গোমাংসং ভক্ষয়েতনিত্যং পিবেদমরবারুনীম।
কুলীনং তমহং মন্যে ইতরে কুলঘতকা:।।
গোশব্দেনদিতা জিহ্বা তৎপ্রবেশা হি তালুনি।
গোমাংস ভক্ষনং তত্তু মহাপাতকনাশানম।।
জিহ্বাপ্রবেশসভূতবহ্নিনোৎপাদিত: খলু।
চন্দ্রাৎ স্রবতি য: সার: স স্যাদমরবারুণী।।
মদ্যদানে মহাপুন্যং সর্বতন্ত্রে শ্রুতং ময়া।
গুরুমুখী ব্রহ্মবিদ্যার প্রথমবিদ্যা হলো খেচরীমুদ্রা । “খেচরী”র অর্থ হল→‘খ’ তে বিচরণ করা I →‘খ’ এর অর্থ→”আকাশ” I ”আকাশ” শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে→ ‘কাশৃ’ ধাতু থেকে I ‘কাশৃ’ ধাতু→দীপ্তো I কাজেই ”আকাশ” অর্থাৎ দীপ্তিমস্ত “ব্রহ্মতত্ত্ব”এ তা সম্ভব হয় I
ভগবান দত্তাত্রেয় বলেছেন →“কপাল বিবরের অভ্যন্তরে জিহ্বাকে ব্যবৃত্ত ও বন্ধ করে ভ্রুমধ্যে দৃষ্টি স্থাপন করবে”→এরই নাম “খেচরী” I
“প্রভুর জন্য যদি প্রাণে আর্তি থাকে শরণাগতির ভাব নিয়ে বুক ভরা কান্না নিয়ে ধ্যান করতে থাকলে”→“নিবিড় ধ্যান”এ “প্রভুর দর্শন” মিলে I প্রগাড় ধ্যানাবস্থায় “জিহ্বা” স্বতঃই→ বিপরীতগামী হয়ে যায় I “ধ্যান” ভাঙলে “সাধক” অনুভব করতে পারেন→“দিব্যানুভুতি”র কালে বিনা চেষ্টায় বিনা কসরতেই “জিহ্বা” →“তালুকুহর”এ প্রবিষ্ট ছিল I
“শুদ্ধিশ্বর মহাদেব”কে→“শুণ্ডিকেশ্বর” নামেও অভিহিত করা হয় I “শুণ্ডিক” শব্দের অর্থ→ “আলজিভ/আলজিহ্বা” I “শুণ্ডিক” শব্দের দ্বারা→একটি গুহ্য যোগক্রিয়া “খেচরী মুদ্রা”র ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে I “খেচরী মুদ্রা”র আন্তর ক্রিয়ায় “জিহ্বা”কে→“আলজিহ্বা”র উর্ধ্বস্থিত গর্তে প্রবিষ্ট করিয়ে “সহস্রার” মন্ডলে গিযে→“জিহ্বা”কে দিয়ে ঠোক্কর মারতে হয় I
“যোগী ব্যক্তি” →“রসনা”কে বিপরীতগামিন করে লম্বিকা অর্থাৎ “আলজিহ্বা”র উর্ধ্বস্থিত গর্তে “তালুকুহর”এ প্রবেশ করিয়ে “জিহ্বা”কে স্থিরতর রেখে ধ্যান করতে থাকবেন I
“খেচরী মুদ্রা সাধনা”র দ্বারা→“জিহ্বা”কে বিপরীতগামী করতঃ তালুমধ্যে প্রবেশ করিয়ে→ “কপালকুহর”এ উর্ধ্বগত করে রাখতে হয় I এই গুহ্য “যোগক্রিয়া”র অনুষ্ঠান যখন ভালভাবে আয়ত্ব হয়ে যায়→তখন অন্যান্য সাধারণ ক্রিয়া এবং পুজানুষ্ঠান ত্যাগ করে “জিহ্বা”কে“কপালকুহর”এ স্থির রাখতে হয় I তাতেই “সাধক”এর “শিব দর্শন” ঘটে অর্থাৎ “সাধক” নিজেই শিব্স্বরুপ হয়ে যান ।
বিশেষতঃ “সমাধি” লাভ করতে হলে→“খেচরী মুদ্রা” [ জিহ্বা কন্ঠকূপের মধ্যে আলজিহ্বার উপর] আয়ত্ত করা বিশেষভাবে প্রয়োজন I
এই “মুদ্রায় সিদ্ধ” হতে হলে→“ছেদন-দোহন- মর্দন”ক্রিয়া অপরিহার্য I “যোগশাস্ত্র”এ ইহা বর্ণিত আছে যাহা হল→“জিহ্বার নিম্নভাগের সঙ্গে মুখগহ্বরের মধ্যে নীচের দিকে যে শিরা সংলগ্ন আছে, তা ছেদন করে জিহ্বার অগ্রভাগ”এ চালনা করতে হবে I“জিহ্বা”কে প্রতিদিন ননী মাখন দিয়ে “দোহন” করে→লৌহযন্ত্র [লৌহ নির্মিত এক প্রকার সুক্ষ্মযন্ত্র অভাবে জীবছোলা দ্বারা] দ্বারা “কর্ষণ” করতে হয় I কিছুদিন এইভাবে করতে করতেই→ “জিহ্বা” ক্রমশঃ “দীর্ঘতর” হয়ে যাবে I যখন দেখা যাবে যে “জিহ্বা”→“ভ্রুমধ্যস্থ স্থান স্পর্শ” করতে পারছে→তখন ঐ “জিহ্বা”কে “তালুর মধ্যপথ”এ “উর্ধ্বদিকে কপালকুহরে” প্রবেশ করিয়ে→“ভ্রুমধ্যে দৃষ্টি” স্থির করতে হয় I এর নাম→“খেচরী মুদ্রা” I “খেচরী মুদ্রা”য় ভালভাবে “অভ্যস্ত” হলে তবেই→“সাধক”এর “নাদযোগ সমাধি অভ্যাসের অধিকার” জন্মেI
“যোগী” ব্যক্তি “জিহ্বা”কে→বিপরীতগামী করে লম্বিকার অর্থাৎ “আলজিহ্বার উর্ধ্বর্স্থিত গর্ত তালুকুহর”এ ঢুকিয়ে দিয়ে ঐ স্থানে “জিহ্বা”কে স্থির কর “ধ্যান” করতে থাকবেন→তাতে সকল রকম “কর্মবন্ধনের ভয়” দূর হয় I ঐ “ধ্যান পরিপক্ক” হলে “প্রগাড় ধ্যান”এর অবস্থায় “সহস্র চক্রক্ষরিত সুধা বা মধুক্ষরণ” হতে থাকে→সেই “মধু পান” করলে “শরীর রোগহীন হয়-অতীন্দ্রিয় জগতের অনেক আলৌকিক দৃশ্যের দর্শন” ঘটে I
“খেচরী মুদ্রা[র কৌশল” শিখতে হয় I এই “দুটি স্তর অতিক্রম” করলে→দত্তাত্রেও কথিত “তৃতীয় ক্রিয়া”র→“”ধ্যান কৌশল শিক্ষা” নিতে হয় I
সেই “ধ্যান কৌশল” হচ্ছে, “সাধক” যদি “শিবনেত্র হয়ে অর্থাৎ দুটো চোখের তারাকে নাসামূলের অতি নিকটে এনে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থলে ললাটের অভ্যন্তরে প্রণব বিজড়িত দিব্য জ্যোতির্ময় অন্তরাত্মার ভাবনা করেন” তাহলে→“বিদ্যুত প্রভা সদৃশ ব্রহ্মজ্যোতিঃ” প্রত্যক্ষ হয় I “ব্রহ্মজ্যোতিঃপ্রত্যক্ষ” হলে→“সাধনা”র আর কি বাকি থাকে I
সুপ্রসিদ্ধ “যোগীরাজ শ্যামা চরণ লাহিড়ী” যেভাবে→“খেচরী মুদ্রার কৌশল” শিখিয়ে গেছেন→সেই “ক্রিয়া”কে তিনি সহজতর নিরাপদ পদ্ধতি বলে ভাবতেন I তিনি→“ছেদন- “দোহন”আদির বিষম বিপক্ষে ছিলেন I তিনি যে “পদ্ধতি”র উপদেশ দিতেন→তার নাম “তালব্য মুদ্রা” I
“ঋগ্বেদ”এর একটি “বিশেষ মন্ত্র” আছে I “পস্মাসনে বা সিদ্ধাসনে বসে জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টিয়ে তালুতে ঠেকিয়ে সেই সিদ্ধ বেদমন্ত্র ছন্দানুসারে উচ্চারণ করতে থাকলে→সেই মন্ত্রের এমনি বর্ণবিন্যাস যে তা উচ্চারণ করতে আরম্ভ করলেই→প্রতি বর্ণের উদ্ ঘাত ও স্পন্দন অভ্যাস কালের মধ্যেই জিহ্বাকে তালুকুহরে প্রবিষ্ট হতে বাধ্য করে” I
“যোগশাস্ত্র”এ এসব বর্ণনা থাকলেও “শুণ্ডিকেশ্বর মহাদেব”এর ক্ষেত্রের “বৈশিষ্ট্য” এই যে→ এখানে “খেচরী মুদ্রা” আয়ত্ব করার জন্য→বেচারা “জিহ্বা”কে টেনে হিছড়ে কোন “ছেদন-দোহন-কর্ষণ-মার্জন”আদির বিড়ম্বনা বা অত্যাচার সহ্য করতে হয় না I “শুণ্ডিকেশ্বর মহাদেব”এর কৃপায় →“জিহ্বা”কে কেবল সাধ্যমত “বিপরীতগামী” করে “জপ” করতে করতেই “খেচরী মুদ্রা”য় →“সিদ্ধিলাভ” ঘটে I
“প্রভুর জন্য যদি প্রাণে আর্তি থাকে শরণাগতির ভাব নিয়ে বুক ভরা কান্না নিয়ে ধ্যান করতে থাকলে”→“নিবিড় ধ্যান”এ “প্রভুর দর্শন” মিলে I প্রগাড় ধ্যানাবস্থায় “জিহ্বা” স্বতঃই→ বিপরীতগামী হয়ে যায় I “ধ্যান” ভাঙলে “সাধক” অনুভব করতে পারেন→“দিব্যানুভুতি”র কালে বিনা চেষ্টায় বিনা কসরতেই “জিহ্বা” →“তালুকুহর”এ প্রবিষ্ট ছিল I
এখানে “ব্রহ্মজ্যোতিঃ” বিষয়ক কিছু তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যাহা হল→ “শিবনেত্র” হয়ে চোখের তারা দুটোকে নাসামূলের অত নিকটে এনে ললাটের অভ্যন্তরে প্রণব বিজড়িত অন্তরাত্মার জ্যোতির্ময় রূপ কল্পনা করতে করতে যে “জ্যোতি”র প্রকাশ ঘটে থাকে→সে “জ্যোতির আভাস হতে পারে-সর্বাংশে তাকে ব্রহ্মজ্যোতিঃ বলা যাবে না” I
“কান্না” অর্থ→কেদে আনা I “নিষ্কাম”ভাবে “ঈশ্বর”এর জন্য কাদলে “ঈশ্বর”কে পাওয়া যায় I
“সাধকের আকুতি এবং আশুতোষের কৃপা”→এই হল “ব্রহ্মদর্শন”এর মূল কথা I
যে “জ্যোতি বিনা কল্পনায় উৎপন্ন হয়-যে জ্যোতি স্বয়ং প্রকাশিত হয়- যে জ্যোতি হঠাৎ দেখা যায়”→সেই “জ্যোতি”→“পরমাত্মা”য় অবস্থিত বলে জানবে I সেই “দিব্যজ্যোতি”ই→যথার্থতঃ “ব্রহ্মজ্যোতিঃ”I
যার সাহায্যে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরের অমৃতগ্রন্থি (পাইনিয়াল গ্রন্থি) যা বহু সাধকের কাছেই রহস্যময় এবং অমৃতকর তাহা জাগ্রত করা হয় । গুরুমুখী ব্রহ্ম-বিদ্যায় ব্যখ্যা আছে যে কিভাবে বেদান্তের খেচরীমুদ্রা যৌগিক প্রক্রিয়াকে প্রস্তুত করা হয়েছে এই অমৃতগ্রন্থিকে (পাইনিয়াল গ্রন্থিকে ) সক্রিয় করার জন্য - যা অতন্ত্য ভাবে গুরুমুখী । এই অমৃতগ্রন্থি (পাইনিয়াল গ্রন্থি) জাগ্রত হলে একজন মানুষের মধ্যে এমন এক পরমদিব্যজ্ঞান -পরমদিব্যআনন্দ বা পরমদিব্যসুখ সৃষ্টি করতে পারে যা আপনার আজীবনের সমস্থ অর্জিত জড়োজগতের জ্ঞান এবং জড়োজগতের সুখের বাইরে।গোভক্ষণের আধ্যাত্মিক নাম খেচরিমুদ্রা। এই যোগশাস্ত্রে বলা রয়েছে গো অর্থাৎ বেদে জিহ্বাকে বোঝাই, আর এই জিহ্বাকে গুরুমুখী বিদ্যা সাহায্যে তালুকুহরে প্রবেশ করানোই গো মাংস ভক্ষণ- তন্ত্র শাস্ত্রে ইহাকেই মাংস সাধনা বলেছে। এই প্রকারে যিনি গো মাংস ভক্ষণ করেন অর্থাৎ জিহ্বাকে নিশ্চল অবস্থার তালুকুহরে রেখে কূটস্থে ধ্যানরত থাকেন সেই সাধকই অমৃত পান করেন। কারণ সহস্রার থেকে ক্ষরিত যে অমৃতসুধা তা তিনি পান করতে সমর্থ হন। জিহ্বা উপরে উঠিয়ে তালুরন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে জিহ্বাকে নিশ্চল ভাবে রাখলে গলমধ্যে যে মিষ্টরস অনুভূত হয় তাকেই অমৃত বলে।খেচরী অমৃতগ্রন্থি অথবা পিনাইল গ্ল্যান্ড (Pineal gland ) এবং মূলহরমোন গ্রন্থি অথবা পিটুইটারি গ্ল্যান্ড (Pituitary gland ) এর বিভিন্নতা জানা সকলের উচিত। আজ্ঞাচক্রে দুই ভুরুর মাঝখানে দেড় ইঞ্চি ভেতরে পিনিয়াল গ্যান্ড অবস্থিত– এটি অর্ধ সেঃ মিঃ লম্বায় & 20-25 গ্রাম ওজন। আমরা যখন খেচরীমুদ্রা করি, তখন পিনিয়াল গ্রান্ড উত্তেজিত হয়ে একটি
ক্ষরণের সৃষ্টি হয়, যাকে বলে মেলাটনিন। এই মেলাটনিন ক্ষরণের ফলে শরীরের কোষগুলি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রতিদিন আমরা 21600 বার নিঃশ্বাস- প্রশ্বাস নিই, তার ফলে শরীরের কোষগুলি যে ধ্বংস হয় তার হাত থেকে রক্ষা পেতে পিনিয়াল গ্যান্ডকে নিয়মিত উত্তেজিত রাখার অভ্যাস থাকা ভাল।এই পিনিয়াল গ্যান্ডের আয়ু বড় কম- চল্লিশ বছর বয়সে শুকিয়ে যায়। তখন থেকে ধীরে ধীরে মানুষের জীবনে অকাল বার্ধক্য নেমে আসে। তাই অল্প বয়স থেকেই খেচরীমুদ্রা দ্বারা ঐ পিনিয়াল গ্যান্ডকে সক্রিয় রাখলে এর আয়ু বেড়ে যায় এবং বার্ধক্য তখন বহুদূরে থাকে। পিনিয়াল গ্যান্ড আলো এবং অন্ধকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সূর্য উঠলে মেলাটনিনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। খেচরীমুদ্রা করার ফলে পিনিয়াল গ্যান্ড যে ক্ষরণ হয়, তাতে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায় & শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে এবং রক্তের উর্দ্ধচাপ হয় না।
ধ্যানের উচ্চতর অবস্থায় একজন যোগী যখন ইন্দ্রিয়ের থেকে তার জীবনী শক্তিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং তার মনকে আত্মার সাথে একত্রিত করে, তখন সে তার শারীরিক দেহে পরমানন্দের রোমাঞ্চ হিসাবে একটি অনুরূপ প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। উন্নত যোগীরা জানেন কীভাবে খেচরী মুদ্রা নামক একটি নির্দিষ্ট কৌশলের মাধ্যমে যা শুধুমাত্র একজনের গুরুর নির্দেশ অনুসারে অনুশীলন করা উচিত - জিহ্বায় পুংলিঙ্গ স্রোতকে স্ত্রীলিঙ্গ নেতিবাচক স্রোতের সাথে একত্রিত করা। সমাধি ধ্যানে, এই স্রোতের সংমিশ্রণ ঐশ্বরিক আনন্দের রোমাঞ্চ তৈরি করে এবং মুখের মধ্যে অমৃতের ক্ষরণও করে।
ওই অবস্থায় সাধক ধীরে ধীরে অন্তরমুখে গভীর থেকে গভীরতর অবস্থায় প্রবেশ করে। তাই যোগসাধনায় খেচরীমুদ্রা অত্যন্ত আবশ্যক ক্রিয়া ।"এই খেচরীমুদ্রার অনুধাবন গভীর চেতনার গভীর আধ্যাত্মিক আগমনকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।" বেদে বা সনাতন শাস্ত্রে খেচরীমুদ্রাকে "সমস্ত মুদ্রার মধ্যে সেরা শ্রেষ্ঠ মুদ্রা" হিসাবে বর্ণনা করা আছে।