শ্বেতাশ্বতর বলছেন :----
“যেনাবৃতং নিত্যমিদং হি সর্বং জ্ঞঃ কালকারাে গুণী সর্ববিদ যঃ । তেনেশিতং কর্ম বিবর্ততে হ পৃথপতেজঃ অনিলখানি চিন্ত্” ৷৷৬/২৷৷
এই লােকালােক , বিশ্বচরাচরের প্রতিটি অণু - পরমাণুতে তিনি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছেন । সাময়িকভাবে নয় , নিত্য — নিয়মিতভাবে আছেন ।
তিনি জ্ঞাতা — জ্ঞানের অধীশ্বর ,
তিনি কালকার — তােমরা যে কাল বা নিয়তির কথা বলছ , তিনি সেই কালেরও কর্তা , প্রবর্তক ।
গুণময় সর্ববিদ — তার অগােচরে কিছুই নেই । যাবতীয় কর্মের তিনিই একমাত্র কর্তা । ক্ষিতি , অপ , তেজ , বায়ু , আকাশ — এই যে পাচটি বস্তু তারই চিন্তার প্রকাশমাত্র , সব তারই লীলা - বিলাস । এই পঞ্চভূতকে নিয়ে তিনিই সৃষ্টি - স্থিতি - লয়ের খেলা খেলছেন ।
আবার বলছেন .........
“তৎ কর্ম কৃত্বা বিনিবৰ্ত ভূয়ঃ তত্ত্বস্য তত্ত্বেন সমেত্য যােগ । একেন দ্বাভ্যাং ত্রিভিরষ্টভির্বা কালেন চৈবাত্মগুণৈশ্চ সূক্ষ্মৈঃ”॥৩৷৷
পৃথিবী থেকে শুরু করে পরমেশ্বর সব কিছু তাে সৃষ্টি করলেন । সবই তাে জড় বস্তু । তার জড়ত্ব দূর করে দিতে না পারলে কিভাবেই বা লীলাবিলাস সম্ভব ? তাই তিনি সব দিক পর্যালােচনা করে মূল তত্ত্ব অর্থাৎ উপাদান কারণগুলােকে তাদের সঙ্গে যুক্ত করলেন । সেই উপাদান কারণগুলাে এক , দুই , তিন করে আট রকম । কি কি ?
মাটির সঙ্গে মাটির উপাদান ,জলের সঙ্গে জলের উপাদান ,এভাবে তেজ , বায়ু , আকাশ প্রতেক্যের সঙ্গে প্রত্যেকের উপাদান যােগ করে তাে দিলেনই , সেই সঙ্গে দিলেন আরও তিনটি — মন , বুদ্ধি , অহঙ্কার।
সৃষ্টিমুহূর্তে যে প্রকৃতি ছিল জড , এই আটটিকে পেয়ে তার জডত্ব দুর হয়ে গেল , প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে মায়াবী হয়ে উঠল । একটা স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে লীলাচঞ্চল হয়ে উঠল ও ওঠাই স্বাভাবিক । কারণ এই আটটি হল ঈশ্বরের মায়াশক্তি ।
তারপর ঈশ্বর নিজে এই মায়াবী প্রকৃতির লীলাকে উপভােগ করার জন্য কালকে নিয়ে আত্মার সঙ্গে অর্থাৎ জীবাত্মার সঙ্গে খুব সূক্ষ্মভাবে থেকে গেলেন।
শ্রীমদ্ভগবদগীতার “জ্ঞান-বিজ্ঞান যােগে” ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তার শিষ্য অর্জুনকে আরও স্পষ্টভাবে বলেছেন,
“ভূমি , জল , বায়ু , অগ্নি , আকাশ , মন , বুদ্ধি ও অহঙ্কার — এই আট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত ।
হে অর্জুন ! এই নিকৃষ্ট প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্ট প্রকৃতি রয়েছে । সেই প্রকৃতি চৈতন্য - স্বরূপা ও জীবভূতা ; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জড় জগৎকে ধারণ করে আছে । আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে ।
অতএব নিশ্চিতভাবে জেনে রেখাে যে , আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ”।(গীতা ৭/৪-৬)