গুরু পূজা মন্ত্র
মন্ত্র সত্যং পূজাসত্যং সত্যম্ দেব নিরঞ্জনম্।
গুরুর্বাক্য সদাসত্যং সত্যমেব পরম্ পদম্।। ১
গুরু প্রদত্ত মন্ত্র সত্য, পূজাও সত্য। দেবাদিদেব নিরঞ্জনও সত্য। গুরু বাক্য সদা সত্য, সেই পরমপদ সত্যের দ্বারা আস্তীর্ন।
গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ
গুরুরেব পরমব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ২
ভাবার্থঃ
গুরুই সৃষ্টিকর্তা, গুরুই পালনকর্তা, গুরুই ধ্বংসকর্তা, গুরুই সেই পরমব্রহ্ম, আমি সেই পরমগুরুকে নমস্কার করি।
অখণ্ড মন্ডলাকারং ব্যপ্তং যেন চরাচরম্
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ৩
ভাবার্থঃ
যার দ্বারা অখণ্ড মন্ডলাকার চরাচর জগৎ ব্যপ্ত হয়ে আছে, তাঁর স্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার।
অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৪
ভাবার্থঃ
অজ্ঞতায় অন্ধ ব্যাষ্টির চক্ষু যিনি জ্ঞানাঞ্জন শলাকা দিয়ে উন্মীলিত করে দিয়েছেন, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
স্থাবরং জঙ্গমং ব্যাপ্তং যৎকিঞ্চিৎ সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।।৫
ভাবার্থঃ
সপ্রাণ এবং অপ্রাণ সচল ও অচল সমস্ত বস্তুসমুহ যে ব্রহ্মের দ্বারা ব্যাপ্ত, তার স্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই পরম গুরুকে নমস্কার করি।
চিদ্ রূপেন পরিব্যাপ্তং ত্রৈলোকং সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৬
ভাবার্থঃ
চরাচর সহ ত্রিলোক জ্ঞান স্বরূপ (ব্রহ্মের) দ্বারা পরিব্যাপ্ত, তৎস্বরূপ যিনি দর্শন করিয়েছেন সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
সর্বশ্রুতি শিরোরত্ন সমুদ্ভাসিত মূর্তয়ে।
বেদান্তম্বুজ সূর্যায় তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৭
ভাবার্থঃ
যাহার মূর্তি বেদান্তজ্ঞানের দ্বারা সমুদ্ভাসিত, যিনি বেদান্তরূপ পদ্মের উন্মেলক সূর্য স্বরূপ, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
চৈতন্যং শাশ্বতং শান্তং ব্যোমাতীতং নিরঞ্জনং।
বিন্দুনাদকলাতীতং তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৮
ভাবার্থঃ
যিনি শাশ্বত শান্ত ব্যোমাতীত ও নিরঞ্জন চৈতন্যস্বরূপ এবং যিনি বিন্দু, নাদ ও কলার অতীত, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
অনেক জন্ম সংপ্রাপ্ত কর্মবন্ধ বিদাহিনে।
আত্মজ্ঞান প্রদানেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ৯
ভাবার্থঃ
যিনি আত্মজ্ঞান রূপ অগ্নিদান করে বহু জন্মে সঞ্চিত কর্মরূপ কাষ্ঠকে দহন করেন, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
ন গুরোরধিকং তত্ত্বং ন গুরোরধিকং তপঃ।
তত্ত্বজ্ঞানং পরংনাস্তি তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১০
ভাবার্থঃ
গুরুর অধিক তত্ত্ব নাই, গুরুর (সেবা) অধিক তপস্যা নাই, এবং যদ্বিষয়ক তত্ত্বজ্ঞান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কিছুই নাই, সেই পরম গুরুকে নমস্কার করি।
মন্নাথঃ শ্রীজগন্নাথো মদ্ গুরুঃ শ্রীজগদগুরুঃ।
মদাত্মা সর্বভূতাত্মা তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১১
ভাবার্থঃ
নাথই শ্রীজগন্নাথ, গুরুই শ্রীজগদ্ গুরু, আমার আত্মাই সর্বভূতের আত্মা, সেই শ্রী গুরুকে নমস্কার করি।
গুরুরাদিরনাদিশ্চ গুরুঃ পরম দৈবতম্।
গুরোঃপরতং নাস্তি তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১২
ভাবার্থঃ
গুরুই কারণ এবং কারণহীন, গুরুই পরম দেবতা, গুরু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কেহ নাই, সেই পরমগুরুকে নমস্কার করি।
ধ্যানমূলং গুরোর্ম্মূর্ত্তি পূজামূলং গুরোঃ পদম্।
মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরো কৃপা।। ১৩
ভাবার্থঃ
একমাত্র গুরুমূর্ত্তির ধ্যানই মূল, গুরুর পদযুগল পূজাই সকল পূজার মূল।
গুরুর বাক্যই সকল পূজার মন্ত্র, গুরুদেবের কৃপাই মোক্ষপ্রাপ্তির মূল–একমাত্র গুরুদেবের কৃপাতেই মুক্তিলাভ হয়ে থাকে।
চিন্ময়ং ব্যাপিতং সর্ব্বং ত্রৈলোকং সচরাচরম্।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১৪
ভাবার্থঃ
যিনি চিন্ময়রূপে অতি সুক্ষ্মরূপে ত্রিলোকে ব্যাপিয়া বর্তমান আছেন ও যিনি ব্রহ্মপদ দেখাচ্ছেন, অজ্ঞাননাশক সেই গুরুকে নমস্কার করি।
সংসার -বৃক্ষমারুঢ়াঃ পতন্তি নরকার্ণবে।
যেনোদ্ধৃত্মিদং বিশ্বং তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।। ১৫
ভাবার্থঃ
সংসাররূপ বৃক্ষে আরোহন পূর্ব্বক মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞানতাবশতঃ কতই না কুকর্ম করে ভয়ানক নরক সমুদ্রে পতিত হয়।
যিনি নরকে পতিত প্রানীকে জ্ঞান দান করে উদ্ধার করেন সেই ত্রাণকর্তা গুরুদেবকে নমস্কার করি।
ব্রহ্মানন্দং পরম সুখদং কেবলং জ্ঞান মূর্ত্তিং।
বিশ্বাতীতং গগনসদৃশং তত্ত্বমস্যাদি লক্ষ্যম্।। ১৬
ভাবার্থঃ যিনি ব্রহ্মানন্দস্বরূপ পরম সুখদ, নির্লিপ্ত, চিতিশক্তি রূপ জ্ঞানমূর্ত্তি বিশ্বাতীত গগনসদৃশ, তত্ত্বমসি প্রভৃতি বাক্যের লক্ষ্য, সেই পরম গুরুর বেদিমূলে আত্মসমর্পণ করলাম।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্বধীসাক্ষীভূতং।
ভাবাতীতং ত্রিগুণরহিতং সদগুরুং তং নমামি।। ১৭
ভাবার্থঃ
একং নিত্যং সেই অদ্বিতীয় ব্রহ্ম, বিমল, অচল, সকল বুদ্ধির সাক্ষী স্বরূপ, ভাবাতীত এবং ত্রিগুণ রহিত, সেই সদগুরুকে আমি নমস্কার করি।
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং বদামি,
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং ভজামি।
শ্রীমৎপরং ব্রহ্ম গুরুং স্মরামি,
শ্রীমৎ পরমব্রহ্ম গুরুং নমামি। ১৮
ভাবার্থঃ
শ্রীগুরু পরমব্রহ্মস্বরূপ, গুরুশব্দ সর্বদা মুখে বলি ও পরমব্রহ্মরূপ শ্রীগুরুদেবকে ভজনা করি।
পরমব্রহ্মস্বরূপ শ্রীগুরুদেবকে মনে মনে দিবা রাত্রি চিন্তা করি এবং পরমব্রহ্মস্বরূপ শ্রী গুরুদেবকে প্রণাম করি।
তব দ্রবং জগৎগুরো তুভ্যমেব সমর্পয়ে।
ভাবার্থঃ
হে জগতের গুরু আমার এই মন যা তোমারই জিনিস তোমারই পদমূলে সমর্পণ করলাম।
গুরু কৃপা হি কেবলম্।
ব্রহ্ম কৃপা হি কেবলম্।
ওঁম শান্তি ওঁম শান্তি ওঁম শান্তি