কোঙ্কনে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার দাপোলিতে একটি ধন্বন্তরি মন্দির রয়েছে। এটি ডোঙ্গারে পরিবারের অন্তর্গত ও বৈদ্য অনিরুদ্ধ ডোঙ্গারের মালিকানা ও পরিচালনাধীন। কোঙ্কন ও মহারাষ্ট্রের অনেক ভক্ত মন্দিরে যান ও প্রার্থনা করেন।
দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে কেরালা ও তামিলনাড়ু ধন্বন্তরীর উদ্দেশ্যে কয়েকটি উৎসর্গীকৃত মন্দির রয়েছে। সেখানে আয়ুর্বেদ অত্যন্ত চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। কেরালার থট্টুভা ধন্বন্তরি মন্দির একটি বিশেষ বিখ্যাত মন্দির যেখানে ভগবান ধন্বন্তরির মূর্তি প্রায় ছয় ফুট লম্বা ও পূর্বমুখী। ডান হাতে ভগবান অমৃত ও বাম হাতে অট্ট, শঙ্কু ও চক্র ধারণ করেন।
'একাদশী' দিবস উদযাপন 'গুরুবায়ুর একাদশী'-এর মতো একই দিনে পড়ে যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
তামিলনাড়ু-এর শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির, শ্রীরঙ্গম প্রাঙ্গণে একটি ধন্বন্তরী মন্দির আছে যেখানে প্রতিদিন দেবতার পূজা করা হয়। এই মন্দিরের সামনে একটি খোদাই করা পাথর রয়েছে যা ১২ শতকের বলে ধারণা করা হয়। শিলালিপি অনুসারে, মহান্ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক গরুড় বাহন ভট্ট মন্দিরের ভিতরে মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন। একটি প্রসাদ তীর্থম বা ভেষজের ক্বাথ দর্শনার্থীদের দেওয়া হয়। মন্দিরটি রাজ্যের প্রাচীনতম ধন্বন্তরী মন্দির৷ কাঞ্চিপুরম-এর বরদরাজ পেরুমল মন্দিরের দ্বিতীয় প্রাঙ্গণে আরো একটি ধন্বন্তরী মন্দির পাওয়া যায়।
তামিলনাড়ু-এর সিদ্ধর ঐতিহ্যে, ধন্বন্তরি প্রাচীনকালের ১৮ জন সম্মানিত সিদ্ধরের একজন। বৈতীশ্বরন কোয়েল বা বৈঠীশ্বরনকোয়েল, মায়িলাদুথুরাই, তামিলনাড়ু-তে পুলিরুকুবেলুর গ্রামে তার জীব সমাধি বাড়ি।
কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির ধন্বন্তরী মন্দিরগুলির মধ্যে রয়েছে:
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে, একবার ধন্বন্তরী তাঁর শিষ্যযুক্ত হয়ে কৈলাশে যাত্রা করছিলেন। পথে তক্ষক নামে এক নাগ বিষ নিক্ষেপ করে হিসহিস্ করতে লাগল। এক শিষ্য তক্ষকের মস্তকের হীরেটি ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারল। এই ঘটনাগুলি জানতে পেরে, শক্তিশালী সর্প-রাজ বাসুকি দ্রোণ, পুণ্ডরিক ও ধনঞ্জয়ের নেতৃত্বে হাজার হাজার সর্পকে শিষ্যদলের বিরুদ্ধে জড়ো করেন। বিষ নির্গতকারী এই সমস্ত সর্পগণ একত্রে ধন্বন্তরীর শিষ্যদের অজ্ঞান করে দেয়। অবিলম্বে, ধন্বন্তরী "বনস্পতি" থেকে একটি ওষুধ তৈরি করেন। তার ফলে তার শিষ্যরা সুস্থ হয়ে ওঠে ও সাপগুলিকে একে একে অজ্ঞান করে দেয়।
যখন বাসুকি বুঝতে পারলেন কি ঘটেছে, তিনি ধন্বন্তরীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য শৈব সর্প দেবী মনসাকে প্রেরণ করেন। মনসা ধন্বন্তরীর শিষ্যদের অজ্ঞান করে দেন। কিন্তু যেহেতু ধন্বন্তরি "বিশ্ববিদ্যা" শিল্পে পারদর্শী ছিলেন, তাই তিনি শীঘ্রই তার শিষ্যদের চেতনা ফিরিয়ে আনেন।
মনসা যখন ধন্বন্তরী বা তাঁর শিষ্যদের পরাজিত করা অসম্ভব বলে মনে করলেন তখন তিনি শিবের দেওয়া ত্রিশূল ধারণ করে তা ধন্বন্তরীর প্রতি নিক্ষেপ করতে উদ্যত হলেন। তা দেখে শিব ও ব্রহ্মা তাদের সামনে আবির্ভূত হয়ে শান্তি স্থাপন করে তাদের সকলকে স্ব-স্ব স্থানে পাঠিয়ে দিলেন।
দ্বিতীয় দ্বাপর যুগে, কাশীরাজ দীর্ঘতপা পুত্র কামনায় বৈদ্য ধন্বন্তরির আরাধনা করেন। দেবতা বর হিসেবে কাঙ্খিত সন্তান রূপে স্বয়ং অবতরণ করতে রাজি হন। ধন্বন্তরি এক মহান রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাকে "সমস্ত ব্যাধি দূরকারী" বলে বর্ণনা করা হয়। তিনি জরামুক্ত ও "সর্বজনীন জ্ঞানের গুরু" হিসাবেও স্বীকৃত। ঋষি ভরদ্বাজ তাকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পাঠ শিক্ষা দান করেন তথা ঔষধিবিদ্যার আদি জনক করে তোলেন। রাজা তার চিকিৎসাবিদ্যাজ্ঞানের আটটি ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করে বিভিন্ন শিষ্যের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় আবির্ভাব - আয়ুর্বেদের শিক্ষক হিসেবে ধন্বন্তরী:
দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে ভগবান ধন্বন্তরী আবির্ভূত হন দ্বিতীয় দ্বাপর যুগে, প্রায় দুই বিলিয়ন বছর আগে। সমুদ্র মন্থনের সময় ভগবান বিষ্ণু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি আবার মানব সমাজে ধন্বন্তরী রূপে আবির্ভূত হবেন এবং মানুষের দ্বারা উপাসিত হবেন।
তিনি তাদেরকে আয়ুর্বেদের বিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন। সেই সময় ভগবান ধন্বন্তরী স্বর্গে অবস্থান করছিলেন। ভগবান ইন্দ্র পৃথিবীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখেছিলেন এবং ভগবানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি মানবজাতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা দেন যাতে তাদের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সেই সময়, কাশীর (বারাণসী) রাজা দীর্ঘতমাস পুত্রের কামনায় কঠোর তপস্যা ও তপস্যায় লিপ্ত ছিলেন। রাজা পুত্রের জন্য ভগবান ধন্বন্তরীকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন। এরপর, ধন্বন্তরী তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে রাজাকে অনুরোধ করেন যে তিনি যেন তাঁর কাছে কোন বর প্রার্থনা করেন। রাজা বললেন, "হে প্রভু, যদি আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তাহলে আমার পুত্র হোন, আমার লক্ষ্যের দাতা হোন।" ভগবান উত্তর দিলেন, "তাই হোক" এবং তিনি অন্তর্হিত হলেন।
এরপর ভগবান ধন্বন্তরী রাজা দীর্ঘতমের পুত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি ছিলেন একজন সুন্দর বালক এবং খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি কঠোর তপস্যা করতেন এবং প্রচুর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ভগবান ব্রহ্মা অনেক কষ্টে তাঁকে কাশী শহরের উপর আধিপত্য গ্রহণ করতে রাজি করান এবং তখন থেকে তিনি কাশী-রাজা নামে পরিচিত হন। রাজা হিসেবে, তিনি মানবজাতির কল্যাণের জন্য আটটি বিভাগে আয়ুর্বেদের উপর সংহিতা তৈরি করেন।
ভগবান ধন্বন্তরীর আয়ুর্বেদিক শিক্ষাগুলি বৈদিক সাহিত্যের বিভিন্ন স্থানে লিপিবদ্ধ আছে - অথর্ববেদ , গরুড় পুরাণ , বিষ্ণু পুরাণ , সুশ্রুত সংহিতা এবং চরক সংহিতা । শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে "স্মৃত-মাতৃরতি-নাসনঃ" - "যিনি ধন্বন্তরীর নাম স্মরণ করেন তিনি সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। "
হে ব্রাহ্মণগণ!ধন্বন্তরীর উৎপত্তি শ্রবণ করুন। পূর্বে অমৃতপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সমুদ্র মন্থন সময়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রথমে তিনি অমৃত কলশ হস্তে আবির্ভূত হন। চতুর্দিকে থেকে তিনি ছিলেন উদ্দীপ্ত জ্যোতির্বলয়ে পরিবৃত। হঠাৎ তাকে তার কাজ সম্পন্ন করতে দেখে পাশে দণ্ডায়মান বিষ্ণু বললেন- "তুমি জল থেকে জন্ম নিয়েছ"। তাই তোমাকে অব্জ (জলজাত) হিসাবে স্মরণ করা হবে। অব্জ বিষ্ণুকে বললেন- “হে প্রভু পরমেশ্বর! আমি আপনার পুত্র। পৃথিবীতে আমার যজ্ঞভাগ ও স্থান নির্ধারণ করুন ।" এইভাবে বলা হলে, ভগবান বাস্তবিক অবস্থান পর্যালোচনা করার পর বললেন, "যজ্ঞের বিভাজন ইতিমধ্যেই দিতিপুত্রগণের পাশাপাশি সুরগণও সম্পন্ন করেছেন। হোম প্রভৃতির যথাযথ কার্যকারিতা মহর্ষিগণ বেদে নির্ধারণ করেছেন। তুমি বেদের পরে জন্মেছো। তাই যজ্ঞে আবাহনের উপযুক্ত তোমার কোনো মন্ত্র নেই । হে দেব! তোমার দ্বিতীয় অবতারে তুমি পৃথিবীতে যশ লাভ করবে। তখন তুমি অণিমাদি বিবিধ সিদ্ধি অর্জন করবে। দেব! স্বয়ং এই দেহে তুমি দেবত্ব লাভ করবে। ব্রাহ্মণ (ও অন্যান্য দ্বিজাতিগণ) চতুর্মন্ত্র (অর্থাৎ চার বেদের মন্ত্র), ঘি ও গব্য (দুধ ও দুধ থেকে প্রাপ্ত পূজার উপকরণ) দ্বারা তোমার পূজা করবে। তুমি পুনর্বার আয়ুর্বেদের (চিকিৎসা বিজ্ঞান) প্রচলন করবে। (আমার দ্বারা তোমার প্রতি কথিত) এই ঘটনাবলী অনিবার্য ও ইতিমধ্যেই পদ্মযোনি (ব্রহ্মা) কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে তুমি দ্বিতীয় দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করবে”। অতএব বর দেওয়ার পর বিষ্ণু অন্তর্হিত হয়ে গেলেন।
ব্রহ্মচর্য সাধন ব্রাহ্মমুহূর্তে বা সূর্যোদয়ের ১ ঘন্টা পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করবে এবং মুখে যতটা সম্ভব জল ধরে রেখে ২০-২২ টা জলের ঝাপটা দিয়ে শীতল জলদ্বারা চক্ষুদদ্বয় ধৌত করবে।গামছা পড়ে মলমুত্রত্যাগ করবে বা অন্য বস্ত্রে গেলে সেটা পাল্টাতে হবে।মলমুত্রত্যাগের সময় দন্তে দন্তে একটু জোরে চাপিয়া ধরবে তাহলে শীঘ্র দাঁত পড়িবে না।মলমুত্র ও প্রসাবের পর জলশৌচ কর্তব্য। দন্তমন্জন করিবে জিহ্বার ক্লেদ পরিষ্কার করিবে।সকাল ৯ টার মধ্যেই স্নান করবে।গরমে শীতল জল এবং শীতে উষ্ণ জল দ্বারা ধৌত করবে।(১২ টা ৩টা,সন্ধ্যা ৬ টা ও রাত ৯ টায় ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে) পরে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।চিরুনী দিয়ে এমনভাবে মাথা আছড়াবে, যেন মাথার চামড়ায় ঘর্ষন হয় এতে চুল পাকবে না।সাত্ত্বিক আহার করবে।হোটেলে আহার করিবে না।নিজের আহার নিজে পাক অথবা শুদ্ধ গুরুদেব কতৃক রন্ধন গ্রহন করিবে।রাতে অধিক আহার করিবেনা।রাতে ক্ষুধা না পেলে আহার করবেনা আর প্রতিবার তৃপ্তি করে না খেয়ে আকাঙ্খা থাকতেই আহার সমাপ্ত করবে।পাকস্থলীর অর্ধেক ভোজন অর্ধেক জল আর অর্ধেক বায়ু চলাচলের জন্য রাখবে।একাদশী তিথিতে অনাহার না করিয়া একবেলা ফলমুল -দুধ খাবে। এদিন অপরাহ্ণে ভোজন সমাপ্ত করবে রাতে কিছু খাবেনা।সকল মাদকদ্রব্য বর্জনীয়।বীর্যরক্ষাই ব্রহ্মচর্যের প্রধান আলোচ্য বিষয়।বীর্য রক্ষা করে চলবে।নরম তুললার বিছানার পরিবর্তে কঠিন শয্যা উপকারী। গুরুজনদের নিকট উচ্চস্থানে বসবে না,মুখের ফু দিয়ে আগুন জ্বালাবে না।জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখবেনা,লোম নখ ঘন ঘন ছেদন করবে না। ব্রহ্মচর্য হীন শুক্র নষ্ট করলে শরীর খিটখিটে হয়, দর্শন ও শ্রবনশক্তি হ্রাস পায়।আর বিন্দু রক্ষা করলে মস্তিষ্কে প্রবল শক্তি সঞ্চারিত হয়। তথ্যসুত্রঃঠাকুর নিগমানন্দের লিখিত গ্রন্থ ব্রহ্মচর্য সাধন গ্রন্থ।
আশয়া বধ্যতে লোকঃ ॥১॥
অনুবাদ : লোক আশা পাশে বন্ধ থাকে। ১।
মর্মার্থ : সংসারে আশা বিষয় বা প্রবৃত্তি দ্বারা লোক আবদ্ধ হয়। আশা বা বিষয় বাসনা যদি উত্তম বিষয়ে হয়, তার সে মানব আশানুরূপ সাধনা ও কার্য করে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। অসাধু বিষয়ে আশা বর্ধিত হলে অধঃপতন হয়। দুরাশা পরিত্যাগ করা উচিত। ১।
দুর্মে ধসাংমহচ্ছাং বুদ্ধিং মোহয়তি ॥১৮
অনুবাদ : মেধাহীনের কঠিন শাস্ত্র পাঠে বুদ্ধির ভ্রম হয়। ১৮।
মর্মার্থ : যার যেরূপ বুদ্ধি, তার নানা বিষয় পাঠে সেরূপ জ্ঞান হয়। মন্দ বুদ্ধির কঠিন শাস্ত্র পাঠে বুদ্ধিবিমোহিত হয়। মলিন বুদ্ধির ন্যায় ও অঙ্কশাস্ত্র পাঠে সেরূপ অবস্থা দেখা যায়। মেধাহীনের জটিল এবং বিশাল শাস্ত্র অধ্যয়নে জ্ঞান বৃদ্ধি পায় না। ১৮।
যত্র সুখেন বর্তনে তদেবস্থানম্ ॥ ১৯ ॥
অনুবাদ : যে স্থান সুখে বাসের যোগ্য, সে স্থানে বাস করবে। ১৯।
মর্মার্থ : যে স্থানে শ্রোত্রিয় (বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ), নদী, বৈদ্য, লোকযাত্রা, ভয়শীলতা গর্হিত কার্যে লজ্জা দাক্ষিণ্য, ধর্মশীলতা, বাণিজ্য, কৃষি, গো-পালন, জীবিকা, সুবিচার, বিদ্যাচর্চা, শিল্প প্রভৃতি বিদ্যমান সেরূপ স্থানই বাসের সম্যক উপযুক্ত। ঈদৃশ স্থানেই লোকের প্রতিভার বিকাশ হয়। ১৯।
সৎসঙ্গঃ স্বর্গবাসঃ ॥ ২০ অনুবাদ : সাধু সঙ্গ স্বর্গবাসতুল্য। ২০। মর্মার্থ : সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গ দ্বারা উৎকর্ষ ও অপকর্ষ ঘটে থাকে। যেমন সূর্ব টঙ্কণ (সোহাগ) অগ্নিসংযোগে নির্মল হয়। তামা ও অগ্নিযোগে মলিন এবং দৃঢ় বিবর্ণ হয়। মানুষেরও সসঙ্গে উন্নতি, অসাধু সঙ্গ পতন ঘটে। ২০।
আৰ্য্যঃ স্বমিব পরং মন্যতে ॥ ২১
অনুবাদ : আর্য ব্যক্তি নিজের ন্যায় পরকেও মনে করে। ২১।
মর্মার্থ : শ্রেষ্ঠুজ্ঞান ও জ্ঞানবৃদ্ধ ব্যক্তি আর্য নামে খ্যাত। তাদৃশ ব্যক্তি নিজের সুখ ও দুঃখের ন্যায় অপরের সুখ ও দুঃখ মনে করে থাকে। অর্থাৎ পরের সুখে সুখী এবং পরের দুঃখে দুঃখি হয়। এইরূপ সুখে প্রসন্ন হওয়া, দুঃখে সাহায্য ও ত্রাণ করা আর্যের লক্ষণ। ২১।
প্রায়েশ রূপানূবৃৰ্ত্তিনোগুণাঃ ॥ ২২
অনুবাদ : যার যাদৃশরূপ তদনুসারে প্রায় গুণও হয়ে থাকে। ২২।
মর্মার্থ : যেখানে সৌম্যভাব, সেখানে সৌম্যগুণ থাকে, ইহা প্রসিদ্ধ উক্তি। রূপ অপেক্ষা গুণই মহার্ঘ। সুতরাং রূপ হতে গুণের প্রয়োজন অধিক। ২২।
বিশ্বাস ঘাতিনো নিষ্কৃতির্নবিদ্যতো ॥ ২৩
অনুবাদ : যে বিশ্বাসঘাতক তার নিষ্কৃতি নেই। ২৩।
মর্মার্থ : জগতে সকল ব্যবহারিক কার্য বিশ্বাসকে আশ্রয় করে পরিচালিত তথা সম্পাদিত হয়, যে বিশ্বাস বিনষ্ট করে অনিষ্টাচরণ করে, তার ইহলোকে কল্যাণ নষ্ট হয় ও পরলোক পাপ হতে অব্যাহতি নেই। ২৩।
দৈবায়ত্তং ন শোচয়েৎ ॥ ২৪
অনুবাদ : দৈবাধীন বিষয়ে শশাচনা করবে না। ২৪।
মর্মার্থ : যা মানুষের শক্তির অতীতরূপে প্রকাশ পায়, তা দৈবাধীন, ভূকম্প, উল্কাপাত ঝঞ্ঝাবায়ু, বারিপ্লাবন, মহামারি প্রভৃতি লোক বুদ্ধির অতীত। এই সকল বিষয়ে প্রতিকার করতে সমর্থ হলে উত্তম; না হলেও বৃথা শোচনা এবং অনুতাপ করবে না। ২৪।
আশ্রিত-দুঃখমাত্মন ইব মন্যতে সাধুঃ ॥ ২৫
অনুবাদ : সাধুগণ অনুগত লোকের দুঃখ নিজের দুঃখের ন্যায় মনে করেন। ২৫।
মর্মার্থ : সাধু, মহাজন, মহোদার চরিত, বিদ্বান, ব্যক্তি নিজের ও পরের দুঃখে সমজ্ঞানবশতঃ পরের দুঃখকাতর হয়ে থাকে। যাদের এরূপ সমদর্শিতা আছে, তারাই দেশ ও জনহিতকরণে সমর্থ হন। সৎসঙ্গ, সুশিক্ষা, সততা ও ধর্মাচরণ দ্বারা সম্ভাবে হৃদয় গঠিত হয়। অন্তরে বিদ্বেষ বিষ জন্মায় না। ফলে তিনি হন বিশ্ববন্ধু। ২৫।
অহিংসা পরমো ধর্ম্ম
अहिंसा परमं सत्यम अहिंसा परमं शरुतम॥
অহিংসা হল সর্বোচ্চ সত্য এবং পরম ধর্ম ॥
“অহিংসা পরম ধর্ম” – এই মহাজনোক্তি আমরা ছোটকাল হতে শুনে বড় হয়েছি। আমাদের রক্তমাংস অস্থিমজ্জায় এই বাণী প্রোথিত হয়ে আছে। অধিকাংশ ধর্মগুরুগণ আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই শ্লোকটি সম্পূর্ণ শ্লোক নয়, শাস্ত্রে লেখা সম্পূর্ণ শ্লোকটি নিচে দিচ্ছি:----
অর্থাৎ অহিংসা মনুষ্য জীবনের পরম ধর্ম , এবং ধর্ম রক্ষার জন্যে হিংসা করা তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম ॥
অথবা
অহিংসা পরম ধর্ম কিন্তু ধর্মের রক্ষা হেতু হিংসা শ্রেয় ধর্ম ॥
অহিংসা পরম ধৰ্ম্মস্তথাহিংসা পরো দমঃ।
অহিংসা পরমং দানমহিংসা পরমং তপঃ॥
অহিংসা পরমাে যজ্ঞস্তথাহিংসা পরম ফলম্।
হিংসা পরমং মিত্রমহিংসা পরমং সুখম।
অহিংসা পরমং সত্যমহিংসা পরমং শ্রুতম্ ॥
সর্বযজ্ঞেসু বা দানং সর্বতীর্থেসু বাপ্লুতম।
সর্ব্বদানফলং বাপি নৈতত্তুল্যমহিংসয়া ॥
অহিংস্রোস্য তপােহক্ষয্যমহিংস্রোস্য যজতে সদা।
অহিংস্রঃ সর্বভূতানাং যথা মাতা যথা পিতা।।
এতৎ ফলমহিংসাযা ভূষশ্চ কুরুপুঙ্গব!।
ন হি শক্যা গুণা বক্তমপি বর্ষশতৈরপি ॥
[ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় 101, শ্লোকঃ 37-41 ]
অনুবাদঃ
অহিংসা পরম ধর্ম, অহিংসা উত্তম ইন্দ্রিয়দমন, অহিংসা পরম দানের তুল্য এবং অহিংসা পরম তপস্যা॥ অহিংসা প্রধান যজ্ঞস্বরূপ, অহিংসা উত্তম ফলজনক, অহিংসা পরম বন্ধু- স্বরূপ, অহিংসা উত্তম সুখ উৎপাদন করে। অহিংসা পরম সত্যের তুল্য এবং অহিংসা বিশেষ শাস্ত্রজ্ঞানের সমান ॥ সমস্ত যজ্ঞে যে দান, সকল তীর্থে যে স্নান কিংবা সকল দানের যে ফল ; এই সমস্তও অহিংসার তুল্য নয়॥ হিংসাশূন্য মানুষের অক্ষয় তপস্যা হয়, হিংসারহিত মানুষ সর্বদাই যজ্ঞ করেন এবং হিংসা শূন্য লােক সমস্ত প্রাণীরই পিতা ও মাতার তুল্য হয়ে থাকে ॥
এই অহিংসার প্রচুর ফল ; অহিংসার সমস্ত গুণ শত বছরেও বলে শেষ করা যায় না ॥
…. [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় 101, শ্লোকঃ 37-41 ]
কিন্তু হিংসা না করা মানুষের প্রকৃত ধর্ম কিন্তু ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয়
নেওয়া তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ॥
উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংসা নয়, হিংসাই কর্তর্ব্য।
আমাদের জানা উচিত কোন্ কোন্ ব্যক্তির প্রতি হিংসা করা উচিত।
আমাদের ধর্মশাস্ত্রে আততায়ী নামক ঘৃণ্য পশুদের বধের কথা বলা হয়েছে।তাহলে জেনে নেওয়া যাক আততায়ীর সংজ্ঞা কী..??
.
অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ ।
ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে হ্যাততায়িনঃ।।(বশিষ্ঠ স্মৃতি:৩/১৬)
অনুবাদ:
1. যে ঘরে আগুন দেয়
2. খাবারে বিষ দেয়
3.. ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করতে উদ্যত
4. ধনসম্পদ অপহরণকারী
5..ক্ষেতখামার অপহরণকারী ও
6..ঘরের স্ত্রী অপহরণকারী – এই ছয় প্রকার দুষ্কৃতিকারীকে আততায়ী বলা হয়।
.
এই আততায়ীদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে সে প্রসঙ্গে মনুসংহিতা বলছে-
গুরুং বা বালবৃদ্ধৌ বা ব্রাহ্মণং বা বহুশ্রুতম্।
আততায়িনমায়াস্তং হন্যাদেবাবিচারয়ন্।।(৮/৩৫০)
অনুবাদ: সেই আততায়ী যদি গুরু, বালক, বৃদ্ধ, বহুশ্রুত ব্রাহ্মণ অথবা অতিশয় বিদ্বান্ ব্যক্তিও হয় ,তবুও অগ্রসরমান্ সেই আততায়ীকে তখনই বধ করবে।
তাছাড়া যারা সনাতন ধর্ম পালন করতে দেয় না, তাদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে তাও বলা আছে।
.
শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্ম্মো যত্রোপরুধ্যতে।
দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে।।(৮/৩৪৮)
আত্মনাশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাঞ্চ সঙ্গরে।
স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্ম্মেণ ঘ্নন্ ন দুষ্যতি।।(৮/৩৪৯)
অনুবাদ:--
: যখন সাহসকারীরা সনাতন ধর্ম্ম করতে না দেয়, তখন ব্রাহ্মণাদি ও তিন বর্ণ দুষ্টদমনের জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবে এবং আত্মরক্ষার্থে ও যজ্ঞীয় দক্ষিণাদি উপদ্রব নিবারণার্থে কিংবা যুদ্ধ উপস্থিত হলে স্ত্রীলোকের রক্ষার জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবেন।
যখন গোটা ভারতবর্ষ থেকে সনাতন ধর্ম ম্লান হয়ে পড়েছিল।ঠিক সেই সময়ে ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বৈশাখী শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে শঙ্করাচার্য জন্মগ্রহন করেন।কোষ্ঠীবিচারে জানতে পারেন তার আয়ু ছিল মাত্র ১৬ বছর।পরে ব্যাসদেবের কৃপায় তার আয়ু আরো ১৬ বছর বৃদ্ধি পায়।ছোট থেকেই শঙ্করাচার্য পান্ডিত্য অর্জন করেন।সনাতন ধর্ম যখন এ উপমহাদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে তখন তিনি পদব্রজে গোটা ভারতবর্ষ ভ্রমন করে ভারতের চার প্রান্তে চারটি মঠ স্থাপন করেন।যথা:দ্বারকায় সারদা মঠ,পুরীতে গোবর্ধন মঠ,জ্যোতির্ধামে যোশীমঠ এবং রামেশ্বরে শৃঙ্গেরী মঠ।শঙ্করাচার্যের ধর্মের মুল কথা অদ্বৈতবাদ।তিনি বলেন ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা।যা ঠাকুর নিগমানন্দ গ্রহন করেন।শঙ্করাচার্যের জ্ঞানপথ আজ সর্বত্র সমাদৃত।মাত্র ৩২ বছর বয়সে উত্তরাখন্ডের কেদারনাথে তিনি ইহলীলা সংবরন করেন।
********************************************************************
মন স্থির না হলে যোগ হয় না । সংসাররূপ হাওয়া মনরূপ দীপকে সর্বদা চঞ্চল করছে । ঐ দীপটি যদি আদপে না নড়ে, তা হ'লে ঠিক যোগের অবস্থা হয়ে যায় । কামিনীকাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত ।বস্তু বিচার করবে । মানুষের শরীরে কি আছে ---------রক্ত মাংস, চর্বি- নাড়িভৃড়ি, কৃমি, মুত, বিষ্ঠা এইসব । সেই শরীরের উপর আপন ভাবনা কেন ?