ব্রাহ্মণ
“জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ সংস্কারাদ্দ্বিজ উচ্যতে। বেদ পাঠী ভবেদ্বিপ্রঃ ব্রহ্ম জানাতি ব্রাহ্মণঃ”।।
অর্থাৎ, “জন্মমাত্রেই সবাই শূদ্র। সংস্কারে দ্বিজ পদবাচ্য হয়। বেদ পাঠেই বিপ্র হন এবং ব্রহ্মকে জানলেই ব্রাহ্মণ পদবাচ্য”।
चातुर्वर्ण्यं मया सृष्टं गुणकर्मविभागशः।
तस्य कर्तारमपि मां विद्ध्यकर्तारमव्ययम्।।...গীতা-4/13
অর্থাৎ গুন ও কর্ম অনুসারে আমি চারটি বর্ণের সৃষ্টি করিয়াছি , জন্ম অনুসারে নয় ৷
ব্রাহ্মণ শব্দটা এসেছে ব্রহ্ম থেকে,এক অর্থে, যার রয়েছে ব্রহ্মজ্ঞান সেই ব্রাহ্মণ।বর্ণপ্রথা পাকাপোক্ত হয়ে সনাতন ধর্মে চেপে বসার আগে ব্রাহ্মণ হতে পারতেন যে কেউ। কর্মানুসারে সকলে নানা বর্ণত্ব প্রাপ্ত হয়; কেউ হয় ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য এবং কেউ বা শূদ্র। মহাভারতে আরও বলা হয়েছে যে, যিনি সদাচারী ও সর্বভূতে মিত্রভাবাপন্ন, যিনি সন্তোষকারী, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ও শাস্ত্রজ্ঞ-ব্রহ্মজ্ঞ, তিনিই ব্রাহ্মণ; অর্থাৎ গুণ ও কর্মানুসারে ব্রাহ্মণাদি চতুর্বর্ণের সৃষ্টি, জন্মানুসারে নয়।
অর্থাৎ যিনি যোগ্যতা এবং গুণ এবং কর্ম অনুসারে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়াছেন তিনি প্রকৃত ব্রাহ্মণ ।
সেই গুণ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্রাহ্মণ পদবাচ্য ব্যক্তির সঙ্গে কি ব্যবহার করা উচিত বা কি রকম ব্যবহার করলে কি ফল হয় তাহা শাস্ত্রে উক্ত আছে:-------
”যদেবাব্রাহ্মণোক্তোহশ্রদ্দধানো যজাতৈ সা মে যজ্ঞস্যাহশীরসদিতি
তস্মাদ্ যদ্ ব্রাহ্মণোক্তোহশ্রদ্দধানো যজতে শংযুমেব তস্য বার্হস্পত্যং যজ্ঞংস্যাহশীর্গ
চ্ছত্যেতন্মমেত্যব্রীত্ কিং মে প্রজায়াঃ ইতি যোহপশুরাতৈ শতেন
যাতযাদ্যো নিহত্ সহস্রেণ যাতযাদ্যো লোহিতং করবদ্যাবতঃ প্রস্কদ্য
পাংসূন্তসংগৃহ্নাত্তাবতঃ সম্বত্সরান্ পিতৃলোকং ন প্র জানাদিতি তস্মাদ্
ব্রাহ্মণায় নাপ গুরেত ন হি হন্যান্ন লোহিতং কুর্যাদেতাবতা হৈনসা
ভবতি তচ্ছংযোরা বৃণীমহ ইত্যাহ যজ্ঞমেব তত্ স্বর্গা করোতি তত্ শংষে রা বৃণীমহ।।
অনুবাদঃ যে ব্রাহ্মণের তাড়নার উদ্যেগ করে সে শত নিস্ক দন্ডে ক্লেশ পায় ,
যেব্রাহ্মণকে আঘাত করে তাড়না করে, তার সহস্র নিস্কদন্ড,
যে ব্রাহ্মণের শরীরে রক্তপাত করে, সে রক্তবিন্দু পৃথিবীর যত পরমাণু ব্যেপে
থাকবে, তত বছর আঘাতকারী পিতৃলোক থেকে বিচ্যুত হয়ে
যমযাতনা ভোগ করবে । অতএব ব্রাহ্মণের প্রতি অবমাননা
করবে না ,তা হলে উক্তপাপে লিপ্ত হতে হবে ।।
তথ্যসূত্র:- কৃষ্ণযজুর্বেদ ২য়কান্ড ৬ষ্ট প্রপাঠক ১০নং মন্ত্র ।।
প্রত্যক্ষং যদব্রাহ্মণাস্তানেব তেন প্রীণত্যথো কৃষ্ণ_যজুর্বেদ_সংহিতা /১/৭/৩)
অনুবাদ- ব্রাহ্মণ প্রত্যক্ষ দেবতা।তাদের অন্ন দানে তুষ্ট করতে হয়।
ভবিষ্য পুরাণে আছে– ব্রাহ্মণো জগতাং তীর্থং পাবনং পরমং যতঃ।
ভুদেব হর মে পাপং বিষ্ণুরুপিন্নমোহস্তুতে।। ভবিষৎপুরান,মধ্যপর্ব্ব,১০/১৪ পৃষ্ঠা২২৩,
অনুবাদ-- ব্রাহ্মণ সমস্ত জগতের তীর্থ, কেননা এটি পরম পাবন।হে ভুদেব।হে বিষ্ণুরুপি।আমার পাপ হরণ কর।আপনার জন্য আমার প্রণাম জানাচ্ছি।।
ব্যাস বচন– অভিবাদ্যশ্চ পূজ্যশ্চ শিরসানম্য এব চ।
ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়দ্যৈশ্চ শ্রীকামৈঃ সাদরং সদা।। পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ২৫/৪৮
অনুবাদ- শ্রীকাম ক্ষত্রিয়াদি বর্ণত্রয় কর্ত্তক ব্রাহ্মণ সাদরে অভিবাদ্য,পুজা এবং মস্তক দ্বারা প্রণামযোগ্য।
ভগবান ব্রহ্মা বলেছেন– ভুরি প্রত্যক্ষদেবোহপি ব্রাহ্মণো দেবতাশ্রয়ঃ,সর্ব্ববর্নগুরুঃ--।। পদ্মপুরাণ, ক্রিয়াযোগসারঃ২০/১৯৩)
অনুবাদ- ব্রাহ্মণ ভুতলের প্রত্যক্ষ দেবতা সর্ব্ববর্ণের শুরু।
ভগবান ব্রহ্মা বলেছেন– সর্ব্বেহপি ব্রাহ্মণাঃ শ্রেষ্ঠাঃ পূজনীয় সদৈব হি।
অবিদ্যো বা সবিদ্যো বা নাত্র কার্যাবিচারণ।।পদ্মপুরাণ -ক্রিয়াযোগসার ২১/৮
অনুবাদ- সর্ব্ববিৎ ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ। ব্রাহ্মণ অবিদ্যই হউন আর সবিদ্যাই হউন।সর্ব্বদাই তাঁহারা পুজনীয় ও শ্রেষ্ঠ এ বিষয়ে তর্ককরা নিষিদ্ধ।
ত্রৈলোক্যস্যৈব হেতুর্হি মর্য্যাদা শাশ্বতী ধ্রুবা
ব্রাহ্মণো নাম ভগবান জন্মপ্রভৃতি পূজ্যতে।।--মহাভারত,শান্তিপর্ব ২৬৩/১২
অনুবাদ- ত্রিভূবনের মঙ্গলের কারণ,নিত্যও সত্য গৌরবস্হান,মাহাত্ম্যশালী ব্রাহ্মণ জন্মবধি পূজিত হইয়া থাকেন।
শ্রী ভগবান বলেছেন - যে মে তনুর্দ্বিজবান দুহতীর্স্মদীয়া ভুতান্যব্বথরণানি চ ভেদবুদ্ব্যা
দ্রক্ষ্যন্ত্যঘক্ষতদৃশো হ্যাহিন্যবস্তান গৃধ্রা রুষা মম কুশন্ত্যধিদণ্ডনেতুঃ।
যে ব্রাহ্মণান ময়ি ধিয়া ক্ষিপতোর্হচ্চয়ন্তস্তুষ্যদ্ধদঃ স্মিতসুধোক্ষিতপদ্মবক্তাঃ।
বাণ্যানুরাগকলয়া ত্নজবদৃগৃন্তঃসন্বোধয়ন্ত্যহমিবা হমুপাকৃতস্তৈঃ।। ভগবত৩/১৬১০-১১
অনুবাদ- ব্রাহ্মণ, দুগ্ধবতী গাভী ও রক্ষণশীল প্রাণী,ইহারা আমার দেহস্বরুপঃ যদি কেহ এই তিনটিকে অন্যথা জ্ঞান করে।তবে আমার অধিকারভুক্ত যমের যেসকল সর্পের ন্যায় ক্রোধী গৃধ্রাকার দূত আছে,তাহারা সেই পাপাজত-চিত্ত ব্যক্তিকে চঞু দ্বারা বিদীর্ণ করে।ব্রাহ্মণেরা কটুকথা বলিলেও যাঁহারা প্রফুল্লিত বাসুদেবজ্ঞানে তাঁহাদিগকে অর্চ্চনা করেন এবং সহাস্যবদনে প্রেমশোভিত বাক্যে তাঁহাদিগকে সম্বোধন করি,সেইরুপ ভাবে যাঁহারা সেই ব্রাহ্মণগণকে সম্বোধন করিয়া তাকেন,আমি তাঁহাদের বশীভূত হই।
শ্রীপৃথু রাজা বলেছেন- যৎসেবয়াশেষগুহাশয়ঃ স্ববাড় বিপ্রপ্রিয়স্তুষ্যতি কামমীশ্বরঃ।
তবেদ তদ্ধমর্পয়ৈবিনীতৈঃ সর্ব্বত্নানা ব্রহ্মকুলং নিষেব্যতাম।।ভগবত৪/২১/৩৯
অনুবাদ- সর্ব্বান্তর্য্যামী স্বপ্রকাশ ব্রাহ্মণ প্রিয় ভগবান যে ব্রাহ্মণ কুলের সেবায় অন্ত্যন্ত পপরিতুষ্ট হন।আপনারার ভগবদ্বর্ম্মপরায়ণ ও বিনীত সর্ব্বান্তঃকারণে সেই ব্রাহ্মণ কুলের সেবা করুন।
শুকদেব বলেছেন- যস্ত্বিহ ব্রহ্মধ্রুক স কালসুত্রসংজ্ঞকে
নরকে অযুতযোজনপরিমন্ডলে তাম্রময়ে।। ভগবত ৫/২৬/১৪
অনুবাদ- যে ব্যক্তি ব্রহ্মঘাতী,যমদূত তাকে কালসুত্র নামক নরকে নিক্ষেপ করে,ঐ নরকের পরিধি দশসহ্রস যোজন ঐ স্হান তাম্রময়।
নারদ মুনি বলেছে- নহ্যগ্নিমুখতোহরং বৈ ভগবান সর্ব্বযজ্ঞভুক
ইত্যেত হবিষারাজন যথা বিপ্রমুখে হুতৈঃ।। ভগবত ৭/১৪১/৭
অনুবাদ- হে রাজন,ব্রাহ্মণ মুখে প্রদত্ত অন্নাদি দ্বারা এই সর্ব্বযজ্ঞাভোগী ভগবান বিষ্ণু যেরুপ পূজিত হোন,অগ্নিমুখে প্রদত্ত হববিঃ দ্বারা সেরুপপ তিনি পূজিত হয় না।
নন্বস্য ব্রাহ্মণা রাজন কৃষ্ণস্য জগদাত্নানঃ।
পুনন্তঃপাদরাজস্য ত্রিলোকীং দৈবতং মহৎ // ভগবত ৭/১৪/৪২
অনুবাদ- মহারাজ।আমার এবং তোমার কথা বাদদ দাও।স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইষ্টদেব ব্রাহ্মণ। কারণ তোমার চরণরেণুতে তিন লোক পবিত্র হয়।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- যথাহং প্রণমে বিপ্রাননুকালং সমাহিতঃ।
তথা নমত যূয়ঞ যোহন্যথা মে স দন্ডভাক্।।ভগবত ১০/৬৪/৪২
অনুবাদ- আমি যেরুপ প্রত্যহ সমাহিত মনে সাবধান হইয়া ব্রাহ্মণগণকে নমস্কার করি।তোমরাও সেইরুপ ব্রাহ্মণগণ কে সতত নমস্কার করিবে।যে ব্যক্তি ইহার অন্যথা করিবে,আমি তাহাকে দন্ডদান করিব।সে দন্ডনীয় হইবে।
শুকদেব পরমহংস বলেছেন- তস্য বৈ দেবদেবস্য হরের্যজ্ঞপতেঃ প্রভোঃ
ব্রাহ্মণাঃপ্রভবো বৈবং ন তেভ্যো বিদ্যতে পরম।। ব্রহ্মবৈবর্তপুরান, ব্রহ্মখন্ড ১১/১৪
অনুবাদ- প্রিয় পরীক্ষিত,দেবতাদেরও ও আরাধ্য দেবতা ভক্তভয়হারী যজ্ঞপতি সর্বশক্তিমান ভগবান স্বয়ং ব্রাহ্মণদের নিজ প্রভু ও ইষ্ট মনে করে তাকেন।তাই ব্রাহ্মণগণ এই জগতে সর্বাধিক প্রণম্য বলে স্বীকৃত।
সূর্যদেব বলেছেন– ব্রাহ্মণাবাহিতা দেবাঃশশ্বদ্বিশ্বেষু পূজজিতাঃ
ন চ বিপ্রং পরো দেবো বিপ্ররুপী স্বয়ং হরিঃ
অনুবাদ- দেবতাগণ ব্রাহ্মণকৃর্তক অবাহিত হইয়া বারংবার এই বিশ্ব সংসারে পূজিত হইতেছেন,এবং ব্রাহ্মণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেবতা আর কেহই নাই,কারন স্বয়ং হরিই বিপ্ররুপ ধারন করিয়াছেন।।
সর্ব্বাবর্ণাশ্রমপরো বিপ্রো নাস্তি বিপ্রসমো গুরুঃ
বেদ বেদাঙ্গ সর্ব্বার্থমিত্যাহ কমলোদ্ভবঃ।। ব্রহ্মবৈবতপুরান, ব্রহ্মখন্ড ১১/২০
অনুবাদ- ব্রাহ্মণ অপেক্ষা গুরু কেহই নেই,ইহাই বেদের সার কথা বলিয়া স্বয়ং কমলযোনি ব্রহ্মা স্বীকার করিয়াছেন।।
আনন্দপূর্ব্বক বন্দে বিপ্ররুপং জনার্দ্দন।
তুষ্টা দেবা হরিস্তুষটো যস্য পুষ্পজলেন চ।। ব্রহ্মবৈবতপুরান, ব্রহ্মখন্ড ১৪/১২
অনুবাদ- যে ব্রাহ্মণ প্রদত্ত জলপুষ্পে সমস্ত দেবতা ও ভগবান হরি তুষ্টি লাভ করেন।আমি সেই বিপ্ররুপী জনার্দ্দনকে আনন্দের সহিত প্রণাম করি।।
ধর্ম্মরাজ যম বলেছেন- ক্ষত্রিয়ো বাপি বৈশ্যো বা কল্পকোটিশতেন চ।
তপসা ব্রাহ্মণত্বঞ না প্রাপ্নোতি শ্রুতে শ্রুতম।। ব্রহ্মবৈবতপুরান, প্রকৃতিখন্ড ২৬/৬৯
অনুবাদ- ক্ষত্রিয় বা বৈশ্য,শতকুটিকল্প তপস্যা করিয়াও ব্রাহ্মণত্ব লাভ করিতে পারে না।ইহা বেদে কথিত আছে।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন -অপ্রজ্ঞ বাথ প্রজ্ঞো বা ব্রাহ্মণো বিষ্ণুবিগ্রহ---ব্রহ্মবৈবতপুরান, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড২১/৭০
অনুবাদ- জ্ঞানীই হউন,বা অজ্ঞানী হউন,ব্রাহ্মণ মাত্রেই বিষ্ণুরুপি।।
নমস্কুর্য্যাৎ স্বয়ং বিপ্রান বর্ত্তমানান যথাতথম
যথাসুখং যথোৎসাহং নমস্যান্তে স্বমাতৃবৎ।। শিবপুরান,ধর্ম্মসংহিতা ২০/৮৫
অনুবাদ- ব্রাহ্মণ সদাচারসম্পূর্ণ হউনবা দুরাচারযুক্তই হউন,আপনার মাতাকে যেমন নমস্কার করা উচিত,সেইরুপ তাঁহাদিগকে নমস্কার করিবে।।
ব্যাসদেব বলেছেন- ব্রাহ্মণত্বং হি দুষ্প্রাপং নিসর্গাদব্রাহ্মণো ভবেৎ।
ক্ষত্রিয়ো বাপি বৈশ্য বা নিসর্গাদেব জায়তে।। শিবপুরান,ধর্ম্মসংহিতা ৪১/১
অনুবাদ- ব্রাহ্মণত্ব দুর্লভ।প্রকৃতি অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শুদ্র হয়।।
ব্রাহ্মণ দর্শবর্ষং তু শতবর্ষং ভূমিপম।
পিতাপুত্রৌ বিজানীয়াদ্রাক্ষণস্তু তয়োঃপিতা।। মনুসংহিতা ২/১৩৫
অনুবাদ- যদি কোনও ব্রাহ্মণ দশবৎসর বয়স্ক হয় এবং ক্ষত্রিয়কে পুত্রের মত দেখিবে,অথাৎ ব্রাহ্মণ কে ক্ষত্রিয় পিতার ন্যায় বলিয়া গ্রহন করিবে।।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : যিনি যোগ্যতা এবং গুণ এবং কর্ম অনুসারে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়াছেন তিনি প্রকৃত ব্রাহ্মণ । এরকম যোগ্য ব্রাহ্মণ ব্যক্তির সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত অথবা কি ব্যবহার করলে কি কর্মফল লাভ হয় শাস্ত্রে বহুবার তাহা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ওপরের কিছু শ্লোকে সেগুলো দেওয়া হইল। কিন্তু মধ্যযুগে ব্রাহ্মণ্যবাদ কুসংস্কার প্রথা অনুসারে শাস্ত্রের উপরোক্ত শ্লোকের অপব্যাখ্যা কারি এবং জন্মগত ব্রাহ্মণবাদী লোকের জন্য অবশ্যই প্রযোজ্য নয়।
**********************************************************************************************************
একজন ব্রাহ্মণ যদি তিন দিন দুধ বিক্রি করে অথবা মাংস বিক্রি, লাক্ষা ও লবন প্রভৃতি বিক্রি করে তখন সে শুদ্রে পরিনত হয়। ৯২/১০ মনুসংহিতা।
কোনো ব্রাহ্মন, মাৎসাদি বা ভোজ্যদ্রব্য ভিন্ন অন্যপ্রতিসিদ্ধ দ্রব্য সাতদিন বিক্রয় করিলে সে বৈশ্য হয়।৯৩/১০ মনুসংহিতা
মনুসংহিতা থেকে স্কন্ধ পুরান আরও ভয়ানক।
স্কন্ধ পুরানের কাশি খন্ডে বলা হয়েছে
যে ব্রাহ্মণ শুদ্রের অন্ন গ্রহন করে , শূদ্রের সহিত সম্পর্ক রাখে, শূদ্রের সহিত একাসনে উপবেশন করে , শূদ্রের নিকট বিদ্যা শিক্ষা করে সেই নরাধমের জলন্ত পাতকে বাস হয়।
যে সকল ব্রাহ্মণ শূদ্রের নিকট হইতে দান গ্রহণ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে সেই বিপ্রাধমেরা ব্রহ্মতেজ বিহীন হইয়া ঘোর নরকে স্থান প্রাপ্ত হয়।
যে ব্রাহ্মণ হস্তদ্বারা পরিবেশিত মধু, দুগ্ধ, বাতাসা, ঘৃত ,লবন এবং শাক গ্রহন করে সেই ব্রাহ্মণ কে অবশ্যই একদিন উপবাস স্বরূপ প্রায়শ্চিত্ত করে শুদ্ধ হইতে হয়।
কোনো শূদ্র যদি স্নেহ বশত ব্রাহ্মণের পাত্রে লবন অথবা ব্যঞ্জনাদি প্রদান করে তাহা হইলে সেই শূদ্রের কিছু মাত্র সম্পত্তি থাকে না এবং সেই ভোক্তা ব্রাহ্মণের ও পাপানল ভক্ষণ করা হয়।
যদি কেহ কোনো ব্যক্তি কে লোহ পাত্রে অন্ন প্রদান করে তাহা হইলে যে দেয় তাহাকে নরকগামী হইতে হয় । এবং যে ব্যক্তি ভোজন করে তাহার বিষ্ঠা ভক্ষণ হইয়া থাকে।
ভোজন কালে অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দ্বারা যদি কেহ লবন ও মৃত্তিকা গ্রহন করে তাহা হইলে সেই ব্যক্তির গো মাংস ভক্ষণতুল্য পাপ হয় ।
ব্রাহ্মণ যদি গো রক্ষক, বানিজ্যজীবি, শিল্পজীবি, নট্টনর্তক, দৌত্যকার্জে নিযুক্ত অথবা কুসীদোপজীবি হয় তাহা হইলে তাহার সহিত শূদ্রবৎ ব্যবহার উচিত।
অর্থাৎ এখানে বোঝা যাচ্ছে ব্রাহ্মণ সমাজ কখনোই শূদ্র কর্ম এবং বৈশ্য কর্ম করতেই পারবে না। শূদ্র কর্ম এবং বৈশ্য কর্ম তিন দিন ও সাত দিন করলে তারা বর্নচূত হবে ।
এছাড়া অত্রী সংহিতা আরও ভয়ঙ্কর
অত্রি সংহিতায় দশ প্রকার ব্রাহ্মণের কথা বলা হয়েছে । বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী অত্রি সংহিতা সকল ব্যক্তিকেই ব্রাহ্মণ বলেছেন।
দেব, মুনি, দ্বিজ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শূদ্র, নিষাদ, পশু, ম্লেচ্ছ, চন্ডাল, এই দশ প্রকার ব্রাহ্মণ পৃথিবীতে বিরাজমান।
যে ব্রাহ্মণ সন্ধ্যা, যপ,হোম, যজ্ঞ, দেবপুজা, অতিথি সেবা , নবগুন সম্পন্ন হন তাদের দেব ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ নিত্য বেদ বেদান্ত পাঠ করেন, সর্বসঙ্গ ত্যাগী, নিত্য যোগ অভ্যাস করে থাকেন তাদের দ্বিজ ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ শাক,পত্র, ফল, মূল, বৃক্ষ, খেয়ে বনে জঙ্গলে জীবন অতিবাহিত করেন এবং পরমব্রহ্মের সাধনা করেন তাহদের মুনি বলা হয়।
যে ব্রাহ্মণ সমর বা ঝগড়া স্থলে অস্ত্র দ্বারা শত্রুকে আহত ও পরাজিত করেন তাদের ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ লাক্ষা, লবন, দুধ, ঘি, দই, মাংস প্রভৃতি বিক্রয় করে তাদের শূদ্র ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ কৃষিকার্য, গো প্রতিপালক, ব্যাবসা, বানিজ্যে লিপ্ত তাদের বৈশ্য ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ চোর, ডাকাত, মাছ মাংস ভক্ষণ কারী, কুপরামর্শদাতা, তাদের নিষাদ ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ বেদ এবং পরমাত্ম তত্ত্ব কিছুই জানে না শুধু মাত্র যজ্ঞ উপবিতের প্রভাবে গর্ব করে তাদের পশু ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ কূপ, পুকুর, সরোবর, সাধারণ ভোগ্য উপবন থেকে জনসাধারণের ব্যবহার বন্ধ করে তাদের ম্লেচ্ছ ব্রাহ্মণ বলে।
যে ব্রাহ্মণ নিত্য কর্তব্য কার্যহীন, মূর্খ, সর্বধর্ম রহিত , মিথ্যাবাদী, অসৎ, তাদের চন্ডাল ব্রাহ্মণ বলে।