কংস প্রত্যেকটিকে কারাগার থেকে নিয়ে গিয়ে পাথরের ওপর আছাড় মেরে তাদের ফেরে ফেলল।
শেষে যখন কংস খবর গেল এইবার দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান হবে তখন সে কারাগারের চারিদিকে খুব কড়া পাহারার ব্যবস্থা করল।
এরই মধ্যে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গভীর রাত্তিরে নারায়ণ ভূমিষ্ঠ হলেন দেবকীর কোলে। নারায়ণের শ্যামবর্ণ চতুর্ভুজ মূর্তি দেখে দেবকী আর বসুদেব এক্কেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বসুদেব খুবই কাতরভাবে ভগবানকে ডাকতে লাগলেন
এই ছেলেটিকে রক্ষা করবার জন্যে।
এই সময়ে কারাগারে এক দৈববাদী -বসুদেব। আমার মায়ায় এখন সমস্ত পৃথিবীর লোক ঘুমে অচেতন হয়ে আছে- তুমি এই মুহূর্তে গোকুলে নন্দের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে এই শিশুটিকে রেখে এসো আর নদের স্ত্রী যশোমতীর এইংশে একটি মেয়ে হয়েছে, তাকে নিয়ে এসে দেহরীর কোলে শুইয়ে দাও।
ঘুমে আচ্ছন্ন পৃথিবীর কেউ কিছুই জানতে না।”শোনার পর বসুদের আর দেরি না করে কৃষ্ণকে কোলে করে। নদের বাড়ি যাবার জন্যে বেরিয়ে পড়লেন। প্রহরীরা সকলেই তখন ঘুমে অচেন, কেউ কিছুই জানতে পারল না।
বসুদের গিয়ে পৌঁছালেন যমুনার তীরে। এই সময়ে হল, যমুনার | দুকূল ছাপিয়ে উঠেছিল আর ভয়ানক বিদ্যুৎ ছিল। এই দুর্যোগ দেখে বসুদেবের মনে ভীষণ ভয় হল। এই অবস্থায় যমুনা পার হওয়া অসম্ভব দেখে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু নারায়ণ তার মায়া ছড়িয়ে দিয়েছিলেন চারিদিকে। এই সময়ে বসুদেবের চোখে পড়ল যে, যমুনার জল হঠাৎ কমে গিয়ে হাঁটু সমান হয়ে গেছে আর একটা শিয়াল অনায়াসে যমুনা পার হয়ে যাচ্ছে।
বসুদেবও তখনই চললেন শিয়লাটার পিছনে পিছনে। বসুদের ও তার সন্তানকে ভীষণ বৃষ্টি থেকে বাঁচাবার জন্যে নাগরাজ তার বিশাল ফলা বিস্তার করে ধরলেন তাদের মাথার ওপরে।
এইভাবে অল্প সময়ের মধ্যে বসুদের কৃষ্ণকে যশোমতীর কোলের কাছে রেখে মেয়েটিকে নিয়ে আবার কারাগারে ফিরে এলেন ও মেয়েটিকে অর্থাৎ দেবী যোগমায়াকে দেবকীর কোলে রেখে দিলেন।
সকাল হতেই কংস খবর পেল যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান একটি মেয়ে হয়েছে। কংস তখনি দেবকীর কোল থেকে জোর করে মেয়েটিকে কেড়ে নিল।
মেয়ে বলে তাকে ছেড়ে দেবার জন্যে দেবকী অনেক অনুনয় বিনয় করল; কিন্তু কংস কোনো কথাই শুনন না। সে যেমনি মেয়েটিকে পাথরের ওপর আছাড় মারতে গেল সেই মুহূর্তেই তার হাত থেকে মেয়েটি শূন্যে উঠে গিয়ে যোগমায়া মূর্তি ধারণ করে শূন্যে মিলিয়ে গেলেন। যাবার সময় তিনি কংসকে বলেন গেলেন, “তোমারে বধিবে যে—গোকুলে বাড়িছে সে।
তারণর সময় পূর্ণ হতে কংস শ্রীকৃষ্ণের হাতেই বধ হয়েছিল। এই পুণ্যময় ব্রতকথা, যে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা মীর দিন উপোস করে থেকে মন দিয়ে শোনে, তার সাতজন্মের পাপ নাশ হয়, অন্তিমকালে তার বৈকুণ্ঠ লাভ হয়ে থাকে।
জন্মাষ্টমী ব্রতের ফল— জন্মাষ্টমী ব্রত, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই পালনের অধিকারী। এই দিন শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে দিনটি খুবই শুভ। এই ব্রত পালন করলে সমস্ত পাপ ও অকল্যাণ দূর হয়।
শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন। ১
যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন ॥ ২
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর-গোপাল । ৩
ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর-রাখাল ॥ ৪
সুবল রাখিল নাম ঠাকুর কানাই । ৫
শ্রীদাম রাখিল নাম রাখাল রাজা ভাই ॥ ৬
ননীচোরা নাম রাখে যতেক গোপিনী । ৭
কালসোণা নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ॥ ৮
কুব্জা রাখিল নাম পতিত-পাবন হরি । ৯
চন্দ্রাবলী নাম রাখে মোহন-বংশীধারী ॥ ১০
অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া । ১১
কৃষ্ণ নাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া ॥ ১২
কম্বমুনি নাম রাখে দেবচক্রপাণি। ১৩
বনমালী নাম রাখে বনের হরিণী ॥ ১৪
গজহস্তী নাম রাখে শ্রীমধুসূদন । ১৫
অজামিল নাম রাখে দেব নারায়ণ ॥ ১৬
পুরন্দর নাম রাখে দেব শ্রীগোবিন্দ । ১৭
দ্রৌপদী রাখিল নাম দেব দীনবন্ধু ॥ ১৮
সুদাম রাখিল নাম দারিদ্র্য-ভঞ্জন । ১৯
ব্রজবাসী নাম রাখে ব্রজের জীবন ॥ ২০
দর্পহারী নাম রাখে অর্জুন সুধীর। ২১
পশুপতি নাম রাখে গরুড় মহারীর ॥ ২২
যুধিষ্ঠির নাম রাখে দেব যদুবর। ২৩
বিদুর রাখিল নাম কাঙ্গালের ঠাকুর ॥ ২৪
বাসুকী রাখিল নাম দেব-সৃষ্টি স্থিতি। ২৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ধ্রুবের সারথি ॥ ২৬
নারদ রাখিল নাম ভক্ত-প্রাণধন। ২৭
ভীষ্মদেব নাম রাখে লক্ষ্মী-নারায়ণ ॥ ২৮
সত্যভামা নাম রাখে সত্যের সারথি। ২৯
জাম্ববতী নাম রাখে দেব যোদ্ধাপতি ॥ ৩০
বিশ্বামিত্র নাম রাখে সংসারের সার। ৩১
অহল্যা রাখিল নাম পাষাণ-উদ্ধার ॥ ৩২
ভৃগুমুনি নাম রাখে জগতের হরি । ৩৩
পঞ্চমুখে রামনাম গান ত্রিপুরারি ॥ ৩৪
কুঞ্জকেশী নাম রাখে বলি সদাচারী । ৩৫
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নৃসিংহ মুরারি ॥ ৩৬
বশিষ্ঠ রাখিল নাম মুনি-মনোহর। ৩৭
বিশ্বাবসু নাম রাখে নবজলধর ॥ ৩৮
সম্বর্ত্তক রাখে নাম গোবর্দ্ধনধারী । ৩৯
প্রাণপতি নাম রাখে যত ব্রজনারী ॥ ৪০
অদিতি রাখিল নাম আরতি-সুদন । ৪১
গদাধর নাম রাখে যমল-অর্জ্জুন ।। ৪২
মহাযোদ্ধা নাম রাখে ভীম মহাবল। ৪৩
দয়ানিধি রাখে নাম দরিদ্র সকল । ৪৪
বৃন্দাবন-চন্দ্র নাম রাখে বৃন্দাদুতী । ৪৫
বিরজা রাখিল নাম যমুনার পতি। ৪৬
বাণীপতি নাম রাখে গুরু বৃহস্পতি । ৪৭
লক্ষ্মীপতি নাম রাখে নাম সুমন্ত্র সারথি ।। ৪৮
সন্দীপনি নাম রাখে দেব অন্তর্যামী। ৪৯
পরাশর নাম রাখে ত্রিলোকের স্বামী।। ৫০
পদ্মযোনি নাম রাখে অনাদির আদি । ৫১
নট নারায়ণ নাম রাখিল সম্বাদী ।।৫২
হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম। ৫০
ললিতা রাখিল নাম দু্র্ব্বাদলশ্যাম ।। ৫৪
বিশাখা রাখিল নাম অনঙ্গমোহন। ৫৫
সুচিত্রা রাখিল নাম শ্রীবংশীবদন। ৫৬
আযান রাখিল নাম ক্রোধ-নিবারণ। ৫৭
চণ্ডকশী নাম রাখে কৃত্তান্ত শাসন ॥ ৫৮
জ্যোতিষ্ক রাখিল নাম নীলকান্তমণি। ৫৯
গোপীকান্ত নাম রাখে সুদাম-ঘরণী। ৬০
ভক্তগণ নাম রাখে দেব জগন্নাথ। ৬১
দূর্ব্বাসা রাখেন নাম অনাথের নাথ। ৬২
রাসেশ্বর নাম রাখে যতেক মালিনী। ৬৩
সর্ব্ব-যজ্ঞেশ্বর নাম রাখেন শিবানী। ৬৪
উদ্ধব রাখিল নাম মিত্রহিত কারী । ৬৫
অক্রুর রাখিল নাম ভব ভয় সাথী।। ৬৬
গুঞ্জমালী নাম রাখে নীল পীতবাস । ৬৭
সর্ব্ববেত্তা রাখে নাম দ্বৈপায়ন ব্যাস।। ৬৮
অষ্টসখী নাম রাখে ব্রজের ঈশ্বর। ৬১
সুরলোকে রাখে নাম অখিলের সার। ৭০
বৃষভানু নাম রাখে পরম ঈশ্বর। ৭১
স্বর্গবাসী রাখে নাম দেব পরাৎপর। ৭২
পুলোমা রাখেন নাম অনাথের সখা। ৭৩
রসসিন্ধু নাম রাখে সখী চিত্রলেখা। ৭৪
চিত্ররথ নাম রাখে আরতি দমন। ৭৫
পুলস্ত্য রাখিল নাম নয়ন-রঞ্জন ॥ ৭৬
কশ্যপ রাখেন নাম রাস রাসেশ্বর। ৭৭
ভাণ্ডারীক নাম রাখে পূর্ণ-শশধর ॥ ৭৮
সুমালী রাখিল নাম পুরুষ-প্রধান । ৭৯
পুরঞ্জন নাম রাখে ভক্তগণ প্ৰাণ ॥ ৮০
রজকিনী নাম রাখে নন্দের-দুলাল। ৮১
আহ্লাদিনী নাম রাখে ব্রজ়ের-গোপাল ॥ ৮২
দৈবকী রাখিল নাম নয়নের মণি। ৮৩
জ্যোতির্ময় নাম রাখে যাজ্ঞবল্ক্য মুনি ॥ ৮৪
অত্রিমুনি নাম রাখে কোটি চন্দ্রেশ্বর । ৮৫
গৌতম রাখিল নাম দেব বিশ্বম্ভর ।।৮৬
মরীচি রাখিল নাম অচিন্ত্য অচ্যুত। ৮৭
জ্ঞানাতীত নাম রাখে সৌনকাদি সুত ॥ ৮৮
রুদ্রগণ নাম রাখে দেব মহাকাল। ৮৯
বসুগণ রাখে নাম ঠাকুর দয়াল ॥ ৯০
সিদ্ধগণ নাম রাখে পুতনা-নাশন । ৯১
সিদ্ধার্থ রাখিল নাম কপিল তপোধন ॥ ৯২
ভাগুরি রাখিল নাম অগতির গতি। ৯৩
মৎস্যগন্ধা নাম রাখে ত্রিলোকের পতি ॥ ৯৪
শুক্রাচার্য্য রাখে নাম অখিল বান্ধব । ৯৫
বিষ্ণুলোকে নাম রাখে দেব শ্রীমাধব ॥ ৯৬
যদুগণ নাম রাখে যদুকুলপতি । ৯৭
অশ্বিনীকুমার নাম রাখে সৃষ্টি-স্থিতি ॥ ৯৮
অর্য্যমা রাখিল নাম কাল-নিবারণ । ৯৯
সত্যবতী নাম রাখে অজ্ঞান-নাশন ॥ ১০০
পদ্মাক্ষ রাখিল নাম ভ্রমর-ভ্রমরী । ১০১
ত্রিভঙ্গ রাখিল নাম যত সহচরী ॥ ১০২
বঙ্কচন্দ্র নাম রাখে শ্রীরূপমঞ্জরী । ১০৩
মাধুরী রাখিল নাম গোপী-মনোহারী ॥ ১০৪
মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্ট-পূরণ । ১০৫
কুটিলা রাখিলা নাম মদন-মোহন ॥ ১০৬
মঞ্জুরী রাখিল রাম কৰ্ম্মবন্ধ-নাশ । ১০৭
ব্রজবন্ধু নাম রাখে পূর্ণ-অভিলাষ ॥ ১০৮
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রাধাষ্টমী ব্রত নিতে হয়। (মনে রাখবেন কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী আর শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রাধাষ্টমী ব্রত।) সমস্ত স্ত্রীলোকেরা রাধাষ্টমী ব্রত করে থাকে। এছাড়া সমস্ত শ্রী রাধা ভক্তরা ও এই ব্রত নিতে পারেন।
রাধাষ্টমী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান— গন্ধ ফুল, আতপচাল, সিদ্ধচাল, নৈবেদ্য, আট রকম আটটি ফল প্রভৃতি। ব্রতের আগের দিন নিরামিষ ভোজন করতে হবে এবং ব্রতের দিন উপোস করে থেকে
শ্রীরাধিকা, ললিতা, বৃন্দা আদি অষ্টসখী, বৃষভানু, নন্দ প্রভৃতির পুজো করতে হয়। ব্রতের পরের দিন ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের ভোজন করিয়ে যথা সাধ্য ভোজন দক্ষিণা দেওয়া ব্রত পালনের নিয়ম।
রাধাষ্টমী ব্রতকথা— এক সময় সূর্যদেব শ্রীকৃষ্ণের তপস্যা করতে থাকেন। বহুদিন ধরে সূর্য এইভাবে তপস্যায় ব্যস্ত থাকার ফলে পৃথিবী একেবারে অন্ধকারে ডুবে রইল। তার ফলে, সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম হল।
এই অবস্থার দরুন দেবতারা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তারা শ্রীকৃষ্ণের কাছে গিয়ে সৃষ্টি রক্ষার জন্যে এর বিহিত করতে তাকে অনুরোধ করলেন। দেবতাদের কথা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বললেন “তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো, আমি শিগগিরই এর একটা বিহিত করছি।”
তারপর শ্রীকৃষ্ণ সূর্যের কাছে গিয়ে বললেন, “তোমার তপস্যা সিদ্ধ হয়েছে, এখন তুমি বর প্রার্থন কর।” সূর্য তখন বললেন, হে বিশ্বপতি! আমাকে এই বর দিন যে—আমার যেন একটি মেয়ে হয়, আর আপনি সেই মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।”
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “তাই হবে দিবাকর। দ্বাপর যুগে তুমি গোকুলে বৃষভানু হয়ে গোপের মেয়ে সুকীর্তিকে বিয়ে করবে। তার গর্ভে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে একটি মেয়ে জন্মাবে।
সেই মেয়ের নাম রাখা হবে রাধিকা আর আমিও রাধিকার প্রতি আকৃষ্ট হবো। যাও, এখন অন্ধকার সরিয়ে সৃষ্টিকে রক্ষা করো।” নিজের প্রার্থনা মতো বর পেয়ে সূর্যও সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলেন।
ক্রমে গোকুলে বৃষভানুর বাড়িতে উঠল এক আনন্দের রোল। বৃষভানুর স্ত্রী সুকীর্তি একটি মেয়ে প্রসব করল। সকলের খুব আনন্দ হল। পরে সেই মেয়ের নাম রাখা হল রাধিকা।
ধীরে ধীরে সময় কেটে গিয়ে রাধিকার বিয়ের বয়স উপস্থিত হল, অয়ন ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছা অনুসারে রাধিকা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গোপনে বিহার করতে থাকলেন।
এর কারণ, শ্রীকৃষ্ণ আর রাধিকা একই আত্মা। রাধিকার গোপনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মেলামেশার দিনগুলি নানা উৎসবে পূর্ণ ছিল আর বৃন্দাবনে দোললীলা, রাসলীলা, নৌকাবিলাস ইত্যাদি নামে আনন্দের সঙ্গে পালন করা হত।
ভাদ্র মাসের রাধাষ্টমীর দিনে যদি কেউ শ্রীরাধিকার পুজো করে, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ তার প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হন, তিনি তার মনস্কামনা অবিলম্বে পূর্ণ-করেন।
শ্রীকৃষ্ণ নিজ মুখেই বলেছেন, “আমার নাম হাজার বার জপ করলে লোক যে ফল পায়—সেই ফল পাওয়া যায় মাত্র একবার রাধাকৃষ্ণ নাম জপ করলে।”
তাই তাই সকলে মিলে একবার বলুন “জয় শ্রী রাধাকৃষ্ণ, জয় শ্রী রাধাকৃষ্ণ”
রাধাষ্টমী ব্রতের ফল – শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধাকে সন্তুষ্ট করার জন্য, স্ত্রীলোকেরা এই ব্রত নিয়ে থাকে। এই ব্রত পালন করার ফলে, সংসার শাস্তিতে পরিপূর্ণ থাকে।
তালনবমী ব্রতের সময় বা কাল – ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়। সমস্ত সধবা স্ত্রীলোকেরাই এই ব্রত পালন করে থাকে।
তালনবমী ব্রতের দ্রব ও বিধান- ঘট কলসী, ধূপ, দীপ, ফুল, নৈবেদ্য, ৯টি ফল ও মিষ্টার, উদ্যাপনের সময় ব্রাহ্মণকে একখানি নতুন কাপড় ও ১টি টাকা দক্ষিণা দেওয়া প্রয়োজন। একটি পরিষ্কার জায়গায় মণ্ডপ তৈরী করে সেখানে
বেশ করে আলপনা দেওয়ার পর, তার ওপর ঘট বসিয়ে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো করবে, পিঠে তৈরী করে সকালে নারায়ণের ভোগ দিতে হবে, ব্রাহ্মণ ভোজন করাতে হবে,
তারপর নিজের স্বামীকে খাইয়ে এযোত্রীলোকেরা নিজে আহার করবে। এই রঙের এই নিয়ম পালন করতে হয়। ব্রত উদযাপনের সময় ৯ বছর।
তালনবমী ব্রতকথা— দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের রুক্মিণী আর সত্যভামা নামে দুই স্ত্রী ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ এঁদের মধ্যে রুক্মিণীকেই একটু বেশী ভালবাসতেন।
এতে সত্যভামার মনে কোন সুখ ছিল না। মনে খুব কষ্ট হওয়ার ফলে, সত্যভামা একদিন তপোবনে গিয়ে একজন তপস্বীকে নিজের দুঃখের কথা জানালেন এবং কী করে তার এই মনোকষ্টের লাঘব হবে তার উপায় বলে দিতে অনুরোধ করলেন।
সাধক তপস্বী বললেন, “দ্যাখো মা, একটি ব্রত ঠিক ঠিক ভাবে করতে পারলে, তোমার মনে আর কোনো দুঃখ-কষ্টই থাকবে না।”
সত্যভামা তখন বললেন, “আপনি আমাকে সেই ব্রতের নিয়ম বলে দিন। আমি সেই ব্রত নিশ্চয় পালন করব।” তপস্বী বললেন, “ব্রতটির নাম তালনবমী ব্রত।
ভাদ্র মাসে শুরুপক্ষের নবমী তিথিতে খুব নিষ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো করবে। ব্রতটি তালনবমী ব্রত বলে এই ব্রতে তাল ফল দান করা বিশেষ প্রয়োজন।
এই ব্রত পালনের অঙ্গ হিসেবে সধবা স্ত্রীলোকেরা প্রথমে নিজের স্বামীকে খুব যত্নের সঙ্গে পিঠে তৈরী করে খাওয়াবে, পরে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে সব শেষে নিজেরাও খাবে।
ন’বছর ঠিক নিয়মে আর নিষ্ঠার সঙ্গে এই ব্রত পালন করে উদ্যাপন করলে ছেলে-নাতি-নাতনী ও প্রচুর ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়ে থাকে সৌভাগ্যেরা আর শেষ থাকে না।
তপস্বীর কাছে সব শুনে সত্যভামা বাড়িতে ফিরে এসে তপস্বীর কথামতো ন’বছরধরে তাল নবমীর ব্রত পালন করলেন।
তাঁর ব্রত উদযাপন হওয়ার সময় নারায়ণ তার কাছে এলেন ও বললেন, “এতদিনে তোমার দুর্ভাগ্যের দিন শেষ হল। আমি বর দিচ্ছি। তুমি সৌভাগ্যবতী হয়ে খুব সুখে শান্তিতে দিন কাটাবে।”
সেই থেকে সত্যভামার মনে আর কোনো দুঃখ রইল না, শ্রীকৃষ্ণের প্রেম-ভালবাসা পেয়ে তিনি দিন কাটাতে লাগলেন।
তালনবমী ব্রতের ফল – ভাদ্র মাসে এয়োস্ত্রীরা এই তালনবমী ব্রত করলে তাদের কোন দুঃখ-কষ্ট থাকে না এবং তারা স্বামী সোহাগিনী হয়ে থাকে।
দূর্বাষ্টমী ব্রতের সময় বা কাল- ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়, আর স্ত্রীলোকেরাই এই ব্রত পালন করে থাকে।
দূর্বাষ্টমী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান – ধূপ, ধুনো, দীপ, আটটি ফল, নৈবেদ্য, হরিতকী, মিষ্টান্ন, খেজুর, নারকেল, আঙ্গুর, ডালিম, বেদানা, কমলালেবু প্রভৃতি।
এই ব্রত শেষ করে বংশবৃদ্ধি হওয়ার কামনা করতে হয়। এই ব্রত পালনের সময় ব্রাহ্মণকে পৈতে, পয়সা,হরিতকী, মিষ্টি প্রভৃতি দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
দূর্বাষ্টমী ব্রতকথা— এক সময়ে শ্রীকৃষ্ণ রাজা যুধিষ্ঠিরের কাছে এই ব্রতকথা বলেছিলেন। যখন সমুদ্র মন্থন করা হয়, সেই সময় স্বয়ং নারায়ণ নিজের হাত আর জানুর সাহায্যে, মন্দর পর্বতকে ধরে থেকে সমুদ্র মন্থন করিয়েছিলেন।
মন্দর পর্বতের সঙ্গে রগড়ে যাওয়ার ফলে তার দেহের লোমগুলো ঘসে ঘসে সমুদ্রের জলে পড়েছিল, আর সেইগুলো ভাসতে ভাসতে তীরে পৌঁছে দুর্বা হয়ে পৃথিবীতে জন্মেছিল।
আবার দেবতা আর অসুরেরা যখন অমৃত সংগ্রহ করার জন্যে সমুদ্র মন্থন করেন সেই সময়েও দুর্বার ওপর কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল, তার ফলে দূর্বা দেবতাদের অতি প্রিয় আর অমর হয়েছিল।
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমীতে খেজুর, নারকেল, আঙ্গুর, হরিতকী, ডালিম, বেদানা, কমলালেবু প্রভৃতি ফল, ধূপ, দীপ, ফুল ও গন্ধ ও নৈবেদ্য দিয়ে দুর্বার পুজো করতে হয়।
এই পুজোর মন্ত্র হিসেবে বলতে হয়, “হে দূর্বা তুমি দেব ও অসর সকলেরই প্রিয় ও পূজনীয়া। তুমি যেন, নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে অমর হয়ে এই পৃথিবীতে রয়েছো— তেমনি আমার সন্তানদেরও অমর করে দাও।”
বহু প্রাচীন যুগে দেবতারা, পার্বতী, রতি, সরস্বতী, গঙ্গা, দিতি, অদিতি, মন্দোদরী, চণ্ডী, দীপ্তা, মায়া, রেবর্তী, দময়ন্তী, মেনকা, রম্ভা আর ঋষিদের মেয়েরা দূর্বার পুজো করতেন।
খুব শুদ্ধ মনে ভক্তির সঙ্গে নিয়ম অনুসারে দুর্বার পুজো করে ব্রাহ্মণকে ভুজি, কাপড়, ফল ও দক্ষিণা দিতে হয়, পরে আত্মীয় কুটুম্বদের পরিতৃপ্ত করে ভোজন করিয়ে নিজে ভোজন করতে হয়।
যে স্ত্রীলোক সন্তান প্রাপ্তি বা বংশ বৃদ্ধি ও সন্তানদের দীর্ঘজীবন পাওয়ার জন্যে এই ব্রত করে, সে ইহলোকে স্বামী-পুত্র নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটায় আর দোন্তে শ্রীবিষ্ণুর চরণ লাভ করে থাকে।
দূর্বাষ্টমী ব্রতের ফল— ভাদ্র মাসে যে দূর্বাষ্টমী ব্রত পালন করে—সংসারে তাকে কোনোদিন দুঃখ ও শোক ভোগ করতে হয় না।
শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে শনি ও মঙ্গলবারে মনসা পুজো করার নিয়ম। একটি মনসা গাছ, নৈবেদ্য ৮টি, কলা আর দুধ। মনসা পুজোয় ধূপ দেওয়া নিষেধ।
মা মনসা ব্রতের ব্রতকথা—এক দেশে এক গরীব ব্রাহ্মণ বাস করত। তার সাতটি মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু ছেলে একটিও হয়নি। সে ঠিক সময় মতো ছ’টি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল, কিন্তু তার ছোটমেয়ে সরলার বর আর কিছুতেই জুটলো না।
ব্রাহ্মণ চারিদিকে সরলার জন্যে বর খুঁজতে লাগল, শেষে তাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের গ্রামে এক ব্রাহ্মণের খবর পেয়ে সরলার বাবা সেই ব্রাহ্মণের বাড়ি গেল। সেই ব্রাহ্মণের এগারোটি ছেলে ছিল।
সে দশটি ছেলের বিয়ে খুব বড়লোকের বাড়িতে দিয়ে দশটি বৌ এনেছিলো। কিন্তু বড়লোকের মেয়েরা শ্বশুরকে মোটেই যত্ন করত না, সেই জন্যে সে তার ছোটছেলের বিয়ে দিয়ে একটি গরীবের মেয়ে আনবার জন্যে খোঁজাখুঁজি করছিল।
সে সরলার বাবার কাছে সরলার কথা শুনে সরলার সঙ্গেই তার ছোটছেলের বিয়ে দিল। সরলা শ্বশুরবাড়িতে এল, কিন্তু শাশুড়ী আর জায়েরা তাকে দেখে ঘেন্না করতে লাগল। একমাত্র শ্বশুর ছাড়া সরলাকে কেউ ভাল চোখে দেখতে পারতো না।
তার জন্যে সরলার মনে খুবই কষ্ট ছিল। সে ভাবতো যে, গরীবের মেয়েরা বেঁচে থাকে কেন! জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে মরে গেলেই তো আর তাকে এমন কষ্ট সহ্য করতে হয় না। সরলার দিন খুব দুঃখেই কাটতে লাগল। এমনি একদিন, বেশ ঝিরঝিরে জল ঝড় হচ্ছিল।
সরলার জায়েরা অন্য এক জায়গায় দল বেঁধে বসে সেই দিন কী খেলে ভাল লাগবে তাই নিয়ে আলোচনা করছিল। কেউ পোলাওয়ের কথা বললে, কেউ বলল ভূনি খিচুড়ি, আবার কেউ বলল যে, এটা তেলেভাজা খাবারই দিন।
এমন সময় সরলা সেদিকে আসতে অন্য বউয়েরা তাকে বলল, “আচ্ছা ছোটবউ! আজকের দিনে কী খেতে ভাল লাগে বলত?” সরলা তো ছিল গরীবের মেয়ে, সে তার পছন্দ মতো বলল, “মাছের টক আর পান্তা ভাত।”
অন্য বউয়েরা হো হো করে হেসে উঠে তাকে খুব ঠাট্টা করতে লাগল। তার পর একটু বেলা হতে সকলে পুকুরে স্নান করতে গেল, সরলাও গেল তাদের সঙ্গে।
পুকুর ঘাটে সরলা দেখল যে, কতকগুলো ছোট ছোট মাছ কিলবিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তার গামছা পেতে মাছগুলোকে ধরে নিল।
তাই দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, “ওই দ্যাখো, ছোটবউ মাছের টকের ব্যবস্থা করে ফেলেছে আর পান্তা ভাতও ঘরে আছে, ওর আর কোনো ভাবনাই রইল না।” পুকুর ঘাট থেকে এসে সরলা একটা ছোট হাঁড়ির মধ্যে মাছগুলোকে জিইয়ে রাখল।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখল যে সেগুলো মাছ নয়, সব সাপের বাচ্চা। সরলা কারুকে কিছু না বলে সাপের বাচ্চাগুলোকে দুধ কলা দিয়ে পুষতে লাগল। সাপগুলো ছিল মা মনসার ছেলে তারা একটু বড়ো হতেই মা মনসার কাছে স্বর্গে চলে গেল।
তারা, তাদের মাকে সরলার দুর্দশার কথা সব জানাল। সব শুনে মা মনসার মনে খুব কষ্ট হল। তিনি এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে সরলাদের বাড়িতে এসে নিজেকে তার মাসী বলে পরিচয় দিয়ে সরলাকে দিন কয়েকের জন্যে নিয়ে যেতে চাইলেন।
শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কোনো আপত্তি না করে সরলাকে সেই বুড়ী ব্রাহ্মণীর সঙ্গে পাঠিয়ে দিল। বুড়ী ব্রাহ্মণী তখন সরলাকে নিয়ে এক নির্জন বনের মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
তিনি সরলাকে বললেন, “মা! তুমি চোখ বুজে থাকো, আমি না বললে চোখ খুলো না।” সরলা তার কথা মত চোখ বুজে রইল। এমনি সময় স্বর্গ থেকে এলো পুষ্পক রথ। মা মনসা সরলাকে সঙ্গে নিয়ে সেই রথে উঠলেন।
অল্পক্ষণের মধ্যে সেই রথ স্বর্গে যা মনসার প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছালো। সরলা সেখানে গিয়ে দেখল চারিদিকে সাপ কিলবিল করছে, ছোটাছুটি করছে, কিন্তু কেউ তাকে কামড়াচ্ছে না। মনসা দেবী তখন সরলাকে বললেন, “মা সরলা।
আমি তোমার মাসী নই, আমি মনসা দেবী—তোমার দুঃখ দেখে তোমাকে এখানে এনেছি। তুমি এখানে থাক, আজ থেকে আমার পুজোর যোগাড় কর, আর তোমার ওই ছোট ছোট ভাইয়ের—আমার ছেলেদের একবাটি করে দুধ গরম করে খেতে দিও।
আর একটা কথা জেনে রাখো যে, ওই দক্ষিণ দিকটায় কখনো যেও না।” সরলা মা মনসা সব কথা মেনে নিল। স্বর্গে সরলার দিন বেশ আনন্দে কাটছিলো। হঠাৎ একদিন মা মনসার বারণ দক্ষিণ দিকটা তার দেখবার ইচ্ছে হল।
যে দক্ষিণ দিকে গিয়ে দেখল যে, মা মনসা নাচছেন। নাচ দেখতে দেখতে সরলা ছোট ভাইদের জন্যে দুধ গরম করার কথা একেবারে ভুলে গিয়েছিল, হঠাৎ মনে পড়ায় ছুটে এসে দুধ গরম করে রাখল।
এর কিছু পরেই তার সাপ-ভাইয়েরা দুখ খেতে এল, কিন্তু দুধ তখনও জুড়োয়নি, গরম দুধ খেয়ে তাদের মুখ পুড়ে গেল। তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মাকে সব জানাল আর বলল যে, ওকে আজ ছোবল মেরে মেরে ফেলবো।
কিন্তু মা মনসা বললেন, “না তা হবে না, বরং ওকে এক গা গয়না পরিয়ে ওর শ্বশুরবাড়িতে রেখো এসো।” শেষে তাই হল, সরলাকে এক গা গয়না পরিয়ে তাকে তার সাপ-ভাইয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এল।
সরলার গায়ে এক গা গয়না দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, এক গা গয়না পরে কত ঢং দেখ।” সরলা তখন বলল, “ষাট! ষাট! বেঁচে থাক আমার আরোল, পারোল, ঢোঁড়া, বোড়া, কেউটে আমার সাপ ভাইয়েরা, আমার আবার গয়নার অভাব!”
তখনও সরলার সাপ-ভাইয়েরা তাকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরেনি, আশপাশেই ছিল।
তারা সরলার কথা শুনে স্বর্গে গিয়ে তাদের মাকে সব বলল। সব কথা শুনে মা মনসা আবার সরলাদের বাড়িতে এলেন আর যেখানে যা সাজে সেই ভাবে সরলাকে আরও গয়না পরিয়ে দিয়ে বললেন, “মা! তুমি পৃথিবীতে এখন থেকেই আমার পুজোর প্রচলন কর।
আমি বাস করবো ফণী মনসা গাছে। দশহরা আর নাগ পঞ্চমীর দিন, এই গাছের ডাল এনে বাড়িতে পুজো করো। প্রত্যেক বছর ভাদ্র মাসের শনি ও মঙ্গলবারে আমার পুজো করে পান্তা ভাত ভোগ দিয়ো, তাহলে কখনও সাপের ভয় থাকবে না।” এই কথা বলে মা মনসা অদৃশ্য হলেন। সেই থেকে দেশে দেশে মা মনসার পুজোর প্রচার হল।
ব্রতের ফল—শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে মনসা পুজো করলে বাড়িতে কখনো সাপে কামড়ানোর ভয় থাকে না।
বিপত্তারিণী ব্রতের সময় বা কাল – আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের থেকে আরম্ভ করে , দশমীর ভেতর যে শনিবার ও মঙ্গলবার পড়ে সেই বারে এই ব্রত করার নিয়ম । সধবা মাত্রেই এই ব্রত করতে পারে ।
বিপত্তারিণী ব্রতের দ্রব বিধান – বড় নেবেদ ১ টি , কয়েকটি কুচো নেবেদ , একটা ভুজয়ী , ১৩ রকম ফুল , ১৩ রকম ফল কেটে দু -ভাগ করা ,একটা চুপড়িতে ১৩ গাছা লাল সুত ,পান , সুপারি ,চুন, খয়ের , ঘি ,ময়দা ইতাদি প্রয়োজন।
যে ব্রত করে ব্রতের আগের দিন তাকে হবিষ করে থাকতে হয় । ব্রতের জন্যে একটা ঘট পেতে তার ওপর আমের ডাল ও সরা দিতে হয় । এই সরাতে নানা রকমের ফল মূল দিয়ে মা দুর্গার পূজা করতে হয় । ১৩ টি ফুল ,ফল ও পিঠেও এর সঙ্গ দিতে হয়।
যে ব্রত করে তার জন্যে ১৩ টি ফল দু -ভাগ করে দিতে হবে এবং তার সঙ্গে পান সুপারি থাকবে । এই জিনিস গুলির একটা ভাগ ব্রাহ্মণকে দিতে হয় আর অন্য একটা ভাগ থাকবে ব্রতীর জন্যে।
১ টা পেতে আর ভোজ্য ব্রাহ্মণ কে দান করা নিয়ম । পুজোর শেষে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে ১৩ টি গাট দেওয়া লাল সুত স্ত্রীলোকের বা হাতে আর পুরুষের ডান হাতে বেধে দিতে হয় । ব্রতীকে সেই দিন লুচি খেতে হয় ।
বিপত্তারিণী ব্রত কথা – পুরকালে নারদ ঋষি বেড়াতে বেড়াতে একদিন কেলাস -এ গিয়া উপস্থিত হলেন । সেখানে শিব ও দুর্গা কে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন, – ”প্রভু , আপনিতো মঙ্গল ময় আর সব রকম মঙ্গল এর কারণ , এখন বলুন তো , কি ব্রত করলে মানুষ সন রকম বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারে ?”
নারদের কথা শুনে মহাদেব বললেন, “যে স্ত্রীলোক বিপত্তারিণীর ব্রত করে, সে সব রকম বিপদ থেকেই উদ্ধার পায়।” নারদ জিজ্ঞাসা করলেন, “পূর্বে এই ব্রত কে করেছিলেন , তার নিয়ম কি এবং ফল কি অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন।”
নারদের এই কথা শুনে মহাদেব বললেন, “পুরকালে বিদর্ভ রাজ্যে এক সত্য নিষ্ঠা রাজা ছিলেন। তার স্ত্রীও ছিলেন নানা গুনে সম্পন্ন। ঘটনা চক্রে একদিন চমারের বউয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
লুকিয়ে লুকিয়ে তারা অনেক জিনিসপত্র দেওয়া নেওয়া করতে লাগলো। একদিন দুজনের নানা কথাবার্তা বলার মাঝখানে রাণী বললেন কখনো গোমাংস আমি দেখিনি তুমি একটু গোমাংস আমাকে লুকিয়ে এনে দিতে পারো ?
এরপরে রাণীর কথামত চামর বউ একদিন একটু গোমাংস বেশ ঢাকাঢুকি দিয়ে এনে রানীকে দিয়ে গেল। রণীও সেটা নিজের ঘরে ঘরে লুকিয়ে রাখলেন। ক্রমে কথাটা রাজার কানে গিয়ে উঠল এবং রাজা খুবই রেগে গেলেন।
পরক্ষণেই তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে রানীকে বললেন “তোমার ঘরে তুমি কি লুকিয়ে রেখেছ শিগগির আমাকে দেখাও। তা নাহলে তোমার গর্দান যাবে।”
রাজার রাগ দেখে রাণীর খুব ভয় হল। কাঁপতে কাঁপতে রাণী বললেন আমার ঘরে নানা রকম ফলমূল আছে প্রভু।” রাজাকে এইকথা বলার পর রানি ঘরে ঢুকে মনে মনে মা দুর্গাকে খুব ডাকতে লাগলেন। রাণী মনে মনে বললেন, “মা বিপত্তারিণী !
আমি আজ খুব বিপদে পড়েছি , আমাকে আশ্রয় দাও মা, এ বিপদ থেকে উদ্ধার মা, আমি সারা জীবন তোমার ব্রত পালন করব।” রাণীর প্রার্থনায় দেবী সন্তুষ্ট হয়ে অভয় দিয়ে বললেন, তোমার স্তবে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, তোমার ঘরে যা ছিল সেটা এখন ফলমূল হয়ে গেছে।
তুমি এখন সেগুলো রাজাকে গিয়ে দেখাও, রাজা খুবই সন্তুষ্ট হবেন।” মা দুর্গার কথা মত রাণী ঘরে গিয়ে দেখলেন যে চুপড়িতে গোমাংশের বদলে রয়েছে একরাশ ফলমূল। রাণী তখন সব এনে রাজাকে গিয়ে দেখালেন আর রাজও খুবই সন্তুষ্ট হলেন। ক্রমেই রাণী ও ঐ ব্রত করতে লাগলেন ও অনেক সুখ লাভ করে দেহ ত্যাগের পর সর্গে চলে গেলেন।
বিপত্তারিণীর ব্রতের ফল – এই ব্রত করলে সংসারে কোন বিপদ আপদ থাকেন। মা বিপত্তারিণী তাকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
**************************************************************
অম্বুবাচী র ভিতরে বিপদতারিনী পূজা পড়েছে পূজা কী করা যাবে ?....অবশ্যই করা যাবে।
আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই ষট্ পঞ্চমী ব্রত পালন করতে হয়।
ঘট, আম ডাল, ফুল, দূর্বা, আতপ চাল, নৈবেদ্য ও মিষ্টান্ন। ব্রতের আগের দিন ব্রতিকে নিরামিষ খেয়ে খুব সংযমের সঙ্গে থাকতে হবে।
ব্রতের দিন নিয়ম মত ঘট স্থাপনা করে ফলমূল ও নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করতে হয় তারপর ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম করা কর্তব্য।
একসময় দেবর্ষি নারদ ঘুরতে ঘুরতে গোলকে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে নারায়ন ও লক্ষ্মীকে প্রণাম করে নারদ বললেন ,”হে প্রভু! আমি আজ একটি প্রার্থনা নিয়ে আপনাদের দুজনের কাছে এসেছি।
আমার সে প্রার্থনা আপনাদের পূর্ণ করতে হবে।”লক্ষ্মী ও নারায়ণ দুজনেই বললেন,”কি তোমার প্রার্থনা দেবর্ষি?”দেবর্ষি নারদ বললেন,” প্রভু! আজ অবন্তী রাজ একেবারে লক্ষ্মী ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছেন।
চারিদিকে হাহাকারে ভরে উঠেছে তার রাজ্য। ভক্তি মতি রানী আমার কাছে এই নিবেদন করেছে যে কি ধর্মানুষ্ঠান করলে, রাজা আবার লক্ষী লাভ করতে পারবেন ,রাজ্য আবার সুখ শান্তি ফিরে আসবে।
নারায়ন বললেন,”অবন্তিপুরের এই দৈন দুর্দশা আর হাহাকারের কারণ লক্ষ্মী বলতে পারে, তাকে জিজ্ঞাসা কর।”সেই সঙ্গে লক্ষ্মীকে বলবেন ,”প্রিয়ে! তোমাকে দেবর্ষির প্রার্থনা পূরণ করতে হবে।”
সেই কথা শুনে লক্ষী নারদকে বললেন,”অনেকদিন আগে অবন্তি রাজ আমাকে না মেনে সরস্বতীর কাছে দয়া প্রার্থনা করেছিলেন তার ফলে আমি অবন্তীর আজকে ত্যাগ করেছি।
তাই তার রাজ্যেও অশান্তি আর হাহাকারে পূর্ণ হয়েছে। তবে রাণী আমাকে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে। আমি রানীর পার্থনা নিশ্চয়ই পূরণ করব। যাও তুমি দেবর্ষি।
তাকে শর্ট পঞ্চমী ব্রত পালন করতে বলো, তাহলে আমি অবন্তি রাজগৃহে আবার অচলা হয়েই থাকবো।”এরপর দেবর্ষি ,লক্ষীনারায়ণ কে প্রণাম করে অবন্তি পুড়ে চলে গেলেন।
রানী দেবর্ষির কাছে সব শুনে খুব ভক্তি করে ষট্ পঞ্চমী ব্রত পালন করলেন। তার ফলে লক্ষ্মীর কৃপা দৃষ্টি পরল অবন্তী রাজ্যে।
সারা রাজ্যের ভরে উঠলো ধন ধান্যে আর ক্রমেই অবন্তি রাজ্যে ফিরে এল পূর্বের মতো ধন-সম্পদ। অবন্তী রাজ্যের রাজার নাম এবং যশ আবার ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
এই ব্রত পালন করলে মা লক্ষ্মীর দয়ার সংসারের কোন অভাব থাকে না।
ফুল, তুলসী ,দূর্বা, দীপ, ধূপ ,বিষ্ণুর নৈবেদ্য আতপ চাল, মিষ্টান্ন, ফল, ভুজ্যি একটি ,দক্ষিণা। মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা খুবই কঠিন কারণ শরীর খুব ভালো না থাকলেই মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা সম্ভব হয় না।
দিনের বেলা পুরোহিত কে দিয়ে বিষ্ণু পূজা করিয়ে সারাদিন উপোস করে থাকতে হবে। তারপরে রাত্তিরে চাঁদ উঠলে সেই চাঁদ দর্শন করে, তাঁকে অর্ঘ্য দেওয়া কর্তব্য।
শেষের দুধ ও ফল খেয়ে কম্বল বা খড়ের বিছানায় একলা শয়ন করে রাত কাটান নিয়ম। পরে সকালে উঠে স্নান করে পুরোহিত কে ভুজ্যি আর দক্ষিণা দিয়ে ব্রত শেষ করায় বিধি।
অনেক দিন আগেকার কথা, যমুনা নদীর উপরে একটি ছোট রাজ্যের রাজা ছিলেন সুদেব বর্মন। কৃষ্ণাবতি নামে তার একটি মাত্র মেয়ে ছিল, কিন্তু তার শরীর মোটেই ভালো ছিল না।
সে প্রায়শই রোগে ভুগত। শেষে তার বাঁচার আশা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে এলো। রাজা খুব চিন্তিত হলেন। শেষে যখন দেখলেন যে, তাকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব, তখন তিনি সারা রাজ্যে ঘোষণা করে দিলেন যে, তার মেয়েকে যে সারিয়ে দিতে পারবে ,তাকে অনেক ধনরত্ন দিয়ে তার সঙ্গে তার মেয়ে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দেবেন।
যমুনা নদীর এপারে এক সওদাগর থাকতো, তার অনেক সম্পত্তি ছিলএবং একটি ছেলে ছিল। ছেলেটির নাম শশাঙ্ক কুমার। শশাঙ্ক কুমার এক সময়ে কৃষ্ণা বতি কে দেখে মনে মনে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল ও তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। এমন কি সে রাজার কাছে গিয়ে কৃষ্ণা বতি কে বিয়ে করার কথা ও জানিয়েছিলেন।
রাজা কিন্তু এতে খুব অসসন্তুুষ্ট হয়ে শশাঙ্ক কুমারের বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তার মেয়েকে ছেলের বউ করার আশা তিনি যেন না করেন ,কারণ এত বড় আশা তার পক্ষে পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এই কথা শোনার পর শশাঙ্ক কুমারের মন খুবই খারাপ হয়ে গেল।
সে তার খাওয়া দাওয়া ও প্রায় ত্যাগ করে দিয়েছিল। সে শুধু জোছনা রাত্রিরে চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে কৃষ্ণাবতি কে পাওয়ার কথাই ভাবতো। এই ভাবেই তার দিনের পোর দিন যায়।
এরই মধ্যে এক দিন পূর্ণিমা রাত্রিরে সে ছাদের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিল, এমন সময় সে স্বপ্ন দেখল যে স্বয়ং চাঁদ এসে তাকে বলেছেন,’তুই আর বৃথা চিন্তা ভাবনা করিস না,
তোর আশা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুই ছদ্ম বেশ ধারণ করে কাল রাত সভায় উপস্থিত হয়ে রাজাকে বলবি যে, তুই কৃষ্ণাবতীর রোগ সারিয়ে দিতে পারবি।
পরে সন্ধ্যার সময় আমার পুজো করে সেই পুজোর প্রসাদ কৃষ্ণাবতি কে খাইয়ে দিবি। এই পুজোর প্রসাদ খাওয়ার পরেই তার রোগ সেরে যাবে।
পরের দিন শশাঙ্ক কুমার উপোস করে ছদ্ম বেশ ধারণ করে রাজ সভায় গিয়ে রাজাকে জানালো যে, রাজ কন্যাকে সে ভালো করে দেবে।
রাজা এতে সম্মত হতে ঠিক হল যে শশাঙ্ক কুমারের কথা মতো আসছে আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পুজো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।
আসার মাসের এই শুক্ল পক্ষের তৃতীয়ার দিন আসতে সসংখ কুমার উপোস করে থেকে বিষ্ণুর পুজো করলে এবং রাত্তিরে চাঁদকে অর্ঘ্য দিয়ে সেই প্রসাদ কৃষ্ণাবতিকে খাইয়ে দিল।
নিজে ও সে ফল মূল ও দুধ খেয়ে রাত কাটালো। পরের দিন রাজা দেখলেন যে, কৃষ্ণাবতীর রোগ যেন অর্ধেক সেরে গেছে।
রাজা দেখে খুব খুশি হলেন, ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিতের প্রচুর ধন রত্ন দান করলেন। পরে রাজা জানতে পারলেন যে, শশাঙ্ক কুমারই কৃষ্ণা বতীর রোগ মুক্ত করেছে।
তখন খুব সমারো হোক আর উৎসব আনন্দের মধ্যে শশাঙ্ক কুমারের সঙ্গে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দিলেন, সেই সঙ্গে শশাঙ্ক কুমারকে রাজ্যের যুবরাজ উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা ও করে দিলেন।
তারপর থেকে শশাঙ্ক কুমার আর তার স্ত্রী কৃষ্ণা বতি দুজনে মিলে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত করতে আরম্ভ করল এবং দেহ ত্যাগের পর তাদের অক্ষয় স্বর্গ লাভ হল।
আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করলে জীবের সমস্ত মনো বাসনা পূর্ণ হয় এবং দেহত্যাগের পর গুলোকে বিষ্ণুর কাছে তার স্থান হয়।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সূর্যের পুজো আর অর্ঘ্য দিয়ে বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত আরম্ভ করা হয় । এই ব্রত সধবাদের করণীয়।
জবা কিংবা অন্য কোন লাল ফুল, দূর্বা এবং লাল চন্দন আতপ, চাল, ফল ও মিষ্টান্ন । বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত পালন করতে হলে প্রতি দিন সকালে স্নান করে খোলা বা এলো চুলে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ও কপালে সিঁদুরের টিপ ও আলতা পরে তিন বার হাত জোড় করে সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে প্রণাম মন্ত্র পড়ে প্রণাম করতে হবে।
এক দেশে একজন খুব গরিব ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ছিল। ব্রাহ্মণ সারাদিন ভিক্ষে করে যা পেত তাই নিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরত। তারা তাই রান্না করে রাত্তিরে খেতে এবং সকালের জন্য কিছু পান্তা ভাত রেখে দিত।
পান্তা খেয়ে সকালে ব্রাহ্মণ আবার ভিক্ষায় বেরত। ব্রাহ্মণী সব সময় চোখের জল ফেলতো আর ভগবানকে ডেকে ডেকে বলত, “ভগবান! আমাদের দুঃখ কি আর বুঝবে না?”
পবন কুমার নামে সেই দেশের রাজা একটি ছেলে ছিল তার নাম পবন কুমার। সে কুষ্ঠ রোগে ভুগছিল। এই কারণে রাজার মনে কোন শান্তি ছিল না। নানান দেশের নানান রকম চিকিৎসকের বিয়ের রাজা ছেলে চিকিৎসা করালেন,
কিন্তু কেউ কবর কুমারকে সারিয়ে দিতে পারল না। পবন কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মন্ত্রীর মেয়ে কনক মালার। স্বামীর এই রোগ কেউ সারাতে পারল না দেখে কনক মালা সব সময় খুব কান্নাকাটি করত।
রাজপুরীর ভেতরে একটা বাগানে সূর্য মন্দির ছিল, কনক মালা রোজই সেখানে গিয়ে পুজো দিত। একদিন সকালে উপোস করে স্নান করার পর সে সূর্য মন্দিরে গিয়ে ধর্না দিয়ে খুব কাতর ভাবে সূর্যদেবকে ডাকতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পরে কনক মালা সেই মন্দিরের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে একটা বিচিত্র স্বপ্ন দেখল যে, লাল কাপড় পরা একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ তার সামনে এসে বলছে, “আমি স্বয়ং সূর্য দেব!
তুই আমাকে খুব কাতর করে ডাকছিস বলে আমি তোর সামনে এলাম। তোর মনে কি আছে আমি জানি। আমি যা বলি মন দিয়ে সেই মত কাজ করিস, তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে। কয়েক জন্ম আগে তোর স্বামী এক ব্রাহ্মণের চাকর ছিল, কিন্তু সে ছিল খুব রাগী।
এক দিন সামান্য কথা কাটা কাটির পর সে ব্রাহ্মণকে একটা লাথি মেরেছিল। সেই ব্রাহ্মণ আমাকে খুব ভক্তি করত। সে আমার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলল,”সূর্যদেব, একে সাত জন্মের কুষ্ঠ রোগ দাও।
তারপর থেকে সজন্ম পর পর তোর স্বামী কুষ্ঠ রোগে ভুগছে। তুই আমার কথা মতো কাজ কর তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে।”
কনক মালা বলল,”বলুন প্রভু, আমাকে কি করতে হবে? “সূর্যদেব তখন বললে,”রাজ পুরীর রাজ দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কোষ দূরে একটা ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে খুব গরীব এক ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী বাস করে।
সেই ব্রাহ্মণকে দিয়ে আমার পুজো ও অর্ঘ্য দান করিয়ে তোকে তাদের চরণামৃত খেতে হবে এবং তাদের অনেক ধন দৌলত দিতে হবে।”এই সময় কনক মালার ঘুম ভেঙে গেল, তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
কনক মালা তাড়াতাড়ি রাজপুরীতে ফিরে এসে সব কথা রাজাও রানীকে জানালো। এরপরই কাল বিলম্ব না করে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে রাজ বাড়িতে আনানো হলো।
পবন কুমার ও কনক মালা, সেই ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর পা ধোয়া জল পান করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইলো। ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি, পরে সূর্যদেবের দয়ায় তারা সবই জানতে পারল।
সূর্য দেবের দয়াতে পবন কুমারের কুষ্ট ব্যাধি সম্পূর্ণ সেরে গেল। রাজা ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে অনেক ধন দৌলত দিলেন। পবন কুমারের রোগ সারার জন্য রাজার আদেশে রাজ্যের রাজধানীতে লেগে গেল আনন্দ উৎসব।
তারপর একদিন আষাঢ় মাসে শুক্লা সপ্তমী তিথিতে খুব জাক জমকের সঙ্গে সূর্য মন্দিরে পবন কুমার ও কনক মালা সেই ব্রাহ্মণকে নিয়ে বিবস্বৎ সপ্তমির ব্রত করলো।
এই ব্রত যে পালন করে সে রোগ, শোক আর বিপদের হাত থেকে নিস্তার পায়, মা লক্ষ্মী তার বাড়িতে অচলা হয়ে অবস্থান করেন।
জয় মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত সময় বা কাল— জৈষ্ঠ মাসেই এই ব্রত করার নিয়ম । ১ লা জৈষ্ঠ থেকে সংক্রান্তি পর্যন্ত যতগুলো মঙ্গলবার পড়ে ,তার প্রতেক মঙ্গলবারেই নিয়মিতভাবে ব্রতের পালন ও অনুষ্ঠান পালন করিতে হয়।
কুমারী ও সধবারা জয় মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত করিতে পারে ।
জয় মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতের দ্রব ও বিধান — সতেরোটি সুপারি ,ধান, দুর্বা ,ফুল ,পাকাআম ,পইতে ও কাঁঠাল ইত্যাদি । একটা সিঁদুর -কোট ,একখানা আয়না ও চিরুনি । প্রথমে আলপনা দিয়া একটি পদ্ম একে তার মাঝখানে কতকগুলো ধান ছড়িয়া দিয়া ওপর ঘট বসাতে হয়
একেই মঙ্গলচণ্ডীর ঘাট বলা হয় । ওই ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়া সবস্তীকের মত দুটি মূর্তি একে দিতে হয় । ঘটে জল ভর্তি করে তার উপরে রাখতে হবে দুটো পান আর একটি কলা ।
ঘটের পাশেই রাখতে হবে ভারা । ওই সময় সাধারনত যে সব ফল পাওয়া যায় তাই দিয়েই ভারা তৈরি করা হয়ে থাকে । এতে দিতে হয় দুটি করে আম ,কলা ,লেবু ,লিচু ,জামরুল ,খেজুর ,গোলাপজাম ,কালোজাম ও সুপারি।
এর ওপরে একটা গোটা কাঠাল ও দেওয়া যেতে পারে । তারপর ভরার পাশের রাখতে হবে জল । ১৭ টি কাঠাল পাতা , ১ টি বেল পাতা একসঙ্গে বেধে ভারার পাশে রাখা কর্তব । ১৭ গাছা দুর্বা ,একটা কলার ঠোলায় পুরে তার কাছে রাখতে হবে।
থওলটির গায়ে যেন সিঁদুর মাখানো থাকে । এর উপর ১৭ টি তুলসী পাতা , ১৭ টি আমন ধানের চাল , ও ১৭ টি যবের চাল , এক টুকরো কলাপাতায় মুড়ে ভরার কাছে রাখতে হবে । প্রতেক ব্রতীর জন্যে একটি সিঁদুর কৌটো ,
একখান আয়না ও একটি চিরুনি দিতে হবে । আর পুরোহিত পূজা করবে প্রোটেকের নামে সংকল্প করে । পুজোয় সদ্ধ মত ফল মূল ও নৈবদ্ধ দেয়ার নিয়ম । পূজার শেষে কলার থলায় পোড়া ধান ও যবএর চাল ,
তুলসী পাতা ও কলার সঙ্গে মেখে নিয়া গিলে খেতে হয় । এইগুলো খাওয়ার সময় সাবধান হয়ে গিলতে হবে যাতে সেগুলো দাতে না ঠেকে যায়। এটাই হলো গদ খাওয়া। এই সম্পূর্ণ গদকে তিনভাগ করে তিনবারে সমস্তটা খেয়ে নেওয়াই বিধি।
ব্রতীরা দিনের বেলা ফল-মূল এবং রাত্তিরে লুচি খেতে পারে কিংবা দিনের বেলায় লুচি আর রাত্তিরে ফল-মূল খেতে পারে।
জয় মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতকথা— ব্রতকথা শোনার সময় তিনগাছা দূর্বা ও একটি করে ফুল হাতে নিয়ে ব্রতকথা শুনবে, এবং ব্রতকথা শেষ হলে জল খাবে।
শিবের বাড়ি কৈলাস পর্বতে। আকাশ থেকে যেন কোটি কোটি, চাঁদের আলো ঝরে পড়ছে সেখানে। গন্ধর্ব, কিন্নর, যক্ষ ও বিদ্যাধরদের গানে কৈলাসে শিবলোক পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
এমনি একটা দিনে মা ভগবতী পদ্মার সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন, এমন সময় হঠাৎ তাঁর মনে এলো যে, মর্ত্যে তাঁর পুজোর প্রচলন হওয়া দরকার তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই কথা শুনে পদ্মার খুব ভাবনা হলো। সে ভাবতে লাগলো কেমন করে মর্ত্যে মা’র পুজোর ব্যবস্থা হতে পারে। পদ্মার এই ভাব দেখে মা বললেন যে, এর জন্যে কারুকে ভাবতে হবে না, তিনি নিজেই তাঁর পুজোর ব্যবস্থা করবেন। আর করলেনও তাই
“মায়া করি ধরে মাতা জরাতীর বেশ, হাতে লাঠি কাঁধে ঝুলি উড়ি পড়ে কেশ।”
এমনিই এক বুড়ীর বেশ ধরে মা চললেন মর্ত্যে। এই বেশে মা উজানী নগরে এক বেনে সওদাগরের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এই বেনে সওদাগরের সাতটি মেয়ে, ছেলে একটিও নেই। মা এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে ঢুকলেন গিয়ে
বেনের বাড়িতে। তখন একেবারে ভর দুপুরবেলা, বাইরে প্রচণ্ড রোদ, তাই ঘরের বাইরে কেউ বেরুচ্ছে না, এমনি সময়ে এসে চাইলেন ভিক্ষে।
বেনেবৌ তখনি চাল আর টাকা থালায় নিয়ে ভিক্ষে দিতে এলেন। ব্রাহ্মণী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হ্যা মা, তোমার ছেলে মেয়ে ক’টি। বেনেবৌ বললো, ‘আমার সাতটি মেয়ে হয়েছে, ছেলে একটিও হয়নি মা।’
বেনেবৌ-এর উত্তর শুনে, মা আর তার হাত থেকে ভিক্ষে নিলেন না। তিনি বললেন, ‘ছেলে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে নেই।’ এই কথা বলে ব্রাহ্মণী বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং কাছেই একটা অশ্বথ গাছের তলায় গিয়ে বসলেন।
এদিকে দুপুরবেলায় এক বুড়ী ভিক্ষে নিতে এসে, ছেলে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে নেই বলে চলে গেল। এতে বেনেবৌ-এর খুব দুঃখ হলো, সে ভিক্ষের থালা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বসে বসে কাঁদতে লাগল।
বেনেবৌ-এর কান্না শুনে, সাত মেয়ে ছুটে এলো, দাস-দাসীরা ছুটে এলো, আর স্বয়ং সওদাগর ছুটে এলেন। সকলে বেনেবৌ-এর কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু বেনেবৌ কোনো কথা বলে না।
শেষে সওদাগর অনেক অনুনয় বিনয় করার পর সে বলল সেই ব্রাহ্মণী ভিখারিণীর কথা। বেনেবৌ আরও বলল যে, ভিখারিণী বলে গেছে। যে, মেয়ে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে আছে তবুও ছেলে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে নেই।
সেই জন্যে বেনেবৌ জেদ ধরেছে যে, ছেলে না হলে সে আর জীবন রাখবে না। বেনে সওদাগর তখন লোকজন নিয়ে বেরুল বুড়ীর খোঁজে। কিছু দূর গিয়েই সওদাগর একটা অশ্বত্থ গাছতলায় বুড়ীকে বসে থাকতে দেখলো।
সওদাগর অমনি গিয়ে বুড়ীর পা দু’খানা চেপে ধরে বললো, “মা আমার বৌ ছেলে আঁটকুড়ো বলে তার হাতে ভিক্ষে নাওনি, এতে তার খুবই দুঃখু হয়েছে। এখন তুমি মা দয়া করে একটা ওষুধ দাও, যাতে সে ছেলের মুখ দেখতে পারে।
বুড়ী সব শুনে চুপ করে রইলো—শেষে অনেক সাধ্য সাধনার পর বললে, ‘তুই যখন নেহাতই ছাড়বি না তখন তোকে একটা ফুল দিচ্ছি, এইটা নিয়ে যা। ফুলটা খুব সাবধানে রাখবি। বেনেবৌ যখন অশুচি হবার চারদিন পরে স্নান করে উঠবে,
তখন তাকে এই ফুল ধোয়া জল খেতে বলিস, তাহলে তার চাঁদের মত ছেলে হবে। বুড়ীর কাছ থেকে ফুল পেয়ে সওদাগর ছুটলো বাড়িতে এবং তার বৌয়ের হাতে ফুলটি দিয়ে তাকে সব কথা বলল।
কিছুদিন গেলে, এইবার বেনেবৌ অশুচি হওয়ার পর স্নান করে উঠে সেই ফুল ধোয়া জল খেল। মা ভগবতীর দয়ায় অল্পদিনের মধ্যেই বেনেবৌ-এর পেটে সন্তান এল। বুড়ো বয়সে বৌ গর্ভবতী হয়েছে,
এবার তার আঁটকুড়ো নাম ঘুচবে, বাড়ীতে সকলের কী আনন্দ। ক্রমে ন মাসে বেনেবৌ এর সাধ দেওয়া হল খুব ঘটা করে। এইভাবে দশমাস দশদিন কেটে যাওয়ার পর বেনেবৌ-এর প্রসব বেদনা উঠলো,
কিন্তু প্রসব বেদনায় সে খুব কষ্ট পেতে লাগল, প্রসব আর কিছুতেই হয় না। সকলে খুবই ভাবনায় পড়েছে। এমন সময় একজন বৃদ্ধা এসে বৌয়ের ওই অবস্থা দেখে বললো,
‘বউমা এতো কষ্ট পাচ্ছে, সে একবার মা দুর্গাকে ডাকুক না তিনিই সব দুর্গতি দূর করবেন।” এই কথা শুনে বেনেবৌ কেঁদে কেঁদে মা ভবানীকে ডাকতে লাগলো। এমন সময় কৈলাসে মা ভবানীর সিংহাসন টলে উঠলো।
মা তখন পদ্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হ্যারে পদ্মা, হঠাৎ আমার সিংহাসন এইভাবে টলে উঠলো কেন?” পদ্মা তখন বললে, ‘মা, তুমি যে বেনেবৌকে ওষুধ দিয়েছিলে ছেলে হবার জন্যে আজ ন’দিন ধরে প্রসব বেদনায় সে ভয়ানক কষ্ট পাচ্ছে, তাই সে তোমায় ডাকছে।’ পদ্মার কথা শুনে মা’র মনে খুব কষ্ট হলো।
তিনি আবার বুড়ীর বেশে বেনের বাড়ি গিয়ে হাজির হলেন। বাড়িতে তখন অনেক লোকজনের যাতায়াত চলছে। মা তখন একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ্যাগা, কী হয়েছে তোমাদের বাড়িতে এত লোকজন কেন?’ মেয়েটি তখন বুড়ীকে সব কথা বললো।
বুড়ী তখন বললে, ‘আমি কি বৌরাণীকে একবার দেখতে পারি?? মেয়েটি বলল, “কেন পারবে না মা?’ এই বলে মেয়েটি বুড়ীকে নিয়ে গেল পেনেবৌ-এর কাছে। বুড়ী তখন বললে, ‘ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে যাও,
আমি একলা বৌরাণীর কাছে থাকবো, তোমাদের কোনো ভয় নেই।’ বুড়ীর কথা মত সকলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বুড়ীর বেশে মা ভগবতী বৌরাণীর গায়ে তাঁর পদ্মহস্ত বুলিয়ে দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গে বেনেবৌ একটি চাদের মত ছেলে প্রসব করলে। মা ভবানী তখন ছেলেটিকে একটু আদর করলেন আর বললেন, ‘এর নাম রেখো জয়দেব।’ এই বলে মা অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। হঠাৎ আবার মা ভগবতীর সিংহাসন টলে উঠলো। আবার বুড়ীর বেশে মা গিয়ে হাজির হলেন ধনপতি সদাগরের বাড়িতে। তেমনি দুপুরবেলায় সেখানে গিয়ে ভিক্ষে চাইলেন।
ধনপতির বৌ তখনি থানায় করে। চাল আর টাকা নিয়ে এসে বুড়ীকে ভিক্ষে দিতে এল। বুড়ী তখন তাকে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ মা, তোমার ছেলে-মেয়ে কটি?’ বেনেবৌ বলল, ‘আমার সাতটি ছেলে, মেয়ে হয়নি মা।’
এই কথা শুনে বুড়ী আর ভিক্ষে নিলেন না, শুধু বলে গেলেন, ছেলে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে আছে, তবু মেয়ে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে নেই।
এই কথা শুনে বেনেবৌ ভিক্ষের থালা ছুঁড়ে ফেলে দিলো আর নিজে মাটিতে পড়ে খুব কাঁদতে লাগলো। তার কান্না শুনে বাড়ি শুদ্ধ লোক এসে পড়লো তার কাছে, আর কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করতে লাগলো।
কিন্তু বেনেবৌ উত্তরই দেয় না। অনেক সাধ্য সাধনার পর সে বললো যে, এক ব্রাহ্মণী তার হাতে ভিক্ষে না নিয়ে চলে গেছে, আর বলে গেছে ছেলে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে আছে, কিন্তু মেয়ে আঁটকুড়োর মুখ দেখতে নেই।
এই কথা বলার পর বেনেবৌ খুব কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল যে, মেয়ে না হলে সে আর কিছুতেই তার প্রাণ রাখবে না। সওদাগর তখন লোকজন নিয়ে বুড়ীর
খোঁজে বেরুলো। তারা কিছুদূর গিয়েই দেখলো যে, বুড়ী একটা বটগাছের নিচে বসে আছে। সওদাগর তখন তার পা দুটো ধরে অনেক অনুনয় বিনয় করে বললো, ‘মা আমার মেয়ে হয়নি বলে তুমি আমার বৌয়ের হাতে ভিক্ষে নাওনি,
সে কেঁদে কেঁদে সারা হচ্ছে। এখন কী করে আমার মেয়ে আঁটকুড়ো নাম ঘুচবে দয়া করে তুমি তার ব্যবস্থা করে দাও মা।’ সওদাগরের কথা শুনে মা’র দয়া হলো, তখন তিনি তাঁর ঝুলির ভেতর থেকে একটা ফুল বের করে সদাগরের হাতে দিলেন
আর বললেন, ‘এটা তুই নিয়ে যা, আর খুব যত্ন করে রাখিস। তোর বৌয়ের অশুচি হওয়ার পর চারদিন পরে শুচি হলে এই ফুলটা ধুয়ে জল খেতে বলিস, তাহলেই ফুলের মতো মেয়ে হবে তার।
এর কিছুদিন পরে বেনেবৌ গর্ভবতী হলো। দশমাস দশদিন কেটে যাবার পর প্রসব বেদনা দেখা দিল, কিন্তু প্রসব আর কিছুতেই হতে চায় না, বেনেবৌ খুব কষ্ট পেতে লাগলো। তখন সে কেঁদে কেঁদে মা’কে ডাকতে লাগলো।
এবারেও মা’র সিংহাসন টলে উঠলো। পদ্মা তখন মা’কে বেনেবৌ-এর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললো যে, ‘চার পাঁচদিন ধরে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে।’-এই শুনে মা আর থাকতে পারলেন না।
আবার বুড়ীর বেশ ধরে চললেন বেনেবৌ-এর বাড়ি। সেখানে পৌঁছে বাড়ির লোকের মত নিয়ে বুড়ী গিয়ে ঢুকলো আতুড় ঘরে। এখানে বেনেবৌ-এর কাছে যারা বসেছিল, বুড়ী তাদের বললে, ‘তোমরা সকলে একবার ঘরের বাইরে যাও,
আমি একলা একটু বৌয়ের কাছে থাকবো।’ বুড়ীর কথা শুনে সকলে যেন আবিষ্ট হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বুড়ী তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বেনেবৌ-এর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গে বেনেবৌ একটি ফুলের মত মেয়ে প্রসব করলো। মা তাকে নিয়ে একটু আদর করলেন, তারপর তাকে বেনে বৌয়ের কোলে দিয়ে বললেন, এর নাম রেখো জয়াবতী।’ এই বলে মা অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
ক্রমে জয়াবতী সাত বছরে পড়লো। সে এখন তার সম জুরালে পায়, মলে জিওয়
ধাঁড়ায় কাটে না।
আগুনে জলে ফেলে
দিলে মরণ ঘটে না।
সতীন মেরে ঘর পায়।
রাজা মেরে রাজ্য পায়টি পাড়ার মেয়েদের নিয়ে পুতুল খেলে আবার ঠাকুর পুজোও করে। সে ছেলেখেলার মত বালির নৈবেদ্য, কাঁঠাল পাতা, বেলপাতা, বনের ফুল আর নানান রকমের লতাপাতা দিয়ে আপন মন থেকেই মঙ্গলচণ্ডীর পুজো করতে থাকে।
একদিন সে এইভাবে পুজো করছে এমন সময় জয়দেবের পায়রা এসে বসলো জয়াবতীর কোলে। জয়দেবও পায়রার পেছনে ছুটে ছিল। সে এসে দেখলো পায়রা জয়াবতীর কোলে বসে আছে।
জয়দেব বললে, ‘আমার পায়রা দাও।’ জয়াবতী বললে, ‘বাঃ রে, পায়রা আমার কোলে এসে বসেছে আমি তোমায় পায়রা দেবো কেন? না আমি দেবো না।’
জয়দেবও ছাড়বার পাত্র নয়, সে তার পায়রা নিয়ে তবে ছাড়লো। যাবার সময় সে জয়াবতী আর তার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলো, এ তোমরা কী করছো?’ জয়াবতী বলল, ‘আমরা মা মঙ্গলচণ্ডীর পুজো করছি।’ জয়দেব আবার বলল, এতে কী ফল হয়।”
জয়াবতী বলল
“হারালে পায়, মলে জিওয়
ধাঁড়ায় কাটে না।
আগুনে জলে ফেলে
দিলে মরণ ঘটে না।
সতীন মেরে ঘর পায়।
রাজা মেরে রাজ্য পায় ৷ ”
এই কথাগুলো শোনার পর জয়দেব বাড়িতে ফিরে এসে গোঁসা ঘরে গিয়ে শুলো। কারুর সঙ্গে কোনো কথাই বলে না ছেলে। বাড়ি শুদ্ধ সকলে একেবারে অস্থির। সকলে কত জিজ্ঞাসা করলো যে, কিসের জন্যে তার রাগ হয়েছে,
কিন্তু সে কোনো উত্তরই দিল না। শেষে জয়দেবের মা এসে অনেক অনুনয় বিনয় করতে জয়দেব বললো যে, সদাগরের মেয়ে জয়াবতীর সঙ্গে তার বিয়ে দিলে তবে সে নাওয়া-খাওয়া করবে।
জয়দেবের মা, তার এই কথা শুনে বলল, ‘এরই জন্যে তোর রাগ। এই তোর কথা, এর জন্যে ভাবনা কী, আমি কর্তাকে বলে শীঘ্রই জয়াবতীর সঙ্গে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করে। দিচ্ছি, ওরা তো আমাদেরই ঘর কিছুই আটকাবে না।’
কিছুদিন পরেই বেনে সদাগর জয়াবতীর বাবা ধনপতি সওদাগরের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। ধনপতিও বেনে সদাগরের লোকের মুখে সব শুনে, বিয়ে দিতে রাজী হয়ে গেল আর বিয়ে স্থির হলো। জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলবারে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের জয় মঙ্গলবারের ব্রতের দিন, খুব ধুম ধাম করে জয়াবতীর সঙ্গে জয়দেবের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দিন রাত্তিরে বাসরঘরে জয়াবতী আঁচলে বাধা গদ বের করে খেয়ে নিলো।
তাই দেখে জয়দেব বললো, ও কী, তুমি কোনো তুক করলে নাকি?/ জয়াবতী বলল, ‘তুক তাক কিছুই করিনি, আজকে জয় মঙ্গলবারের ব্রত করেছি, তার গদ খেলুম।”
বিয়ের পরদিন ধনপতি সদাগর জয়াবতীকে সোনার গহনায় একেবারে মুড়ে দিল, আর অনেক ধনরত্ন দিয়ে বর-কনেকে বিদেয় করল। যাবার সময় জয়দেব তার বাবার সঙ্গে না গিয়ে একটা আলাদা ডিঙ্গীতে করে বৌকে নিয়ে চললো।
ছেলের ইচ্ছেয় তার বাবা কোনো বাধা দিলেন না। খানিক দূর যাবার পর জয়দেব জয়াবতীকে বললো, ‘দ্যাখো এখানে চোরের খুব উপদ্রব, তুমি অনেক গয়না পরে আছো, চুরি যাওয়ার খুব ভয় আছে।
তুমি সমস্ত গয়না খুলে তোমার কাপড়ের একটা পুঁটলি করে আমায় দাও, আমি ওটা কোলে নিয়ে বসে থাকি। আর তুমি আমার চাদরটা পরে থাকো।’ জয়াবতী তাই শুনে গহনাগুলোর একটা পুঁটলি করে জয়দেবের হাতে দিয়ে দিল,
আর জয়দেব সঙ্গে সঙ্গে সেই পুঁটলিটা জলে ফেলে দিল। তার পরেই কৈলাসে মা ভবানীর আসন টলে উঠলো। মা পদ্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবার আমার আসন টললো কেন পদ্মা?’ পদ্মা বললো, তোমার জয়দেব,জয়াবতীর সব গহনা জলে ফেলে দিয়েছে, এখন কী উপায় হবে?’ দেবী ভবানী তখুনি রাঘব বোয়ালকে ডেকে বললেন, ‘আমার জয়াবতীর সমস্ত গহনা জয়দেব পুঁটলি করে জলে ফেলে দিয়েছে,
তুমি পুঁটলিটা এখুনি গিলে ফেলে পেটের মধ্যে রাখো। আর খাল, বিল, নদী ও পুকুরে যেখানে যত মাছ আছে, তাদের ডেকে বললেন, ‘কাল থেকে তিন দিন তোমরা সকলে গভীর জলের মধ্যে লুকিয়ে থাকবে।’
এদিকে বেনে সওদাগরের বৌ, মেয়েদের নিয়ে ডিঙ্গা বরণ করতে এলো। সকলে দেখলো—বৌয়ের গায়ে একখানাও গহনা নেই। সকলেই বলতে লাগলো যে, বৌয়ের বাবা অত বড়মানুষ হয়ে, মেয়েকে একখানাও গয়না দেয়নি, কি আশ্চর্য! যাই হোক, বেনেবৌ নিজের ঘরের নানা রকম গহনা বৌকে পরিয়ে বৌ বরণ করলো, আর তাকে ঘরে নিয়ে গেলো।
পরের দিন বৌভাত। ভাল মাছ ধরে দেবার জন্যে জেলেদের ওপর হুকুম হলো। জেলেরাও বেরুলো মাছ ধরতে, কিন্তু কোথাও মাছ মেলে না শেষে নদীতে জাল ফেলতে জালে পড়লো সেই রাঘব বোয়াল মাছ, যে জয়াবতীর গহনার পুঁটলি গিলেছিলো।
জেলেরা মাছ নিয়ে সদাগরের বাড়িতে এলো। প্রকাণ্ড মাছ, বাড়ির সবাই খুব খুশি। মাছ কোটবার আয়োজন হলো। কিন্তু বঁটি, কাটারি এমন কি কুড়ুল দিয়েও সে মাছকে কেউ কাটতে পারলো না।
এইসব ব্যাপার দেখে, জয়াবতী তার শাশুড়ীকে বললো, ‘মা, আমি মাছটা কুটবো?’ শাশুড়ী বললো ‘এতো মানুষ পারলে না আর তুমি পারবে? কী বলছো বৌমা?’ জয়াবতী কিন্তু সহজে ছাড়লো না, শাশুড়ীকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজেই মাছ কুটতে
বসলো। মা মঙ্গলচণ্ডীকে স্মরণ করে সে ছোট বঁটির একটা দুটো কোপ দিতেই মাছটা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো আর তার পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো সেই গহনার পুঁটলি।
জয়াবতী তখনই ঘাটে গিয়ে সেই পুঁটলিটা ধুয়ে নিয়ে নিজের সব গহনাগাটি পরে নিল। তখন সকলেই বলতে লাগলো, “ওঃ! কী গয়নাই দিয়েছেন ধনপতি।’ বেনে সদাগরের বৌয়ের তখন আনন্দ আর ধরে না।
এদিকে জয়াবতীকে সব গহনা ফিরে পেতে দেখে জয়দেব ভাবলো— হারালে পায়—জয়াবতী তো সত্যিই সব হারিয়ে আবার ফিরে পেলো। সেদিন বৌভাত, সতেরোশো বেনে এসেছে নিমন্ত্রণ খেতে।
জয়দেব গিয়ে চুপি চুপি তাদের বলে দিল যে, তারা যেন বলে মাছ যে কুটেছে সেই যদি রান্না করে তবেই তারা খাবে তা না হলে খাবে না। তখুনি কথাটা বেনে সওদাগরের কানে উঠলে, বেনে সওদাগর জয়াবতীর কাছে গিয়ে বললো,
‘মা জয়াবতী, তুমি না রান্না করলে কেউ খাবে না বলছে, এখন কী হবে মা? একটা উপায় যে তোমাকে করতেই হবে। এই কথা শুনে জয়াবতী প্রাণভরে মা মঙ্গলচণ্ডীকে ডাকতে লাগলো।
জয়াবতীর কাতর প্রার্থনা শুনে, আবার কৈলাসে মা ভবানীর আসন টললো। মা পদ্মাকে বললেন, ‘কী হয়েছে পদ্মা, আবার আমার আসন টললো কেন?’ পদ্মা বললো, ‘তোমার ব্রতদাসী জয়াবতী বিপদে পড়ে তোমাকে ডাকছে।
আজ বৌভাত, সতেরোশো বেনে এসেছে নিমন্ত্রণ খেতে, তারা বলছে জয়াবতী না রান্না করলে কেউ খাবে না। তখন মা ভবানী এক শ্বেত মাছির রূপ ধরে উড়ে জয়াবতীর কাছে গিয়ে – উপস্থিত হলেন।
পরে মা জয়াবতীর কানে কানে বললেন, ‘ভয় কী, তুমি বলো ১৭টি হাড়ি চাই, ১৭টি সরা চাই, আর ১৭ গোছা বেড়ী চাই।’ মায়ের কথামতো জয়াবতী গিয়ে শ্বশুরকে ওই জিনিসগুলো আনিয়ে দিতে বললো।
জয়বতীর শ্বশুর তখনি জিনিসগুলো আনিয়ে দিলো। জিনিসগুলো রান্নাঘরে রেখে দেবার পরে জয়াবতী একখানি চেলী পরে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মা চণ্ডীকে স্মরণ করলো। মা অঙ্গুনি এসে উপস্থিত হলেন।
১৭টা উনুন একসঙ্গে জ্বলে উঠলো। দেখতে দেখতে হাড়িগুলোতে রান্না চেপে গেলো আর রান্না হয়েও গেলো অল্প সময়ের মধ্যে। মা তখন জয়াবতীর কাপড়ে আর পিড়িতে একটু হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এইবার বাইরে গিয়ে বলো সব রান্না হয়ে গেছে।’
রান্না সেরে জয়াবতীকে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে এবং সব রান্না হয়ে। গেছে শুনে বেনে সওদাগরের বৌ একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলো, এখন তার আনন্দের অন্ত নেই।
এত শিগগির সব রান্না হয়ে যেতে দেখে সকলেই জয়াবতীর খুব সুখ্যাতি করতে লাগলো। জয়দেব তখন আবার গিয়ে বেনেদের বলে এলো যে, তারা যেন বলে যিনি রান্না করেছেন তিনি পরিবেশন না করলে কেউ খাবে না।
এই কথা বেনে সওদাগরকে জানানো হবার পর, জয়াবতীর শাশুড়ী গিয়ে জয়াবতীকে বেনেরা যেকথা বলছেন সেই কথাগুলো বললো। জয়াবতী আবার মাকে স্মরণ করতে মা মঙ্গলচণ্ডীও সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখা দিলেন এবং জয়াবতীকে বললেন,
তুমি তোমার শাশুড়ীকে বলো, সতেরোশো বেনে একসঙ্গে খেতে বসলে তুমি তাদের পরিবেশন করতে পারবে। তারপর তারা খেতে বসলে তুমি একখানা পাতে সব জিনিস দিয়ে দেবে, তাহলেই দেখবে সব পাতেই জিনিসগুলো পড়েছে।
জয়াবতীর কথা অনুসারে বেনেরা সব একসঙ্গে খেতে বসলো, আর জয়াবতী একখানা পাতে সব জিনিস দিয়ে দিতেই জিনিসগুলো সব পাতেই পড়লো সঙ্গে সঙ্গে।
বেনেরা সবাই খুব তৃপ্তি করে খেয়ে জয়াবতীকে প্রাণ খুলে আশীর্বাদ করে চলে গেলো। জয়াবতীর বিয়ের পর ৫/৬ বছর কেটে যেতে জয়াবতী গর্ভবতী হলো। বেনেবৌ খুব ঘটা করে সাধ দিলো, গরিব-দুঃখীকে অনেক দান করা হলো। শেষে দশমাস
দশদিনের পর ঘর আলো করে ছেলে এলো জয়াবতীর কোলে। পাচুটের দিন ছেলেকে তেল-হলুদ মাখিয়ে পিঁড়িতে শুইয়ে দিয়ে জয়াবতী পুকুরে স্নান করতে গেলো। এই ফাঁকে জয়দেব চুপি চুপি এসে ছেলেটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে
একটা হাড়িতে ভরে তার মুখে সরা চাপা দিয়ে জলে ভাসিয়ে দিলো। এইবার মা আবার পদ্মার মুখে শুনলেন যে, জয়দেব এবার জয়াবতীর ছেলেকে টুকরো টুকরো করে কেটে একটা হাড়িতে ভরে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে
না তখুনি শঙ্খচিল হয়ে এসে হাড়িটি তুলে নিয়ে গেলেন, তারপর কাটা টুকরোগুলো একটা পদ্ম পাতায় রেখে অমৃত কুণ্ডের জল তার উপর ছিটিয়ে দিলেন, ছেলেটিও অমনি বেঁচে উঠলো।
তারপর জয়াবতী স্নান সেরে ওঠবার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে তাঁর কোলে দিয়ে দিলেন, আর তাকে বলে দিলেন যে, জয়দেব তার ছেলেটিকে কুঁচো কুঁচো করে কেটে জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলো,
সে যেন জয়দেবের কাছ থেকে ছেলেটিকে খুব সাবধানে রাখে। জয়াবতী ছেলে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে এলো। জয়দেব এতক্ষণ লুকিয়ে ছিলো, এইবার ব্যাপার কী জানবার জন্যে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই ছেলেকে জয়াবতীর কোলে দেখে
একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলো। তারপর ছেলের ষষ্ঠী পূজোর সময় জয়দেব আবার ছেলেটাকে একলা পেয়ে, তার ঘাড় ভেঙ্গে পুকুর ঘাটে কাঠের নীচে পুঁতে রেখে এলো।
এবারেও মা মঙ্গলচণ্ডী পদ্মার মুখে এই কথা জানতে পারলেন। মা তখন জলদেবীকে ডেকে বললেন, ‘আমার ব্রতদাসী জয়াবতীর ছেলেকে জয়দেব তুলে নিয়ে গিয়ে, তার ঘাড় ভেঙ্গে পুকুরের ঘাটের নীচে পুঁতে রেখেছে। জয়াবতী স্নান করে উঠলে ছেলেকে
তার কোলে দিয়ে দিও।’ জয়াবতী স্নান করে ওঠবার পরে জলদেবী মা’র কথামতো ছেলেকে জয়াবতীর কোলে দিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন, ‘মা, জয়দেব তোমার ছেলেকে মেরে রোই কাঠের নীচে পুঁতে রেখেছিলো, জয়দেবের কাছ থেকে ছেলেকে সাবধানে রেখো মা।
জয়াবতী ছেলে কোলে নিয়ে খুব আনন্দে ষষ্ঠী পূজো করলো। এবারেও জয়দেব লুকিয়ে ছিলো, পরে বাড়ি ঢুকেই দেখলো জয়াবতী ছেলে কোলে নিয়ে বসে আছে।
এইভাবে ছ’মাস কেটে গেলো, এইবার ছেলের ভাতের সময় এলো। ছেলের ভাত উপলক্ষ্যে সতেরোশো বেনে এলো নিমন্ত্রণ খেতে। নিমন্ত্রণ পেয়ে অনেক দূর দূর থেকে লোক এলো বেনে সওদাগরের বাড়িতে।
বাড়িতে তখন চললো খুব আনন্দ উৎসব। ক্রমে এসে গেলো ভাতের দিন। জয়াবতী ভাতের দিন ছেলেকে নাইয়ে-ধুইয়ে নানারকম গহনা পরিয়ে রেখে গেলো স্নান করতে। এদিকে জয়দেব সুযোগ খুঁজছিলো।
এই ফাকে সে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুমোরদের পোয়ানের ভেতর রেখে এলো। সেইদিনই আবার ছিলো পোয়ানে আগুন দেবার কথা। সেই মতো কুমোরেরা পোয়ানে আগুন দিলো, কিন্তু আগুন ধরল না।
তারা কতো রকমে চেষ্টা করলো কিন্তু আগুন কিছুতেই ধরাতে পারলো না। এদিকে কৈলাসে আবার মা’র আসন টললো। মা পদ্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কী?’ পদ্মা বললো, ‘আজ তোমার ব্রতদাসী জয়াবতীর ছেলের ভাত।
সে ছেলেকে শুইয়ে রেখে গিয়েছিলো স্নান করতে, সেই সুযোগে জয়দেব ছেলেটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুমোরদের পোয়ানের ভেতর রেখে এসেছে।’ পদ্মার মুখে সব কথা শুনে, মা আবার এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে নেমে এলেন মর্ত্যে।
কুমোরেরা তখন অনেকজন মিলে পোয়ানে আগুন ধরাবার চেষ্টা করছে। মা কুমোরদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাগা, তোমাদের এখানে এতো ভীড় কিসের?’ কুমারেরা বললো,
‘মা, আমরা পোয়ানে কিছুতেই আগুন ধরাতে পারছি না, যতো বের চেষ্টা করছি আগুন কিছুতেই ধরছে না। আমরা বুঝতে পারছি না ব্যাপার কী।’ মা তখন তাদের সরে যেতে বলে পোয়ানের ভেতর থেকে ছেলেটিকে বার করে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পোয়ানেও আগুন জ্বলে উঠলো।
মা তারপর ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে জয়াবতীর কোলে দিয়ে বললেন, ‘তোমায় কতোবার বলেছি যে, ছেলেটিকে সাবধানে রেখো মা, তা তুমি পারছো না। আজ জয়দেব তোমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে কুমোরদের পোয়ানের ভেতর রেখে এসেছিলো।
এই কথা বলে জয়াবতী এবং তার ছেলেকে আশীর্বাদ করে মা অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সন্ধ্যের পর জয়দেব বাড়ি ঢুকে দেখলো যে, ছেলে বেশ আনন্দে মায়ের কোলে বসে খেলা করছে। এইবার জয়দেব বুঝলো,
তিনবার চেষ্টা করেও যখন ছেলেটার কোনো ক্ষতি করা গেলো না, তখন এ কথা মানতেই হবে যে, ব্রতের ফলের হয়তো অন্যথা কখনো হয় না। এরপর আর একদিন শেষ দেখবার জন্যে জয়দেব একখানা কাটারি দিয়ে ছেলেটাকে কাটতে আরম্ভ করলো।
এমন সময় জয়াবতী এসে বললো, ‘এ কী করছো তুমি? এত রকম করেও তোমার বিশ্বাস হলো না মা মঙ্গলচণ্ডীর ওপর? জয়দেব বেশ খানিকটা লজ্জিত হয়ে বললো, হ্যা এইবার আমার বিশ্বাস হয়েছে।
তারপর থেকে জয়দেব আর কোনো অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করলো না। জয়াবতীকে নিয়ে সে বেশ সুখে ঘর করতে লাগলো। পরে তাদের আরও কয়েকটি ছেলে-মেয়ে হলো। জয়াবতীর শ্বশুর ও শাশুড়ী নাতি-নাতনীদের মুখ দেখে খুব আনন্দে দিন
কাটিয়ে শেষে স্বর্গে চলে গেলো। জয়াবতী আর জয়দেব, তাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে মা মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতের কথা প্রচার করলো এবং তাদেরও প্রচার করতে বলে দিলো।
তারপর এক শুভদিনে স্বয়ং ভগবান পুষ্পক রথ পাঠিয়ে দিলেন। জয়দেব ও জয়াবতী জীবন্ত অবস্থায় সেই রথে চড়ে স্বর্গে চলে গেলো। সকলে তাদের এই অবস্থা দেখে খুব ধন্য ধন্য করতে লাগলো।
সেই থেকে জয় মঙ্গলবারের ব্রতকথা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়লো।
জয় মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতের ফল— যে স্ত্রীলোক জয় মঙ্গলবারের ব্রত পালন করে, সে কখনো জলে ডোবে না, আগুনে পোড়ে না, কোনো অস্ত্রের ঘায়ে তার মরণ হয় না আর তার হারানিধি ফিরে পেয়ে থাকে।
জামাইষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠী ব্রত সময় বা কাল- প্রতি বৎসর জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত করার নিয়ম। সধবা ছেলের মায়েরাই এই ব্রত নিতে ও পালন করতে পারে।
জামাইষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- ফল, ৬টি পান, ৬টি সুপুরি, বাঁশপাতা, হলুদে ছোপন কাপড়ের টুকরো, নতুন ৬ গাছা সুতো, তেল-হলুদ, চিঁড়ে, খই ও দই। প্রত্যেক বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়।
পিটুলি দিয়ে একটি কালো বেড়াল এঁকে একটা পিটুলির কক্ষণ গড়ার নিয়ম। ফল-মূলে বাটা সাজাতে হবে। তারপর ৬টা পান ও ৬টা সুপুরি হলুদে ছোপানো কাপড়ের টুকরো বাশ পাতায় জড়িয়ে, ৬ গাছ্য সুতো পাকিয়ে ও হলুদ নাখিয়ে তার সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।
এই সুতোকে ষাট সুতো বলা হয়। চিঁড়ে, খই, দই, তেল ও হলুদ দিয়ে মা ষষ্ঠীর পুজো করার নিয়ম। পুজোর শেষে ছেলে-মেয়েদের কপালে হলুদ ভূঁইয়ে ঐ ষাট গুতো তাদের ডান হাতে বেঁধে দিতে হয়। পুজোর শেষে ব্রতকথা শুনে ব্রতীকে ফল খেয়ে থাকতে হবে।
জামাইষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠী ব্রতের কথা- এক ব্রাহ্মণীর তিন ছেলে আর তিন বউ ছিল। এই তিন বউয়ের ভেতর ছোটবউয়ের খাবার জিনিসের ওপর খুব লোভ ছিল।
ঘরের খাবার জিনিস সে নিজে চুরি করে খেতো আর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিতো বাড়ির পোষা একটা কালো বেড়ালের ওপর। বেড়ালটা ছিল মা ষষ্ঠীর বাহন, সে রোজ গিয়ে মা ষষ্ঠীকে এই চুরি করে খাওয়ার সব কথা বলে দিতো।
কিন্তু ছোট বউ নিজের দোষ কখনো স্বীকার করতো না। এমনি করে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অরণ্য ষষ্ঠীর ব্রতের দিন এসে পড়ল। ব্রাহ্মণী ব্রত করবে, বাড়িতে হবে আনন্দ-উৎসব।
ব্রাহ্মণী পুজোর জন্যে নিজের হাতে পায়েস, মিষ্টি, ক্ষীর ও নাড়ু তৈরী করল এবং ছোটবউকে বলল, ‘বউমা, আমি স্নানটা সেরে আসি, তুমি ততক্ষণ এইখানে বসো—দেখো যেন বেড়ালটা কোনো জিনিসে মুখ না দেয়।
ব্রাহ্মণী চলে গেলো স্নান করতে, এদিকে এই সব ভালো ভালো খাবার দেখে ছোটবউ আর লোভ সামলাতে পারলো না। মিষ্টি, ক্ষীর, পায়েস, দই যা পারলো তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল, আর একটু দই নিয়ে বেড়ালটার মুখে মাখিয়ে দিল।
এদিকে ব্রাহ্মণী স্নান করে এসে দেখল যে, খাবারগুলো সব কে যেন খাবলে খেয়ে গেছে। ব্রাহ্মণী ছোটবউকে তখন জিগ্যেস করল, “ও বউমা! পুজোর মিষ্টিগুলো কে এইরকম করে খাবলে খেয়ে গেল?
ছোটবউ বলল, ‘কী জানি মা! একটু অন্যমনস্ক হয়ে ছিলুম সে সময় আমার চোখে ধুলো দিয়ে বেড়ালটা সব খেয়ে নিয়েছে। ওই দেখুন না, ওর মুখে সব লেগে রয়েছে। এই বলে ছোটবউ বেড়ালটাকে বেশ দু’চার ঘা দিয়ে দিল।
শেষে ব্রাহ্মণী আবার সব নতুন করে যোগাড় করে পুজোর ব্যবস্থা করল। এদিকে বেড়ালটা কাদতে কাদতে বলে চলে গেল এবং যেখানে দেবী অরণ্যষষ্ঠী রয়েছেন তাঁর কাছে গিয়ে সব কথা বলে দিল। সব শুনে ষষ্ঠী দেবী বললেন, ‘আমি সব জানি তুই কাদিস নি–আমি শিগগিরই ছোটবউকে এর প্রতিফল দেবো।”
এই ঘটনার কয়েক মাস পরে ছোটবউয়ের সন্তান সম্ভাবনা দেখা দিল এবং দশ মাস দশ দিন পরে সে ফুটফুটে সুন্দর চাঁদের মতন একটি ছেলে প্রসব করল। ব্রাহ্মণী নাতির মুখ দেখে খুব খুশি হল এবং গরীবদের ডেকে দান ধ্যান করতে লাগল।
এদিকে ছোটবউ তার ছেলেকে কোলের কাছে নিয়ে রাত্তিরে নিশ্চিন্দি হয়ে শুলো। কিন্তু হায়, সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গাতে দেখল ছেলে তার কাছে নেই। শাশুড়ী ও বৌয়ের খুব ভাবনা হল, তারা বেশ কয়েকজন লোক দিয়ে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল, কিন্তু ছেলেকে কোথাও পাওয়া গেল না।
এই রকম করে ছোটবউয়ের পর পর সাতটি ছেলে আর একটি মেয়ে হল, কিন্তু সব কটিই হারিয়ে গেল। রাত্তিরে ছোটবউ ছেলে নিয়ে শুতো আর সকাল হলেই ছেলে পাওয়া যেত না।
তখন পাড়ার সকলে বলতে লাগল যে, ছোটবউ মানুষ নয় নিশ্চয় রাক্ষসী, ছেলেগুলোকে সেই নিশ্চয় খেয়ে ফ্যালে। এই বউকে কিছুতেই বাড়িতে রাখা উচিত নয়, ওকে এখুনি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
পাড়ার লোকের সব কথাই ছোটবউয়ের কানে গেল। সে আর সহ্য করতে পারলো না, নিজেই বাড়ি ছেড়ে একদিন বনে চলে গেল। সে বনে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, ‘আমার এ কী হল মা ষষ্ঠী?
তুমি আমায় সাতটি ছেলে আর একটি মেয়ে দিয়েও সব কেড়ে নিলে কেন মা! আমাকেও তুমি নিয়ে নাও, আমি একদিনও আর বাঁচতে চাই না।’ ছোটবউকে এইভাবে আক্ষেপ করতে দেখে মা অরণ্য ষষ্ঠীর দয়া হল, তখন তিনি এক বুড়ীর রূপ ধরে তার কাছে এলেন। তিনি তাকে বললেন, ‘এই বন-বাদাড়ে, তুমি একলা বসে কাঁদছো কেন মা?’
ছোটবউ তখন সমস্ত ঘটনা মা ষষ্ঠীকে খুলে বলল। মা ষষ্ঠী তখন বললেন, ‘ওরে বেটি! আসল কথাগুলো সব লুকিয়ে রাখলি কেন? তুই যে লুকিয়ে লুকিয়ে মাছ, দুধ, পুজোর মিষ্টি সব নিজে খেয়ে ফেলে শাশুড়ীর কাছে কালো বেড়ালটার নামে দোষ দিতিস তাতে তোর লজ্জা হোত না? সেই কারণেই আজ তোর এই দুর্দশা হয়েছে।
তখন ছোটবউ, বুড়ীর পায়ের ওপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, ‘তুমি কে মা? কেমন করে আমার সব কথা জানলে। আমায় দয়া করো, তা না হলে আমি তোমার পা ছাড়বো না।
মা ষষ্ঠী ছোটবউয়ের কাতরতা দেখে বললেন, ‘বাছা! আমিই মা ষষ্ঠী, পৃথিবীর লোক যা করে আমি সব জানতে পারি। ছোটবউ তখন আবার কেঁদে বলতে লাগল, ‘মা।
আমি খুবই অন্যায় করেছি, আমার পাপের শেষ নেই, আজ যখন দয়া করে আমায় দেখা দিয়েছো তখন তুমি আমায় রক্ষে করো মা-তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
মা ষষ্ঠী তখন বললেন, ‘দ্যাখো পথের ধারে ওইখানে একটা মরা বেড়াল পচে পড়ে রয়েছে। যদি এক হাড়ি দই ওই বেড়ালটার গায়ে ঢেলে দিয়ে সেই দই জিভ দিয়ে চেটে ফের হাড়িতে পারো, তবে তোমার সব ছেলে-মেয়ে আবার ফিরে পাবে।
এই কথা শুনে ছোটবউ একটুও দেরি করল না, এক হাঁড়ি দই এনে সেই পচা গায়ে ঢেলে দিল এবং পরে জিভ দিয়ে চেটে সমস্ত দই আবার হাঁড়িতে তুলে এনে মা ষষ্ঠীকে দেখালো। মা ষষ্ঠীও ছোটবউয়ের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আগে থেকেই দাড়িয়েছিলেন।
তিনি ছেলে-মেয়েদের ছোটবউকে দিয়ে বললেন, এই নাও তোমার ছেলে-মেয়ে। এই অমৃত দই দিয়ে সকলের কপালে ফোঁটা দাও, আর এদের নিয়ে আনন্দে সুখে ঘরকন্না কর।
আর কখনও পুজোর জিনিস লুকিয়ে খেয়ে আমার বাহনের নামে দোষ দিও না, ছেলে-মেয়েদের “দূর হ, মরে যা”, কখনো বলো না, অন্য কাউকে যদি বলতে শোন, তো তখন, মা “ষষ্ঠীর দাস” ও “ষাট ষাট” বলবে।
এই সব কথা বলে মা অরণ্যষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ছোটবউ তখন তার সাত ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এসে তার শাশুড়ীকে প্রণাম করল। শেষে ষষ্ঠীদেবীর সব কথা শাশুড়ীকে জানালো।
ব্রাহ্মণী সব শুনে একেবারে অবাক হয়ে গেল। এখন নাতি-নাতনীকে পেয়ে তার খুব আনন্দ হল। ব্রাহ্মণী অল্পদিনের মধ্যে নাতি-নাতনীর বিয়ে দিল।
পরের বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে খুব জাক-জমক করে ছোটবউ অরণাষষ্ঠীর ব্রত করল এবং মেয়ে-জামাইকে আনিয়ে জামাইয়ের কপালে দইয়ের ফোঁটা দিল।
সেই থেকে মা অরণ্যষষ্ঠীর মাহাত্ম্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এই ব্রতকেই জামাইষষ্ঠী বা ষষ্ঠী বাটা বলা হয়।
জামাইষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠী ব্রতের – এই ব্রত ছেলে-মেয়েদের মায়েরা পালন করলে তাদের ছেলে-মেয়েদের প্রভূত কল্যাণ হয়ে থাকে।
একদিন ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদকে বললেন, হে নারদ ! রম্ভা-তৃতীয়া ব্রতের কথা বলছি শোনো। এই রম্ভা-তৃতীয়া ব্রত করলে সৌভাগ্যসহ স্ত্রী-পুত্র লাভ হয়ে থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে এই ব্রত আরম্ভ করে এক বছরে এই ব্রত সম্পূর্ণ করতে হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাসে বারায়ণ নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে সৌভাগ্যপ্রাপ্তি হয়। আষাঢ় মাসে লবঙ্গফুলে মাধবী নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে শোননাশ হয়।
শ্রাবণ মাসে টগরফুলে শ্রী নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে ধন-ধান্য বৃদ্ধি হয়। ভাদ্র মাসে পদ্মফুলে বিমলা নামে দেবীর পুজো করবে, এতে সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়।
আশ্বিন মাসে জবাফুলে নগনন্দিনী নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে পাপনাশ হয়। কার্তিক মাসে জাতিফুলে পদ্মজা নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে ভব-ভয় দূর হয়।
অগ্রহায়ণ মাসে বেলপাতা দিয়ে উমা নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে সর্বসৌভাগ্য লাভ হয়। পৌষ মাসে কুরুবকফুলে গিরিজা নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে পুত্র-পৌত্রাদি জন্মে।
মাঘ মাসে কহ্লার ফুলে সুভদ্রা নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে সৌন্দর্যবৃদ্ধি হয়। ফাল্গুন মাসে কুন্দফুলে গোমতী নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়।
চৈত্র মাসে দমনকফুলে বিশালাক্ষী নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে পশু-সম্পত্তি লাভ হয়। বৈশাখ মাসে ডর্ণিকাফুলে অশোকা নামে দেবীর পুজো করবে, এই দেবীর পুজো করলে দেহাে দেবীলোকে গতি হয়ে থাকে।
এইভাবে বিভিন্ন ফুলে বিভিন্ন নামে দেবীর পুজো করে বছর পূর্ণ হলে সোনার উমা-মহেশ্বর মূর্তি পুজো করে ব্রাহ্মণ ও কুমারীদের পুজো এবং দক্ষিণা দানে সন্তুষ্ট করতে হয়।।
অক্ষয় ফল ব্রতের দ্রব্য ও বিধান – অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অক্ষয় সিঁদুরের মত অক্ষয় ফল ব্রত করার নিয়ম। এটি চার বছরের ব্রত, এর উদযাপনের করতে হয় চার বছর অক্ষয় ফল ব্রত পালন করার পর।
এই ব্রতের, এয়োদের না দিয়ে ব্রাহ্মণদের ফল দেওয়ার বিধান আছে। ব্রত নেওয়ার পর প্রথম বছরের অক্ষয় তৃতীয়ার দিন একজন ব্রাহ্মণ কে ডাব, আম, কলা ,বেল,ডালিম কিংবা হরিতকী এই পাঁচটি ফল,পৈতা ,মিষ্টান্ন ও পয়সা দিতে হয়। দ্বিতীয় বছরের দুজন, তৃতীয় বছরের তিনজন এবং চতুর্থ বছরের চারজন ব্রাহ্মণ কে এইভাবে জিনিস দিয়ে ব্রত উদযাপন করা প্রয়োজন।
অক্ষয় ফল ব্রত উদযাপন বিধি – উদযাপনের সময় সামর্থ্য থাকলে ব্রত গ্রহণ কারিণী চারজন ব্রাহ্মণ কে ধুতি ,চাদর দিতে পারেন, আর তা না হলে যাকে দিয়ে ব্রত নেওয়া হয়েছে, তাকে কাপড় ,চাদর, গামছা,
পৈতে ,ছাতা , জুতো ও সোনা রুপোর পাঁচ টি ফল গড়িয়ে দান করার নিয়ম। অন্য কজন ব্রাহ্মণকে পরিতোষ করে ভজন করিয়ে ভজন দক্ষিণা দিতে হয়। কিন্তু যাকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে তাকে ষোলআনা ভজন দক্ষিণা দিতে হবে।
ব্রতের ফল – অক্ষয় পূর্ণ সঞ্চয় করার জন্য মেয়েরা এই ব্রত নিয়ে থাকে। এই ব্রত চার বছর পালন করার নিয়ম আর অক্ষয় ত্রিতিয়া তে এই ব্রত নিতে হয়।।
আদা হলুদ ব্রতের সময় বা কাল – চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তিতে এই ব্রত নিতে হয় আর সধবা স্ত্রীলোক এরাই এই ব্রত নিতে পারে।
আদা হলুদ ব্রতের নিয়ম – চৈত্র মাসের সংক্রান্তি থেকে আরম্ভ করে সারা বৈশাখ মাস প্রতিদিন একজনে এয়োকে একমুঠো ধান, একমুঠো ধনে, পাঁচটি হলুদ, পাঁচটি টুকরো আদা, বিভিন্ন মিষ্টি ওপয়সা দিয়ে ব্রত পালন করার নিয়ম এইভাবে এই ব্রত চার বছর করে শেষ বছরে উদযাপন করতে হয়।
আদা হলুদ ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের নিয়ম – শেষ বছরে চার জনে ও স্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে বেশ তৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করাতে হবে ও প্রত্যেককে কড় লোহা (নোয়া), সিঁদুর, আলতা, মাথার চিরুনি,
আয়না ও সামর্থ্য কুলালে শাড়ি বা গামছা দিতে হবে কিন্তু যাকে দিয়ে প্রথম ব্রত নেওয়া হয়েছে তাকে কাপড়, সোনার নোয়া, রুপোর সিঁদুর কৌটো, আয়না, চিরুনি, পাখা ও ষোলআনা দক্ষিণা দেওয়া কর্তব্য।
আদা হলুদ ব্রতের ফল – এই ব্রত পালন করলে বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না
মন্ত্র –
আদা হলুদ ব্রত করে এই পেলাম বরং
এ জীবনে থাকবে নাকো বৈধব্যের ডর।।
রূপ হলুদ ব্রতের সময় বা কাল – আদা হলুদ ব্রতের মত রূপ হলুদ ব্রতও চার বছর করতে হয়। চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত এই রূপ হলুদ ব্রত করতে হয়।
রূপ হলুদ ব্রতের নিয়ম – চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন সকালে একজন এয়োর কপালে বাটা হলুদ ছুইয়ে দেবেন। বিকেলে সুগন্ধি তেল দিয়ে কেশবিন্যাস করে দিয়ে করে দিয়ে তাকে সিঁদুর পরিয়ে দিতে হবে।
কপালে সিন্দুরের বেশ বড় ফোঁটা পরিয়ে দিতে হবে। এইভাবে সারা বৈশাখ মাস করতে হয়।
রূপ হলুদ ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের নিয়ম – পরের বছরের বহইটর সংক্রান্তিতে দুজন করে এয়োকে, তৃতীয় বছরে তিনজন করে এয়োকে, আর চতুর্থ অর্থাৎ শেষ বছরের চারজনকে ঐভাবে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন চারজন এয়োকে
সকালে বাড়িতে নিমন্ত্রন করে নিয়ে এসে ভাল সুগন্ধ তেল তাদের চুল ভাল করে বেঁধে দিতে হবে। সিঁথিতে ও কপালে সিঁদুর দিয়ে সাজাতে হবে। প্রত্যেককে একটি করে নতুন শাড়ি পরিয়ে পরিপাটি করে ভোজন করতে হবে।
প্রত্যেককে লোহা, কড়, সিঁদুর-চুপড়ি, আলতা, মাথাঘষা, হলুদ ছোপানো গামছা, মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা ধরে দিতে হবে। যাকে দিয়ে প্রথম ব্রত নেওয়া হয়েছিল তার লালপেড়ে শাড়িখনি, হলুদে চুপিয়ে দিতে হয় এবং তাকে অতিরিক্ত স্বরুপ রূপোর সিঁদুর কৌটো, এন, চিরুনি, পাখা ও একটি টাকা দিতে হবে।
রূপ হলুদ ব্রতের ফল – এই ব্রতের ফলে স্ত্রীলোক রূপ ও লাবণ্য বতী হয়।
মন্ত্র –
রূপ হলুদের ব্রত করে চাইছি এমন বর।
জন্মে জন্মে রূপ যেমন হয় হলুদের মতন।।
নানা রকম ফুল, তুলসী পাতা, দূর্বা, আলোচাল, কাঁঠালি কলা, মালা, ঘট, আম পাতা ও নৈবেদ্য।।
হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত সময় বা কাল – বৈশাখ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এ এই ব্রত করতে হয়। সধবা আর বিধবা দুই শ্রেণীর মেয়েরাই এই ব্রত করতে পারে।
এক গ্রামের এক গয়লার বউ সেই গ্রামেরই এক ব্রাহ্মণ এর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল। এদের মধ্যে ভাবছিল খুব। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণী হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করতেন আর গয়লার বৌও তার ব্রত করা দেখতো।
এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর গয়লা বউয়ের এই ব্রত করার ইচ্ছে হল আর সে ব্রাহ্মণী কে জিজ্ঞাসা করলো যে এই ব্রত করলে কি ফল হয়। ব্রাহ্মণী তার কথা শুনে বললেন যে এই ব্রত করলে জীবনে কারোর চোখের জল পড়ে না
উল্টে তার সারা জীবন কেটে যায় খুব আনন্দে। এই কথা শুনে গয়লার বউ এর খুব আনন্দ হল। সে ব্রাহ্মণী কে বলল যে সেও এই ব্রত করতে চায়। ব্রাহ্মণী গয়লার বউকে অনেক বোঝালেন তিনি বললেন তুমি পারবেনা বন্ধু এই ব্রত করা খুবই কঠিন।
কিন্তু গয়লা বউ তো তার কোন কথাই শুনতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণী বাধ্য হয়ে তাঁকে ব্রতের সব কথা বলে দিলেন এরপর বৈশাখ মাস পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গয়লা বউও
এই হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করতে আরম্ভ করে দিল এইভাবে দুটো ব্রত করার পরই মা মঙ্গলচন্ডীর তার উপর দয়া হলো আর সঙ্গে সঙ্গে ঐশ্বর্য্য সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠল গয়লা বউয়ের সংসার।
এর আগে গয়লা বউ খুবই গরীব ছিল। এখন তার এত ধনৈশ্বর্য হওয়ার ফলে সে কেমন যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল। সে আর সহ্য করতে পারলো না তার অবস্থার এই পরিবর্তন দেখে।
এখন খাবার ইচ্ছে হতে লাগল তার। কিন্তু যার এত ধনৈশ্বর্য তার কান্না আসবে কেমন করে ! শেষে গয়লা বউ আবার গিয়ে ব্রাহ্মণী কে ধরে বসলো আর বলল “সই, আমি আর এসব সহ্য করতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে খুব খানিকটা কাঁদি।
তুমি আমাকে বলে দাও সই, কি করলে আমি কিছুটা কাঁদতে পারি ?” গয়লা বউয়ের কথা শুনে ব্রাহ্মণী তো একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলেন তিনি বললেন “সে কি সই, তুমি কাঁদবে কেন ?
তোমার এখন সুখের সংসার হয়েছে এত আনন্দ ভোগ করছো এতে কাঁদতে আবার কেউ চায় নাকি ? এযে হরিষ মঙ্গলচন্ডী ব্রতের ফল। এই ব্রত করলে শুধু আনন্দই নয় কান্নাকাটি এর ধারে কাছে আসতে পারে না।
আমি তো আগেই তোমাকে বলেছিলুম যে এই ব্রত করা খুবই কঠিন তখন তুমি আমার কথা শুনলে না। এখন কাঁদতে চাইলে চলবে কেন বল ?” গয়লা বউয়ের তখন প্রায় পাগলের মত অবস্থা।
সে বললে “আমি কাঁদতে না পারলে আমি বাঁচবো না সই! তুমি আমাকে বলে দাও কি করলে আমার কান্না পাবে।” প্রাণের সই এর কথা শুনে ব্রাহ্মণী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কি বলবেন কিছু ভেবে পেলেন না।
এমন সময় তার চোখে পরল একটু দূরে একটা চাষের ক্ষেত। সেখানে অনেকগুলো লাউ আর কুমড়ো ফলে ছিল। ব্রাহ্মণী গয়লা বউকে বললেন, ‘যাও সই, ওই ক্ষেতটা দেখা যাচ্ছে,
খুব লাউ আর কুমড়ো ফলেছে ওখানে-ওই ক্ষেতে গিয়ে লাউ কুমড়ো গুলোকে তুলে নাও আর গাছগুলোকে একেবারে ছেড়ে লন্ডভন্ড করে দাও। তাহলেই চাষিরা খুব রেগে গিয়ে তোমাকে খুব গালমন্দ দেবে,
আর তাহলেই তোমার কান্না আসবে।’ সইয়ের কথা শুনে, গয়লা বউ তখনি ছুটে গেল সেই ক্ষেতের ভিতর ঢুকে গাছগুলো সব ছিড়ে খুঁড়ে দিয়ে চলে এলো। কিন্তু এতে আসল কাজ কিছু হল না বরং ফলটা উল্টো হল মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায়
আবার গাছগুলো জ্যান্ত হয়ে উঠলো আর চাষিদের খুব আনন্দ হল। চাষিরা তখনই সেই গয়লা বউয়ের কাছে এসে বলল, ‘মা! তোমার হাতের ছোঁয়া লেগে আমাদের আধমরা গাছগুলো আবার সতেজ হয়ে উঠেছে।
তুমি মা সাক্ষাৎ লক্ষ্মী।’ এর ফলে গয়লা বউ টাকা দেবার সুযোগ পেল না। সে তখন তার শরীরকে গিয়ে সব কথা জানালো। ব্রাহ্মণী বললেন যে মা মঙ্গলচন্ডীর দয়াতেই এটা হয়েছে। তিনি তখন গয়লা বউকে বললেন,
‘দেখো সই, ওই দূরে পাহাড়ের ধারে রাজার হাতিটা মরে পড়ে আছে তুমি ওখানে গিয়ে হাতিটার গলা জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করো। তাহলে রাজার লোকেরা ভাববে যে তুমি হাতির দাঁতে চুরি করতে এসেছ,
তখন তারা তোমায় খুব মারধর করবে আর তুমিও খুব কাঁদবার সুযোগ পাবে।’কিন্তু এবারেও কোন কাজ হলোনা। গয়লা বউ হাতিটার গায়ে হাত দিতেই হাতিটা বেঁচে উঠল।
তাই দেখে রাজার লোকেরা একেবারে অবাক হয়ে গেল আর সব কথা রাজাকে গিয়ে জানালো। সব কথা শুনে রাজা খুব খুশি হলেন আর গোয়ালা বউকে ডেকে তাকে অনেক ধনরত্ন করে পুরস্কার হিসেবে দিলেন।
এবারেও কোন কাজ হলোনা দেখে ব্রাহ্মণী বুঝলেন যে, মা মঙ্গলচন্ডীর দয়াতে এবারও তাই হয়েছে। ব্রাহ্মণী তখন গয়লা বউকে আবারো একটা পরিকল্পনা বললেন, ‘দেখো সই, এক কাজ করো, কতগুলো বিষের নাড়ু তৈরি করে
তোমার মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। তাহলে ওই নাড়ুগুলো খেয়ে তারা সবাই মরে যাবে আর তুমিও তখন কাঁদতে পারবে।’ সইয়ের কথামতো গয়লা বউ তাই করলো, কিন্তু মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় বিষের নাড়ু গুলো সব অমৃত হয়ে গেল।
মেয়ের বাড়ির লোকেরা সেই নারীকে খুব খুশি হলো আর আরো অনেক নাড়ু পাঠাবার জন্য লিখে পাঠালো। এতেও যখন কাজ হলো না তখন ব্রাহ্মণী গয়লা বউকে বললেন যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তখন তুমি হরিষ মঙ্গলচন্ডী ব্রত করা ছেড়ে দাও সই।’
গয়লা বউ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা ছেড়ে দিল। ফলে মা মঙ্গলচন্ডী খুব রেগে গেল। মা মঙ্গল চন্ডী গয়লা বউয়ের উপর রেগে গিয়ে তার স্বামী পুত্র দাস-দাসী হাতি ঘোড়া ছিল সকলকে কেড়ে নিলেন এবং যত ধনরত্ন ছিল সবই কেড়ে নিলেন।
গয়লা বউ স্বামী পুত্র আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। এখন তার দিনরাত কান্না ছাড়া আর কিছুই নেই। এতো কান্না সহ্য করতে না পেরে শেষে
ব্রাম্ভনের কাছে গিয়ে বলল, ‘সই আমি আর কাঁদতে পারছি না আমি আর সহ্য করতে পারছি না যেমন করে পারো আমার কান্না থামিয়ে দাও।’
ব্রাহ্মণী তখন বললেন ‘তুমি তো এটাই চেয়েছিলে এখন কান্না থামাতে বললে কি হবে যাক যা হবার হয়ে গেছে, এখন বাড়ি গিয়ে মরা গুলো জড়িয়ে ধরে খুব খারাপ তারপর সেগুলো কে খুব সাবধানে রেখে
সামনের মঙ্গলবার থেকে আবার মা মঙ্গলচন্ডীর হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা আরম্ভ করো।’ সইয়ের কথা শুনে গয়লা বউ বাড়ি ফিরে এসে গ্রামের কথা মত সবই করল আর ক্ষোভ খানিক মাথা খুঁড়ে কাঁদবার পর মা মঙ্গলচন্ডীর স্তব করতে লাগলো।
তারপর মঙ্গলবার আসতেই সে খুব শুদ্ধাচারে মা মঙ্গলচন্ডীর হরিশ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করা শুরু করলো সবশেষে দুই হাতে মার ঘর ধরে মাকে খুব ডাকতে লাগল
এমন সময় সে শুনতে পেল কে যেন বলছে- ‘আর কখনো এমন কাজ করিস নি, যা তোর আর কোন ভয় নেই এই ঘটের জল মরা গুলোর গায়ে ছিটিয়ে দে তাহলেই সবাই বেঁচে উঠবে।’
ঘটের জল ছিটিয়ে দেওয়ার ফলে গয়লা বউয়ের সবাই মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় বেঁচে উঠলো আর তার আগের অবস্থা ফিরে পেল। গয়লা বউ তখন খুব শুদ্ধ চারে মা মঙ্গলচন্ডীর ঘটটি তুলে রেখে ছুটে গেল ব্রাহ্মণীর কাছে
তাকে সব কথা জানালো আর তার পা জড়িয়ে ধরে আশির্বাদ চেয়ে নিল। এদিকে গয়লা বউয়ের এই অবস্থার পরিবর্তনের ব্যবহার দেখে পাড়াসুদ্ধ সবাই অবাক হয়ে গেল, আর গয়লা বউকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো।
হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রত যেই নারি করে।
সব দুঃখ চোখের জল মা তার হরে।
আদর সিংহাসন ব্রতের সময় বা কাল- আদর সিংহাসন ব্রত একটি বৈশাখ মাসের ব্রত। মহাবিষুব চৈত্র সংক্রান্তি তে এই ব্রত নিতে হয় আর চার বছর এই ব্রত পালন করে বৈশাখী সংক্রান্তি (বিষ্ণুপদী)-তে এর উদযাপন করার নিয়ম। সকল এয়ো-স্ত্রীলোক বা সধবা রা এই ব্রত নেওয়ার অধিকারিণী।
আদর সিংহাসন ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- সারা বৈশাখ মাস ধরে প্রতিদিন সকালে একজন সধবা স্ত্রীলোক একজন ব্রাহ্মণ কে ফুলের মালা পরিয়ে কপালে চন্দনের ফোটা আর হাতে কিছু মিষ্টান্ন ও কিছু দক্ষিণা দিতে হবে।
সধবা স্ত্রীর মাথায় গন্ধ তেল দিয়ে, ভালো করে চুল আঁচড়ে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়ে দেবে। পায়ে আলতা, হাতে কর ও লোহা (নোয়া) পরিয়ে দেওয়া কর্তব্য।
এরপর সিঁদুর চুপড়ি, আয়না ,চিরুনি, আলতা ও পয়সা দিয়ে, খুব তৃপ্তি করে ভজন করাবে আর বিকালে নানা রকমের ফলমূল, মিষ্টান্ন,ক্ষীর ইত্যাদি তার হাতে তুলে দেবে।
এই সঙ্গে ব্রাহ্মণকেও কাপড় ,চাদর, খড়ম, ছাতি ,চন্দন ও ফুলের মালা পরিয়ে খুব যত্ন করে ভজন করাতে হয় আর বিকেলে নানা রকম ফল – মূল মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দেওয়ার নিয়ম।
সারা বৈশাখ মাস ধরে এই ভাবে ব্রত পালন করে যেতে হবে। দ্বিতীয় বছরের দুজন সধবা ও দু’জন ব্রাহ্মণ, তৃতীয় বৎসরে তিনজন সধবা ও তিনজন ব্রাহ্মণ ও চতুর্থ বছরে চার জন সধবা ও চার জন ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করতে হবে।
এরপর চারজন সধবা কে একত্রে বসিয়ে তাদের পায়ে ধুয়ে আলতা পরিয়ে দিতে হবে আর লাল পেড়ে শাড়ি ,সিঁদুর কৌটো, সিঁদুর চুপড়ি, পাখা, গামছা, চিরুনি, আয়না, আলতা, মাথা ঘষা,
ইত্যাদি দিয়ে চন্দন মালা পরিয়ে খুব তৃপ্তির সঙ্গে ভজন করাতে হবে, আর বিকেল নানারকম ফল – মূল , মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দেওয়া প্রয়োজন। চারজন ব্রাহ্মণ এর পরিবর্তে একজন ব্রাহ্মণ হলেও চলবে।
তবে সেই ব্রাহ্মণকেও এই রকম গন্ধদ্রব্য, মালা, কাপড়, চাদর ,পাদুকা, ছাতা, ও পৈতে দেওয়ার নিয়ম। ব্রাহ্মণকেও সকালে বেশ ভালো করে ভোজন করাতে হবে আর বিকেলে ফলমূল মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দিতে হবে।
আদর সিংহাসন ব্রতের ফল- আদর সিংহাসন ব্রত একটি বৈশাখ মাসের ব্রতকথা। এই আদর সিংহাসন ব্রত সব ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রত। এর ফলে যে স্ত্রীলোক এই ব্রত পালন করে সে সকলের কাছেই আদর পায়। ব্রতের শেষে ব্রতকথা পড়া বা শোনা অবশ্যই কর্তব্য।
সকল ব্রতের সেরা আদর সিংহাসন।
সবার আদর পায় সে নারী যে করে পালন।
জল সংক্রান্তির ব্রত সময় বা কাল- বৈশাখ মাসে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তির দিন এই ব্রত পালন করার নিয়ম।
জল সংক্রান্তি ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপন বিধি –এই ব্রত উদযাপন করার সময় একটি নতুন তামার কুন্ড, এক খানি নতুন কাপড় বা গামছায় জড়িয়ে নিতে হবে। এরপর তিনটি ডালা, একটি ভুজ্যি, পৈতে ও দক্ষিণা ব্রাহ্মণকে দান করা কর্তব্য।
জল সংক্রান্তি ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- বৈশাখী সংক্রান্তির দিন, সকালে ভালোভাবে স্নান করে, ষোড়শ উপচারে লক্ষ্মী জনার্দনের পূজো করতে হবে ও একজন ব্রাহ্মণকে জলভরা কলসি ও একটি ভুজ্যি দান করতে হবে।
এইভাবে প্রত্যেক সংক্রান্তিতে ব্রত পালন করে বছরের শেষে উদযাপন করার সময় সোনার লক্ষ্মী মূর্তি ও জনার্দনের রুপোর মূর্তি গড়িয়ে পূজো করার বিধান।
জল সংক্রান্তি ব্রতকথা- কুরু- পিতামহ ভীষ্ম যখন ইচ্ছা মৃত্যুর সময় শরশয্যায় শুয়ে ছিলেন সেই সময় রাজা যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্ম কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মানুষ কি কাজ করলে পৃথিবীতে ধনবান, গুনবান ও জিতেন্দ্রিয় হয়ে সব ব্যাপারে জয়লাভ করতে পারে।
আর তাকে নরকে যেতে হয় না সেই বিষয় আমরা কিছু জানতে চাই। পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরের ওপর খুব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন,–তবে শোন যুধিষ্ঠির।
পুরা কালে ঋষি মন্তিবের গুণবতী নামে এক স্ত্রী ছিল। গুণবতী নানা রঙের গুঁড়ো দিয়ে তাদের কুটির খানি প্রতিদিন সাজিয়ে রাখতো আর তাতে তার স্বামী ঋষি মন্তব্য খুবই খুশি হতেন।
গুণবতী একদিন এইভাবে তাদের কুটির খানি সাজিয়ে, তার স্বামীকে বললেন ,প্রভু! কি কাজ করলে মানুষ পৃথিবীতে ঠান্ডা জল পেতে পারে, নীরোগ থাকতে পারে, আর কখনো তাকে নরকে যেতে হয় না – তা আমাকে বুঝিয়ে বলুন।
মন্তিব্য খুব সন্তুষ্ট হয়ে গুণবতীকে বললেন যে, জল সংক্রান্তি ব্রতই তোমার পক্ষে সকলের চেয়ে ভালো, আর সমস্ত ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই ব্রত সৃষ্টি করেছেন ব্রহ্মা। আমি এই ব্রতের বিষয় তোমাকে বলছি শোনো।
প্রত্যেকেরই খুব ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই ব্রত পালন করা উচিত তার ফলে সেই ব্যক্তি অফুরন্ত ঠান্ডা জল পায় আর অনেক সুখ ভোগ করে মৃত্যুর পর বিষ্ণুপদ প্রাপ্ত হয়। গুণবতী তখন এই ব্রতের বিধান শোনাতে বললেন তার স্বামীকে।
গুণবতীর কথা শুনে ঋষির মন্তিব্য বললেন, এর নিয়ম অনুসারে সকালের স্মান করে শুদ্ধ হয়ে নারায়নের আচনা ও সংকল্প গ্রহণ করতে হবে, তারপর লক্ষী- জনার্দনের পূজা করে ভুজ্যি,
জল ভরা কলসি আর দক্ষিণা দান করে ব্রতকথা শোনা দরকার। পরে সামর্থ্য অনুসারে ব্রাহ্মণ ভোজন করানো কর্তব্য। যে স্ত্রী জল সংক্রান্তির ব্রত পালন করে- সর্বত্রই তার জয়লাভ হয়ে থাকে, আর সে পিতৃকুল ও স্বামীর কুলকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এরপর ভীষ্ম বললেন, আর বেশি বলা বাহুল্য মাত্র যুধিষ্ঠির।
জল সংক্রান্তি ব্রতের ফল- জল সংক্রান্তির ব্রত পালন করলে নারী কোনদিনই স্বামীকে না হারিয়ে আর স্বামী সোহাগিনী হয়ে খুব সুখ শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে।
কলাছড়া ব্রত সময় বা কাল- চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে এই ব্রত নিতে হয়। তারপর নিয়ম মত ৪ বছর এই ব্রত পালন করে উদযাপন করায় বিধান। এয়ো স্ত্রীরাই এই ব্রত নিতে পারেন।
কলাছড়া ব্রত বিধান- একজন ব্রাহ্মণ কে চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন নিমন্ত্রণ করে আনতে হবে, আর তাকে এক ছড়া কলা, মিষ্টান্ন , পান, সুপারি ও পয়সা দিতে হবে ৷
পুরো বৈশাখ মাস ধরে এই করে যাওয়ার নিয়ম ৷এরপর দ্বিতীয় বছরে দুই, তৃতীয় বছরে তিন ও চতুর্থ বছরে চারজন ব্রাহ্মণকে এইভাবে দানের বস্তু দেওয়া কর্তব্য।
কলাছড়া ব্রত দ্রব্য ও উদযাপন বিধি – চতুর্থ বছরে বৈশাখী সংক্রান্তির দিন,চারজন ব্রাহ্মণ কে আমন্ত্রণ করে এনে খুব যত্নের সঙ্গে পরিতোষ করে ভজন করানো প্রয়োজন৷যে ব্রাহ্মণ কে দিয়ে ব্রত নেওয়া হয়েছে তাঁকে এক ছড়া সোনার কলা,
জামা ,কাপড় ,ছাতা ,পাখা, আর ষোলআনা দক্ষিণা দেওয়ায় বিধি |অন্যান্য ব্রাহ্মণদের সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষিণা প্রত্যেকে এক খানা করে গামছা দেওয়া উচিত ৷
নিত সিঁন্দুর ব্রতের বিধান- চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত প্রতিদিন নিত সিঁন্দুর এই ব্রত পালন করতে হয়।
প্রতিদিন সকালে একজন এয়োকে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে ভালো করে জল যোগ করতে হয় আর বিকালে নানারকম ফলমূল ও মিষ্টান্ন দিতে হয়। সারা বৈশাখ মাস এইভাবে এই ব্রত পালন করতে হয়।
চার বছর নিত সিঁন্দুর ব্রত পালনের নিয়ম। প্রথম বছর একটি ,দ্বিতীয় বছর দুটি, তৃতীয় বছর তিনটি আর চতুর্থ বছরের বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে, এইভাবে চারটি ওকে সকালে সিঁদুর আর বিকেলে ফলমূল, মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা দিয়ে ব্রত উদযাপন করার নিয়ম।
নিত সিঁন্দুর ব্রতের ফল- সধবারা নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়ার অধিকারিনী। এই ব্রত নিলে সধবা দের সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হয়। যে স্ত্রীলোক নিত্য সিঁদুরের ব্রত পালন করে ,তাকে বৈধব্য – যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না, আর সে আদরিনী ও স্বামী- সোহাগিনী হয়ে থাকে।
নিত সিঁন্দুর ব্রতের দ্রব্য ও উদযাপনের বিধি- চতুর্থ বছরে, বৈশাখী সংক্রান্তিতে চারজনে এয়োকে নিমন্ত্রণ করে খুব তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াতে হয়।
যাকে দিয়ে নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়া হয়, সম্ভব হলে তাকে সোনা লোহা (নোয়া) আর রুপোর সিন্দুর কৌটো দিতে পারলে ভালো হয়। আর যদি এই ভাবে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে, শুধু কাপড়, সিঁদুর কৌটো, সিঁদুর চুপড়ি, রুলি, আলতা, লোহা (নোয়া), আয়না আর চিরুনি ও দেওয়া যায়।
এইভাবে সকলকেই দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রথম যাকে দিয়ে এই নিত সিঁন্দুর ব্রত নেওয়া হয় কেবল তাকেই সোনার নোয়া আর রূপর সিঁদুর কৌটো দিয়ে এই ব্রত উদযাপন করতে হয়।
গুপ্তধন ব্রত সময় বা কাল- এই ব্রত প্রতিবছর চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তি থেকে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত চার বছর পালন করার নিয়ম। এও স্ত্রী রায় এই ব্রত পালন করার অধিকারিনী।
গুপ্তধন ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- এই ব্রত নিতে হয় চৈত্র মাসের মহাবিশুব সংক্রান্তির দিন, একজন ব্রাহ্মণ কে দিয়ে। প্রথম বছরে কোন মিষ্টির মধ্যে একটি দুয়ানি ভরে দিয়ে সারা বৈশাখ মাস প্রত্যেক দিন একজন ব্রাহ্মণ কে দিতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের ওইভাবে মিষ্টির মধ্যে একটি সিকি ভরে দিয়ে সারা বৈশাখ মাস প্রত্যেকদিন একজন ব্রাহ্মণকে দান করবে।
এইভাবে তৃতীয় বছরে আধুলি আর শেষে বছরের মিষ্টির মধ্যে একটি পয়সা ভরে দিয়ে বৈশাখ মাসে সারা বছর ধরে প্রত্যেক দিন একজন ব্রাহ্মণকে দান করে যাওয়া প্রয়োজন।
চার বছর পুরো হওয়ার সময় বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে চারজন ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করে, তাদের ধুতি ও চাদর দিয়ে খুব যত্ন করে ভোজন করানোই বিধান।
অবশ্য সব ব্রাহ্মণকে যদি ধুতি ও চাদর দেয়া সামর্থ্য না হয়, তাহলে যে ব্রাহ্মণকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে শুধুমাত্র তাকেই ধুতি, চাদর ,গামছা, ছাতা ,পাদুকা আর ষোল আনা দক্ষিণা দেবে।
অপর সব ব্রাহ্মণকে পরিতোষ করে ভোজন করিয়ে সাধ্যমত দক্ষিণা দিলেই চলবে।
চৈত্র সংক্রান্তি থেকে সারা বৈশাখ মাস এই ব্রত পালন করার নিয়ম। কুমারী মেয়েরাই এই ব্রত নেওয়া ও পালনের অধিকারী।
আতপ চালের পিটুলি গোলা, ছোট শাঁক, মধু ,দুধ ও গাওয়া ঘি দিয়ে পৃথিবী পুজো করতে হয়। মাটি র উপর পরিষ্কার করে, পিটুলি দিয়ে একটা পদ্ম পাতা আঁকতে হবে।
তারপর পৃথিবীও ধরিত্রী দেবীকে আঁকতে হবে। পুজোর সময় শাখের মধ্যে ঘি, দুধ ও মধু ঢেলে দিয়ে সেই আঁকা আলপনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তিনবার পৃথিবী পূজার মন্ত্র পাঠ করার নিয়ম।
শেষে ওই শাখের মধ্যে ঢালা জিনিসগুলো আঁকা আলপনার উপর ঢেলে দিতে হবে। এইভাবে চার বছর এই পৃথিবী ব্রত করে উদযাপন করা কর্তব্য আর উদযাপনের সময় একটি সোনার পদ্মপাতা গড়িয়ে দান করা বিধি।
এই পৃথিবী আমাদের মা। আমরা এই পৃথিবীর প্রতি অনেক রকমের অত্যাচার করি কিন্তু পৃথিবী সমস্ত ই সহ্য করেন, এই সর্বংসহা মাকে আমাদের সন্তুষ্ট রাখা দরকার আর সেই জন্যই পৃথিবী পুজোর ব্রত প্রচলিত হয়েছে পৃথিবীর ব্রত।
এই পৃথিবীর ব্রত পালন করলে সংসারের সব রকমের অমঙ্গল দূর হয়ে, মঙ্গল হয়ে থাকে। সীমান্তের পশ্চিম প্রান্তে সুবীর নামে এক রাজার রাজত্ব ছিল। এই রাজার দুই রানী সুনন্দা ও রত্না।
সুনন্দার গর্ভে রাজার দুটি মেয়ে হয়, তাদের নাম মন্দা আর স্নিগ্ধা। ছোট রানী রত্নার একটি মেয়ে হয়েছিল তার নাম ছিল বীর বালা। রাজা, সুনন্দা আর মন্দা ও স্নিগ্ধাগে খুবই ভাল বাসতেন, কিন্তু রত্নার এইজন্যে মনে কোন শান্তিই ছিল না।
কি করে সুনন্দা আর তার মেয়ে দুটির অনিষ্ট করা যায় , এই চিন্তাতেই ছোট রানী রত্না অস্থির হয়ে থাকতো সব সময়। সে তার মেয়ে বীরবালা কে দিয়ে, ওদের সব কাজ সবসময়ই পন্ড করে দেওয়ার চেষ্টা করত।
মন্দা আর স্নিগ্ধা কিন্তু পৃথিবীর ব্রত নিয়ে রেখেছিল আর খুব ভক্তির সঙ্গে ব্রত পালন করতো। প্রথম বছর কেটে যাওয়ার পর তারা যখন দ্বিতীয় বছরের পুজোর আয়োজন করে তাদের উঠোনে বসে পুজোর মন্ত্র পড়ছে
সেই সময় ছোট রানীর মেয়ে বীর বালা ছুটে এসে তাদের বলল, তোমরা শিগগির বাড়ির ভেতরে এসো বড় মা যেন কেমন একরকম হয়ে হা হুতাস করছে।
মন্দা আর স্নিগ্ধা তাদের পুজোর শেষ না করেই তাদের মা কাছে ছুটে গেল। সেখানে গিয়ে তারা তাদের মার কাছে শুনল যে ছোট রানী রত্না তাদের মা ও মেয়েদের নামে অনেক মিথ্যে কথা বলেছে।
রাজার হুকুম তাদের সেই দ্বন্দ্বেই বনবাসে যেতে হবে। মার মুখে সব কথা শুনে মেয়েরাও খুব মর্মাহত হল। কিন্তু এখন আর কোন উপায় নেই বনবাসে তাদের যেতেই হবে।
এরপর তারা বনবাসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল এবং শেষে এক নিবিড় অন্ধকারে বনে গিয়ে পৌঁছল। ভাগ্যক্রমে সেই বনে তারা একটি খালি কুটির দেখতে পেল।
আর কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে তারা সেই কুটিরের ভেতরে বাস করবার ব্যবস্থা করল। এইভাবে কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন মন্দা ও স্নিগ্ধা কুটির থেকে কিছু দূরে একটি পুকুরের পাড়ে বসে পৃথিবীর পুজো ও ব্রত শেষ করে কুটিরে ফিরে এসে দেখলো যে তাদের মা কুটিরে নেই।
তারা অনেক কান্নাকাটি করে খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু কোথাও মার সন্ধান পেল না। তারা একথাও জানতে পারল না যে এক দস্যু তাদের মাকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
তারা কেবল হাঁ হু তাস করে তাদের দুঃখের কথা মার ধরিত্রীকেই জানাতে লাগলো। এমন সময় বনের মধ্যে থেকেই কে যেন বলে উঠলো, তোদের ভয় নেই আর কিছু সময় অপেক্ষা কর।
মন্দা আর স্নিগ্ধা এই কথায় আশ্বস্ত হল আর তাদের ব্রত অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রাজা সুবীরের মনেও কোন শান্তি ছিল না।
এছাড়া ছোট রানী রত্নার পরামর্শ মত রাজ্য পাঠ চালানোর ফলে প্রজারা বিদ্রোহ করল। এবং রাজ পরিবারকে পুড়িয়ে মারবার সংকল্প করল।
ছোট রানী রত্না আর তার মেয়ে বীরবালা কে তারা পুড়িয়ে মেরে ফেলে রাজা সুবীরকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুনে দেওয়ার যোগাড় করছে এমন সময় এক সাধু বড়রানী সুনন্দাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত
হলেন বললেন মূর্খ রাজা বুদ্ধির দোষে তুমি তোমার সর্বনাশ দেখে এনেছ কিন্তু আর ভয় নেই তোমার কোন লক্ষী বড় নানি সুনন্দাকে আমি নিয়ে এসেছি।
প্রজারা ও বড় রানী সুনন্দাকে দেখে আনন্দে অধীর হয়ে উঠল। চিৎকার করে প্রজারা বলতে লাগলো আর আমাদের ভয় নেই।
এইবার আমরা শান্তিতে বাস করতে পারবো। এই বলে তারা মহারাজের বাঁধন খুলে দিয়ে মহারাজকে রাজপুরীতে নিয়ে গেল।
অবশেষে রাজার জীবন রক্ষা হল আর রাজ্যে ও শান্তি ফিরে এলো। রাজা শেষে মন্দা ও স্নিগ্ধাকে এনে দেওয়ার জন্য সেই সাধুকে অনুরোধ করলো।
সাধু তখন রাজা কে বলল যে তার তার দুটি মেয়ের পৃথিবীর ব্রত পালন করার ফলেই রাজা আজ তার সব ফিরে পেয়েছে আর তার মেয়েরাও শীঘ্রই ফিরে আসবে। এই কথা বলে সেই সাধু অদৃশ্য হয়ে গেলেন
অল্প দিনেই মধ্যেই মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজ্যে ফিরে এলো। রাজ্যে তখন চলল আনন্দ উৎসব। মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজপুরীর উঠোনে ভালো করে আলপনা দিয়ে আবার পৃথিবীব্রত পালন আরম্ভ করল।
এসো মা পৃথিবীর বস মা পদ্মপাতে শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম ধরি দুই হাতে।
খাওয়াবো ক্ষীর আর মাখন ননী আমি যেন হই মাগো বড় রাজার রানী।
পৃথিবী পূজার শেষে পৃথিবী কে প্রণাম করবেন। প্রণাম মন্ত্র ও প্রার্থনা মন্ত্র ও পৃথিবীর স্তোত্রম নিচে দেওয়া হল।
ওঁ শুভেচ শোভনে দেবি চতুরস্রে মহীতলে। শুভদে সুখদে দেবি গৃহে কাশ্যপি রম্যতাম্।। ওঁ অব্যঙ্গে চাক্ষতে পুণ্যে মুনেশ্চাঙ্গিরসঃ সুতে। তব ময়া কৃতা পূজা সমৃদ্ধিং গৃহিণঃ কুরু।। ওঁ বসুন্ধরে বরারোহে স্থানং মে দীয়তাং শুভে। ত্বৎ প্রসাদাম্মহাদেবি কার্যং মে সিদ্ধতাৎ দ্রুতম্।।
পৃথিবীর প্রার্থনা মন্ত্র পাঠ শেষে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবেন। যথা –
ও সর্বাধারে সর্ববীজে সর্বশক্তি সমন্বিতে। সর্বকামপ্রদে দেখি বসুধায়ৈ নমোহস্তুতে।।
পৃথিবী পূজার সময় বা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ধরিত্রীর ধ্যান মন্ত্র ও প্রণাম মন্ত্র পাঠ করা আবশ্যক। এখানে তিনটি ধ্যান মন্ত্র দেওয়া হল। যেকোনো একটি ধ্যান মন্ত্র পাঠ করলেই হবে।
(১) ও সুরূপাং প্রমদারূপাং দিব্যাভরণভূষিতাম্। ধ্যাত্বা তামৰ্চয়ে দেবীং পরিতুষ্টাং স্মিতাননাম।
(২) ও শ্বেতচম্পক বর্ণাভাং শরচ্চন্দ্র সমপ্রভাম্। চন্দনোক্ষিত সর্বাঙ্গীং রত্নভূষণ ভূষিতাম্।। রত্নাধারাং রত্নগর্ভাং রত্নাকর সমন্বিতাম্। চন্দনোক্ষিত সর্বাঙ্গীং রত্নভূষণ ভূষিতাম্।।
(৩) ধ্যায়ে তাং বসুধাং দেবীং ত্রিদশৈরপি পূজিতাম্। প্রিয়কলিকাশ্যামাং মুকুটাদ্যৈরলম্ তাম্।। দিব্যবস্ত্র পরীধানাং দিব্যগন্ধানুলেপনাম্। যজ্ঞপুণ্যপ্রদাং সৌম্যাৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।।
বিষ্ণুরুবাচ – জয় জয় জয়াধারে জয়শীলে জন্মগ্রদে। যজ্ঞশূকরজায়ে চ জয়ং দেহি জয়দে৷৷ ॥ মঙ্গলে মঙ্গলাধারে মঙ্গলে মঙ্গলপ্রদে। মঙ্গলাংশে মঙ্গলং দেহিমে ভবে। ২।।
সর্বাধারে সর্ববীজে সর্বশক্তি সমন্বিতে। সর্বকামপ্রদে দেবি সর্বেষ্টং দেহি মে ভবে। ৩। পুণ্যস্বরূপে জীবানাং পুণ্যরূপে সনাতনি। পুণ্যাশ্রয়ে পুণ্যবতামালয়ে পুণ্যদে ভবে।। ৪ ।।
রত্নাধারে রত্নগর্ভে রত্নাকর সমন্বিতে। স্ত্রীরত্নরূপে রত্নাঢ্যে রত্নসারপ্রদে ভবে।। ৫।। সর্বশস্যালয়ে সর্বশস্যাঢ্যে সর্বশস্যদে। সর্বশস্য হরে কালে সর্বশস্যাত্মিকে ভবে৷৷ ৬॥
ভূমে ভূমিপসর্বস্বে ভূমিপাল পরায়ণে। ভূমিপাহঙ্কাররূপে ভূমিং দেহি চ ভূমিদে৷৷৭৷৷ ইদং স্তোত্রং মহাপুণ্যং তাং সম্পুজ্য যঃ পঠেৎ। কোটি কেটি জন্ম জন্ম স ভবেদ ভূমিপেশ্বরঃ।।
ইতি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে প্রকৃতিখণ্ডে পৃথিবীস্তোত্রম্।
চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তিতে এই ব্রত নেয়ার নিয়ম। এই ব্রত চার বছর পালন করতে হয় আর চার বছর পরে বৈশাখ মাসে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তিতে এই ব্রতের উদযাপন করায় বিধি। কেবলমাত্র এও স্ত্রী রায় এই ব্রত গ্রহণ করতে পারেন।
একজন ব্রাহ্মণকে চৈত্র মাসের মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন একটি পৈতে, একটি সুপারি ও একটি পয়সা দিয়ে প্রণাম করতে হবে। সারা বৈশাখ মাস ধরে প্রতিদিন একজন করে ব্রাহ্মণ কে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত এমনিভাবে দিতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের সুপারি না দিয়ে তার বদলে কলা, পৈতে, মিষ্টি ও পয়সা দিয়ে একটি ব্রাহ্মণকে প্রতিদিন সারা মাস ধরে প্রণাম করা কর্তব্য। তারপরের বছর অর্থাৎ তৃতীয় বছরের কলার বদলে আম ও তার সঙ্গে পৈতে, মিষ্টান্ন ও পয়সা দিয়ে ব্রাহ্মণকে প্রণাম করার নিয়ম।
এইভাবে তিন বছর কেটে যাওয়ার পর অর্থাৎ চতুর্থ বছরের আমের বদলে ডাব পৈতে ও পয়সা দিয়ে প্রণাম করা প্রয়োজন। সবশেষে মহাবিষুব সংক্রান্তিতে চারজন ব্রাহ্মণ কে আমন্ত্রণ করে তাদের পরিতোষ সহকারে ভোজন করিয়ে,
প্রত্যেক ব্রাহ্মণকে কাপড় ও গামছা দিতে হয় তবে সামর্থ্য না থাকলে যাকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে তাকে ধুতি, চাদর, গামছা ,পাদুকা , ছাতা ও পাখা দেওয়াই রীতি। উদযাপনের সময় রুপোর ডাব, সোনার সুপারি ও সোনার কলা গড়িয়ে দান করে ব্রত উদযাপন করতে হবে।
যাকে দিয়ে ব্রত নেয়া হয়েছে তিনি যদি উদযাপনের সময় বেঁচে না থাকেন তাহলে তার বংশের অপর কোন ব্রাহ্মণকে খুব তৃপ্তি করে ভোজন করিয়ে ওই জিনিসগুলো দান করা উচিত।