একাদশী তিথি ভগবান বিষ্ণুর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। একাদশীর উপবাসের প্রভাবে ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করে এবং সমস্ত কাজ সিদ্ধ হয়, দারিদ্র্য দূর হয়, অকালমৃত্যুর ভয় থাকে না, শত্রু বিনষ্ট হয়, ধন-সম্পদ, খ্যাতি, পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়।
বছরে 24টি একাদশী হয়। একাদশীর উপবাস প্রতি মাসে দুবার পালন করা হয়, একটি কৃষ্ণপক্ষে এবং একটি শুক্লপক্ষে। কিন্তু অতিরিক্ত মাস বা মলমাসের কারণে কখনো কখনো 26টি একাদশীও পালন করা হয়। মলমাস বা পুরুষোত্তম মাস নামেও পরিচিত। অতিরিক্ত মাসের কারণে এবার অতিরিক্ত 2টি একাদশী পালন করা হবে। তাই 2023 সালে 26 টি একাদশী পড়বে।
সমস্ত ব্রতকারী দিবারাত্রি ভক্তিপরায়ণ হয়ে এই একাশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ-কীর্তন করলে শ্রীহরির আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবে।
একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম গুলি হল-
যিনি একাদশী পালন করবেন তিনি দশমীতে- একাহার, একাদশীতে- নিরাহার তথা উপবাস এবং দ্বাদশীতে একাহার করবেন। যদি সম্পূর্ণ সক্ষম না হন তাহলে কেবলমাত্র একাদশীতে উপবাস করবেন। আর যদি তাহাতেও সক্ষম না হন, তাহলে একাদশীতে পঞ্চ রবিশষ্য বর্জন করে- ফল মূলাদি এবং অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।
একাদশী পালনের ক্ষেত্রে যে পাঁচ প্রকার রবিশস্য বর্জনের বিধান রয়েছে তা হলো- চাল, গম, যব, ডাল ও সরিষা বা সরিষা থেকে তৈরি যেকোনো প্রকার খাদ্যদব্য। এইদিন একাদশী পালন করলে চা, কফি, পান, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদির নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
যারা একাদশী ব্রত পালন করবেন তাদের আগের দিন রাত বারোটার পূর্বে অন্ন ভোজন করে নেওয়া প্রয়োজন।
একাদশীর দিন ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমে সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। একাদশীর সংকল্প মন্ত্র টি হল-
"একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি, ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত"
একাদশী ব্রত পালন কেবলমাত্র উপবাস করা নয় তার সাথে সাথে নিরন্তর শ্রীভগবান কে স্মরণ করা এবং ব্রত কথা পাঠ, শ্রবণ ও কির্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করা। এই দিন পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যা কথা বলা, ক্রোধ,দুরাচার,স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
একাদশীতে বিভিন্ন খুঁটিনাটি কাজ যেমন সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে।যাতে রক্তক্ষরণ না হয়। কারণ একাদশীর দিন রক্তক্ষরণ খুবই অশুভ বলে গণ্য।একাদশীর দিন শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ অর্থাৎ তেল, সুগন্ধি, সাবান-শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয় এবং সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম করা অর্থাৎ চুল ও নখ কাটা ইত্যাদি বর্জনীয়।
একাদশীর দিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সন্ধ্যেবেলায় শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি ঘিয়ের প্রদীপ নিবেদন করা।
একাদশী তিথির পরদিন অর্থাৎ দ্বাদশীর দিন একাদশীর পারণ ক্রিয়া সমাপ্ত করতে হয়। এই পারণ ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে সম্পন্ন করতে হয়।
এই নির্দিষ্ট পারনের সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশষ্য ভগবানকে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করে পারন করা একান্ত আবশ্যক। নচেৎ একাদশীর কোনো ফল লাভ হয় না। পারনের সময় যে মন্ত্রটি পাঠ করতে হয় সেটি হল-
"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব"
অথবা
"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব"