12 জ্যোতির্লিঙ্গ এর সঙ্গে 12 রাশির সম্পর্ক শাস্ত্র মতে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে 64 টি স্থানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে প্রকট হন মহাদেব। এর মধ্যে 12টি স্থান সম্পর্কে জানা যায়। এই 12 স্থানই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নামে পরিচিত। এই বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে 12টি রাশির গভীর সংযোগ রয়েছে। 1. মেষ রাশির সঙ্গে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক বর্তমান। সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন স্বয়ং চন্দ্র। উল্লেখ্য চন্দ্রের অপর নাম সোম। শিব চন্দ্রকে নিজের মস্তকে ধারণ করেন। তাই এটি সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ নামে প্রসিদ্ধ। মহাশিবরাত্রিতে এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করতে পারেন। 2. অন্য দিকে মল্লিকার্জুনকে বৃষ রাশির অধিপতি মনে করা হয়। মহাশিবরাত্রিতে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও দর্শন করলে সুফল পাওয়া যাবে। এর ফলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি সম্ভব। 3. মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ শিবের তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত। মহাশিবরাত্রি তিথিতে মিথুন রাশির জাতকরা উজ্জয়িনীতে অবস্থিত মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করলে সুফল পাবেন। 4. জ্যোতিষ অনুযায়ী নর্মদার পাশে অবস্থিত ওংকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে কর্কট রাশির সম্পর্ক বর্তমান। কর্কট রাশিতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি ওংকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও পুজো করতে পারেন। 5. সিংহ রাশির জাতকরা বিহারের দেবঘরে অবস্থিত বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের স্মরণ ও দর্শন করবেন। এখানে সিদ্ধি, ধুতরো দিয়ে শিব পুজো করলে বিশেষ ফলাফল লাভ করা যায়। 6. কন্যা রাশির জাতকরা মহারাষ্ট্রের ভীমা নদীতে অবস্থিত ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান করবেন। দুধে ঘি মিশিয়ে ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের অভিষেক করলে অক্ষয় আশীর্বাদ পাওয়া যায়। 7. শিবস্বরূপ। দুধে মিষ্টি বাতাসা মিলিয়ে রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের স্নান করালে শিব প্রসন্ন হন। এই জ্যোতির্লিঙ্গে আকন্দ ফুল নিবেদন করা শুভ। তুলা রাশির জাতকদের সম্পর্ক রয়েছে। 8. অন্য দিকে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে বৃশ্চিক রাশির জাতকদের সম্পর্ক রয়েছে। দুধ, মুড়ি গিয়ে এই জ্যোতির্লিঙ্গের স্নান করানো শুভ। এর পর গাঁদা ফুল ও বেলপাতা দিয়ে শিবলিঙ্গের শৃঙ্গার করে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান করুন। 9. জ্যোতিষ অনুযায়ী ধনু রাশির জাতকদের বারাণসী অবস্থিত বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান, দর্শন ও পুজো করুন। গঙ্গাজলে জাফরান মিশিয়ে শিবলিঙ্গের স্নান করালে সুফল পাবেন। 10. মকর রাশির জাতকদের ত্রয়ম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা উচিত। গঙ্গাজলে গুড় মিশিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা শুভ। ত্রয়ম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গে নীল ফুল, ধুতরো অর্পণ করা উচিত। 11. কুম্ভ জাতকদের কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা উচিত। পঞ্চামৃত, পদ্মফুল ও ধুতরো এই জ্যোতির্লিঙ্গে নিবেদন করতে পারেন। এর ফলে মহাদেবের আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। 12. অন্য দিকে মীন রাশির জাতকরা ঘুষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ধ্যান ও পুজো করতে পারেন। মহারাষ্ট্র্রের ঔরঙ্গাবাদে অবস্থিত এই জ্যোতির্লিঙ্গে ঘি ও মধু নিবেদন করলে সুফল পাওয়া যায়।
এটি মহালক্ষীর প্রতীক, তিনি সম্পদের দেবী এবং আনাং শিবেরও প্রতিনিধিত্ব করে । এটি সপ্ত মাতৃকারো প্রতিনিধিত্ব করে যথা সাত জন মাতা । পুরাণ অনুসারে, সাত মুখী রুদ্রাক্ষ অ্যানান্তা, মহিমান্বিত পরম পিত ব্রম্হা সম্পর্কিত বস্তু। এর শাসক গ্রহটি " শনি "। এটি আপনাকে ভাল স্বাস্থ্য এবং সম্পদ দিয়ে আশীর্বাদ করবে। এটি আপনাকে নাম, খ্যাতি, জীবনে অগ্রগতি দেবে এবং আপনার দুর্ভাগ্যর অবসান হবে। এটি শান্তি, সমৃদ্ধি, সম্পদ এবং সৌভাগ্য আনবে। আপনার সাড়ে সাতি বা শনি ধাইয়া পর্যায়গুলির সময় ক্ষতিকারক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে। এটি আপনার চাপ, উদ্বেগ এবং আগ্রাসন হ্রাস করবে। এটি আপনাকে আপনার আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে এবং আরও লাভের জন্য আপনার পেশাগত জীবনে মন দিয়ে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। হাঁপানি ও পাচক রোগের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য এটি বিশেষ ভাবে উপকারী হবে। এটি আপনার আশেপাশ থেকে নেতিবাচকতা সরিয়ে দেয় এবং আপনি সর্বদা সতেজ বোধ করবেন, এর ফলে প্রত্যেকের সাথে আপনার সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। নিউমেরোলজি অনুসারে যাদের সংখ্যা ৮ তাদের এটি পরিধান করার জন্য সুপারিশ হয়। যারা আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সমস্যায় ভুগছেন ও জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি পরিধান করা আবশ্যক।
রুদ্রাক্ষ পবিত্র কণা, একটি সোনা বা রুপোর মাধ্যমে পরিধান করা যেতে পারে। এটি পরিধান করার আগে কাঁচা দুধ বা গঙ্গার জলে ডুবিয়ে রাখা উচিত। মন্ত্র 108 বার জপ করতে করতে ভগবান ভৈরবের চরণে কালো তিলের বীজ অর্পণ করুন ও সুগন্ধি ধুপ দিন, এর ফলে আপনার শনি জাগরিত হবে।এই অনুষ্ঠানগুলি সম্পাদন করার পরে, সূর্যাস্তের পরে কোনো শনিবার বা পুষ্য , অনুরাধা ও উত্তরা ভদ্রপাড় নক্ষত্রের কালে এটি পরতে পারেন। আজকের দিনে বাজারে প্রাকৃতিক রুদ্রাক্ষ পাওয়া খুবই দুস্কর একটি ঘটনা। সাধারণত, কারখানা গুলিতে প্লাস্টিকের ফাইবার ব্যবহার করে রুদ্রাক্ষ তৈরি করা হয়। বিশেষত, কৃত্রিম রুদ্রাক্ষ গুলি চীনে বড় আকারে তৈরি হচ্ছে এবং তারপরে সেগুলি সারা বিশ্বের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। একটি প্রাকৃতিক রুদ্রাক্ষ, একটি গাছের ফল এবং তাই সীমিত সংখ্যায় পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, আবহাওয়ার মত অনিশ্চিত ও পরিবর্তনশীল জিনিস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মাঝে মাঝে উৎপাদনে বাধা দেয়। কৃত্রিমভাবে তৈরি রুদ্রাক্ষ একই রকম দেখতে হতে পারে তবে এটি জ্যোতিষিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। রুদ্রাক্ষ ধারণের বিধিপ্রাকৃতিক রুদ্রাক্ষের গুরুত্ব
1. রুদ্রাক্ষ ধারণের আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে তা যেন চিকন দানা এবং পোকা লাগা না হয় অবশ্যই রুদ্রাক্ষকে অরজিনাল হতে হবে।
2. বিধি মত সেই রুদ্রাক্ষকে শোধন করে ভগবান শিবের পুজো করে শিবলিঙ্গে স্পর্শ করিয়ে তারপর তা পুজো বা ধারণ করার জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্র জপ করে তা ধারণ বা পূজ করা উচিত।
3. একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হলে জলে স্নান করতে হবে ,অবশ্যই প্রতিদিন শিবের আরাধনা করতে হবে এবং তার সাথে ব্রহ্মা-বিষ্ণুর দুর্গা গণেশকে সমানভাবে ভক্তি করতে হবে। দেবতারা সন্তুষ্ট হলে তবেই রুদ্রাক্ষ কাজ দেবে।
4.রুদ্রাক্ষকে প্রথমে তামার পাত্রে রেখে গঙ্গাজল বা কাঁচা দুধ দিয়ে স্নান করাতে হবে তারপর অশ্বগন্ধার দ্বারা স্নান করাতে হবে পঞ্চম নিচের দ্বারা স্নান করিয়ে পরিষ্কার বা লাল কাপড়ের উপর রেখে চন্দন অক্ষত দিয়ে পুজো করিয়ে ধূপ দ্বী প জ্বালিয়ে এবং শিবের প্রিয় ফুল দিয়ে অবশ্যই ভগবান শিবের প্রিয় বেলপাতা দিয়ে পূজা করতে হবে। এবং ১০৮ বার ভগবান শিবের মন্ত্র জপ করতে হবে
5. রুদ্রাক্ষ ধারণের জন্য সোমবার শুভ নক্ষত্র যোগে শুভ মুহূর্তে রুদ্রাক্ষ নিয়ে আসতে হবে এবং তদ্রূপ তিথিতে শুভ মুহূর্তে শোধন করে তার ধারণা বা পুজোর জন্য রাখা যেতে পারে।
6. রুদ্রাক্ষকে গলায় বা বাহুতে ধারণ করা যাবে রুদ্রাক্ষ ধারণ করে স্নান করা উচিত নয়,
10..এইসব কর্মের সময় অবশ্যই রুদ্রাক্ষ খুলে রাখা উচিত
এছাড়া রুদ্রাক্ষ পরে সর্ব জায়গাতেই যাওয়া যায় কোন বিধি নিষেধ নেই।
রুদ্রাক্ষ মূলত একটি গাছের বীজ, যা "দ্রাক্ষ বৃক্ষ" নামে পরিচিত। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ এবং এর মধ্যে দুটি শব্দ রয়েছে, যথা "রুদ্র" এবং "অক্ষ"। রুদ্র মানে শিব এবং অক্ষ মানে "চোখের জল"। এই শব্দগুলির যৌথ অর্থ "শিবের চোখ"। শাস্ত্র বলে যে এটি একজন ব্যক্তিকে ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোকশা প্রাপ্তির জন্য আশীর্বাদ করে। যাই হোক, বিজ্ঞান বিশ্বাস করে যে এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক, প্যারাম্যাগনেটিক, নুট্রপিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে বহন করে যা মানব দেহে শ্বাসযন্ত্র এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি করতে সহায়তা করে। ফলাফল উভয় বিজ্ঞানেই প্রমতিতো ও গৃহীত। ফলস্বরূপ, রুদ্রাক্ষ পরলে, আপনার মানুষিক চাপ কমে যাবে, শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, অবশেষে মনের শান্তি লাভ করবেন। রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে আপনি নিজেকে দেবাদিদেব মহাদেব শিবের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে "রুদ্রক্ষ" শব্দটি মহান গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বাস করা হয় যে রূদ্রক্ষার পরিধানকারী শুধুমাত্র ভগবান শিবকেই নয় বরং সৌরজগতের বিভিন্ন দেবদেবীর যেমন দুর্গা, ভগবান ইন্দ্র, ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু, ভগবান গণেশ, ভগবান কার্তিক , ভগবান আদিত্য এবং অন্যান্য দেবতাদেরও পছন্দের পাত্র হন। এটি সবসময় পরিধানকারীদের ইতিবাচক ফলাফল দেয় রত্ন পাথর এর ন্যায় কোনো খারাপ প্রভাব দেবে না । এটি শিবের কাছে খুবই প্রিয়, এই কারণে আপনি রুদ্রাক্ষের অলঙ্কার ছাড়া শিবকে কল্পনা করতে পারবেন না। আপনার পাপগুলি জ্বলে পুড়ে রাখ হয়ে যাবে এর দর্শনে, মন্ত্রোচ্চারণ করলে ও আরাধনা করলে। বিশ্বাস করা হয় যে, একজন মানুষ শুধুমাত্র রুদ্রক্ষাকে দেখে সীমাহীন পরিমাণে আনন্দ অনুভব করতে পারে। বিভিন্ন শোক, দুঃখ ও দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে, শিবের ভক্তদের অবশ্যই রুদ্রাক্ষ পরতে হবে। এটা পরিধান করলে মনের সবরকম কামনা পূর্ণ হবে। এটি পরিধান করে, আপনি মৃত্যুর সময় শিব সম্পর্কিত মহান জ্ঞান লাভ করতে পারেন। এটি পরিধানকারীর ক্যারিশমা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। এটি আপনাকে আপনার কুণ্ডলিনী বা আধ্যাত্মিক জাগরণ প্রক্রিয়া জাগ্রত করতে সহায়তা করে। স্ট্রেস, হাইপারটেনশন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্যও এটি অত্যন্ত সুপরিচিত। **************************************************************************************************************************** কালসর্প দোষ দূর করার জন্য ৫ মুখী, ৭ মুখী, ১১ মুখী, বা ১৪ মুখী রুদ্রক্ষ পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রুদ্রক্ষগুলি শনি গ্রহের প্রভাবকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যা কালসর্প দোষের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
মাঙ্গলিক দোষ:
মাঙ্গলিক দোষ দূর করার জন্য ৫ মুখী, ৭ মুখী, বা ১১ মুখী রুদ্রক্ষ পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রুদ্রক্ষগুলি মঙ্গল গ্রহের প্রভাবকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যা মাঙ্গলিক দোষের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
গুরুচন্ডাল দোষ:
গুরুচন্ডাল দোষ দূর করার জন্য ৫ মুখী, ৭ মুখী, বা ১১ মুখী রুদ্রক্ষ পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রুদ্রক্ষগুলি বৃহস্পতি গ্রহের প্রভাবকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যা গুরুচন্ডাল দোষের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ বলতে শিবের বারোটি বিশেষ মন্দির ও সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলিকে বোঝায়। মন্দিরগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ শিবের পবিত্রতম মন্দির।
শিব পুরাণ অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ —
1. সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
সৌরাষ্ট্রদেশে বিশদেহতিরম্যে জ্যোতির্ময়ং চন্দ্রকলাবতংসম্ ।
ভক্তিপ্রদানায় কৃপাবতীর্ণং তং সোমনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি দয়া পূর্বক সৌরাষ্ট্রপ্রদেশে অবতীর্ণ হয়েছেন, চন্দ্র যাঁর মস্তক ভূষণ, সেই জ্যোতির্লিঙ্গ স্বরূপ ভগবান সোমনাথের আমি শরণাগত হলাম।
সোমনাথ শব্দটির অর্থ “চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা”। পুরাণ মতে চন্দ্রদেবতা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। সোমনাথ মন্দিরটি ‘চিরন্তন পীঠ’ নামে পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের সৌরাষ্ট এর নিকট প্রভাস ক্ষেত্রে অবস্থিত এই মন্দির। আমেদাবাদ থেকে অল্প দূরে ভেরাবল শহর থেকে ৪/৫ কিমি দূরে এই মন্দির অবস্থিত। সারা বিশ্ব ও ভারত জুড়ে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও ভক্ত আসেন এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন ও পূজা নিবেদন করতে। অতীতে এই শিব মন্দির বারবার বিদেশী শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রায় পাঁচবার বা তার বেশিবার এই মন্দির পুনর্নির্মিত করা হয়।
2. মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ —
শ্রীশৈলশৃঙ্গে বিবুধাতিসঙ্গে তুলাদ্রিতুঙ্গেহপি মুদা বসন্তম্ ।
তমর্জুনং মল্লিকপূর্বমেকং নমামি সংসারসমুদ্রসেতুম্ ॥
অর্থাৎ- যিনি উচ্চ আদর্শভূত পর্বত থেকেও উচ্চ শ্রীশৈল পর্বতের শিখরে, যে স্থানে দেবতাদের সমাগম হয়, অত্যন্ত আনন্দ সহকারে নিবাস করেন এবং সংসার সাগর পার করবার জন্য যিনি সেতুস্বরূপ, সেই প্রভু মল্লিকার্জুনকে আমি নমস্কার জানাই।
দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈল পর্বতে এই পীঠ অবস্থিত। হরগৌরীর পুত্র কার্ত্তিক, মতান্তরে চন্দ্রগুপ্তের কন্যা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। এই প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরটি পূর্বমুখী। কেন্দ্রীয় মণ্ডপে অনেকগুলি স্তম্ভ এবং নন্দীকেশ্বরের একটি বিরাট মূর্তি আছে। দক্ষিণ ভারতের সকল হিন্দুদের কাছে এই মন্দির অনেক পবিত্র। সারা বছর ধরে এখানে অনেক অনেক ভক্ত আসেন নিজের মনস্কামনা পূর্ণ করতে ও বাবা শিবের লিঙ্গে জল অর্পণ করতে। শিবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব।
3. মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
অবন্তিকায়াং বিহিতাবতারং মুক্তিপ্রদানায় চ সজ্জনানাম্ ।
অকালমৃত্যুোঃ পরিরক্ষণার্থং বন্দে মহাকালমহাসুরেশম্ ॥
অর্থাৎ- সাধু-সন্তদের মোক্ষ প্রদান করবার জন্য যিনি অবন্তীপুরীতে অবতরণ করেছেন, মহাকাল নামে প্রসিদ্ধ সেই মহাদেবকে আমি অকালমৃত্যু থেকে বাঁচবার জন্য নমস্কার জানাই।
ভারতের মধ্যপ্রদেশে এই ধাম অবস্থিত। অবন্তী নগরীর এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ও রাজা চন্দ্রসেন এখানে শিব উপাসনা করেছিলেন। এখানে সারা বছর অসংখ্য পুণ্যার্থী আসেন এই মন্দিরে পূজা দিতে। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি ‘দক্ষিণামূর্তি’। এই শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে ”তান্ত্রিক শিবনেত্র“ প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বর মন্দিরে দেখা যায়। ‘ওঙ্কারেশ্বর মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত। গর্ভগৃহের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকে যথাক্রমে গনেশ, পার্বতী ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপিত আছে। দক্ষিণ দিকে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি স্থাপিত আছে। মন্দিরের তৃতীয় তলে নাগচন্দ্রেশ্বর মূর্তি আছে। এটি একমাত্র নাগ পঞ্চমীর দিন দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরের পাঁচটি তল আছে। তার মধ্যে একটি ভূগর্ভে অবস্থিত। এছাড়া মন্দিরে একটি বিশাল প্রাঙ্গন রয়েছে। হ্রদের দিকে অবস্থিত এই প্রাঙ্গনটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মন্দিরের শিখর বা চূড়াটি শাস্ত্রে উল্লিখিত পবিত্র বস্ত্র দ্বারা ঢাকা থাকে। ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়। এটি মন্দিরের একটি স্বতন্ত্র প্রথা। নামন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।
4. ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
কাবেরিকানর্মদয়োঃ পবিত্রে সমাগমে সজ্জনতারণায় ।
সদৈব মান্ধাতৃপুরে বসন্ত- মোঙ্কারমীশং শিবমেকমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি সৎ ব্যক্তিদের সংসার সাগর পার করানোর উদ্দেশ্যে কাবেরী ও নর্মদার পবিত্র সংগমের কাছে মান্ধাতাপুরে সর্বদা বাস করেন, সেই অদ্বিতীয় কল্যাণময় ভগবান ওঙ্কারেশ্বরের আমি স্তব করি।
ভারতের মধ্যপ্রদেশে নর্মদা তটে এই শিব মন্দির অবস্থিত। রাজা মান্ধাতা এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ পাঁচতলা মন্দিরের গর্ভগৃহে ছোট্ট শিবলিঙ্গ৷ সামান্য উচ্চতা৷ জাতিধর্ম নির্বিশেষে স্পর্শ করে পূজা দেওয়া যায়৷ সারা বছর ধরেই অনেক পুণ্যার্থী আসেন পূজা দিতে।
5. কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
মহাদ্রিপার্শ্বে চ তটে রমন্তং সম্পূজ্যমানং সততং মুনীন্দ্রৈঃ ।
সুরাসুরৈর্যক্ষমহোরগাদ্যৈঃ কেদারমীশং শিবমেকমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি মহাগিরি হিমালয়ে কেদার শৃঙ্গের ওপর সর্বদা বসবাস করেন এবং মুনি, ঋষি, দেবতা তথা অসুর, যক্ষ, মহাসর্পাদি দ্বারা পূজিত হন, আমি সেই একমাত্র কল্যাণকর ভগবান কেদারনাথের স্তব পাঠ করি।
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে এই মন্দির অবস্থিত। এটি মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত। হরিদ্বার থেকে এই পীঠ যেতে হয়। নরনারায়ণ নামক ঋষি এখানে শিব আরাধনা করেছিলেন। চারধামের অন্যতম কেদারনাথ। এখানকার তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখি মঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল কেদারখণ্ড ; তাই এখানে শিবকে কেদারনাথ (অর্থাৎ, কেদারখণ্ডের অধিপতি) নামে পূজা করা হয়।
6.. ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ —
যং ডাকিনীশাকিনিকাসমাজে নিষেব্যমাণং পিশিতাশনৈশ্চ ।
সদৈব ভীমাদিপদপ্রসিদ্ধং তং শঙ্করং- ভক্তহিতং নমামি ॥
অর্থাৎ- ডাকিনী, শাকিনী ও প্রেত দ্বারা যিনি নিত্য পূজিত হন, সেই ভক্তহিতকারী ভগবান ভীমাশঙ্করকে আমি প্রণাম করি।
মহারাষ্ট্রের পুনা জেলার গোরাগাঁও এর কাছে সহ্যাদ্রি পর্বতমালায় ভীমাশঙ্কর মন্দির অবস্থিত। এখানে ভগবান শিব ভীম নামক এক রাক্ষস কে বধ করবার জন্য প্রকটিত হয়েছিলেন। এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। গ্রহের বাঁধা কাটানো ও অকাল মৃত্যু রোধ করার অসংখ্য ভক্ত আসেন এখানে। জঙ্গলের মধ্যে ঘন গ্রানাইট পাথরের তৈরি এই মন্দির। এই মন্দিরের লিঙ্গ মাঝারি আকারের।
7. কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
সানন্দমানন্দবনে বসন্ত- মানন্দকন্দং হতপাপবৃন্দম্ ।
বারাণসীনাথমনাথনাথং শ্রীবিশ্বনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি স্বয়ং আনন্দকর এবং আনন্দ পূর্বক আনন্দবন কাশী ক্ষেত্রে বাস করেন, যিনি পাপ নাশ করেন, অনাথের নাথে সেই কাশীপতি শ্রীবিশ্বনাথের কাছে আমি শরণ নিলাম।
এখানে ভগবান শিব দেবী উমার সহিত কিছুকাল নিবাস করেছিলেন। এখানে তিনি বিশ্বনাথ। এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের কাশীতে অবস্থিত। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি বিভিন্ন আক্রমণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি ইন্ডোরের মহারানি অহল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দেন। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি সোনায় মোড়া। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।
8. ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
সহ্যাদ্রিশীর্ষে বিমলে বসন্তং গোদাবরীতীরপবিত্রদেশে ।
যদ্দর্শনাৎ পাতকমাশু নাশং প্রয়াধি তং ত্র্যম্বকমীশমীড়ে ॥
অর্থাৎ- যিনি গোদাবরী তটে পবিত্র সহ্যাদি পর্বতের নির্মল শিখরে বাস করেন, যাঁর দর্শন লাভে সত্বর সকল পাপ বিমোচন হয়, আমি সেই ত্র্যম্বকেশ্বরের স্তব পাঠ করি।
মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত এই শিব মন্দির। মহর্ষি গৌতম এখানে সস্ত্রীক শিব উপাসনা করেছিলেন। এই লিঙ্গমূর্তি তিন ভাগে বিভক্ত এবং অন্য শিবলিঙ্গের চেয়ে আলাদা৷ এই মন্দিরের পুননির্মাণ শ্রী নানা সাহেব পেশোয়া করেন।
9. বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ —
পূর্বোত্তরে প্রজ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম্ ।
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং তমহং নমামি ॥
অর্থাৎ- যিনি পূর্বোত্তম দিকের বৈদ্যনাথ ধামের ভেতরে সর্বদা গিরিজার সঙ্গে বাস করেন, দেবতা ও অসুরগণ যাঁর চরণ কমল আরাধনা করেন, সেই শ্রীবৈদ্যনাথকে আমি প্রণাম করি।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে বৈদ্যনাথ মন্দির অবস্থিত। এটি ভগবান শিবের রাবন কে প্রদত্ত আত্মলিঙ্গ থেকে সৃষ্ট। অসংখ্য পুণ্যার্থী সারা বছর ধরেই এখানে আসেন, শিবলিঙ্গে জল ঢালেন ও পূজা দেন। শ্রাবন মাসে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ।
10. নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
যাম্যে সদঙ্গে নগরেহতিরম্যে বিভূষিতাঙ্গং বিবিডধৈশ্চ ভোগৈঃ ।
সদ্ভক্তিমুক্তিপ্রদমীশমেকং শ্রীনাগনাথং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি দক্ষিণের রমণীয় নগর সদঙ্গে নানাবিধ ভোগ সহ সুন্দর বসন ভূষণে সজ্জিত হয়ে বিরাজ করেন, যিনি সদ্ ভক্তি ও মুক্তি প্রদান করেন, আমি সেই প্রভু শ্রীনাগনাথের শরণ নিলাম।
ভারতের গুজরাটের দ্বারকার কাছে এই পীঠ অবস্থিত। বৈশ্য সুপ্রিয় এখানে শিব পূজা করেছিলেন। বিভিন্ন পৌরাণিক আখ্যানে এই মন্দির ঐতিহাসিক কাল থেকে ভক্তদের জন্য আকর্ষণের স্থল হয়ে আসছে। শিব উপাসকরা নাগেশ্বর মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন পরম পবিত্র বলে গণ্য করে।
11. রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ —
সুতান্রপর্ণীজলরাশিযোগে নিবধ্য সেতুং বিশিখৈরসংখ্যৈঃ ।
শ্রীরামচন্দ্রেণ সমর্পিতং তং রামেশ্বরাখ্যং নিয়তং নমামি ॥
অর্থাৎ- ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তাম্রপর্ণী ও সাগর সঙ্গমে বাণের সাহায্যে সমুদ্রে বাঁধ দিয়ে তার ওপর যাঁকে স্থাপন করেছিলেন, সেই রামেশ্বর দেবকে বিধি নিয়ম অনুসারে প্রণাম করি॥
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে এই পীঠ অবস্থিত। লঙ্কা আক্রমণের আগে ভগবান রাম এখানে শিব উপাসনা করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তভূমি পক প্রণালীতে একটি দ্বীপের আকারে গড়ে উঠেছে রামেশ্বরম। রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত। সারা বছর ধরেই অসংখ্য পুণ্যার্থী এখানে পূজা দিতে আসেন।
12 ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ —
ইলাপুরে রম্যবিশালকেহস্মিন্ সমুল্লসন্তং জগদ্বরেণ্যম্ ।
বন্দে মহোদারতরস্বভাবং ঘৃষ্ণেশ্বরাখ্যং শরণং প্রপদ্যে ॥
অর্থাৎ- যিনি ইলাপুরের সুরম্য মন্দিরে বিরাজ করে সমস্ত জগতের পূজ্য হয়ে রয়েছেন, যাঁর স্বভাব খুবই উদার সেই ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্ময় ভগবান শিবের আমি শরণ নিলাম।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরাঙ্গাবাদ থেকে 30 কিলোমিটার দূরে এবং দৌলতাবাদ বা দেবগিরি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ইলোরা গুহার কাছে এই মন্দির অবস্থিত। ঘুষ্ণা নামক এক শিবভক্তের আহ্বানে ভগবান শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে প্রকটিত হয়েছিলেন। মন্দিরটি লাল পাথর দিয়ে তৈরি। এতে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়। মন্দিরটির গায়ে অনেক হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদিত আছে।.
ॐ নমঃ শিবায়—হর হর মহাদেব
শিবরাত্রিতে ভুলেও এই কাজগুলি করবেন না-রুষ্ট হবেন মহাদেব পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রির উৎসব পালন .. করা হবে। মানা হয় যে, মহাশিবরাত্রি ভগবান শিবের উপাসনার জন্য সর্বোচ্চ দিন বলে মনে করা হয়। আজকে মহাশিবরাত্রির ব্রত রাখবেন সকলে। এইদিন ব্রত যাঁরা রাখেন তাঁদের কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করে চলতে হয়— মহাশিবরাত্রির ব্রত রাখার সময় কোন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কালো পোশাক নয় মহাশিবরাত্রির সময় স্নান না করে কিছু খাবেন না। ব্রত যদি নাও রাখেন তাও স্নান করে খাবার গ্রহণ করবেন না। মহাশিবরাত্রির দিন কালো রঙের পোশাক এইদিন কালো রঙের পোশাক পরাকে অশুভ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি শিবলিঙ্গে অর্পণ করা প্রসাদও খাবেন না, কারণ এতে দুভাগ্য আসতে পারে। এর পাশাপাশি শিবলিঙ্গে অর্পণ করা প্রসাদও খাবেন না, কারণ এতে দুভাগ্য আসতে পারে। এরকম করলে অর্থের ঘাটতি হতে পারে। এই জিনিসগুলি খাবেন না শিবরাত্রির উৎসবে চাল, ডাল বা গমের তৈরি কোনও খাবার সেবন করবেন না। ব্রতের সময় আপনি দুধ বা ফল খেতে পারেন। সূর্যাস্তের পর কিছুই খাওয়া চলবে না। এইদিন সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে দেহ ও মনকে শুদ্ধ করে নিন। এই কাজের মাধ্যমেই দিনের শুরুটা করুন। রাতে ঘুমোবেন না শিবরাত্রির সময় খুব বেশিক্ষণ সকালে শুয়ে থাকবেন না এবং রাতের সময় না ঘুমিয়ে কাটানোই এই ব্রতের নিয়ম। রাত জাগার সময় ভগবান শিবের ভজন শুনতে পারেন এবং আরতি করতে পারেন। ব্রতের পরের দিন সকালে স্নান করে প্রসাদ গ্রহণ করে শিবজিকে তিলক লাগিয়ে তবেই এই ব্রত খোলা যেতে পারে। শিবলিঙ্গে কুমকুম দেবেন না শিবলিঙ্গে কখনও কুমকুমের তিলক লাগাবেন না। মহাশিবরাত্রির সময় ভোলেনাথকে প্রসন্ন করার জন্য চন্দনের টিকা লাগানো যেতে পারে। মাতা পার্বতী ও গণেশ মূর্তিতে কুমকুমের টিকা লাগানো যেতে পারে। ভাঙা অক্ষত ব্যবহার করবেন না ভগবান শিবের পুজোয় কখনও ভুলেও ভাঙা চাল অর্পণ করবেন না। অক্ষতের অর্থ হল অটুট চাল, এটি পূর্ণতার প্রতীক। অক্ষতের অর্থ হল অটুট চাল, এটি পূর্ণতার প্রতীক। তাই শিবজিকে অক্ষত অর্পণ করার সময় এটা দেখে নেবেন যে যেন সেটা কোনওভাবেই ভাঙা না হয়। শিবরাত্রির ব্রত সকালে শুরু হয় এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত থাকে। ব্রতের সময় ফল ও দুধের সেবন করা উচিত, তবে সূর্যাস্তের পর কিছুই খাওয়ার নিয়ম নেই। কেতকী ফুল দেবেন না ভঘবান শিবকে ভুলেও কেতকী ও চাঁপা ফুল অর্পণ করবেন না। বিশ্বাস করা হয় যে এই ফুলগুলিকে ভগবান শিব শাপ দিয়েছিলেন। কেতকী ফুল সাদা হওয়া সত্ত্বেও তা ভগবান শিবের পুজোয় ব্যবহার হয় না। ছেঁড়া বেলপাতা শিবরাত্রিতে তিন পাতা সম্পন্ন বেলপাতা অর্পণ করতে হবে। ছেঁড়া-ফাটা বেলপাতা ব্যবহার করা চলবে না শিবের এই বিশেষ পুজোয়।
ষোলো সোমবার ব্রত
"ওঁ নমঃ শিবায়"---এর অর্থ হল "শুভশীল শিবকে নমস্কার, যাঁর চেয়ে শুভ আর কেউ থাকতে পারে না তাকে"। এই মন্ত্রটি শুক্ল যজুর্বেদের অংশ, রুদ্রাষ্টধ্যায়ীতেও দেখা যায়।
শিব কি?
সংস্কৃত শিব (দেবনাগরী: शिव, śiva) শব্দটি একটি বিশেষণ, যার অর্থ "শুভ, দয়ালু ও মহৎ"। ব্যক্তিনাম হিসেবে এই শব্দটির অর্থ "মঙ্গলময়"। রূঢ় রুদ্র শব্দটির পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কোমল নাম হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বিশেষণ হিসেবে শিব শব্দটি কেবলমাত্র রুদ্রেরই নয়, অন্যান্য বৈদিক দেবদেবীদের অভিধা রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
শিবের আসল নাম কি?
১) বিধুভূষন ,
২) বিভূতিভূষন ,
৩) ভীরুক,
৪) প্রনব ,
৫) পশুপতি ,
৬) বৈদ্যনাথ,
৭) বতস্যনাথ,
৮) শূলপাণি ।
শিব পুরাণ কি কথা?
এই পুরাণটি মূলত হিন্দু দেবতা শিব ও দেবী পার্বতীকে কেন্দ্র করে রচিত হলেও এতে অন্যান্য দেবদেবীর উল্লেখ রয়েছে। শিবপুরাণে 12টি সংহিতায় এক লক্ষ শ্লোক থাকার কথা জানা যায়, তবে রোমহর্ষণকে পুরাণের জ্ঞান দেওয়ার আগে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব এটিকে সংক্ষিপ্ত করেন। প্রচলিত লিপিগুলির একাধিক ও বিভিন্ন সংস্করণ দেখা যায়।
ভগবান শিবের একাক্ষরী বীজ মন্ত্র:-
“ওঁ হৌং শিবায় নমঃ”
ভগবান শিবের মূল পঞ্চাক্ষরী বীজ মন্ত্র:-
ওঁ হৌং জূং সঃ ওম ভূর্বুবঃ স্বঃ ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্ ওম স্বঃ ভুবঃ ওম সঃ জূং হৌং ওঁ।।
ভগবান শিবের গায়ত্রী মন্ত্র:-
“ ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ”
প্রতি মাসে একটি করে বছরে মোট ১২টি শিবরাত্রি পালন করা হয়। তার মধ্যে মহাশিবরাত্রির গুরুত্ব সর্বাধিক।
শিবরাত্রির ভোর থেকে উপবাস রাখতে হয়। সারা দিন এবং সারা রাত উপবাস চলে। পরের দিন পঞ্জিকা অনুসারে পরানার সময় উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।
শিবরাত্রির উপবাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মনকে খারাপ চিন্তা থেকে দূরে রাখা। খারাপ সঙ্গ এবং খারাপ কথা থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত শিবরাত্রিতে। এদিন ভালো কথা বলুন এবং ভালো কথা চিন্তা করুন।
মহাশিবরাত্রিতে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পূণ্যার্থীকে গঙ্গা বা যমুনার মতো কোনও নদীতে স্নান সেরে নিতে হবে। যদি একান্তই নদীতে স্নান করা সম্ভব না হয়, তখন জলের মধ্যে কয়েকটা তিল ফেলে গরম করে সেই জলে স্নান করুন।
উপবাস রাখার সঙ্গে গোটা রাত জেগে শিবের পুজো করতে হয়। তবেই শিবরাত্রির পূণ্যফল পাওয়া সম্ভব। খাবার তো নয়ই, শিবরাত্রির জলও খাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ দুধ, জল ও ফল খেয়ে শিবরাত্রির উপবাস পালন করেন।
শিবরাত্রিতে মন্দির প্রাঙ্গনেই থেকে সারাদিন শিবের নামগান শুনে কাটালে মন পরিশুদ্ধ হয়, তবেই শিবরাত্রি পালনের উপকার পাওয়া যায়।
শিবরাত্রিতে শুধু উপবাস পালন নয়, সঙ্গে নিজের শরীর ও মনকে শুদ্ধ করতে হবে। নিজের কামনা বাসনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
দুধ, মধু, সুগন্ধী, ফুল ও নতুন বস্ত্র দিয়ে কোনও মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গের পুজো করাতে পারেন। শিবলিঙ্গের স্নানের সময় মহাদেবের বিভিন্ন নামগুলি উচ্চারণ করুন।
হলুদ, চন্দন, কুমকুম, বেলপাতা, ফুল ও নতুন বস্ত্র দিয়ে শিবমূর্তিকে সজ্জিত করুন। এরপর মহাদেবের সামনে কর্পূরের প্রদীপ জ্বালান। এরপর ধূপকাঠি জ্বালিয়ে মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে মহাদেবের আরাধনা করুন।
দুধ, দই, ঘি, মধু, গঙ্গাজল ও ডাবের জল দিয়ে শিবের পুজো করতে হয় ৷
তবে এর সঙ্গে অবশ্য থাকে ধুতরো ও আকন্দ ফুল এবং পাঁচটি ফল ৷
দুধ মন্ত্র- ওঁ হৌ ঈশানায় নমঃ ৷
দধি মন্ত্র- ওঁ জৌং অঘোরায় নমঃ ৷
ঘৃত মন্ত্র- ও হৌং বামদেবায় নমঃ ৷
মধু মন্ত্র- ওঁ হ্রাং সদ্যজাতায় নমঃ ৷
ডাবের জল মন্ত্র- ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ৷
মহাদেবের আরাধনার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। শিবলিঙ্গের ওপর জল বা দুধ ঢেলে মহাদেবের আরাধনা করে থাকি আমরা। তবে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে শিবলিঙ্গকে স্নান করানোর পরামর্শ দিয়েছেন জ্যোতিষবিদরা। এর ফলে জীবনের নানা সমস্যার সমাধান সম্ভব। জেনে নিন কোন সমস্যায় কী ভাবে শিবলিঙ্গকে স্নান করাবেন।
1. আপনার জীবনে যদি শত্রু থাকে এবং তারা যদি আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে শত্রুনাশ এর জন্য সরষের তেল ও কালো তিল দিয়ে পারদের শিবলিঙ্গ ভালো করে মার্জনা করুন। অথবা গঙ্গা মাটি দিয়ে যে কোনও শিবলিঙ্গ পরপর ৫৭ দিন মার্জনা করে তারপর স্নান করান।
2. সুখ ও শান্তির জন্য শিবরাত্রিতে মাসকলাই ডাল একমুঠো শিবের মাথায় দিন। তার ওপর বেলপাতা দিয়ে গঙ্গা জল ঢালুন। শিবরাত্রি থেকে শুরু করে টানা ১৬ দিন এটি করে যেতে হবে।
3. আর্থিক স্থিতি মজবুত করার জন্য শিবরাত্রিতে সুজির পায়েস ভোগ দিন। এরপর ওই দিন থেকে টানা ১১টি সোমবার সুজির পায়েস ভোগ দিয়ে শিবপুজো করুন। উপকার পাবেন।
4. নিজের বা কোনও নিকটজনের বিয়েতে বাধা থাকলে ১০৮টি বেল পাতার উপর চন্দন মাখন মিছরি লাগিয়ে পারদ শিবলিঙ্গ বা যে কোনও নিত্য পুজো শিব লিঙ্গের মাথায় দিন এবং ধীরে ধীরে গঙ্গা জল ঢালুন। শিবরাত্রি থেকে শুরু করে টানা ৪৩ দিন এটি করে যেতে হবে। বিয়েতে বাধা থাকলে এর ফলে দূর হতে পারে।
5. শাস্ত্র মতে শিবলিঙ্গের দুগ্ধ স্নান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করানো হলে জীবনের দুঃখ-কষ্ট অনেক কমে যায়।
6. শিবলিঙ্গের শর্করা স্নান জীবনে সুখশান্তির জন্য প্রয়োজনীয়। পরিবারের সব ব্যক্তি বিলে গঙ্গা জলে মধু ও চিনি মিশিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান। এর ফলে পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপন হবে। এছাড়া আখের রস দিয়েও শিবলিঙ্গকে স্নান করালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এবং প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে মধুর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
7. শাস্ত্র মতে শিবলিঙ্গের পঞ্চামৃত স্নান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, দই, মধু, গঙ্গাজল একসঙ্গে মিশিয়ে স্নান করালেও সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়।
8. যে কোনও সুগন্ধি দ্বারা শিবলিঙ্গকে স্নান করালে তা অত্যন্ত শুভ। যেমন কেওড়া জল, আতর, গোলাপ জল শিবের খুবই প্রিয় সুগন্ধি। এগুলি দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে পারেন।
9. এছাড়া ধারাস্নানও মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয়। এতে জমি, গাড়ি, বাড়ি কেনা-বেচায় লাভ হয়। প্রত্যেকবার মহাদেবের স্নান করার পর বেলপাতা দিতে ভুলবেন না।
পুজোর সময়ে সোমবারের ব্রতকথা পাঠের মতো করে 'ওঁং নমঃ শিবায় মন্ত্র' পাঠ করতে হবে।
শিবরাত্রি ব্রতের সময় বা কাল- ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে সারা রাত জেগে চার প্রহর ধরে শিবরাত্রি ব্রত পালন করার নিয়ম। পুরুষ ও স্ত্রী লোক সকলেই ব্রত করতে পারে।
শিবরাত্রি ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- গঙ্গা মাটি, বেলপাতা, ফুল, দুধ, দই, ঘি, মধু আর কলা। শিবরাত্রির আগের দিনে নিরামিষ খেয়ে থাকতে হয়। রাত্রিরে বিছানায় না শুয়ে, কম্বল কিংবা খরের বিছানায় সংযমী হয়ে শোয়ার নিয়ম।
শিবরাত্রির দিন সকালে স্নান করে বেল পাতা তুলে রাখতে হবে। এরপর সমস্ত দিন উপোস করে থেকে গঙ্গা মাটি দিয়ে চারটি শিবলিঙ্গ তৈরি করে রাত্রিরে চার প্রহর চারবার শিব পুজো করতে হয়।
যেমন- প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে শিব পুজো করার নিয়ম।
দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে দ্বিতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গ
কে স্নান করিয়ে আর চতুর্থ প্রহরে শিব লিঙ্গে মধু দিয়ে স্নান করে পুজো করাতে হবে। এইভাবে প্রত্যেক প্রহরেই শিব পুজো করতে হবে। এই সঙ্গে সমস্ত রাত্রি জেগে কাটাতে হয় এবং পরদিন প্রভাত হলে
প্রথম কথা শুনে শিবকে প্রণাম করে ব্রাহ্মণ কে পরিতোষ সহকারে জলযোগ এবং ভজন করিয়ে দক্ষিণা দেওয়ার কর্তব্য।
শিবরাত্রি ব্রত কথা- পুরাকালের কথা-একদিন কৈলাস পর্বতে হরো পার্বতী বসে বিশ্রাম করছিল, এমন সময় দেবী পার্বতী বললেন,”প্রভু! ধর্ম ,অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য কি কাজ বা ব্রত পালন করলে আপনাকে সন্তুষ্ট করা যায়?”
সেই প্রশ্ন শুনে মহাদেব তখন বললেন,”শোনো দেবী পার্বতী, ফাগুন মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথি অন্ধকার রাত্রিকে ‘শিবরাত্রি ‘ বলে। সেইদিন যে উপোস করে থাকে, আমি যথার্থই তার উপর প্রসন্ন হয়।
শিবরাত্রি ব্রত আমার খুব প্রীতিকর, এই ব্রতের গুণেই গণেশ সপ্তদ্বীপ এর অধীশ্বর হয়েছে। এখন এই তিথির মাহাত্ম্য বলছি শোনো। পুণ্যতীর্থ কাশিনগরের এক ব্যাধ বাস করত। বদ করাই ছিল তার কাজ।
একদিন সে তীর-ধনুক নিয়ে স্বীকার করতে বেরুলো। একটা বনে গিয়ে সে অনেক রকমের পশুপাখি স্বীকার করল। সে যখন শিকার জড়ো করে বাড়িতে ফিরছিল তখন সে দেখল তার মাংসগুলো খুব ভারী হয়ে গেছে সেগুলো তার
একার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন সে সে গুলোকে নিয়ে বোনের একটা গাছের তলায় রেখে একটু বিশ্রাম করতে লাগলো। খুব ক্লান্ত হয়ে থাকার দরুন কিছুক্ষণের মধ্যেই সে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ল।
সূর্য ডুবে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর তার ঘুম ভাঙলো, তখন সে দেখল যে, এখন সেখানে বসে থাকতে সাপ কিংবা বাঘ ভাল্লুকের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে। এই অন্ধকারে পথ চিনে কুটিরের ফেরাও এখন সম্ভব নয়।
তখন সে হাতরে হাতরে সেই গাছটার ওপরে মাংসের বোঝাটা নিয়ে উঠে পড়ল এবং মাংসের বোঝাটা গাছের লতাপাতা দিয়ে একটা ডালে বেঁধে রেখে কোনরকমে গাছে বসেই রাত কাটাবে ঠিক করল।
একে সে খিদের জ্বালায় অস্থির তার ওপর শিশির পড়তে থাকায় শীতে তার কাঁপুনি ধরল, কাজেই সে জেগে বসে রইল সারা রাত। সেটা ছিল বেল গাছ আর ঘটনাচক্রের আমার একটা লিঙ্গ মূর্তি ও ছিল সেই গাছের তলায়।
সেদিন ছিল শিবরাত্রি তিথি আরও ব্যাধ ও সারাদিন উপোসী ছিল। তার নড়াচড়াতে গাছের কয়েকটা পাতা শিশিরে ভিজে তার গা বেয়ে এসে পড়ল সেই শিব লিঙ্গের মাথায়।
যদিও শিবরাত্রি ব্রতের নিয়ম পালন করার জন্য তার পক্ষে স্নান করা আর পূজার নৈবেদ্য দেওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না, কিন্তু আমি পেলুম কেবল বেলপাতা।
তবুও চতুর্দশী তিথি মাহাত্ম্যের গুনে সে পেল মহাফল, অথচ সে এব্যাপারে কিছুই জানত না। সকাল হতেই সে ফিরে গেল তার কুটিরে।
বেশ কিছুকাল পরে তার মৃত্যু হল, কখন যমদূত আর আমার দূতেরা ও তার কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাকে আমার কাছে আনা হবে না বেঁধে যমরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে এই
নিয়ে যমদূত দের সঙ্গে আমার দূত দের খুব ঝগড়া বাঁধলো। শেষে শিব দূতেরা যমদূত দের পরাস্ত করে ব্যাধকে আমার কাছে নিয়ে এলো। জম এই ব্যাপার সব জানতে পেরে আমার কাছে আসছিল,
পথে নন্দী কে দেখে ব্যাধের সারা জীবন ধরে কুকর্মের কথা বলল।
নন্দী ও যমকে ব্যাধের শিবরাত্রির ঘটনার কথা সমস্ত বলে আরও বলল যে,
সে শুধু কুকর্ম করেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই-সে মহা পাপী ও ছিল, কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের ফলে সে শিবলোক লাভ করেছে। যম সব শুনে সন্তুষ্ট হয়ে নিজের পুরীতে ফিরে গেল।
দেখলে পার্বতী, এই ব্রথের শক্তি কতটা?”সেই থেকে পৃথিবীতে এই ব্রতের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
শিবরাত্রি ব্রতের ফল- শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে মানুষের ধর্ম, অর্থ ,কাম ও মোক্ষএই চার রকম ফল লাভ হয়ে থাকে।।
<--- অর্ঘ্য --->
চন্দন, জল, পুষ্প, আতপ চাল, কুশ, তিল, দূর্বা, সরিসা, যব।
<--- পঞ্চামৃত বা মধুপর্ক --->
দধি, দুধ, ঘৃত, মধু, দেশী চিনি, একসঙ্গে মিশ্রিত করে মধুপর্ক তৈরি করা হয়।
----- মধুপর্ক শোধন মন্ত্র :-----
ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ।
মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।।
ওঁ মধু নক্ত সু তো ষ সো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ।
মধু দ্যৌ রস্তু নঃ পিতা।
ওঁ মধুমান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ
মাধ্বীগা ভবন্তু নঃ।।
ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু
_______ ________
----- অগ্নি জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ অগ্নিমিলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেব মৃত্বিজম্।
হোতারং রত্নধাতম্।।
----- দীপ জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ সুপ্রকাশো মহাদীপ সর্বতস্তি মীরাপহঃ
সবাহ্য অভ্যন্তর জ্যোতি দীপ হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম।
ইতি দীপ।।
-----ধূপ জ্বালাবার মন্ত্র :-----
ওঁ বনস্পতি রসো দিব্যো গন্ধাতোঃ সুমনোহরঃ
আঘ্ৰেয়ঃ সর্বদেবানং ধূপো হয়ং প্রতি গৃহ্যতাম।
ইতি ধূপ।।
_______ ________
<--- গোপীচন্দন শুদ্ধি এবং মৃত্তিকা শুদ্ধি --->
ওঁ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণক্রান্তে বসুন্ধরে।
মৃত্তিকা হরমে পাপং যন্ময়া দুস্কৃতং কৃতম।।
নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি।
স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
_______ ________
<--- আচমন --->
প্রথমে মুখে জলের তিনবার ছিটা দিয়ে ও মুখে হাত দিয়ে মুছে আচমন করিবে।
তারপর তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিত করে মুখ স্পর্শ করিবে।
বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা নাসিকা স্পর্শ করিবে।
বৃদ্ধাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা চক্ষুদ্বয় ও পরে কর্ণদ্বয় স্পর্শ করিবে।
বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করিবে।
হস্তদল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে।
সমস্ত অঙ্গুলীর দ্বারা মস্তক স্পর্শ করিবে।
অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা বাহুদ্বয় স্পর্শ করিবে।
এবং শুচি হইবে ।
-----[উপরোক্ত সমস্ত কাজটি বিষ্ণুস্মরণ করিতে করিতে করতে হবে]-----
----- বিষ্ণুস্মরণ মন্ত্র :-----
ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ
ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্
সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ
দিবীব চক্ষুরাততম্ ।।
• পরে হাত জোড় করে :-----
ওঁ শঙ্খ চক্র ধরং বিষ্ণু
দ্বিভূজং পীত বাসসম্।
নমঃ অপবিত্র পবিত্রো বা
সর্বাবস্থাং গতোহপি বা ।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং
স বাহ্য অভ্যন্তরঃ শুচিঃ
নমঃ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ ।
নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণী কারয়ে ।।
নমোঃ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি।
স্মরন্তি সাধবঃ সর্ব সর্বকার্যেষু মাধবঃ নমঃ শ্রী মাধবঃ॥
_______ ________
" বং এতেভ্য গন্ধাদিভ্য নমঃ " ( এই মন্ত্রে ৩ বার ফুল ও চন্দনে জলের ছিটা দাও )
<----- স্বস্তি বাচন ----->
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু।
ওঁ গণানাং ত্বা গণপতি হঁং হবামহে
ওঁ প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতি হঁং হবামহে
ওঁ নিধিনাং ত্বা নিধিপতি হঁং হবামহে। বসো মম॥
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি
<----- সুক্ত মন্ত্র ----->
ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং বিবষ্ট্বাসিচম্।
উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে॥
ওঁ অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু।
<----- আসন শুদ্ধি ----->
আসনের নিচে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া পরে একটি ফুল নিয়ে বলিবে :---
মন্ত্র:--- ওঁ হ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ
পরে আসনে একটি গন্ধ পুষ্প দিয়া বলিবে :---
মন্ত্র:--- 'ওঁ আসন মন্ত্রস্য মেরু পৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূৰ্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।'
'ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাঃ দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম ॥'
পরে হাত জোড়ে বামদিকে ঝুঁকে বলিবে :---
মন্ত্র:--- ওঁ গুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ
ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ ওঁ সশক্তি গুরুভ্যো নমঃ
ওঁ পরমেষ্টি গুরুভ্যো নমঃ
_______ ________
দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে বল:--- ওঁ গনেশায় নমঃ
মাথার ওপরে :--- ও ব্রহ্মণে নমঃ
নিচের দিকে :--- ওঁ অনন্তায় নমঃ
বুকের কাছে:--- ও নারায়ণায় নমঃ ওঁ সত্য নারায়ণায় নমঃ
<----- কর শুদ্ধি ----->
একটি রক্ত বর্ণ পুষ্প গ্রহণ করিয়া ওঁ মন্ত্রে কর দ্বারা পেষণ করিয়া "হে সৌ" মন্ত্রে ঐ পুষ্প ঈশান কোণে ফেলিবে ।
<----- করন্যাস ----->
আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ [ উভয়হস্তের তর্জ্জনী অঙ্গুলী দ্বারা উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করিবে]
ঈং তর্জ্জনীভ্যাং স্বাহা [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের তর্জ্জনী স্পর্শ করিবে]
উং মধ্যমাভ্যাং বষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের মধ্যমা স্পর্শ করিবে]
ঐং অনামিকাভ্যাং হূং [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের অনামিকা স্পর্শ করিবে]
ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ [ অঙ্গুষ্ঠদ্বারা উভয় হস্তের কনিষ্ঠা স্পর্শ করিবে]
অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্ [ তর্জ্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে করতল ধ্বনি করিবে]
<----- অঙ্গন্যাস ----->
আং হৃদয়ায় নমঃ। ঈং শিরসে স্বাহা।
উং শিখায়ৈ বষট্। ঐং কবচায় হূং।
ঔং নেত্রাভ্যাং বৌষট্। অঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যা মন্ত্রায় ফট্।
[ তর্জ্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হস্তের তলদেশে বেষ্টন করিয়া করতল ধ্বনি করিবে। ]
_______ ________
<----- পুষ্প শুদ্ধি ----->
পুষ্প পাত্রে হাত রেখে বল:---
মন্ত্র :--- ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্প সম্ভবে। পুষ্প চয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা॥
<----- ভূমি শুদ্ধি ----->
গন্ধ পুষ্প ভূমিতে ফেলিতে ফেলিতে বলিবে:-
মন্ত্র :--- ওঁ আঁধার শক্তয়ে নমঃ
ওঁ কূর্ম্মায় নমঃ
ওঁ অনন্তায় নমঃ
ওঁ পৃথিবৌ নমঃ
এবার ' ফট ' বলিয়া পাত্র ধুবে । পরে ত্রিকোণ মন্ডল আঁকিয়া তাম্র পাত্রটি রাখিবে । পাত্রটি রাখার পর ওঁ মন্ত্র বলিয়া পাত্রে জল দিবে । এবং ফুল দিয়ে মন্ত্র বলিতে বলিতে পূজা করিবে।
মন্ত্র :--- ওঁ মং বহির্মন্ডলায় দশ কলাত্মনে নমঃ
অং সূর্য মন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ
উং সোম মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ
---(উপরোক্ত পদ্ধতির দ্বারা কোষাকুশী শুদ্ধ করিতে হবে)---
<----- জল শুদ্ধি ----->
একটি ত্রিকোণ মণ্ডল আঁকিয়া তার উপর একটি চতুষ্কোণ আকিয়া কোষায় জল ভরিয়া ও চন্দনযুক্ত ফুল ও বিল্ব পত্র দিয়া অঙ্কুশ মুদ্রার দ্বারা জল স্পর্শ করিয়া বল :-
মন্ত্র :--- ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলে হস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।।
_______ ________
' ওঁ ' মন্ত্রে জলে গন্ধ পুষ্প দিয়া 'বং' মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দেখাইয়া মৎস মুদ্রা দ্বারা ঢাকিয়া নিজের " বীজ মন্ত্র " দশবার জপ করিবে।
জল শুদ্ধির পর ঐ জল বিল্বপত্র দ্বারা পূজোর
উপাচারে ও নিজের মাথায় ছিটাইবে ।
<----- ভূতাপসারণ ----->
এই মন্ত্র বলার সময় শ্বেত সরিষা অথবা আতপ চাল মাথার চারিদিকে ছড়াইবে।
মন্ত্র :--- ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতাঃ যে ভূতাঃ ভূমি সংস্থিতাঃ ।
যে ভূতা বিঘ্ন কর্তারস্তে নশ্যন্তু শিবজ্ঞয়া ।।
এবার মস্তকের উপর তিনবার "ফট" মন্ত্রে করতালি দিয়া
ভূত অপসারণ ও "তুড়ি" দিয়া দশদিক বন্ধন করিবে।
<----- ভূত শুদ্ধি ----->
নিজের চারিদিকে জলধারা দিয়া 'বং' মন্ত্র উচ্চারন করিয়া হাত জোড় হাত করে বল :-----
মন্ত্র :--- ওঁ মূল শৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্না পথেন জীব শিবং পরম শিব পদে যোজয়ামি স্বাহা। ওঁ যং লিঙ্গ শরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা। ওঁ রং সংকোচং শরীরং দহ দহ স্বাহা।
ওঁ পরম শিব সুষুম্না পথেন মূল শৃঙ্গাট মূল্ল সোল্লস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল হংস সোহহং স্বাহা।
<----- প্রাণায়াম ----->
ডান হাতের অঙ্গুষ্ট দ্বারা ডান নাক বন্ধ করে 'ওঁ নমঃ শিবায়' বা 'ওঁ' মন্ত্রে 'চার' বার জপ করিতে করিতে বা নাকে শ্বাস নিবে। তারপর ১৬ বার জব করতে করতে শ্বাস রুদ্ধ রাখবে। পরে ৮ বার জপ করতে করতে শ্বাস ত্যাগ করবে। এইরকম তিনবার করতে হবে।
_______ ________
<----- সুর্যার্ঘ্য ----->
কুশীর মধ্যে দূর্বা চন্দন পুষ্প জল বেলপাতা দু হাতে ধরে বলবে:---
মন্ত্র :--- ওঁ বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িতে।
ইদ্দমর্ঘং ওঁ নমো ভগবতে শ্রী সূর্যায় নমঃ।।
ওঁ এহি সূর্য্য সহস্রাংশে তেজোরাসে জগৎপতে। অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥
জল তাম্র পাত্রে ফেলে দিয়ে হাত জোড় করে বল :---
ওঁ জবা কুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম ।
ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।
<----- দ্বারদেবতা পূজা ----->
পুষ্প নিয়ে - " এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যোঃ নমঃ "
বলিয়া পুষ্প দ্বারে ফেলিবে। ---
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ব্রাহ্মণে নমঃ
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ
<----- পঞ্চ দেবতার পূজা ----->
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ গনেশায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সূর্যায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ বিষ্ণুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শিবায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ দূর্গায় নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ শ্রী গুরুবে নমঃ। ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্বদেব দেবীভ্যোঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ পিতৃ লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ সর্ব ঋষি লোকভৈঃ নমঃ ( তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও )
_______ ________
(প্রতি প্রহরে মৃত্তিকা দ্বারা নুতন নুতন মূর্তি তৈরি করে মূর্তিন্যাস করতে হবে -)
<----- মূর্তিন্যাস ----->
অঙ্গুষ্ঠ যোগে তর্জনী দ্বয়ে - নং তৎপুরুষায় নমঃ। কমন
অঙ্গুষ্ঠ যোগে মধ্যমা দ্বয়ে - মং অখোরায় নমঃ। দ্বিতীয়
অঙ্গুষ্ঠ যোগে কনিষ্ঠা দ্বয়ে - শিং সদ্যজাতায় নমঃ। চতুর্থ
অঙ্গুষ্ঠ যোগে অনামিকা দ্বয়ে - বাং বামদেবতায় নমঃ। তৃতীয়
তর্জনী যোগে অঙ্গুষ্ঠ দ্বয়ে - য়ং ঈশানায় নমঃ। প্রথম
<----- পূজার সংকল্প ----->
কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে।
ওঁ বিষ্ণুরোম্ তৎ সদ্ অদ্য ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাষ্করে কৃষ্ণপক্ষে শিব চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম শিবলোক প্রাপ্তি কামঃ যথা শক্ত্যু পচারনাং শিব পূজা
তদ্ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মাহং করিষ্যে।
<----- শিবের ধ্যান ----->
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং
রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসম।
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরা ভীতি হস্তং প্রসন্নম্। পদ্মাসীনং সমস্তাং স্তুত মমরগণৈ ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম।
বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্রম ত্রিনেত্রম্।।
_______ ________
------ [[[ প্রথম প্রহর ]]] ------
<----- শিব পূজা ----->
১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জল দাও)
২. ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজা জপ পরায়ণঃ ।
করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বরঃ।।
(তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে)
৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে জল দাও)
৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।। (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও)
৫. দুগ্ধ দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ---->
মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দুগ্ধং ওঁ ঈশানায় নমঃ।
ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।।
• এস গন্ধ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও)
• এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও)
• এস ধূপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও)
• এস দীপ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও)
• এস বস্ত্র ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা)
• এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও)
• এস চামর ওঁ নমঃ ওঁ ঈশানায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও)
<----- পুষ্পাঞ্জলি ----->
'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ ঈশানায় নমঃ।
(৩ বার)
<----- ভোগ নিবেদন ----->
ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও)
ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও)
এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ।
( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )--->
'' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও)
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ ________
------ [[[ দ্বিতীয় প্রহর ]]] ------
<----- শিব পূজা ----->
১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
২. ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপহরায় চ ৷
শিবরাত্রৌ দদমর্ঘ্যং প্রসীদ উমায় সহ ৷৷ (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে)
৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও)
৫. দধি দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ---->
মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং দধিং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ।।
ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।।
• এস গন্ধ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও)
• এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও)
• এস ধূপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও)
• এস দীপ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও)
• এস বস্ত্র ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা)
• এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও)
• এস চামর ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও)
<----- পুষ্পাঞ্জলি ----->
'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ অঘোরায় নমঃ।
(৩ বার)
<----- ভোগ নিবেদন ----->
ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও)
ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও)
এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ।
( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )--->
'' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও)
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ ________
------ [[[ তৃতীয় প্রহর ]]] ------
<----- শিব পূজা ----->
১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
২. ওঁ দুঃখ দারিদ্র্য শোকেন্ দগ্ধোহহং পার্বতী প্রিয়।
শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে)
৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও)
৫. ঘৃত দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ---->
মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ।।
ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।।
• এস গন্ধ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও)
• এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও)
• এস ধূপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও)
• এস দীপ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও)
• এস বস্ত্র ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা)
• এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও)
• এস চামর ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও)
<----- পুষ্পাঞ্জলি ----->
'এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ বাম দেবায় নমঃ।
(৩ বার)
<----- ভোগ নিবেদন ----->
ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও)
ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও)
এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ।
( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )--->
'' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও)
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ ______
------ [[[ চতুর্থ প্রহর ]]] ------
<----- শিব পূজা ----->
১. এতদ পাদ্যং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
২. ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্করঃ ।
শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।। (তাম্র পাত্রে অর্ঘ দিবে)
৩. ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
৪. এস মধুপর্ক ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ ৷৷ (তাম্র পাত্রে মধুপর্ক দাও)
৫. মধু দ্বারা স্নান করাইতে করাইতে বল ---->
মন্ত্র :--- ইদং স্নানীয়ং মধু ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ।।
ইদং স্নানীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।।
ওঁ সর্বায় ক্ষিতি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভবায় জল মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ রুদ্রায় অগ্নি মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ উগ্রায় বায়ু মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ভীমায় আকাশ মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ পশুপতয়ে যজমান মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ মহাদেবায় সোম মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ ইশানায় সূর্য মূর্তয়ে নমঃ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ওঁ নমঃ শিবায় ।।
• এস গন্ধ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে জলের ছিটা দাও)
• এতদ পুষ্পং ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (তাম্র পাত্রে পুষ্প দাও)
• এস ধূপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (ধূপ আরতির মতো দেখাও)
• এস দীপ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (দীপ আরতির মতো দেখাও)
• এস বস্ত্র ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (বস্ত্র আরতির মতো দেখা)
• এস জলশঙ্খ ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (জলশঙ্খ আরতির মতো দেখাও)
• এস চামর ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ। (চামর আরতির মতো দেখাও)
<----- পুষ্পাঞ্জলি ----->
এস সচন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ওঁ নমঃ সদ্য জাতায় নমঃ।
(৩ বার)
<----- ভোগ নিবেদন ----->
ওঁ বং এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর জলের ছিটা দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ এতস্মৈ সোপকরণান্নায় নমঃ (ভোগ থালার উপর পুষ্প দাও)
ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ আচমনীয়ং জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (তাম্র পাত্রে জল দাও)
ইদম্ পানার্থ জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ (গ্লাসে জল দাও)
এতে গন্ধ পুষ্পে এষ সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবেদ্য ওঁ সরস্বত্যৈঃ নমঃ (ফল মিষ্টি তে পুষ্প দাও)
এস সোপকরণ ফলং মিষ্টি নৈবিদ্যং পঞ্চ প্রাণে স্বাহা
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ ।
( বাম হাতটিকে গ্লাসের মতো করে অন্য হাতে কুশীতে জল নিয়ে নৈবিদ্যের থালার উপর দিতে হবে । তারপর ১০ বার জপ কর )--->
'' ইদম পুনরাচমনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । (তাম্র পাত্রে জল দাও)
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্ৰয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর॥
অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎ প্রসাদাত সমর্পিতং।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলক্যাধিপতে হর॥
যন্ময়াদ্য কৃতং পূণ্যাং তদ্রুদ্রস্য নিবেদিতং।
ত্বৎপ্রসাদ্যন্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতং॥
প্রসন্নো ভব মে শ্ৰীমন্ মদ্ভক্তিঃ প্রতিপাদ্যতাং ।
তদালোকেন মাত্রেণ পবিত্রোহষ্মি নঃ সংশয়ঃ৷৷
_______ _______
<----- শিবের ধ্যান ----->
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজত গিরিনিভ্যং
চারু চন্দ্রাবতং সম
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং
পরশু মৃগবরা ভীতিহস্তং প্রসন্নম্
পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈ
র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম ।
বিশ্বদ্যং বিশ্ববীজং
নিখিল ভয় হরং
পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্ ।।
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
<----- শিব প্রণাম মন্ত্র ----->
ওঁ নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ ।
নমস্তে দিব্য চাক্ষুষে ।
নমঃ পিনাক হস্তায় বজ্র হস্তায় বৈ নমঃ।
নমঃ ত্রিশুল হস্তায় দন্ড পাশাসি পানয়ে।
নমস্তৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।
নমো শিবায় শান্তায়
কারন ত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং
ত্বং গতি পরমেশ্বর।।
নমস্যে ত্বাং মহাদেব
লোকানাং গুরুমীশ্বরম
পুংসাম পূর্ণকামানাং
কাম পুরামরাঙ্খিপম
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায়
সর্ব্বপাপ হরায় চ ।
নমঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ শরনাগত দীনার্ত পবিত্রানায় পরায়নে
সর্ব্বস্মার্তে হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।
হরে দেবী নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ
_______ ________
-----[ শিবাষ্টক স্তোত্রম ]-----
প্রভু মীশ মণীশ মহেশ গুণং
গুণ হীন মহীশ গরলাভরণম্।
রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম।।
গিরিরাজ সুতান্বিত বামতনুং
তনু নিন্দিত রাজিত কোটিবিধুম্
বিধি বিষ্ণু শিরোধৃত পাদযুগং
প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্।।
শশলাঞ্ছিত রঞ্জিত সম্মুকুটং
কটি লম্বিত সুন্দর কৃত্তিপটং।
সুরশৈবালিনী কৃত পূত জটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।।
নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং
মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটি বিধুম্।
বিধুখন্ড বিখন্ডিত ভল তটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
বৃষ রাজ নিকেতন মাদি গুরুং
গরলাসন মাজি বিষান ধরম।
প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জন কং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
মকরধ্বজ মও মাতঙ্গ হরং
করিচম্মগ নাগ বিবোধকরম্।
বরমার্গণ শূল বিষান ধরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
জগদুদ্ভব পালন নাশকরং
ত্রিদিবেশ শিরোমণি ঘৃষ্টপদম্।
প্ৰিয়মানব সাধু জনৈক গতিং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
অনাথং সুদীনং বিভো বিশ্বনাথ
পুনর্জন্ম দুঃখাত পরিত্রাহি শম্ভো।
ভজতোহখিল দুঃখ সমূহহরং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম৷৷
ইতি শিবাষ্টকং স্তোত্রম সম্পূর্ণম্ ।।
_______ ________
-----[ শিবরাত্রি ব্রতকথা ]-----
কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন।
গৌরীসহ বসিয়া করেন আলাপন।।
ফল পুষ্পে সুশোভিত পর্বত কৈলাস।
যক্ষ রক্ষঃ গন্ধর্বগণের নিত্য বাস।।
রবির কিরণ পড়ি শিখরে তাহার।
মলিন করিয়া দেয় বরন সোনার।।
আনন্দে পার্ব্বতি সতী জিজ্ঞাসেন শিবে।
কহ দেব! কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভবে।।
কিবা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন্ তপস্যায়।
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ হয়।।
এরূপ কি পূণ্য কর্ম আছে সুবিদিত।
জাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।।
মর্ত্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরা তলে।
অনায়াসে পারে বল কি কর্ম্ম করিলে।।
শুনিয়া পার্ব্বতি বাক্য কহেন শঙ্কর।
শুন দেবী! কোন কর্ম্ম মম প্রীতিকর।।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দ্দশী।
শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকার নিশি।।
প্রাণী হিংসা পরায়ণ ব্যাধ একজন।
ভীষণ, আকৃতি তার ক্রুর আচরণ।।
কৃষ্ণবর্ণ দেহ তার পিঙ্গল নয়ন।
জাল বাগুরা হস্তে করয়ে ভ্রমণ।।
বনে বনে ভ্রমী করে প্রাণী বধ কত।
নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।।
একদিন মাংস ভার করিয়া বহন।
গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।।
বহুদূর বন পথ ব্যাধ পরিশ্রান্ত।
বৃক্ষ মূলে শয়ন করিল হয়ে ক্লান্ত।।
ক্রমে ক্রমে সূর্যদেব অস্তা চলে যান।
হেন কালে নিদ্রিত ব্যাধের হল জ্ঞান।।
চতুর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন।
চিন্তিত হইয়া ব্যাধ করিল মনন।।
আজ গৃহে যাইব না এই রাত্রি কাল।
বৃক্ষতে করিব বাস হউক সকাল।।
লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া।
মাংস ভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।।
হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর।
উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভর।।
ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যাধ অতিশয়।
অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।।
শীতেতে কাঁপিতে ছিল শরীর তাহার।
সর্বাঙ্গে পড়িতে ছিল নিশার তুষার।।
দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষ মূলে।
স্থাপন করিয়াছিল কেহ কোন কালে।।
সেই দিন শিবরাত্রি দৈবের ঘটনা।
উপবাসী ব্যাধ তার অন্নের ভাবনা।।
তাহার শরীর হতে হিম বিন্দু যত।
বৃক্ষ মূলে শিবলিঙ্গে পড়ে অবিরত।।
সেই বৃক্ষ বিল্ববৃক্ষ নামে সুবিখ্যাত।
যাহার পত্রেতে শম্ভু হল সদা প্রীত।।
ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্ব দল।
শিবের মস্তকে পড়িতে ছিল অবিরল।।
ব্যাধের সে আচরণে দেব আশুতোষ।
মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।।
এইভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল।
ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।।
বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল।
রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।।
মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে।
অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্ট মনে।।
এই ভাবে তাহার পারন সিদ্ধ হল।
শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।।
আয়ূ শেষ হল তার বহুকাল পরে।
যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।।
যমদূত রজ্জু দ্বারা বাঁধিতে উদ্যত।
হেন কালে পৌঁছে দূত শিবের নিযুক্ত।।
শিবদূত বলে যমদূত যাও দূরে।
ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।।
যমদূত বলে এই ব্যাধ পাপী অতি।
না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।।
যমপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি।
যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।।
এই রূপে উভয়ের বিবাদ হইল।
শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।।
পরাজিত হয়ে যমদূত যায় ঘরে।
এই বার্তা প্রকাশিল যমের গোচরে।।
উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন।
বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্নন।।
শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপাচারী।
শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।।
আজীবন কেহ যদি পাপ কর্ম করে।
শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।।
মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর।
নাহি ভয় করি আমি শিবের কিঙ্কর।।
যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে।
গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।।
ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন।
ভক্তিভাবে করিবে আমার আরাধন।।
সদাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি।
ব্রতের বিধান দেবী! শুনহ সম্প্রতি।।
পূর্বদিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন।
নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।।
রাত্রিতে তৃণের শর্য্যা নির্মাণ করিবে।
তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।।
প্রাতঃকালে সত্ত্বর করিয়া গাত্রোত্থান।
নদী কিম্বা সরোবর জলে করি স্নান।।
বিল্ববৃক্ষে মূলে গিয়া প্রণাম করিবে।
অবশ্যক পত্র সংগ্রহ করিবে।।
একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই।
মনি মুক্তা স্বর্ণ রত্ন প্রবাল না চাই।।
রাত্রিতে হইয়া শুচি যে পূজে আমারে।
সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।।
পার্থিব শংঙ্কর মূর্তি করিয়া নির্মাণ।
প্রথম প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।।
দ্বিতীয় প্রহরে দধি তৃতীয়তে ঘৃত।
চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানেতে বিহিত।।
পূজা শেষে যথা বিধি নৃত্য গীত করি।
তুষিবে আমারে নর শুনহ শংঙ্করী।।
পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচি ব্রত।
করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।।
এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে।
অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।।
কঠোর তপস্যা আর দান যজ্ঞ যত।
কোন কর্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।।
এই ব্রত আচরণে লভিয়া বাঞ্ছিত।
অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।।
ব্রতের মাহাত্ম্য এবে হরহ শ্রবন।
পুণ্য লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।।
পৃথিবীতে বারানসী সর্ব্ব তীর্থ সার।
যেখানে গমনে খন্ডে কলুষ অপার।।
ব্যাধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি।
নির্দিষ্ট হইল তার কৈলাস বসতি।।
শুনিয়া পার্ব্বতি দেবী ব্রত বিবরণ।
আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণন।।
তাহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত।
এই রূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।।
যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে।
সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।।
আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত।
অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।।
গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে।
শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা শুনে যেই জন।
অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।।
মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি।
শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।।
শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্ত হইল।
ভক্তিভরে সবে এবে শিব শিব বল।।
_______ ________
<----- [[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম ]] ----->
কৈলাস শিখরে বসি দেব ত্রিলোচন ।
গৌরী সহ করে নানা কথোপকথন ।।
মৃদুমন্দ বাতাস বহে সেথা ধীরি ধীরি ।
ফুলের সৌগন্ধ কিবা আহা মরি মরি ।।
সুন্দর জোছনারাশি মধুর যামিনী ।
চন্দ্রের কিরণ ছটা বিকাশে অবণী ৷৷
মহানন্দে হৈমবতী কহে পঞ্চাননে ।
কহ প্রভু কৃপা করে দাসীরে এক্ষণে ৷৷
বড় সাধ হয় মনে দেব প্রাণপতি ।
তোমার নামের সংখ্যা শুনি বিশ্বপতি ।।
আশুতোষ পরিতোষ হয়ে মোর প্রতি ।
সে সাধ পুরাও মম ওহে পশুপতি ।।
শুনিয়া দেবীর বাণী কহে মহেশ্বর ।
কি ইচ্ছা হয়েছে বল আমার গোচর ।।
শুনিয়া হরের কথা কহেন পার্ব্বতী ।
শুনিবারে সাধমম হয়েছে বিভুতি ।।
তোমার নামের সংখ্যা কহ ত্রিলোচন ।
তব মুখামৃত বাণী শুনি অনুক্ষণ ।।
এতেক শুনিয়া কহে ভোলা মহেশ্বর ।
শুন দেবী মোর নাম কহি অতঃপর ।।
সেইসব নাম আমি করিব কীর্ত্তন ।
শ্রবন পাঠেতে মুক্ত হবে জীবগন ।।
নাহি সংখ্যা মম নাম না যায় বর্ণন ।
সংক্ষেপেতে বলি যাহা করহ শ্রবণ ।।
যেই নাম ধ্যানে জীব পায় দিব্য গতি ।
সেইসব নাম তবে কহি শুন সতী ।।
মম মুর্ত্তি ধরা তলে কেহ না দেখিবে ।
পাষাণে নির্ম্মিত লিঙ্গ দর্শন পাবে ।।
ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মোর ভিন্ন ভিন্ন নামে ।
সকলের বরণীয় হয় ধরাধামে ।।
অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা । ১
মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।। ২
জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি । ৩
দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।। ৪
মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী। ৫
গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ॥ ৬
ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি । ৭
ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী ।। ৮
জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ । ৯
রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।। ১০
নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু । ১১
ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।। ১২
তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন । ১৩
পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ॥১৪
রজত বরণ বলি নাম গিরিবর । ১৫
নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।। ১৬
যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।১৭
বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।১৮
সূর্য্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর।১৯
চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।২০
মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা । ২১
বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্ৰাতা ॥ ২২
বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ । ২৩
শুক্রাচার্য্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।২৪
শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার।২৫
রাহুকেতু নাম রাখে সর্ব্ববিঘ্ন হর ।।২৬
মৃত্যুঞ্জয় নাম মম মৃত্যু জয় করি ।২৭
ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ॥২৮
কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ । ২৯
বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।৩০
শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন । ৩১
ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।৩২
পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।৩৩
ভৃগু মুনি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।৩৪
ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ । ৩৫
ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।৩৬
মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।৩৭
বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।৩৮
শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।৩৯
বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।৪০
জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি।৪১
বিজয়া রাখিল নাম অনাথের গতি।।৪২
তালবেতাল নাম রাখে সর্ব্ব বিঘ্নহর । ৪৩
মার্কন্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।। ৪৪
শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।৪৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্ম পরাৎপর ।।৪৬
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিল তারণ । ৪৭
চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।৪৮
সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী । ৪৯
আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।৫০
বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।৫১
রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।৫২
ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ । ৫৩
দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।৫৪
বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।৫৫
গন্ধর্বেরা নাম রাখে গন্ধর্ব ঈশ্বর ।।৫৬
অঙ্গিরা রাখিল নাম পাপতাপহারী ।৫৭
দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।৫৮
ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান নাম বাঘাম্বর ।৫৯
বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।৬০
কৃত্তিবাস নাম রাখে কত্যায়নী ।৬১
ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুণি ।।৬২
সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দ্দন ।৬৩
আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।৬৪
রতিপতি নাম রাখে মদন দহন ।৬৫
দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।৬৬
জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।৬৭
বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।৬৮
পৌলস্ত্য রাখিল নাম ভবভয়হারী।৬৯
গৌতম রাখিল নাম জন মনোহারী ।।৭০
ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর।৭১
বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘন্টেশ্বর ।।৭২
মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্ব্বপাপহর।৭৩
জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।৭৪
কুরুক্ষেত্র রণস্থলে পামবরদ্বারী ।৭৫
ঋষীগণ নাম রাখে মুণি মনোহারী ।।৭৬
ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।৭৭
ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।৭৮
উদ্দালক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।৭৯
অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংঙ্কর ।।৮০
দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর । ৮১
সেতু বন্ধে হয় নাম মোর রামেশ্বর ।।৮২
হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।৮৩
ভরত রাখিল নাম উমা মহেশ্বর ।।৮৪
জলধর নাম রাখে করুণা সাগর ।৮৫
মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।৮৬
ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।৮৭
চাঁদ সদাগর নাম রাখে হয়গ্রীব ।।৮৮
জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।৮৯
ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।৯০
দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।৯১
দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।৯২
দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।৯৩
বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।৯৪
কালীঘাটে সিদ্ধপাটে নকুল ঈশ্বর ।৯৫
পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।৯৬
গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।৯৭
মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।৯৮
কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।৯৯
ওঁ কার আমার নাম রাখে সান্দীপনি ।।১০০
ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।১০১
শ্বেত ভুধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।১০২
বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।১০৩
মহালক্ষী রাখে নাম অশিব নাশন ।।১০৪
অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ । ১০৫
গঙ্গাজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।১০৬
ভাঙ্গড়ভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ । ১০৭
বুড়াশিব বলি খ্যাত এই তিন ভুবন ।।১০৮
হর হর ব্যোম বলি যে ডাকে আমারে।
পরিতুষ্ট হয় সদা তাহার উপরে।।
অসংখ্য আমার নাম না হয় বর্ণন।
অষ্টোত্তর শতনাম করিনু কীর্ত্তন।।
মনেতে যে ভক্তি করি করয়ে পঠন।
রোগ শোক নাহি হয় তাহার ভবন।।
নির্ব্ব্যাধি হইয়া সে দীর্ঘজীবী হয়।
শিব বরে সেই জন মুক্তি পদ পায়।।
নামের মাহাত্ম্য আমি করিনু বর্ণন।
মম নাম মম ধ্যান করো সর্বজন।।
ইহকালে সুখে রবে মরত ভুবনে।
অন্তঃকালে হবে গতি কৈলাস ভবনে।।
[ শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্ত ]
_______ _________
<----- মধুসুক্ত ----->
ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ।
মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।
ওঁ মধুনক্ত সুতোষসো। মধু মৎ পার্থিবং রজঃ
মধু দৌ রস্তু নঃ পিতা।
ওঁ মধু মান্নো বনস্পতি স্মধুমান অন্তু সূর্যঃ। মাধ্বীগাব ভবন্তু নঃ
ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ।।
<----- শান্তি মন্ত্র পাঠ ----->
একটি পাত্রে সামান্য জল নিয়ে তাহাতে চন্দন পুষ্প বেলপাতা দিয়ে জলের ছিটা দিতে দিতে পাঠ কর।
ওঁ স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ।
স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নঃ স্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমী।
স্বস্তি নঃ বৃহস্পতি দধাতু।।
দৌঃ শান্তিঃ হি অন্তরীক্ষ শান্তি হিঃ
পৃথিবী শান্তি হি অপ শান্তি হি
ঔষধয় শান্তি হি বনস্পতয় শান্তি হিঃ
বিশ্বদেবা শান্তি হিঃ শান্তিরেব শান্তি হিঃ
ওঁ শান্তি রস্তু শিবাঞ্চাস্তু বিনশ্যত্য শুভঞ্চ যৎ যতঃ।
এবা গতং পাপং তত্রৈব প্রতি গচ্ছতু।
ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি
<----- বিসর্জন ----->
নমঃ মহাদেব ক্ষমস্ব বলিয়া কিঞ্চিৎ জল দিয়া
উত্তর শিয়রে শোয়াইয়া দিবেন, সংহার মুদ্রায়
একটি পুষ্প নিয়ে আঘ্রাণ করিতে করিতে ঐ দেবতা
নিজের হৃদয়ে প্রবেশ করিলেন ভাবিয়া পুষ্পটি
ফেলিয়া দিয়া হাত ধুইয়া ঈশান কোণে
ত্রিকোণ মন্ডল করিয়া নির্ম্মাল্য লইয়া নমঃ
চন্ডেশ্বরায় নমঃ মন্ত্রে মন্ডলের মধ্যে দিবেন।।
<----- দক্ষিণাবাক্য ----->
এতস্মৈ কাঞ্চন মূল্যায় নমঃ (৩ বার)
এতৎ অধিপতয়ে শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ।
এতৎ সম্প্রদানায় ব্রাহ্মণায় নমঃ। (হাত জোড় করে বলিবে)
<----- সাঙ্গতার্থ সংকল্প ----->
কোষাকুশীতে হরতকি ফুল চন্দন দুর্গা ধান যব আতপ চাল নিয়ে উত্তর অথবা পূর্ব দিক কোণে ধারণ করে বলতে হবে—-
ওঁ বিষ্ণুরো তৎ সৎ ফাল্গুন মাসি কুম্ভ রাশিস্থ ভাস্করে কৃষ্ণ পক্ষে চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ __ গোত্র __ নাম কৃতৈ তৎ শ্রী শিব দেবতয়া প্রীতি কাম শিব পূজা তদ ব্রতকথা পাঠ জাগরনোপবাস কর্ম্মন্ সাঙ্গতার্থং যদ্ বৈগুন্যং জাতং তোদ্দোষ প্রশমনায় বিষ্ণু স্মরণ মনন করিষ্যে।
ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম।
ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ।।
• ওঁ অজ্ঞানাদ যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু যৎ স্মরনা
দেব তদ বিষ্ণু সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতি ।
• ওঁ যদ সাঙ্গং কৃতং কর্ম জানতা বাপ্য জানতা সাঙ্গং ভবতু তৎ সৰ্ব্বং হরে নামানু কীৰ্তনাৎ।
______ ________
ডান হাতের তালুতে জল নিয়ে ---
ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি ওঁ শ্রী হরি
ওঁ প্রিয়তাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব্বযজ্ঞেশ্বরো হরি
তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্টং
প্রীনিতে প্রীনিতং জগৎ এতৎ কর্ম শ্রী কৃষ্ণায়াপিত মস্তু।
( জল মাটিতে ফেলে দাও )
<----- প্রণাম ----->
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর॥
( ঘণ্টা ধ্বনি. শঙ্খ ধ্বনি. উলু ধ্বনি. দিবে )
<----- পারন মন্ত্র ----->
এই মন্ত্র বলিয়া পারন জল পান করিবে ---->
ওঁ সংসার ক্লেশ দগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর।
প্রসীদ সুমুখো নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদোভব।।
পরদিন সকালে পারন করার পর ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া
নিজে ভোজন করিবে।
_______ ________
--- {ফর্দমালা} ---
সিদ্ধি, তিল হরিতকী, পঞ্চ শস্য, আসনাঙ্গুরীয়, ঘী, মধু, ধূপ, ধুনা, তুলা, কর্পূর, প্রদীপ, পিলসুজ, দুধ, দই, চিনি, ফুল, বেলপাতা, ধুতরা, আকন্দ, নৈবেদ্য (কমপক্ষে পাঁচ রকমের ফল এবং মিষ্টি), গঙ্গা জল, কুশ, আতপ চাল, চন্দন ।
ভগবান শ্রীগণেশের চতুর্থীতে শ্রীগণেশের ১০৮ নাম কীর্তন করেন, তাঁর সর্বমনোবাঞ্ছা ভগবানের কৃপায় পূর্ণ হয়।
১. গণদক্ষ- গণ বা সকল মানুষের প্রধান যিনি
২. গণপতি- সকল গণের নেতা
৩. গৌরীসূত- মা গৌরীর পুত্র
৪. লম্বকর্ণ- বড় কর্ণযুক্ত দেবতা যিনি
৫. লম্বোদর- বড় পেট আছে যাঁর
৬. মহাবল- অত্যন্ত শক্তিশালী যিনি
৭. মহা গণপতি- দেবাদিদেব
৮. মহেশ্বর- সমগ্র মহাবিশ্বের প্রভু
৯. মঙ্গলমূর্তি- সকল শুভ কাজের প্রভু
১০. মূষকবাহন- যাঁর বাহন এক মূষক বা ইঁদুর
১১. বালগণপতি- প্রিয়তম সন্তান
১২. ভালচন্দ্র- যাঁর মাথায় চাঁদ আছে
১৩. বুদ্ধিনাথ- জ্ঞানের প্রভু যিনি
১৪. ধূম্রবর্ণ- ধুম্রের মতো রঙ যাঁর
১৫. একক্ষর- একক অক্ষরযুক্ত যিনি
১৬. একদন্ত- এক দন্তযুক্ত যিনি
১৭. গজকর্ণ- গজের মতো কর্ণযুক্ত যিনি
১৮. গজানন- গজের ন্যায় আনন যে দেবতার
১৯. গজবক্র- গজের ন্যায় বক্রযুক্ত কাণ্ড যাঁর
২০. গজবক্ত্র- গজের ন্যায় মুখ আছে যাঁর
২১. দেবদেব- সমস্ত ঈশ্বরের মধ্যে অন্যতম যিনি
২২. দেবান্তক নাশকারী- মন্দ এবং অসুরদের ধ্বংসকারী যিনি
২৩. দেবব্রত - যিনি সকলের তপস্যা গ্রহণ করেন
২৪. দেবেন্দ্রশিক- সমস্ত দেবতাদের রক্ষক যিনি
২৫. ধার্মিক- ধর্মপথে কর্তব্য রেন যে দেবতা
২৬. দুর্জয়- অপরাজিত দেব যিনি
২৭. দ্বৈমাতুর- দুই মায়ের সন্তান যিনি; দেবী পার্বতী ছাড়াও দেবী গঙ্গাকে নানা পুরাণ গণেশের মায়ের স্থান প্রদান করেছে
২৮. একদংষ্ট্র- এক দন্তযুক্ত যিনি
২৯. ঈশানপুত্র- ভগবান শিবের পুত্র যিনি
৩০. গদাধর- গদা অস্ত্র যাঁর
৩১. অমিত- অতুলনীয় প্রভু যিনি
৩২. অনন্তচিদারুপম- অসীম এবং স্বতন্ত্র চেতনা সহ দেবতা
৩৩. অবনীশ- সমগ্র বিশ্বের প্রভু যিনি
৩৪. অবিঘ্ন- বাধা বিঘ্ন অতিক্রমকারী
৩৫. ভীম- বিশালকায় যিনি
৩৬. ভূপতি- পৃথিবীর প্রভু
৩৭. ভুবনপতি- দেবতাদের ঈশ্বর
৩৮. বুদ্ধিপ্রিয়- জ্ঞান দানকারী
৩৯. বুদ্ধিবিধাতা- জ্ঞানের প্রভু
৪০. চতুর্ভুজ- চারটি বাহু যাঁর
৪১. নিধিশ্বরম- সম্পদ এবং তহবিল দাতা
৪২. প্রথমেশ্বর- সর্বপ্রথম দেবতা
৪৩. শুভকর্ণ- বড় কর্ণযুক্ত ঈশ্বর
৪৪. শুভম- সকল শুভ কাজের ঈশ্বর
৪৫. সিদ্ধিদাতা- ইচ্ছা পূর্ণ এবং সুযোগ প্রদান করেন যে প্রভু
৪৬. সিদ্ধিবিনায়ক- সফলতা প্রদান করেন যিনি
৪৭. সুরেশ্বরম- দেবতাদের প্রভু
৪৮. বক্রতুন্ড- একটি বাঁকা শুণ্ড রয়েছে যাঁর
৪৯. অখুরথ- ইঁদুর সারথি যার
৫০. অলম্পতা- অনন্ত দেব
৫১. ক্ষিপ্র- উপাসনার যোগ্য
৫২. মনোময়- হৃদয়জয়ী
৫৩. মৃত্যুঞ্জয়- যিনি মৃত্যুকে পরাজিত করেন
৫৪. মুধকারম- যিনি সুখের মধ্যে থাকেন
৫৫. মুক্তিদায়ী- অনন্ত সুখের দাতা
৫৬. নাদপ্রতিষ্ঠা- যিনি নাদব্রহ্ম প্রতিষ্ঠা করেন
৫৭. নমস্তেতু- সকল অনিষ্টের বিজয়ী
৫৮. নন্দন- ভগবান শিবের পুত্র
৫৯. সিদ্ধন্ত- সাফল্য ও অর্জনের গুরু
৬০. পীতাম্বর - যিনি হলুদ কাপড় পরেন
৬১. গণাধিক্ষণ- সকল সংস্থার প্রভু
৬২. গুণিন- সমস্ত গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত
৬৩. হরিদ্রা- সোনার রঙ যাঁর
৬৪. হেরম্ব- মায়ের প্রিয় পুত্র
৬৫. কপিল- হলুদ এবং বাদামী রঙ যাঁর
৬৬. কবীশ- কবিদের প্রভু
৬৭. কীর্তি- খ্যাতির প্রভু
৬৮. কৃপাকর- যিনি দয়ালু
৬৯. কৃষ্ণপিঙ্গল- হলুদ-বাদামী চোখ যাঁর
৭০. ক্ষেমঙ্করী- যিনি ক্ষমা করেন
৭১. বরদবিনায়ক- সফলতার প্রভু
৭২. বীরগণপতি- বীর প্রভু
৭৩. বিদ্যাবিধি- জ্ঞানের ঈশ্বর
৭৪. বিঘ্নহর- বাধা দূর করেন যিনি
৭৫. বিঘ্নহর্তা- বিঘ্ন দূর করেন যিনি
৭৬. বিঘ্নবিনাশন- বিঘ্ন বিনাশ করেন যিনি
৭৭. বিঘ্নরাজ- সকল বাধার প্রভু
৭৮. বিঘ্নরাজেন্দ্র- সকল বাধার অধিকারী
৭৯. বিঘ্নবিনাশয়- বাধা ধ্বংসকারী
৮০. বিঘ্নেশ্বর- প্রতিবন্ধকতার প্রভু
৮১. শ্বেত- যিনি শ্বেত রঙের রূপে বিশুদ্ধ
৮২. সিদ্ধিপ্রিয়- যিনি ইচ্ছা পূরণ করেন
৮৩. স্কন্দপূর্বজ - ভগবান কার্তিকের ভাই
৮৪. সুমুখ- শুভ মুখ যাঁর
৮৫. স্বরূপ- সৌন্দর্যের প্রেমিক
৮৬. তরুঁ- যাঁর বয়স অচঞ্চল
৮৭. উদ্দণ্ড- চঞ্চল
৮৮. উমাপুত্র- পার্বতীর পুত্র
৮৯. বরগণপতি- সুযোগের প্রভু
৯০. বরপ্রদ- ইচ্ছা এবং সুযোগ দানের প্রভু
৯১. প্রমোদ- আনন্দ
৯২. পুরুষ- বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব
৯৩. রক্ত- লাল শরীর যাঁর এমন প্রভু
৯৪. রুদ্রপ্রিয়- ভগবান শিবের প্রিয়
৯৫. সর্বদেবতমান- সমস্ত স্বর্গীয় দেবতার নৈবেদ্য গ্রহণকারী
৯৬. সর্বসিদ্ধান্ত- দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা প্রদানকারী
৯৭. সর্বাত্মন- মহাবিশ্বের রক্ষক
৯৮. ওঙ্কার- ওম আকৃতিযুক্ত
৯৯. শশীবর্ণম- যাঁর রঙ চন্দ্রের ন্যায় সুন্দর
১০০. শুভগুণকানন- যিনি সকল গুণের কর্তা
১০১. যোগাধীপ- ধ্যানের প্রভু
১০২. যশস্বিন- সব চেয়ে প্রিয় এবং জনপ্রিয় ঈশ্বর
১০৩. যশস্কর- খ্যাতি ও ভাগ্যের প্রভু
১০৪. যজ্ঞকায়- যিনি সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করেন
১০৫. বিশ্বরাজ- সংসারের স্বামী
১০৬. বিকট- অত্যন্ত বিশাল
১০৭. বিনায়ক- সকলের প্রভু
১০৮. বিশ্বমুখ- মহাবিশ্বের গুরু
সারা বছর জুড়েই শুক্লপক্ষের এবং কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে উদযাপিত হয় সিদ্ধিদাতা গজাননকে প্রসন্ন করার জন্য সঙ্কষ্টী চতুর্থী এবং অন্য চতুর্থী ব্রত। গণেশের একেকটি নাম অনুসারে সেই সব চতুর্থী ব্রত পরিচিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথির মাহাত্ম্য সর্বাধিক; বলা হয় যে যিনি এই চতুর্থীতে শ্রীগণেশের ১০৮ নাম কীর্তন করেন, তাঁর সর্বমনোবাঞ্ছা ভগবানের কৃপায় পূর্ণ হয়।
শিব ও পার্বতী পুত্র শ্রীগণেশের স্থান সর্ব্ব দেবদেবীর মধ্যে অন্যতম। তিনি বিঘ্নহর্তা, সুখকর্তা, সিদ্ধিদাতা। সব দেব দেবীর পূজায় সর্বপ্রথম করা হয় গণেশ বন্দনা। শ্রীগণেশ পুরাণে বর্ণিত আছে ভগবান গণেশের দ্বাদশ নাম স্তোত্র ।স্তোত্র পাঠ যেকোন দিনই শুভ তবে সংকষ্ট চতুর্থী (কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি) এবং বিনায়ক চতুর্থীতে (শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি) গণেশ পূজা ও আরাধনার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।
গনেশের মূল 12টি নাম:- সুমুখ, একদন্ত, কপিল, গজকর্ণ, লম্বোদর, বিকট, বিঘ্ননাশক, বিনায়ক, ধূম্রকেতু, গণাধ্যক্ষ, ভালচন্দ্র তথা গজানন।
শ্রীগণেশ দ্বাদশনামস্তোত্রম্ সুমুখশ্চৈকদন্তশ্চ কপিলো গজকর্ণকঃ।
লম্বোদরশ্চ বিকটো বিঘ্ননাশো গণাধিপঃ।।
ধূম্রকেতুর্গণাধ্যক্ষো ভালচন্দ্রো গজাননঃ।
দ্বাদশৈতানি নামানি যঃ পঠেৎ শৃণুয়াদপি।।
বিদ্যারম্ভে বিবাহে চ প্রবেশে নির্গমে তথা।
সংগ্রামে সঙ্কটে চৈব বিঘ্নস্তস্য ন জায়তে।।
ইতি শ্রীগণেশপুরাণে শ্রীগণেশ দ্বাদশনামস্তোত্রং সমাপ্তম্ ।
ভগবান শ্রীগণেশের এই বারোটি নামের অর্থ –
সুমুখ – সুন্দর মুখ যাহার
একদন্ত – এক দাঁত যাহার
কপিল – বাদামী রঙের
গজকর্ণক – গজ বা হাতীর মতো কান
লম্বোদর – লম্বা উদর বা পেট যাহার
বিকট – যিনি বিশাল দেখতে
বিঘ্ননাশ – যিনি বাধা – বিপত্তি দূর করেন
গণাধিপ – গনদের অধিপ বা রাজা
ধূম্রকেতু – ধূম্রবর্ণের বা ধোঁয়াটে রঙের
গনাধক্ষ্য – গনদের অধ্যক্ষ বা নেতা
ভালচন্দ্র – যিনি ভালে বা কপালে চন্দ্র ধারণ করেন
ফলশ্রুতি
দ্বাদশৈতানি নামানি যঃ পঠেৎ শৃণুয়াদপি।।
বিদ্যারম্ভে বিবাহে চ প্রবেশে নির্গমে তথা।
সংগ্রামে সঙ্কটে চৈব বিঘ্নস্তস্য ন জায়তে।।
ইতি শ্রীগণেশপুরাণে শ্রীগণেশ দ্বাদশনামস্তোত্রং সমাপ্তম্ ।
ভগবান শ্রীগণেশের এই দ্বাদশ নাম স্তোত্র যিনি বিদ্যা আরম্ভে, বিবাহে,কোথাও প্রবেশকালে, প্রস্থানে, যুদ্ধে বা বিপদ সময়ে পাঠ করেন তিনি কোন বিঘ্নের সন্মুখীন হন না ।
শ্রীগণেশ পুরাণে বর্ণিত গণেশ দ্বাদশ নাম স্তোত্র সমাপ্ত ।
শ্রীগনেশ কে বা তিনি কার অবতার ছিলেন? “গণেশ্চ স্বয়ং কৃষ্ণকলোদ্ভব” কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ গনেশ অবতার হলেন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, গোলকের অধীশ্বর কৃষ্ণের মনোহররূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী অনুরূপ একটি পুত্রকামনা করেন।তাই পার্বতী শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যজ্ঞ করেন তখন পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ মাতা পার্বতীকে তার ইচ্ছাপূরণের বর দেন। শিবপুরান মতে—মাতা পার্বতী দেহে হলুদ মাখার পর সেই হলুদ পার্বতী দেহের উপরিভাগ থেকে বের করে এক স্থানে রাখেন এবং সেই সমস্ত হলুদ দিয়ে একটি ছোট্ট শিশু রুপী পুতুল তৈরি করেন এবং পালঙ্কে সেই পুতুলকে রেখে তিনিও পাশে শয়ন করে মনে মনে পুত্র কামনা করতে করতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরে মাতা পার্বতীর নিদ্রা ভাঙ্গার পর তিনি দেখেন যে তার নির্মিত পুতুলে শ্রীকৃষ্ণের বর প্রভাবে প্রান সঞ্চারের ফলে ( শ্রীকৃষ্ণ শিশুর বেশে পালঙ্কে আবির্ভূত হন) —- পালঙ্কে ‘শতচন্দ্রসমপ্রভম্’ এক শিশুকে শয্যায় দেখতে পেয়ে আনন্দিত হন - এইভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বর প্রভাবে ভগবান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অংশাবতারের মাধ্যমে মাতা পার্বতীর সন্তান গণেশ রূপে আবির্ভূত হন।। এরপর দেবতা ও ঋষিগণ কুমারকে দেখতে শিবের ভবনে আসেন এবং আশির্বাদ করেন। তাদের মধ্যে- লক্ষীদেবী আশীবাদ করেন- "তব এই পুত্র কৃষ্ণ তুল্য হবে-,ধার্ম্মিক শ্রেষ্ঠ পুত্র হবে " পার্বতী মিষ্টবচনে নিজের পুত্র গণেশকে বর দেন যে, তার এই পুত্র শিবের মত যোগী হবেন। অন্যান্য দেবতাদের মত আসেন শনি দেবও । শনি নিজের কুদৃষ্টির কথা পার্বতীকে জানান। পার্বতী তবু তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি কুমারকে দেখতে সম্মত হন। কিন্তু শনি সভয়ে বাঁ-চোখের কোণ দিয়ে কুমারকে দৃষ্টি প্রদান করার পর- পরবর্তীতে ভগবান শিবের সঙ্গে যুদ্ধে গণেশের মস্তক ছিন্ন হয়ে গোলকে কৃষ্ণের দেহে গিয়ে মেশে। পার্বতী শোকে কাতর হয়ে পড়েন। তখন বিষ্ণু গরুড়ে আরোহণ করে পুষ্পভদ্রা নদীর তীরে এসে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে থাকা এক হাতিকে দেখেন। তার মস্তক ছিন্ন করলে হস্তিনী ও তার শাবকেরা কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন।তখন বিষ্ণু ঐ মুণ্ডটি থেকে দুটি মুণ্ড তৈরি করে একটি হাতির স্কন্ধে ও অপরটি গণেশের স্কন্ধে স্থাপন করে উভয়কেই জীবিত করেন। শিবের এবং সমস্ত দেবতা এবং ভগবান বিষ্ণুর অনুগ্রহে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশবতার গণেশ সকল দেবতার অগ্রে পূজিত হবার অধিকার প্রাপ্ত হন। পার্বতী ও শিবের বরে গণেশ গণাধিপতি, বিঘ্নেশ্বর ও সর্বসিদ্ধিদাতা হন। কেন গার্হস্থ শ্রীকৃষ্ণ ভক্তগন গনেশ পুজা করে উত্তর--গার্হস্থ্য শ্রীকৃষ্ণ ভক্তগন শ্রীগনেশের পূজার মধ্য দিয়ে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই পুজা করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চান।কারন তাঁরা জানেন,বিঘ্নহারী গজানন শ্রী গনেশ স্বয়ং পরমব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ এর অংশাবতার। এই নিয়ে শাস্ত্রে বলছে- হে নারদ! দেবী দূর্গা ও ভূপতি মহাদেব,উভয়ে দাম্পত্য ধর্ম্ম প্রবৃত্ত হইলে বিশ্ব বিঘ্ন বিনাশন গনেশ ও কার্তিকের উৎপত্তি হয়। তান্মধ্যে গনেশ সাক্ষাৎ কৃষ্ণ এবং কার্তিক নারায়নের অংশোৎপন্ন।। (ব্রহ্মবৈবর্তপুরান,প্রকৃতিখন্ড,অধ্যায় ১, শ্লোক ১৪৮) সিদ্ধিদাতা গনেশকে সর্বাগ্র পূজা না করলে কি হয়?? উত্তর::- কার্তিকেয়কে সেনাপতির পদে নিয়োগ করতে গিয়ে ইন্দ্রের হাত স্তম্ভিত হয়ে যায়। তিনি শিবকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণেশকে আগে পূজা না করার জন্যই এমন হয়েছে। গণেশকে বিঘ্ননাশকারী, শিল্প ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক এবং বুদ্ধি ও জ্ঞানের দেবতা রূপে পূজা করা হয়। বিভিন্ন শুভকার্য, উৎসব ও অনুষ্ঠানের শুরুতেও তার পূজা প্রচলিত আছে। অক্ষর ও জ্ঞানের দেবতা রূপে লেখার শুরুতেও গণেশকে আবাহন করা হয়। গনেশের মূল 12টি নাম:- সুমুখ, একদন্ত, কপিল, গজকর্ণ, লম্বোদর, বিকট, বিঘ্ননাশক, বিনায়ক, ধূম্রকেতু, গণাধ্যক্ষ, ভালচন্দ্র তথা গজানন। শ্রীগনেশের তুষ্টির ফলে সকল বাধা বিপত্তি দূর হয়, পরিবারে শান্তি ফিরে আসে, রোগ-শোক দূর হয়,অর্থ লাভ হয় এবং সর্ব কাজে সিদ্ধি আসে।তাই ভক্তগন ভক্তিভরে এই দিন শ্রীকৃষ্ণরূপ গনেশের পুজা করেন। শাস্ত্র বলে বুধবার হল শ্রীগনেশের দিন। এদিন ফুল-মোদক দিয়ে দেবের পুজো করলে নানা উপকার পাওয়া যায়। গণেশ প্রণামঃ- একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম। বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।। অর্থাৎ, যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি। গণেশ বীজমন্ত্রঃ – “ওঁ গাং গণেশায় নমঃ” গণেশগায়ত্রী:- “ ওঁ একাদান্তিয়াভিদমাহে, বাক্রাতুন্ডা ধিমাহি, তানো দান্তিপ্রাচোদায়াৎ ওঁ " গণেশ ধ্যানঃ- ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং | প্রস্যন্দম্মদগন্ধলুব্ধ মধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্ || দন্তাঘাত বিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরং | বন্দেশৈল সুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্ || অর্থাৎ, যিনি খর্বাকৃতি, স্থূল শরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর, বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমর সমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত, যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করে তাঁর দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।
শিবচতুর্দশী ব্রত শিবরাত্রি তিথি হলো মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি । বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে 2023 সালে শিবরাত্রি তিথি (চতুর্দশী তিথি) শুরু হবে রাত্রি 08:03 মিনিটে এবং চতুর্দশী তিথি শেষ হবে: 19th ফেব্রুয়ারি-2023(রবিবার) বিকাল 04:19 মিনিটে । তাই রাত্রি পূজা হেতু তিথির অবস্থান কারণে শিবরাত্রির ব্রত18th ফেব্রুয়ারি-2023(শনিবার) রাত্রি 08:03 মিনিট থেকে শুরু হবে । নিশিতকাল / মধ্যরাত্রি পূজার সময় : 18th ফেব্রুয়ারি-2023(শনিবার) রাত 11টা 26 মিনিট থেকে রাত 12টা 14 মিনিট এরমধ্যে। অর্থাৎ নিশিতকাল / মধ্যরাত্রি পূজার সময় মোট 48 মিনিট স্থায়ী হবে । 18th ফেব্রুয়ারি-2023(শনিবার) সন্ধ্যা 05 টা 55 মিনিট থেকে 9টা 04 মিনিট পর্যন্ত দুধ দিয়ে স্নান করানোর সময় নিম্নলিখিত এই মন্ত্র তিনবার পাঠ করতে হবে:----- মন্ত্রঃ ‘ওঁ ঈশানায় নমঃ’ চার প্রহরের সময়:- 18th & 19th ফেব্রুয়ারি-2023(শনিবার & রবিবার) (ইংরাজি মতে 18th Feb শনিবারকে রাত বারোটার পর বলে 19th Feb রবিবার ধরা হইবে) 1.প্রথম প্রহরের সময় : 18th Feb রাত্রি 08টা 03 মিনিট থেকে 18th Feb রাত্রি 10টা 34 মিনিট 45সেকেন্ড 2.দ্বিতীয় প্রহরের সময় : 18th Feb রাত্রি 10টা 34 মিনিট 45সেকেন্ড থেকে 19th Feb রাত্রি 01টা 06 মিনিট 30সেকেন্ড 3.তৃতীয় প্রহরের সময় : 19th Feb রাত্রি 01টা 06 মিনিট 30সেকেন্ড থেকে 19th Feb রাত্রি 03টা 06 মিনিট 30সেকেন্ড 4.চতুর্থ প্রহরের সময় : 19th Feb রাত্রি 03টা 06 মিনিট 30সেকেন্ড থেকে 19th Feb ভোর 06টা 10 মিনিট 07সেকেন্ড যারা এই চার প্রহরে পূজা করবেন তাদের জন্য 19th Feb ভোর 06টা 16 মিনিট থেকে 19th Feb সকাল 06টা 55 মিনিট এর মধ্যে বিসর্জন 19th Feb সকাল 06টা 55 মিনিট এর পরে থেকে সকাল 09টা 57 মিনিট এরমধ্যে শিবরাত্রির পারন সমাপন করতে হবে।
পবিত্র শ্রাবণমাস -যা ভগবান শিবের অতি প্রিয় মাস--- এই মাসে রুদ্রাধ্যায় জপ , রুদ্রযজ্ঞ এবং রুদ্রাভিষেক অত্যন্ত ফলদায়ক । রুদ্র অর্থাৎ ভগবান শিব এবং অভিষেক অর্থাৎ স্নান এই দুইয়ের সন্ধি শব্দ রুদ্রাভিষেক ।
ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ (ব্রহ্মা+বিষ্ণু+মহেশ্বর রুদ্রাক্ষ) প্রাকৃতিক খুব বিরল ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ যে কোনো বাদামী রঙের প্রাকৃতিক অসম আকৃতি, যে কোনো বাদামী রঙের Lab Certified পুরুষ ও মহিলাদের জন্য। সর্বদা বাস্তব 100% প্রকৃত ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ ব্যবহার করতে হবে:- এটি সর্বজনীন আবেদন প্রদানের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দুর্দান্ত অর্জন, আত্মবিশ্বাসের জন্য পরিধানকারীকে ক্ষমতা দেয় এবং পরিধানকারীকে অজেয় করে তোলে। এই ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ ভক্তকে অসাধারণ আকর্ষণের সাথে আশীর্বাদ করে এবং ভক্তের সাফল্য ও সন্তুষ্টির পথকে সহজ করার জন্য সমস্ত বাধা দূর করে। ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষের উপকারিতাঃ আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং বৈশিষ্ট্য মনিপুর এবং অনাহত চক্র দ্বারা নির্ধারিত হয়। যখন একজন ব্যক্তি এই মণিপুর এবং অনাহত চক্রের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি ব্যক্তিকে ভালোর জন্য সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করে তাকে আরও কমনীয় এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন করে তোলে। এটি একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ । এই চক্রের চৌম্বকীয় প্রভাবগুলি ভাল স্বাস্থ্য এবং মানসিক সম্প্রীতিকে আকর্ষণ করে। আমাদের আর্থিক জীবন এবং প্রেমের জীবন নিয়ন্ত্রণকারী গ্রহটি শুক্র। একটি শক্তিশালী শুক্র আপনার সম্পর্ক, বিবাহ, পেশাগত জীবনকে সমর্থন করে, ত্রিজুটি রুদ্রাক্ষ আমাদের জীবনে শুক্রের ইতিবাচক দিকগুলিকে উদ্দীপিত করে।
গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ (Gouri-Shankar Face Lose Rudraksha Bead) বাদামের আকৃতির প্রাকৃতিক যে কোনো বাদামী রঙের Lab Certified পুরুষ ও মহিলাদের জন্য। গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষের উপকারিতাঃ গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা উন্নত করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি অর্জনে সহায়তা করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ একটি সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য প্রস্তাবিত এই গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারী অপরিমেয় আত্মবিশ্বাস ও প্রজ্ঞা লাভ করেন এই গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীর জন্য প্রচুর সম্পদ নিয়ে আসে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পারিবারিক সম্পর্কের সেতুবন্ধনে সাহায্য করে এবং তাদের ভাঙতে বাধা দেয় এই গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষের পূজা ও পরিধান করলে যৌন সমস্যা, পুরুষত্বহীনতা এবং আচরণগত ব্যাধি নিরাময় হয়। গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পারিবারিক ঐক্য, সম্প্রীতি এবং শান্তির প্রচার করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীর জন্য প্রচুর সম্পদ নিয়ে আসে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ একাগ্রতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা উন্নত করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ আত্মবিশ্বাস এবং জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে আনন্দময় দাম্পত্য জীবনের জন্য গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ সেরা গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীর জ্ঞান উন্নত করতে সাহায্য করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ ব্যবহারকারী এবং তার স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীর যন্ত্রণা, কষ্ট এবং অন্যান্য বাধা কমায় গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেকে একটি ইতিবাচক দিকের দিকে প্রভাবিত করে গৌরী-শঙ্কর রুদ্রাক্ষ মহিলাদের জন্য সহায়ক যারা কোনও ধরণের গর্ভাবস্থার সমস্যার মুখোমুখি
গণেশ রুদ্রাক্ষ (Ganesh Face Lose Rudraksha Bead) গোলাকার আকৃতির প্রাকৃতিক যেকোনো বাদামী, Lab Certified পুরুষ ও মহিলাদের জন্য। গণেশ রুদ্রাক্ষের উপকারিতাঃ গণেশ রুদ্রাক্ষ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, বুদ্ধি, জ্ঞান, শিক্ষা, বিচক্ষণতা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং অপরিমেয় শক্তি দেয়। গণেশ রুদ্রাক্ষ ভক্তের জীবন থেকে সমস্ত বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে এবং উপাসককে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা প্রদান করে এবং ভগবান গণেশের পরম আশীর্বাদও পায়। গণেশ রুদ্রাক্ষ ভক্তকে চূড়ান্ত সাফল্যে আশীর্বাদ করে এবং ভক্তের জীবন থেকে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। এই গণেশ রুদ্রাক্ষ পরিধান করা ভক্তকে আকর্ষণ, ক্যারিশমা, নির্ভীকতা, বুদ্ধিমত্তা, মনোযোগ, একাগ্রতা এবং আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি সুরক্ষা এবং খুব ভাল স্বাস্থ্যের আশীর্বাদ করে। গণেশ রুদ্রাক্ষ পরিধানকারীকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম সুরক্ষা, অপরিমেয় সমৃদ্ধি, মঙ্গল এবং পরিপূর্ণতা প্রদান করে এবং তাকে সারা জীবন ভগবান গণেশের কৃপায় দান করা হয়। এই গণেশ রুদ্রাক্ষ সমস্ত বাধা দূর করে এবং সমস্ত উদ্যোগে সাফল্য এনে দেয়। এটি পরিধানকারীকে সমস্ত ধরণের প্রাপ্তি দেয় - ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি। তার বিরোধীরা শেষ। তার বিরোধীদের মন বা উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র হল একটি শক্তিশালী বৈদিক মন্ত্র যা রূপান্তরের প্রভু শিবকে
উৎসর্গ করা হয়েছে, যিনি মোক্ষ (মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি) প্রদান করেন ।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র একটি সর্বরোগ-বিপদ হরণকারী মন্ত্র
এই মন্ত্রটি ভগবান মহাদেবকে স্মরণ করে রচিত, এই মন্ত্রটি ঋগ্বেদেও দৃষ্ট হয় - আবার এই
মন্ত্রটি মার্কণ্ডেয় পুরাণেও দৃষ্ট হয়, এই মন্ত্রটি জপ করলে মানুষ সব অশান্তি , রোগপীড়া ,
ব্যাধি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় । নিরাকার মহাদেবই মৃত্যুমুখী প্রাণকে বলপূর্বক জীবদেহে পুণঃ
প্রতিষ্ঠিত করেন এবং অপার শান্তিদান করেন । এই মন্ত্রটির সাথে একটি কাহিণী প্রচলিত আছে ।
সেটি হল - মহর্ষি মৃকন্ডু এবং তাঁর পত্নী মরুদবতী পুত্রহীণ ছিলেন ।
তারা তপস্যা করেন মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন এবং এক পুত্র লাভ করেন , যার নাম হল মার্কন্ডেয় ।
কিন্তু মার্কন্ডেয়র বাল্যকালেই মৃত্যুযোগ ছিল । অভিজ্ঞ ঋষিদের কথায় বালক মার্কন্ডেয় শিব লিঙ্গের
সামনে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে লাগলেন । যথা সময়ে যম রাজ এলেন ।
কিন্তু মহাদেবের শরণে আসা প্রাণকে কেইবা হরণ করতে পারে !
যমরাজ পরাজিত হয়ে ফিরে গেলেন এবং মার্কন্ডেয় মহাদেবের বরে চিরায়ু লাভ করলেন ।
পরে তিনি মার্কন্ডেয় পুরাণ রচনা করলেন
মার্কন্ডেয় ঋষি মহাদেবের স্তুতি করলেন মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রের মাধ্যমে যেটি মার্কন্ডেয় পুরাণে পাওয়া যায় ।
আপনি যদি মহাদেবের বিশেষ আশীর্বাদ পেতে চান তবে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করুন।
শিবপুরাণ এবং আরও অনেক গ্রন্থে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের কথা উল্লেখ আছে। মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
আসলে ভগবান শিবের মন্ত্র। বিশ্বাস করা হয় যে, মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে ভগবান শিব সন্তুষ্ট হন।
ঋকবেদে উল্লেখ পাওয়া যায় এই মন্ত্র জপ করে অকাল-মৃত্যুকেও জিতে নেওয়া সম্ভব!
যদি সঠিক নিয়ম মেনে এই মন্ত্রটি জপ করা যায়, তাহলে দেহের দৈবিক শক্তি এতটাই
বেড়ে যায় যে অকাল-মৃত্যু ধারে কাছেও ঘেঁষতে ভয় পায়!
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এবং এর অর্থ:------
দেবনাগরী লিপি-তে:
ॐ त्र्य॑म्बकं यजामहे सु॒गन्धिं॑ पुष्टि॒वर्ध॑नम् ।
उ॒र्वा॒रु॒कमि॑व॒ बन्ध॑नान् मृ॒त्योर्मुक्षीय॒ मा ऽमृता॑त् ।।
বাংলায়:
‘ওঁ ত্রম্বকম যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টি বর্ধনম।।
ঊর্বারু কমিব বন্ধনাৎ মৃত্যুমক্ষীয় মামৃতাৎ ‘ওঁ'।।
এই মন্ত্রটির অর্থ হল, আমরা ভগবান শিবের উপাসনা করি, যাঁর ত্রিনেত্র রয়েছে, যিনি প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে শক্তির সঞ্চার করে এবং সমগ্র সৃষ্টিকে লালন-পালন করেন। এই মন্ত্রটি আমাদের শক্তি যোগায় এবং জীবনে সুখ, আনন্দ ও শান্তির অনুভূতি প্রদান করে। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে অমরত্ব অর্জন করা সম্ভব নয়, তবে ভোলানাথ তাঁর শক্তি দিয়ে আমাদের মৃত্যুর সময়কে কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিতে পারেন।
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করার উপযুক্ত সময়:-
শাস্ত্রে, মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করার জন্য রাত 2টো থেকে 4টে পর্যন্ত সময় সবচেয়ে
সেরা বলে বিবেচিত হয়। স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরুন এবং রুদ্রাক্ষের জপমালা দিয়ে
এই মন্ত্রটি 108 জপ করুন।
মন্ত্রটি জপ করার নিয়ম:-
এবার জেনে নিন এই মন্ত্র জপ করার আগে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখবেন—
পবিত্র মনে এই মন্ত্র পাঠ করুন। এই জপ করতে হবে রুদ্রাক্ষের মালার সাহায্যে।
ধূপ বা প্রদীপ সহযোগে এই মন্ত্র জপ করুন।
ভগবান শিবের ছবি বা মূর্তি কিংবা মহামৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞের মাধ্যম এই মন্ত্র জপ করা যায়।
কুশের আসনে বসে জপ করুন।
প্রথম ধাপে মন্ত্রটি ঠিক মতো উচ্চারণ করার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখুন যাতে কোনও
ভাবেই ভুল উচ্চারণ না করে ফেলেন। এরপর শান্তভাবে আসনে বসে এক মনে
মন্ত্রটি জপ করা শুরু করুন। মন্ত্রটি পাঠ করার সময় দুই চোখের মাঝখানে
মনোনিবেশ করার চেষ্টা করবেন। এমনটা করলে দেখবেন সহজে একাগ্রতা ফিরে আসবে।
প্রসঙ্গত, প্রথম প্রথম এক মনে মন্ত্রটি পাঠ করতে হয়তো অসুবিধা হতে পারে।
তাই ধীরে ধীরে যপের সময় বাড়াবেন। এক সময় গিয়ে দেখবেন খুব সহজেই
108 বার মন্ত্রটি পাঠ করতে পারছেন।
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপের উপকারিতা
প্রসঙ্গত, চার লাইনে ভাঙা এই মন্ত্রটির প্রতিটি লাইনে আটটা চিহ্ন রয়েছে,
যা উচ্চারণ করার সময় সারা শরীরজুড়ে একটা কম্পন ছড়িয়ে পরে।
এই কম্পনই শরীরে ভেতরে থাকা হাজারো ক্ষতকে নিমেষে সারিয়ে তোলে।
শুধু তাই নয়, ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই মন্ত্রটি।
আধুনিক কালে এই মন্ত্রটিকে নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে
মন্ত্রটি পাঠ করার সময় মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনগুলি এতটাই অ্যাক্টিভ
হয়ে যায় যে ধীরে ধীরে মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি
এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে। মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করার সেরা উপায়।
শাস্ত্র অনুসারে, এই মহামন্ত্র থেকে মৃত্যুকেও জয় করা যায়! মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে
যেকোনও রোগ বা নেতিবাচক প্রভাবগুলি দূর করা যায়। মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র কঠিন রোগ
এবং অকাল মৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করে। কোষ্ঠীতে কোনও দোষ, পারিবারিক
কলহ, ধন-সম্পত্তি সম্পর্কিত যেকোনও সমস্যার ক্ষেত্রেও এই মন্ত্র উপকারি।
সাধনাতে মহা আত্মশক্তির প্রকাশ হয় এই মন্ত্র জপ করলে।
কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ ঘটে এই মন্ত্র জপ এর প্রভাবে।
এই মন্ত্রের জপ করলে সমস্ত গ্রহের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে।
পরিবারে কেউ অসুস্থ থাকলে তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
আশু সঙ্কট থেকে বাঁচতেও এই মন্ত্র খুবই কার্যকরী।
কুন্ডলীগত বহু দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত এই মন্ত্র জপ করলে।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র একটি সর্বরোগ-বিপদ হরণকারী মন্ত্র
শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের ভয় দূর করে মনকে শক্তিশালী করে তুলতেও
এই মন্ত্রের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
পরিবারে সুখ-শান্তির ছোঁয়া লাগে:
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র নিয়মিত যপ করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধির সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভাগ্যও ফেরে। তাই দুর্ভাগ্যের কারণে যাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তারা নিয়মিত এই মহা মন্ত্রের পাঠ শুরু করতে পারেন। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিদিন যদি এক মনে 108 বার এই মন্ত্রটি যপ করা যায়, তাহলে জীবনে কোনও দিন কষ্টের সম্মুখিন হতে হয় না।
খারাপ শক্তি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:
শাস্ত্র মতে এই শক্তিশালী মন্ত্রটি প্রতিদিন 108 বার পাঠ করলে চারিপাশে শুভশক্তির
প্রভাব এতটা বেড়ে যায় যে নেগেটিভ এনার্জি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
ফলে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
সেই সঙ্গে কালো যাদুর প্রভাবও নিমেষে কেটে যায়। তাই তো বলি বন্ধু,
সুখ-শান্তিতে এবং নিরাপদে যদি জীবন অতিবাহিত করতে হয়,
তাহলে নিয়মিত এই শিব মন্ত্রটি জপ করতে ভুলবেন না যেন!
গৃহস্তের পরিবেশ শুদ্ধ হয়ে ওঠে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করা শুরু করলে বাড়ির প্রতিটি
কোনায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে বাড়ির পরিবেশে
পবিত্রতার ছোঁয়া লাগে। আর গৃহস্তের পরিবেশ যখন শুদ্ধ হয়ে ওঠে,
তখন সেখানে দেব-দেবীর আগমণ ঘটতে সময় লাগে না।
কোনও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমে:
শিব পূরাণ অনুসারে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র হল সেই মন্ত্র, যা যে কোনও ধরনের বিপদ
থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, এই মন্ত্র বলে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার
আশঙ্কাও যায় কমে। তাই যাদের জন্ম কুষ্টিতে দূর্ঘটনার যোগ রয়েছে,
তারা নিয়মিত এই মন্ত্রটি জপ করতে ভুলবেন না