একাদশী পালনের নিয়মাবলী
ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।
এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।
একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম গুলি হল-
যিনি একাদশী পালন করবেন তিনি দশমীতে- একাহার, একাদশীতে- নিরাহার তথা উপবাস এবং দ্বাদশীতে একাহার করবেন। যদি সম্পূর্ণ সক্ষম না হন তাহলে কেবলমাত্র একাদশীতে উপবাস করবেন। আর যদি তাহাতেও সক্ষম না হন, তাহলে একাদশীতে পঞ্চ রবিশষ্য বর্জন করে- ফল মূলাদি এবং অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।
একাদশী পালনের ক্ষেত্রে যে পাঁচ প্রকার রবিশস্য বর্জনের বিধান রয়েছে তা হলো- চাল, গম, যব, ডাল ও সরিষা বা সরিষা থেকে তৈরি যেকোনো প্রকার খাদ্যদব্য। এইদিন একাদশী পালন করলে চা, কফি, পান, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদির নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
যারা একাদশী ব্রত পালন করবেন তাদের আগের দিন রাত বারোটার পূর্বে অন্ন ভোজন করে নেওয়া প্রয়োজন।
একাদশীর দিন ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমে সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। একাদশীর সংকল্প মন্ত্র টি হল-
"একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি, ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত"
একাদশী ব্রত পালন কেবলমাত্র উপবাস করা নয় তার সাথে সাথে নিরন্তর শ্রীভগবান কে স্মরণ করা এবং ব্রত কথা পাঠ, শ্রবণ ও কির্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করা। এই দিন পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যা কথা বলা, ক্রোধ,দুরাচার,স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
একাদশীতে বিভিন্ন খুঁটিনাটি কাজ যেমন সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে।যাতে রক্তক্ষরণ না হয়। কারণ একাদশীর দিন রক্তক্ষরণ খুবই অশুভ বলে গণ্য।একাদশীর দিন শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ অর্থাৎ তেল, সুগন্ধি, সাবান-শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয় এবং সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম করা অর্থাৎ চুল ও নখ কাটা ইত্যাদি বর্জনীয়।
একাদশীর দিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সন্ধ্যেবেলায় শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি ঘিয়ের প্রদীপ নিবেদন করা।
একাদশী তিথির পরদিন অর্থাৎ দ্বাদশীর দিন একাদশীর পারণ ক্রিয়া সমাপ্ত করতে হয়। এই পারণ ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে সম্পন্ন করতে হয়।
এই নির্দিষ্ট পারনের সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশষ্য ভগবানকে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করে পারন করা একান্ত আবশ্যক। নচেৎ একাদশীর কোনো ফল লাভ হয় না। পারনের সময় যে মন্ত্রটি পাঠ করতে হয় সেটি হল-
"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব"
অথবা
"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব"