চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতিথিতে অশোকষষ্ঠী ব্রত পালন করতে হয়। স্ত্রীলোকেরাই এই ব্রত পালন করে থাকে।
অশোক ফুল, মুগকড়াই, দই।
চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে স্ত্রীলোকেরা অশোকষষ্ঠী ব্রত পুজো করবে। তারপর প্রত্যেকে ছ’টি মুগ কড়াই ও ছটি অশোক ফুলের কুঁড়ি দই মাখিয়ে খাবে। ঐদিন ভাত খাওয়া নিষেধ। লুচি পরটা ইত্যাদি খাওয়ার কোনো বাধা নেই। ফল-মূল ও খাওয়া যেতে পারে।
অশোক ষষ্ঠীর ব্রতকথা— সে যুগে তপোবনে এক মুনি থাকতেন। বনটির চারিদিকে অনেক অশোক গাছ জন্মেছিল। মুনি একদিন সকালে পুজোর ফুল তুলতে তুলতে দেখলেন, একটা অশোক গাছের গোড়ায় খুব সুন্দর একটি সদ্যোজাত মেয়ে কাঁদছে।
মুনি তখনই মেয়েটিকে তুলে নিয়ে তাঁর আশ্রমে ফিরে গেলেন। পরে ধ্যান করে তিনি জানতে পারলেন যে, শাপের ফলে হরিণরূপিণী এক স্ত্রীলোক এই মেয়েটিকে প্রসব করেছে।
মুনি মেয়েটিকে খুব যত্নে লালন-পালন করতে লাগলেন। হরিণীও রোজ একবার করে এসে মেয়েটিকে দুধ খাইয়ে যেতে লাগল। অশোক গাছের গোড়ায় তাকে পাওয়া গিয়েছিলো বলে মুনি মেয়েটির নাম রাখলেন অশোকা।
এই ভাবে মেয়েটি ক্রমে বেশ বড় হয়ে উঠল। এখন তার বিয়ে দেওয়া দরকার। মুনি তখন মনে মনে স্থির করলেন যে, পরের দিন সকালে প্রথমে তিনি যার মুখ দেখবেন, তারই সঙ্গে অশোকার বিয়ে দেবেন।
দৈবের লীলা কে বুঝবে? পরের দিন সকালে উঠে মুনি দেখতে পেলেন যে, এক রাজপুত্র তার অনেক লোকজন নিয়ে আশ্রমের দরজায় অপেক্ষা করছে।
মুনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এখানে এসেছো কেন?” রাজপুত্র বলল, “আমি মৃগয়া করতে বেরিয়েছিলাম কাল রাত্তিরে খুব ঝড় জল হওয়ায় আর ফিরতে পারিনি, আপনার কুটীরে আশ্রয় নিয়েছিলাম।”
মুনি দেখলেন ভাল সুযোগ, তখন তিনি রাজপুত্রকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। মুনির কথা শুনে রাজপুত্র মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজী হল আর মুনি রাজপুত্রের হাত ধরে অশোকাকে তার হাতে সঁপে দিলেন।
মুনি পরে বললেন, “কুমার! আমি তোমার পরিচয় জানি না আর তুমিও এর পরিচয় জানো না, তবুও আমার কথায় তুমি একে বিয়ে করলে—তুমি আর তোমার বাবা, এ বিয়েতে খুশীই হবেন। অশোকা খুবই গুণের মেয়ে।”
তারপর মুনি আবার অশোকাকে বললেন, “মা অশোকা, এই অশোক ফুলের বীচিগুলো দিচ্ছি নিয়ে যা আর এখান থেকে যাবার পথে বীচিগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে দিস, তাহলে রাজবাড়ি পর্যন্ত অশোকগাছের সারি হয়ে যাবে আর দরকার হলে তুই একলাই এই অশোকগাছের সারি ধরে আমার কাছে পথ চিনে আসতে পারবি।
আর অশোক ফুলগুলো শুকিয়ে রেখে দিস, চৈত্র মাসে অশোক ষষ্ঠীর দিনে ওগুলো খাস, তাহলে জীবনে কখনো শোক তাপ পাবি না।”
মুনিকে প্রণাম করে রাজপুত্র অশোকাকে সঙ্গে নিয়ে রাজবাড়িতে ফিরে গেল। রাজা-রাণী সব শুনে খুশী মনেই ছেলে-বৌকে বরণ করে ঘরে তুললেন। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল।
অশোকার সাত ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছে, রাজা-রাণী সময়মতো সকলেরই বিয়ে দিয়ে স্বর্গে গেছেন। একবার চৈত্র মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে রাজার বাৎসরিক শ্রাদ্ধের তিথি পড়ল।
অশোকা বৌয়েদের ডেকে বলল, “আজ অশোক ষষ্ঠী, আমি আজ ভাত খাবো না।” বৌয়েরা তখন মুগকড়াই সেদ্ধ করে দিল। সারা দিন কাজকর্ম করার পর ক্লান্ত হয়ে রাত্তিরে সকলেই ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন অশোকা দেখল যে, ছেলের বৌয়েরা কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। শেষে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলে অশোকা দেখলে যে, সকলেই বিছানায় মরে পড়ে আছে। এই অবস্থায় পড়ে অশোকার হঠাৎ মুনির কথা মনে পড়ে গেল।
অমনি সে অশোক গাছের সারি ধরে মুনির কাছে গিয়ে হাজির হল। মুনি অশোকার সব কথা শুনে ধ্যান করে সব কথা জানতে পারলেন আর অশোকাকে বললেন যখন সেদ্ধ করছিল তখব অসাবধানে একটা ধান তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল,
আর তাই খাওয়ার জন্যে সেই পাপে ওই দুর্দশা হয়েছে তাদের। যাক তুই এই কমণ্ডলুর জল নিয়ে গিয়ে তাদের গায়ে ছিটিয়ে দে, তাহলেই সকলে বেঁচে উঠবে। অশোক ষষ্ঠীর দিন খুব সাবধানে ছ’টি অশোক কুঁড়ি, ছ’টি মুগ কড়াই, দই দিয়ে খেয়ে তবে অন্য জিনিস খাস্।”
মুনির কাছ থেকে কমণ্ডলুর জল নিয়ে এসে, অশোকা সবার গায়ে ছিটিয়ে দিতে তারা সকলেই বেঁচে উঠলো। তার পর মায়ের মাহাত্ম্য ক্রমে ক্রমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল।
অশোক ষষ্ঠীর ব্রতের ফল— অশোকষষ্ঠী ব্রত পালন করলে নিজের ছেলে-মেয়েরা দীর্ঘজীবী হয়ে থাকে।
রামায়ণের কাহিনী অনুসারে, রামনবমীতে রাজা দশরথের ঘরে ভগবান রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন । রাবণকে বধ করার জন্য ত্রেতাযুগে রামের জন্ম হয় । রামচন্দ্রকে শ্রী ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসেবে দেখা হয় । চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ থেকে শুক্লপক্ষের নবমী তিথি পর্যন্ত – এই নবরাত্রির নবম দিনে রামনবমী উদযাপিত হয় । ভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও ভগবান রামের উল্লেখ আছে। প্রতি বছর এই দিনটিকে ভগবান রামের জন্ম তিথি হিসেবে পালন করা হয় ভারত সহ গোটা বিশ্বে। এই রাম নবমীতে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তিকে আমন্ত্রণ জানান হয়।
রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়। হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থগুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলেন রাম। সারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাম জনপ্রিয় দেবতা। লোকবিশ্বাসানুসারে, রামের জন্মস্থান হল ভারতের অযোধ্যা শহর।
এই উৎসবের দিনে মন্দ শক্তিকে পরাজিত করে ভালোর প্রতিষ্ঠা করা হয়, অর্ধমকে নিক্ষেপ করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উৎসবের দিন সকালে হিন্দুদের আদি দেবতা সূর্য দেবকে জল প্রদান করে, সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয়। রাম নবমী উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন। কিছু বৈষ্ণব হিন্দু একটি মন্দিরে যান যখন অন্যরা তাদের বাড়িতে প্রার্থনা করেন এবং কেউ কেউ পূজা এবং আরতির অংশ হিসাবে সঙ্গীত সহ ভজন বা কীর্তনে অংশগ্রহণ করেন।
রাম নবমীতে মর্যাদার প্রতিমূর্তি ভগবান রামের পুজো করলে খ্যাতি এবং সৌভাগ্য আসে। জীবনে সর্বদা সুখ এবং সমৃদ্ধি থাকে। ভগবান রামের উপাসনা করলে জীবনে ইতিবাচকতা বজায় থাকে এবং সমস্ত কাজ বিনা বাধায় সম্পন্ন হয়।রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে বিনাশ করে ধর্মকে স্থাপন করা।
এ দিন নিষ্ঠা নিয়ে পুজো করলে মনের অনেক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। ভগবানের কৃপায় সব ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এ দিন পুজো করলে।রামনবমীর দিন ভগবান রামের সঙ্গেই দেবী দুর্গারও পুজো করেন। সেক্ষেত্রে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে।
এ বছর (2023) [বাংলার 1429 সাল] চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ শুরু হবে নবমী তিথি 21th March 2023(মঙ্গলবার) রাত 10:53 মিনিট থেকে শুরু হবে কিন্তু 22nd March 2023(বুধবার)সূর্য উদয়ের সঙ্গে শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ শুরু হবে— তাই 22nd March 2023(বুধবার) থেকে নবরাত্রীর প্রথম দিন প্রতিপদ শুরু ধরা হবে।
রামনবমী-নবরাত্রীর প্রথম দিন প্রতিপদ 22nd March 2023(বুধবার) থেকে শুরু ধরা হবে।
রামনবমী-নবরাত্রীর নবম দিন অর্থাৎ নবমী তিথি 30th March 2023(বৃহস্পতিবার) রাত 11:31 পর্যন্ত থাকবে। তাই রামনবমী 30th March 2023(বৃহস্পতিবার) পালিত হবে এবং রামপূজা, সীতাপূজা এবং হনুমান ঝান্ডা পতাকা পূজন করা হবে। রাম নবমীর দিন সারা দেশের রাম মন্দিরে ভগবান শ্রী রামের আরাধনা করা হয়।
2023 সালের রাম নবমীর সময়সূচী:
নবমী তিথি শুরু – 29th March 2023 (বুধবার) রাত 09:08 PM থেকে শুরু।
নবমী তিথি শেষ – 30th March 2023 (বৃহস্পতিবার) রাত 11:31 PM পর্যন্ত।
তারিখ : 30th March 2023 (বৃহস্পতিবার)
রামনবমী বিশেষ পূজা মুহুর্ত : 10:27 AM থেকে 12:54 PM.( সময়কাল = 02 ঘন্টা 27 মিনিট )
চৈত্র নবরাত্রির রাম নবমী, মন্ত্র জপে কাটবে বাস্তুদোষ থেকে গ্রহদোষ
রাম নবমীর দিন[30th March 2023(বৃহস্পতিবার)] শুভ মুহুর্তে ভগবান রামকে ধ্যান করার সময়, "শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজমান হারান ভাবা দারুণম" এর প্রশংসায় ভগবান শ্রীরামের পূজা করুন। এতে আপনার জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায়।
রামনবমীর দিন, শুভ সময়ে রাম রক্ষা স্তোত্র পাঠ “চরিতম্ রঘুনাথস্য শতকোটি প্রবিষ্টম্। একাইকাক্ষরম পুনসান মহাপত পাঠ করুন.." পদ্ধতিগতভাবে। এতে করে আপনার জীবন থেকে সঙ্কট দূর হবে, আপনি সর্বদা সুখী থাকবেন।
হনুমান চালিসায় শ্রী রামজির পরম ভক্ত হনুমান জির প্রশংসা পাওয়া যায়। অতএব, আপনি যদি আপনার মনের কোনও ইচ্ছা রেখে রামনবমীতে হনুমান চালিসা পাঠ করেন, তবে ভগবান রাম এবং ভক্ত হনুমান উভয়ের কৃপায় আপনার ইচ্ছা পূরণ হয়।
যদি আপনার জীবনে কোনো সংকট বা বিপর্যয় আপনাকে ছেড়ে না যায়, তাহলে রামনবমীর দিন রামায়ণ বা রামচরিত মানস পাঠ করুন। এতে করে আপনার জীবনের সকল ঝামেলা দূর হয়ে যাবে।
যদি আপনি চান যে আপনার জীবনে মঙ্গল থাকুক, তাহলে এই দিনে "মঙ্গল ভবন অমঙ্গল হরি দ্রভূ সুদাসারথ আজির বিহারী" চৌপাই প্রয়োগ করে সুন্দরকাণ্ড পাঠ করুন।
আপনার বাড়িতে যদি কোনও বাস্তু ত্রুটি থাকে তবে তা দূর করার জন্য, রাম নবমীর দিন একটি পাত্রে গঙ্গাজল নিন, তারপরে ভগবান রামের ধ্যান করে, শ্রী রামের প্রতিরক্ষা মন্ত্র 'ওম শ্রীম হ্বিন ক্লেইন রামচন্দ্রায় শ্রীম নমঃ'। 108 বার জপ করুন। এর পর পাত্রে রাখা জল বাড়ির চারদিকে ছিটিয়ে দিন। এটি করলে আপনার ঘরের বাস্তু দোষ ও দৃষ্টির ত্রুটি দূর হয়।
আপনি যদি আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে রাম নবমীর দিন পদ্ধতিগতভাবে রামাষ্টক পাঠ করুন। এতে করে অর্থ উপার্জন হয়।
ব্রতকথাঃ- একসময় পদ্মযোনি ব্রহ্মাকে মহর্ষি সনক প্রশ্ন করেছিলেন ও জানতে চেয়েছিলেন যে কীভাবে দশরথ ও কৌশল্যা শ্রীরামচন্দ্রের মতো পুত্র লাভ করেছিলেন। উত্তরে ব্রহ্মা বলেছিলেন যে—মহারাজ দশরথ ও কৌশল্যা দীর্ঘদিন পুত্রাদি লাভ না করে বড়ই চিন্তিত ছিলেন। তাঁরা দুজনে একসময়ে পুত্র লাভের আশায় ভগবান সদাশিবের আরাধনা করেন। পুত্রশোকে কাতর এই দুজনের ভক্তিতে ভগবান সদাশিব খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তাঁদের কাছে এসে তাঁদের কী কামনা তা জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে তাঁরা দুজন বলেছিলেন যে কী করলে তাঁরা পুত্রলাভ করতে পারবে তার উপায় তিনি বলেছিল। এই কথা শুনে ভগবান সদাশিব বলেছিলেন যে তাঁরা যদি পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করে তাহলে স্বয়ং নারায়ণকে সন্তান হিসাবে পাবেন। এই কথা শুনে মহারাজ দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করলেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই কৌশল্যা গর্ভবর্তী হলেন এবং সঠিক সময়ে শুভলগ্নে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে, পুনর্বসু নক্ষত্রে নবমী তিথিতে স্বয়ং নারায়ণ শ্রীরামচন্দ্র রূপে জন্মগ্রহণ করলেন দশরথ গৃহে।"
এই কথা শোনার পর মহর্ষি সনক ব্রহ্মাকে এই ব্রতের নিয়ম জানতে চাইলে ব্রহ্মা বললেন যে—ব্রত পালনের আগের দিন নিরামিষ খেয়ে সংযমী হয়ে তৃণ শয্যায় শয়ন করতে হয়। পরদিন সকালে উঠে স্নান করে শুদ্ধাচারে সংকল্প করে প্রথমে কৌশল্যা, তারপর দশরথ ও পরে রামচন্দ্রের পূজা করতে হয়। পাদ্য অর্থ দিয়ে পূজা করে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে সেদিন অষ্টম প্রহরে অষ্টবিধ পূজা করতে হয় এবং ব্রতকথা শুনে রাত্রি অতিবাহিত করতে হয়। আবার পরদিন সকালে স্নান করে বিধিমতো শ্রীরামচন্দ্রের পূজা করতে হয় এবং ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে খাওয়াতে হয়। তারপর নিজে পারন করে ব্রত শেষ করতে হয়। এই ব্রতকথা শুনলে রোগী রোগমুক্ত হয়, দরিদ্র ধনবান এবং পুত্রহীনা পুত্রবর্তী হয়। ওই শ্রীরামনবমীর দিন রামচন্দ্রকে প্রণাম করে যেকোন কাজ করলে সুফল মেলে। এই তিথিতে উপোস করে রাত্রি জেগে ও তর্পন করলে ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি ঘটে। রামচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে ইষ্টমন্ত্র জপ করতে মন্ত্রের পুনঃশ্চরণ হয়। দশমীর দিন ব্রাহ্মণদের যাওয়াতে ও দক্ষিনা দিতে হয়।
ব্রতফলঃ- এই ব্রতপালনে শ্রীরামচন্দ্র সন্তুষ্ট হয়ে ব্রতীর মনবাসনা পূরণ করেন। এই ব্রত পালন করলে দুর্বিসহ গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। এই রামনবমীর দিন রামচন্দ্রকে স্মরণ করে যে কাজ করা হয় তা সর্বাঙ্গীন সুসম্পন্ন সফল হয়ে থাকে। এই ব্রতটি অতি পূণা একটি ব্রত। এই ব্রত পালনে মহাপুণ্যি হয়।
ওঁ ধ্যাত্বা নীলোৎপলশ্যামং রামং রাজীবলোচনম্। জানকীলক্ষ্মণোপেতং জটামুকুটমণ্ডিতম্ ॥১॥ শাসিতুণধনুর্ব্বাণ পাণিং নক্তঞ্চরান্তকম্। স্বলীলয়া জগৎ ত্রাতুমাবির্ভূতমজং বিভুম্। রামরক্ষাং পঠেৎ প্রাজ্ঞঃ পাপঘ্নীং সৰ্ব্বকামদম্ ৷৷ ১ ৷৷
অস্য শ্রীরাম বচস্য বুধকৌশিক ঋষিগায়ত্রীচ্ছন্দঃ শ্রীরামচন্দ্রো দেবতা শ্রীরামচন্দ্রপ্রীত্যর্থং জপে বিনিয়োগঃ ॥ ওঁ শিরো মে রাঘবঃ পাতুঃ ভালং দশরথাত্মজঃ। কৌশল্যেয়ো দৃশৌ পাতু বিশ্বামিত্রপ্রিয়ঃ শ্রুতী ॥ ২॥
ঘ্রাণং পাতু মখত্রাতা মুখং সৌমিত্রিবৎসলঃ। জিহ্বাং বিদ্যানিধি পাতু কণ্ঠং ভরত বন্দিতঃ ॥ ৩॥ স্কন্ধৌ দিব্য যুধঃ পাতু ভুজৌ ভগ্নেশকার্ম্মকঃ। করৌ সীতাপতিঃ পাতু হৃদয়ং জামদগ্নজিৎ ।। 8 ॥
বক্ষঃ পাতু কবন্ধারি স্তনৌ গীৰ্ব্বাণবন্দিতঃ। পার্শ্বৌ কুলপতিঃ পাতু কুক্ষিমিক্ষাকুনন্দনঃ ৷৷ ৫ ॥ মধ্যং পাতু খরধ্বংসী নাভিং জাম্ববদাশ্রয়ঃ। গুহ্যং জিতেন্দ্রিয়ঃ পাতু পৃষ্ঠং পাতু রঘুত্তমঃ ॥৬॥
সুগ্রীবেশঃ কটিং পাতু সখিনি হনুমপ্রভু। ঊরু রঘুত্তমঃ পাতু রক্ষঃকুলবিনাশকৃৎ ॥৭॥ জানুনী সেতুকৃৎ পাতু জঙঘদেশমখাস্তকঃ। পাদৌ বিভীষণঃ শ্রীদঃ পাতু রামোঽখিলং বপুঃ ॥৮॥
এতাং রামবলোপেতং রক্ষাং যঃ সুকৃতী পঠেৎ। স চিরায়ুঃ সুখী পুত্রী বিজয়ী বিনয়ী ভবেৎ ॥৯॥ পাতাল ভূতলব্যোমচারিণ ছদ্মচারিণঃ। ন দ্রুষ্টুমপি শক্তাস্তে রক্ষিতং রামনামভিঃ ॥ ১০॥
রামেতি রামভদ্রেতি রামচন্দ্রেতি বা স্মরন। নরো ন লিপ্যতে পাপৈর্তুক্তিং মুক্তিক বিন্দতি ৷৷ ১১ ৷৷ জগজ্জৈত্রৈক মন্ত্রেণ রামনাম্নাভি রক্ষিতম্। যঃ করে ধারয়েৎ তস্য 0 করস্থাঃ সব্বসিদ্ধয়ঃ ॥ ১২॥
ভূর্জপত্রে ত্রিমাং বিদ্যাং গন্ধচন্দনচর্চ্চিতাম্। কৃত্বা বৈ ধারয়েদ্ যস্তু সোহভীষ্টং ফলমাপুয়াৎ ॥ ১৩॥ কাকবন্ধ্যা চ যা নারী মৃতাপত্যাচ যা ভবেৎ। বহ্বপত্যা জীববৎসা সা ভবেন্নাত্র সংশয়ঃ ॥ ১৪॥
বজ্রপঞ্জরনামেদং যে রামকবচং পঠেৎ। অব্যাহতাজ্ঞঃ সর্ব্বত্র লভতে জয়মঙ্গলম্ ॥১৫ ॥ আদিষ্টবান্ যথা স্বপ্নে রামরক্ষামিমাং হরিঃ। তথা লিখিতবান্ প্রাতঃ প্রবুদ্ধো বুধকৌশিকঃ ৷৷ ১৬ ৷৷
ধন্বিনৌ বদ্ধনিস্ত্রিংশৌ কাকপক্ষধরৌ শুভৌ। বীরৌ মাং পথিরক্ষেডাং তাবুভৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥ ১৭॥ তরুণৌ রূপসম্পন্নৌ সুকুমারৌ মহাবলৌ। পুণ্ডরীক বিশালাক্ষৌ চীরকৃষ্ণাজিনাম্বরৌ ॥ ১৮ ॥
ফলমূলাশিনৌ দান্তৌ তাপসৌ ব্রহ্মচারিণৌ, পুত্রৌ দশরথস্যেতৌ ভ্রাতরৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥১৯॥ শরণ্যৌ সর্ব্বসত্ত্বানাং শ্রেষ্ঠো সৰ্ব্বধনুত্থতাম্। রক্ষঃকুলনিহস্তা রৌ ত্রায়েতাং বো রঘুপ্তমৌ৷৷ ২০ ৷৷
আত্তসজ্য ধনুযাবিষু স্পৃশাবক্ষয়া শুগণিযঙ্গ সঙ্গিনৌ। রক্ষণায় মম রামলক্ষ্মণাবগ্রতঃ পথি যদৈব গচ্ছতাম্ ॥ ২১ ॥ সন্নদ্ধঃ কবচী খড়গী চাপবাণধরো যুবা। যচ্ছন মনোরথং চাস্মান্ রামঃ পাতু সলক্ষ্মণঃ ॥ ২২ ৷৷
অগ্রতত্ত্ব নৃসিংহো মে পৃষ্ঠতো গরুড়ধ্বজঃ। পার্শ্বয়োস্ত ধনুষ্মন্তৌ সশরৌ রামলক্ষ্মণৌ ॥ ২৩ ৷৷ রামো দাশরথিঃ শূরো লক্ষ্মণানুচরো বলী। কাকুৎস্থঃ পুরুষঃ পূর্ণঃ কৌশল্যেয়ো রঘৃত্তমঃ ॥ ২৪ ৷৷
বেদাস্তবেদ্যো যজ্ঞেশঃ পুরাণঃ পুরুষোত্তমঃ। জানকীবল্লভঃ শ্রীমানপ্রমেয়পরাক্রমঃ ॥ ২৫ ॥ দক্ষিণে লক্ষ্মণো ধন্বী বামে চ জানকী শুভা। পুরতো মারুতির্যস্য তং নমামি রঘুত্তমম্ ॥ ২৬ ॥
আপদামপহত্তরং দাতারং সর্ব্বসম্পদাম্। গুণাভিরামং শ্রীরামং ভূয়ো ভূয়ো নমাম্যহম্ ॥ ২৭ ॥ এতানি মম নামানি মভক্তো যঃ সদা পঠেৎ । অশ্বামেধাযুতং পুণ্যং স প্রাপ্নোতি ন সংশয়ঃ ॥ ২৮ ॥
3. কয়েকটি কলাইয়ের ডালের সঙ্গে অল্প দই এবং সিঁদুর মাখিয়ে নিন। তার পর সেগুলো অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় সন্ধ্যাবেলা চুপচাপ রেখে আসুন। রাখার পর পিছন ফিরে আর দেখবেন না।
4. এই দিন 9 জন কুমারীকে নিজের বাড়িতে খাওয়ান। খাওয়ানোর সময় তাঁদের পছন্দ মতো কিছু জিনিস দান করুন।
5. এই দিন একটি পিতলের থালায় মাটির ন’টি গাওয়া ঘিয়ের প্রদীপ ঘরে জ্বেলে রাখুন। যত ক্ষণ পর্যন্ত প্রদীপগুলো নিজে থেকে না নিভে যায় তত ক্ষণ জ্বলতে দিন। এর ফলে বাড়িতে ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
6. এই দিন লাল কাপড়ে 11টি কড়ি কালো সুতো দিয়ে বেঁধে আলমারিতে রেখে দিন।
7. এই দিন অবশ্যই পশু পাখিদের খাবার খাওয়ান।
8. 11টি অশ্বত্থ পাতা ভাল করে গঙ্গাজলে ধুয়ে পাতার ওপর সিঁদুর দিয়ে ‘শ্রীরাম’ লিখে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের চরণে নিবেদন করুন।
নীলষষ্ঠী ব্রতের সময় বা কাল– চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠীর দিন মেয়েরা এই ব্রত করবে।
নীলষষ্ঠী ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান— বেলপাতা, ডাব, বেল, শশা, আতপচাল আর ফল। নীলষষ্ঠীর দিন উপোস করে থেকে সন্ধ্যের সময় শিবের মাথায় ডাবের জল ঢেলে শিবকে প্রণাম করে তারপর জল খেতে হয়।
নীলষষ্ঠী ব্রতকথা – এক বামুন আর বামনীর কোনো ছেলেপুলে হয়েই মারা যেত কেউ বাঁচতো না। তারা দু’জনে পরামর্শ করে একদিন তীর্থে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল।
ক্রমে তারা যখন সরযু নদীর তীরে এসে পৌঁছল তখন বামুন বলল, “চল এই জলে ডুবেই আমাদের জীবন শেষ করি, বংশ রক্ষার জন্যে যখন একটি ছেলেও রইল না, তখন বেঁচে থেকে আর ফল কী?” এই কথা বলে তারা নদীতে নামতে লাগল।
এমন সময় মা ষষ্ঠী এক বুড়ীর রূপ ধরে এসে বললেন, “ওগো বাছারা, তোমরা আর বেশী দূরে যেও না, আরও দূরে গেলে ডুবে মারা যাবে।” বামুন আর বামনী তখন তাঁকে নিজেদের দুঃখের কথা সব বলল।
মা ষষ্ঠী সব শুনে বললেন, “দোষতো তোমাদেরই বাছা, সদ্যোজাত শিশুর কান্না শুনে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তোমরা সব সময় আমায় বলতে, ‘বাবা! আপদ গেলে বাঁচি।’
কখনো বলেছ কি যে, ‘আহা, ষষ্ঠীর দাস বেঁচে থাক!’ সেই পাপেই তোমাদের এই দুর্দশা। “বামনী তখন বুড়ীর পায়ে ধরে বলল, “কে তুমি বল মা।” বুড়ী বললেন, “আমিই মা ষষ্ঠী।
শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করবি আর শিবপুজো করবি। সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে থেকে নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবেরঘরে বাতি জ্বেলে দিবি তারপর আমায় প্রণাম করে জল খাবি। একে বলে নীলষষ্ঠা। দেবী এই কথা বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এর পর বামুন আর বামনী দেশে ফিরে এসে নীলের দিন খুব ভক্তি আর নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করল। এরপর কিছুদিনের ভেতর মা ষষ্ঠীর দয়ায় বামনীর একটি সুন্দর ছেলে হল।
মা ষষ্ঠীর কথামত তার কোন অনিষ্ট হল না। বামনীর ব্রতের মাহাত্ম্য দেখে দেশে দেশে সবাই এই ব্রত পালন করতে আরম্ভ করল।
এই সময়ের প্রচণ্ড গরমে সারাদিন নির্জলা উপবাস করে সন্ধের পর নীলের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে , অর্থাত্ মহাদেবের পুজো করে, তারপর উপবাস ভঙ্গ করা হয়ে থাকে। সন্তানবতী মায়েরা সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা এই ব্রত পবালন করেন বলে নীল ষষ্ঠীর সঙ্গে প্রচলিত কথা হল - 'নীলের ঘরে দিয়ে বাতি, জল খাওগো পুত্রবতী।'
নীলষষ্ঠী ব্রতের ফল— ছেলে-মেয়ের মায়েরা নীলষষ্ঠী ব্রত করলে তাদের সন্তানদের অমঙ্গল কোনো দিনই হয় না।