হিন্দুধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক উৎসব অম্বুবাচী (Ambubachi)। এই অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতী বলেও পরিচিত। মনে করা হয়, আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে ঋতুমতী হন ধরিত্রী। পূর্ণ বয়স্কা ঋতুমতী নারীরাই কেবল সন্তান ধারণে সক্ষম হন।তাই অম্বুবাচীর পর ধরিত্রীও শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন। ভারতের একাধিক স্থানে অম্বুবাচী উৎসব, 'রজঃউৎসব' নামেও পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। সতীপিঠের অন্যতম এই অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরে সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠ এই মন্দির। প্রতি বছর অম্বুবাচীর তিন দিন কামাক্ষ্যা মন্দিরে বিশেষ উৎসব এবং মহামেলার আয়োজন হয়। সেই সময় মন্দির বন্ধ থাকে। তবে চতুর্থ দিনে সর্বসাধারণের ভক্তকুলের জন্য মন্দিরের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। দেশ- বিদেশ থেকে ভক্তেরা ভিড় জমান মন্দিরে। অম্বুবাচী শুরুর পর 3 / 4 দিন চলে এই উৎসব। অম্বুবাচী অম্বুবাচীর নিয়মকানুন— অম্বুবাচীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু আচার অনুষ্ঠান। এই তিনদিন সন্ন্যাসী এবং বিধবারা বিশেষ ভাবে পালন করেন। শুধু তাই নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন কৃষিকাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনদিন পর অম্বুবাচী ফের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ও চাষাবাদ শুরু হয়। একই ভাবে মনে করা হয় পৃথিবীও সময়কালে অশুচি থাকেন। সেজন্যেই এই তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী,যোগীপুরুষ এবং বিধবা মহিলারা 'অশুচি' পৃথিবীর উপর আগুনে–.আগুনের রান্না করে কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটাতে হয়। এখনও বিভিন্ন পরিবারের বয়স্ক বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করেন৷ তিনদিন পরে জামাকাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে ধুয়ে, নিজেরা সাবান- শ্যাম্পুতে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন। শুধু কামাখ্যা নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের মাতৃ শক্তির প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এ সময় কোনও শুভ অনুষ্ঠান করা হয় না। অম্বুবাচীতে হাল ধরা, গৃহপ্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ নিষিদ্ধ। অম্বুবাচীতে কী করবেন: 1. এ সময় দেবী মূর্তি বা পট লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। 2. অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে, স্নান করিয়ে পুজো দেওয়া উচিত। 3. এ সময় গুরুপুজো করা উচিত বলে মনে করা হয়। গুরু প্রদত্ত জপ মন্ত্র মালাতে করবেন না কিন্তু মনে মনে অবশ্যই করতে পারবেন 4. অম্বুবাচীতে তুলসীর গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখুন। অম্বুবাচীতে যে কাজ ভুলেও করবেন না 1. বৃক্ষ রোপণ, কৃষি কাজে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার শুভ কাজ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। 2. মন্ত্রোচ্চারণ ছাড়াই পুজো করুন। ধূপ-প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করতে হয়। 3. তুলসীর গাছে জল দেবেন না 4. কোন প্রকারের শাক খাবেন না 5. আগুনে পোড়ানো বা ছেকা রুটি খাওয়া উচিত নয় 6. কোন কারনেই মাটি খনন করবেন না ***************************************************** অম্বুবাচী র ভিতরে বিপদতারিনী পূজা পড়েছে পূজা কী করা যাবে ?....অবশ্যই করা যাবে।
বিপত্তারিণী ব্রতের সময় বা কাল – আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের থেকে আরম্ভ করে , দশমীর ভেতর যে শনিবার ও মঙ্গলবার পড়ে সেই বারে এই ব্রত করার নিয়ম । সধবা মাত্রেই এই ব্রত করতে পারে ।
বিপত্তারিণী ব্রতের দ্রব বিধান – বড় নেবেদ ১ টি , কয়েকটি কুচো নেবেদ , একটা ভুজয়ী , ১৩ রকম ফুল , ১৩ রকম ফল কেটে দু -ভাগ করা ,একটা চুপড়িতে ১৩ গাছা লাল সুত ,পান , সুপারি ,চুন, খয়ের , ঘি ,ময়দা ইতাদি প্রয়োজন।
যে ব্রত করে ব্রতের আগের দিন তাকে হবিষ করে থাকতে হয় । ব্রতের জন্যে একটা ঘট পেতে তার ওপর আমের ডাল ও সরা দিতে হয় । এই সরাতে নানা রকমের ফল মূল দিয়ে মা দুর্গার পূজা করতে হয় । ১৩ টি ফুল ,ফল ও পিঠেও এর সঙ্গ দিতে হয়।
যে ব্রত করে তার জন্যে ১৩ টি ফল দু -ভাগ করে দিতে হবে এবং তার সঙ্গে পান সুপারি থাকবে । এই জিনিস গুলির একটা ভাগ ব্রাহ্মণকে দিতে হয় আর অন্য একটা ভাগ থাকবে ব্রতীর জন্যে।
১ টা পেতে আর ভোজ্য ব্রাহ্মণ কে দান করা নিয়ম । পুজোর শেষে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে ১৩ টি গাট দেওয়া লাল সুত স্ত্রীলোকের বা হাতে আর পুরুষের ডান হাতে বেধে দিতে হয় । ব্রতীকে সেই দিন লুচি খেতে হয় ।
বিপত্তারিণী ব্রত কথা – পুরকালে নারদ ঋষি বেড়াতে বেড়াতে একদিন কেলাস -এ গিয়া উপস্থিত হলেন । সেখানে শিব ও দুর্গা কে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন, – ”প্রভু , আপনিতো মঙ্গল ময় আর সব রকম মঙ্গল এর কারণ , এখন বলুন তো , কি ব্রত করলে মানুষ সন রকম বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারে ?”
নারদের কথা শুনে মহাদেব বললেন, “যে স্ত্রীলোক বিপত্তারিণীর ব্রত করে, সে সব রকম বিপদ থেকেই উদ্ধার পায়।” নারদ জিজ্ঞাসা করলেন, “পূর্বে এই ব্রত কে করেছিলেন , তার নিয়ম কি এবং ফল কি অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন।”
নারদের এই কথা শুনে মহাদেব বললেন, “পুরকালে বিদর্ভ রাজ্যে এক সত্য নিষ্ঠা রাজা ছিলেন। তার স্ত্রীও ছিলেন নানা গুনে সম্পন্ন। ঘটনা চক্রে একদিন চমারের বউয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
লুকিয়ে লুকিয়ে তারা অনেক জিনিসপত্র দেওয়া নেওয়া করতে লাগলো। একদিন দুজনের নানা কথাবার্তা বলার মাঝখানে রাণী বললেন কখনো গোমাংস আমি দেখিনি তুমি একটু গোমাংস আমাকে লুকিয়ে এনে দিতে পারো ?
এরপরে রাণীর কথামত চামর বউ একদিন একটু গোমাংস বেশ ঢাকাঢুকি দিয়ে এনে রানীকে দিয়ে গেল। রণীও সেটা নিজের ঘরে ঘরে লুকিয়ে রাখলেন। ক্রমে কথাটা রাজার কানে গিয়ে উঠল এবং রাজা খুবই রেগে গেলেন।
পরক্ষণেই তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে রানীকে বললেন “তোমার ঘরে তুমি কি লুকিয়ে রেখেছ শিগগির আমাকে দেখাও। তা নাহলে তোমার গর্দান যাবে।”
রাজার রাগ দেখে রাণীর খুব ভয় হল। কাঁপতে কাঁপতে রাণী বললেন আমার ঘরে নানা রকম ফলমূল আছে প্রভু।” রাজাকে এইকথা বলার পর রানি ঘরে ঢুকে মনে মনে মা দুর্গাকে খুব ডাকতে লাগলেন। রাণী মনে মনে বললেন, “মা বিপত্তারিণী !
আমি আজ খুব বিপদে পড়েছি , আমাকে আশ্রয় দাও মা, এ বিপদ থেকে উদ্ধার মা, আমি সারা জীবন তোমার ব্রত পালন করব।” রাণীর প্রার্থনায় দেবী সন্তুষ্ট হয়ে অভয় দিয়ে বললেন, তোমার স্তবে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, তোমার ঘরে যা ছিল সেটা এখন ফলমূল হয়ে গেছে।
তুমি এখন সেগুলো রাজাকে গিয়ে দেখাও, রাজা খুবই সন্তুষ্ট হবেন।” মা দুর্গার কথা মত রাণী ঘরে গিয়ে দেখলেন যে চুপড়িতে গোমাংশের বদলে রয়েছে একরাশ ফলমূল। রাণী তখন সব এনে রাজাকে গিয়ে দেখালেন আর রাজও খুবই সন্তুষ্ট হলেন। ক্রমেই রাণী ও ঐ ব্রত করতে লাগলেন ও অনেক সুখ লাভ করে দেহ ত্যাগের পর সর্গে চলে গেলেন।
বিপত্তারিণীর ব্রতের ফল – এই ব্রত করলে সংসারে কোন বিপদ আপদ থাকেন। মা বিপত্তারিণী তাকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
**************************************************************
অম্বুবাচী র ভিতরে বিপদতারিনী পূজা পড়েছে পূজা কী করা যাবে ?....অবশ্যই করা যাবে।
আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই ষট্ পঞ্চমী ব্রত পালন করতে হয়।
ঘট, আম ডাল, ফুল, দূর্বা, আতপ চাল, নৈবেদ্য ও মিষ্টান্ন। ব্রতের আগের দিন ব্রতিকে নিরামিষ খেয়ে খুব সংযমের সঙ্গে থাকতে হবে।
ব্রতের দিন নিয়ম মত ঘট স্থাপনা করে ফলমূল ও নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করতে হয় তারপর ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম করা কর্তব্য।
একসময় দেবর্ষি নারদ ঘুরতে ঘুরতে গোলকে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে নারায়ন ও লক্ষ্মীকে প্রণাম করে নারদ বললেন ,”হে প্রভু! আমি আজ একটি প্রার্থনা নিয়ে আপনাদের দুজনের কাছে এসেছি।
আমার সে প্রার্থনা আপনাদের পূর্ণ করতে হবে।”লক্ষ্মী ও নারায়ণ দুজনেই বললেন,”কি তোমার প্রার্থনা দেবর্ষি?”দেবর্ষি নারদ বললেন,” প্রভু! আজ অবন্তী রাজ একেবারে লক্ষ্মী ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছেন।
চারিদিকে হাহাকারে ভরে উঠেছে তার রাজ্য। ভক্তি মতি রানী আমার কাছে এই নিবেদন করেছে যে কি ধর্মানুষ্ঠান করলে, রাজা আবার লক্ষী লাভ করতে পারবেন ,রাজ্য আবার সুখ শান্তি ফিরে আসবে।
নারায়ন বললেন,”অবন্তিপুরের এই দৈন দুর্দশা আর হাহাকারের কারণ লক্ষ্মী বলতে পারে, তাকে জিজ্ঞাসা কর।”সেই সঙ্গে লক্ষ্মীকে বলবেন ,”প্রিয়ে! তোমাকে দেবর্ষির প্রার্থনা পূরণ করতে হবে।”
সেই কথা শুনে লক্ষী নারদকে বললেন,”অনেকদিন আগে অবন্তি রাজ আমাকে না মেনে সরস্বতীর কাছে দয়া প্রার্থনা করেছিলেন তার ফলে আমি অবন্তীর আজকে ত্যাগ করেছি।
তাই তার রাজ্যেও অশান্তি আর হাহাকারে পূর্ণ হয়েছে। তবে রাণী আমাকে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে। আমি রানীর পার্থনা নিশ্চয়ই পূরণ করব। যাও তুমি দেবর্ষি।
তাকে শর্ট পঞ্চমী ব্রত পালন করতে বলো, তাহলে আমি অবন্তি রাজগৃহে আবার অচলা হয়েই থাকবো।”এরপর দেবর্ষি ,লক্ষীনারায়ণ কে প্রণাম করে অবন্তি পুড়ে চলে গেলেন।
রানী দেবর্ষির কাছে সব শুনে খুব ভক্তি করে ষট্ পঞ্চমী ব্রত পালন করলেন। তার ফলে লক্ষ্মীর কৃপা দৃষ্টি পরল অবন্তী রাজ্যে।
সারা রাজ্যের ভরে উঠলো ধন ধান্যে আর ক্রমেই অবন্তি রাজ্যে ফিরে এল পূর্বের মতো ধন-সম্পদ। অবন্তী রাজ্যের রাজার নাম এবং যশ আবার ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
এই ব্রত পালন করলে মা লক্ষ্মীর দয়ার সংসারের কোন অভাব থাকে না।
ফুল, তুলসী ,দূর্বা, দীপ, ধূপ ,বিষ্ণুর নৈবেদ্য আতপ চাল, মিষ্টান্ন, ফল, ভুজ্যি একটি ,দক্ষিণা। মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা খুবই কঠিন কারণ শরীর খুব ভালো না থাকলেই মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা সম্ভব হয় না।
দিনের বেলা পুরোহিত কে দিয়ে বিষ্ণু পূজা করিয়ে সারাদিন উপোস করে থাকতে হবে। তারপরে রাত্তিরে চাঁদ উঠলে সেই চাঁদ দর্শন করে, তাঁকে অর্ঘ্য দেওয়া কর্তব্য।
শেষের দুধ ও ফল খেয়ে কম্বল বা খড়ের বিছানায় একলা শয়ন করে রাত কাটান নিয়ম। পরে সকালে উঠে স্নান করে পুরোহিত কে ভুজ্যি আর দক্ষিণা দিয়ে ব্রত শেষ করায় বিধি।
অনেক দিন আগেকার কথা, যমুনা নদীর উপরে একটি ছোট রাজ্যের রাজা ছিলেন সুদেব বর্মন। কৃষ্ণাবতি নামে তার একটি মাত্র মেয়ে ছিল, কিন্তু তার শরীর মোটেই ভালো ছিল না।
সে প্রায়শই রোগে ভুগত। শেষে তার বাঁচার আশা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে এলো। রাজা খুব চিন্তিত হলেন। শেষে যখন দেখলেন যে, তাকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব, তখন তিনি সারা রাজ্যে ঘোষণা করে দিলেন যে, তার মেয়েকে যে সারিয়ে দিতে পারবে ,তাকে অনেক ধনরত্ন দিয়ে তার সঙ্গে তার মেয়ে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দেবেন।
যমুনা নদীর এপারে এক সওদাগর থাকতো, তার অনেক সম্পত্তি ছিলএবং একটি ছেলে ছিল। ছেলেটির নাম শশাঙ্ক কুমার। শশাঙ্ক কুমার এক সময়ে কৃষ্ণা বতি কে দেখে মনে মনে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল ও তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। এমন কি সে রাজার কাছে গিয়ে কৃষ্ণা বতি কে বিয়ে করার কথা ও জানিয়েছিলেন।
রাজা কিন্তু এতে খুব অসসন্তুুষ্ট হয়ে শশাঙ্ক কুমারের বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তার মেয়েকে ছেলের বউ করার আশা তিনি যেন না করেন ,কারণ এত বড় আশা তার পক্ষে পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এই কথা শোনার পর শশাঙ্ক কুমারের মন খুবই খারাপ হয়ে গেল।
সে তার খাওয়া দাওয়া ও প্রায় ত্যাগ করে দিয়েছিল। সে শুধু জোছনা রাত্রিরে চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে কৃষ্ণাবতি কে পাওয়ার কথাই ভাবতো। এই ভাবেই তার দিনের পোর দিন যায়।
এরই মধ্যে এক দিন পূর্ণিমা রাত্রিরে সে ছাদের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিল, এমন সময় সে স্বপ্ন দেখল যে স্বয়ং চাঁদ এসে তাকে বলেছেন,’তুই আর বৃথা চিন্তা ভাবনা করিস না,
তোর আশা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুই ছদ্ম বেশ ধারণ করে কাল রাত সভায় উপস্থিত হয়ে রাজাকে বলবি যে, তুই কৃষ্ণাবতীর রোগ সারিয়ে দিতে পারবি।
পরে সন্ধ্যার সময় আমার পুজো করে সেই পুজোর প্রসাদ কৃষ্ণাবতি কে খাইয়ে দিবি। এই পুজোর প্রসাদ খাওয়ার পরেই তার রোগ সেরে যাবে।
পরের দিন শশাঙ্ক কুমার উপোস করে ছদ্ম বেশ ধারণ করে রাজ সভায় গিয়ে রাজাকে জানালো যে, রাজ কন্যাকে সে ভালো করে দেবে।
রাজা এতে সম্মত হতে ঠিক হল যে শশাঙ্ক কুমারের কথা মতো আসছে আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পুজো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।
আসার মাসের এই শুক্ল পক্ষের তৃতীয়ার দিন আসতে সসংখ কুমার উপোস করে থেকে বিষ্ণুর পুজো করলে এবং রাত্তিরে চাঁদকে অর্ঘ্য দিয়ে সেই প্রসাদ কৃষ্ণাবতিকে খাইয়ে দিল।
নিজে ও সে ফল মূল ও দুধ খেয়ে রাত কাটালো। পরের দিন রাজা দেখলেন যে, কৃষ্ণাবতীর রোগ যেন অর্ধেক সেরে গেছে।
রাজা দেখে খুব খুশি হলেন, ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিতের প্রচুর ধন রত্ন দান করলেন। পরে রাজা জানতে পারলেন যে, শশাঙ্ক কুমারই কৃষ্ণা বতীর রোগ মুক্ত করেছে।
তখন খুব সমারো হোক আর উৎসব আনন্দের মধ্যে শশাঙ্ক কুমারের সঙ্গে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দিলেন, সেই সঙ্গে শশাঙ্ক কুমারকে রাজ্যের যুবরাজ উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা ও করে দিলেন।
তারপর থেকে শশাঙ্ক কুমার আর তার স্ত্রী কৃষ্ণা বতি দুজনে মিলে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত করতে আরম্ভ করল এবং দেহ ত্যাগের পর তাদের অক্ষয় স্বর্গ লাভ হল।
আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করলে জীবের সমস্ত মনো বাসনা পূর্ণ হয় এবং দেহত্যাগের পর গুলোকে বিষ্ণুর কাছে তার স্থান হয়।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সূর্যের পুজো আর অর্ঘ্য দিয়ে বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত আরম্ভ করা হয় । এই ব্রত সধবাদের করণীয়।
জবা কিংবা অন্য কোন লাল ফুল, দূর্বা এবং লাল চন্দন আতপ, চাল, ফল ও মিষ্টান্ন । বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত পালন করতে হলে প্রতি দিন সকালে স্নান করে খোলা বা এলো চুলে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ও কপালে সিঁদুরের টিপ ও আলতা পরে তিন বার হাত জোড় করে সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে প্রণাম মন্ত্র পড়ে প্রণাম করতে হবে।
এক দেশে একজন খুব গরিব ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ছিল। ব্রাহ্মণ সারাদিন ভিক্ষে করে যা পেত তাই নিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরত। তারা তাই রান্না করে রাত্তিরে খেতে এবং সকালের জন্য কিছু পান্তা ভাত রেখে দিত।
পান্তা খেয়ে সকালে ব্রাহ্মণ আবার ভিক্ষায় বেরত। ব্রাহ্মণী সব সময় চোখের জল ফেলতো আর ভগবানকে ডেকে ডেকে বলত, “ভগবান! আমাদের দুঃখ কি আর বুঝবে না?”
পবন কুমার নামে সেই দেশের রাজা একটি ছেলে ছিল তার নাম পবন কুমার। সে কুষ্ঠ রোগে ভুগছিল। এই কারণে রাজার মনে কোন শান্তি ছিল না। নানান দেশের নানান রকম চিকিৎসকের বিয়ের রাজা ছেলে চিকিৎসা করালেন,
কিন্তু কেউ কবর কুমারকে সারিয়ে দিতে পারল না। পবন কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মন্ত্রীর মেয়ে কনক মালার। স্বামীর এই রোগ কেউ সারাতে পারল না দেখে কনক মালা সব সময় খুব কান্নাকাটি করত।
রাজপুরীর ভেতরে একটা বাগানে সূর্য মন্দির ছিল, কনক মালা রোজই সেখানে গিয়ে পুজো দিত। একদিন সকালে উপোস করে স্নান করার পর সে সূর্য মন্দিরে গিয়ে ধর্না দিয়ে খুব কাতর ভাবে সূর্যদেবকে ডাকতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পরে কনক মালা সেই মন্দিরের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে একটা বিচিত্র স্বপ্ন দেখল যে, লাল কাপড় পরা একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ তার সামনে এসে বলছে, “আমি স্বয়ং সূর্য দেব!
তুই আমাকে খুব কাতর করে ডাকছিস বলে আমি তোর সামনে এলাম। তোর মনে কি আছে আমি জানি। আমি যা বলি মন দিয়ে সেই মত কাজ করিস, তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে। কয়েক জন্ম আগে তোর স্বামী এক ব্রাহ্মণের চাকর ছিল, কিন্তু সে ছিল খুব রাগী।
এক দিন সামান্য কথা কাটা কাটির পর সে ব্রাহ্মণকে একটা লাথি মেরেছিল। সেই ব্রাহ্মণ আমাকে খুব ভক্তি করত। সে আমার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলল,”সূর্যদেব, একে সাত জন্মের কুষ্ঠ রোগ দাও।
তারপর থেকে সজন্ম পর পর তোর স্বামী কুষ্ঠ রোগে ভুগছে। তুই আমার কথা মতো কাজ কর তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে।”
কনক মালা বলল,”বলুন প্রভু, আমাকে কি করতে হবে? “সূর্যদেব তখন বললে,”রাজ পুরীর রাজ দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কোষ দূরে একটা ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে খুব গরীব এক ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী বাস করে।
সেই ব্রাহ্মণকে দিয়ে আমার পুজো ও অর্ঘ্য দান করিয়ে তোকে তাদের চরণামৃত খেতে হবে এবং তাদের অনেক ধন দৌলত দিতে হবে।”এই সময় কনক মালার ঘুম ভেঙে গেল, তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
কনক মালা তাড়াতাড়ি রাজপুরীতে ফিরে এসে সব কথা রাজাও রানীকে জানালো। এরপরই কাল বিলম্ব না করে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে রাজ বাড়িতে আনানো হলো।
পবন কুমার ও কনক মালা, সেই ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর পা ধোয়া জল পান করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইলো। ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি, পরে সূর্যদেবের দয়ায় তারা সবই জানতে পারল।
সূর্য দেবের দয়াতে পবন কুমারের কুষ্ট ব্যাধি সম্পূর্ণ সেরে গেল। রাজা ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে অনেক ধন দৌলত দিলেন। পবন কুমারের রোগ সারার জন্য রাজার আদেশে রাজ্যের রাজধানীতে লেগে গেল আনন্দ উৎসব।
তারপর একদিন আষাঢ় মাসে শুক্লা সপ্তমী তিথিতে খুব জাক জমকের সঙ্গে সূর্য মন্দিরে পবন কুমার ও কনক মালা সেই ব্রাহ্মণকে নিয়ে বিবস্বৎ সপ্তমির ব্রত করলো।
এই ব্রত যে পালন করে সে রোগ, শোক আর বিপদের হাত থেকে নিস্তার পায়, মা লক্ষ্মী তার বাড়িতে অচলা হয়ে অবস্থান করেন।