চরিত্র
চরিত্র
(1) শাস্ত্র অনুসারে - যে জন্মের সময় আমরা অর্থ নিয়ে আসিনি —মৃত্যুর পরও আমরা অর্থ নিয়ে যাব না ৷ জীবিত কালে শরীর ধারণের জন্য, নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য অর্থনৈতিক ঘৃর্ণাবর্তের প্রয়োজন সমাজে এবং জীবনে অতি আবশ্যক এবং ব্যক্তি বিশেষে ও সময় অনুসারে এই অর্থ কম বা বেশি হতে পারে, তাই সময় অনুসারে কম বা বেশি হওয়ার জন্য নিয়তির হাত মূলত বেশি থাকে, মানুষের প্রচেষ্টার হাত কম থাকে ৷ মৃত্যুর পর কেউই এই অর্থ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না, এবং সময় অনুসারে কম - বেশি হয় —-তাই মূলত জীবত্মার কোন প্রকার ক্ষয় -ক্ষতি হয় না ।
তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন " Money Loss is Nothing Loss ."
(2) মনুষ্য শরীর ভগবান মুক্তির হেতু প্রদান করেছেন ৷ মুক্তির প্রচেষ্ট ব্যক্তিদের যদি শরীর সাধন পথে সাহায্যকারী না হয়ে শরীর রোগগ্রস্থ হয় তাহলে সাধনাতে বাধা প্রাপ্ত হয়, এবং মুক্তির মার্গ ব্যহত হয় ৷ তাই মুক্তির উদ্দেশ্যে ও শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজন হয় ৷ শরীর অসুস্থ হলে সাধন পথে কিছুটা বিঘ্ন হয়।
তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন " Health Loss Is Something Loss ."
(3) অনুশাসন,ধর্ম, ভাব-ভক্তি, কর্মবীজ , স্বত্তগুন , চিন্তাধারা বৈরাগ্য, ধ্যান , গুরুকৃপা, ব্রহ্মবিদ্যা- এই সবই চরিত্ররূপী ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত | তাই চরিত্র সঠিক অবস্থায় দৃঢ় না হলে উপরোক্ত কোনো কিছুই লাভ করা সদূর পরাহত ৷ তাই মুক্তি লাভ ইচ্ছুক ব্যক্তিরা চরিত্ররূপী দৃঢ় ভূমিকে অর্জন করা উচিত ৷ তাই চরিত্র যদি কারও নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে উপোরোক্ত মুক্তি লাভের সাহায্যকারী কোনো যোগতা লাভ করতে সমর্থ হয় না ৷ তাই উপনিষদের এই বানীকে
স্বামী বিবেকানন্দ ব্যাখা করেছিলেন " Character Loss is Everything Loss."
চরিত্র অবস্থাটি নির্ভর করে কামিনী এবং কাঞ্চন-এর উপর ৷
এখানে কামিনী বলতে পুরুষদের ক্ষেত্রে নারী এবং নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের বোঝায় ৷
আর কাঞ্চন বলতে ধন ,সম্পদ, সম্পত্তিসোনা ,ঘর- বাড়ী ,জমি, যাবতীয় অর্থকারী বিষয়কে বোঝায় ৷
সর্বপ্রথমে আমরা কামিনী অর্থাৎ পুরুষদের ক্ষেত্রে নারী এবং নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা করিতে চেষ্টা করিব এবং তারপরে কাঞ্চন অর্থাৎ সমস্ত অর্থকরী বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করিব ৷
1. বিশুদ্ধ কামিনী অবস্থা + বিশুদ্ধ কাঞ্চন অবস্থা= বিশুদ্ধ চরিত্র অবস্থা ( চরিত্রবান অবস্থা )
2. অশুদ্ধ কামিনী অবস্থা + অশুদ্ধ কাঞ্চন অবস্থা =অশুদ্ধ চরিত্র অবস্থা ( চরিত্রহীন অবস্থা )
কামিনী :- পুরুষ বা নারী যে হোক মনুষ্য শরীরে 12 বছর বয়স থেকে প্রত্যেকটি কর্মের কর্মবীজ তার কুটস্থে জমতে থাকে ( জেনেই করুক বা না জেনেই করুক) |
জন্ম - বিবাহ - মৃত্যু এই তিনটি অনিবার্য নিয়তির অধীন বলে ধরা হয় ৷ অর্থাৎ তোমার কার বাড়িতে জন্ম হবে , কে বাবা - মা হবে এইসব পূর্ব নির্ধারিত নিয়তি , এখানে কারোরই হস্তক্ষেপ হয় না ৷ ঠিক সমতুল্য ভাবে কোন নারীর সঙ্গে কোন পুরুষের বিবাহ হবে এবং কার - কবে - কোথায় কীভাবে মৃত্যু এইসবই নিয়তি অনুসারে হয় ৷ ইহা কেউ বহু চেষ্টাতে ও রদ্ বদল করিতে পারে না।
জন্ম জীবনের শুরু , মৃত্যু জীবনের শেষ ৷ তাই জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়কে জীবন বলে। এই জীবনের মাঝে একটি গুরুত্ত্বপূর্ন নিয়তি বিবাহকে ধরা হয় (সন্ন্যাসী- ব্রহ্মচারী-অবিবাহিত যোগে জন্ম ব্যতীত) | এই বিবাহ প্রথা কোনো নারীর সঙ্গে পুরুষ-এর এবং কোনো পুরুষের নারীর বিবাহ মান্যতা স্বরূপ শাস্ত্র সম্মত ৷ (সমকামী বা ক্লীবত্বের বিবাহ প্রথা শাস্ত্র বিরুদ্ধ ) |
শাস্ত্র অনুসারে , বিবাহ প্রথার প্রয়োজনীয়তা অন্য জীবাত্মাকে শরীর দেওয়া অর্থাৎ পুত্র - কন্যারূপে জন্মপ্রদান করা এবং সেই পুত্র - কন্যাকে মনুষ্য শরীরে উপযোগীতা তৈরী করা বিবাহিত জীবনের সার্থকতা কর্মের হিসাবে ধরা হয় ৷
তাই শাস্ত্র অনুসারে , নারী - পুরুষের অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষন বা টান , অনুভব - অনুভূতি , কাম - সুখ, - ভোগ - বাসনা প্রবৃত্তিকে প্রশয় দেওয়া বিবাহ জীবনের উদ্দেশ্য নয়। শুধুমাত্র অন্য জীবত্মার মনুষ্য দেহ জন্ম এবং লালন - পালন , এবং যার কারনে তোমার জন্ম হয়েছে তার উপর দায়িত্ব প্রতিপালনই একমাত্র বিবাহিত জীবনের শাস্ত্র অনুসারে উদ্দেশ্য ৷
উদ্দেশ্য নয়।
উপরোক্ত শাস্ত্রীয় উদ্দেশ্যই যদি নারী এবং পুরুষের মিলিত বিবাহিত জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্যে হয় তা হলে নিজের স্ত্রী বা নিজের স্বামী ব্যতিত অন্য নারী বা অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষন - টান - অনুভব - অনুভূতি , কাম - সুখ , ভোগ - বাসনা, প্রবৃত্তিকে প্রশয় দেওয়া কি শুদ্ধ চরিত্রের লক্ষন হতে পারে? - —---কখনই নয় ৷
এই অবস্থাকে শাস্ত্রে চরিত্রহীন দোষের একটি মুখ্য দোষ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন ৷ বিবাহ কার সঙ্গে কার হবে এটি পূর্ব নিয়তি নির্ধারিত হয় ৷ যেটা শুধু সময অনুসারে জানা যায় মাএ ৷ তাহলে প্রত্যেক নারী বা প্রত্যেক পুরুষের কার সঙ্গে কার বিবাহ হবে পূর্ব নির্ধারিত আমরা জানি বা না জানি ৷
তাই না-জেনে বা জেনে বিবাহ হবার পূর্বে বা বিবাহ হবার পরে পরপুরুষ বা পরনারীতে সম্পর্কযুক্ত হলে শাস্ত্রে তাহাকে মহান চরিত্রহীন দোষ বলে ধরা হয়েছে ৷
তাই কামিনী সম্বন্ধীয় চরিত্র দোষ থেকে মুক্ত থাকার জন্য বিবাহের পূর্বে কোনো নারী বা কোনো পুরুষের দিকে নিজের কামনাবশত বা প্রবৃতি বশত কোন কর্ম না করা এবং বিবাহের পরে নিজের স্ত্রী বা নিজের স্বামী ব্যতিত কোনো নারী বা পুরুষকে নিয়ে নিজের কামনাবশত বা প্রবৃতি বশত কোন কর্ম না করাই —--চরিত্র দোষ মুক্ত থাকার একমাএ উপায় ৷
কাঞ্চন :- অর্থ , জমি , বাড়ি , সোনা , গাড়ী , সম্পদ , যে- কেনো অর্থকারী বিষয়কে শাস্ত্রে এককথায় কাঞ্চন বলে ব্যাখ্যা করেছেন ৷
এই কাঞ্চন এর বিষয়কে শাস্ত্র অনুসারে বিচার - বিবেচনা করতে হবে তাহা মানবজীবনের হিতকারী নাকি অহিতকারী ৷ যদি অহিতকারী হয় তাহলে এই কাঞ্চন নামক দোষটি ও চরিত্রহীনতার সৃষ্টি করিয়া থাকে ৷
আবার মানবতার হীতকারী কোনো বিষয় বা মানবতার হিতকারী নয় অথচ অহিতকারি ও নয় - এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনটি অনীতি - অন্যায় - অশাস্ত্রীয় - অসৎ উপায়ে উপার্জিত ধনও চরিত্রহীনতার দোষ উৎপন্ন করে ৷
অর্থাৎ মানবতার হীতকারী বা মানবতার ক্ষেত্রে সমভাব সম্পন্ন কোনো বিষয় থেকে শাস্ত্রীয় এবং সৎ উপায়ে উপার্জিত ধনকে কাঞ্চন বলা হলেও - এই কাঞ্চনরূপী ধন চরিত্র হীনতার দোষ সৃষ্টি করে না বরং বিশুদ্ধ চরিএ গঠনের ক্ষেত্রে মহা সহায়ককারী হয় ৷
তাই বিবাহিত জীবনে যদি নিজের স্ত্রী/ নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কোনো নারী/পুরুষের প্রতি কামনার প্রবৃত্তি না হয় তার সঙ্গে মানবতার হীতকারী বিষয থেকে সৎপথে উপার্জনকারী ধন (কাঞ্চন) এই দুই-এর সম্বন্বয়ে মনুষ্যের জীবনে মহাশুদ্ধ দৃঢ়চরিত্রবান অবস্থা লাভ করে ৷
ইহাকেই শাস্ত্রে চরিত্রবান অবস্থা বলে ব্যাখ্যা করেছেন ৷
কোনো ব্যক্তির এই রকম চরিত্রবান অবস্থারূপী যোগ্যতা লাভ করার পরেই সে সমর্থ হয় নিত্য- অনিত্য বিচার সহকারে 42 বৈদিক অনুশাসন প্রতিপালন করে পশুভাবকে সম্পূর্ণ নির্মূল করে মনুষ্যত্ব ভাবে অবস্থান করতে ৷
তাই শাস্ত্র অনুসারে চরিত্রবান অবস্থা ( শুদ্ধ কামিনী + শুদ্ধ কাঞ্চন) লাভ না করা পর্যন্ত প্রানপন চেষ্টা করেও কোনো ব্যক্তি নিত্য - অনিত্য বিচার সহকারে 42 বৈদিক অনুশাসন প্রতিপালনে সমর্থ হয় না এবং সে পশুত্বভাবকেও নির্মূল করতে পারে না ৷
তাই মোক্ষ লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তি পশুত্ব ভাবকে নির্মূল করার আগে নিত্য- অনিত্য বিচার সহকারে 42 বৈদিক অনুশাসন প্রতিপালনের পূর্বে অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল নিজেকে শাস্ত্রীয়ভাবে দৃঢ় চরিত্রবান রূপে প্রতিষ্ঠিত করা - কারণ চরিত্ররূপী ভূমির উপরেই ধর্ম রূপী অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ৷