12 জ্যোতির্লিঙ্গ এর সঙ্গে 12 রাশির সম্পর্ক শাস্ত্র মতে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে 64 টি স্থানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে প্রকট হন মহাদেব। এর মধ্যে 12টি স্থান সম্পর্কে জানা যায়। এই 12 স্থানই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নামে পরিচিত। এই বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে 12টি রাশির গভীর সংযোগ রয়েছে। 1. মেষ রাশির সঙ্গে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক বর্তমান। সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন স্বয়ং চন্দ্র। উল্লেখ্য চন্দ্রের অপর নাম সোম। শিব চন্দ্রকে নিজের মস্তকে ধারণ করেন। তাই এটি সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ নামে প্রসিদ্ধ। মহাশিবরাত্রিতে এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করতে পারেন। 2. অন্য দিকে মল্লিকার্জুনকে বৃষ রাশির অধিপতি মনে করা হয়। মহাশিবরাত্রিতে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও দর্শন করলে সুফল পাওয়া যাবে। এর ফলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি সম্ভব। 3. মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ শিবের তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত। মহাশিবরাত্রি তিথিতে মিথুন রাশির জাতকরা উজ্জয়িনীতে অবস্থিত মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করলে সুফল পাবেন। 4. জ্যোতিষ অনুযায়ী নর্মদার পাশে অবস্থিত ওংকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে কর্কট রাশির সম্পর্ক বর্তমান। কর্কট রাশিতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি ওংকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও পুজো করতে পারেন। 5. সিংহ রাশির জাতকরা বিহারের দেবঘরে অবস্থিত বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের স্মরণ ও দর্শন করবেন। এখানে সিদ্ধি, ধুতরো দিয়ে শিব পুজো করলে বিশেষ ফলাফল লাভ করা যায়। 6. কন্যা রাশির জাতকরা মহারাষ্ট্রের ভীমা নদীতে অবস্থিত ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান করবেন। দুধে ঘি মিশিয়ে ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের অভিষেক করলে অক্ষয় আশীর্বাদ পাওয়া যায়। 7. শিবস্বরূপ। দুধে মিষ্টি বাতাসা মিলিয়ে রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের স্নান করালে শিব প্রসন্ন হন। এই জ্যোতির্লিঙ্গে আকন্দ ফুল নিবেদন করা শুভ। তুলা রাশির জাতকদের সম্পর্ক রয়েছে। 8. অন্য দিকে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে বৃশ্চিক রাশির জাতকদের সম্পর্ক রয়েছে। দুধ, মুড়ি গিয়ে এই জ্যোতির্লিঙ্গের স্নান করানো শুভ। এর পর গাঁদা ফুল ও বেলপাতা দিয়ে শিবলিঙ্গের শৃঙ্গার করে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান করুন। 9. জ্যোতিষ অনুযায়ী ধনু রাশির জাতকদের বারাণসী অবস্থিত বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান, দর্শন ও পুজো করুন। গঙ্গাজলে জাফরান মিশিয়ে শিবলিঙ্গের স্নান করালে সুফল পাবেন। 10. মকর রাশির জাতকদের ত্রয়ম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা উচিত। গঙ্গাজলে গুড় মিশিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা শুভ। ত্রয়ম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গে নীল ফুল, ধুতরো অর্পণ করা উচিত। 11. কুম্ভ জাতকদের কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা উচিত। পঞ্চামৃত, পদ্মফুল ও ধুতরো এই জ্যোতির্লিঙ্গে নিবেদন করতে পারেন। এর ফলে মহাদেবের আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। 12. অন্য দিকে মীন রাশির জাতকরা ঘুষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও পুজো করতে পারেন। মহারাষ্ট্র্রের ঔরঙ্গাবাদে অবস্থিত এই জ্যোতির্লিঙ্গে ঘি ও মধু নিবেদন করলে সুফল পাওয়া যায়।
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ বলতে শিবের বারোটি বিশেষ মন্দির ও সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলিকে বোঝায়। মন্দিরগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ শিবের পবিত্রতম মন্দির।
শিব পুরাণ অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ —
1. সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
সৌরাষ্ট্রদেশে বিশদেহতিরম্যে জ্যোতির্ময়ং চন্দ্রকলাবতংসম্ ।
ভক্তিপ্রদানায় কৃপাবতীর্ণং তং সোমনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি দয়া পূর্বক সৌরাষ্ট্রপ্রদেশে অবতীর্ণ হয়েছেন, চন্দ্র যাঁর মস্তক ভূষণ, সেই জ্যোতির্লিঙ্গ স্বরূপ ভগবান সোমনাথের আমি শরণাগত হলাম।
সোমনাথ শব্দটির অর্থ “চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা”। পুরাণ মতে চন্দ্রদেবতা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। সোমনাথ মন্দিরটি ‘চিরন্তন পীঠ’ নামে পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের সৌরাষ্ট এর নিকট প্রভাস ক্ষেত্রে অবস্থিত এই মন্দির। আমেদাবাদ থেকে অল্প দূরে ভেরাবল শহর থেকে ৪/৫ কিমি দূরে এই মন্দির অবস্থিত। সারা বিশ্ব ও ভারত জুড়ে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও ভক্ত আসেন এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন ও পূজা নিবেদন করতে। অতীতে এই শিব মন্দির বারবার বিদেশী শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রায় পাঁচবার বা তার বেশিবার এই মন্দির পুনর্নির্মিত করা হয়।
2. মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ —
শ্রীশৈলশৃঙ্গে বিবুধাতিসঙ্গে তুলাদ্রিতুঙ্গেহপি মুদা বসন্তম্ ।
তমর্জুনং মল্লিকপূর্বমেকং নমামি সংসারসমুদ্রসেতুম্ ॥
অর্থাৎ- যিনি উচ্চ আদর্শভূত পর্বত থেকেও উচ্চ শ্রীশৈল পর্বতের শিখরে, যে স্থানে দেবতাদের সমাগম হয়, অত্যন্ত আনন্দ সহকারে নিবাস করেন এবং সংসার সাগর পার করবার জন্য যিনি সেতুস্বরূপ, সেই প্রভু মল্লিকার্জুনকে আমি নমস্কার জানাই।
দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈল পর্বতে এই পীঠ অবস্থিত। হরগৌরীর পুত্র কার্ত্তিক, মতান্তরে চন্দ্রগুপ্তের কন্যা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। এই প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরটি পূর্বমুখী। কেন্দ্রীয় মণ্ডপে অনেকগুলি স্তম্ভ এবং নন্দীকেশ্বরের একটি বিরাট মূর্তি আছে। দক্ষিণ ভারতের সকল হিন্দুদের কাছে এই মন্দির অনেক পবিত্র। সারা বছর ধরে এখানে অনেক অনেক ভক্ত আসেন নিজের মনস্কামনা পূর্ণ করতে ও বাবা শিবের লিঙ্গে জল অর্পণ করতে। শিবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব।
3. মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
অবন্তিকায়াং বিহিতাবতারং মুক্তিপ্রদানায় চ সজ্জনানাম্ ।
অকালমৃত্যুোঃ পরিরক্ষণার্থং বন্দে মহাকালমহাসুরেশম্ ॥
অর্থাৎ- সাধু-সন্তদের মোক্ষ প্রদান করবার জন্য যিনি অবন্তীপুরীতে অবতরণ করেছেন, মহাকাল নামে প্রসিদ্ধ সেই মহাদেবকে আমি অকালমৃত্যু থেকে বাঁচবার জন্য নমস্কার জানাই।
ভারতের মধ্যপ্রদেশে এই ধাম অবস্থিত। অবন্তী নগরীর এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ও রাজা চন্দ্রসেন এখানে শিব উপাসনা করেছিলেন। এখানে সারা বছর অসংখ্য পুণ্যার্থী আসেন এই মন্দিরে পূজা দিতে। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি ‘দক্ষিণামূর্তি’। এই শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে ”তান্ত্রিক শিবনেত্র“ প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বর মন্দিরে দেখা যায়। ‘ওঙ্কারেশ্বর মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত। গর্ভগৃহের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকে যথাক্রমে গনেশ, পার্বতী ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপিত আছে। দক্ষিণ দিকে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি স্থাপিত আছে। মন্দিরের তৃতীয় তলে নাগচন্দ্রেশ্বর মূর্তি আছে। এটি একমাত্র নাগ পঞ্চমীর দিন দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরের পাঁচটি তল আছে। তার মধ্যে একটি ভূগর্ভে অবস্থিত। এছাড়া মন্দিরে একটি বিশাল প্রাঙ্গন রয়েছে। হ্রদের দিকে অবস্থিত এই প্রাঙ্গনটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মন্দিরের শিখর বা চূড়াটি শাস্ত্রে উল্লিখিত পবিত্র বস্ত্র দ্বারা ঢাকা থাকে। ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়। এটি মন্দিরের একটি স্বতন্ত্র প্রথা। নামন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।
4. ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
কাবেরিকানর্মদয়োঃ পবিত্রে সমাগমে সজ্জনতারণায় ।
সদৈব মান্ধাতৃপুরে বসন্ত- মোঙ্কারমীশং শিবমেকমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি সৎ ব্যক্তিদের সংসার সাগর পার করানোর উদ্দেশ্যে কাবেরী ও নর্মদার পবিত্র সংগমের কাছে মান্ধাতাপুরে সর্বদা বাস করেন, সেই অদ্বিতীয় কল্যাণময় ভগবান ওঙ্কারেশ্বরের আমি স্তব করি।
ভারতের মধ্যপ্রদেশে নর্মদা তটে এই শিব মন্দির অবস্থিত। রাজা মান্ধাতা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ পাঁচতলা মন্দিরের গর্ভগৃহে ছোট্ট শিবলিঙ্গ৷ সামান্য উচ্চতা৷ জাতিধর্ম নির্বিশেষে স্পর্শ করে পূজা দেওয়া যায়৷ সারা বছর ধরেই অনেক পুণ্যার্থী আসেন পূজা দিতে।
5. কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
মহাদ্রিপার্শ্বে চ তটে রমন্তং সম্পূজ্যমানং সততং মুনীন্দ্রৈঃ ।
সুরাসুরৈর্যক্ষমহোরগাদ্যৈঃ কেদারমীশং শিবমেকমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি মহাগিরি হিমালয়ে কেদার শৃঙ্গের ওপর সর্বদা বসবাস করেন এবং মুনি, ঋষি, দেবতা তথা অসুর, যক্ষ, মহাসর্পাদি দ্বারা পূজিত হন, আমি সেই একমাত্র কল্যাণকর ভগবান কেদারনাথের স্তব পাঠ করি।
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে এই মন্দির অবস্থিত। এটি মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত। হরিদ্বার থেকে এই পীঠ যেতে হয়। নরনারায়ণ নামক ঋষি এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। চারধামের অন্যতম কেদারনাথ। এখানকার তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখি মঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল কেদারখণ্ড ; তাই এখানে শিবকে কেদারনাথ (অর্থাৎ, কেদারখণ্ডের অধিপতি) নামে পূজা করা হয়।
6.. ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ —
যং ডাকিনীশাকিনিকাসমাজে নিষেব্যমাণং পিশিতাশনৈশ্চ ।
সদৈব ভীমাদিপদপ্রসিদ্ধং তং শঙ্করং- ভক্তহিতং নমামি ॥
অর্থাৎ- ডাকিনী, শাকিনী ও প্রেত দ্বারা যিনি নিত্য পূজিত হন, সেই ভক্তহিতকারী ভগবান ভীমাশঙ্করকে আমি প্রণাম করি।
মহারাষ্ট্রের পুনা জেলার গোরাগাঁও এর কাছে সহ্যাদ্রি পর্বতমালায় ভীমাশঙ্কর মন্দির অবস্থিত। এখানে ভগবান শিব ভীম নামক এক রাক্ষস কে বধ করবার জন্য প্রকটিত হয়েছিলেন। এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। গ্রহের বাঁধা কাটানো ও অকাল মৃত্যু রোধ করার অসংখ্য ভক্ত আসেন এখানে। জঙ্গলের মধ্যে ঘন গ্রানাইট পাথরের তৈরি এই মন্দির। এই মন্দিরের লিঙ্গ মাঝারি আকারের।
7. কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
সানন্দমানন্দবনে বসন্ত- মানন্দকন্দং হতপাপবৃন্দম্ ।
বারাণসীনাথমনাথনাথং শ্রীবিশ্বনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি স্বয়ং আনন্দকর এবং আনন্দ পূর্বক আনন্দবন কাশী ক্ষেত্রে বাস করেন, যিনি পাপ নাশ করেন, অনাথের নাথে সেই কাশীপতি শ্রীবিশ্বনাথের কাছে আমি শরণ নিলাম।
এখানে ভগবান শিব দেবী উমার সহিত কিছুকাল নিবাস করেছিলেন। এখানে তিনি বিশ্বনাথ। এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের কাশীতে অবস্থিত। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি বিভিন্ন আক্রমণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি ইন্ডোরের মহারানি অহল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দেন। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি সোনায় মোড়া। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।
8. ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
সহ্যাদ্রিশীর্ষে বিমলে বসন্তং গোদাবরীতীরপবিত্রদেশে ।
যদ্দর্শনাৎ পাতকমাশু নাশং প্রয়াধি তং ত্র্যম্বকমীশমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি গোদাবরী তটে পবিত্র সহ্যাদি পর্বতের নির্মল শিখরে বাস করেন, যাঁর দর্শন লাভে সত্বর সকল পাপ বিমোচন হয়, আমি সেই ত্র্যম্বকেশ্বরের স্তব পাঠ করি।
মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত এই শিব মন্দির। মহর্ষি গৌতম এখানে সস্ত্রীক শিব উপাসনা করেছিলেন। এই লিঙ্গমূর্তি তিন ভাগে বিভক্ত এবং অন্য শিবলিঙ্গের চেয়ে আলাদা৷ এই মন্দিরের পুননির্মাণ শ্রী নানা সাহেব পেশোয়া করেন।
9. বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
পূর্বোত্তরে প্রজ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম্ ।
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং তমহং নমামি ॥
অর্থাৎ- যিনি পূর্বোত্তম দিকের বৈদ্যনাথ ধামের ভেতরে সর্বদা গিরিজার সঙ্গে বাস করেন, দেবতা ও অসুরগণ যাঁর চরণ কমল আরাধনা করেন, সেই শ্রীবৈদ্যনাথকে আমি প্রণাম করি।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে বৈদ্যনাথ মন্দির অবস্থিত। এটি ভগবান শিবের রাবন কে প্রদত্ত আত্মলিঙ্গ থেকে সৃষ্ট। অসংখ্য পুণ্যার্থী সারা বছর ধরেই এখানে আসেন, শিবলিঙ্গে জল ঢালেন ও পূজা দেন। শ্রাবন মাসে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ।
10. নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
যাম্যে সদঙ্গে নগরেহতিরম্যে বিভূষিতাঙ্গং বিবিডধৈশ্চ ভোগৈঃ ।
সদ্ভক্তিমুক্তিপ্রদমীশমেকং শ্রীনাগনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি দক্ষিণের রমণীয় নগর সদঙ্গে নানাবিধ ভোগ সহ সুন্দর বসন ভূষণে সজ্জিত হয়ে বিরাজ করেন, যিনি সদ্ ভক্তি ও মুক্তি প্রদান করেন, আমি সেই প্রভু শ্রীনাগনাথের শরণ নিলাম।
ভারতের গুজরাটের দ্বারকার কাছে এই পীঠ অবস্থিত। বৈশ্য সুপ্রিয় এখানে শিব পূজা করেছিলেন। বিভিন্ন পৌরাণিক আখ্যানে এই মন্দির ঐতিহাসিক কাল থেকে ভক্তদের জন্য আকর্ষণের স্থল হয়ে আসছে। শিব উপাসকরা নাগেশ্বর মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন পরম পবিত্র বলে গণ্য করে।
11. রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ —
সুতান্রপর্ণীজলরাশিযোগে নিবধ্য সেতুং বিশিখৈরসংখ্যৈঃ ।
শ্রীরামচন্দ্রেণ সমর্পিতং তং রামেশ্বরাখ্যং নিয়তং নমামি ॥
অর্থাৎ- ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তাম্রপর্ণী ও সাগর সঙ্গমে বাণের সাহায্যে সমুদ্রে বাঁধ দিয়ে তার ওপর যাঁকে স্থাপন করেছিলেন, সেই রামেশ্বর দেবকে বিধি নিয়ম অনুসারে প্রণাম করি॥
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে এই পীঠ অবস্থিত। লঙ্কা আক্রমণের আগে ভগবান রাম এখানে শিব উপাসনা করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তভূমি পক প্রণালীতে একটি দ্বীপের আকারে গড়ে উঠেছে রামেশ্বরম। রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত। সারা বছর ধরেই অসংখ্য পুণ্যার্থী এখানে পূজা দিতে আসেন।
12 ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
ইলাপুরে রম্যবিশালকেহস্মিন্ সমুল্লসন্তং জগদ্বরেণ্যম্ ।
বন্দে মহোদারতরস্বভাবং ঘৃষ্ণেশ্বরাখ্যং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি ইলাপুরের সুরম্য মন্দিরে বিরাজ করে সমস্ত জগতের পূজ্য হয়ে রয়েছেন, যাঁর স্বভাব খুবই উদার সেই ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্ময় ভগবান শিবের আমি শরণ নিলাম।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরাঙ্গাবাদ থেকে 30 কিলোমিটার দূরে এবং দৌলতাবাদ বা দেবগিরি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ইলোরা গুহার কাছে এই মন্দির অবস্থিত। ঘুষ্ণা নামক এক শিবভক্তের আহ্বানে ভগবান শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে প্রকটিত হয়েছিলেন। মন্দিরটি লাল পাথর দিয়ে তৈরি। এতে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়। মন্দিরটির গায়ে অনেক হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদিত আছে।.
ॐ নমঃ শিবায়—হর হর মহাদেব