অ থেকে বিসর্গ পর্যন্ত ষোলটি বর্ণ কে তন্ত্রের ভাষায় ভৈরব বলা হয়।
একইভাবে ক থেকে ক্ষ পর্যন্ত বর্ণ কে ধ্বনি অথবা ভৈরবী বলা হয়।
আবার মুণ্ডমালা তন্ত্র বলছে দেবী দশভুজার দুর্গা যখন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন তার আগে এই ভৈরবী মদিরা পান করে খড়গ দিয়ে মহিষের হৃদয় বিদীর্ণ করেছিলেন।
ভৈরবীর গলায় যে-নর করোটির মালা রয়েছে সেটি ৫০ টি নর কপাল দিয়ে তৈরি। এই ৫০ টি কপালে ৫০টি আলাদা আলাদা দিব্যশক্তি লুকিয়ে আছে। এগুলি বর্ণ সমূহ।
দশ মহাবিদ্যা তন্ত্রে মহাশক্তিশালী মহামায়ার বিশেষ ১০ টি রূপ..... কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী,ভৈরবী, ছিন্নমস্তা,ধূমাবতী,বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।
সতী এই দশটি রূপে শিবকে দশ দিক থেকে ঘিরে ধরে। তখন শিবের একদম সামনেই যেই মহাবিদ্যা রূপে সতী প্রকট হয় তিনিই ভৈরবী।
মহাদেব দেখেন মহাসলিল থেকে উঠে এসেছে পদ্ম। সেই পদ্মে অধিষ্ঠান করছে সহস্ত্র অগ্নিপিন্ডের মত ঘোর রক্তবর্ণা এক দেবী মূর্তি। দেবীর গলায় নর করোটির মালা (নর কঙ্কালের মালা)
তার রক্তপিঙ্গলের তিনটি চোখ, চারটি হাত। ডান দিকের দুটি হাতে যথাক্রমে বড় মুদ্রা এবং জপ মালা বাঁদিকের দুটিতে অভয় মুদ্রা এবং পুস্তক।
দেবীর পরিধানের রক্ত বস্ত্র। মাথায় জটাজুট রুদ্রাক্ষ মালা ও চন্দ্রকলা শোভা পায়।
স্তনযুগল রক্তলিপ্ত এবং মুখে মৃদু হাসি।
এই হলো মোটামুটি ভৈরবীর বর্ণনা।
ভৈরবী সম্পর্কে আরও তথ্য আসবো তার আগে বলি...... ভৈরবী তন্ত্র অনুসারে ভৈরবীর ভৈরব হলেন 'বটুক'। এই বটুক ভৈরব শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।
ভৈরবীর হাতে যে পুস্তকটি থাকে সেটি আসলে ব্রহ্মবিদ্যা। এই কারণে ভৈরবীর সাধনায় সাধক উত্তীর্ণ হতে পারলে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বিদ্যা সাধক ধারণ করতে সক্ষম হয়।
আগম শাস্ত্র বলছে ভৈরবী বিদ্যা থেকে সমগ্র ভুবন প্রকাশিত হয় আবার তার মধ্যেই লিন হয়।
অ থেকে বিসর্গ পর্যন্ত ষোলটি বর্ণ কে তন্ত্রের ভাষায় ভৈরব বলা হয়।
একইভাবে ক থেকে ক্ষ পর্যন্ত বর্ণ কে ধ্বনি অথবা ভৈরবী বলা হয়।
আবার মুণ্ডমালা তন্ত্র বলছে দেবী দশভুজার দুর্গা যখন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন তার আগে এই ভৈরবী মদিরা পান করে খড়গ দিয়ে মহিষের হৃদয় বিদীর্ণ করেছিলেন।
ভৈরবীর গলায় যে-নর করোটির মালা রয়েছে সেটি ৫০ টি নর কপাল দিয়ে তৈরি। এই ৫০ টি কপালে ৫০টি আলাদা আলাদা দিব্যশক্তি লুকিয়ে আছে। এগুলি বর্ণ সমূহ।
ভৈরবী কাল রাত্রিতে আবির্ভূত হন। এনার তিনটি ঋক,সাম এবং যজু বেদের স্বরূপ। এই মহাবিদ্যা ভৈরবী সমগ্র ব্রহ্মবিদ্যা ধারণ করে বসে আছেন। এবং ইনি রজোগুণ প্রধানা।
তন্ত্র শাস্ত্রে ১৩ রকম ভৈরবীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
এরা হলেন......১. কৌলেশ ভৈরবী
২. ভয়নাশী ভৈরবী
৩.কামেশ্বরী ভৈরবী
৪.ষটকুটা ভৈরবী
৫.রুদ্র ভৈরবী
৬. ত্রিপুরাবালা ভৈরবী
৭. অন্নপূর্ণা ভৈরবী
৮. সিদ্ধিকা ভৈরবী
৯. ত্রিপুরা ভৈরবী
১০. সম্পদ প্রদায়িনী ভৈরবী
১১.চৈতন্য ভৈরবী
১২. নিত্যা ভৈরবী
১৩. ভুবনেশ্বরী ভৈরবী
এই প্রত্যেক ভৈরবীর আলাদা আলাদা ধ্যান মন্ত্র রয়েছে এবং পূজা পদ্ধতিতে ও কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
ভৈরবী বামাচার এবং দক্ষিণ আচার এই দুইয়েই পূজিত।
তবে তন্ত্রের অন্যান্য স্থরের সাধকদের তুলনায় বীরাচারী এবং কৌলাচারীদের ভৈরবী তন্ত্র নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া।
ভৈরবী তন্ত্রের মধ্যেই উল্লেখিত আছে তন্ত্রের সব নিগূঢ় এবং অতি গুহ্য তন্ত্রাচার।
পঞ্চমুন্ডি সাধনা থেকে শুরু করে তন্ত্রের অতি নিগূঢ় এবং গুহ্যতি গুহ্য সাধনা রহস্য চক্র, লতা চক্র, ভৈরবীচক্র, মহাচক্র, যোনী চক্র ইত্যাদি অতি গুপ্ত সাধনা ক্রিয়া-কলাপ ভৈরবী তন্ত্রের উপর করা হয়।
এবং বীরাচার, কৌলাচারের বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ ভৈরবী তন্ত্রের উপর করা হয়।
যেমন সতী হীন শিব শব ঠিক তেমনি ভৈরবী (সাধিকা/শক্তি) হীন ভৈরব (সাধক) শব।
তাই সাধনপথে ভৈরবী হলেন সাধকের মহাশক্তি।
সঠিক ক্রিয়াকর্ম এবং সাধনার পর, এই সাধিকা যদি সিদ্ধি লাভ করে নেন এবং তারাপীঠ মহাশ্মশানে হোম কুন্ডের পাশে লাল শাড়ি পরিহিত হয়ে ভৈরবী যজ্ঞের মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করতে পারেন তাহলে তিনি তার ইষ্টকর্মের এবং ভাগ্যের সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হন।
সাধকের সাধন ক্ষেত্রে ভৈরবী অর্থে একজন সৎ উচ্চকোটির সাধকের কুল সাধিকা।
যাকে সাধক অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় এবং শৃঙ্খলা মেনে মাতৃজ্ঞানে বিশেষ অঙ্গে পুজো জপ করে মহা শক্তি অর্জন করবে। সেই কুলনায়িকা সাধকের কাছে মহাবিদ্যা ভৈরবী স্বরূপ।
এই ভৈরবী তন্ত্রে অনেক কঠিন থেকে কঠিনতম গুপ্ত তন্ত্র সাধনা লুকিয়ে আছে যা ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্তরের সাধকেরা বীরাচারে সাধনা করে সমাজের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছেন তথা মহামায়ার মায়াজালের ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
তবে তন্ত্রা চারে এই মহাবিদ্যা ভৈরবী সাধনা অতি কঠিন সাধনা। এবং বীর ভাবে সাধক ছাড়া সাধারণ সাধকের দ্বারা তা সম্ভব নয় এবং শাস্ত্রবিরুদ্ধ।
এবং দেবীর সাধনা উচ্চকোটির সৎ গুরুর বিদ্যা।
এবিদ্যা সবার সামনে ব্যক্ত করলে ফল হানি এবং গোপন রাখলে সিদ্ধি ঘটে।
সর্বোপরি দেবী চতুর্বর্গ এবং ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করে তার সাধককে।
সাধন ক্ষেত্রে ভৈরব হীন ভৈরবী নিষ্ক্রিয় আবার বিপরীতভাবে ভৈরবী হীন তার ভৈরব শব মাত্র।
এই নিগুর তত্ত্ব একজন সৎ কৌল গুরুই তার শিষ্যকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারে।
তাই সকলের কাছে অনুরোধ যারা সাধনপথে আছো কিংবা নতুন এসেছ অথবা আসবে সৎ উপযুক্ত গুরুর নিকট হতে সমগ্র তথ্য জেনে সৎ ভাবে মহাবিদ্যা দের সাধনার লিপ্ত হও।
তবেই মহাশক্তি মহাবিদ্যা ভৈরবীর শক্তিতে এবং তার আশীর্বাদে বলিষ্ঠ হয়ে সাধনার চরম থেকে চরমতম স্থর অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
তন্ত্র শাস্ত্রে ভৈরবী সাধনা কঠিন সাধনা গুলোর মধ্যে একটা। এখানে প্রতি পদে পদে সাধনা ভঙ্গ হওয়ার ভয় থাকে।