দীক্ষা:--অপ্রাকৃত দিব্য জ্ঞানের উদয়
বিষ্ণু যমলা শাস্ত্র বলেছে: "যে প্রক্রিয়াটি দিব্য জ্ঞান (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) প্রদান করে এবং পাপ ও অজ্ঞতার বীজকে ধ্বংস করে, সেই আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের দ্বারা দীক্ষা বলা হয় যারা সত্য দেখেছে।"[১১]
“দিব্য জ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কুর্যাৎ পাপস্য সংক্ষয়ম তস্মাৎ দীক্ষেতি সা প্রোক্তা দেশিকৈস্তত্ত্ব কোবিদৈ:।
যা থেকে অপ্রাকৃত দিব্য জ্ঞানের উদয় হয় এবং পাপের সর্বতোরূপে ক্ষয় হয়, তত্ত্বশাস্ত্রবিৎ পণ্ডিতেরা তাকেই দীক্ষা বলে বর্ণনা করেছেন। পারদের সংস্পর্শে রাসায়নিক ক্রিয়ার প্রভাবে কাঁসা যেমন সোনায় পরিণত হয়। তেমনি যথাযথভাবে দীক্ষা গ্রহণের ফলে মানুষ ব্রাহ্মণোচিত সমস্ত গুণাবলি অর্জন করেন।
দীক্ষা শব্দের অর্থ এমন জ্ঞান যার দ্বারা দীক্ষাগ্রহণকারীর পাপক্ষয় হয়। দীক্ষা প্রধানত দ্বিবিধ বহির্দীক্ষা ও অন্তর্দীক্ষা। বহির্দীক্ষায় পূজা, হোম প্রভৃতি বাহ্যিক অনুষ্ঠান বিহিত; আর অন্তর্দীক্ষায় মানুষের কুন্ডলিনীশক্তির (আত্মশক্তি) জাগরণ ঘটে।
গুরু কর্তৃক শিষ্যকে বিশেষ কোনো দেবতার মন্ত্র দান অর্থাৎ সেই দেবতার উপাসনায় উপদেশ দানের নামই--" দীক্ষা" , আর দীক্ষাদানকারী গুরুকে বলা হয় দীক্ষাগুরু।
কাজের অনিত্য দেহের নিত্যাত্মার মুক্তির সদ্গতির জন্য বিধি অনুসারে দীক্ষা গ্রহণ করিতে হয়। দীক্ষাতে দেহ শুদ্ধি হয়, সংসার বাসনা ক্ষয় হয়,মহৎ ব্যক্তির ও শ্রীকৃষ্ণের এবং শ্রীগুরু কৃপা লাভ হয়। সাধন ভজন ও অর্চ্চনাদি ভজনাঈের অধিকার জম্মে এবং সর্ব্বকার্য সিদ্ধি হয় কাজেই দীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন ।
দীক্ষা গ্রহণ না করিলে সাধন ভজন রাজ্যে প্রবেশ করা যায় না । দীক্ষা ব্যতীত গুরুর কৃপা হয় না দীক্ষা ব্যতীত হরিনামাদি ভজনের দ্বারা শ্রেয়ঃলাভ হইলেও কৃপা ও সেবা লাভের ও অর্চ্চনাদি ভজনার অধিকার হয় না এবং সাধন ভজন পথের শক্তি লাভ হয় না । সংসার বাসনা ক্ষয় হয় না, আর দীক্ষা মন্ত্র গ্রহণ না করিলে পরমাত্মার সহিত জীবাত্মার মিলনে সংযোগের কোন উপায়ও হয় না । জন্ম-মৃত্যু বারণ হয় না,কোন সৎকার্যের সিদ্ধি হয় না । কাজের অনিত্য দেহের নিত্যাত্মার মুক্তির সদ্গতির জন্য বিধি অনুসারে দীক্ষা গ্রহণ করিতে হয়। দীক্ষাতে দেহ শুদ্ধি হয়, সংসার বাসনা ক্ষয় হয়,মহৎ ব্যক্তির ও শ্রীকৃষ্ণের এবং শ্রীগুরু কৃপা লাভ হয়। সাধন ভজন ও অর্চ্চনাদি ভজনার অধিকার জম্মে এবং সর্ব্বকার্য সিদ্ধি হয় কাজেই দীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন । দীক্ষা গ্রহণ ব্যতীত সাধন সিদ্ধি হয় না। কাজেই দীক্ষা গুরুর প্রয়োজন।
ধ্রুব প্রথমে দীক্ষা গ্রহণ ব্যতীত বৈকুণ্ঠেশ্বর শ্রীনারায়ণে ডাকা সত্বেও তাহার কৃপা লাভ করিতে পারে নাই । তৎপরে শ্রীনারদ ঋষি হইতে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ,তাহাকে ডাকিয়া তাহার কৃপা লাভ করেন। অর্থাৎ শ্রীনারায়ণের দর্শন লাভ করেন ।
যাহাদের নিকট হইতে সাধন ভজনের উপদেশাদি ও তত্ত্বাদি শিক্ষা লাভ করা যায় তাহারাও শিক্ষারগুরু । ভগবান প্রাপ্তিজনিত শাস্ত অনুযায়ী অজানা বিষয় যাহাদের নিকট হইতে জানার যায় তাহারাও শিক্ষার গুরু । মুনি,ঋসি ও মহাজনদের রচিত ভগবত সম্বন্ধীয় ধর্মগ্রন্হ হইতে যে জ্ঞানের উপদেশাদি ও সদাচারের নিয়ম পদ্ধতি ও সাধন ভজন পদ্ধতি শিক্ষা লাভ করা যায় ,তাহারা ও শিক্ষার উপদেষ্ট গুরু । সাধন পথে গুরু দুইজন= দিক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু ।
গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর গুরু সাক্ষাত্ পরমব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ
হিন্দু দর্শনের গুরু কে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। পরম ব্রহ্মের স্বরূপ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে গুরুকে।
তিমির অন্ধকারাচ্ছন্ন মনকে যিনি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেন তিনি হচ্ছেন গুরু
দীক্ষা গ্রহণ না করলে দীক্ষা গ্রহণ করলে যা লাভ হয় সেগুলো প্রাপ্ত করার সুযোগ হয় না। আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করতে না পারার জন্য আধ্যাত্মিকভাবে অশিক্ষিত হয়ে থাকতে হয়।