যজ্ঞে পশুহত্যা একসময় বহুলপ্রচলিত ছিল। ‘ (শান্তি/২৬৯) প্রাচীনকালের গোহত্যার স্মৃতি যেমন মহাভারতে রয়েছে, তেমনি পরবর্তীকালের পশুহত্যা ও গোহত্যায় নিষেধাজ্ঞা সম্বন্ধেও মহাভারত হতে জানা যায় –
” শাস্ত্রানুসারে ছাগ পশুরেই অজ বলিয়া নির্দেশ করা যায় । মহর্ষি গণ কহিলেন, বেদে নির্দিষ্ট আছে , বীজ দ্বারাই যজ্ঞানুষ্ঠান করিবে। বীজের নামই অজ। অতএব যজ্ঞে ছাগপশু ছেদন করা কদাপি কর্তব্য নহে। যে ধর্মে পশুচ্ছেদন করিতে হয় , তাহা সাধুলোকের ধর্ম বলিয়া কখনোই স্বীকার করা যায় না। বিশেষত ইহা সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যযুগ । এই যুগে পশু হিংসা করা কিরূপে কর্তব্য বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে।” (শান্তি/ ৩৩৮)
“যে ব্যক্তি গোমাংস ভক্ষণ এবং যে ব্যক্তি ঘাতককে গোবধে অনুমতি প্রদান করে তাহাদের সকলকেই সেই নিহত ধেনুর লোম পরিমিত বৎসর নরকে নিমগ্ন থাকিতে হয়।” (অনুশাসন/৭৪)
“ছাগ, গো ও ময়ূরের মাংস , শুষ্ক মাংস এবং পর্য্যুষিতান্ন ভোজন করা নিতান্ত গর্হিত।“ ( অনুশাসন/১০৪)
“যে ব্যক্তি অতিথির সমাদর না করে তাহারে স্ত্রীহত্যা, গোহত্যা, ব্রহ্মহত্যা, গুরুপত্নীহরণ ও কৃতঘ্নতাজনিত পাপে লিপ্ত হইতে হয়।” ( অনুশাসন/ ১২৬)
“যাহারা ব্রাহ্মণঘাতি, গোঘ্ন, পরদারনিরত, বেদে শ্রদ্ধাশূণ্য ও জায়া জীবি সেইসমস্ত পাপাচার নিরত পামরদিগের সহিত কথোপকথন করাও অনুচিত।“ (অনুশাসন/১৩০)
মহাভারতের সময়কালে গোমাংসভোজনকে ভালো চোখে দেখা হত না। মদ্রক (কর্ণ/৪১) ও বাহিকদের (কর্ণ/৪৫) গোমাংস ভক্ষণের কথা মহাভারত হতে জানা যায়। তবে এর ফলে তাদের নিন্দার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
গোপূজা
প্রাচীন ভারতের কৃষিজীবি সমাজে প্রাণী হিসাবে গরু সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হত। মহাভারতে গরু পূজা করার কথা বলা আছে-
” গাভী সমুদায় জীবগণের প্রসূতিস্বরূপ এবং নানা প্রকার সুখের নিদান । মঙ্গলাভিলাষী ব্যক্তিদিগের নিত্য গো প্রদক্ষিণ করা অবশ্য কর্তব্য। গো শরীরে পদাঘাত এবং গোকূলের মধ্যস্থল দিয়ে গমন করা কদাপি কর্তব্য নহে। গাভী সকল সমুদায় মঙ্গলের আয়তন স্বরূপ । অতএব ভক্তি পূর্বক উহাদিগের পূজা করা অবশ্য কর্তব্য।” (অনুশাসন/ ৬৯)
গোবর ও গোমূত্র
এমনকি গোবর এবং গোমূত্রর কথাও মহাভারত হতে পাওয়া যায়। (অনুশাসন/৭১; অনুশাসন/৭৩) গরুর গোবর ও গোমূত্রে মানুষের স্নান করার কারণ হিসাবে কথা বলা হয়েছে। অনুশাসন পর্বের ৮২ তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে- ‘গোবরে লক্ষ্মী বাস করেন’।
মহাভারত ভারতের দীর্ঘকালের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে। এর ফলেই এতে গোহত্যার সমাপ্তি, গোপূজা এবং গোবর-গোমূত্রের পবিত্রতার কথাও এতে পাওয়া যায়।

ঐতিহ্যগতভাবে গবাদিপশু ভারতবর্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গৃহাস্থলি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং কিছু হিন্দু গরুকে পবিত্র হিসেবে এবং গো হত্যাকারীকে পাপী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।