শিষ্যের আচরণ
প্রশ্ন:- বেদান্ত শাস্ত্র মতে শিষ্যের কায়-মন-বাক্যে গুরুর প্রতি কী রকম ব্যবহার হওয়া উচিত ?
উঃ- বেদান্ত শাস্ত্র অনুসারে গুরুর প্রতি শিষ্যের কায় - মন
- বাক্যে কমপক্ষে নিম্নলিখিত ব্যবহার অত্যন্ত আবশ্যক - কারণ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ক্ষেত্রে শাস্ত্র মর্যাদা মেনে চলা উচিত । যথা :-
(১) গুরুর নিকটে কখনো খালি হাতে যাওয়া নিষিদ্ধ।কমপক্ষে একটি ফুল নিয়ে প্রণাম করা উচিত।
খালি হাতে প্রণাম করা উচিত না এবংযাওয়াও উচিত নয় ।
(২) অপরিগ্রহ পালনকারী গুরুর নিকটে অর্থ দিয়ে প্রণাম করা উচিত নয় ।
(৩) গুরুর চোখে চোখ রেখে কথা বলা উচিত নিষিদ্ধ , মাথা নত করিয়া বিনম্র ভাবে গুরুর হইতে নিচু আসনে বসিয়া কথা বলা উচিত।
(৪) গুরুর সোজাসুজি বা মুখোমুখি বসা উচিত নয়। উভয়পাশের মধ্যে কোনো এক পাশে বিনম্র ভাবে অবস্থান করা উচিত।
(৫) গুরুর সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত নয়।
(৬) গুরুর সামনে শারীরিক - মানসিক - বাক্যের বল দেখানো উচিত নয়।
(৭) গুরুর সমতুল্য আসনে বসা উচিত নয়।
(৮) গুরুর সম্মুখে জড়ো- জগতের কামনা - বাসনার কথা বলা উচিত নয়।
(৯) গুরুর সম্মুখে কোনো প্রশ্ন করতে হলেও তাঁর বিনম্র অনুমতি নিয়ে তবেই প্রশ্ন করা উচিত।
(১০) গুরুর চরণে কখনো তুলসী পাতা দিয়ে প্রণাম করা উচিত নয়।
(১১) কখনো কোনো পরিস্থিতিতে গুরুর সাথে তর্ক করা উচিত নয়।
(১২) দীক্ষা বা পূজা পার্বনে গুরুকে দক্ষিণা দেওয়া উচিত। সেই দক্ষিণা হলো ফুল এবং হরতকি।
(১৩) গুরুর অনুমতি ব্যাতিত গুরুকে এবং গুরুর পরিবার কে অন্ন - বস্ত্র - অর্থ দেওয়া নিষিদ্ধ।
(১৪) গুরুর সেবা বা অন্য কিছু করিতে হলেও গুরুর অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন ।
(১৫) গুরুকে সর্বদা গুরুদেব বলিয়া সম্বোধন করা উচিত।
(১৬) গুরুর কাছে কখনো ঋণ অথবা অর্থ সাহায্য চাওয়া উচিত নয়।
(১৭) গুরুর কাছে একমাত্র আদেশ - করুণা - কৃপা - পথপ্রদর্শক এবং গুরুর প্রসাদ ইহা ব্যাতিত কোনো প্রকার জড়ো বস্তুর কোনো কামনা বা চাওয়া নিষিদ্ধ।
(১৮) একমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রে গুরু যদি কোনো জড়ো বস্তু আদেশ দিয়া প্রদান করেন তবেই গুরুর আদেশ পালনার্থে সেই বস্তু বিনম্র ভাবেগ্রহণ করা উচিত।
(১৯) গুরুর নিমিত্তে যেকোনো কর্ম গুরুর অনুমতি ব্যাতিত করা উচিত নয়।
(২০) গুরুর বাড়িতে যাওয়ার পূর্বে পত্রের মাধ্যমে বা যে কোনো মাধ্যমে গুরুর অনুমতি নিয়ে যাওয়া উচিত।
(২১) গুরুর কাছে দীক্ষা প্রার্থনা করিলেও সেটি অত্যন্ত বিনম্র ভাবে চাওয়া উচিত।
(২২) গুরুর আদেশ সমাপ্ত হওয়া মাত্র বিনা প্রশ্নে , বিনা সময়ের অপব্যায়ে, সঙ্গে সঙ্গেই সেই আদেশ টি পূর্ণ রূপে পালন করা উচিত।
(২৩) গুরুর চরণ স্পর্শ করিয়া প্রণাম করা উচিত নয়।
(২৪) গুরুর সামনে অর্থ - রূপ - বহির্জগতের কোনো পদ গুন্ - অহংকার দেখানো উচিত নয়।
(২৫) নিজের কর্মের অথবা নিজের গুনের প্রশংসা নিজমুখে গুরুর সামনে কখনো বলা উচিত নয়।
(২৬) গুরুর সামনে অতি উচ্চস্বরে হাসা নিষিদ্ধ।
(২৭) গুরু যদি কাওকে দান করতে আদেশ করেন সঙ্গে সঙ্গে গুরুর সামনে কৃপণতা বা যুক্তি দেখানো উচিত নয়।
(২৮) গুরু যদি কোনো জায়গা যেতে আদেশ করেন বিনা তর্কে সঙ্গে সঙ্গে সেই আদেশ পালন করা আবশ্যক।
(২৯) গুরুর বাহ্যিক পোশাক - পরিচ্ছদ, গুরুর আচার - আচরণ, গুরুর আহার -নিদ্রা, গুরুর কর্ম , গুরুর বাক্য - ব্যবহার কখনো শিষ্যের বিচার করা উচিত নয়।
(৩০) গুরুর প্রতি সন্দেহ সেকেন্ডের জন্যেও করা কখনোই উচিত নয়।
(৩১) গুরুর উপর কোনো কারণে অভিমান - ক্রোধ -বিরক্ত বা বিরত হওয়া কখনো উচিত নয়।
(৩২) গুরু ব্যাক্তি বিশেষ হলেও গুরুর আত্মস্বরূপকে পরমাত্মাস্বরূপ জ্ঞান করা উচিত।
(৩৩) গুরুর বাক্যকে ব্রহ্মবাক্য জ্ঞান করা উচিত।
(৩৪) গুরুর প্রতি হিংসা, পরশ্রীকাতর করা নিষিদ্ধ।
(৩৫) গুরুর সামনে কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে অসত্য বচন বলবে না।
(৩৬) গুরু নিন্দা করা উচিত নয়।
(৩৭) গুরু নিন্দার স্থান ত্যাগ করিবে এবং গুরু নিন্দাকারী বাক্তিকেও ত্যাগ করা উচিত।
(৩৮) সব ভুল ক্ষমা যোগ্য হলেও গুরু নিন্দাকারী ব্যাক্তির অপরাধ ক্ষমা যোগ্য নয়।
(৩৯) গুরুর প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধা , ভক্তি , নিষ্কামপ্রীতি , শালীনতা , বিনম্রতা সর্বদা থাকা উচিত।
(৪০) যদি নিজের রূঢ় স্বভাব থাকে তাহা কোনো কারণেই গুরুর সামনে প্রদর্শন করা উচিত নয়।
(৪১) গুরুকে কখনও পাপ পথের উপার্জিত অর্থের দ্বারা ক্রয় করিয়া কোনো দ্রব্য কখনও প্রদান করা উচিত নয়।
(৪২) গুরুর কাছের সদা শিক্ষা - জ্ঞান - উপদেশ প্রাপ্তির মনোভাবেই যাওয়া উচিত।
(৪৩) গুরুর সামনে নিজেকে বালকবৎ জ্ঞান করিবে।
(৪৪) গুরুর সামনে জড়ো -জাগতিক কোনো সমস্যা, পরামর্শ বা উপদেশ প্রার্থনা করিলেও - গুরু তাঁর নিজের শক্তি বলে জড়ো -জাগতিক সমস্যার সমাধান করিয়া দিলে ভালো হয় এইরকম চিন্তা ভাবনা আনাও শাস্ত্র বিরুদ্ধ কাজ বলে গণ্য করা হয়।
ইত্যাদি প্রকারের আরও বহুবিধ আচরণ বিধি শাস্ত্রে আছে। উপরোক্ত বা আরও শাস্ত্রোক্ত আচরণের উপযুক্ত হলে তবেই দীক্ষা প্রার্থনা করা উচিত।