অনুশাসন
বৈদিক শাস্ত্র এবং সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণ নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে 42 টি অনুশাসনকে প্রতিটি মানুষের ধর্মআচরণ রূপে নিরূপণ করেছেন। নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে এই 42 টি বৈদিক অনুশাসন সম্পূর্ণ জীবন ধরে পালন করে তবেই পরম মুক্তির পথে যাওয়া যায় ।
ধর্মআচরণহীন যে কোন প্রকারের সাধনা আসুরিক ভাব বৃদ্ধি করে ।তাই শাস্ত্রসম্মত নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে এই 42 বৈদিক ধর্মাচরণ পালন করেই মুক্তির পথকে জানা বা পাওয়া সম্ভব-ধর্ম আচরণ ব্যতীত কোন যুগে কোন কালে কোন ব্যাক্তি কোনোভাবেই মুক্তির পথকে পেতে পারেনি আর ভবিষ্যতেও কেউ পাবে না ।
তাই ঈশ্বর প্রাপ্তির ইচ্ছুক বা সাধন ইচ্ছুক বা মুক্তি লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা অতিযত্নে অতি সতর্কতার সহিত সর্বদা নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে বৈদিক ধর্ম আচরণ নিজের বাস্তব জীবনে পালন করা অত্যন্ত আবশ্যক ।
শাস্ত্রসম্মত নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে আচরণই একমাত্র পশুত্বকে মনুষ্যত্বে ,মনুষ্যত্বকে দেবত্বে এবং দেবত্বকে ব্রহ্মত্বে উপনীত করে
ধর্ম আচরণ বা ধর্ম শিক্ষা বা ধর্ম জ্ঞানহীন ব্যক্তি –সাধনা, পূজা, অনুষ্ঠান,তপস্যা করুক না কেন তাতে কখনো মনুষ্যত্বের বিকাশ হয় না
তাই মনুষ্যত্বের বিকাশ এর জন্য শাস্ত্রীয় ধার্মিক আচরণ অত্যন্ত আবশ্যক যা বেদান্ত জ্ঞান বা গুরুমুখী সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্ত হওয়া যায়
শাস্ত্রসম্মত নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে বৈদিক আচরণ নিজের জীবনে পালন না করে জপ-ব্রত-তপস্যা-যোগসাধনা সবই অসম্পূর্ণ / অসফল হয়ে যায় ।
নিত্য অনিত্য বিচার সহকারে 42 টি অনুশাসন- ধর্মআচরণ:----
1. সত্য ( কায়-মন-বাক্যে সর্বদা সত্য প্রতিষ্ঠিত থাকা )
2.অহিংসা ( পূর্ণরূপে হিংসা পরিত্যাগ করা)
3.অস্তেয় ( অন্যের শরীর সম্পদ সম্পর্ক সৌন্দর্য কোন দিকে তাকানোর অভ্যাস করা)
4.ব্রহ্মচর্য ( নিজের স্ত্রী বা নিজের স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো নারী বা পুরুষের দিকে প্রেম বা যৌন মনোভাব না রাখা)
5. অপরিগ্রহ ( শাস্ত্রীয় অধিকার ছাড়া কারো কাছেই কোনো দান গ্রহণ না করা )
6. শৌচ (দেহশুদ্ধি +ভাবশুদ্ধি + মন -চিন্তাশুদ্ধি )
7. সন্তোষ ( তুষ্ট থাকার অভ্যাস )
8. তপস্যা (আহারশুদ্ধি - সর্বপ্রকার দূষিত অন্ন সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ)
9. সাধ্যায় (রোজ শাস্ত্র অধ্যয়ণ -শাস্ত্রীয় আলোচনা ও নিত্যকর্ম, জপ ইত্যাদি )
10. ঈশ্বরপ্রাণিধান ( ঈশ্বর এ সম্পূর্ণ সমর্পন )
11. দয়া (দুর্বল, অসুস্থ ও নিরপরাধির যে কোনো প্রাণীর উপর )
12. তিতিক্ষা ( কষ্টকর অবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ)
13. শম (মনের সংযম)
14. দম (ইন্দ্রিয়ের সংযম)
15. কখনো সুযোগ সন্ধানী না হওয়া - সুবিধাবাদি না হওয়া
16. আসক্তি-কামনা ত্যাগ ও আত্মচিন্তন
17. উপযুক্ত পাত্রে দান ও কর্মের দক্ষিনাদান
18. আর্জব (সরলতা)
19. যে কোনো অন্যায় বা শাস্ত্রবিরুদ্ধ কর্মে যুক্ত না থাকা- অন্যায় বা শাস্ত্রবিরুদ্ধ প্রশয় না দেওয়া এবং প্রয়োজনে ভয়মুক্ত মনে অন্যায় বা শাস্ত্রবিরুদ্ধ কর্মের প্রতিবাদ করা- প্রয়োজনে দুষ্টের দমন করা ।
20. নিজের কামনা সিদ্ধির জন্যে কখনো কারো অনিষ্ট চিন্তা ও অনিষ্ট না করা
21. ঈক্ষা (বিবেক বিবেচনা দিয়ে চলা)- বিবেক-বিচার-বৈরাগ্য
22. মৌন (কথা না বলা নয় - শুধু বৃথা আলাপ ত্যাগ করা)
23.লোক কল্যাণ ভাবনা ও দেশভক্তি
24.কায়োমনোবাক্য গুরুসেবা এবং গুরুর আদেশ মাত্র সবসময় বিনা বিচারে, বিনা যুক্তিতে, বিনা তর্কে আদেশ পালন করা।
25. ঈশ্বরএ পরম ভক্তি , ব্রহ্মজ্ঞান ও পরম মুক্তি এবং অন্য জীবাত্মাকে পরম মুক্তি এর পথে পূর্ণ রূপে সাহাজ্য করা -এটাই জীবনের জীবনের মূল লক্ষ্য স্থির করা।
26. প্রতিমুহূর্তে ও প্রতিটি কাজে নিত্য-অনিত্য বিচার করে চলা
27. বিনয়, নম্রতা ও ভদ্রতা
28. শালিনতা, শিষ্টাচার, শ্রদ্ধা ও প্রীতিমনোভাবাপন্ন
29. নিজের অধিকারের সীমা-মর্যাদা জ্ঞান
30. নিষ্ঠা ও নিষ্কাম ভাবে প্রতিটি তপস্যা, ধৰ্ম-কর্ম করা
31. অসৎসঙ্গ ও ধর্ম গ্লানির এবং নাস্তিক লোকের সঙ্গ সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ
32. সিদ্ধ পুরুষের কাছে শাস্ত্রজ্ঞান ও উপদেশ লাভ
33.পিতামাতার সেবা, সামাজিক ও স্ত্রী-সন্তান ও সাংসারিক দায়িত্ব ও কর্ত্যব্য পূর্ণ নিষ্কাম ভাবে প্রতিপালন
34. ক্ষমা এবং প্রাণীদেরকে অন্ন জল খাদ্য প্রদান করা
35.দেব ও শাস্ত্রে ভক্তি এবং নিজেকে কর্তা নয়, বরং সেবক জ্ঞান করা
36. জীবনে প্রতিক্ষেত্রেই মনঅনুসারের সিদ্ধান্তে নয় - শাস্ত্রানুসারে চলা উচিত
37.যে কোনো লোককে শুধুমাত্র কার্মিক চরিত্র দিয়ে বিচার আর অন্য কিছু দিয়ে বিচার নয়
38. সাধু-যোগী ইত্যাদির বিচার শুধু শাস্ত্র লক্ষন অনুসারে করা, কারো বাইরের কিছু দিয়ে বিচার নয়
39. গুরু প্রদত্ত রোজ সাধন ভজন করা
40. পূর্ব ভুল কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করণ
41. জড়জগতের লোক দেখানো সৌখিনতা বা কামনা পূরণের সৌখিনতা ত্যাগ করা
42. শাস্ত্রীয়ও বিচার করে লোকাচার বা কুসংস্কার মানবিকহীন কর্ম বা ভাবনা ত্যাগ করা .