দুর্গতি কাকে বলে ? উত্তর:- ব্রহ্ম থেকে দূরে যে গতি শাস্ত্রে তাহাকেই "দুর্গতি" বলে l কোনো জীব যখন তার অনন্ত কামনার দাস হয়ে , সেই কামনা পূরণের জন্যে জন্ম-জন্মান্তর বিভিন্ন দেহে , বিভিন্নরূপে , বিভিন্নসম্পর্কে , বিভিন্নপদ্ধতিতে , বিভিন্নকর্মে , বিভিন্নভাবে , বিভিন্নঅনুভবে , বিভিন্নবিকাশে , বিভিন্নস্থানে অনবরত ঘুরতে -ঘুরতে পরমাত্মাকেই ভুলে শুধু কামনা পূরণের কাজেই দিন-রাত ব্যস্ত থাকে --- তখন সেই জীব পরমাত্মা থেকে বহু দূরে গতি প্রাপ্ত হয় --- শাস্ত্রে তাকেই "দুর্গতি" বলে l অর্থাৎ যে জীব ধর্মের রাস্তায় না চলে , মোক্ষ এর রাস্তায় না চলে ,পরমাত্মা প্রাপ্তির রাস্তায় না চলে শুধু কামনা-বাসনার দাস হয়ে কামনা পূরণের জন্যে জন্ম-জন্মান্তর অনবরত ঘুরতে -ঘুরতে পরমাত্মাকেই ভুলে শুধু কামনা পূরণের কাজেই দিন-রাত ব্যস্ত থাকে --- তখন সেই জীব পরমাত্মা থেকে বহু দূরে গতি প্রাপ্ত হয় --- শাস্ত্রে তাকেই "দুর্গতি" বলে l
কালী বাগীশ্বরী, শব্দব্রহ্মময়ী । তাঁর কন্ঠের পঞ্চাশৎ মুণ্ড বস্তুতঃ পঞ্চাশৎ বর্ণমালার প্রতীক । কামধেনু তন্ত্রে স্বয়ং মা নিজেই এর পরিচয় দিয়ে বলেছেন- “মম কন্ঠে স্থিতং বীজং পঞ্চাশদ্ বর্ণমদ্ভুতম্ ।” কন্ঠের মুণ্ডমালা সংস্কৃত সেই বর্ণমালার প্রতীক । কন্ঠ হোলো আকাশতত্ত্বের ভূমি । আকাশ তত্ত্বের সাথে শব্দ তত্ত্বের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । আকাশ তত্ত্বের প্রতীক মায়ের শ্রীকন্ঠের ভূষণ তাই শব্দ তত্ত্বের স্মারক বর্ণমালা । জগতের বেদ বেদান্ত – তন্ত্রাদি সকল অধ্যাত্ম জ্ঞানমূলক শাস্ত্র নানা লৌকিক বিদ্যার প্রকাশ ও প্রচারণা- বর্ণমালা বা শব্দের সাহায্যেই হয় । মানবদেহে এই জ্ঞান কেন্দ্র হলো মেধা বা মস্তিস্ক । সুতরাং দেবী কালীর কণ্ঠভূষণ লৌকিক ও অতিলৌকিক নিখিল জ্ঞানরাশি সম্যক্ সমাহার । দেবী স্বয়ং চিৎস্বরূপা সুতরাং তাঁর কণ্ঠভূষণ চিন্ময় উপাদানেই নির্মিত ।
তন্ত্রে বলা হয়েছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড শব্দ দ্বারাই সৃষ্টি । বর্ণ হল ৫০টি ( আদি বর্ণ নিয়ে ৫১টি)। এগুলিই সংস্কৃত অক্ষরের বর্ণ । দিগম্বরী মায়ের গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ড হয়ে এই বর্ণই শোভা পাচ্ছে । ধ্বংসের মধ্যে অর্থাৎ শ্মশানে শবরূপ শিবের বুকে মা দাঁড়িয়ে আছেন । মায়ের ধ্বংস রূপের অর্থ প্রলয়কালে সকল বর্ণকে তিনি নিজের মধ্যে গ্রহণ করে নেন । একেই বলে মহাপ্রলয় । শিববিন্দুতে প্যাঁচানো মহাকুণ্ডলী হিসেবে তাঁর থেকেই বর্ণ সমূহের সৃষ্টি হয়েছে । মহাকুণ্ডলী যখন এক প্যাঁচে থাকেন তখন তিনি বিন্দু । যখন তাঁর দুই প্যাঁচ তখন প্রকৃতি + পুরুষ । তিন প্যাচে তিনি নানাবিধ শক্তি ও গুন । যেমন ইচ্ছা, জ্ঞান ও ক্রিয়া ; রজ, সত্ত্ব, তমঃ । তিন ও অর্ধ প্যাঁচে মহাকুণ্ডলী বিকৃতিরূপে দেখা দেন । এখান থেকেই প্রকৃতি ৪৯ টি নানা নামে অবতরণ করেন । তিনি তখন সৃষ্টিমুখী । এই ভাবে মহাকুণ্ডলী থেকে বিন্দু ও প্রকৃতি + পুরুষ অবস্থা নিয়ে প্রকৃতির একান্নটি প্যাঁচ । শক্তিসঙ্গম তন্ত্র মতে মহাকুণ্ডলীর ৪৯ প্যাঁচ শক্তির নানা নাম । যেমন ১) একজটা ২) উগ্রতারা ৩) সিদ্ধকালী ৪) কালসুন্দরী ৫) ভুবনেশ্বরী ৬) চণ্ডিকেশ্বরী ৭) দশমহাবিদ্যা ৮) শ্মশানকালিকা ৯) চণ্ড ভৈরবী ১০) কামতারা ১১) বশিকরণ কালিকা ১২) পঞ্চদশী ১৩) ষোড়শী ১৪) ছিন্নমস্তা ১৫) মহামধুমতী ১৬) মহা পদ্মাবতী ১৭) রমা ১৮) কামসুন্দরী ১৯) দক্ষিণা কালিকা ২০) বিদ্যেশী ২১) গায়ত্রী ( ২৪ প্যাঁচ ) ২২) পঞ্চমী ২৩) ষষ্ঠী ২৪) মহারত্নেশ্বরী ২৫) মহাসঞ্জীবনী ২৬) পরমকলা ২৭) মহানীলসরস্বতী ২৮) বসুধারা ২৯) ত্রৈলোক্যমোহিণী ৩০) ত্রৈলোক্যবিজয়া ৩১) মহাকামতারিণী ৩২) অঘোরা ৩৩) সমিত মোহিণী ৩৪) বগলা ৩৫) অরুন্ধতী ৩৬) অন্নপূর্ণা ৩৭) নকুলী ৩৮) ত্রিকণ্টকী ৩৯) রাজ্যেশ্বরী ৪০) ত্রৈলোক্যকর্ষিণী ৪১) রাজরাজেশ্বরী ৪২) কুক্কুটী ৪৩) সিদ্ধবিদ্যা ৪৪) মৃত্যুহারিণী ৪৫) মহাভগবতী ৪৬) বাসবী ৪৭) ফেটকরী ৪৮) মহাশ্রী মাতৃসুন্দরী ৪৯) শ্রী মাতৃকোৎপত্তিসুন্দরী ।