নিজেকে উদ্ধারের প্রয়োজন কেন?
অনেকেই বলেন এ জগতেই তো ভাল আছি। তাহলে উদ্ধারের প্রয়োজন কেন?
জীব ভগবানের অতি ক্ষুদ্র অংশ কনিকা। অংশের কাজ পূর্ণের সেবা করা। জীব মনুষ্য দেহ লাভ করে বহু জন্ম মৃত্যুর পর। মায়াবদ্ধ জীব এই দুঃখময় সংসারকে সুখ শান্তি লাভের স্হান মনে করে মোহগ্রস্হ হয়।
মানবেতর জীবের উদ্দেশ্য হচ্ছে জন্ম মৃত্যুর মধ্যে থেকে আহার - নিদ্রা - দেহরক্ষা - মৈথুন - সুখ লাভের চেষ্টা চালানো। কিন্তু মানব জীবনের উদ্দেশ্য জন্ম মৃত্যুর চক্রে পতিত না হয়ে নিত্যানন্দময় জীবনে উন্নিত হয়ে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হওয়া।
উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত জন্ম মৃত্যুর চক্রে ৮৪ লক্ষ যোনী ঘুরতে হবে। বিভিন্ন গুণসঙ্গ প্রভাবে আত্মা বিভিন্ন ধরনের জীব প্রজাতিতে জন্ম গ্রহন করে। তাই এই ক্ষনিক অথচ সুদুর্লভ মনুষ্য জীবনে এই জন্ম- জরা- ব্যাধি- মৃত্যু তথা নানা দুঃখ ও উদ্বেগপূর্ণ জগতে এসে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকা উচিত সচ্চিদানন্দময় ভগবদ্ধামে ভগবানের নিত্য সেবায় নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া, যাতে আর কখনো এই উৎপাত ও উদ্বেগপূর্ণ ভবচক্রে ফিরে আসতে না হয়। সেখানে গেলে আর জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না। সেটাই হলো পরম ধাম। সেটাই হলো আত্মার বা প্রতিটা জীবের শাশ্বত আলয়।
কিন্তু হতভাগ্য জীবের এমনই দুর্দৈব যে, এমন অবস্থায়ও জীব সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার কোনো প্রয়াস না করে ক্ষনিকের জড়সুখের মোহে আবদ্ধ হয়ে যায়। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ জীবন চক্রের সমাধান চায় না। তারা চক্রে ঘুরপাক খেতে হবে জেনেও এই জীবনে সুখে থাকাই পরম পাওয়া মনে করে। জড় জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করায় কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে জানতে হবে নিজেকে ।
জড় জগতে যেমন কারাগার রয়েছে, সরকারের আইন অমান্য করলে কারাগারে দন্ড ভোগ করতে হয়। দন্ড শেষে মুক্তি বা আবার দন্ড। জড় জগতটা হলো চিন্ময় জগতের কারাগার। ভগবদভক্তিতে উদ্ধার বা পরমধামে অর্থাৎ নিজ শাশ্বত আলয়ে গমন অথবা জন্ম- মৃত্যু চক্র।
স্ব স্ব ভাগ্যবশে প্রকৃতির তারতম্য যোগে কাল অকাল গতির দ্বারা ত্রিলোকের জীবগণ সকলেই ভোগ করিয়া থাকেন। ইহার ফলদাতা একমাত্র ভগবান অধিকারী, অন্য কাহারও কোন অধিকার নাই জানিবেন। অতএব কালবশেই সকল জগতের বিষমত্ব হইয়া থাকে, কাহারো কোন দোষ নাই। এই ভাগ [বণ্টন] হইতে মুক্ত করিতে একমাত্র সত্যই শক্তিমান। অতএব আমাদিগকে সত্যের আশ্রয়ে থাকিতে সর্ব্বদা চেষ্টা করিতে হইবে ।
শাস্ত্রীয় আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা অর্থাৎ নিত্য-অনিত্য বিচার সহকারে বৈদিক অনুশাসন আমাদেরকে আমাদের জন্ম- জন্মান্তর এর ভ্রম ও অজ্ঞতা দূর করতে এবং ভিতরের দেবত্ব আবিষ্কার করতে সক্ষম করে ঐশ্বরিক চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথেষ্ট।