ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র কে.?
''ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র কে.?
জানুন পবিত্র বেদ এর আলোকে, আমি জ্ঞানের ব্রাহ্মণ, যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষত্রিয়, ব্যাবসা বানিজ্যের বৈশ্য, কর্মক্ষেত্রের শুদ্র। আমার বর্ণের সাথে কর্মের সম্পর্ক, জন্মের সম্পর্ক নয়। জন্মগত বর্ণ বলতে আমার কিছু নেই।
'ব্রাহ্মণ কে.?...
'যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত,অহিংস,সৎ,নিষ্ঠাবান,সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী,বেদ জ্ঞানী সেই ব্রাক্ষ্মণ। ঋগ্বেদ, ৭/১০৩/৮
'ব্রাক্ষ্মনরা নিজো স্বার্থত্যগ করে কাজ করবেন, বেদ পড়বেন, এবং তা
অপরকে শেখাবেন'। মনুসংহিতা, ১/৮৮
১) মন নিগ্রহ করা,
২) ইন্দ্রিয়কে বশে রাখা,
৩) ধর্মপালনের জন্য কষ্ট স্বীকার করা,
৪) বাহ্যান্তর শুচি রাখা,
৫) অপরের অপরাধ ক্ষমা করা,
৬) কায়-মনো-বাক্যে সরল থাকা,
৭) বেদ-শাস্ত্রাদিতে জ্ঞান সম্পাদন করা,
৮) যজ্ঞবিধি অনুভব করা,
৯) পরমাত্মা, বেদ ইত্যাদিতে বিশ্বাস রাখা,এই সবই হর ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম বা লক্ষণ।। গীতা, ১৮/৪২
'ক্ষত্রিয় কে.?...
'যে দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎ কর্ম দ্বারা শুদ্ধধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ণ ,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়। (ঋগ্বেদ, ১০/৬৬/৮)
'ক্ষত্রিয়রা বেদ পড়বে, লোকরক্ষা ও রাজ্য পরিচালনায় নিযুক্ত থাকবে।" (মনুসংহিতা, ১/৮৯)
১) শৌর্য,
২) তেজ বা বীর্য,
৩) ধৈর্য,
৪) প্রজা প্রতিপালনের দক্ষতা,
৫) যুদ্ধে পশ্চাদপসরণ না করা,
৬) মুক্ত হস্তে দান করা,
৭) শাসন করার ক্ষমতা,এগুলি হল ক্ষত্রিয়ের স্বাভাবিক কর্ম। গীতা ১৮/৪৩
'বৈশ্য কে.?...
'যে দক্ষ ব্যবসায়ী,দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী সেই বৈশ্য। অথর্ববেদ, ৩/১৫/১
'বৈশ্যরা বেদ পড়বে,ব্যবসা ও কৃষিকর্মে নিজেদের নিযুক্ত থাকবে।মনুসংহিতা, ১/৯০
১) চাষ করা,
২) গো-রক্ষা করা,
৩) ব্যবসা-বাণিজ্য ও সত্য ব্যবহার করা,এগুলি হলো বৈশ্যদের স্বাভাবিক কর্ম। গীতা ১৮/৪৪
'শূদ্র কে.?
যে অদম্য,পরিশ্রমী,অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা, লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
ঋগ্বেদ, ১০/৯৪/১১
'শুদ্ররা বেদ পড়বে, এবং সেবা মুলক কর্মকান্ডে নিযুক্ত থাকবে।মনুসংহিতা, ১/৯১
বৈশ্যদের স্বভাবজাত কর্ম এবং সর্ব চার বর্ণের সেবা করাই হলো শূদ্রদের স্বাভাবিক কর্ম। গীতা, ১৮/৪৪, চতুর্বর্ণের কর্মগুণে।
'চাতুর্ব্বর্ণ্যন ময়া সৃষ্টং গুণকর্ম্মবিভাগশঃ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধকর্তারমব্যয়ম্।। গীতা, ৪/১৩
অনুবাদঃ-প্রকৃতির তিনটি গুণ ও কর্ম অনুসারে আমি মানব-সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র চারটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করেছি। আমি এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।
'বিশ্লেষণঃ-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র, এই বর্ণচতুষ্টয় গুণ এবং কর্মের বিভাগ অনুসারে আমি সৃষ্টি করেছি। জীবেদের গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র,তাদের চার বর্ণের সৃষ্টি ভাগ করি। কিন্তু এই সৃষ্টি-রচনা প্রভৃতির কর্মগুলি কর্তৃত্ব ও ফলেচ্ছা পরিত্যাগ করেই করি।।
'ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশং শূদ্রাণাঞ্চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণেঃ।। গীতা, ১৮/৪১
অনুবাদঃ-হে পরন্তপ.! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য তথা শূদ্রদের কর্ম স্বভাবজাত গুণ, অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে।
'বিশ্লেষণঃ-
হে পরন্তপ! এই জগতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চারটি বর্ণের বিভাগ মানুষের স্বভাবজাত গুণাদি অনুসারে কথা হয়েছে। সুতরাং নিজ নিজ বর্ণনুসারে নিয়ত কর্ম (স্বধর্ম) অনুষ্ঠিত করাই হল এই গুণাদি থেকে মুক্ত হবার উপায়।
'গুণের অধিকার'...
এখানে গুণ বলতে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ৩টি গুণের কথা বলা হয়েছে। সত্ত্বপ্রধাণ গুণে ব্রাহ্মণ, সত্ত্বরজঃ প্রধান গুণে ক্ষত্রিয়, রজতমঃ প্রধান গুণে বৈশ্য এবং তমঃ প্রধান গুণে শুদ্র। অর্থাৎ ব্রাহ্মণের ছেলে হলেই ব্রাহ্মণ হবে,এমন নয়। সত্ত্বগুণপ্রধান স্বভাব হলে, শুদ্রের ছেলে হলেও ব্রাহ্মণ হবে এবং ব্রাহ্মণের ছেলের তমঃ গুণ প্রধাণ স্বভাব হলে, সে শুদ্র হবে, এটাই ভগবদ্বাক্য হতে সহজ উপলব্ধি। এখানেই একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে জাতি আছে কিন্তু জন্মের কারণে নয়, জন্মের পরে কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে। সনাতন সমাজে সবচেয়ে বর্ণ/জাত প্রথা বিদ্যমান রয়েছে।
'ব্রাহ্মণ এর পরিভাষা বর্ণনা'...
ব্রাহ্মণ পবিত্র বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্র অনুযায়ী ব্যক্তির গুণ ও তার কর্ম অনুযায়ী এই ব্রাহ্মণ তৈরি হয়। ব্রাহ্মণ হলো সেই সকল ব্যক্তি যারা জ্ঞানী পন্ডিত ও বেদ উপনিষদ অনুযায়ী সকলকে জ্ঞান দান করেন।
'চারবর্ণ জাত'...
বর্ণের অর্থ চয়ন বা নির্ধারন এবং সামান্যতঃ শব্দ বরণেও এই অর্থ ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি নিজ রূচি, যোগ্যতা এবং কর্ম অনুসারে ইহাকে স্বয়ং বরণ করে, এই জন্য ইহার নাম বর্ণ। বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থা মধ্যে চার বর্ণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র। কোনো ব্রাহ্মণের জন্ম থেকেই হয় না কি গুণ কর্ম স্বভাব দ্বারা কোনো ব্যক্তির যোগ্যতার নির্ধারণ শিক্ষা প্রাপ্তির পশ্চাতেই হয়। জন্মের আধারের উপর হয় না। কোনো ব্যক্তির গুণ, কর্ম স্বভাবের আধারের উপরই তার বর্ণের নির্ধারণ হয়।
'বর্ণাশ্রম কি'...
ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শুদ্র..এই চার শ্রেণীর বর্ণ,এই সমাজ ব্যবস্থাকে তারা নাম দিলো 'বর্ণাশ্রম ধর্ম'। বর্ণপ্রথা বর্তমান সময়ে হিন্দু সমাজের অন্যতম বড় শত্রু। কিন্তু প্রকৃত সত্য কি.? অনেকেই হয়তো জানেন।তবু যারা না জানেন, তাদের জন্য বেদের আলোকে আলোচিত হলো।
ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র,এই চার বর্ণকে নিয়ে পবিত্র বেদে বলেছে.. ১. ১.জ্ঞানের উচ্চ পথে ব্রাক্ষ্মন,
২.বীরত্বের গৌরবে ক্ষত্রিয়,
৩.তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পেশাভিত্তিক বৈশ্য,
৪.নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সেবার পরিশ্রমে শূদ্র,
সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত। ঋগ্বেদ, ১/১১৩/৬
এক একজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা এক এক রকম আর সেই কর্মগুণ অনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য কেউ শূদ্র। ঋগ্বেদ, ৯/১১২/১
'পবিত্র বেদে ঈশ্বর ঘোষণা করেছেন সাম্যের বাণী মানবের মধ্যে, কেহ বড় নয়,কেহ ছোট নয়, এবং কেহ মধ্যম নয়,তাহারা সকলেই উন্নতি লাভ করছে। উৎসাহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ক্রমোন্নতির প্রযত্ন করছে। জন্ম হতেই তাঁরা কুলীন। তাঁরা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাঁরা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক। ঋগ্বেদ, ৫/৫৯/৬