ব্রহ্ম হচ্ছে প্রাণের চূড়ান্ত স্থিরাবস্থা
প্রাণের দুটো অবস্থা | যেটার ওপরে আমরা বেঁচে আছি, চলাফেরা করছি, খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঝগড়া করছি, যা কিছু করছি, তা প্রাণের চঞ্চল অবস্থা থেকে | কিন্তু এটা ক্ষণস্থায়ী | তাহলে প্রাণের আর একটা উল্টো অবস্থা আছে | সেটা হচ্ছে স্থির | অর্থাত্ স্থির প্রাণ, সেটাই ব্রহ্ম, ভগবান্, যাই বলো | শেষ কথা | সে হচ্ছে প্রাণের স্থিরাবস্থা, আর চঞ্চল প্রাণ জীবাবস্থা |
এই প্রাণটা যতক্ষণ চঞ্চল হয়ে আছে আমাদের শরীরের মধ্যে ততক্ষণই আমরা বেঁচে আছি | কিন্তু যেই প্রাণটা থেমে গেল অমনি মরে গেলাম | তাহলে জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য কি ? - না, জন্ম হচ্ছে প্রাণের চঞ্চল দিকে চলে যাওয়া, আর মৃত্যু হচ্ছে প্রাণের স্থিরত্বের দিকে চলে যাওয়া |
প্রাণের এই যে স্থিরাবস্থা, এটা আদি ও অনাদি | এর কোনো ক্ষয় নাই | এর কোনো উত্পত্তিও নাই, চিরশাশ্বত | তার থেকে যখন চঞ্চল হল প্রাণটা, তখন আমরা জন্মগ্রহণ করলাম এবং পৃথিবীতে আসলাম | প্রত্যেকটি প্রাণীর এই একই অবস্থা | সে মানুষ বলো, বাঘ বলো, হাতি বলো, মশা, মাছি, যাই বলো না কেন, সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম | তাই সকলের মধ্যে, এই চঞ্চল অবস্থায় থাকার দরুণ, আমাদের পেটে ক্ষুধা আছে, হিংসা আছে, লোভ আছে, ক্রোধ আছে | মানে, যত ইন্দ্রিয় সব এই চঞ্চল অবস্থার মধ্যে আছে | যদি আমরা স্থিরাবস্থায় যেতে পারি, তাহলে কিছুই নাই | এখানেই ক্রিয়াযোগের মাহাত্ম |
তাহলে যেটা বলছিলাম, আমরা যখন মরে গেলাম তখন প্রাণের সেই স্থিরাবস্থায় চলে গেলাম | এটা "কে এই শ্যামাচরণ" গ্রন্থটার মধ্যে পরিস্কারভাবে দেওয়া আছে | যে, যখন একটা প্রাণী মারা গেল, সে মানুষ হোক্, আর যে কেউই হোক্, তখন সে প্রাণের চঞ্চলতার দশ শতাংশে চলে গেল | একশো শতাংশে এখন চঞ্চল, সে তখন দশে চলে গেল | যদি একেবারের শূণ্য হয়ে যেত, শূণ্য শতাংশে, তাহলে কিন্তু তার আর পুনর্জন্ম হতো না |
তাহলে বিজ্ঞানটা থেকে এটা পাচ্ছি, আমরা যদি মুক্তি চাই তাহলে আমাকে শূণ্য শতাংশে যেতেই হবে | তাহলে ক্রিয়াযোগের এখানেই মাহাত্ম | ক্রিয়াযোগ আমাকে সেই শূণ্য শতাংশে নিয়ে যেতে পারে | এছাড়া পৃথিবীতে আর কারো কোনো ক্ষমতাই নাই | এই কারণে "যোগিরাজ" বলেছেন, "ক্রিয়া সত্য আর সব মিথ্যা" |
তাহলে "ব্রহ্ম হচ্ছে প্রাণের চূড়ান্ত স্থিরাবস্থা" | আর জীব হচ্ছে প্রাণের চঞ্চলতার চূড়ান্ত অবস্থা | তাহলে এই দুটো চূড়ান্তের মাঝখানে কি আছে ? - ধরো, চূড়ান্তে নাই, আমি স্থিরত্বেও যেতে পারিনি | তাহলে কোথায় গেলাম ? - তা, হবে না | কারণ তোমার একশো শতাংশ যে স্থির, তুমি যদি নব্বই শতাংশকে স্থির করতে পারো তাহলে দশ শতাংশ চঞ্চল আছে |
তাহলে, ক্রিয়া করে যদি কোনো মানুষ, এই জীবনে দশ শতাংশে চলে যেতে পারে, তাহলেও 'পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে' | কিন্তু কেউ যদি একদম একশো শতাংশ স্থিরাবস্থায় ফিরে গিয়ে দেহ ত্যাগ করতে পারে, তার তো কোটি কোটি বছরের মধ্যে আর জন্ম নাই, সে জন্মরহিত হয়ে গেল | আর তার জন্ম নাই | কিন্তু দশ শতাংশে গেলেও এই মিনিমাম্, হয়তো হাজারের মধ্যে এক শতাংশ চান্স্ - জন্মের - থাকে | সাধারণতঃ চান্স্ থাকে না | তাহলে তো গীতা মিথ্যা হয়ে যাবে |
এটা একটা বিচারে পাওয়া যাচ্ছে |
তো, সেইজন্যে, "ব্রহ্ম" তাহলে কি ? - ব্রহ্ম আমাদের সকলের ভিতরেই আছে, প্রাণের স্থিরাবস্থা | আর জীবাবস্থা কি ? - প্রাণের চঞ্চল অবস্থা | পার্থক্য এইটুকু | আর কিছু নাই |