জ্ঞান এর পথ একমাত্র কে দেখাতে সমর্থ ?
জ্ঞান এর পথ একমাত্র কে দেখাতে সমর্থ ?
উত্তর :-
বহিরঙ্গশিক্ষা দ্বারা আমরা বহিরঙ্গ বা জড় বা বাস্তবিক জগতের সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর প্রতিপালন করার যোগ্যতা অবশই তৈরি হয় , তার সঙ্গে সামাজিক সম্মান , পদ, অর্থ ও নানা সুবিধা লাভ হয় - যেটা সংসারিক বহিরঙ্গ জীবনের জন্যে অতিব প্রয়োজন l আবার সেক্ষেত্রে প্রকৃত সন্ন্যাসীদের জন্যে কোনো প্রকারের বহিরঙ্গশিক্ষার যোগ্যতা লাভের প্রয়োজন পড়ে না-কেননা তাদের জগতের সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য
থেকে না তাই বহিরঙ্গশিক্ষার যোগ্যতা লাভের দরকার পড়ে না l তাই বহিরঙ্গশিক্ষার কার কতটা প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে প্রত্যেক ব্যাক্তির আধার বা প্র্রারাদ্ধকর্ম বিশেষে I তাই প্রত্যেক ব্যাক্তির আধার বা প্র্রারাদ্ধকর্ম বিশেষে বহিরঙ্গশিক্ষার প্রয়োজন কার কতটা কম বা বেশি-সেটার সঙ্গে জ্ঞান লাভের কোনো সম্পর্ক নেই - কারণ এটার দ্বারা অর্থ উপার্জন এর যোগ্যতা ,সামাজিক সম্মান , পদ, দ্রব্য ও নানা সুবিধা লাভ হয় I কোনো কারণেই এর দ্বারা জ্ঞান লাভ সম্ভব হয় হয় না I অবশ্য সামাজিক ও সাংসারিক সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর প্রতিপালন করার জন্যে ও বাস্তবিক জগতের পরিপূর্ণতার জন্যে এই বহিরঙ্গশিক্ষা অতীব অবশ্যক I
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে যদি কেও এই বহিরঙ্গশিক্ষাকেই জ্ঞান ভাবে শাস্ত্রানুসারে সে ব্যাক্তি "মহামূর্খ " - কারণ শাস্ত্রে বার বার বলেছে যে এর দ্বারা প্রকৃত জ্ঞান হয় না -এটা মূলত অর্থকরী যোগ্যতা I উপরন্তু কেও যদি এই বহিরঙ্গশিক্ষাকেই জ্ঞান ভাবে - শাস্ত্রানুসারে সেই ব্যাক্তির মনুষ্য হিসাবে "অধঃপতন নিশ্চিত" I
শাস্ত্রে আছে যে মনুষ্য জীবন চতুর্বর্গ লাভে পরিপূর্ণ হয় -
1.ধর্ম ( উন্নত মানবিক দৃঢ় চরিত্র গঠন )
2.অর্থ (সামাজিক ও সাংসারিক সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর যোগ্যতা )
3.কাম ( স্ত্রী ও সন্তান - বিশেষ করে সৃষ্টির কল্যাণ কারণে বংশ বিস্তার )
4. মোক্ষ ( মনুষ্যজন্ম বা মনুষ্যশরীর ধরণের উদ্দেশ্য এর পরিপূর্ণতা )
যে ব্যাক্তি মনুষ্য জীবনএ এই "চতুর্বর্গ " লাভ করতে সমথ হন তাকে মনুষ্যজীবনের বা মনুষত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ বলা হয় I
তাই শাস্ত্রানুসারে "দৃঢ় ধর্ম আচরণ " এর মাধ্যমে উন্নত মানবিক দৃঢ় চরিত্র গঠন হয় এবং সেই ব্যাক্তি সমাজ- দেশ এর কল্যাণকারী হয় -তার দ্বারা কোনো জীবের কোনো ক্ষতি হওয়া সম্ভব নয় I
প্র্রারাদ্ধকর্ম ও বহিরঙ্গশিক্ষার দ্বারা ' কাম ও অর্থ" এর যোগ্যতা তৈরি হয় I
আর "অন্তরঙ্গশিক্ষা ও কৈবল্য শিক্ষা" এর দ্বারা পূর্ণ জ্ঞান এর প্রাপ্তির পর মোক্ষ প্রাপ্তি হয় I
তাই এক কোথায় বলা যেতে পারে যে - >> "বহিরঙ্গশিক্ষা+অন্তরঙ্গশিক্ষা+ধর্মশিক্ষা বা কৈবল্য শিক্ষা"= "চতুর্বর্গ লাভ [ ধর্ম+অর্থ+কাম+মোক্ষ ] "= মনুষ্যজীবনের বা মনুষত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ I
আজকের যুগে বা আজকের দিনে বহিরঙ্গশিক্ষা বিভিন্ন স্কুল - কলেজ বা বিভিন্ন প্রতিষ্টানে দেওয়া হয় যার সেখানে যে যে ব্যাক্তি ওই বহিরঙ্গশিক্ষা আমাদিকে দিয়ে থাকেন তাকে আমরা "শিক্ষক " বলি I যার এর একটা কথা আগে বলতে ভুলে গিয়েছি তার জন্যে আমি ক্ষমা প্রার্থী - এই বহিরঙ্গশিক্ষাকে শাস্ত্রানুসারে "অবিদ্যা " বলে I সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর প্রতিপালন এর জন্যে অবশই এই "অবিদ্যার " অতি প্রয়োজন I তাহলে এই
"বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার" শিক্ষা যেটা সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর প্রতিপালন এর জন্যে অতি প্রয়োজন - সেটা বিভিন্ন স্কুল - কলেজ বা বিভিন্ন প্রতিষ্টানে কিছু কিছু ব্যাক্তির মাধ্যমে দেওয়া হয় - আর সেখানে যে যে ব্যাক্তি ওই বহিরঙ্গশিক্ষা আমাদিকে দিয়ে থাকেন তাকে আমরা "শিক্ষক " বলি I
তাহলে ভালোকরে বুঝতে হবে যে :- যিনি "বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার" শিক্ষা দেন তাকে আমরা "শিক্ষক বা শিক্ষিকা " বলি I
তাহলে আমরা "শিক্ষক বা শিক্ষিকা ' কাদের বলি যারা "বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার" শিক্ষা দেন -তাদিকে বলি -- এটা ভীষণ ভাবে মনে রাখতে হবে আমাদের সবাইকে I
এরপর বলুন আমাদের "বিদ্যা " এর দেবী বলে আমরা কাকে পূজা করি - মা সরস্বতীকে , তাই না !!!
তাহলে মা সরস্বতী "বিদ্যার না অবিদ্যার "দেবী ?? নিশ্চয় আমরা সবাই জানি যে "মা সরস্বতী" "বিদ্যারদেবী"- কোনোদিনই "মা সরস্বতী" অবিদ্যার দেবী নন I
নিশ্চয় আমরা সবাই জানি যে - মা সরস্বতী "বিদ্যারুপি বা জ্ঞান রুপি ফল " প্রদান করেন , কিন্তু এখানে প্রশ্ন যে তাহলে "বিদ্যা বা জ্ঞান" এর প্রকৃত পথ কে দেখান ?
এর উত্তর ও আমরা সবাই জানি যে ->> মা সরস্বতী "বিদ্যারুপি বা জ্ঞান রুপি ফল " প্রদান করেন কিন্তু "বিদ্যা বা জ্ঞান" এর প্রকৃত পথ একমাত্র "সৎগুরুই " দেখান (শাস্ত্র প্রমাণানুসারে )
একমাত্র যিনি "অন্তরঙ্গশিক্ষা এবং ধর্মশিক্ষা বা কৈবল্য শিক্ষার " পথ দেখান তাকেই বা তাহাদিগকেই একমাত্র " গুরু " শাস্ত্রানুসারে বলে I
তাহলে যিনি বা যারা "বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার" শিক্ষা দেন তারা "শিক্ষক বা শিক্ষিকা " , একমাত্র যিনি বা যারা "অন্তরঙ্গশিক্ষা এবং ধর্মশিক্ষা বা কৈবল্য শিক্ষার " পথ দেখান তারাই "গুরুদেব " শাস্ত্রানুসারে বলে I
তাই "বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার" শিক্ষা "শিক্ষক বা শিক্ষিকা " এর কাছেই শিক্ষা নিতে হবে সামাজিক-সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এর প্রতিপালন এর যোগ্যতা এর জন্যে , আর "অন্তরঙ্গশিক্ষা এবং ধর্মশিক্ষা বা কৈবল্য শিক্ষার " শিক্ষা শাস্ত্রসম্মত লক্ষন সম্পন্ন " গুরু " এর কাছে থেকেই শিক্ষা নিতে হবে
ধর্ম ও মোক্ষ এর পরিপূর্ণতার জন্যে I
তাহলে জানা গেলো যে - আমরা যদি মনুষ্যজীবনের বা মনুষত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ এর পথে যেতে চাই তাহলে আমাদিকে অবশ্যৈ শাস্ত্রসম্মত লক্ষন সম্পন্ন " গুরু " এর কাছে থেকেই শিক্ষা নিতে হবে I এটা কোনো বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষক বা শিক্ষিকা " এর নিকটে পাওয়া সম্ভব নয় I
তাই বহিরঙ্গশিক্ষা=অবিদ্যার শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে " গুরু " বলে সম্ভোধন করে শাস্ত্রসম্মত লক্ষন সম্পন্ন সেই মহান " গুরু " শব্দটির অপমান কেউ করবেন না - এটা আমাদের বিশেষ অনুরোধ I
কারণ শিক্ষক বা শিক্ষিকা কোনোদিন গুরু হতে পারেন না কিন্তু " গুরু" অবশ্যৈ সব হতে পারেন I
শাস্ত্রানুসারে গুরু আবার দুই রকম হয় :-
1. শিক্ষা গুরু ( যিনি অন্তরঙ্গশিক্ষা প্রদান করেন )
2. দীক্ষা গুরু ( যিনি ধর্মশিক্ষা বা কৈবল্য শিক্ষা প্রদান করেন )
তাহলে উপরুক্ত প্রশ্নের উত্তরে জানা গেলো যে শাস্ত্রসম্মত লক্ষন সম্পন্ন সেই মহান " গুরুই " একমাত্র জ্ঞান এর পথ একমাত্র কে দেখাতে সমর্থ I কোনো কেহ নহে I তাই শাস্ত্রানুসারে -শাস্ত্রসম্মত লক্ষন সম্পন্ন সেই মহান " গুরু" না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৃত জ্ঞান এর পথ পাওয়া সম্ভব নয় I