মহাশক্তি
মহা নির্বাণ তন্ত্র থেকে ইহা উল্লেখিত।
এই মহাশক্তি বিদ্যা ও অবিদ্যা রূপে মুক্তি ও বন্ধন এর হেতু হইয়া থাকেন। যদি কেহ বলেন এক প্রকৃতি বন্ধন ও মুক্তির কারণ হলো কি প্রকারে? তার উত্তর এই যে, একই সুন্দরী রমণী যেমন প্রিয়জনের সুখের, সপত্নীর দুঃখের এবং নিরাশ প্রেমিকের মোহের কারণ হইয়া থাকে- তেমনি মহাশক্তি বিদ্যা ও অবিদ্যা রূপে মুক্তি এবং বন্ধন এর কারণ হয়ে থাকেন।
শ্রী চন্ডী তে উল্লেখ আছে সেই মূলা প্রকৃতি মহাশক্তি নিত্যা, তিনি জগৎ মূর্তি এবং তিনিই সমস্ত জগত মুগ্ধ করিয়া
রাখিয়াছেন। তিনি প্রসন্ন হলে, মনুষ্যদিগকে মুক্তির জন্য বর দান করিয়া থাকেন। তিনি বিদ্যা সনাতনী ও সকলের ঈশ্বরী এবং মুক্তি ও বন্ধন এর হেতুভূতা।
আরো উল্লেখ আছে, জগতের স্থিতি সম্পাদনের জন্য, সেই মহামায়া প্রভাবেই জীবগন মমতা আবর্ত পরিপূরিত মোহ গর্তে নিপতিত হয়। অন্যের কথা কি বলিব, যিনি জগৎপতি হরি, তিনিও এই মহামায়ার দ্বারা বশীকৃত রহিয়াছেন। ইনি সর্ব ইন্দ্রিয় শক্তির নিয়ন্ত্রি, ইহার ঐশ্বর্য অচিন্ত্য; ইনি জ্ঞানীগণের চিত্ত ও বলপূর্বক সংমুগ্ধ করিয়া থাকেন। ইহার দ্বারাই চরাচর সমস্ত জগৎ প্রসূত হয়, ইনি প্রসন্না না হইলেই লোকের মুক্তিদাত্রী হয়েন।
এই মহাশক্তি বিদ্যা ও অবিদ্যা রূপে দ্বিবিধ। বিদ্যা, অবিদ্যা দুইটি ই মায়া কল্পিত; যিনি বন্ধন এর কারন, তিনি অবিদ্যা; আর যিনি মুক্তির কারণ, তিনি বিদ্যা নামে কীর্তিতা। বিদ্যাকেই সর্বদা সেবা করিবে, কদাপি অবিদ্যা সেবী হইবে না, কারণ অবিদ্যা কর্মের দ্বারা বন্ধন করত: জ্ঞানকে বিনষ্ট করে। জ্ঞান নষ্ট হইলে হানি হয়, হানি হইলেই সংহার, সংহার হইলেই ঘোর এবং ঘোর হইতেই নরক হইয়া থাকে। অতএব কখনোই অবিদ্যার সেবা করিবে না। যিনি বিদ্যা, তিনি মহামায়া, তাহাকে পন্ডিতগণ সর্বদাই সেবা করিবেন।