গায়ত্রী জপ নিয়মঃ
গায়ত্রী মন্ত্র
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্ভরেণ্যম ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ ।
গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ:---
সেই প্রাণস্বরূপ, দুঃখনাশক, সুখস্বরূপ, শ্রেষ্ঠ, তেজস্বী, পাপনাশক, দেবস্বরূপ পরমাত্মাকে আমরা নিজের অন্তঃকরণে ধারণ করব। সেই পরমাত্মা আমাদের বুদ্ধিকে সন্মার্গের দিকে প্রেরিত করুন।
গায়ত্রী পাঠের নিয়ম :----- প্রতিদিন সকাল , দুপুর ও সন্ধ্যায় হাত , পা ও মুখ ধুয়ে পূর্বমুখী বা উত্তরমুখী হয়ে এক মনে গায়ত্রী পাঠ করতে হয় । ১০৮ বার পাঠ করতে হয় । কমপক্ষে দশবার । সকালে গায়ত্রী পাঠের পূর্বে জল গ্রহণও করতে নেই ।
গায়ত্রী জপ নিয়মঃ :---
প্রাত: সন্ধ্যায় *** নিজ বক্ষের সন্নিকটে বাম হাত চিৎ করত: তদুপরি দক্ষিণ হস্ত ঐ রূপভাবে স্থাপন করত: জপ করিতে হইবে।
মধ্যাহ্ন সন্ধ্যায়:****বুকের কাছে দক্ষিণ হস্ত কাইৎ করত: তাহার উপরে বামহস্তে কাইৎ করিয়া স্থাপন পূর্ব্বক জপ করিবেন।
সায়াহ্ন সন্ধ্যায়:****বক্ষ সন্নিধানে দক্ষিণ হস্ত উপুড় করত: তাহার উপরে বমহস্ত রাখিয়া ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে যজ্ঞোসূত্র ধরিয়া জপ করিতে হইবে।
গায়ত্রী জপ বিসর্জন:---কুশীতে জল লইয়া নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করত:
পাঠ শেষে উক্ত জল তাম্র কুন্ডে দিয়া জপ বিসর্জ্জন করিবেন।
মন্ত্র যথা,
ওঁ উত্তর শিখরে যাতে ভূমাং পৰ্ব্বত বাসিনী। ব্ৰহ্মনা সমুনাজ্ঞাতা গচ্ছ দেবী যথা সুখং ॥
গায়ত্রী বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র। পরমাত্মার ধ্যানের জন্য গায়ত্রী সিদ্ধ বৈদিক মন্ত্র। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি বিশ্বামিত্র এবং দেবতা সবিতা। ঋষি বিশ্বামিত্র সর্বপ্রথম এই মন্ত্রের মর্ম্ম উপলব্ধি করে প্রচার করেছিলেন। মন্ত্রের দেবতা বা বিষয় সবিতা অর্থাৎ জগৎ-স্রষ্টা ব্রহ্মা। বেদারম্ভ সংস্কারে আচার্য এই মন্ত্রে ব্রম্মচারীকে দীক্ষা দান করেন। অন্যান্য মন্ত্রের তুলনায় গায়ত্রী মন্ত্রকে অধিক শক্তিশালী । এই মন্ত্র জপ করার জন্য কোনও বিশেষ সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মেনে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে নানা সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
গায়ত্রী মন্ত্র দিয়ে দেবতা সবিতৃকে আবাহন করা হয়। তাই গায়ত্রী মন্ত্রের অন্য নাম "সাবিত্রী মন্ত্র"
এটি ঋগ্বেদের (মণ্ডল ৩।৬২।১০) একটি সূক্ত। গায়ত্রী মন্ত্র গায়ত্রী ছন্দে রচিত। গায়ত্রী মন্ত্র ও এই মন্ত্রে উল্লিখিত দেবতাকে অভিন্ন জ্ঞান করা হয়। তাই এই মন্ত্রের দেবীর নামও গায়ত্রী। গায়ত্রী মন্ত্র দিয়ে শুধু পূজাই হয় না, গায়ত্রী মন্ত্রকেও পূজা করা হয়।এই মন্ত্রে বলা হয়েছে, হে সবিতা, তুমি অন্তরীক্ষ, জল, স্থল সকল কিছু সৃষ্টি করেছ। তুমি সকল ভূত, পশুপাখী, স্থাবর জঙ্গম ইত্যাদিকে স্ব স্ব স্থানে রেখেছ। ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র, অর্য্যমা বা রুদ্র সবাই তোমার শক্তিতে বলীয়ান। কেউ তোমাকে হিংসা করে না। হে পরমেশ্বর, তোমার দুতিমান জ্যোতিকে (অথ্যাত্, সকল প্রকাশ যুক্তশক্তি এবং অপ্রকাশিত অতিন্দ্রিয় শক্তিকে) আমরা নমষ্কার করি। তুমি সকলের কল্যাণ কর। আমাদের জন্যে যেন সকল কিছু শুভ হয়। এটাই এই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা সবিতার তাত্পর্য। বেদভাষ্যকার সায়নাচার্য গায়ত্রী মন্ত্রে সূর্য ও সবিতার দুই রকম অর্থ করেছেন। তাঁর মতে এই মন্ত্রে সবিতা হল, সকল কারণের কারণ সেই সচ্চিদানন্দ নিরাকার পরম ব্রহ্ম বা জগত স্রষ্টা। "সু" ধাতু থেকে সবিতৃ নিষ্পন্ন হয়েছে, যায় জন্যে সবিতার অর্থ এক্ষেত্রে প্রসবিতা বলে উল্লিখিত হয়েছে। নিরুক্তিকার যস্ক এর অর্থ করেছেন "সর্ব্বস্য প্রসবিতা।
দেবী গায়ত্রীর তিন রূপ। সকালে তিনি ব্রাহ্মী; রক্তবর্ণা ও অক্ষমালা-কমণ্ডলুধারিনী। মধ্যাহ্নে বৈষ্ণবী; শঙ্খ, চক্র, গদা ধারণকারিনী। সন্ধ্যায় শিবানী; বৃষারূঢ়া, শূল, পাশ ও নরকপাল ধারিনী এবং গলিত যৌবনা।
1. একাগ্রতা ও জ্ঞান বাড়ায় গায়ত্রী মন্ত্র---দুর্বল স্মরণশক্তিও এই মন্ত্র জপের ফলে মজবুত হয়। শিক্ষায় সাফল্য লাভ করার জন্য প্রতিদিন গায়েত্রী মন্ত্র জপ করা উচিত।
2.জ্যোতিষশাস্ত্রে শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পেতে একটি উপায়ের উল্লেখ রয়েছে। যজ্ঞের সময় গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করে নারকেল কোড়া ও ঘিয়ের আহুতি দিলে শত্রু মুক্তি সম্ভব হয়। আবার নারকেল কোড়ায় মধু মিশিয়ে আহুতি দিলে ভাগ্যোদয় হয়। অন্যদিকে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে বাস্তুর কারণে সৃষ্ট অশুভ শক্তির প্রভাব খর্ব করা যায়। মনে করা এই মন্ত্র জপের ফলে জীবনে উৎসাহ এবং ইতিবাচক শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। কঠিন ও খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়। এমনকি ব্যক্তি সেবার কাজে নিযুক্ত হয়। জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
3. রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে:---রাগী ব্যক্তিদের এই মন্ত্র জপ করা উচিত। গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায় এবং ব্যক্তির রাগ ধীরে ধীরে শান্ত হয়।
4. সিদ্ধি লাভের জন্য:--- নিয়মিত গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে সিদ্ধি লাভ করা যায়। এটি সাফল্য প্রদানকারী মন্ত্র। কাজে ক্রমাগত বাধা এলে বা সাফল্য লাভ করতে না-পারলে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করে সিদ্ধি লাভ করা যায়।
5. রোগ মুক্তি এই মন্ত্রে:-----গায়ত্রী মন্ত্র নিয়মিত জপ করলে নানান ধরণের রোগ, ব্যাধির হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণের ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ও শরীর রোগমুক্ত হয়। চোখের প্রখর দৃষ্টি শক্তির জন্য গায়ত্রী মন্ত্র জপ উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে শুভক্ষণে দুধ, দই, ঘি ও মধু মিশিয়ে হাজারবার গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করলে চোখ ও পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মনে করা হয়, গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করলে শরীরে রক্ত সঞ্চার সঠিক ভাবে হয়। এ ছাড়া অ্যাজমা রোগীরা এই মন্ত্র জপ করলে উপকার পেতে পারেন।
6. জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী সূর্যের জন্যই এই গায়ত্রী মন্ত্র। এই মন্ত্র জপ করলে কোষ্ঠিতে সূর্য শক্তিশালী হয়। সূর্য শক্তিশালী হলে মান, সম্মান বৃদ্ধি পায়, সরকারি কাজে সাফল্য লাভ করা যায়। তাই সূর্যকে প্রসন্ন করতে গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করা উচিত।
7. সন্তান লাভ ও সন্তানকে রোগমুক্ত করতে:-----কোনও দম্পতির যদি সন্তান লাভে সমস্যা দেখা দেয় অথবা সন্তান অসুস্থ থাকে, তা হলে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই সাদা কাপড় পরে ‘গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করুন। এমন করলে সন্তান লাভ সম্ভব হবে। আবার অসুস্থ সন্তানের রোগমুক্তি ঘটতে পারবে।
8. বেদজ্ঞ আচার্যের কাছে এই মন্ত্রে দীক্ষিত হলে তার পূণর্জন্ম হয় ও তিনি দ্বিজ নামে আখ্যাত হন। এই মন্ত্রটি জপ করে ঈশ্বর প্রাপ্ত হয় ---
এই মন্ত্র ধ্যান বা পাঠে মুক্তি প্রাপ্ত হয়
9. গায়ত্রী পাঠ করলে মন , প্রাণ উদার ও সুন্দর হয় । আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে , বিশ্বের সব কিছু ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন রূপ । গায়ত্রী পাঠে সকলের মধ্যে একই ঈশ্বর বিদ্যমান , তিনি আমাদের বুদ্ধিমাতা , তার শরণ নিলে তিনি মায়া থেকে মুক্ত করেন - এ জ্ঞান লাভ হয় ।
10. এই মন্ত্র জপ করলে ১) উত্সাহ এবং ইতিবাচকতা বৃদ্ধি, ২) মন ধর্ম এবং সেবার কাজে নিযুক্ত থাকে ৩) ভবিষ্যদ্বাণী শুরু হয় ৪) প্রার্থণা করার শক্তি বৃদ্ধি পায়, ৫) স্বপ্ন সাধনা হয়, ৬) ক্রোধ শান্ত হয় ৭) মনকে কাবু করার ক্ষমতা তৈরি হয়।